("ইসলামের চারটি মৌলিক বিষয়" কিতাব টির এ্যাপ আসছে। সবার দোয়া কামনা করি।)
ঈমান শব্দটি আমন্ শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে, শান্তি দেয়া এটি মহান প্রভূর একটি গুনবাচক নামও। এ কারণে তার পবিত্র নাম মুমিনও। অর্থাৎ আপন বান্দাদেরকে স্বীয় কহ্হর ও আযাব থেকে শান্তি ও পরিত্রান দানকারী। আর এটা বান্দার গুণও বটে। এ কারণে কুরআন করীম মুসলমানদেরকে মুমিন নামে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ সঠিক আকিদা পােষণ করে নিজেকে আযাবে ইলাহী থেকে শান্তি বা মুক্তিদানকারী। শরীয়তের পরিভাষায় ঐ সব আকিদার নাম ঈমান, যা পােষণ করার কারণে মানুষ কুফরী থেকে রক্ষা পায় এবং মুমিনদের দলে অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়।
ঈমানের প্রাণ পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর মধ্যে একটি অবয়ব ও একটি প্রাণ থাকে। আর প্রাণবিহীন অবয়ব মূল্যহীন। মানব দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষণ সে যাবতীয় সম্মানের যােগ্য থাকে। উন্নত খাবার, উত্তম পােষাক, মনােরম আট্টালিকা, মন্ত্রিত্ব, নেতৃত্ব, রাজস্ব ইত্যাদি প্রাণ বিশিষ্ট দেহেই শােভনীয়। প্রাণ ত্যাগ করা মাত্রই জমিনে সমাধিত করা ব্যতীত অন্য কোন কাজে আসে না। গাছপালা যতক্ষণ জীবিত থাকে; ততক্ষন তার মধ্যে তাজা ফল, ফুল সব কিছু থাকে। নির্জীব হওয়া মাত্রই চুলার ইন্দনে পরিণত হয়। বাল্ব, টিভি, ফ্যান ইত্যাদি সাজসরঞ্জাম বৈদ্যুতিক পাওয়ার (শক্তি) প্রাপ্তিতে স্বক্রিয়। পাওয়ার ব্যতিরেকে একেবারে নিঃস্ক্রিয়। অনুরূপ ভাবে, নামায রােযা, হজ যাকাত, ঈমান প্রভৃতির অবয়ব ও প্রাণ আছে। জীবন বিশিষ্ট ইবাদত ও ঈমান আল্লাহর দরবারে সম্মানিত ও মূল্যায়িত। জীবনহীন নামায ঈমান প্রভৃতির না আছে সম্মান, না আছে মূল্য।
স্মরণ রাখুন, কলেমা পাঠ করা এবং ঈমানে মুজম্মাল ও মুফাচ্ছল, বর্ণিত বিষয়াদিকে মেনে নেয়া হলাে ঈমানের অবয়ব। কিন্তু ঈমানের প্রাণ অন্য জিনিস আর তা হচ্ছে নাবুয়াতকে উলুহিয়াতের সাথে, আর নবীকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা। আল্লাহ ও রসুলের মাঝে সম্পর্কহীনতা সৃষ্টি করলে মানুষ কাফের হয়। আর পক্ষান্তরে আল্লাহকে রাসুলের সাথে সম্পর্কিত করলে মুমিন হয়। কুরআন করীমের ফতুয়া পর্যালােচনা করুনঃ
و يريدون أن يفرقوا بين الله ورسوله ويقولون نؤمن ببعض ونكفر ببعض ويريدون أن يتخذوا بين ذلك سبيلا. أولئك هم الكافرون حقا و اعتدنا للكفرين عذابا مهينة.
