বিষয়ঃ- উত্তম পোশাক হিসেবে নামাযে পাগড়ী ও টুপি পরার বিধান।
====================================
✔ হাদীস
حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ عُبَيْدٍ ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؛ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَأَى رَجُلاً يُصَلِّي وَعَلَيْهِ قَلَنْسُوَةٌ ، بِطَانَتُهَا مِنْ جُلُودِ الثَّعَالِبِ ، قَالَ : فَأَلْقَاهَا عَنْ رَأْسِهِ ، وَقَالَ : مَا يُدْرِيَك لَعَلَّهُ لَيْسَ بِذَكِيٍّ ؟. (إبْنُ أبِىْ شَيْبَة : بَابٌ فِي الصَّلَاةِ فِي جُلُودِ الثَّعَالِبِ)

অনুবাদ : হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত: হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এক ব্যক্তিকে এমন একটি টুপি পরে নামায পড়তে দেখেলেন যে টুপির ভেতরের অংশ ছিলো শিয়ালের চামড়ার তৈরী। হযরত আনাস বলেন: হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সেটা তার মাথা থেকে ফেলে দিলেন এবং বললেন: তোমার জানা আছে কি হয়তো এটা জবাইকৃত না। (অর্থাৎ, হতে পারে যে, জবাইয়ের মাধ্যমে চামড়া পবিত্র করা হয়নি)। (ইবনে আবী শাইবা: ৬৫৩৬)

হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস এবং বুখারী-মুসলিমের রাবী।

সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কিরামের সময়ে টুপি

মাথায় দিয়ে নামায পড়ার প্রচলন ছিলো। সুতরাং এটা নামাযের আদব বা মুস্তাহাব। হযরত উমার রা. তা ফেলে দিয়েছিলেন কেবল নাপাক হওয়ার আশঙ্কায়; অন্যথায় তিনি তা ফেলতেন না।

✔ হাদীসঃ-

حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْوَابِصِيُّ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ شَيْبَانَ، عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ هِلَالِ بْنِ يَسَافٍ، قَالَ: قَدِمْتُ الرَّقَّةَ، فَقَالَ لِي بَعْضُ أَصْحَابِي: هَلْ لَكَ فِي رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: قُلْتُ: غَنِيمَةٌ، فَدَفَعْنَا إِلَى وَابِصَةَ، قُلْتُ لِصَاحِبِي: نَبْدَأُ فَنَنْظُرُ إِلَى دَلِّهِ، فَإِذَا عَلَيْهِ قَلَنْسُوَةٌ لَاطِئَةٌ ذَاتُ أُذُنَيْنِ، وَبُرْنُسُ خَزٍّ أَغْبَرُ، وَإِذَا هُوَ مُعْتَمِدٌ عَلَى عَصًا فِي صَلَاتِهِ، فَقُلْنَا بَعْدَ أَنْ سَلَّمْنَا، فَقَالَ: حَدَّثَتْنِي أُمُّ قَيْسٍ بِنْتُ مِحْصَنٍ،أَنَّ رَسُولَ اللَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا أَسَنَّ وَحَمَلَ اللَّحْمَ، اتَّخَذَ عَمُودًا فِي مُصَلَّاهُ يَعْتَمِدُ عَلَيْهِ (رَوَاه ابُوْ دَاود فِىْ بَابِ الرَّجُلِ يَعْتَمِدُ فِي الصَّلَاةِ عَلَى عَصًا)

অনুবাদ: হযরত হিলাল বিন ইয়াসাফ রহ. বলেন: আমি (শামের একটি শহর) রক্কায় গেলাম। আমার এক বন্ধু আমাকে বললেন: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সাহাবার সঙ্গে তুমি সাক্ষাত করবে? আমি বললাম: এটা তো বড় সুযোগ। তখন আমরা দু’জনে হযরত ওয়াবিসা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকটে গেলাম। আমার বন্ধুকে বললাম: প্রথমে আমরা তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্য দেখব। তখন দেখলাম তিনি লাঠির ওপর ভর দেওয়া অবস্থায় নামাযে রত আছেন। তাঁর গায়ে ছিলো মেটে রঙের টুপিওয়ালা রেশমী জামা এবং মাথায় লেগে থাকা দুই কান বিশিষ্ট টুপি। আমরা তাঁকে সালাম দিয়ে (লাঠির ওপর ভর করে নামায পড়ার বিষয়ে) জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি বললেন: আমাকে উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হাদীস শুনিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং শরীর ভারী হয়ে গিয়েছিলো তখন নামাযের স্থানে একটি খুঁটি গেড়ে নিয়েছিলেন যাতে ভর করে তিনি নামায পড়তেন। (আবু দাউদ: ৯৪৮) 

