★৮. আল কুরআনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার, প্রখ্যাত সাহাবী অবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল কুরআনে এমন তিনটি আয়াত আছে যেখানে তিনটি জিনিস তিনটি জিনিসের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটি অগ্রহণযোগ্য। সে তিনটি আয়াত হলঃ

*(ক.) আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুমিনগণ,তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর তার রাসূলের।এবং (তাদের বিরুদ্ধাচারণ করে) নিজেদের আমল বিনষ্ট কর না।
[সূরা মুহাম্মাদ(দরুদ) আয়াত নং ৩৩]

✌কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করে কিন্তু রাসূলের আনুগত্য না করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

*(খ.) আল্লাহ তায়ালা বলেন,
এবং তোমরা সালাত (নামায) আদায় কর এবং যাকাত দাও।
[সূরা বাক্বারা,আয়াত নং ৪৩]

✌কেউ যদি নামায পড়ে কিন্তু যাকাত দিতে রাজী নয় তাহলে তাও আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় নয়।

*(গ.) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

“আর আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।”
[সূরা লোকমান,আয়াত নং ১৪]

✌কেউ যদি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে কিন্তু পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে তবে তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত।সে কারণেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনে একাধিকবার আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশের সাথে সাথে পিতা-মাতার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশ এসেছে। ধ্বনীত হয়েছে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার প্রতি কঠিন হুশিয়ারী। তা যে কোন কারণেই হোক না কেন। ইরশাদ হচ্ছে:

وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক কর না আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়দের সাথে, এতীম,মিসকীন,প্রতিবেশি,অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীদের প্রতিও। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা অহংকার ও দাম্ভিক ব্যক্তিদের পছন্দ করেন না।
[সূরা নিসা,আয়াত নং ৩৬]

★৯. আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেনঃ ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জন্য পীড়াপীড়ি করে, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই,তবে তাদের আনুগত্য করো না। আঁমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আঁমি তোমাদেরকে বলে দিব যা কিছু তোমরা করতে’।
[সূরা আনকাবূত,আয়াত নং ৮]

★১০. আল্লাহ বলেন, ‘আঁমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে কষ্টসহকারে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্ট সহকারে প্রসব করেছে। তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লেগেছে ত্রিশ মাস। অবশেষে সে যখন শক্তি-সামর্থ্যের বয়সে ও চল্লিশ বছরে পৌঁছেছে, তখন বলতে লাগল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে সামর্থ্য দাও, যাতে আমি তোমার নে’আমতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি দান করেছ আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকাজ করি। আমার সন্তানদেরকে সৎকর্মপরায়ণ কর, আমি তোমারই অভিমুখী হ’লাম এবং আমি আজ্ঞাবহদের অন্যতম’।
[সূরা আহক্বাফ,আয়াত নং ১৫]

★১১. অন্যত্র মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,‘আঁপনার রব নির্দেশ দিলেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না, আর তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বল, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে যা আছে তা ভাল করেই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তিনি মনোযোগীদের প্রতি ক্ষমাশীল’।
[সূরা বনী ইসরাঈল,আয়াত নং ২৩- ২৫]

★১২. ‘হে রাসুল! বলে দিন! তোমরা যদি কিছু আর্থিকভাবে দান করে থাক তা তোমাদের পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয় স্বজনকে করো”
[সূরা বাকারা,আয়াত নং ২১৫]

★১৩. অন্যত্র তিঁনি বলেন,‘আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে বের করেছেন। তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদেরকে কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে তোমরা অনুগ্রহ স্বীকার কর’
[সূরা নাহল,আয়াত নং ৭৮]

★১৪. আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় কালামে বলেছেন,‘পিতা-মাতা যদি তোমাকে আঁমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই। তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আঁমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আঁমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আঁমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবগত করব’
[সূরা লোকমান,আয়াত নং ১৫]

উল্লেখিত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে পিতা-মাতার মর্যাদা এবং তাদের প্রতি সন্তানদের অধিকারের প্রমান বহন করছে।

♦মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- এই কথা সঠিক কিনা এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার মর্যাদা-৪র্থ পর্ব

★১৫. হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম, জান্নাতে প্রবেশ করেছি। সেখানে কোন পাঠকের পড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইনি কে? তারা (ফেরেশতাগণ) বললেন, ইনি হারেছা ইবনে নোমান। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন,এমনই হয় সেবা ও সদাচরণের প্রতিদান, এমনই হয় সেবা ও সদাচারের বিনিময়। তিনি ছিলেন তার মায়ের প্রতি সর্বাধিক সদ্ব্যবহারকারী।
*****দলিল******
*১. মুসনাদে আহমদ,হা/২৫১৮২
*২. সুনানে নাসায়ী কুবরা,হা/৮২৩৩ *৩. সহিহ ইবনে হিববান,হা/৭০১৪

★১৬.হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ إِلَى وَالِدَتِهِ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَانَ لَهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةٌ مَبْرُورَةٌ “، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ إِلَيْهَا كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ “رواه أبو بكر الإسماعيلي في “معجم أسامي الشيوخ” (৮) – ومن طريقه البيهقي في “شعب الإيمان” (১০/২৬৫) .

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) বর্ণিত, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন,যে নেক্কার ছেলে নিজ মাতা-পিতার প্রতি রহমত ও আন্তরিকতার দৃষ্টিতে একবার তাকাবে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক দৃষ্টির বিনিময়ে তার জন্য একটি মাবরুর হজ্বের (মকবুল হজ্বের) ছওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। সাহাবাগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি উক্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন একশত বার তাকায়, তাহলে? তিঁনি উত্তরে বলেন, হ্যাঁ! আল্লাহ তায়ালা সুমহান ও বড় করুণাময়।
[বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান ১০/২৬৫]

★১৭. একদিন হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুল ﷺ এঁর নিকট এসে কাঁদছেন। রাসুল ﷺ জিজ্ঞেস
করলেন,হে আবু হুরায়রা তুমি কেন কাঁদছ? আবু হুরায়রা (রা:) বললেন, আমার মা আমাকে মেরেছেন।
রাসুল ﷺ বললেন,কেন তুমি কি কোন বেয়াদবী করেছ? আবু হুরায়রা (রা:) বললেন, না হুজুর কোন বেয়াদবী করিনি। আঁপনার দরবার হতে বাড়ি যেতে আমার রাত হয়েছিল বিধায় আমার মা আমাকে দেরির কারণ জিজ্ঞেস করায় আমি আঁপনার কথা বললাম। আর আপনার কথা শুনে মা রেগে আমাকে মারধর করল আর বলল, হয়ত আমার বাড়ি ছাড়বি আর না হয় মুহাম্মদ ﷺ এঁর দরবার ছাড়বি।
আমি বললাম,ও আমার মা। তুমি বয়স্ক মানুষ। তোমার গায়ে যত শক্তি আছে তত শক্তি দিয়ে মারতে থাকো। মারতে মারতে আমাকে বাড়ি থেকে করে দাও। তবুও আমি আমার রাসুলকে ছাড়তে পারবো না।
তখন রাসূল ﷺ বলেছেন,তোমার মা তোমাকে বের করে দিয়েছেন আর এজন্য আঁমার কাছে নালিশ করতে এসেছ? হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন,হে রাসূল ﷺ আমি আমার মায়ের জন্য এখানে নালিশ করতে আসি নাই। রাসুল ﷺ বললেন, তাহলে কেন এসেছ? আবু হুরায়রা (রা:) বললেন, আমি জানি আঁপনি আল্লাহর নবী।আঁপনি যদি হাত উঠিয়ে আমার মায়ের জন্য দোয়া করতেন,যাতে আমার মাকে যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন।আর তখনই সাথে সাথে রাসুল ﷺ হাত উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন,
হে আল্লাহ! আঁমি দোয়া করি আঁপনি আবু হোরায়রার আম্মাকে হেদায়েত দান করুন।”

