কিতাবঃ নবী-বংশের মর্যাদা।
📒টেক্সট রেডি ও প্রুফঃ
মুহাম্মাদ জাহিদুল বাশার
সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা কি আওলাদে রাসূলের মর্যাদার অন্তরায়?
যেমনটি শিয়ারা মনে করেঃ
বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র পবিত্র বংশধরদের শান-মান বৃদ্ধি এবং তাঁদেরকে মহব্বতের নামে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পবিত্র সাহাবায়ে কেরামের শানে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরম বেয়াদবি করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত গর্হীত। তারা সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদাকে আওলাদে রাসূলের মর্যাদার অন্তরায় মনে করে। যেমন, ভ্রান্ত শিয়ারা মনে করে থাকে। আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর প্রত্যেক সাহাবাই সত্যের মাপকাটি। তাঁদের প্রত্যেকেই অনুসরণ ও অনুকরণযােগ্য।
কুরআনুল কারীমের বহু জায়গায় সাহাবায়ে কেরামের শান বর্ণনা করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের বর্ণিত কুরআনুল কারীমের কিছু আয়াতে করীমা নিম্নে উল্লেখ করা হল।
আয়াত ১ঃ
--------------
محمد رسولُ اللّٰه والذین معه أشداءعلی الکفاررحملء بینهم تراهم رقعا سجدا بیتغون فضلامن الله ورضوانا سيماهم في وجوههم من أثر الشجود ذلك مثلهم في التوراة ومثلهم في الإنجيل کزرع أخرج شطأه فآزره فاستغلظ فاستوى على شوقه يعجب الزراع ليغيظ بهم الكفار وعد الله الذين آمنوا وعملوا الصالحات منهم مغفرة وأجرا عظیم -
(الفتح:29)
অর্থাৎ “মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। আর যারা তাঁর সাথে রয়েছেন তথা তাঁর সাহাবাগণ কাফেরদের ওপর অত্যন্ত কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল; আপনি তাঁদেরকে দেখবেন, তাঁরা আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় রুকু ও সিজদায় অবনত। তাঁদের লক্ষণ তাঁদের মুখমন্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট থাকবে, এরকমই তাঁদের বর্ণনা রয়েছে তাওরাতে এবং এরকমই তাঁদের বর্ণনা রয়েছে ইঞ্জিলে। তাঁদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা একটি কিশলয় বের করে অতঃপর ইহাকে শক্ত ও পরিপুষ্ট হয় এবং দৃঢ়ভাবে কান্ডের ওপর দাঁড়ায়, যা কৃষকের জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনেন ও সৎকাজ করেন আল্লাহ তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের।”
[সূরা আল-ফাতহ আয়াত: ২৯]
আয়াত ২ঃ
--------------
والسابقون الأولون من المهاجرين والأنصار والذين اتبعوهم بإحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه رأعد لهم جنات تجرى تحتها الأنهار خالدين فيها أبدا ذلك الفوزالعظیم -
(التوبة:100)
অর্থাৎ, “মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাঁদেরকে অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তা'আলা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ঠ এবং তাঁরাও আল্লাহ তা'আলার প্রতি সন্তুষ্ট। আর তিনি তাঁদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে ঝরণা প্রবাহিত। যেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসফলতা।”
[সূরা আত-তাওবা; আয়াত: ১০০]
আয়াত ৩ঃ
--------------
لقد رضي الله عن المؤمنين إذ يبايعونک تحت الشجرة...
