প্রিয় নবী (ﷺ)'র দৃষ্টিতে শানে হাসনাইনে করীমাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
সংকলকঃ ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
সংকলকঃ ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
১. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজেই তাঁদের নাম রেখেছেন
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ফাতিমার ঘরে হাসানের জন্ম হলো তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন অতঃপর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; বরং সে হবে হাসান। অতঃপর যখন হোসাইনের জন্ম হলো তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; বরং সে হবে হোসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করলো তখন তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: আমি তাদের নাম হারুন আলায়হিস সালামের সন্তান শাব্বার, শাব্বির ও মুশাব্বার-এর নামের ওপর রেখেছি। আরবি ভাষায় এ তিনটি নাম হলো- হাসান, হোসাইন ও মুহসিন। [হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৩, আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, ১:১১৮, হা. ন. ৯৩৫।]
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ফাতিমার ঘরে হাসানের জন্ম হলো তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আগমন করলেন অতঃপর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; বরং সে হবে হাসান। অতঃপর যখন হোসাইনের জন্ম হলো তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; বরং সে হবে হোসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করলো তখন তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন: না; বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: আমি তাদের নাম হারুন আলায়হিস সালামের সন্তান শাব্বার, শাব্বির ও মুশাব্বার-এর নামের ওপর রেখেছি। আরবি ভাষায় এ তিনটি নাম হলো- হাসান, হোসাইন ও মুহসিন। [হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৩, আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, ১:১১৮, হা. ন. ৯৩৫।]
২. নবীজি হাসান ও হোসাইনের কানে আযান দিয়েছেন
হযরত আবু রাফে রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হাসান ও হোসাইন জম্মগ্রহণ করলেন তখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাদের উভয়ের কানে আযান দিয়েছেন। [তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ১: ৩১৫, হা. ন-৯৩১, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৪: ৬০।]
৩. প্রিয় নবী (দ.) হাসান ও হোসাইনের (র.)আকিকা করেছেন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হোসাইনের পক্ষ থেকে আকিকার মধ্যে প্রত্যেকের জন্য দুটি করে দুম্বা যবেহ করেছেন। [নাসাই, হা. ন. ৪২১৯, শরহে মুয়াত্তা, ৩: ১৩০]
৪. হাসান ও হোসাইন প্রিয় নবী (দ.)র সন্তান
হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে আগমন করলেন আর বললেন, আমার সন্তানরা কোথায়? আমি বললাম, আলী তাদেরকে সাথে নিয়ে গেছেন। নবীজি তাদের সন্ধানে বের হলেন। আর তাদেরকে পানি পান করার একটি স্থানে খেলারত অবস্থায় পেলেন। আর তাদের সম্মুখে কিছু অবশিষ্ট খেজুর দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি বললেন: আলী খেয়াল রেখো! আমার সন্তানদেরকে গরম শুরু হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিয়ে এসো। [হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৪, দুলাবি, আয যুররিয়্যাতুত তাহিরা: ১: ১০৪, হা. ন-১৯৩।]
৫. হাসান ও হোসাইন আহলে বায়ত
হযরত উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে একত্রিত করে তাদেরকে স্বীয় চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে বললেন: হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়ত। [হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭০৫, তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৫৩, হা. ন-২৬৬৩, তাবারি, জামেউল কুরআন ফি তাফসিরুল কুরআন, ২২: ৮, ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আজিম ৪: ৪৮৬,]
৬. হাসান ও হোসাইনের বংশধারা প্রিয় নবী থেকে
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: কিয়ামত দিবসে আমার বংশধারা ব্যতীত সকল বংশীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। প্রত্যেক সন্তান তার পিতার দিকে সম্পর্কিত হবে কিন্তু ফাতিমার সন্তানেরা ছাড়া। কেননা, তাদের পিতাও আমি আর তাদের বংশধারাও আমি। [হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৪: ২২৪, তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৪৪, হা. ন-২৬৩১। শাওকানি, নাইলুল আওতার, ৬: ১৩৯।]
৭. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) সর্বোত্তম বংশের অধিকারী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: হে লোকেরা আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অবহিত করবো না যারা নানা-নানীর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা চাচা ও ফুফুর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা পিতা-মাতার দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? তারা হলো, হাসান ও হোসাইন। তাদের নানা আল্লাহর রাসূল, তাদের নানী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। তাদের মাতা আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা। তাদের পিতা আলী ইবনু আবি তালিব। তাদের মামা আল্লাহর রাসূলের পুত্র কাসিম এবং তাদের খালা রাসূলুল্লাহ’র কন্যাগণ যয়নব, রোকেয়া ও উম্মে কুলসুম। তাদের নানা, পিতা, মাতা, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা সকলেই জান্নাতে থাকবে এবং এরা দুই জনও থাকবে জান্নাতে। [তাবরাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৬৬, হা. ন-২৬৮২, ইবনে আসাকির, তারিখে দামিশ্কিল কবির, ১৩: ২২৯, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৯: ১৮৪।]