রাসুল ﷺ দোয়া করলেন আর আবু হোরায়রা বাড়ির দিকে দৌড়ে যাচ্ছেন। পিছন থেকে কয়েকজন লোক আবু হোরায়রার জামা টেনে ধরল এবং বললো, হে আবু হোরায়রা! তুমি দৌড়াচ্ছ কেন? তখন আবু হোরায়রা বললেন, ওহে সাহাবীগণ তোমরা আমার জামা ছেড়ে দাও। আমাকে দৌড়াতে দাও। আমি দৌড়াইয়া বাড়িতে গিয়ে দেখতে চাই আমি আগে পৌঁছলাম নাকি আমার নবীজির দোয়া আগে পৌঁছে গেছে। হযরত আবু হোরায়রা দরজায় ধাক্কাতে লাগলো। ভিতর থেকে তার মা যখন দরজা খুললো তখন আবু হোরায়রা দেখলেন তার মায়ের সাদা চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে। তখন মা আমাকে বললেন,
হে আবু হোরায়রা! তোমাকে মারার পর আমি বড় অনুতপ্ত হয়েছি, অনুশোচনা করেছি। মনে মনে ভাবলাম আমার ছেলে তো কোন খারাপ জায়গায় যায়নি। কেন তাকে মারলাম? আমি বরং লজ্জায় পড়েছি তোমাকে মেরে। হে আবু হোরায়রা! আমি গোসল করেছি। আমাকে তাড়াতাড়ি রাসুল ﷺ এঁর দরবারে নিয়ে চল। আর তখনই সাথে সাথে আবু হোরায়রা তার মাকে রাসুল ﷺ
এঁর দরবারে নিয়ে গেলেন। আর তার মা সেখানেই কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন।

“পিতা মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও,দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো,নতুবা তা রক্ষা করতে পারো।”

[সহীহ তিরমিজি ]

✌লক্ষ্য করুন: হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) দৌড়ে ঘরে যাওয়ার আগেই রাসূল ﷺ এঁর দোআ কবুল হয়ে গেল।অপরদিকে,আল্লাহ না করুক বাবা-মা খারাপ হলেও তাদের সাথে না খারাপ ব্যবহার, না গায়ে হাত তোলা যাবে।তাই সবাই সাবধান হোন।আর এজন্য বাবা-মা কে সচেতন হতে হবে তার সন্তান কি করে,কাদের সাথে চলাফেরা করে…..ইত্যাদি সমস্ত বিষয় খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করতে হবে।আর এজন্য আল্লাহ পাকের কাছে সিজদাবনত হয়ে সদা-সর্বদা দোয়া করতে হবে নেক সন্তানের বাবা -মা হওয়ার জন্য।

✋যেমন: হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে।মৃত্যুর পরেও যে সকল আমলের সওয়াবের ধারা বন্ধ হয় না

١٤- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ, رَسُولَ اللَّهِﷺ ، قَالَ : ” إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلا مِنْثَلاثٍ : صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ” رَوَاهُ مُسْلِمٌ

অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে,যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলের (সওয়াবের) ধারা বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ব্যতিত (এ তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয় না)। ১.সদকায়ে জারিয়াহ, ২.এমন ইলম যা দ্বারা উপকার লাভ করা যায়,.এমন সু-সন্তান যে তার জন্য দোয়া করবে।
*****দলিল*****
*১. সহীহ   মুসলিম, ওছিয়ত   অধ্যায়,  হাঃ  ১৬৩১
*২. সুনানে  তিরমিজি,আহকাম    অধ্যায় ১৩৭৬
*৩. সুনানে  নাসাঈ,ওছিয়ত    অধ্যায়   হাঃ  ৩৬৫১
*৪. সুনানে  আবু   দাউদ  ২৮৮০
*৫. মুসনাদে   আহমদ বিন হাম্বল ২/৩৭২

♦মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- এই কথা সঠিক কিনা এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার মর্যাদা-৫ম পর্ব

★১৮. হিজরত ও জিহাদের চেয়েও পিতা-মাতার হক্ব অগ্রগন্য:

আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল ﷺ এঁর দরবারে এসে বলল, আমি আঁপনার নিকটে হিজরত ও জিহাদের উপরে বায়‘আত করতে চাই।যার দ্বারা আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত কামনা করি। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তোমার পিতা-মাতার কেউ জীবিত আছেন কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ। বরং দু’জনেই বেঁচে আছেন। আমি তাদের উভয়কে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রাসূল ﷺ বললেন, এরপরেও তুমি আল্লাহর নিকট পুরস্কার আশা কর? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিঁনি বললেন

فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ

‘তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকট ফিরে যাও ও সর্বোত্তম সাহচর্য দান কর এবং তাদের কাছেই জিহাদ কর’।
[মুসলিম হা/২৫৪৯ (৫-৬)]

তিনি আরও বলেন,

فَارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا، وَأَبَى أَنْ يُبَايِعَهُ ‘

তুমি তাদেরকে হাসাও,যেমন তুমি তাদেরকে কাঁদিয়েছ।অতঃপর তিঁনি তার বায়‘আত নিতে অস্বীকার করলেন’।
[আহমাদ হা/৬৮৩৩; আবুদাঊদ হা/২৫২৮,নাসায়ী-৪১৬৩]

✌এর দ্বারা বুঝা যায় যে,পিতা-মাতার সেবা কখনো কখনো জিহাদের চেয়ে উত্তম হয়ে থাকে।

★১৯. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন:

«سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إلَى اللَّهِ ؟ قَالَ : «الصَّلاةُ عَلَى وَقْتِهَا » . قُلْتُ : ثُمَّ أَيُّ ؟ قَالَ : « بِرُّ الْوَالِدَيْنِ » , قُلْتُ : ثُمَّ أَيُّ ؟ قَالَ : « الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ » . ( رواه البخاري و مسلم ) .
“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়? জবাবে তিঁনি বললেন: সময় মত সালাত আদায় করা।আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিঁনি বললেন: পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।”

[বুখারী, হাদিস নং- ৫০৪ ও ৬৫২৫; মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৪]

✌অন্য বর্ণনায় এসেছে, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা’।
[তিরমিযী হা/১৭০; মিশকাত হা/৬০৭]

✌এর দ্বারা বুঝা যায় যে, পিতা-মাতার সেবা করার স্থান জিহাদে গমন করার উপরে।

★২০. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন:

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ بِحُسْنِ صَحَابَتِى قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ أُمُّكَ. قَالَ ثُمَّ مَنْ قَالَ ثُمَّ أَبُوكَ.

‘একদিন একজন লোক রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর দরবারে হাজির হয়ে আরয করল,হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!
আমার কাছে সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিকারী কে? তিঁনি বললেন,তোমার মা।লোকটি জিজ্ঞেস করল,তারপর কে? তিঁনি বললেন, তোমার মা। সে লোকটি আবারও প্রশ্ন করলো, তারপর কে? তিঁনি বললেন,তোমার মা।লোকটি আবারও জিজ্ঞেস করল,তারপর কে? তিঁনি বললেন,তারপর তোমার পিতা’।
[বুখারী হা/৫৯৭১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯১১, মুসলিম,হাদিস নং- ৬৬৬৪]

✌ইবনু বাত্তাল (রহ:) এই হাদিসের ব্যাখ্যা করার সময় বলেন: “তার দাবি হল, মাতার জন্য পিতার তিন গুণ পরিমাণ সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার থাকবে; তিনি বলেন: আর এটা গর্ভধারণের কষ্ট, অতঃপর প্রসব বেদনার কষ্ট এবং তারপর দুধ পান করনোর কষ্টের জন্য; কেননা, এই কষ্টগুলো এককভাবে মা করে থাকেন; অতঃপর পিতা লালনপালন ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মায়ের সাথে অংশগ্রহণ করেন।
[ফাতহুল বারী: ১০/৪১৬]