(এবং তারা চায় যে, মহান আল্লাহ ও তার রসুলগণের মধ্যে পার্থক্য করে দিতে, আর বলে, আমরা কিয়দাংশের প্রতি ঈমান আনবাে এবং তারা চায় যে, এরই মাঝে অন্য একটি পন্থা অবলম্বন করতে। এ সমস্ত লােক জঘন্য কাফের আর আমি কাফেরদের জন্যে অপমান জনক আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি।)
কুরআনে করীমের ফতওয়া দ্বারা প্রমাণিত হলাে যে, আল্লাহ ও রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর মধ্যে পার্থক্য মনে করা কুফর পক্ষান্তরে আল্লাহ ও রাসুলকে সম্পর্কিত করা ঈমান।
সম্পর্কিত করার মর্মার্থ
এ সম্পর্কিত করার মর্মার্থ এ নয় যে, রসুলকে খােদা মনে করা বা প্রভুকে রসুল ধারণা করা। আল্লাহ আল্লাহ, নবী নবীই। বরং সম্পর্কিত করার মর্মার্থ উদাহরণ স্বরূপ এভাবে বুঝে নিন যে, নােটের (টাকার) মধ্যে কাগজও আছে এবং সরকারী মােহরও আছে। কিন্তু মােহর কাগজ নয়, কাগজ মােহর নয়। অথচ মােহর কাগজের সাথে এমন ভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে যে, যদি কাগজ থেকে এটাকে পৃথক করা হয়; তাহলে কাগজ মূল্যহীন হয়ে পড়বে। হারিকেনের চিম্নি স্বচ্ছ। তাই চিনির রং বাতির আলাের সাথে এমনভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে যে, ঘরের যে কোনায় বাতির আলাে আছে তথায় চিনির রং আছে। এমন কোন স্থান পাওয়া যাবে না, যেখানে বাতির আলাে আছে কিন্তু চিনির রং নেই। কুরআন করীম বলেন- مثل نوره كمشكوة فيها مصباح المصباح فى الزجاجه (তার নূরের উদাহরণ হলাে, একটি তাক, তার মধ্যে একটি বাতি, যে বাতিটি চিনির মধ্যে অবস্থিত।) | উক্ত আয়াতে করীমার বিভিন্ন তফসীর রয়েছে। যার মধ্যে একটি তফসীর এও আছে যে, তৌহিদে ইলাহী যেন একটি আলাে। আর মুহাম্মদ মােস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হলেন যেন একটি চিনি। ভেবে দেখুন, কলেমা তায়্যৈবা হলাে তৌহিদ। কিন্তু এতে তৌহিদের পরে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর রেছালতও উল্লেখ রয়েছে। শব্দ বিন্যাস দেখুন কলেমার প্রথমাংশ لا إله إلا الله (লাইলাহা ইল্লাল্লাহু) এর মধ্যে আল্লাহ শেষে রয়েছে এবং দ্বিতীয়াংশ محمد رسول الله , (মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ) এর মধ্যে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নাম প্রথমে। কিন্তু প্রথমাংশে الله لا إله إلا هو (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া) না দ্বিতীয়াংশে رسول الله محمد(রসুলুল্লাহে মুহাম্মদুন) লিখা হয়েছে। মুহাম্মদ, শব্দটি প্রথমে এসেছে। তা এ জন্য যে, যেন হুযুরের নাম আল্লাহর নামের সাথে মিলিত থাকে। যখন মহান আল্লাহ তার এবং তাঁর হাবীবের নামের পৃথকতা মেনে নেননি; তখন অন্যত্র তার এবং তাঁর হাবীবের মাঝে পার্থক্য কি করে পছন্দ করবেন? কুরআন করীমে অনেক স্থানে নিজের নামকে তাঁর হাবীবের নামের সাথে সংযােজন করেছেন। যেমন বলেন
_ وأطيعوا الله وأطيعوا الرسول
(আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য স্বীকার করাে) و من يطع الله و رسوله فقد فاز فوزا عظيما.(আল্লাহ ও তাঁর রসুলের যারা আনুগত্য স্বীকার করে; তারা বড় বিজয়ী ।
و الله و رسوله احق ان يرضوه
(আল্লাহ ও তাঁর রসুল অত্যধিক হকদার। যে, তাঁকে রাজী করার)
اغناهم الله و رسوله من فضله
(আল্লাহ ও তার রাসূল তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা ধনী করে দিয়েছেন।
و من يخرج من بيته محاجرا إلى الله و رسوله
(যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি হিযরত করে নিজেদের ঘর-বাড়ী থেকে বের হয়েছেন)
و يرى الله عملكم ورسوله
(আল্লাহ ও তাঁর রসুল তােমাদের আমল দেখবেন।)
لا تقدموا بين يدي الله ورسوله
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আগে এগিও না)।
