আখেরি চাহার শােম্বাহ কী:
আখেরি চাহার শােম্বাহ। এটি অতিপরিচিত একটি ফারসি বাক্য। আখের অর্থ শেষ । আর চাহার শােম্বা মানে বুধবার। মাহে সফরের সমাপনি বুধবারকে ভারতীয় উপমহাদেশে আখেরি চাহার শােম্বাহ হিসেবে বুযুগানেদ্বীন নামকরণ করেছেন। কেননা, হিজরি ১১ সনের শেষ বুধবারটি পূণ্যবান মুসলমানদের জন্য একটি স্বরণীয় দিন হিসাবে বিবেচিত। কেননা এইদিনে মানবতার মুক্তির দূত রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুলে করিম সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ বারের মতাে সুস্থতা বােধ করেছিলেন।
আখেরি চাহার শােম্বায় কী হয়েছিলাে
আখেরি চাহার শােম্বায় নবিজি সরকারে দুজাঁহাﷺ সুস্থতা অনুভব করছিলেন মর্মে বর্ণনা রয়েছে। যেমন- হাদিসপাকে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেনঃ
-“নবি করিম সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আসার পর রােগ আরাে বেড়ে গেলাে। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, এমন সাতটি মশকের পানি আমার উপর ঢাল যে গুলাের বাঁধন খােলা হয়নি। তাহলে হয়তাে লােকদেরকে আরাে কিছু উপদেশ দিতে পারবাে। অতঃপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তাঁর মহিয়সী স্ত্রী হযরত হাফসার গামলায় বসিয়ে আমরা তাঁর উপর মশকের পানি ঢালতে লাগলাম । হুযুর ইশারা করে জানালেন, আমাদের কাজ শেষ। তিনি সুস্থ অবস্থায় লােকদের নিকট বের হয়ে গেলেন, তাদেরকে নামায পড়ালেন ও খুতবা দিলেন।
★★ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৬/১১ পৃ. হা/৪৪৪২, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৬/৩৮৩ পূ, হা/৭০৪৬
★★ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৬/১১ পৃ. হা/৪৪৪২, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৬/৩৮৩ পূ, হা/৭০৪৬
হুযুর আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র শারিরিক সুস্থতার পর হযরত ফাতেমা, ইমাম হাসান ও হােসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের ডেকে আনা হলাে। হযরত বেলাল এবং সুফফাবাসি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ হুযুরের সুস্থতার এ খবর বিদ্যুতের ন্যায় ছড়িয়ে দিলেন মদিনার ঘরে ঘরে। সাহাবা কিরামদের হৃদয়ে আনন্দে তরঙ্গ বয়ে চলছিলাে। রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওসাল্লামার শারীরিক সুস্থ্যতায় তাঁরা কতটুকু প্রফুল্লতাবােধ করেছিলেন তার আন্দাজ করা যায় নি। হাদিসপাকের বর্ণনার নিরিখে।। ‘যখন এ সংবাদ হযরত সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু আন শুনলেন, পাঁচ হাজার। দিরহাম সদকা দিলেন মিসকিনদের মাঝে। হযরত ফারুক আযম রাঃ আনহু হুযুরের সুস্থতার আনন্দময়ী এ বার্তা শুনে সাতহাজার, হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহ আনহু দশহাজার, হযরত মাওলা আলি রাদ্বিয়াল্লাহু তিনহাজার দিরহাম অকাতরে দান করেছিলেন নবিপ্রেমে। তৎকালীন আরবের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হারত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একশত উট সদকা করেছিলেন।
★★(খাজা নিযাম উদ্দিন আওলিয়া; রাহাতিল কুলুব ১৩৯ পৃষ্ঠা।)
★★(খাজা নিযাম উদ্দিন আওলিয়া; রাহাতিল কুলুব ১৩৯ পৃষ্ঠা।)
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র সাময়িক রােগ মুক্তির এই দিবসকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য পারস্যসহ মধ্য এশিয়া পাক ভারত উপমহাদেশে অত্যন্ত ভাবগাম্ভির্য্য পরিবেশে দিনটি পালন করা হয়। লক্ষ্য করলে দেখবেন, কুরআনুল করিমে অসংখ্য স্থানে অন্যান্য নবিদের স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলিকে মহান রব ‘আইয়ামিল্লাহ' বা আল্লাহর দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন:
وَلَقَد أَرسَلنا موسىٰ بِـٔايٰتِنا أَن أَخرِج قَومَكَ مِنَ الظُّلُمٰتِ إِلَى النّورِ وَذَكِّرهُم بِأَيّىٰمِ اللَّهِ إِنَّ فى ذٰلِكَ لَءايٰتٍ لِكُلِّ صَبّارٍ شَكورٍ
"আর নিশ্চয় আমি মুসাকে আমার নিদের্শনাদি সহকারে প্রেরণ করেছি। আপন সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে আলােতে নিয়ে এসাে এবং তাদেরকে আল্লাহর দিন সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও, নিশ্চয় তাতে ধৈর্যধারনকারি ও কৃতজ্ঞশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন’।
★★(সুরা ইব্রাহীম, আয়াতঃ০৫)
"আর নিশ্চয় আমি মুসাকে আমার নিদের্শনাদি সহকারে প্রেরণ করেছি। আপন সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে আলােতে নিয়ে এসাে এবং তাদেরকে আল্লাহর দিন সমূহ স্মরণ করিয়ে দাও, নিশ্চয় তাতে ধৈর্যধারনকারি ও কৃতজ্ঞশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন’।
★★(সুরা ইব্রাহীম, আয়াতঃ০৫)
উল্লেখিত আয়াতে করিমায় মুফাসসিরিন কেরাম বলেন, بِأَيّىٰمِ اللَّهবলতে যেসব দিনের সাথে আল্লাহর প্রিয়বান্দাদের সম্পর্ক বিশেষভাবে হয়ে যায়; মুলত সেগুলােই بِأَيّىٰمِ اللَّه বা আল্লাহর দিন।
★★(তাফসীরে নুরুল ইরফান, ৬৭০ পৃঃ)
★★(তাফসীরে নুরুল ইরফান, ৬৭০ পৃঃ)
আয়াতের আলােকে পরিষ্কার হয়ে যায়, আখেরি চাহার শােম্বা বা সফর মাসের সমাপনি বুধবারের সাথে খােদ নবিজি সরকারে দো জাঁহা সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র রােগমুক্তির সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং এ দিনের মর্যাদা ও স্মৃতি রক্ষার্থে যেসব বুযুর্গানেদ্বীন নফল ইবাদত সমূহের তালিম প্রদান করেছেন তা কোনভাবে নিচক কিংবা অবান্তর বলা যাবে না।
৩৩. খাজা নিযাম উদ্দিন আওলিয়া; রাহাতিল কুলুব ১৩৯ পৃষ্ঠা। (খ) মুফতি হাবিব সামদানি; বার চান্দের ফজিলত ১৫ পৃষ্ঠা। (গ) অধ্যক্ষ এম.এ. জলিল; সায়াদতে আবাদিয়া সূত্রে নূর নবী ২৫০ পৃষ্ঠা। ৩৪. সুরা ইবরাহিম (১৪) আয়াত; ৫। ৫. মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমি; তাফসিরে নুরুল ইরফান (বাংলা সংস্করণ) ৬৭০ পৃষ্ঠা।