✌আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদিস খানাতে দেখা যায় ঐ ব্যাক্তিটি রাসূল ﷺ মোট ৫ বার প্রশ্ন করেছিলেন। প্রথম ৩ বার রাসূল ﷺ বলেছেন মায়ের মর্যাদা,চতুর্থবার বাবার মর্যাদা আর পঞ্চম বারের সময় তিঁনি বলেছেন নিকট রক্ত সম্পর্কীয় আত্নীয়-স্বজনের মর্যাদা।আসুন হাদিসখানা আবার একনজর দেখে নিই।

জনৈক ব্যক্তি বলল,হে আল্লাহর রাসূল! আঁমার সেবা পাওয়ার সর্বাধিক হকদার কে? তিঁনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল,তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল,তারপর কে? তিঁনি বললেন, তোমার মা।লোকটি বলল, তারপর কে? তিঁনি বললেন,তোমার পিতা। অতঃপর তোমার রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়গণ যে যত নিকটবর্তী’।
[বুখারী হা/৫৯৭১; মুসলিম হা/২৫৪৮; মিশকাত হা/৪৯১১]

♦মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- এই কথা সঠিক কিনা এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার মর্যাদা-৬ষ্ট পর্ব

★২১. আমর বিন শু‘আইব তার পিতা হ’তে,তিনি তার দাদা ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল ﷺ এর নিকটে এসে বলল, আমার সম্পদ আছে। আর আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী।তখন রাসূল ﷺ বললেন,

أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ، إِنَّ أَوْلاَدَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، كُلُوا مِنْ كَسْبِ أَوْلاَدِكُمْ

‘তুমি ও তোমার সম্পদ তোমার পিতার জন্য। নিশ্চয়ই তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের পবিত্রতম উপার্জনের অন্তর্ভুক্ত। অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে ভক্ষণ কর’।

[আবুদাঊদ হা/৩৫৩০; ইবনু মাজাহ হা/২২৯১; মিশকাত হা/৩৩৫৪।]

✌আবার, হযরত আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসূল ﷺ বলেন,

إِنَّ أَطْيَبَ مَا أَكَلْتُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ وَإِنَّ أَوْلاَدَكُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ-

‘নিশ্চয়ই সবচেয়ে পবিত্র খাদ্য হ’ল যা তোমরা নিজেরা উপার্জন কর। আর তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের উপার্জনের অংশ’ (তিরমিযী হা/১৩৫৮)। উক্ত বিষয়ে জাবের ও আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর প্রমুখ সাহাবী থেকেও সহীহ হাদীস সমূহ রয়েছে। ইমাম তিরমিযী বলেন, অনেক সাহাবী ও অন্যান্য বিদ্বানগণ বলেন, পিতা-মাতা সন্তানের সম্পদ থেকে যতটুকু ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। তবে কেউ কেউ বলেন,কেবল প্রয়োজন অনুপাতে নিতে পারেন’। [তিরমিযী হা/১৩৫৮-এর ব্যাখ্যা]

★২২. পিতামাতার আনুগত্যের পুরষ্কার:

ﺑِﺮُّﻭْﺍ ﺁﺑَﺎﺋَﻜُﻢْ ﺗَﺒِﺮُّﻛُﻢْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋُﻜُﻢْ( رواه العقيلي في ” الضعفاء ” ( ২৯৯ ) ، و الحاكم ( ৪/১৫৪ ) ، و أبو نعيم (৬/৩৩৫ ) ، و الخطيب ( ৬/৩১১ ) )

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, পিতামাতার আনুগত্য কর এবং তাদের সাথে সদয় ব্যবহার কর। কেননা,যদি তুমি তেমনটি কর তবে তোমার ছেলেমেয়েরাও তোমার আনুগত্য করবে এবং তোমার সাথে সদয় ব্যবহার করবে। [হাকেম-৪/১৫৪,আবু নুয়াইম -৬/৩৩৫]

★২৩. হাদিস শরীফে আরও ইরশাদ হয়েছে:

عَن عَائِشَةَ – رضي الله عنها – عَن النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ فَسَمِعْتُ فِيهَا قِرَاءَةً قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالُوا حَارِثَةُ بْنُ النُّعْمَانِ كَذَاكُمْ الْبِرُّ كَذَاكُمْ الْبِرُّ (رواه الإمام أحمد (৩৯/৮২ رقم ২৩৬৭৭) السلسلة الصحيحة . (২/ ৬১৬رقم৯১৩ ).)

হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,আমি নিদ্রামগ্ন ছিলাম এবং স্বপ্নে দেখতে পেলাম যে, আমি বেহেস্তে প্রবেশ করেছি। তাতে কাউকে কোরান তেলাওয়াত করতে শুনলাম এবং আমি জানতে চাইলাম, আল্লাহর কোন বান্দা বেহেস্তের মধ্যে কোরান তেলাওয়াত করছে? আমাকে বলা হল,তিনি হচ্ছেন হারিছা ইবনে নুমান।পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,হারিছা ইবনে নুমান তার মায়ের খুব অনুগত ছিল এবং তার খুব সেবা যত্ন করত। [আহমদ-৮২/৩৯,হা-২৩৬৭৭]

★২৪. উম্মু হানী বিনতে আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা’র মাওলা (আযাদকৃত গোলাম) আবূ মুর্রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত:

« أنه ركب مع أبى هريرة إلى أرضه بالعقيق ، فإذا دخل أرضه صاح بأعلى صوته : عليك السلام ورحمة الله وبركاته يا أماه . تقول : وعليك السلام ورحمة الله وبركاته . يقول : رحمك الله كما ربيتنى صغيرا . فتقول : يا بنى ! وأنت فجزاك الله خيرا ورضى عنك كما بررتنى كبيرا » . ( رواه البخاري ) .

“একদা তিনি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র সাথে বাহনে করে তাঁর ভূমি ‘আকীকের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন,তারপর যখন তিনি তাঁর ভূমিতে প্রবেশ করলেন, তখন উচ্চস্বরে আওয়াজ দিয়ে বললেন: হে মা! আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক; তখন প্রতিত্তুরে তাঁর মা বললেন: তোমার উপরও শান্তি এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক। এবার তিনি বললেন: আপনার প্রতি আল্লাহ তা‘আলা ঠিক তেমনিভাবে রহম করুন, যেমনিভাবে আপনি ছোটকালে আমাকে লালন-পালন করেছেন; অতঃপর মাতা বললেন: হে আমার প্রিয় বৎস! আল্লাহ তা‘আলা তোমাকেও উত্তম পুরস্কার দান করুক এবং তোমার প্রতি তিনি তেমনি সন্তুষ্ট থাকুক, যেমন সদ্ব্যবহার তুমি আমার বৃদ্ধকালে আমার প্রতি করেছ।”

[বুখারী,আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং- ১৪; আলবানী সহীহ আল-আদাব আল-মুফরাদের মধ্যে বলেন: হাদিসটির সনদ হাসান পর্যায়ের।]

★২৫. আয়ু ও রিযক বৃদ্ধি পায়:

عَنْ ثَوْبَانَ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لَا يَزِيدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ ، وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِخَطِيئَةٍ يَعْمَلُهَا ” .( سنن ابن ماجه رقم الحديث: ৮৭)

হযরত ছাওবান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,দোয়া ব্যতিত অন্য কিছুই ভাগ্যকে বদলাতে পারে না এবং পিতামাতার প্রতি সদাচার ব্যতিত অন্য কিছুই আয়ুকে প্রলম্বিত করতে পারে না।কোন ব্যক্তি তার পাপের কারণে তার রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়।
[ইবনে মাজাহ-৮৭]

♦মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- এই কথা সঠিক কিনা এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার মর্যাদা-৭ম পর্ব