فامنو بالله و رسوله
(আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আন)।
و لو أنهم رضوا ما اتاهم الله و رسوله
(যদি তারা এর উপর রাজী হয়, যা তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসুল দান করেছেন।)
اذ تقول للذي انعم الله عليه و أنعمت عليه
(যখন আপনি তার সাথে বলতেন; যার প্রতি আল্লাহ ও আপনি পুরস্কার দান করেছেন)।
হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর বিশিষ্ট কবি হযরত হাচ্ছান ইবনে সাবিত (রাঃ) বলেনঃ
ضم الاله اسم النبى باسمه - اذ قال في الخمس المؤذن أشهد
(মহান আল্লাহ তার নবীর নামকে তাঁর নামের সাথে সংযােজিত করেছেন; - পাঞ্জেগানা নামাজের তকবীর ও আযানে মুয়াজ্জিন ও মুকাব্বির আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলতেই আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহও বলেন।)
. উল্লেখ্য যে, হযরত হাচ্ছান সেই ভাগ্যবান নাত পাঠকারী সাহাবী, যার এক একটি শের’ এর উপর হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বার বার দোয়া করেছিলেন। তাঁর শের সমূহ নবী পাকের দরবার থেকে স্বীকৃতি ও প্রশংসার সনদ পত্র লাভ করেছেন। ইসলামিয়াত নিয়ে চিন্তা করলে সহজে অনুমেয় যে, মহান আল্লাহ তার হাবীবের সুন্নাতকে আপন ফরয সমূহের সাথে এমন ভাবে সংশিষ্ট করে দিয়েছেন যে, কোন এবাদত সুন্নাত থেকে খালি নয়। পঞ্জেগানা নামাজে- জোহরের ফরয চার রাকাত, আগে পিছে 'সুন্নাত ছয় ছয় রাকাত। মগরীবের নামাজে ফরয তিন রাকাত, আর সুন্নাত ও নফল চার রাকাত, অতপর ফরয আদায় করতে গেলেও ছােবহানাকা আল্লাহুম্মা পাঠ করা সুন্নাত, আউজুবিল্লা ও বিসমিল্লাহ পাঠ সুন্নাত, তারপর তেলাওয়াতে কুরআন করীম হচ্ছে ফরয, রুকু সিজদা ফরয, তার তাসবীহগুলাে সুন্নাত। রমজানের রােযা ফরয, সেহরী, ইফতার, তারাবীহ সুন্নাত।
নিজ জীবনের দিকে দেখুন, শিশু ভূমিষ্ট হতেই কানে আযান দেয়া সুন্নাত, -আকীকা সুন্নাত, খতনা সুন্নাত, শিশু প্রতিপালন সুন্নাত। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর ফরয জিম্মা শুরু হয়। আমরা সুন্নাতের ছত্রছায়ায় লালিত হই। যেমন জীবিকার্জন, বিয়ে-শাদী, স্ত্রীর বরণপােষণ সবই হচ্ছে সুন্নাত। মৃত্যু মুহূর্তে কলেমা পাঠ করানাে, কেবলা মুখী করা সুন্নাত, গােসল ও দাফনের তরিকা সুন্নাত। বস্তুতঃ সর্বক্ষেত্রে ফরয সুন্নাত সমূহের সাথে মিলেই রয়েছে। একারণেই আমাদের নাম আহলে ফরয বা আহলে ওয়াজিব কিংবা আহলে মুস্তাহাব নয় বরং আহলে সুন্নাত। অর্থাৎ আজীবন সুন্নাতের ছত্র ছায়ায় জীবন অতিবাহিতকারী এবং কিয়ামত দিবসে সুন্নাতের ছত্রছায়ায় অবস্থানকারী। বস্তুতঃ রূহে ঈমান হচ্ছে আল্লাহ রসুলকে সম্পর্কিত করা। শয়তান তথা হাজার রকমের কাফেরেরা আল্লাহর জাত (সত্ত্বা ছিফাত (গুণাবলী) ফিরিস্তাকুল, জান্নাত দোযখ ইত্যাদি বিশ্বাস করে, কিন্তু তারপরও তারা কাফির। কেননা তারা আল্লাহ রসুলকে সম্পর্কিত করে না। " জনৈক আনছারী ফসলে পানি দেয়া নিয়ে এক মামলা নবী পাকের আদালতে পেশ করেন কিন্তু তিনি নবীর দেয়া রায়ের উপর সন্তুষ্ট হননি। তাই তার প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ
فلا وربك لايؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم محرجا مما قضيت ويسلموا تسليما
(হে মাহবুব! আপনার প্রতিপালকের কসম, এ ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না; যতক্ষণ না সে তাদের মতানৈক্য বিষয়ে আপনাকে হাকিম স্বীকার করে এবং আপনার ফয়সালায় মনক্ষুন্ন হয় এবং অবনত মস্তকে গ্রহণ করে।)
কোন কোন সম্মানীত সাহাবীর আওয়াজ নবী পাকের দরবারে বড় হয়ে যেত।
তাঁদের প্রসঙ্গে এরশাদ হলাে
يا أيها الين امنوا لاترفعوا أصواتكم فوق صوت البين ولاتجهوا له بالقول كجهر بعضكم لبعض أن تحبط أعمالكم و انتم لا تشعرون.