(الفتح: 18)
অর্থাৎ,"আল্লাহ তাআলা তাে মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ঠ হলেন, যখন তাঁরা বৃক্ষের নিচে আপনার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করল। তাঁদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি (আল্লাহ) অবগত ছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ করলেন এবং তাঁদেরকে পুরস্কার হিসেবে দিলেন আসন্ন বিজয়।”
[সূরা আল-ফাতহ; আয়াত: ১৮]
হাদিস ১ঃ
--------------
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবায়ে কেরামের শান বর্ণনা করে ইরশাদ করেন,
عن أبی سعید الخدری رضی الله عنه قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم: لا تسبوا أصحابي ، فلو أن أحدكم أنفق مثل أحد ذهبا ما بلغ مد أحدهم ولانصیفه۔رواهتمامه - البخری(3673),ومسلم(2540)
অর্থাৎ “হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তােমরা আমার সাহাবায়ে কিরামকে গালি দিওনা। কেননা, তােমাদের কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় কর, তবু তা তাঁদের (সাহাবায়ে কিরামের) এক মুদ্দ বা অর্ধমুদ্দ পরিমাণ ব্যয়ের সমান হবেনা।”
[সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফ]
উল্লেখ্য, এসব আয়াতে কারীমা ও হাদীছে সাধারণভাবে সাহাবায়ে কেরামের প্রশংসা করা হয়েছে এবং এতে আহলে বাইত তথা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং প্রশংসা বিদ্যমান। কেননা, তারাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত; বরং তাঁরা অন্যান্য সাহাবা থেকে অধিক নিকটবর্তী সাহাবী।
কাজেই কোন সাহাবার শানে বেয়াদবী করা মানে আহলে বাইতের শানে বেয়াদবি করা। যেমন, হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহুকে বা হযরত হাসান-হােসাইনকে কিংবা আহলে বাইতের অন্য সদস্যকে ভালবাসার নামে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহুকে দোষারােপ করা তাঁর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া প্রকৃতপক্ষে হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু তথা আহলে বাইতকে কে দোষারােপ করার নামান্তর।
হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন একাধারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত, একজন সম্মানিত কাতেবে অহী, কুরাইশ বংশীয় এবং অন্যান্য বহু সাহাবায়ে কিরামের শ্রদ্ধারপত্র। যদিও হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহ তা'আলার সাথে তাঁর ইজতিহাদী মতবিরােধ ছিল, কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম সেটার সম্মানজনক মীমাংসা করে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহুকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দান করেছেন এবং তাঁকে কোনরুপ দোষারোপ থেকে বিরত থেকেছেন। যুগ যুগ ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমামগণ হয়রত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য করা তাে দূরে থাক, বরং তাকে যারা দোষারােপ করে তাঁদেরকে গােমরাহ বলেছেন।
হাদিস ২ঃ
--------------
সহীহ বুখারী শরীফ প্রণেতা ইমাম বুখারী (রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু) তাঁর ‘আত-তারীখুল কাবীর' এ এবং অন্যান্য হাদীছগ্রন্থে হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর শানে বর্ণনা করেছেন যে,
قال عمیر بن سعد رضuی الله عنه : لا تذكروا معاوية إلا بخير فإنی سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «اللهم أجعله هاديأ مهديأ وأهد به »
অর্থাৎ,“হযরত উমাইর ইবনু সা'আদ রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তােমরা হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছু বলনা (অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধে কোন খারাপ মন্তব্য করা থেকে দূরে থাক) । কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (হযরত মুয়াবিয়া রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর ব্যাপারে) বলতে শুনেছি যে, (তিনি তাঁর জন্য দোয়া করতেছেন) হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে (হযরত মুয়াবিয়া রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুকে) হেদায়তকারী, হেদায়তপ্রাপ্ত কর। আর তাঁর দ্বারা অন্যদের ও হেদায়ত কর।
তথ্যসূত্রঃ
-----------
১. رواه البخ ری فی«التاریخ الکبیر»(240/5)
২. وأحمدفی«المسند »(17929)
৩. والترمذیفی«جامعه»(3843)
৩. والطبر انی فی«المعجم الأوسط»(656)
৪. وفی«مسند امشمین»(2198)
৫. وابن أبی عصم فی«الآحادوالمثنی»(3129)
৬. والأجری فی«الشرف یعة»(1914, 1915)
৭. والخطیب فی«تاریخه»(207/1)
৮. وأبو نعیم فی«الحلیة»(358/8)
৯. وفی«أخبرأصبهان (180/1)
১০. والخلال فی«السنة»(676)
(وهو صحیح.)