★২৯. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أَبِي جَعْفرٍ ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ ، يَقُولُ : قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” ثَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيهِنَّ : دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا ” . (رواه الترمذي ( ১৯০৫ ) وأبو داود ( ১৫৬৩ ) وابن ماجه ( ৩৮৬২ ) )

তিন প্রকারের দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। পিতা-মাতার দোয়া (তার সন্তানের জন্যে), (আল্লাহর পথের) মুসাফিরের দোয়া ও মযলুমের দোয়া।

******দলিল******
*১. আবু দাউদ-১৫৬৩
*২. ইবনে মাজাহ-৩৮৬২
*৩. তিরমযি-১৯০৫

✌অন্য বর্ণনায় এসেছে,
وَدَعْوَةُ الْوَالِدَيْنِ

‘পিতা-মাতার দো‘আ’
[আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৩২]

✌আরেক বর্ণনায় এসেছে

وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ

‘পিতার বদদো‘আ তার সন্তানের বিরুদ্ধে’।
[তিরমিযী হা/১৯০৫]

★৩০. পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি : আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-বলেন

رِضَى الرَّبِّ فِى رِضَى الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِى سَخَطِ الْوَالِدِ

‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার ক্রোধে আল্লাহর ক্রোধ’।
[তিরমিযী হা/১৮৯৯; মিশকাত হা/৪৯২৭; ছহীহাহ হা/৫১৬]

★৩১. আবু দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি শামে তার নিকটে এসে বলল, আমার মা, অন্য বর্ণনায় আমার পিতা বা মাতা (রাবীর সন্দেহ) আমাকে বারবার তাকীদ দিয়ে বিয়ে করালেন।এখন তিনি আমাকে আমার স্ত্রীকে তালাক দানের নির্দেশ দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমি কি করব? জবাবে আবুদ্দারদা বলেন, আমি তোমার স্ত্রীকে ছাড়তেও বলব না, রাখতেও বলব না। আমি কেবল অতটুকু বলব, যতটুকু আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এঁর নিকট থেকে শুনেছি।তিঁনি বলেছেন

الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبوابِ الْجَنَّةِ، فَحَافِظْ إِنْ شِئْتَ أَوْ ضَيِّعْ

‘পিতা হ’লেন জান্নাতের মধ্যম দরজা। এক্ষণে তুমি চাইলে তা রেখে দিতে পার অথবা বিনষ্ট করতে পার’।

[শারহুস সুন্নাহ হা/৩৪২১; আহমাদ হা/২৭৫৫১; তিরমিযী হা/১৯০০; ইবনু মাজাহ হা/২০৮৯; মিশকাত হা/৪৯২৮; ছহীহাহ হা/৯১৪]

★৩২. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমার স্ত্রীকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু আমার পিতা তাকে অপছন্দ করতেন। তিনি তাকে তালাক দিতে বলেন। আমি তাতে অস্বীকার করি। তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলা হ’লে তিঁনি বলেন,

أَطِعْ أَبَاكَ وَطَلِّقْهَا، فَطَلَّقْتُهَا

‘তুমি তোমার পিতার আনুগত্য কর এবং তাকে তালাক দাও। অতঃপর আমি তাকে তালাক দিলাম’।

[হাকেম হা/২৭৯৮; সহীহ ইবনু হিববান হা/৪২৬; সহীহাহ হা/৯১৯]

★৩৩. জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর ১ম সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন। ২য় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন। এরপর ৩য় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে তিন সিঁড়িতে তিন বার আমীন বলতে শুনলাম। তিনি বললেন, আমি যখন ১ম সিঁড়িতে উঠলাম, তখন জিব্রীল আমাকে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রামাযান মাস পেল। অতঃপর মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হ’ল না। পরে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। তখন আমি বললাম, আমীন’। ২য় সিঁড়িতে উঠলে জিব্রীল বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে পেল। অতঃপর সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করলো না। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। তখন আমি বললাম, আমীন’। অতঃপর ৩য় সিঁড়িতে পা দিলে তিনি বললেন, যার নিকটে তোমার কথা বর্ণনা করা হ’ল, অথচ সে তোমার উপরে দরূদ পাঠ করলো না। অতঃপর মারা গেল ও জাহান্নামে প্রবেশ করলো। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। তখন আমি বললাম, আমীন’।

[ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪০৯, ছহীহ লেগায়রিহী; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬৪৬, হাদীস হাসান সহীহ।]

★৩৪. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনিল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

« الكبائرُ : الإشراكُ بالله ، وعُقوقُ الوالدين ، وقتْلُ النفس ، واليمينُ الغموسُ» . ( رواه البخاري) .

“অন্যতম কবীরা গুনাহসমূহ হল: আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা।”
[বুখারী, হাদিস নং- ৬২৯৮]

★৩৫. নবী করীম (ﷺ)-আরও বলেন,

رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ. قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ.

‘ঐ লোক হতভাগ্য! ঐ লোক হতভাগ্য! ঐ লোক হতভাগ্য! জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আললাহর রাসূল (ﷺ)! কার শানে একথা বললেন? নবী করীম (ﷺ) বললেন, যে লোক পিতা-মাতার একজন কিম্বা দু’জনকে তাদের বৃদ্ধ বয়সে পেল অথচ জান্নাতে দাখিল হল না, সে হতভাগ্য’।
[মুসলিম শরীফ-হা/২৫৫১]

★৩৬. অপর হাদিস শরীফে এসেছে-
হজরত আমর বিন মুররা জুহানি (রা:) থেকে বর্ণিত কুজায়া বংশের এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (আমি) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি; মালের জাকাত দেই; রমজানের রোজা রাখি; আমার সাওয়াব কতটুকু হবে?

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ কাজ করে যে মৃত্যুবরণ করল, সে কিয়ামতের দিন আম্বিয়া; সিদ্দিকীন; শহিদগণের সঙ্গে এমনভাবে থাকবে; এ বলে তিনি দু’টি আঙ্গুল একত্রিত করে দেখালেন। তবে এর জন্য শর্ত হলো- সে যেন পিতামাতার নাফরমানি না করে।’

[ইবনে হিব্বান, ইবনে খুজায়মা, মাজমাউয যাওয়ায়েদ]

★৩৭. পিতামাতার অবাধ্যতার শাস্তি দুনিয়াতেই:

عن أبي بكرة ، رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم يقول : ” كل الذنوب يؤخر الله ما شاء منها إلى يوم القيامة إلا عقوق الوالدين فإن الله تعالى يعجله لصاحبه في الحياة قبل الممات ” ( المستدرك على الصحيحين كتاب الأطعمة كل الذنوب يؤخر الله ما شاء منها إلا عقوق الوالدين.رقم الحديث- ৭৩৪৫)

হযরত আবু বারকাহ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছা করলে সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন, পিতা-মাতার নাফরমানী ব্যতিত। আর তিনি পিতা-মাতার অবাধ্যতার শাস্তি মৃত্যুর পূর্বে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন।
[মুস্তাদরাক হাকেম-৭৩৪৫]

♦মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- এই কথা সঠিক কিনা এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার মর্যাদা-৮ম পর্ব

★৩৮. পিতা-মাতার অবাধ্যতা শিরকের পরে মহাপাপ : আবু বাকরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,আঁমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহ কোনটি সে বিষয়ে খবর দিব না? আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এসময় তিঁনি ঠেস দিয়ে ছিলেন। অতঃপর উঠে বসে বললেন, সাবধান! মিথ্যা কথা ও মিথ্যা সাক্ষ্য। কথাটি তিনি বলতেই থাকলেন। আমরা ভাবছিলাম, তিনি আর থামবেন না’।
[বুখারী হা/৫৯৭৬; মুসলিম হা/৮৭]

✌অত্র হাদীসে বুঝা যায় যে, শিরকের পরেই মহাপাপ হল পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। এরপরে মহাপাপ হল মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