হাদীসটির স্তর : সহীহ, হুকমী মারফু’। হাকেম আবু আব্দুল্লাহ নিশাপুরী তাঁর মুসতাদরাক কিতাবে হাদীসটি বর্ণনা করে এটাকে বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন। (মুসতাদরাকে হাকেম: ৯৭৫) ইমাম জাহাবী রহ.ও হাকেমের উক্ত মন্তব্য সমর্থন করে এটাকে বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন। শায়খ আলবানী এটাকে মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন। (সহীহ আবু দাউদ: ৮৭৪)

সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর সাহাবা টুপি মাথায় দিয়ে নামায পড়েছেন। সুতরাং টুপি মাথায় দিয়ে নামায পড়া মুস্তাহাব।

✔ হাদীসঃ-

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بَزِيعٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ يَعْنِي ابْنَ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ الطَّوِيلُ، حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْمُزَنِيُّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: تَخَلَّفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَخَلَّفْتُ مَعَهُ فَلَمَّا قَضَى حَاجَتَهُ قَالَ: «أَمَعَكَ مَاءٌ؟» فَأَتَيْتُهُ بِمِطْهَرَةٍ، «فَغَسَلَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ، ثُمَّ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ، فَأَخْرَجَ يَدَهُ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ، وَأَلْقَى الْجُبَّةَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ، وَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ، وَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى خُفَّيْهِ، ثُمَّ رَكِبَ وَرَكِبْتُ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَوْمِ، وَقَدْ قَامُوا فِي الصَّلَاةِ، يُصَلِّي بِهِمْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَقَدْ رَكَعَ بِهِمْ رَكْعَةً، فَلَمَّا أَحَسَّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ، فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ، فَصَلَّى بِهِمْ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقُمْتُ، فَرَكَعْنَا الرَّكْعَةَ الَّتِي سَبَقَتْنَا» ( رَوَاه مُسْلِمٌ فِىْ بَابِ الْمَسْحِ عَلَى النَّاصِيَةِ وَالْعِمَامَةِ)

অনুবাদ : হযরত মুগীরা বিন শু’বা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  সাথীদের থেকে পেছনে রয়ে গেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে পেছনে রয়ে গেলাম। অতঃপর তিনি ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন মিটিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন: তোমার সঙ্গে পানি আছে কি? আমি পানির পাত্র এনে দিলাম। তিনি উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত এবং মুখ ধুলেন। অতঃপর উভয় বাহু খুলতে গেলেন। কিন্তু জামার হাতা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় জামার ভিতর দিক দিয়ে হাত বের করলেন এবং জামা কাঁধের উপর রেখে দিলেন। এরপর উভয় বাহু ধুলেন। মাথার অগ্রভাগ, পাগড়ী এবং উভয় মোজার ওপর মাসেহ করলেন। অতঃপর তিনি সওয়ার হলেন; আমিও সওয়ার হলাম এবং কওমের নিকটে পৌঁছলাম তখন তারা নামায শুরু করে দিয়েছে। হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাদের নামায পড়াচ্ছিলেন এবং এক রাকাত পড়িয়ে ফেলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন টের পেয়ে তিনি পেছনে সরে আসতে গেলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইশারা করলেন; ফলে তিনি নামায পড়ালেন। অতঃপর যখন হযরত আব্দুর রহমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) সালাম ফেরালেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  দাঁড়ালেন। আমিও দাঁড়ালাম এবং যে রাকাত ছুটে গিয়েছিলো তা আদায় করলাম। (মুসলিম: ৫২৬)

হাদীসটির স্তর : সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ, নাসাঈ এবং মুয়াত্তা মালেকেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৮৯৮)

