আউলিয়ায়ে কেরামের মাযার শরীফ বা কবর শরীফযিয়ারত করা অতি-পবিত্র আমল।রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম স্বয়ং কবর জিয়ারত করেছেন এবং সকলকেকবর জিয়ারত করতে নির্দেশ দান করেছেন। কিন্তু আমাদের অতীব-সতর্ক থাকা অপরিহার্য যে,মাজার শরীফ যিয়ারতকরতে গিয়ে যেনশরীয়ত বিরোধী কোন কর্ম সংঘটিত না হয়মাজার শরীফেসিজদাহ, নারী-পুরুষের অবাধ সংমিশ্রণ, হৈ-হল্লা, আনন্দ-তামাসাসম্পূর্ণরূপেহারাম ওপরিত্যাজ্য।জিয়ারতের উদ্দেশ্য যেন হয় মৃত্যুকে স্মরণ করা, আখেরাতকে স্মরণ করা,মাজার শরীফে বিশ্রাম-রত নেক-বান্দার দোয়া লাভ করা এবং তাঁর আদর্শে নিজের জীবন-শৈলীকে পরিচালিত করে পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আল্লাহর ওলীর মাজার শরীফ জিয়ারত করার পরেও যদি আখেরাতের স্মরণ না আসে, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতির ব্যাকুলতা না আসে, জীবন-শৈলী সংশোধনের সুদৃঢ় উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, আমাদের নিয়তে ত্রুটি আছে। এখানে উল্লেখ্য যে, কিছু লোক অজ্ঞতা-বশতঃ মাযার শরীফযিয়ারতকে মাযার-পূজা বা কবর-পুজা বলে। স্মরণ রাখতে হবে যে,মাযার শরীফযিয়ারতকে মাযার-পূজা বা কবর-পুজা বলা ইসলাম-দ্রোহিতা, গোমরাহি এবং পথভ্রস্টতা 

