কিতাবঃ নবী-বংশের মর্যাদা।
📒টেক্সট রেডি ও প্রুফঃ
মুহাম্মাদ জাহিদুল বাশার

ভূমিকা |

الحمد لله رب العالمين، والعاقبة للمتقين، ولا عدوان الا على الظالمين، والصلاة والسلام على خاتم المرسلين، وأفضل النبيين، وقائد الغر المحجلين، وعلى آله الذين جعلهم سبب لنيل شفاعة شافع الناس يوم الدين وصحابته أجمعين، ومن سار على نهجهم الى يوم الدين . أما بعد-

কুরআন ও সুন্নাহর বহু স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধরদের পবিত্রতা ও মর্যাদার বর্ণনা এবং তাঁদেরকে ভালবাসার নির্দেশ এসেছ।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র জাহেরী হয়াতে এবং তার (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তেকাল পরবর্তী সময়েও পুণ্যাত্মা মহান সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিআল্লাহু আনহুম ওয়ারাদূ আনহুম) এই পবিত্র বংশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ও অগাধ ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন। এমনকি সাহাবা পরবর্তী যুগ থেকে অদ্যবধি প্রতিটি মুসলমানের মনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র বংশের প্রতি অকুণ্ঠ সম্মান ও ভালবাসা প্রদর্শন করে আসছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।

বিশ্ববিখ্যাত লেখক-গবেষক, মুফাসসির, মুহাদ্দিছ, সাহিত্যিক, আশেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লামা জালালুদ্দীন সিয়ুতী (রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র বংশধরদের শানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বহু হাদীছে নববী থেকে প্রসিদ্ধ ষাটটি হাদীছ সংকলন করে তাঁর নাম দিয়েছেন- “ইহয়াউল মায়্যিতি বিফাদায়িলি আহলিল বাইতি" তথা “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র বংশধরদের উসিলায় মৃতকে জীবিত করা”। তাঁর এ বিখ্যাত সংকলনটি বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য অনুবাদ করে দেয়ার সংকল্প বহুদিন ধরে আমার মনে লালিত হয়ে আসছে। সময় ও সুযােগের অভাবে দেরিতে হলেও অবশেষে কামলি ওয়ালা নবী (সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র সদকায় অনুবাদের মত দুঃসাহসিক কাজটি করেই নিলাম। একেতো অনুবাদ কর্ম এমনিতেই দুর্ভেদ্য তদুপরি আমার জ্ঞানের সল্পতাসহ অন্যান্য অযােগ্যতার সব বৈশিষ্ট এ পুস্তিকায় পাঠকের কাছে ধরা দিতে পারে। সব ত্রুটি-বিচ্যুতিকে মার্জনার চোখে দেখে একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র বংশধরদের প্রতি অন্তরের ভালবাসা নিয়ে পুস্তকটি পাঠ করলে নিশ্চিত উপকারের আশা করা যায়। তাছাড়া মুদ্রণজনিতসহ যেকোন ক্রটি পাঠকের দৃষ্টিগােচর হলে, তা সাদরে গ্রহণ করে পরবর্তী সংস্করণে সংশােধনের ব্যবস্থা করা হবে।

বুড়িচর নিবাসী বিশিষ্ট সমাজসেবক জনাব আলহাজ্ব সেলিম জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ অন্যান্য যাঁরা এ পুস্তক প্রকাশে আন্তরিক পরামর্শসহ যাবতীয় সহযােগিতা করেছেন, তাঁদের সকলের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি কিয়ামতের কঠিন মুহুর্তে তৃষার্ত হৃদয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামর নূরাণী হাতে তাঁরই পবিত্র বংশধরদের সাথে হাউজে কাউছারের পানি পান করার তওফীক আল্লাহ যেন দান করেন, সেই দোয়া করি।
পরিশেষে, এ পুস্তকটি পাঠ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র বংশধরদের প্রতি সামান্যতম ভালবাসাও যদি পাঠকদের মনে জন্ম নেয়, তবেই শ্রম স্বার্থক হবে।

আরজ গুজার:
মুহাম্মদ জমির হােসাইন ক্বাদেরী।

পবিত্র কুরআনের আলোকে নবী-বংশের মর্যাদা।

আয়াত ১ | নবী-বংশের মর্যাদা

إنما يريد الله لینهب عنکم الرجس أهل البيت ويطهركم تطهيرا (الأحزاب)

অর্থাৎ “হে নবী-পরিবার। আল্লাহ তা'আলা তাে কেবল তােমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান, এবং তােমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র করতে চান।”

(সূরা আল আহযাব, আয়াত:৩৩)।

বিশ্ববিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনু হাজর আল হাইতমী (র.) বলেন,