★৩৯. রেহেম রহমান হ’তে নিঃসৃত :
আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) বলেন,

قَالَاللهُ : أَنَا اللهُ وَأَنَا الرَّحْمَنُ خَلَقْتُ الرَّحِمَ وَشَقَقْتُ لَهَا مِنَ اسْمِى فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَهَا بَتَتُّهُ-

‘আল্লাহ বলেছেন,আঁমি আল্লাহ, আঁমি রহমান।আঁমিই রেহেম সৃষ্টি করেছি।আঁমি ‘রেহেম’ শব্দটিকে আঁমার ‘রহমান’ নাম থেকে নিঃসৃত করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক দৃঢ় রাখবে, আঁমি তার সাথে যুক্ত থাকব।আর যে ব্যক্তি সেটা ছিন্ন করবে,আঁমি তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিব’।

[তিরমিযী হা/১৯০৭; আবুদাঊদ হা/১৬৯৪; মিশকাত হা/৪৯৩০]

★৪০. হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত।রাসূল (ﷺ) বলেন,

إِنَّ الرَّحِمَ سُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ

‘রেহেম শব্দটি রহমান থেকে নিঃসৃত। সেকারণ আল্লাহ বলেছেন,…।
[বুখারী হা/৫৯৮৮; মিশকাত হা/৪৯২০]

★৪১. আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে রাসূল (ﷺ)-বলেন,
الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ

‘রেহেম আল্লাহর আরশের সাথে ঝুলন্ত।সে বলে,যে আঁমাকে নিজের সাথে যুক্ত রাখবে,আল্লাহ তাকে যুক্ত রাখবেন।আর যে আঁমাকে ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন’।
[মুসলিম হা/২৫৫৫; মিশকাত হা/৪৯২১]

★৪২. জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম (রাঃ)-এর বর্ণিত।রাসূল (ﷺ) বলেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ

‘রেহেমের সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।
[মুসলিম হা/২৫৫৬; বুখারী হা/৫৯৮৪; মিশকাত হা/৪৯২২]

★৪৩. হযরত আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنَّانٌ وَلاَ عَاقٌّ وَلاَ مُدْمِنُ خَمْرٍ

‘খোটা দানকারী,পিতা-মাতার অবাধ্য ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।
[নাসাঈ হা/৫৬৭২; দারেমী হা/২০৯৪; মিশকাত হা/৪৯৩৩]

★৪৪. ইবনু ওমর (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে

ثَلاَثَةٌ قَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِمُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمْرِ وَالْعَاقُّ وَالْدَّيُّوثُ الَّذِى يُقِرُّ فِى أَهْلِهِ الْخَبَثَ-

‘তিন জন ব্যক্তির উপরে আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করেছেন। মদ্যপায়ী, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান এবং দাইয়ূছ।যে তার পরিবারে অশ্লীলতা স্থায়ী রাখে’।
[আহমাদ হা/৫৩৭২; নাসাঈ হা/২৫৬২; মিশকাত হা/৩৬৫৫]

★৪৫. আবু উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-বলেন,

ثَلاَثَةٌ لاَ يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَلاَ عَدْلٌ: عَاقٌّ وَمَنَّانٌ وَمُكَذِّبٌ بِقَدْرٍ-

‘তিনজন ব্যক্তির কোন দান বা সৎকর্ম আল্লাহ কবুল করেন না : পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, খোটা দানকারী এবং তাক্বদীরে অবিশ্বাসী ব্যক্তি’।
[ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৫৪৭; ছহীহাহ হা/১৭৮৫]

★৪৬. অন্যদের পিতামাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন: অন্য আর এক হাদীসে তিঁনি বলেন,

إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ. قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ، وَيَسُبُّ أَمَّهُ

‘সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হচ্ছে কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে অভিসম্পাত করা। বলা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! মানুষ তার পিতা-মাতাকে কি ভাবে অভিশাপ করে? তিঁনি বললেন,কোন ব্যক্তি অপরের পিতা-মাতাকে গালি দেয়। ফলে সেও তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়।’

[বুখারী, হা/৫৯৭৩; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯১৬]

♦মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত- এই কথা সঠিক কিনা এবং কোরআন-হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার মর্যাদা-৯ম পর্ব

★৪৭. আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে হাদিস বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ ! ، قالوا : يَا رَسُول الله ، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ ؟! قَالَ : نَعَمْ ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ ، فَيَسُبُّ أبَاه ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ » . (مُتَّفَقٌ عَلَيهِ) .

“কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতামাতাকে গালি দেওয়া কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত! সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোনো মানুষ কি তার পিতামাতাকে গালি দিতে পারে?! জবাবে তিঁনি বললেন: হ্যাঁ, সে অন্য কোনো মানুষের পিতাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার পিতাকে গালি দেয় এবং সে অন্য ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, তখন ঐ ব্যক্তি তার মাকে গালি দেয়।”

[বুখারী, হাদিস নং- ৫৬২৮; মুসলিম, হাদিস নং- ২৭৩; হাদিসের শব্দগুলো ইমাম মুসলিম রহ. এর।]

★৪৮. অপর হাদিস শরীফে এসেছে

وعن عبدِ اللَّهِ بن دينارٍ عن عبد اللَّه بن عمر رضي اللَّه عنهما أَنَّ رجُلاً مِنَ الأَعْرابِ لقِيهُ بِطرِيق مكَّة، فَسلَّم عَليْهِ عَبْدُ اللَّه بْنُ عُمرَ، وحملهُ عَلَى حمارٍ كَانَ يرْكَبُهُ، وأَعْطَاهُ عِمامةً كانتْ عَلَى رأْسِهِ، قَالَ ابنُ دِينَارٍ: فقُلنا لهُ: أَصْلَحكَ اللَّه إِنَّهمْ الأَعْرابُ وهُمْ يرْضَوْنَ بِاليسِيرِ. فَقَالَ عبدُ اللَّه بنُ عمر: إِنَّ أَبَا هَذَا كَان وُدّاً لِعُمَرَ بنِ الخطاب رضي اللَّه عنه، وإِنِّي سمِعْتُ رَسُول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يقول:”إِنَّ أَبرَّ البِرِّ صِلةُ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ وفي روايةٍ عن ابن دينار عن ابن عُمَر أَنَّهُ كَانَ إِذا خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ كَانَ لَهُ حِمارٌ يَتَروَّحُ عليْهِ إِذَا ملَّ رُكُوب الرَّاحِلَةِ، وعِمامةٌ يشُدُّ بِها رأْسهُ، فَبيْنَا هُو يوْما عَلَى ذلِكَ الحِمَارِ إذْ مَرَّ بِهِ أَعْرابيٌّ، فَقَالَ: أَلَسْتَ فُلانَ بْنَ فُلانٍ؟ قَالَ: بلَى: فَأَعْطَاهُ الحِمَارَ، فَقَالَ: ارْكَبْ هَذَا، وأَعْطاهُ العِمامةَ وَقالَ: اشْدُدْ بِهَا رأْسَكَ، فَقَالَ لَهُ بَعْضُ أَصْحابِهِ: غَفَر اللَّه لَكَ، أَعْطَيْتَ هذَا الأَعْرابيِّ حِماراً كنْتَ تَروَّحُ عليْهِ، وعِمامَةً كُنْتَ تشُدُّ بِهَا رأْسَكَ؟ فَقَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رسولَ اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم يُقولُ: “إِنْ مِنْ أَبَرِّ البِرِّ أَنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْد أَنْ يُولِّي” وإِنَّ أَبَاهُ كَانَ صَدِيقاً لِعُمر رضي اللَّه عنه،( رواه مسلم (২৫৫২)، وأبو داود (৫১৪৩.)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা মক্কার পথে এক বেদুঈনের সাক্ষাত পেলেন। তিনি তাকে সালাম দিলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক? লোকটি উত্তর করল, হ্যাঁ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা তাকে তার আরোহনের একমাত্র গাধাটি দিয়ে দিলেন এবং এতে আরোহন করতে বললেন। তিনি তাকে তাঁর পাগড়িটিও দিয়ে দিলেন এবং তা মাথায় পরে নিতে বললেন। তাঁর কিছু সহচর বলল, আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন! সে তো কেবলই একজন বেদুঈন। আর বেদুঈনরা সামান্যতেই তুষ্ট হয়ে থাকে। আপনি তাকে আপনার গাধা ও পাগড়ি দিয়ে দিলেন? অথচ এ সবে আপনার নিজেরও প্রয়োজন রয়েছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা উত্তর দিলেন, তার পিতা ছিলেন আমার পিতার (হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বন্ধু এবং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, একটি বড় পূণ্যের কাজ হল, পিতার বন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের সাথে উত্তম আচরণ করা।