মাজার শরীফ জিয়ারতের ক্ষেত্রে নিম্ন-লিখিত বিষয়-সমূহ মাথায় রাখুন

১। পর্দা-হীনতার এই যুগে নারীগণকে মাজার শরীফ নিয়ে আসবেন না। আহলেসুন্নাতেরওয়ালজামায়াতের ফতোয়া অনুযায়ী, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীগণকে মাজার শরীফ নিয়ে আসা নিষিদ্ধ।[ তথ্যসূত্রঃফাতওয়ায়েরেযভীয়া- খন্ড নং ৪ –পৃনং ১৭০]গুন্নিয়াত’ গ্রন্থে এ-প্রসংগেকঠোরতম ভাষায় লিখা হয়েছে যে, “ ইমাম কাজীকে জিজ্ঞাসা করা হোল যে, নারীগণের  মাজার শরীফ জিয়ারত করা জায়েজ কি না? উত্তরে তিনি বলেছেন যে, জায়েজ কি না এটা জিজ্ঞাসা করো না, বরং একথা জিজ্ঞাসা করো যে, এক্ষেত্রে নারীগণের উপর কতটা অভিশাপ বর্ষিত হয় ? যখন নারীরা কবরের উদ্দেশ্যে গৃহ থেকে বের হওয়ার নিয়ত করে তখন তাদের উপর আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতা বর্গের অভিশাপ বর্ষিত হয়। যখন সে  গৃহ থেকে বের হয় , তখন শয়তান তার সঙ্গ নেয়।যখন সে কবরে পৌঁছায় তখন কবরস্থ ব্যক্তির রুহ তার উপর অভিশাপ বর্ষণ করে। যখন সে প্রত্যাবর্তন করে তখন তার উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হয়” [ তথ্যসূত্রঃগুন্নিয়াত - পৃনং ৫৫০]।আল্লামা শায়খআমযাদ আলী বলেন যে, “ নারীদেরকে কবর জিয়ারত থেকে বিরত রাখাই নিরাপদ” [ তথ্যসূত্রঃ বাহারে শারীয়াত–চতূর্থ অধ্যায়- পৃনং ৫৪৯]
২। মাজার শরীফের আশে-পাশে যেন হৈ-হুল্লোড়, খেলাধুলা, হাসি-তামাশা, আনন্দ-বিনোদন, তরুণ-তরুণীর সংমিশ্রণ ইত্যাদি হারাম কাজের সমাহার গড়ে না উঠে সেদিকে সতর্ক থাকুন এবং আপনার সন্তান- সন্ততি যেন ঐ অবাঞ্ছিত কাজ-সমূহে লিপ্ত না হয়, সে-বিষয়ে সজাগ থাকুন।
৩। আদবের সঙ্গে মাজার শরীফে প্রবেশ করুন। মাজার শরীফে বিশ্রাম-রত নেক-বান্দার পায়ের নিকট দাঁড়ান । জায়গা না থাকলে অন্যদিকে দাঁড়ান। কোনবুজুর্গেরজীবদ্দশায় তার সম্মানে যতটানিকটে বা দূরে বসা হয়ততটা দূরে বা নিকটেবসবেতাওয়াফ করবেন না। মাজার শরীফ স্পর্শ করবেন না বা চুমু খাবেন না ; বেয়াদবি হবে। [ তথ্যসূত্রঃহুরমাতেসিজদায়েতা’জীম– আলা হজরাত শাহ ইমাম আহমাদরেযা–পৃনং ৫৪]
৪। শায়খুল ইসলাম মুজাদ্দিদ ঈমামআহমাদরেযারাহমাতুল্লাহিআলাইহ স্বীয় ফতোয়ায় বলেছেন, “মাজার শরীফে বিশ্রাম-রত নেক-বান্দার চার হাত দূরত্বে অবস্থান করবে।তার পরে বিনম্র ভাবে এভাবে সালাম প্রদান করবে, ‘ আস্‌সালামু আলায়কুম ইয়াসাইয়িদী ! ওয়ারহমাতুল্লাহিওয়াবারাকাতুহু’। এরপরে পাঠ করবেঃ
ক। দরূদে গওসিয়া - ৩ বার [ বা যে কোন দরূদ শরীফ ]
খ।  সূরাফাতিহা - ১ বার
গ। আয়াতুল কুরসী – ১ বার
ঘ। সূরা ইখলাস – ৭ বার
ঙ।  দরূদে গওসিয়া–৭ বার [ বা যে কোন দরূদ শরীফ ]
হাতেসময় থাকলে ‘সূরা ইয়াসিন’ এবং ‘সূরামুলক’ওতেলাওয়াত করবে। তার পরে আল্লাহ পাকের নিকট এভাবে দোয়া করবে, ‘ হে আল্লাহ ! আমি যা পাঠ করলাম তার সওয়াব তোমার প্রিয় বান্দাহকে [মাজার শরীফে বিশ্রাম-রত নেক-বান্দাকে] প্রদান করুন, ততটা পরিমানে প্রদান করুন যতটা আপনার মহানুভবতার উপযুক্ত, আমার আমলের অনুপাতে নয়’। এর পরে আল্লাহ পাকের নিকটেশারীয়ত-সম্মত যে কোন দোয়া করুন এবং বলুন যে ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রিয় বান্দাহর [মাজার শরীফে বিশ্রাম-রত নেক-বান্দার] ওসিলায়আমার দোয়া কবুল করুন’। অতঃপর, পূর্বের ন্যায় সালাম প্রদান করে ফিরে আসবে”[ তথ্যসূত্রঃফাতওয়ায়েরেযভীয়া- খন্ড নং ৪ –পৃনং২৩১ ]