قال ابن حجر الهيتمي: هذه الآية منبع فضائل أهل البيت النبوى لاشتمالها على غرر من مآثرهم والاعتناء بشأنهم حيث ابتدأت ب(إنما المفيدة لحصر إرادته تعالی فی أمرهم على إذهاب الرجس الذي هو الإثم أو الشك فيما يجب الإيمان به عنهم، وتطهيرهم من سائر الأخلاق والأحوال المذمومة

অর্থাৎ, “এই আয়াতে করীমাটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার উৎস। কেননা, আয়াতে করীমাটি انما(ইন্নামা) দ্বারা শুরু হয়েছে, যা হাসর তথা সীমাবদ্ধতার উপকারিতা দেয়। এখানে আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁদের (নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরদের) থেকে গুণাহ ও সন্দেহসহ যেকোন ধরনের অপবিত্রতা দূর করা এবং তাদেরকে যেকোনো চারিত্রিকি ক্রটি ও মন্দ স্বভাব থেকে পবিত্র করা।" (তাফসীরে

আয়াত ২ | নবী-বংশের মর্যাদা

إن الله وملايكته يصلون علی النبی یا ایها الذين آمنوا صلوا عليه وسلمو اتسلیما-

অর্থাৎ, “নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সালাত তথা দরুদ পেশ করেন। হে ঈমানদারগণ। তোমরাও তাঁর (নবী করীম সাঃ) ওপর সালাত তথা দরুদ এবং সালাম পেশ কর।

(সূরা আল আহযাব, আয়াত:৫৬)

বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,

عن کعب بن عجرة قال:(لما نزلت هذه الآية قلنا يا رسول الله: قد علمنا كيف نسلم عليك، فكيف نصلی عليك؟ فقال: قولوا اللهم صل على محمد وعلى آل محمد--

অর্থাৎ “হযরত কা'ব ইবনু আজরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এই অায়াতে কারিমাটি নাযিল হয় তখন আমরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করলাম যে, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি যে, কীভাবে আপনার ওপর সালাম পেশ করতে হবে। এখন আমরা কীভাবে আপনার ওপর সালাত বা দরুদ পেশ করব? (এর জবাবে) তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, তােমরা বল, আল্লাহম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মদিন, ওয়া আ'লা আ-লি মুহাম্মদিন...।

আয়াত ৩ | নবী-বংশের মর্যাদা

فمن حاجك فيه من بعد ما جائك من العلم فقل تعالواندع ابنائنا وأبنائکمونسائناونسائکم وأنفسنا وأنفسكم ثم نبتهل فنجعل لعنة الله على الکلذبین-

অর্থাৎ, “(হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) আপনার নিকট জ্ঞান আসার পর যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আপনার সাথে তর্ক করে তাকে বলুন, আসো, আমরা (মুবাহালা তথা দু'পক্ষ পরস্পকে অভিশাপ দেয়ার জন্য) আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তােমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তােমাদেও নারীদেরকে, আমাদের নিজেদেরকে ও তােমাদের নিজেদেরকে। অতঃপর আমরা মুবাহালা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর (আল্লাহর) অভিশাপ কামনা করি।”

(সূরা আলে ইমরান-৬১)

এই আয়াতে আহলু বাইতি রাসূলিল্লাহ তথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশধরদের উচ্চ মর্যাদার কথা ঘােষণা করা হয়েছে।

পবিত্র সহীহান তথা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত সাআদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিআল্লাহ তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,

لما نزلت هذه الآية فقل تعالواندع أبنائنا وأبنائكم دعا رسول الله صلى الله عليه وسلم عليا وفاطمة وحسنا وحسينا فقال: اللهم هؤلاء اهلی

অর্থাৎ “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর যখন এ আয়াত নাযিল হল যে, “বলুন, আসো, আমরা (মুবাহালা তথা দু’পক্ষ পরস্পকে অভিশাপ দেয়ার জন্য) আহ্বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তােমাদের পুত্রদেরকে...' তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলা ওয়াসাল্লাম হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন (রাদ্বিআল্লাহ তাআলা আনহুম) কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন, “হে আল্লাহ! এঁরা আমার আহলে বাইত তথা বংশধর।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ)

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনু হাজার আল-হাইতামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন,

قال ابن حجر الهيتمی: فعلم أنهم المراد من الآية وأن أولاد فاطمة وذريتهم يسمون أبنائه وينسبون إليه نسبة صحيحة نافعة في الدنيا والآخرة

অর্থাৎ, “সুতরাং, জানা গেল যে, আয়াতে কারীমায় أبنائنا আমাদের পুত্রদেরকে দ্বারা তাঁরা তথা হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন (রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহুমা) উদ্দেশ্য। আর রাসুল তনয়া হযরত ফাতেমার সন্তান-সন্ততি এবং তাঁদের পরবর্তী বংশধরদেরকে তাঁর (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সন্তান বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাঁরা তাঁর (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রকৃত এবং দুনিয়া ও পরকালে উপকারী বংশধর হিসেবে সম্বােদিত হবেন।

|| সুন্নি সাইবার টিম

Top