✔ বিষয়ঃ- রফউল ইয়াদাইন-এর ব্যাপারে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কিরামের আমল।
১) আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) -এর আমলঃ-
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ عَيَّاشٍ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبْجَرَ، عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، قَالَ: «صَلَّيْتُ مَعَ عُمَرَ، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ فِي شَيْءٍ مِنْ صَلَاتِهِ إِلَّا حِينَ افْتَتَحَ الصَّلَاةَ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ : وَرَأَيْت الشَّعْبِيَّ ، وَإِبْرَاهِيمَ ، وَأَبَا إِسْحَاقَ ، لاَ يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلاَّ حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلاَةَ.
অনুবাদ : হযরত আসওয়াদ রহ. বলেন: আমি হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে নামায পড়েছি। তিনি নামায শুরু করার সময় ব্যতীত নামাযে আর কোথাও হাত উঠাননি। আব্দুল মালেক বলেন: আমি শা’বী, ইবরাহীম ও আবু ইসহাককে দেখেছি; তাঁদের কেউ নামাযের শুরু ব্যতীত হাত উঠাননি।
রেফারেন্সঃ- ১) ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ২৪৬৯,
২) ত্বহাবী: ১৩৬৪।
✔ হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসটির রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقة “নির্ভরযোগ্য” রাবী। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَهَذَا رِجَاله ثِقَات “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَالْحَدِيثُ صَحِيحٌ، “হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত অধ্যায়, ৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
✴ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন। আর বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত ইমাম শা’বী, ইবরাহীম নাখঈ এবং আবু ইসহাক রহ.ও নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
২) আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قِطَافٍ النَّهْشَلِيِّ،عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ«أَنَّ عَلِيًّا كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ ثُمَّ لَا يَعُودُ» قَالَ عَبْدُ الْمَلِكِ: «وَرَأَيْتُ الشَّعْبِيَّ، وَإِبْرَاهِيمَ، وَأَبَا إِسْحَاقَ، لَا يَرْفَعُونَ أَيْدِيَهُمْ إِلَّا حِينَ يَفْتَتِحُونَ الصَّلَاةَ»
অনুবাদ : হযরত আছেম বিন কুলাইব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন: হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) শুধু নামাযের শুরুতে হাত উঠাতেন পরবর্তীতে আর উঠাতেন না।
রেফারেন্সঃ-
১) ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ২৪৫৭,
২) ত্বহাবী: ১৩৫৩ ও ১৩৫৪
✔ হাদীসটির স্তর : সহীহ। হযরত আছেমের পিতা কুলাইব ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর কুলাইব ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (আল কাশেফ: ৪৬৭১) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَرِجَاله ثِقَات وَهُوَ مَوْقُوف “এ হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সবাই-ই নির্ভরযোগ্য আর হাদীসটি মাউকুফ”। (আদ দিরায়াহ: ১৮১ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) আল্লামা যাইলাঈ রহ. বলেন: وَهُوَ أَثَرٌ صَحِيحٌ، “এ হাদীসটি সহীহ”। (নাসবুর রায়াহ: সিফাতুস সলাত অধ্যায়, ৩৯ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়)
✴ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী বিন আবী তালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
৩) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ ، عَنْ عَبْدِ الرحمن بْنِ الأَسْوَدِ ، عَنْ عَلْقَمَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ : أَلاَ أُرِيكُمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ مَرَّةً.