হে মুমিনগণ! নবী পাকের আওয়াজের উপর তােমাদের আওয়াজকে বুলন্দ করােনা ।আর তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দরবারে এরূপ আওয়াজ বড় করাে না, যেরূপ তােমারা পরস্পরের মধ্যে করে থাক। অন্যথায় তােমাদের নেক আমল সমূহ বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে, যাতে তােমাদের (সে ব্যাপারে) খবরও থাকবে না।
ইসলামের চারটি মৌলিক বিষয়
হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ।
ঈমান শব্দটি আমন্ শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ হচ্ছে, শান্তি দেয়া এটি মহান প্রভূর একটি গুনবাচক নামও। এ কারণে তার পবিত্র নাম মুমিনও। অর্থাৎ আপন বান্দাদেরকে স্বীয় কহ্হর ও আযাব থেকে শান্তি ও পরিত্রান দানকারী। আর এটা বান্দার গুণও বটে। এ কারণে কুরআন করীম মুসলমানদেরকে মুমিন নামে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ সঠিক আকিদা পােষণ করে নিজেকে আযাবে ইলাহী থেকে শান্তি বা মুক্তিদানকারী। শরীয়তের পরিভাষায় ঐ সব আকিদার নাম ঈমান, যা পােষণ করার কারণে মানুষ কুফরী থেকে রক্ষা পায় এবং মুমিনদের দলে অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়।
ঈমানের প্রাণ পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুর মধ্যে একটি অবয়ব ও একটি প্রাণ থাকে। আর প্রাণবিহীন অবয়ব মূল্যহীন। মানব দেহে যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষণ সে যাবতীয় সম্মানের যােগ্য থাকে। উন্নত খাবার, উত্তম পােষাক, মনােরম আট্টালিকা, মন্ত্রিত্ব, নেতৃত্ব, রাজস্ব ইত্যাদি প্রাণ বিশিষ্ট দেহেই শােভনীয়। প্রাণ ত্যাগ করা মাত্রই জমিনে সমাধিত করা ব্যতীত অন্য কোন কাজে আসে না। গাছপালা যতক্ষণ জীবিত থাকে; ততক্ষন তার মধ্যে তাজা ফল, ফুল সব কিছু থাকে। নির্জীব হওয়া মাত্রই চুলার ইন্দনে পরিণত হয়। বাল্ব, টিভি, ফ্যান ইত্যাদি সাজসরঞ্জাম বৈদ্যুতিক পাওয়ার (শক্তি) প্রাপ্তিতে স্বক্রিয়। পাওয়ার ব্যতিরেকে একেবারে নিঃস্ক্রিয়। অনুরূপ ভাবে, নামায রােযা, হজ যাকাত, ঈমান প্রভৃতির অবয়ব ও প্রাণ আছে। জীবন বিশিষ্ট ইবাদত ও ঈমান আল্লাহর দরবারে সম্মানিত ও মূল্যায়িত। জীবনহীন নামায ঈমান প্রভৃতির না আছে সম্মান, না আছে মূল্য।
স্মরণ রাখুন, কলেমা পাঠ করা এবং ঈমানে মুজম্মাল ও মুফাচ্ছল, বর্ণিত বিষয়াদিকে মেনে নেয়া হলাে ঈমানের অবয়ব। কিন্তু ঈমানের প্রাণ অন্য জিনিস আর তা হচ্ছে নাবুয়াতকে উলুহিয়াতের সাথে, আর নবীকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করা। আল্লাহ ও রসুলের মাঝে সম্পর্কহীনতা সৃষ্টি করলে মানুষ কাফের হয়। আর পক্ষান্তরে আল্লাহকে রাসুলের সাথে সম্পর্কিত করলে মুমিন হয়। কুরআন করীমের ফতুয়া পর্যালােচনা করুনঃ
و يريدون أن يفرقوا بين الله ورسوله ويقولون نؤمن ببعض ونكفر ببعض ويريدون أن يتخذوا بين ذلك سبيلا. أولئك هم الكافرون حقا و اعتدنا للكفرين عذابا مهينة.