|| সুন্নি সাইবার টিম
শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার একমাত্র নবী-বংশই | নবী-বংশের মর্যাদা
----------------------------------------
এ কথা দিবালােকের চেয়েও সত্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বংশ হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশ ব্যতিত পৃথিবীর আর কোন বংশ পরস্পরের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারেনা। সমগ্র মানবজাতির মধ্যে নবীরাই শ্রেষ্ঠ।
যেমন, ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বলেন,
افضل النوع الانسان-كما قال الفخر الرازی
অর্থাৎ, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র বংশ হচ্ছে, মানব জাতির শ্রেষ্ঠতম বংশ।” আবার নবীদের মধ্যে আমাদের আক্বাও মাওলা সায়্যিদুনা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই শ্রেষ্ঠ।
আয়াত ১ঃ
-------------
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
تلك الرسل فضلنا بعضهم على بعض من كم من گلم الله ورفع بعضهم درجات
অর্থাৎ, “এই সম্মানিত রাসূলগণ। তাঁদের কারাে একজনের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাঁদের মধ্যে কারাে কারাে সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, আবার কাওকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।”
[সূরা বাক্বারা; আয়াত: ২৫৩]
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলগণ প্রত্যেকে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। তবে তাঁদের মধ্যে, মর্যাদার স্তরবিন্যাস রয়েছে। আর এটাও বুঝা গেল যে, নবী-রাসূলদের মধ্যকার মর্যাদার স্তরবিন্যাসে সর্বোচ্চ স্তরে আমাদের প্রিয় নবী, খাতামুন্নবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম রয়েছেন। আর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অন্য নবী রাসূলদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তাঁর প্রমাণ হচ্ছে, তিনি পবিত্র মেরাজের রজনীতে সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালামের নামাযে ইমামতি করেছেন, যা সহীহ বুখারী শরীফের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। কেননা, শ্রেষ্ঠজনই ইমামতি করে।
হাদিস ১ঃ
------------
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
حدثنا إسحاق بن نصر : حدثنا حسين ، عن زائدة، عن عبد الملك ابن عمير، قال : حدثني أبو بردة، عن أبي موسى، قال: مرض النبى صلى الله عليه وسلم ، فاشتد مرضه، فقال: مروا أبا بكر فليصل بالناس قالت عائشة: إنه رجل رقيق، إذا قام مقامک لم يستطع أن يصلى بالناس، قال: مروا أبا بگر فلیصل بالناس فعادت,فقال: مری أبا بكر فليصل بالناس، فإنکن صواحبیوسف فأتهالرسول, فصمی بالناس في حياة النبي صلى الله عليه وسلم -
এই হাদীছের ব্যাখায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনু রজব হাম্বলী বলেন,
استدل البخارى بهذا الحديث على أن أهل الفضل والعلم أحق بالإمامة من غيرهم؛ فإن النبي (أمر أبا بكر من بين الصحابة كلهم بالصلاة بالناس، وروجع في ذلك مرارأ وهويابي إلا تقديمه في الصلاة على غيره من الصحابة، وإنما قدمه لعلمه وفضله؛ فأما فضله على سائر الصحابة فهو ما اجتمع عليه أهل السنة والجماعة، و أما علمه فكذلك.
