নামাজে আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ নীরবে পড়ার বিধান
১) হাদীস শরীফ
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَلْفَ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ فَكَانُوا لَا يَجْهَرُونَ ببِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
অনুবাদ : আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে নামায পড়েছি, হযরত আবু বকর, উমার ও উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম -এর পেছনেও নামায পড়েছি, তাঁরা কেউই بسم الله الرحمن الرحيم উচ্চস্বরে পড়তেন না। (মুসনাদে আহমাদ: ১২৮৪৫)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। শায়খ শুআইব আরনাউত এ হাদীসের তাহকীকে বলেন: إسناده صحيح على شرط الشيخين “হাদীসটির সনদ বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ”। (মুসনাদে আহমাদ: ১২৮৪৫)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা)। এবং প্রথম তিন খলীফা নিঃশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন।
২) হাদীস শরীফ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مِهْرَانَ الرَّازِىُّ حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا الأَوْزَاعِىُّ عَنْ عَبْدَةَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ يَجْهَرُ بِهَؤُلاَءِ الْكَلِمَاتِ يَقُولُ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ. وَعَنْ قَتَادَةَ أَنَّهُ كَتَبَ إِلَيْهِ يُخْبِرُهُ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ حَدَّثَهُ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبِى بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ فَكَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ بالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ يَذْكُرُونَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ فِى أَوَّلِ قِرَاءَةٍ وَلاَ فِى آخِرِهَا( رَوَاه مُسْلِمٌ فِىْ بَابِ حُجَّةِ مَنْ قَالَ لَا يُجْهَرُ بِالْبَسْمَلَةِ)
অনুবাদ : হযরত উমার ইবনুল খত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এ কালিমাগুলো সশব্দে পড়তেন: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ হযরত কতাদা থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ শাগরিদকে পত্র মারফত জানিয়েছেন যে, আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বলেছেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বকর, উমার ও উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-এর পেছনে নামায পড়েছি, তাঁরা সবাই-ই الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ দিয়ে কুরআন পড়া শুরু করতেন। তাঁরা কুরআন পড়ার শুরুতে ও শেষে কোথাও بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ উল্লেখ করেননি। (মুসলিম: ৭৭৭, পৃষ্ঠা: ১/১৭২)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি বুখারী, আবু দাউদ, নাসাঈ এবং তিরমিজী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৪১৯)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং প্রথম তিন খলীফা নিঃশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন।
৩) হাদীস শরীফ
حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رضى الله عنهما كَانُوا يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ باِلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ( رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ فِىْ بَابِ مَا يَقُولُ بَعْدَ التَّكْبِيرِ)
অনুবাদ : হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বকর ও উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সবাই-ই الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ দিয়ে নামায শুরু করতেন। (বুখারী: ৭০৭)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসটি মুসলিম, নাসাঈ, মুওয়াত্তা মালেক, আবু দাউদ এবং তিরমিজী শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৪১৯)
কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, তিলাওয়াতের শুরুতে ‘আউজু বিল্লাহ’ এবং ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে হবে। আর এ হাদীসে জানা গেলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং প্রথম তিন খলীফা ‘আলহামদু’ থেকে কিরাত শুরু করতেন। এছাড়া সামুরা বিন জুনদুব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীরে তাহরিমার পরে একটু সময় নীরব থাকতেন। (আবু দাউদ: ৭৭৯) এ হাদীসগুলোর সমষ্টি থেকে বুঝা যায় যে, ‘আলহামদু’র পূর্বে পঠনীয় ‘ছানা’, ‘আউজুবিল্লাহ’ এবং ‘বিসমিল্লাহ’ নীরবে পড়তে হবে।
৪) হাদীস শরীফ,
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بن وُهَيْبٍ الْغَزِّيُّ ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بن أَبِي السَّرِيِّ ، حَدَّثَنَا مُعْتَمِرُ بن سُلَيْمَانَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنِ الْحَسَنِ ، عَنْ أَنَسٍ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُسِرُّ بِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ ، وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا
অনুনাদ : হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ নীরবে পড়তেন। (তবারানী কাবীর: ৭৩৯, তবারানী আওসাত: ৮২৭৭)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য। আবার পূর্ববর্ণিত বুখারী-মুসলিমের হাদীস দ্বারাও এ হাদীসের মূল বিষয় সমর্থিত। আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী বলেন: হাদীসটি তবারানী তাঁর ‘মু’জামে কাবীর’ ও ‘আওসাতে’ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ: ২৬৩১, পৃষ্ঠা: ২/২৮১)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং প্রথম তিন খলীফা নিঃশব্দে বিসমিল্লাহ পাঠ করতেন।
৫) হাদীস শরীফ
عَبْدُ الرَّزَّاقِ،عَنِ الثَّوْرِيِّ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ: " خَمْسٌ يُخْفَيَنَ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَالتَّعَوُّذُ، وَبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَآمِين، وَاللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ "
অনুবাদ : হযরত ইবরাহীম নাখঈ রহ. বলেন: পাঁচটি জিনিস নীরবে বলতে হয়: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, আমীন এবং আল্লাহুম্মা রব্বানা লাকাল হামদ। (আব্দুর রযযাক: ২৫৯৭)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাকতু’। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।