[মুসলিম-২৫৫২,আবু দাউদ-৫১৪৩]

✌এটি ইসলামের সৌন্দর্য ও মহত্ত যে,তা কেবল নিজের পিতা মাতাকেই ভালবাসতে ও সম্মান জানাতে শিক্ষা দেয় না, বরং অন্যদের পিতামাতার সাথেও অনুরূপ আচরণ করতে শিক্ষা দেয়।

★৪৯. পিতা-মাতার হক্ব আদায় করা কখনও সম্ভব নয়:

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، أَنَّ رَجُلا كَانَ فِي الطَّوَافِ حَامِلا أُمَّهُ يَطُوفُ بِهَا ، فَسَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، هَلْ أَدَّيْتُ حَقَّهَا ؟ قَالَ : لا ، وَلا بِزَفْرَةٍ وَاحِدَةٍ . (البحر الزخار بمسند البزار ১০-১৩ গ্ধ مُسْنَدُ بُرَيْدَةَ بْنِ الْحُصَيْبِ رَضِيَ اللَّهُ … গ্ধ حَدِيثُ بُرَيْدَةَ بْنِ الْحُصَيْبِ رقم الحديث: ২৬৬ صحيح الأدب المفرد:৯)، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ وَاقِدٍ، نا فَرَجُ بْنُ فَضَالَةَ، نا مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَقَالَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، أُمِّي عَجُوزٌ كَبِيرَةٌ، أَنَا مَطِيَّتُهَا، أَجْعَلُهَا عَلَى ظَهْرِي، وَأَنْحَنِي عَلَيْهَا بِيَدِي، وَأَلِي مِنْهَا مِثْلَ مَا كَانَتْ تَلِي مِنِّي، أَوَ أَدَّيْتُ شُكْرَهَا؟ قَالَ: ্রلَاগ্ধ ، قَالَ: لِمَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: ্রإِنَّكَ تَفْعَلُ ذَلِكَ بِهَا وَأَنْتَ تَدْعُو اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يُمِيتُهَا، وَكَانَتْ تَفْعَلُ ذَلِكَ بِكَ وَهِيَ تَدْعُو اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ يُطِيلَ عُمْرَكَগ্ধ اخرجه ابن أبي الدنيا في مكارم الأخلاق ص৭৫

বর্ণিত আছে যে,এক ব্যক্তি তার বৃদ্ধ মাতাকে কাবা শরীফে নিয়ে আসে। সে তাকে তার কাঁধে নিয়ে কাবা শরীফের চারপাশে তাওয়াফ করতে থাকে। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি কি এখন আমার মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করেছি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উত্তর দিলেন, তুমি তোমার মায়ের একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের হকও আদায় করনি।

[বুখারী: আদাবুল মুফরাদ-০৯ বায্যার ১০/১৩, হা- ২৬৬,ইবনে কাসীর, ৩য় খন্ড]

★৫০. দুধ মাতার সাথেও সদ্ব্যবহার করতে হবে:

عنْ أَبِي الطُّفَيْلِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ، يَقْسِمُ لَحْمًا بِالْجِعْرَانَةِ فَجَاءَتْهُ امْرَأَةٌ بَدْوِيَّةٌ فَبَسَطَ لَهَا رِدَاءَهُ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذِهِ؟ قَالُوا: هَذِهِ أُمُّهُ الَّتِي كَانَتْ تُرْضِعُهُ ( أخرجه البيهقي في دلائل النبوة ح১৯৫৬-৫/২৭১ . مسند البزار (২৭৮১))

“হযরত আবু তোফায়েল থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জায়রানা নামক স্থানে গোশত বন্টন করতে দেখলাম। এমন সময় জনৈক এক মহিলা এসে তাঁর সামনে হাজির হলো। তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিঁজের চাদর মুবারক বিছিয়ে দিলে মহিলা সেই চাদরের ওপর বসলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,উনি কে? লোকেরা বললো,উঁনি হলেন তাঁর দুধ মাতা হালিমা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা। যিনি তাঁকে দুধ পান করিয়েছেন”।

[বায়হাকী: ;দালায়েলুন নবুয়ত -১৯৫৬]

★৫১. যারা তাঁদের জীবদ্দশায় যথাযথ সেবা যত্ন করতে পারে নি তাদের জন্য করণীয়:

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” إِنَّ الرَّجُلَ لَيَمُوتُ وَالِدَاهُ وَهُوَ عَاقٌّ لَهُمَا ، فَيَدْعُو لَهُمَا مِنْ بَعْدِ مَمَاتِهِمَا فَيَكْتُبَهُ اللَّهُ مِنَ الْبَارِّينَ ” (شعب الإيمان للبيهقي গ্ধ الْخامسُ وَالْخَمْسُونَ مِنْ شُعَبِ الإِيمَانِ وهو … গ্ধ فَصْلٌ فِي حِفْظِ حَقِّ الْوَالِدَيْنِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا … رقم الحديث: ৭৪০৪ [مشكاة المصابيح جـ ৩ رقم ৪৯৪২].)

হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, প্রায়ই এমনটি হয়ে থাকে যে, কোন ব্যক্তির পিতামাতার একজন কিংবা উভয়েই মৃত্যুবরণ করে,কিন্তু সে তাদের জীবদ্দশায় যথাযথ সেবা যত্ন করতে পারে নি।এভাবে নিজেকে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন থেকে বঞ্চিত করে। অতঃপর সে তার দোয়ার মধ্যে তাদেরকে স্মরণ করে এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তখন আল্লাহ তাআলা তার নাম মাতা-পিতার নাফরমানদের তালিকা থেকে পরিবর্তন করে অনুগতশীলদের তালিকাভুক্ত করে নেন।
[বায়হাকি-৭৪০৪]

✌এই হাদিসটি তাদের জন্যে শুভ সংবাদ বহন করে যারা পিতামাতার উভয়কে কিংবা তাদের একজনকে হারিয়েছে। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে, সে তার পিতামাতার প্রতি যথাযথ হক আদায় করেছে। অতএব, আমাদের উচিৎ হবে তাঁদের জীবদ্দশায় সাধ্যমত তাঁদের হক আদায় করার চেষ্টা করা এবং মৃত্যুর পরে তাঁদেরকে আমাদের দোয়ায় স্মরণ করা ও তাঁদের জন্য দান-খায়রাত করা। এটা কেবল তাঁদের জন্যেই উপকারী হবে না, বরং তাদের জীবদ্দশায় তাদের সেবা যত্ন করার ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি ও দুর্বলতাকেও মোচন করে দেবে।

★৫২. পিতা-মাতার সেবা বিপদ মুক্তির অসীলা :

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,পূর্ব কালে তিন জন ব্যক্তি সফরে বের হয়। পথিমধ্যে তারা মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে পতিত হয়। তখন তিন জনে একটি পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। হঠাৎ গুহা মুখে একটি বড় পাথর ধসে পড়ে। তাতে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তিন জনে সাধ্যমত চেষ্টা করেও তা সরাতে ব্যর্থ হয়। তখন তারা পরস্পরে বলতে থাকে যে, এই বিপদ থেকে রক্ষার কেউ নেই আল্লাহ ব্যতীত। অতএব তোমরা আল্লাহকে খুশী করার উদ্দেশ্যে জীবনে কোন সৎকর্ম করে থাকলে সেটি সঠিকভাবে বল এবং তার দোহাই দিয়ে আললাহর নিকট প্রার্থনা কর। আশা করি তিনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করবেন।