(এবং তারা চায় যে, মহান আল্লাহ ও তার রসুলগণের মধ্যে পার্থক্য করে দিতে, আর বলে, আমরা কিয়দাংশের প্রতি ঈমান আনবাে এবং তারা চায় যে, এরই মাঝে অন্য একটি পন্থা অবলম্বন করতে। এ সমস্ত লােক জঘন্য কাফের আর আমি কাফেরদের জন্যে অপমান জনক আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি।)
কুরআনে করীমের ফতওয়া দ্বারা প্রমাণিত হলাে যে, আল্লাহ ও রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর মধ্যে পার্থক্য মনে করা কুফর পক্ষান্তরে আল্লাহ ও রাসুলকে সম্পর্কিত করা ঈমান।
সম্পর্কিত করার মর্মার্থ
এ সম্পর্কিত করার মর্মার্থ এ নয় যে, রসুলকে খােদা মনে করা বা প্রভুকে রসুল ধারণা করা। আল্লাহ আল্লাহ, নবী নবীই। বরং সম্পর্কিত করার মর্মার্থ উদাহরণ স্বরূপ এভাবে বুঝে নিন যে, নােটের (টাকার) মধ্যে কাগজও আছে এবং সরকারী মােহরও আছে। কিন্তু মােহর কাগজ নয়, কাগজ মােহর নয়। অথচ মােহর কাগজের সাথে এমন ভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে যে, যদি কাগজ থেকে এটাকে পৃথক করা হয়; তাহলে কাগজ মূল্যহীন হয়ে পড়বে। হারিকেনের চিম্নি স্বচ্ছ। তাই চিনির রং বাতির আলাের সাথে এমনভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে যে, ঘরের যে কোনায় বাতির আলাে আছে তথায় চিনির রং আছে। এমন কোন স্থান পাওয়া যাবে না, যেখানে বাতির আলাে আছে কিন্তু চিনির রং নেই। কুরআন করীম বলেন- مثل نوره كمشكوة فيها مصباح المصباح فى الزجاجه (তার নূরের উদাহরণ হলাে, একটি তাক, তার মধ্যে একটি বাতি, যে বাতিটি চিনির মধ্যে অবস্থিত।) | উক্ত আয়াতে করীমার বিভিন্ন তফসীর রয়েছে। যার মধ্যে একটি তফসীর এও আছে যে, তৌহিদে ইলাহী যেন একটি আলাে। আর মুহাম্মদ মােস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) হলেন যেন একটি চিনি। ভেবে দেখুন, কলেমা তায়্যৈবা হলাে তৌহিদ। কিন্তু এতে তৌহিদের পরে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর রেছালতও উল্লেখ রয়েছে। শব্দ বিন্যাস দেখুন কলেমার প্রথমাংশ لا إله إلا الله (লাইলাহা ইল্লাল্লাহু) এর মধ্যে আল্লাহ শেষে রয়েছে এবং দ্বিতীয়াংশ محمد رسول الله , (মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ) এর মধ্যে হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নাম প্রথমে। কিন্তু প্রথমাংশে الله لا إله إلا هو (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া) না দ্বিতীয়াংশে رسول الله محمد(রসুলুল্লাহে মুহাম্মদুন) লিখা হয়েছে। মুহাম্মদ, শব্দটি প্রথমে এসেছে। তা এ জন্য যে, যেন হুযুরের নাম আল্লাহর নামের সাথে মিলিত থাকে। যখন মহান আল্লাহ তার এবং তাঁর হাবীবের নামের পৃথকতা মেনে নেননি; তখন অন্যত্র তার এবং তাঁর হাবীবের মাঝে পার্থক্য কি করে পছন্দ করবেন? কুরআন করীমে অনেক স্থানে নিজের নামকে তাঁর হাবীবের নামের সাথে সংযােজন করেছেন। যেমন বলেন
_ وأطيعوا الله وأطيعوا الرسول
(আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য স্বীকার করাে) و من يطع الله و رسوله فقد فاز فوزا عظيما.(আল্লাহ ও তাঁর রসুলের যারা আনুগত্য স্বীকার করে; তারা বড় বিজয়ী ।
و الله و رسوله احق ان يرضوه
(আল্লাহ ও তাঁর রসুল অত্যধিক হকদার। যে, তাঁকে রাজী করার)
اغناهم الله و رسوله من فضله
(আল্লাহ ও তার রাসূল তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা ধনী করে দিয়েছেন।
و من يخرج من بيته محاجرا إلى الله و رسوله
(যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি হিযরত করে নিজেদের ঘর-বাড়ী থেকে বের হয়েছেন)
و يرى الله عملكم ورسوله
(আল্লাহ ও তাঁর রসুল তােমাদের আমল দেখবেন।)
لا تقدموا بين يدي الله ورسوله
আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আগে এগিও না)।
فامنو بالله و رسوله
(আল্লাহ ও তাঁর রসুলের উপর ঈমান আন)।
و لو أنهم رضوا ما اتاهم الله و رسوله
(যদি তারা এর উপর রাজী হয়, যা তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রসুল দান করেছেন।)
اذ تقول للذي انعم الله عليه و أنعمت عليه
(যখন আপনি তার সাথে বলতেন; যার প্রতি আল্লাহ ও আপনি পুরস্কার দান করেছেন)।
হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর বিশিষ্ট কবি হযরত হাচ্ছান ইবনে সাবিত (রাঃ) বলেনঃ
ضم الاله اسم النبى باسمه - اذ قال في الخمس المؤذن أشهد
(মহান আল্লাহ তার নবীর নামকে তাঁর নামের সাথে সংযােজিত করেছেন; - পাঞ্জেগানা নামাজের তকবীর ও আযানে মুয়াজ্জিন ও মুকাব্বির আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলতেই আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসুলুল্লাহও বলেন।)
. উল্লেখ্য যে, হযরত হাচ্ছান সেই ভাগ্যবান নাত পাঠকারী সাহাবী, যার এক একটি শের’ এর উপর হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বার বার দোয়া করেছিলেন। তাঁর শের সমূহ নবী পাকের দরবার থেকে স্বীকৃতি ও প্রশংসার সনদ পত্র লাভ করেছেন। ইসলামিয়াত নিয়ে চিন্তা করলে সহজে অনুমেয় যে, মহান আল্লাহ তার হাবীবের সুন্নাতকে আপন ফরয সমূহের সাথে এমন ভাবে সংশিষ্ট করে দিয়েছেন যে, কোন এবাদত সুন্নাত থেকে খালি নয়। পঞ্জেগানা নামাজে- জোহরের ফরয চার রাকাত, আগে পিছে 'সুন্নাত ছয় ছয় রাকাত। মগরীবের নামাজে ফরয তিন রাকাত, আর সুন্নাত ও নফল চার রাকাত, অতপর ফরয আদায় করতে গেলেও ছােবহানাকা আল্লাহুম্মা পাঠ করা সুন্নাত, আউজুবিল্লা ও বিসমিল্লাহ পাঠ সুন্নাত, তারপর তেলাওয়াতে কুরআন করীম হচ্ছে ফরয, রুকু সিজদা ফরয, তার তাসবীহগুলাে সুন্নাত। রমজানের রােযা ফরয, সেহরী, ইফতার, তারাবীহ সুন্নাত।
