মা ফাতেমার দাসী সায়্যিদা ফিজ্জার দুঃসাহসের কাহিনী
-----------------------------------------------------------------------
সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী
সায়্যিদা ফিজ্জা ছিলেন হজরতে ফাতেমাতুজ জাহরা (রাঃ)র হাবশী (বর্তমান ইথিওপিয়ান) দাসী। সারাজীবন মা ফাতেমার সেবা করেছেন। কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পর যখন ইমাম জয়নুল আবেদিন, সায়্যিদাহ জয়নবসহ আহলে বায়তের বেঁচে থাকা সকল সদস্যকে কয়েদী বানিয়ে ইয়াজিদের দরবারে পেশ করা হলো, সেসময় তাঁদের সাথে এই সায়্যিদা ফিজ্জাও ছিলেন, তখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, কিন্তু আহলে বায়তকে ছেড়ে থাকতে পারেন নি।
অভিশপ্ত ইয়াজিদ সায়্যিদাহ জয়নব ও ইমাম জয়নুল আবেদিনের প্রতি কয়েদীসুলভ আচরণ শুরু করল।
সায়্যিদা ফিজ্জার (রাঃ) তা দেখে সহ্য হলো না। ওঠে দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, "রে বদবখত ইয়াজিদ! তুই যাদেরকে কয়েদি মনে করে দুর্ব্যবহার করছিস তারা দুনিয়া আখিরাতের বাদশা। তাঁদের সাথে উত্তম আচরণ কর।"
ইয়াজিদ কালো কৃষ্ণাঙ্গ হাবশী দাসী সায়্যিদা ফিজ্জার রাঃ জবানে পাক থেকে এরকম কথা শুনে ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠল। সে তার সামনের দুই প্রহরীকে আদেশ করল এক্ষুনি এই বুড়ি মহিলার গর্দান উড়িয়ে দাও। সৈনিক দুজন উদ্যত হলো সায়্যিদা ফিজ্জা রাঃ কে আঘাত করবে। ইয়াজিদের দরবারে উপস্থিত ২০০ কালো কৃষ্ণাঙ্গ হাবশী সৈনিক তলোয়ার বের করে ফেলল। সাবধান! এই বুড়ি মহিলা আমাদের দেশের বাসিন্দা। হাবশার বাসিন্দা। এই মহিলাকে আক্রমণ করা হলে একটা মাথাও দেহে থাকবে না।
ইয়াজিদের ঐসকল কৃষ্ণাঙ্গ প্রহরী ও সৈনিকদের মধ্যে নিজ দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা জেগে ওঠল।
এই দৃশ্য দেখে সায়্যিদা জয়নব (রাঃ) ওঠে দাঁড়ালেন, মদীনা শরিফের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, দাঁড়িয়ে বললেন, "ইয়া রাসুলাল্লাহ! ইয়া হাবিবাল্লাহ! ওহ আমার নানাজী! আজ এখানে আমার আম্মাজানের দাসী ফিজ্জার জান মাল ইজ্জতের হেফাজতের জন্য ইয়াজিদ বাহিনী থেকেই ২০০ মানুষ দাঁড়িয়ে গেছে।
ওহ আমার নানাজী! আপনার খান্দান উজাড় করে দিল এই ইয়াজিদের দল। কিন্তু আপনার উম্মতের মাঝে আজ কেউ নেই যে আপনার খান্দানের জান মাল ইজ্জত রক্ষার জন্য দাঁড়াবে।"
দরবারের সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
"তোমাদের মধ্যে কী একজনও নবির আশিক নাই? একজনও কী আহলে বায়তের প্রেমিক নাই? আমার নানাজীর পরিবারের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য কী তোমাদের মধ্যে একজন মুসলমানও নাই?" হায়রে মুসলমান! হায়রে মুসলমান!
Top