অর্থাৎ, “এই হাদীছ দ্বারা ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি দলীল পেশ করেছেন যে, শ্রেষ্ঠজন এবং জ্ঞানীগণই অন্যদের চেয়ে ইমামতির জন্য অধিক উপযুক্ত। কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের অনেকে উপস্থিত থাকলেও হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুকেই মানুষের নামাযে ইমামতি করার আদেশ করেছেন। অথচ (হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর হৃদয়ের কোমলতার কারণে) বার বার তাঁকে ইমামতির আসনে না দেয়ার অনুরােধ সত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ছাড়া অন্য কোন সাহাবাকে ইমামতিতে অগ্রগামী করতে অস্বীকার করেন। আর তিনি সাল্লাল্লহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে (হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহুকে) প্রাধান্য দেয়ার কারণ হচ্ছে, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জ্ঞান। আর সমস্ত সাহাবার ওপর হযরত আবু বকর রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর শ্রেষ্ঠত্ব এবং অধিক জ্ঞানের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত।
[ফতহুল বারী ফী শরহিল বুখারী; কৃত-ইবনু রজব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি]
একই হাদীছের ব্যাখায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনু রজব হাম্বলী আরাে বলেন,
وقليل اللیث: یٶمهم أفضلهم وخیر هم,ثم أقر ٶهم,ثم أسنهم
অর্থাৎ,“আর ইমাম লাইছ বলেন, লােকদের ইমামতি করবে (প্রথমত) তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী এবং উত্তম ব্যক্তি, অতঃপর তাদের মধ্যে অধিক বিশুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াতকারী, অতঃপর তাদের মধ্যে অধিক বয়স্কজন।”
[ফতহুল বারী ফী শরহিল বুখারী; কৃত-ইবনু রজব আল হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি]
হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অনন্য সৃষ্টি, সমস্ত মানবজাতি এমনকি নবী-রাসূলদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
হাদিস ২ঃ
------------
রাসুলুল্লাহ (দ.) ইরশাদ করেন,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: "أنا سيد ولد آدم ولا فخر، وأول من ينشق عنه القبر، وأول شافع، وأول مشفع" رواه مسلم.
অর্থাৎ, “আমি আদমসন্তানদের সায়্যিদ তথা শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত, আর এতে আমার কোন অহংকার নাই। আর কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম আমার কবরই খোলা হবে। আমিই প্রথম শাফা'আতকারী (সুপারিশকারী), আমার সুপারিশই প্রথম কবুল (গ্রহণ) করা হবে।”
[সহীহ মুসলিম শরীফ]
সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি বলেন,
وهذا الحديث دليل لتفضيله صلى الله عليه وسلم على الخلق كلهم، لأن مذهب أهل السنة أن الآدميين أفضل من الملائكة وهو صلى الله عليه وسلم أفضل الادیین وغیر هم"
অর্থাৎ, “এই হাদীছ সমগ্র সৃষ্টির ওপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র শ্রেষ্ঠত্বের দলীল। কেননা, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের মতে, সমস্ত আদম সন্তান ফেরেস্তা থেকে উত্তম আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমস্ত আদম সন্তান ও অন্যান্য সৃষ্টির চেয়েও শ্রেষ্ঠ।”
[শরহু সহীহিল মুসলিম; কৃত, আল্লামা ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি]
_________________
|| সুন্নি সাইবার টিম
নবী-বংশের উপাধি 'সায়্যিদ' | নবী-বংশের মর্যাদা
প্রনিধানযােগ্য যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন “সায়্যিদ অনুরুপ তাঁর পবিত্র বংশধরদেরকেও “সায়্যিদ” বলা হয়। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে “সায়্যিদ" তথা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
হাদিস ১ঃ
------------
মুসনাদে ইমাম আহমদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ان الحسن والحسين سيدا شباب أهل الجنة، وان فاطمة الزهراء سيدة نساء العالمين
অর্থাৎ,“নিশ্চয় হযরত হাসান এবং হযরত হােসাইন রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহুমা হচ্ছেন জান্নাতের যুবকদের সর্দার আর হযরত ফাতেমাতুজ্ব জাহরা রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা হচ্ছেন দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার।”
[মুসনদে ইমাম আহমদ; কৃত- আল্লামা ইমাম আহমদ ইবনুল হাম্বাল রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি]
হাদিস ২ঃ
------------
আমালী কিতাবে মুসনদে ইমাম আহমদের সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে,
عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قال في فاطمة (وإنهالسيدة نساء العالمين)، فقيل يا رسول الله : أهي سيدة نساء عالمها؟، فقالت تلك مريم ابنة عمران، فأما ابنتى فاطمة فهي سيدة نساء العالمين من الأولين والآخرين).