তখন একজন বলল,আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট কয়েকটি শিশু সন্তান ছিল। যাদেরকে আমি প্রতিপালন করতাম। আমি প্রতিদিন মেষপাল চরিয়ে যখন ফিরে আসতাম,তখন সন্তানদের পূর্বে পিতা-মাতাকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে রাত হয়ে যায়। অতঃপর আমি দুগ্ধ দোহন করি। ইতিমধ্যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে যান। তখন আমি তাদের মাথার নিকট দুধের পাত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি,যতক্ষণ না তারা জেগে ওঠেন। এ সময় ক্ষুধায় আমার বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট কেঁদে গড়াগড়ি যায়। কিন্তু আমি পিতা-মাতার পূর্বে তাদেরকে পান করাতে চাইনি। এভাবে ফজর হয়ে যায়। অতঃপর তারা ঘুম থেকে উঠেন ও দুধ পান করেন। তারপরে আমি বাচ্চাদের পান করাই।

اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ

‘হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহ’লে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’! তখন পাথর কিছুটা সরে গেল এবং তারা আকাশ দেখতে পেল।

দ্বিতীয় জন বলল, হে আল্লাহ! আমার একটা চাচাতো বোন ছিল। যাকে আমি সবচেয়ে ভালবাসতাম। এক সময় তাকে আমি আহবান করলে সে একশ’ দীনার নিয়ে আসতে বলল। আমি বহু কষ্টে একশ’ দীনার জমা করলাম। অতঃপর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। কিন্তু যখন আমি তার প্রতি উদ্যত হ’লাম, তখন সে বলল,

يَا عَبْدَ اللهِ اتَّقِ اللهَ، وَلاَ تَفْتَحِ الْخَاتَمَ

‘হে আল্লাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয় কর। আমার সতীত্ব বিনষ্ট করো না’। তৎক্ষণাৎ আমি সেখান থেকে উঠে এলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহ’লে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’! তখন পাথর কিছুটা সরে গেল।

তৃতীয়জন বলল, হে আল্লাহ! আমি জনৈক ব্যক্তিকে এক পাত্র চাউলের বিনিময়ে মজুর নিয়োগ করি। কাজ শেষে আমি তাকে প্রাপ্য দিয়ে দেই। কিন্তু সে কোন কারণবশত তা ছেড়ে চলে যায়। তখন আমি তার প্রাপ্যের বিনিময়ে গরু ও রাখাল পালন করতে থাকলাম। অতঃপর একদিন লোকটি আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার উপর যুলুম করো না। আমার পাওনাটা দিয়ে দাও’। তখন আমি বললাম, এই গরু ও রাখাল সবই তুমি নিয়ে যাও। লোকটি বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সঙ্গে ঠাট্টা করো না’। আমি বললাম, আমি ঠাট্টা করছি না। ঐ গরু ও রাখাল সবই তুমি নিয়ে যাও। অতঃপর লোকটি সব নিয়ে গেল’। হে আল্লাহ! যদি আমি এটা তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহ’লে তুমি আমাদের থেকে এই পাথর সরিয়ে নাও’! তখন পাথরের বাকীটুকু সরে গেল এবং আল্লাহ তাদেরকে মুক্তি দান করলেন’।

[বুখারী হা/৫৯৭৪, ২৯৭২; মুসলিম হা/২৭৪৩; মিশকাত হা/৪৯৩৮ ‘শিষ্টাচার সমূহ’ অধ্যায় ‘সৎকর্ম ও সদ্ব্যবহার’ অনুচ্ছেদ]

★৫৩. পিতা-মাতার ইন্তিকালের পর আমাদের করণীয়: ইসলামে পিতামাতার অধিকার এতই স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ যে, তা কখনো শেষ হয় না, এমনকি তাদের মৃত্যুর পরও। এই হাদিস আমাদের উপর তাঁদের মৃত্যু পরবর্তী কিছু অধিকারের কথা তুলে ধরে।

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ السَّاعِدِيِّ قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ جلوس عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلَمَةَ, فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ, هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا؟ فقَالَ: نَعَمْ، الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا, وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا( رواه أبو داود في الأدب برقم ৪৪৭৬، وأحمد في مسند المكيين برقم ১৫৪৭৯.)

হযারত আবু উসাইদ মালিক ইবনু রাবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, কোনো এক দিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে বসা ছিলাম। এমন সময় বানী সালামা সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি এসে আরয করল, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পিতা-মাতার মারা যাবার পরও আমার উপর তাদের প্রতি সদাচারণ করার দায়িত্ব আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য দুআ করবে, তাদের গুনাহের মাগফিরাত প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে এ জন্যে উত্তম ব্যবহার করবে যে, এরা তাদেরই আত্মীয় বন্ধু-বান্ধব এবং তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান দেখাবে।

[আবু দাউদ, হাঃ ৫১৪২,ইবনে মাজাহ,হাঃ ৩৬৬৪, মিশকাত,হাঃ ৪৯৩৬]

★৫৪. তাঁদের জন্য ইছালে ছাওয়াব করা: মৃতের জন্যে জীবিতের পক্ষ থেকে উত্তম হাদিয়া হলো ইছালে সওয়াব। সন্তানের উপর পিতা-মাতার জন্যে ইছালে সওয়াব করা অপরিহার্য, এক মুসলমানের উপর অপরাপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যে ইছালে সওয়াব করা উত্তম।

قال النَّبيّ الكريمُ صلّى الله تعالى عليه وآله وسلّم: ্রما الْمَيّتُ في القَبْرِ إلاّ كالْغَرِيْق الْمُتَغَوِّثِ يَنتَظِرُ دَعْوَةً تَلحَقُه مِن أبٍ أوْ أُمٍّ أوْ أخٍ أوْ صَدِيقٍ فإذا لَحِقَتْه كانَتْ أحَبَّ إليه مِن الدُّنيا ومَا فيها وإنَّ اللهَ عزّ وجلّ لَيُدخِلُ على أهْلِ القُبُورِ مِن دُعاءِ أهْلِ الأَرْضِ أمْثَالَ الجِبالِ وإنَّ هَديَّةَ الأَحْيَاءِ إلى الأَمْوَاتِ الاِسْتِغفارُ لهم ( هذا الحديث أخرجه البيهقي في “شعب الإيمان”، ٦/٢٠٣، (٧٩٠٥). أخرجه أبوعبدالله الحافظ في ” فوائد الشيخ ـ كما في الشعب ” , ومن طريقه البيهقي في ” الشعب ” ১০ : ৭৫২৭ و ১১ : ৮৮৫৫ , والديلمي في ” مسنده ـ زهر الفردوس ” ج৫ : ل ২৪ : أ ـ ب , من طريق الفضل بن محمد الباهلي , ثنا عبدالله بن المبارك , ثنا يعقوب بن القعقاع , عن مجاهد , عن ابن عباس به مرفوعاً . وأورد هذا الحديث الذهبي في ” الميزان ” ৪ : ৪১৬ , و تبعه الحافظ في ” اللسان ” ৫ : ৯৯ )

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্নিত রসুল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,ডুবন্ত ত্রানপ্রার্থী ব্যক্তির যে অবস্থা, অবিকল সেই অবস্থা হলো কবরে শায়িত মৃতু ব্যক্তির।সে দু‘আর অপেক্ষায় থাকে,যে দু‘আ পিতা-মাতা, ভাই-বন্ধুদের পক্ষ থেকে তার কাছে পৌঁছবে। যখন এরূপ কোন দু‘আ তার কাছে পৌঁছে তখন তা তার কাছে দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল সম্পদ অপেক্ষা প্রিয়তর মনে হয়।
[বায়হাকী: ৬/২০৩]