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) (উপস্থিত লোকদেরকে লক্ষ্য করে) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নামাযের মতো নামায দেখাব না? এরপর তিনি নামায পড়লেন এবং তাতে মাত্র একবার হাত তুললেন। (অর্থাৎ, তাকবীরে তাহরিমার সময়ে)।
রেফারেন্সঃ-
১) ইবনে আবী শাইবা: ২৪৫৬,
২) আব্দুর রযযাক: ২৫৩৩ ও ২৫৩৪,
৩) ত্বহাবী: ১৩৪৯।
✔ হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী।
✴ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন।
৪) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ عَيَّاشٍ، عَنْ حُصَيْنٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، قَالَ: «مَا رَأَيْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَرْفَعُ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَا يَفْتَتِحُ»
অনুবাদ : হযরত মুজাহিদ রহ. বলেন: আমি ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে তাকবীরে তাহরিমা ব্যতীত হাত উঠাতে দেখিনি।
রেফারেন্সঃ- ১) ইবনে আবী শাইবা: ২৪৬৭,
২) ত্বহাবী: ১৩৫৭)
✔ হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী।
✴ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নামাযের শুরুতে শুধু একবার হাত উঠাতেন। রফউল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবাগণের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) অন্যতম। অথচ তিনি নিজে নামায পড়েছেন রফউল ইয়াদাইন করা ব্যতীত। হযরত ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর এ আমল দেখে বলা যেতে পারে যে, হয়তো তিনি রফউল ইয়াদাইনের আমলকে রহিত মনে করতেন অথবা কমপক্ষে রফউল ইয়াদাইন না করার আমলকে তুলনামূলক উত্তম মনে করতেন। অন্যথায় তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রফউল ইয়াদাইন করে নামায পড়তে দেখে নিজে তা ছেড়ে দিবেন এটা হতে পারে না।
☑ ফায়দা : হযরত ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে রফউল ইয়াদাইন করে নামায পড়ার হাদীসও বর্ণিত রয়েছে। (বুখারী: ৭০৩) কিন্তু এ হাদীসের ব্যাপক বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এটা মূলতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমলের বর্ণনা; ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিজের আমল নয়। কারণ, এ হাদীসটি হযরত ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে তাঁর ছেলে সালেমও বর্ণনা করেছেন। আর তিনি এটাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা) -এর আমল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দেখুন, বুখারী: ৭০২, ৭০০ ও ৬৯৯। এমনকি এ হাদীসটি বর্ণনা শেষে ইমাম বুখারী রহ. নিজেও মন্তব্য করেছেন যে, এ হাদীসটি হাম্মাদ বিন সালামা আইয়ূব সূত্রে নাফে’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আমল। এ বর্ণনাটি ইমাম বাইহাকী রহ. তাঁর সুনানে কুবরাতেও সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। (২৫১০) এ হাদীসের ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্দুল বার রহ. বলেন:
هَذَا الْحَدِيثُ أَحَدُ الْأَحَادِيثِ الْأَرْبَعَةِ الَّتِي رَفَعَهَا سَالِمٌ عَنِ أبِيهِ عَنِ النَّبِيِّ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَأَوْقَفَهَا نَافِعٌ عَلَى ابْنِ عُمَرَ فَمِنْهَا مَا جَعَلَهُ مِنْ قَوْلِ ابْنِ عُمَرَ وَفِعْلِهِ وَمِنْهَا مَا جَعَلَهُ عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ عُمَرَ وَالْقَوْلُ فِيهَا قَوْلُ سَالِمٍ وَلَمْ يَلْتَفِتِ النَّاسُ فِيهَا إِلَى نَافِعٍ
“এ হাদীসটি ওই চার হাদীসের একটি যা হযরত সালেম তাঁর পিতার সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। আর হযরত নাফে’ এটাকে ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিজের আমল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি কখনও এটাকে বনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল বর্ণনা করেন, আবার কখনও ইবনে উমার সূত্রে হযরত উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল বর্ণনা করেন। এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কথা হলো সেটা যেটা সালেম বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমল আর নাফে’র বর্ণনার দিকে মানুষ ভ্রুক্ষেপ করেনি। (আত তামহীদ: ইমাম যুহরীর ২৪ নম্বর হাদীস-এর আলোচনায়) প্রথমে ইমাম বুখারীর মন্তব্য থেকে প্রমাণিত হলো যে, হযরত নাফে’ থেকেই এ ব্যাপারে ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। আর ইবনে আব্দুল বার রহ.-এর বিশ্লেষণ থেকে প্রমাণিত হলো যে, এটা হযরত ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর আমল না হওয়ার বিষয়টিই সঠিক।
❌ হযরত ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যু পর্যন্ত রফউল ইদাইন করতেন মর্মে ইমাম বাইহাকী যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন সে হাদীসের একজন রাবী হলেন ইসমা বিন মুহাম্মাদ। ইমামগণ তাঁকে পরিত্যাক্ত, মিথ্যাবাদী, জঈফসহ বহু মারাত্মক দোষে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। (মীযানুল ই’তিদাল: ৫৬৩১) অপর বর্ণনায় আরও একজন রাবী রয়েছেন যার নাম আব্দুর রহমান বিন কুরাইশ। তিনি হাদীস জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন: اتهمه السليماني بوضع الحديث، “আল্লামা সুলাইমানী তাকে হাদীস জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন”। (লিসানুল মীযান: ৪৬৬৯) সুতরাং ইবনে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মৃত্যু পর্যন্ত রফউল ইয়াদাইন করতেন তা প্রমাণিত নয়।