৯. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.)-এর সাথে প্রিয় নবীর সাদৃশ্য
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বক্ষ হতে মাথা মুবারক পর্যন্ত অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর হোসাইন (র.) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শরীর মুবারকের অবশিষ্ট নিচের অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। [তিরমিযি হা. ন-৫৭৭৯, আহমদ, মুসনাদ, ১: ৯৯।]
১০. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ
হযরত সৈয়দা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি স্বীয় পিতা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বেসালপূর্ব অসুস্থাবস্থায় হাসান ও হোসাইনকে তার কাছে নিয়ে আসলেন। অতঃপর তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের দু’জনকে আপনার উত্তরাধিকার থেকে কিছু দান করুন। তিনি ইরশাদ করেন: হাসান আমার ভীতিসঞ্চারক ও নেতৃত্ব এ দুটির ওয়ারিশ; আর হোসাইন আমার ধৈর্য ও দানশীলতা এ দুটির ওয়ারিশ। [আল মুজামুল কবির, ২২: ৪২৩, আল আহাদ ওয়াল মাসানি, ১: ২৯৯।]
১১. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) পবিত্র চরিত্রের অধিকারী
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পালিত হযরত ওমর ইবনে আবু সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে নবীজির উপর এ আয়াত....নাজিল হলো তখন তিনি ফাতিমা ও হাসনাইন করিমাইনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিলেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়ত। সুতরাং তাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করো এবং তাদেরকে পূত-পবিত্র করো। [তিরমিযি, ৫: ৩৫১, জামেউল বয়ান, ২২:৮।]
১২. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) জান্নাতি যুবকদের সর্দার
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাতা আমার কাছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে আমার হাজির হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। আমি বললাম, এ ক’দিন থেকে আমি তো হুযুরের খেদমতে হাজির হতে পারি নি। এতে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন। আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ ক্ষুণি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে হাজির হবো, তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করবো ও তাঁর কাছে আবেদন করবো যে, আমার ও আমার মায়ের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন। অতঃপর আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। অতঃপর হুযুর নফল আদায় করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইশার নামাযও আদায় করলেন। তারপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরিফের দিকে রওনা করলে আমি তাঁর পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে বললেন, কে? হুযাইফা! আমি আরজ করলাম, জি- হাঁ। রাসূলে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি প্রয়োজন আছে? আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার মাতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমার নিকট এক্ষণি একজন ফেরেস্তা এসেছেন। এটি এমন এক ফেরেস্তা যে, ইতিপূর্বে দুনিয়াতে অবতরণ করেন নি; সে স্বীয় রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছে যেন সে আমার ওপর সালাম পেশ করে ও আমাকে এ সুসংবাদ দেয় যে, ফাতিমা জান্নাতি রমনিদের সর্দার আর হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। [তিরমিযি, ৫: ৬৬০, আহমদ, মুসনাদ, ৫: ৩৯১, হাকেম, মুসতাদরাক, ৩: ৪৩৯।]
১৩. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম
হযরত ইমরান বিন সুলাইমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ও হোসাইন জান্নাতিদের নামসমূহের দুটি নাম। যে দুটি নাম জাহেলি যুগে কারো নাম হিসেবে রাখা হয় নি। [ইবনে হাজর মক্কি, আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯২, ইবনে আসির, উসদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবা, ২: ২৫।]
১৪. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) দুনিয়ার বাগানের ফুল
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু নুআম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ইরাকি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেন, কাপড়ের উপর মশার রক্ত লাগলে তার বিধান কি? হযরত ইবনে ওমর বললেন, এর দিকে দেখো! মশার রক্তের মাসআলা জিজ্ঞাসা করছে অথচ এরাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সন্তান ( হোসাইন)কে শহীদ করেছে। আর আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি: হাসান ও হোসাইন দুনিয়ায় আমার বাগানের দু’টি ফুল। [বুখারি, হা. ন. ৫৬৪৮, তিরমিযি, হা. ন. ৩৭৭০, নাসাই হা. ন. ৮৫৩০।]
চলবে...
.................
ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী, ঢাকা।
তারিখ: 13 সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন: হে লোকেরা আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অবহিত করবো না যারা নানা-নানীর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা চাচা ও ফুফুর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা পিতা-মাতার দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? তারা হলো, হাসান ও হোসাইন। তাদের নানা আল্লাহর রাসূল, তাদের নানী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। তাদের মাতা আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা। তাদের পিতা আলী ইবনু আবি তালিব। তাদের মামা আল্লাহর রাসূলের পুত্র কাসিম এবং তাদের খালা রাসূলুল্লাহ’র কন্যাগণ যয়নব, রোকেয়া ও উম্মে কুলসুম। তাদের নানা, পিতা, মাতা, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা সকলেই জান্নাতে থাকবে এবং এরা দুই জনও থাকবে জান্নাতে। [তাবরাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৬৬, হা. ন-২৬৮২, ইবনে আসাকির, তারিখে দামিশ্কিল কবির, ১৩: ২২৯, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৯: ১৮৪।]
৯. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.)-এর সাথে প্রিয় নবীর সাদৃশ্য
হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বক্ষ হতে মাথা মুবারক পর্যন্ত অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর হোসাইন (র.) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র শরীর মুবারকের অবশিষ্ট নিচের অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। [তিরমিযি হা. ন-৫৭৭৯, আহমদ, মুসনাদ, ১: ৯৯।]
১০. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ
হযরত সৈয়দা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি স্বীয় পিতা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বেসালপূর্ব অসুস্থাবস্থায় হাসান ও হোসাইনকে তার কাছে নিয়ে আসলেন। অতঃপর তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের দু’জনকে আপনার উত্তরাধিকার থেকে কিছু দান করুন। তিনি ইরশাদ করেন: হাসান আমার ভীতিসঞ্চারক ও নেতৃত্ব এ দুটির ওয়ারিশ; আর হোসাইন আমার ধৈর্য ও দানশীলতা এ দুটির ওয়ারিশ। [আল মুজামুল কবির, ২২: ৪২৩, আল আহাদ ওয়াল মাসানি, ১: ২৯৯।]
১১. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) পবিত্র চরিত্রের অধিকারী
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পালিত হযরত ওমর ইবনে আবু সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে নবীজির উপর এ আয়াত....নাজিল হলো তখন তিনি ফাতিমা ও হাসনাইন করিমাইনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিলেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়ত। সুতরাং তাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করো এবং তাদেরকে পূত-পবিত্র করো। [তিরমিযি, ৫: ৩৫১, জামেউল বয়ান, ২২:৮।]
১২. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) জান্নাতি যুবকদের সর্দার
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাতা আমার কাছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে আমার হাজির হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। আমি বললাম, এ ক’দিন থেকে আমি তো হুযুরের খেদমতে হাজির হতে পারি নি। এতে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন। আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ ক্ষুণি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে হাজির হবো, তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করবো ও তাঁর কাছে আবেদন করবো যে, আমার ও আমার মায়ের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন। অতঃপর আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। অতঃপর হুযুর নফল আদায় করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইশার নামাযও আদায় করলেন। তারপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হুজরা শরিফের দিকে রওনা করলে আমি তাঁর পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে বললেন, কে? হুযাইফা! আমি আরজ করলাম, জি- হাঁ। রাসূলে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি প্রয়োজন আছে? আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার মাতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমার নিকট এক্ষণি একজন ফেরেস্তা এসেছেন। এটি এমন এক ফেরেস্তা যে, ইতিপূর্বে দুনিয়াতে অবতরণ করেন নি; সে স্বীয় রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছে যেন সে আমার ওপর সালাম পেশ করে ও আমাকে এ সুসংবাদ দেয় যে, ফাতিমা জান্নাতি রমনিদের সর্দার আর হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। [তিরমিযি, ৫: ৬৬০, আহমদ, মুসনাদ, ৫: ৩৯১, হাকেম, মুসতাদরাক, ৩: ৪৩৯।]
১৩. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম
হযরত ইমরান বিন সুলাইমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ও হোসাইন জান্নাতিদের নামসমূহের দুটি নাম। যে দুটি নাম জাহেলি যুগে কারো নাম হিসেবে রাখা হয় নি। [ইবনে হাজর মক্কি, আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯২, ইবনে আসির, উসদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবা, ২: ২৫।]
১৪. হযরত ইমাম হাসান ও হোসাইন (র.) দুনিয়ার বাগানের ফুল
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু নুআম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ইরাকি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেন, কাপড়ের উপর মশার রক্ত লাগলে তার বিধান কি? হযরত ইবনে ওমর বললেন, এর দিকে দেখো! মশার রক্তের মাসআলা জিজ্ঞাসা করছে অথচ এরাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সন্তান ( হোসাইন)কে শহীদ করেছে। আর আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলতে শুনেছি: হাসান ও হোসাইন দুনিয়ায় আমার বাগানের দু’টি ফুল। [বুখারি, হা. ন. ৫৬৪৮, তিরমিযি, হা. ন. ৩৭৭০, নাসাই হা. ন. ৮৫৩০।]
চলবে...
.................
ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী, ঢাকা।
তারিখ: 13 সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ইং।