প্রশ্ন- আমার এক বৌদ্ধধর্মের লোকের সাথে সম্পর্ক আছে। সম্পর্ক সে আমার সহপাটী। সে আমাকে প্রতিদিন তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য নিমন্ত্রণ করে। প্রশ্ন হল, আমি মুসলমান সে বৌদ্ধ। তার সাথে বন্ধুত্ব ও তার ঘরে গিয়ে কোন কিছু খাওয়া বৈধ হবে কিনা। তার সাথে আমার সম্পর্ক কি রকম হওয়া উচিত অনুগ্রহ করে জানালে ধন্য হব।
উত্তর- হিন্দু-বৌদ্ধসহ যেকোন কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব করা, পার্থিব প্রয়োজনীয় লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ছাড়া তাদের সাথে সর্বদা উঠাবসা, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি একজন মুসলমানের জন্য নাজায়েয। মহান আল্লাহ্ তাআলা কোরআনে এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন
واما یُنْسِینَّکَ الشیطٰن فلا تَقْعُد بعد الذکرٰی مع القوم الظالمین
অর্থাৎ শয়তান যদি তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, সুতরাং স্মরণ হওয়া মাত্রই জালিমদের (কাফিরদের) সাথে বসো না। [সূরা আনআম:৬৮]
পবিত্র কোরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ কাফিরদেরকে বড় জালিম বলে উল্লেখ করেছেন। এরশাদ হচ্ছে-
فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ کذب علی اللہ وکذّب بالصدق اذجآۂُ الیس فی جھنم مثویً للکٰفرین
অর্থাৎ, তার চেয়ে বড় জালিম কে আছে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং তার কাছে সত্য আসার পর সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দোযখ কি কাফিরদের ঠিকানা নয়? অবশ্যই [সূরা জুমা-আয়াত:৩২]
সুতরাং বুঝা গেল যে, কাফিরগণ হল বড় জালিম, আর যেখানে জালিমদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা তো আরো মারাত্মক অপরাধ।
তাছাড়া হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন -من جامع المشرك وسكن معه فانه مثله অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুশরিকের সাথে মিলিত হয়েছে এবং তার সাথে সহাবস্থান করেছে সে ওই মুশরিকের অনুরূপ। [আবূ দাঊদ]
হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেছেন- لا تصاحب الا مؤمنا ولاياكل طعامك التقى
অর্থাৎ ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করোনা, আর তোমার খাদ্য নেক্কার ছাড়া অন্য কেউ যেন না খায়। [আহমদ ও তিরমিযী]
অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, এক সাথে প্রায় পানাহার করা, ভালবাসা ও বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব হত্যাকারী বিষতুল্য। মহান আল্লাহ্ বলেন ومن يتولهم منكم فانه منهم অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে তাদের (কাফিরদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে।
হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, المرء مع من احب অর্থাৎ মানুষ যার সাথে বন্ধুত্ব রাখে তার সাথে তার হাশর হবে। [বুখারী]
সুতরাং, হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদীসহ সকল কাফির-মুশরিকের সাথে বন্ধুত্ব করা নাজায়েয ও গুনাহ্। হ্যা পার্থিব লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে তাদের সাথে প্রকাশ্যে সদ্ভাব বজায় রাখা জায়েয। হিন্দু-বৌদ্ধসহ সকল কাফির-মুশরিকদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া নাজায়েয বরং হারাম। এ ছাড়া অন্যান্য হালাল ও পবিত্র বস্তু তাদের ঘর, দোকান বা অফিসে খাওয়া বা গ্রহণ করা প্রয়োজনবশতঃ জায়েয ও বৈধ। তবে সাধ্য অনুযায়ী বিধর্মীদের ঘরে খাওয়া-দাওয়া ও ওঠা-বসা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাই উত্তমপন্থা ও নিরাপদ।
কাফির ও বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না করা প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে মজীদে মহান আল্লাহ্ আরো এরশাদ করেন,
لا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْکافِرينَ أَوْلِياءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنينَ وَ مَنْ يَفْعَلْ ذلِکَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ في شَيْءٍ إِلاَّ أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقاةً وَ يُحَذِّرُکُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ وَ إِلَي اللَّهِ الْمَصيرُ
অর্থাৎ মুমিন কাফিরদেরকে (বাহ্যিক লেনদেন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে) বন্ধু বানাতে পারে না মুমিনকে বাদ দিয়ে, অতঃপর যে (কোন মুমিন) এ রকম করবে অর্থাৎ মুমিনকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু বানাবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না। [সূরা আলে ইমরান:২৮]
সুতরাং, হিন্দু, বৌদ্ধ তথা যে কোন কাফির-মুশরিক ও বিধর্মীদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে না এবং তাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া ও আহার গ্রহণ করা সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি। এটাই কোরআন-সুন্নাহ্ তথা ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা। [সহীহ বুখারী, জামে তিরমিযী, সুনানে আবূ দাঊদ ও মাসনাদে আহমদ ইত্যাদি] [সুত্র. যুগ-জিজ্ঞাসা, পৃ. ৪৬-৪৭]