অর্থাৎ,“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি (সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহার ব্যাপারে ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তিনি (হযরত ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহা) হচ্ছেন দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তিনি কি শুধু তাঁর যুগের সমস্ত রমনীদের সর্দার? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করলেন, (না); বরং এরকম ছিল ইমরান তনয়া মরিয়ম। আর আমার এই কন্যা ফাতিমা হচ্ছেন দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত মহিলাদের সর্দার।”
[আমালী; কৃত-আল্লামা ---- রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি]
হাদিস ৩ঃ
------------
আল মুসতাদরিক আল হাকিম এ বর্ণিত হয়েছে যে,
یا فاطمة ألا ترضين أن تكوني سيدة نساء العالمين ، وسيدة نساء هذه الأمة
অর্থাৎ,“হে ফাতিমা (রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা) তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার এবং এ উম্মতের সমস্ত রমনীদের সর্দার?
[মুসতাদরিক আল হাকিম; কৃত- আল্লামা ---- রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি]
হাদিস ৪ঃ
------------
وعن عمران بن حصين أن الرسول صلى الله عليه وسلم قال لفاطمة: (أما ترضين أن تكوني سيدة نساء العالمين، قالت: فأين مريم ابنة عمران، قال لها: أي بنية، تلك سيدة نساء عالمها، وأنت سيدة نساء العالمين).
অর্থাৎ, “হযরত ইমরান ইবনু হােসাইন (রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ করেন, হে ফাতিমা (রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা) তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার? তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তাহলে ইমরান তনয়া মরিয়মের অবস্থান কোথায়? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাতিমাকে বললেন, হে প্রিয় কন্যা! মরিয়ম আলাইহাস সালাম হচ্ছেন তাঁর যুগের সমস্ত রমনীদের সর্দার। আর তুমি দুনিয়ার সমস্ত মহিলাদের সর্দার।”
[কৃত- আল্লামা ---- রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি]
আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান ও হােসাইন রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুমাকে সন্তান বলেই সম্বোধন করতেন। যেমন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত হাসান রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ان ابنی هذا سید অর্থাৎ, “আমার এই সন্তান (হাসান রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু) হচ্ছে সায়্যিদ তথা সর্দার।”
[কৃত- আল্লামা ---- রাহমাতুল্লাহি তা'আলা আলাইহি]
এভাবে হযরত ফাতিমা (রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহা)'র সুত্র তাঁর দু সন্তান হযরত হাসান ও হযরত হােসাইন রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহুমার সন্তানগণ আওলাদে রাসূল বা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র বংশধর হিসেবে গণ্য এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত রাসূলুল্লাহ (সালালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র সমস্ত বংশধর সায়্যিদ। এজন্য যুগযুগ ধরে সায়্যিদ বলতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র পবিত্র বংশধর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তাঁদের যথাযােগ্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয।
উলেখ্য, যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র তিনজন পুত্র সন্তানের কেউ জীবিত ছিলেন না, তাই তার সমস্ত বংশধর তাঁর চারজন কন্যার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছেন।
নিম্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র সন্তানের একটি তালিকা দেয়া হলঃ
তিন পুত্র-সন্তানঃ
১. সায়্যিদুনা হযরত সায়্যিদ কাসেম রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ আলকারশী রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহার সন্তান। তাঁর নামেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র উপনাম আবুল কাসেম' হয়।