★৫৫. ইমাম বোখারী (রহ:) ও ইমাম মুসলিম (রহ:) লেখেন:

عنْ مَالِكٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ شُرَحْبِيلَ بْنِ سَعِيدِ بْنِ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: خَرَجَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ، وَحَضَرَتْ أُمَّهُ الْوَفَاةُ بِالْمَدِينَةِ، فَقِيلَ لَهَا: أَوْصِي، فَقَالَتْ: فِيمَ أُوصِي؟ الْمَالُ مَالُ سَعْدٍ، فَتُوُفِّيَتْ قَبْلَ أَنْ يَقْدَمَ سَعْدٌ، فَلَمَّا قَدِمَ سَعْدٌ ذُكِرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هَلْ يَنْفَعُهَا أَنْ أَتَصَدَّقَ عَنْهَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রنَعَمْগ্ধ، فَقَالَ سَعْدٌ: حَائِطُ كَذَا وَكَذَا صَدَقَةٌ عَنْهَا، لِحَائِطٍ سَمَّاهُ(سنن النسائي – الوصايا (৩৬৫০) ) (س) ৩৬৬৪ , (د) ১৬৭৯ , (جة) ৩৬৮৪ , (حم) ২২৫১২ (২) (د) ১৬৮১ , انظر صحيح الترغيب والترهيب: ৯৬২عن ابْن عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا : (أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ تُوُفِّيَتْ أُمُّهُ وَهُوَ غَائِبٌ عَنْهَا ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، إِنَّ أُمِّي تُوُفِّيَتْ وَأَنَا غَائِبٌ عَنْهَا ، أَيَنْفَعُهَا شَيْءٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا؟قَالَ : نَعَمْ .قَالَ : فَإِنِّي أُشْهِدُكَ أَنَّ حَائِطِيَ الْمِخْرَافَ صَدَقَةٌ عَلَيْهَا) رواه البخاري (২৭৫৬) ، ومسلم (১০০৪). عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَادَةَ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أُمَّ سَعْدٍ مَاتَتْ، فَأَيُّ الصَّدَقَةِ أَفْضَلُ؟، قَالَ: ্রالْمَاءُগ্ধ، قَالَ: فَحَفَرَ بِئْرًا، وَقَالَ: هَذِهِ لِأُمِّ سَعْدٍ(سنن النسائي – الوصايا (৩৬৬৪) سنن النسائي – الوصايا (৩৬৬৫) سنن النسائي – الوصايا (৩৬৬৬) سنن أبي داود – الزكاة (১৬৮১))

“এক ব্যক্তি (ছাদ বিন ওবাদা) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে আরয করেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল) আমার মা অকস্মাৎ ইন্তেকাল করেছেন এবং তিনি কোনো অসিয়ত করে যাননি। তবে আমার মনে উদয় হয়েছে, তিনি তা চাইলে হয়তো কোনো দান-সদকা করার কথা আমাকে বলতেন। এক্ষণে আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দান-সদকাহ করলে তিনি কি এর সওয়াব পাবেন? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে এরশাদ করেন, ‘হ্যাঁ।’ এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আঁপনাকে আমার (খেজুর) ফলে পরিপূর্ণ বাগানটি সদকাহ হিসেবে দানের ব্যাপারে সাক্ষী করলাম’ তিনি বললেন হ্যাঁ। অন্য বর্ণনায়- আমি বললাম কি ছদকা দেবো? উত্তরে বললেন, পানি পান করার ব্যবস্থা কর। (অর্থাৎ কূপ খনন করে দাও)। হযরত সা’আদ রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু একটি কূপ খনন করে বলেছিলেন “এটা সা’দের মায়ের নামে উৎসর্গীত হল।”

[আল-বোখারী, ‘অসিয়ত’ অধ্যায়, ৪র্থ খন্ড-,বাব নং ৫১,হাদীস নং ১৯. মুসলিম, ‘অসিয়ত‘ অধ্যায়,বাব নং ১৩, হাদীস নং ৪০০৩]

✌প্রথম করণীয় হ’ল, তাঁদের ঋণ পরিশোধ করা ও অছিয়ত পূর্ণ করা। অতঃপর মীরাছ বণ্টন করা।
[সূরা নিসা,আয়াত নং ১১]

অতঃপর পিতা-মাতার জন্য দো‘আ করা,ছাদাক্বা করা এবং ইল্ম বিতরণ করা। আরেকটি হ’ল তাদের পক্ষ হ’তে হজ্জ করা।
[ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩১০; তালখীছ ৭৬]

… তবে এজন্য উত্তরাধিকারীকে প্রথমে নিজের ফরয হজ্জ আদায় করতে হবে।
[আবুদাঊদ হা/১৮১১; ইবনু মাজাহ হা/২৯০৩; মিশকাত হা/২৫২৯ ‘মানাসিক’ অধ্যায়-১০]

✌রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ জান্নাতে সৎকর্মশীল বান্দার মর্যাদার স্তর উঁচু করবেন। তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কিভাবে এটা আমার জন্য হ’ল? তিনি বলবেন,
بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ
‘তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে’।

[আহমাদ হা/১০৬১৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৬০; মিশকাত হা/২৩৫৪ ‘ইস্তিগফার ও তওবা’ অনুচ্ছেদ; ছহীহাহ হা/১৫৯৮]

✌এজন্য সন্তানকে সর্বদা দো‘আ করতে হবে

رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْراً-

(রবিবরহাম্হুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা) ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন’।
[সূরা বনীইসরাঈল,আয়াত নং ২৪]

✌অপর আয়াতে এসেছে

رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-

(রববানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব) ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে এবং ঈমানদার সকলকে ক্ষমা কর যেদিন হিসাব দন্ডায়মান হবে’।
[সূরা ইবরাহীম,আায়ত নং ৪১]

✌ছাদাক্বার মধ্যে ঐ ছাদাক্বা উত্তম, যা ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ, যা সর্বদা জারি থাকে ও স্থায়ী নেকী দান করে। এর মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল ইল্ম বিতরণ করা। যে ইল্ম মানুষকে নির্ভেজাল তাওহীদ ও সহীহ সুন্নাহর পথ দেখায় এবং শিরক ও বিদ‘আত হ’তে বিরত রাখে।উক্ত উদ্দেশ্যে উচ্চতর ইসলামী গবেষণা খাতে সহযোগিতা প্রদান করা, সেজন্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও পরিচালনা করা। বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল সম্পন্ন বই ছাপানো ও বিতরণ করা এবং এজন্য স্থায়ী প্রচার মাধ্যম স্থাপন ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।অতঃপর মসজিদ,মাদরাসা, ইয়াতীমখানা,নির্মাণ ও পরিচালনা, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ,সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, দাতব্য চিকিৎসালয় ও হাসপাতাল স্থাপন ও পরিচালনা করা ইত্যাদি।

👏তবে জানা আবশ্যক যে, ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ দু’ভাবে হতে পারে।
(১) মৃত ব্যক্তি স্বীয় জীবদ্দশায় এটা করে যাবেন। এটি নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম। কারণ মানুষ সেটাই পায়, যার জন্য সে চেষ্টা করে।
[সূরা নাজম,আয়াত নং ৩৯]

(২) মৃত্যুর পরে তার জন্য তার উত্তরাধিকারীগণ বা অন্যেরা যেটা করেন।সাইয়িদ রশীদ রিযা বলেন, দো‘আ, ছাদাক্বা (ও হজ্জ)-এর নেকী মৃত ব্যক্তি পাবেন,এ বিষয়ে বিদ্বানগণ সকলে একমত। কেননা উক্ত বিষয়ে শরী‘আতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
[মির‘আত ৫/৪৫৩]
Top