সারসংক্ষেপ : এ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অযুতে পাগড়ীর ওপর মাসেহ করেছেন। আর অযু শেষ করে নামাযে শরীক হয়েছেন যখন পাগড়ী তাঁর মাথায় ছিলো। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পাগড়ী বেঁধে নামায পড়া সুন্নাত।

ফায়দা : এ হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝে আসে যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মাথায় পাগড়ী পূর্ব থেকেই বাঁধা ছিলো। তিনি সে পাগড়ীসহ নামায পড়েছেন; নামাযের জন্য নতুন করে পাগড়ী বাঁধেননি। এ থেকে আরও প্রমাণিত হয় যে, পাগড়ী মূলতঃ পোশাকের সুন্নাত; নামাযের সুন্নাত নয়। তবে নামাযের সাথে পাগড়ীর সম্পর্ক হলো: পাগড়ী উত্তম পোশাকের আওতাভুক্ত। 

আল্লাহ পাক সূরা আ’রাফের ৩১ নম্বর আয়াত ইরশাদ করেন যে,
یٰبَنِیۡۤ  اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَکُمۡ عِنۡدَ کُلِّ مَسۡجِدٍ  وَّ کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا  تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّہٗ لَا  یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۳۱﴾ 
অনুবাদ কানযুল ঈমানঃ-   হে     আদম   সন্তানগণ!    স্বীয়   সুন্দর     পোশাক পরিধান    করো    যখন    মসজিদে   যাও   এবং   আহার করো  ও পান   করো   আর   সীমাতিক্রম   করো   না।  নিঃসন্দেহে, সীমাতিক্রম কারীদের তিনি         পছন্দ করেন না। 

 উত্তম পোশাকে নামায পড়া সুন্নাত। অনুরূপভাবে টুপিও পোশাকের সুন্নাত। শুধু নামাযের জন্য টুপি ব্যবহার করতে হবে এমন নয়; বরং পোশাক হিসেবে যেখানে জামা, পাজামা, লুঙ্গি, গেঞ্জী, রুমাল এবং অন্যান্য কাপড় চোপড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তেমনিভাবে টুপি ব্যবহার করাও পোশাকের আওতাভুক্ত।

এর বিপরীতে কোন কোন হাদীসে পাগড়ীসহ নামাযকে বিনা পাগড়ীর নামাযের চেয়ে অনেক গুণ ফযীলাতপূর্ণ বলা হয়েছে। যেমন- “পাগড়ীসহ একটি নামায পাগড়ীবিহীন পঁচিশটি নামাযের চেয়ে উত্তম এবং পাগড়ীসহ একটি জুমআ পাগড়ীবিহীন সত্তরটি জুমআর চেয়ে উত্তম”। আল্লামা নূরুদ্দীন কানানী এটাকে মাউযু’ তথা জাল হাদীস বলেছেন। (তানযীহুশ শরী আতিল মারফুআহ আনিল আখবারিশ শানি আতিল মাউযুআহ: হাদীস নম্বর- ১৩৯) 

অনুরূপভাবে আল্লামা মুল্লা আলী কারী রহ.ও এটাকে জাল হাদীস বলেছেন। তিনি আরও বলেন: قَالَ الْمنوفِيُّ فَذَلِكَ كُلُّهُ بَاطِلٌ “আল্লামা মানুফী রহ. এ জাতীয় সবগুলোকে বাতিল বলেছেন”। (আল মাউযুআতুছ ছুগরা: হাদীস নম্বর- ১৭৭)

অতএব, পাগড়ী ও টুপি পরে নামায পড়া দরকার। তবে এটাকে নামাযের সুন্নাত হিসেবে বিশ্বাস না করে পোশাকের সুন্নাত হিসেবে বিশ্বাস করা উচিত। এমন কাজ থেকেও বিরত থাকা উচিত যা দ্বারা সাধারণ মানুষ এটাকে নামাযের সুন্নাত মনে করে। যেমন- ইকামাতের সময়ে পাগড়ী বাঁধা; আবার সালাম ফিরিয়ে পাগড়ী খুলে রাখা। অনুরূপভাবে নামাযের সময়ে টুপি মাথায় দেয়া আবার নামায শেষ করে টুপি খুলে রাখা ইত্যাদি।
Top