আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত: ইসলামের সঠিক পথ ও মত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
নাহমাদুহু ও নুসল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম
আম্মা বা’আদ।
মহান আল্লাহতা’লা তাঁর পাক কালামে মুসলমানবৃন্দকে দুআ করতে আদেশ করেন এই মর্মে:
ٱهْدِنَا ٱلصِّرَاطَ ٱلْمُسْتَقِيمَ، صِرَاطَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ، غَيْرِ ٱلْمَغْضُوبِ عَلَيْهِم وَلاَ ٱلضَّآلِّينَ
অর্থ: (হে প্রভু), আমাদেরকে সোজা পথে পরিচালিত করুন; তাঁদেরই পথে যাঁদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথে নয় যাদের প্রতি গযব/খোদায়ী শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছে; আর পথভ্রষ্টদের পথেও নয়। [সূরা ফাতিহাহ, ৫-৭ আয়াত; নূরুল এরফান]
এই হচ্ছে সোজা-সরল পথ ও মত - খোদাতা’লা হতে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র প্রাপ্ত ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর প্রচারিত ইসলাম ধর্মের মৌলিক আক্বীদা-বিশ্বাস।
আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এই প্রসঙ্গে এরশাদ ফরমান: "আমার উম্মত অনতিবিলম্বে ৭৩ দলবিভক্ত হবে; একটি দল ছাড়া বাকি সবাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন: “কোন্ দলটি নাজাতপ্রাপ্ত হবে, এয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)?” এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন: “আমি ও আমার সাহাবা যে পথ ও মত তথা আক্বীদা-বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তার অনুসারীরাই মুক্তি পাবে। [সুনানে তিরমিযী; হাদীস নং ২৬৪১ - আরবী এবারত: وتفترق امتي على ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار إلا ملة واحدة، قالوا: ومن هي يا رسول الله؟ قال: ما انا عليه واصحابي]
এই জ্যোতির্ময় আক্বীদা-বিশ্বাস, যার ধারক ও বাহক হলেন মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর অনুগত সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম), তা সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের সম্যক অবগত হওয়া জরুরি। কেননা ইসলামের ছদ্মবেশে এমন বাহাত্তরটি গোমরাহ-পথভ্রষ্ট দল আবির্ভূত হবে, যাদের মহাভ্রান্ত ধ্যানধারণা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)’এর আক্বীদা-বিশ্বাসের একদম পরিপন্থী হবে বা তার সাথে সাংঘর্ষিক হবে।
ওপরে উক্ত হাদীসে বর্ণিত বাহাত্তরটি ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব হয়েছে। তারা তাদের ভ্রান্ত ধ্যানধারণা অপপ্রচার করছে। এই সঙ্কটকালে মুসলমান সমাজের সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করা একান্ত অপরিহার্য। ওই নাজাত লাভকারী আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরেকটি হাদীস শরীফে স্পষ্ট বলেন:
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي
অর্থ: আমার সুন্নাত (সুন্নী আক্বীদাহ-বিশ্বাস/রীতিনীতি) তোমাদের প্রতি বিধেয় (তথা আজ্ঞা হিসেবে আরোপিত) হলো। [সুনানে ইবনে মাজাহ, বই নং ১, হাদীস নং ৪৪]
রাসূলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আরো এরশাদ করেন:
فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي
অর্থ: যে ব্যক্তি আমার সুন্নী আদর্শ/রীতিনীতি হতে ফিরে গেলো (তথা প্রত্যাখ্যান করলো), সে আমার (দলভুক্ত) নয়। [সুনানে নাসাঈ, বই নং ২৬, হাদীস নং ৩২১৭]
এটাই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র নাজাত লাভকারী আদর্শ বা আক্বীদা-বিশ্বাস, যেটা সম্পর্কে তিনি তিয়াত্তর দলের বর্ণনাসম্বলিত হাদীসে উল্লেখ করেছেন। এই আশীর্বাদময় সুন্নী আক্বীদা-বিশ্বাস ধারণ করেই মুসলমান সমাজ আখেরাতে মুক্তি অর্জন করবেন। পক্ষান্তরে, বাহাত্তরটি পথভ্রষ্ট দল সুন্নী আক্বীদা-বিশ্বাস বর্জন করার ফলশ্রুতিতে জাহান্নামে যাবে। তারা নিজেদেরকে ইসলামী দল হিসেবে প্রদর্শন করবে ঠিক, কিন্তু তারা সূরাতুল ফাতিহায় আল্লাহতা’লা কর্তৃক প্রতিশ্রুত রহমত-বরকত হতে বঞ্চিত হবে।
যে পথ ও মতের ওপর আল্লাহতা’লার রহমত-বরকত বর্ষিত হচ্ছে, তা আমাদের প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)’র সুন্নী আক্বীদা-বিশ্বাস বা আদর্শ; এই পথ ও মত গ্রহণ করেছেন তাঁরই সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ও আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহে আলাইহিম)। আর যুগে যুগে এর দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সুন্নী উলামায়ে হাক্কানী/রাব্বানী তথা বুযূর্গানে দ্বীন। বড়পীর গাউসুল আযম হযরত আবদুল ক্বাদের জিলানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাঁর প্রণীত ‘গুনিয়াতুত-তালেবীন’ পুস্তকে বেহেশ্ত লাভকারী এই দলটিকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’ বলে চিহ্নিত করেন। মুসলমানদের উচিৎ আউলিয়া-দরবেশবৃন্দের গৃহীত এই নেআমত-প্রাপ্ত দলটির অনুসরণ করা এবং এর বিরোধিতাকারী এবং এরই কুৎসা রটনাকারী বাহাত্তরটি দলকে বর্জন করা। ইসলামের স্বর্ণযুগে আউলিয়া কেরাম (রহমতুল্লাহে আলাইহিম)-ই ছিলেন ইসলামের পতাকাবাহী, উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা।
আজকে অনেক ভ্রান্ত দলের আবির্ভাব হয়েছে। ওহাবী, মওদূদী, সালাফী, তাবলীগী, শিয়া, কাদিয়ানী প্রভৃতি দল প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর আউলিয়াবৃন্দের সুন্নী মতাদর্শকে গালমন্দ করছে। তারা নিজেদের ভ্রান্ত মতবাদ পীস্ টিভি, এটিএন বাংলা ইত্যাদি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে এবং ইন্টারনেটে প্রচার করছে। এগুলোর সবই চলছে ‘তাফসীরুল ক্বুরআন’ ও ‘সীরাতুন্নবী (দ:)’ শিরোনামে। এছাড়া বইপত্র তো আছেই। তাই মুসলমানদেরকে এই সব গোমরাহ দল সম্পর্কে সচেতন ও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।
*সমাপ্ত*