৫। সাবধান! খু-উ-ব সাবধান! মাজার শরীফে সিজদা করবেন না।উম্মুলমুমীনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিআল্লাহুআনহাথকে বর্ণিত আছে যে, “ হজরত রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লাম মুহাজির এবং আনসারদের এক জামায়াতেআবস্থান করছিলেন। তথায় একটি উট এসে হুজুরকে সিজদা করল। সাহাবীগন বললেন, ‘ ইয়ারসূলাল্লাহ! আপনাকে চতুস্পদ জন্তু এবং বৃক্ষ সিজদা করে। কিন্তু আমরা হলাম আপনাকে সিজদা করার অধিক হকদার। হুজুর সাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লামবললেন, ‘ আল্লাহর ইবাদত কর ও আমার তা’জীম কর। যদি আমি কাউকে সিজদার হুকুম দিতাম, তাহলে, স্ত্রীকে হুকুম দিতাম নিজ স্বামীকে সিজদা করার জন্য” [ তথ্যসূত্রঃআহমাদ বিন হাম্বল- মুসনাদ- খন্ড নং ৬ –পৃনং ৭৬ –হাদীসনং ২৪৫১৫]।হজরত রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লামআরও বলেন, “ নিকৃষ্ট লোক হচ্ছে তারা, যারা কবরকে সিজদা-গাহে পরিনত করে” [ তথ্যসূত্রঃমুসান্নাফ আবদূর রায্‌যাক । সংগৃহিত-  হুরমাতেসিজদায়েতা’জীম– আলা হজরাত শাহ ইমাম আহমাদরেযা–পৃনং ৩৩]
আহলেসুন্নাতওয়ালজামায়াতের সুস্পষ্ট ফতোয়া হল যে, মাজার শরীফে সিজদা করা কঠোর হারাম। ইমামে আহলেসুন্নাতশায়খুল ইসলাম ইমাম আহমাদরেযারাহমাতুল্লাহিআলাইহিলিখেছেনযে, “ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইবাদতের নিয়তেসিজদাহ করা নিঃসন্দেহে শিরক এবং সুস্পস্টকুফরী এবং তাজিমী সিজদা করা হারাম ও কবীরাগূনাহ” [ তথ্যসূত্রঃহুরমাতেসিজদায়েতা’জীম– আলা হজরাত শাহ ইমাম আহমাদরেযা–পৃনং ৫]। শাইখ ইমাম আহমাদরেযারাহমাতুল্লাহিআলাইহিতাঁর ‘হুরমাতেসিজদায়েতা’জীম’ গ্রন্থে কুরআনশরীফের আয়াত, চল্লিশটি হাদীস এবং একশত ফিকহী প্রমাণ দ্বারা তাজিমী সিজদাকে হারামপ্রমাণিত করেছেন। 


মাযার শরীফযিয়ারতকে মাযার-পূজা বা কবর-পুজা বলা ইসলাম-দ্রোহিতা, গোমরাহি এবং পথভ্রস্টতা

     কিছু লোক অজ্ঞতা-বশতঃ মাযার শরীফযিয়ারতকে মাযার-পূজা বা কবর-পুজা বলে। এটা সুস্পষ্ট ইসলাম-দ্রোহিতা। রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লাম বলেন, “ আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করছিলাম, এখন থেকে যিয়ারত কর”[ তথ্যসূত্রঃসহীহ মুসলিম- ১ম খন্ড পৃনং ৩১৪ ]। সহীহবুখারীতেবর্নিতআছে যে, রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লাম স্বয়ং ওহুদের শহীদ-গণের মাযারাতজিয়ারত করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় হল যে, তিনি একা যিয়ারতে যান নি; নিজের সঙ্গে সাহাবায়েকেরামকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে নামায পড়েছিলেন বা দোয়া করেছিলেনে এবং ভাষণ প্রদান করেছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন যে, আমি এই ভয় করি না যে, আমার পর তোমরা শির্ক করবে বা মুশরিক হয়ে যাবে [ তথ্যসূত্রঃসহীহবুখারী- ৪র্থ খন্ড- পৃনং ১৪৮৬- হাদীসনং ৩৮১৬ ]।ওহুদের শহীদ-গণের মাযারাতজিয়ারত এবং দোয়ার পর মাযারাতে অবস্থান কালে রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লাম এর এ-ঘোষণা ভীষণ তাত্পর্য-পূর্ন । তিনি জানতেন যে, অজ্ঞ বেআদবরা একসময় কবর-যিয়ারতকে কবর-পূজা বলে অভিহিত করবে এবং একে শির্ক বলবে। তাই তিনি নিজ ঘোষাণার দ্বারা সম্পূর্ণ বিষয়টির মিমাংসা করে গেছেন। এর পরেও যারা কবর-যিয়ারতকে কবর-পূজা বলে অভিহিত করবে, তারা নিজেরাই ইসলাম-দ্রোহী, পথভ্রষ্ট এবং ইমান-হীন বলে বিবেচিত হবে কারন তারা সরাসরি রসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহুআলাইহিঅসাল্লামকেচ্যালেঞ্জজানাছে।আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে শারীয়ত-সম্মত ভাবে কবর যিয়ারতেরতাওফীক দান করুন। আমীন।



Top