২। সায়্যিদুনা হযরত সায়্যিদ আব্দুল্লাহ রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ আলকারশী রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহার সন্তান। তাঁর নামেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র উপনাম ‘আত্-ত্বাহির', ‘আত্-ত্বায়্যিব নামেও ডাকা হয়।
৩। সায়্যিদুনা হযরত সায়্যিদ ইব্রাহীম রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র দাসী হযরত মারিয়া আল-কিবত্বিয়্যাহ রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহার সন্তান। তাঁর ইন্তিকালের পর কাফিররা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে নির্বংশ দাবি করেন, তখন আল্লাহ তা'আলা 'সূরা আল-কাউছার' নাযিল করে কাফিরদেরকে নির্বংশ ঘােষণা করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র ওপর আল্লাহ তা'আলার বিশেষ অনুগ্রহ ‘আল-কাউছার'-এর ঘােষণা দেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র উপরােল্লিখিত তিনপুত্র সন্তানই ছােটকালে ইন্তিকাল করেন।
চার কন্যা-সন্তানঃ
১। সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা জয়নাব রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা।
২। সায়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়্যা জয়নাব রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা।
৩। সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা উম্মু কুলছুম রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা।
৪। সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র উপরােল্লিখিত চার কন্যা-সন্তানের সকলেই তাঁর প্রথম স্ত্রী হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ আলকারশী রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহার সন্তান। এঁদের মধ্যে সায়্যিদাতুনা হযরত সায়্যিদা ফাতিমা রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র বিশেষ প্রিয় ছিলেন এবং তিনি হযরত আলী রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুর স্ত্রী ও সায়্যিদুনা হযরত হাসান ও সায়্যিদুনা হযরত হােসাইন রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহুমার মা ছিলেন।
|| সুন্নি সাইবার টিম
নবী-বংশের মিথ্যা দাবিদারদের পরিণতি | নবী-বংশের মর্যাদা
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম)'র বংশধরদের সম্মান ও মর্যাদার কথা পবিত্র কোরঅান ও হাদীছে স্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত হওয়ায় মুমিন-মুসলমানদের অন্তরে তাঁদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অন্য যেকোনো মানুষ থেকে ঢের বেশি। তাদের সম্মান ও শান-শওকত দেখে কিছু মিথ্যাবাদী-স্বার্থপর নিজেদেরকে নবী বংশের দাবি করে বসে, যাতে সাধারণ মুসলমানদের কাছ থেকে সম্মান অাদায় করতে পারে। বিশেষ করে দুনিয়ার লােভ তাড়িত ব্যক্তিরা মূলত এরকম মিথ্যার অাশ্রয় নিয়ে থাকে। এতে করে তাঁদের স্বার্থ হাসিল হলেও তাদের স্বার্থবাদী কর্মকান্ডে নবী-বংশের পবিত্রতার ওপর কালিমাযুক্ত হয়। সাধারণ সরলমনা মুসলমানরা সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করতে না পেরে এসব ভন্ডের কারনে সত্যিকার অাওলাদে রাসুল গণের বদনাম করে, ক্ষেত্রবিশেষ বিরোধিতাও করে বসে। যা উম্মতের জন্য বড়ই পরিতাপের এবং আল্লাহর গযব নাযিল হওয়ার মাধ্যম। যারা নিজের বংশপরিচয় গোপন করে নিজেকে অন্য বংশের দাবি করে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু অালাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ব্যাপারে কঠিন আযাবের হুঁশিয়ারী দিয়েছে | অার সে দাবী যদি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)'র বংশ নিয়ে হয়, তার পরিনাম কত কঠিণ হতে পারে?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারেও ইরশাদ করেন,
হাদিস ১ঃ
------------
عن سعد رضی الله عنه قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: "من ادعی إلى غير أبيه وهو يعلم أنه غير أبيه فالجنة عليه حرام (رواه البخاری ومسلم)
অর্থাৎ,“হযরত সায়্যিদুনা সা'দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অপর কাউকে পিতা বলে দাবি করে, তার জন্য জানাত হারাম (অর্থাৎ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদিস ২ঃ
------------
عن أبي هريرة عن النبى صلى الله عليه وسلم قال لا ترغبوا عن آبائکم فمن رغب عن أبيه فهوکفر (رواه البخاری ومسلم)
অর্থাৎ,“হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তােমরা তােমাদের পিতৃ-পুরুষদের থেকে বিমূখ হয়ােনা (তাদের বংশকে অস্বীকার করােনা)। যে ব্যক্তি তার পিতৃ-পুরুষদের থেকে বিমূখ হয় (তাদের বংশকে অস্বীকার করে), সেটা কুফরি।”
(সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
হাদিস ৩ঃ
------------
عن إبراهیم التیمی عن أبیه قال خطبنا علی بن أبی طالب فقال: ... ومن ادعی إلى غير أبيه أو انتمى إلى غير مواليه فعليه لعنة الله والملائكة والناس أجمعين لا يقبل الله منه يوم القيامة صرفا ولا عدلا (رواه المسلم)
অর্থাৎ,"হযরত ইবরাহীম আততাইমি রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর সম্মানিত পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, একদা হযরত সায়্যিদুনা আলী রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা
আনহু আমাদের সামনে বক্তব্য রাখলেন, তিনি (হযরত সায়্যিদুনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতা ব্যতিরেকে অপকাউকে নিজের পিতা বলে দাবি করে অথবা নিজের মুনিবকে বাদ দিয়ে অপকাউকে নিজের মুনিব বলে দাবি করে, তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের এবং প্রত্যেক মানুষের অভিশাপ। আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের দিন তার থেকে কোন কিছু বিনিময়স্বরুপ গ্রহণ করবেননা।”
(সহীহ মুসলিম শরীফ)
এই হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর শরহে মুসলিম এ বলেন,
وأما قولی صلى الله عليه وسلم فيمن إدعى لغير أبيه وهو يعلم أنه غير أبيه، كفر
অর্থাৎ,“ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি নিজের পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অপর কাউকে পিতা বলে দাবি করে, সে কুফরি করলাে।”
(শরহে সহীহ মুসলিম শরীফ, কৃত ইমাম নববী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)
হাদিস ৪ঃ
------------
وقال قوله صلى الله عليه وسلم: (إئنتان في الناس هما بهم کفر: الطعن في النسب,والنیل حةعلی المیت)
অর্থাৎ,"রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষের স্বভাবজাত কাজের মধ্যে দুটি কাজ কুফরি।
(১) বংশ অস্বীকার করা
(২) মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা।”
(শরহে সহীহ মুসলিম শরীফ, কৃত ইমাম নববী রাহমাতুল্লঅহি আলাইহি)
উল্লেখ্য, উপরিউক্ত বর্ণনায় কুফরি করার অর্থ হল, আল্লাহর নেয়ামতের অস্বীকার করা। কেননা, বংশধারা আল্লাহর নেয়ামত এবং পিতাও পুত্রের জন্য আল্লাহর নেয়ামত বা বিশেষ অনুগ্রহ। পিতা ব্যতিত পুত্রের অস্থীত্ব কল্পনা করা যায়না। তবে এর দ্বারা ঐ কুফুরী বুঝানাে হয়নি যা দ্বারা ঈমান থেকে বের হয়ে যায়।
হাদিস ৫ঃ
------------
عن أبی ذر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ليس من رجل ادعی لغير أبيه وهو يعلمه إلا كفر، ومن ادعی قوما ليس له فيهم نسب فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থাৎ,“হযরত আবু যর রাদ্বিআল্লাহ তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি নিজের পিতা সম্পর্কে অবগত থাকা সত্ত্বেও অপর কাউকে পিতা বলে দাবি করে, সে কুফরি করলাে। আর যে নিজেকে এমন বংশের লােক বলে দাবি করে, যে বংশের সাথে তার আদৌ সম্পর্ক নাই, সে ব্যক্তি নিজের ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নিল।”
(সহীহ বুখারী মুসলিম শরীফ)
হাদিস ৬ঃ
------------
عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من كذب علی متعمدا فليتبوأ مقعده من النار
অর্থাৎ,“হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়।”
(সহীহ বুখারী,মুসলিম, তিরমিজী, আবু দাউদ, ইবনু মাযাহ, মসনদে আহমদ শরীফ)।
|| সুন্নি সাইবার টিম