নিজ জীবনের দিকে দেখুন, শিশু ভূমিষ্ট হতেই কানে আযান দেয়া সুন্নাত, -আকীকা সুন্নাত, খতনা সুন্নাত, শিশু প্রতিপালন সুন্নাত। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর ফরয জিম্মা শুরু হয়। আমরা সুন্নাতের ছত্রছায়ায় লালিত হই। যেমন জীবিকার্জন, বিয়ে-শাদী, স্ত্রীর বরণপােষণ সবই হচ্ছে সুন্নাত। মৃত্যু মুহূর্তে কলেমা পাঠ করানাে, কেবলা মুখী করা সুন্নাত, গােসল ও দাফনের তরিকা সুন্নাত। বস্তুতঃ সর্বক্ষেত্রে ফরয সুন্নাত সমূহের সাথে মিলেই রয়েছে। একারণেই আমাদের নাম আহলে ফরয বা আহলে ওয়াজিব কিংবা আহলে মুস্তাহাব নয় বরং আহলে সুন্নাত। অর্থাৎ আজীবন সুন্নাতের ছত্র ছায়ায় জীবন অতিবাহিতকারী এবং কিয়ামত দিবসে সুন্নাতের ছত্রছায়ায় অবস্থানকারী। বস্তুতঃ রূহে ঈমান হচ্ছে আল্লাহ রসুলকে সম্পর্কিত করা। শয়তান তথা হাজার রকমের কাফেরেরা আল্লাহর জাত (সত্ত্বা ছিফাত (গুণাবলী) ফিরিস্তাকুল, জান্নাত দোযখ ইত্যাদি বিশ্বাস করে, কিন্তু তারপরও তারা কাফির। কেননা তারা আল্লাহ রসুলকে সম্পর্কিত করে না। " জনৈক আনছারী ফসলে পানি দেয়া নিয়ে এক মামলা নবী পাকের আদালতে পেশ করেন কিন্তু তিনি নবীর দেয়া রায়ের উপর সন্তুষ্ট হননি। তাই তার প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ
فلا وربك لايؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم محرجا مما قضيت ويسلموا تسليما
(হে মাহবুব! আপনার প্রতিপালকের কসম, এ ব্যক্তি মুমিন হতে পারে না; যতক্ষণ না সে তাদের মতানৈক্য বিষয়ে আপনাকে হাকিম স্বীকার করে এবং আপনার ফয়সালায় মনক্ষুন্ন হয় এবং অবনত মস্তকে গ্রহণ করে।)
কোন কোন সম্মানীত সাহাবীর আওয়াজ নবী পাকের দরবারে বড় হয়ে যেত।
তাঁদের প্রসঙ্গে এরশাদ হলাে
يا أيها الين امنوا لاترفعوا أصواتكم فوق صوت البين ولاتجهوا له بالقول كجهر بعضكم لبعض أن تحبط أعمالكم و انتم لا تشعرون.
হে মুমিনগণ! নবী পাকের আওয়াজের উপর তােমাদের আওয়াজকে বুলন্দ করােনা ।আর তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) দরবারে এরূপ আওয়াজ বড় করাে না, যেরূপ তােমারা পরস্পরের মধ্যে করে থাক। অন্যথায় তােমাদের নেক আমল সমূহ বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে, যাতে তােমাদের (সে ব্যাপারে) খবরও থাকবে না।
দেখুন, ঐ আনছারী আর উপরােক্ত আওয়াজ বুলন্দকারী সাহাবীদ্বয় কোন ঈমান আকীদার অস্বীকার করেন নি। তৌহিদ, কেয়ামত, ফিরিস্তা, বেহেস্ত-দোযখ ইত্যাদি স্বীকার করতেন। এমনকি তারা নবুয়তেরও কোন অস্বীকার করেননি। তবে নবুয়তের সম্মানে আবশ্যিক পালনীয় একটি বিষয়ে ক্রটি করে ফেলেছিলেন মাত্র। মহান প্রভু একেও কুফুরী ঘােষণা দিয়ে দিলেন। কেননা কুফরীর কারণেই নেকী বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। সার কথা হলাে, এ সমস্ত আকীদা হচ্ছে, ঈমানের আদর্শ আর উভয় জাহানের সরদার হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) প্রতি আদব ও সম্মান নিবেদন হলাে ঈমানের রূহ বা প্রাণ।
একান্ত তাড়া হুড়ার সাথে এ সামান্য লিখা আল্লাহ ও রসুলের দরবারে উৎসর্গ। | করলাম। মহান মহিমাময় প্রভূ কবুল করুন-আমিন৷
ওয়াসাল্লাল্লাহু তায়ালা আলা খায়রে খাকিহি ওয়া নূরে আরশিহি মুহাম্মদিন ওয়ালিহি ওয়া সাল্লিম।
সূত্র ইসলামের চারটি মৌলিক বিষয়
হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ।