পৃথিবীর সবচেয়ে ভূয়া তাহক্বীক কারী শায়খ আলবানীর পরিচয়ঃ
আমি আমার এ পুস্তুকে যাদের খন্ডন করেছি তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলাে আহলে হাদিসের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (মৃত.১৯৯৯ খৃ.)। এ লােকটি ১৯১৪ ঈসায়ী সালে ইউরােপের একটি দেশ আলবেনিয়ায়র রাজধানী কুদরাতে জন্ম গ্রহন করেন। আলবেনিয়ায় জন্ম গ্রহন করার কারনে তাকে আলবানী বলা হয়। তার পুরাে নাম হলাে আবু আবদুর রাহমান মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন আলবানী'। তার পিতার নাম নূহ নাতাজী আলবানী আল-হানাফী। তিনি ছিলেন তৎকালিন সময়ের একজন প্রসিদ্ধ হানাফী আলেম। আলবানীও প্রাথমিক যুগে হানাফী ছিলেন এবং তার সম্মানিত পিতার বন্ধু শায়খ সায়ীদ আল-বুরহানীর নিকট সে হানাফি মাযহাবের অনেক ফিহের গ্রন্থ অধ্যায়ন করেন। পরে সে নিজে পথভ্রষ্ট হয়ে সকল মাযহাবকেই অস্বিকার করে বসে, এবং মাযহাব মানাকে হারাম ,শিরক পর্যন্ত ঘােষনা করে বসে। অথচ তার সম্মানিত পিতা ও সে নিজেও হানাফী মাযহাবের অনুসারী আলবানী এমন কোন হাদিস গভেষক নয়, তার অধিকাংশ সময় কেটেছে ঘড়ি মেরামত করে। আহলে হাদিসগন ঘড়ির ডাক্তার, দাঁতের ডাক্তার জাকির নায়েকের কথা মানতে তাদের কোন অসুবিধা হয় না, কিন্তু আমরা একজন তাবেয়ী ইমাম আবু হানিফা رضي الله عنه এর কথা মানলে তাদের এত অসুবিধা। অথচ তার অনুসারীরা তা প্রশংসায় লিখেছে যে পৃথিবীর মুসলিমদের সম্মুখে বিশুদ্ধ সুন্নাহ উপস্থাপন কারাম তাওফীক যে কয়জন বান্দাকে দিয়েছেন তাদের মধ্যে হাফিয যাহাবী رضي الله عنه ও হাফিজ ইবনে হাযার আসকালানী رضي الله عنه -এর পর আল্লামা মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন رضي الله عنه -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।” সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তাদের কাছে হাফেযুল হাদিস ইমাম সুয়ূতি رضي الله عنه সহ অনেক বিজ্ঞ হাদিস বিশারদ যারা ইলমে হাদিসের জন্য নিজের জীবনকে অতিবাহিত করে দিয়েছেন সে মুহাদ্দীসদের কোন নাম তাদের মুখে আসলাে না, আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে ভূয়া তাহকীক কারী আলবানী নাম। অথচ সে ইমাম যাহাবী رضي الله عنه 'র সমালােচনা করেছে, যা নিম্নে আলােচনা করা হবে।
আলবানী অসংখ্য মুতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিসকেও দ্বঈফ ও মওদু বা জাল বলে তার বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছে। সেগুলাে আমি এখানে দ্বিতীয় বার আলােচনা করতে চাই না কারন এই কিতাবের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন হাদিসের আলােচনায় তার এ ভূয়া তাহকীকের জবাবে আলােচনা হবে। | এ আলবানী নামক লােকটির সমালােচনা থেকে পৃথিবীর বিজ্ঞবিজ্ঞ ইমামগনও মুক্ত ছিলেন না। সে তার সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ইমাম তিরমিযীর ব্যাপারে লিখেছেন“ইমাম তিরমিযী رضي الله عنه তার সুনানে কত জাল হাদিসকে যে হাসান, সহিহ বলে ফেলেছেন তার কোন হিসাব নেই। এ বিষয়ের জবাব আমি ইতিপূর্বে আলােচনা করেছি আলবানী নামক এ লােকটির দৃষ্টিতে একটি হাদিস সহিহ নয়, অথচ অন্যান্য মুহাদ্দিস তাকে সহিহ বলায় তিনি হাদিসের বিখ্যাত তিন জন ইমাম হাকিম নিশাপুরী, ইমাম যাহাবী, ইমাম মুনযিরী رضي الله عنه সম্পর্কে বলেছেন,হাকিম বলেছেন, হাদিসটির সনদ সহিহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে একত্মতা পােষন করেছেন। ইমাম মুনযিরী رضي الله عنه তারগীব ও তারহীব' নামক কিতাবে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর এটি হয়েছে,তত্ত্ব বিশ্লেষনের প্রতি উদাসীনতা, তাকলীদের প্রতি আত্মসমর্পণ (অন্ধানুকরণ),নতুবা একজন বিশ্লেষনধর্মী আলেম কিভাবে একে সহিহ বলতে পারেন।"(সিলসিলাতুল আহাদিসুদ-দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদুআহ,৩/৪৭৯) সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আলবানী এমন মহান তিনজন ইমামের কিভাবে সমালােচনা করতে পারলাে? অথচ এ সমস্ত আলেমদের পশমের তুল্য হবে না। তার এ গ্রন্থের আরেক স্থানে হাফেযুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি رضي الله عنه 'র সমালােচনা করতে গিয়ে লিখেন যে
-“কী আশ্চর্য! জালালুদ্দীন সুয়ূতি رضي الله عنه তাঁর জামেউস সগীরে কিভাবে এ হাদিস উল্লেখ করতে একটু লজ্জাবােধ করলেন না! (সিলসিলাতুল আহাদিসুদদ্বঈফা,৩/৪৭৯পৃ.) নাউযুবিল্লাহ! তিনি তার এ পুস্তকে ইমাম সুয়ূতির গ্রহনযােগ্যতা সম্পর্কে বলেন -“জালালুদ্দীন সুয়ূতি رضي الله عنه হাকডাক (কোলাহলপূর্ন, হট্ট গােলপূর্ন) ছেড়ে থাকেন। (আলবানী,সিলসিলাতুল আহাদিসুদদ্বঈফা,8/১৮৯পৃ.) দেখুন ইমাম সুয়ূতি (রহ.)'র মত একজন মুজাদ্দিদের তাহকীক তার কাছে নাকি হট্টগােল করার মত। সে ইমাম তাজুদ্দীন সুবকী رضي الله عنه যিনি ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী رضي الله عنه 'র ছেলে এবং বিজ্ঞ হাদিস বিশারদ,আলেম ছিলেন; তাঁর সমালােচনা করতে গিয়ে লিখেন মাযহাব অনুসরণের গোঁড়ামী তাকে প্ররােচিত করেছে। তাঁর কথা উল্লেখ করে এবং তাঁর গোঁড়ামির কথা আলােচনা করার মধ্যে তেমন উল্লেযােগ্য কোনাে উপকারিতা নেই। (সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ,২৮৫পৃ.) সে আরও অসংখ্য হক্কানী ইমামের সমালােচনা করেছে; তার অসংখ্য কুফুরী আকীদা, এবং তার ভূয়া তাহকীকের জবাবে আমি ইনশা আল্লাহ শীঘ্রই বিস্তারিতভাবে বই প্রকাশ করবাে। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ رضي الله عنه সম্পর্কে আলবানী বলেন
“আল্লাহ তােমার হাত অবশ করে দিক এবং তােমার জিহ্বাকে কর্তন কর, (কাশফুন নিকাব,পৃষ্ঠা-৫২) এ রকম শতশত পূর্বের ও সমসাময়িক মুহাদ্দিসের ব্যাপারে কঠিন মন্তব্য করেছে। শুধু মাত্র আহলে হাদিস ছাড়া এ বিষয়ে আলােচনা করতে গেলে আমার এ পুস্তুকটি আরও দীর্ঘয়িত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আলবানীর ব্যাপারে আমি শেষে একটি কথাই বলবাে যে, সেই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যে রাসূল ﷺ এর রওযা মােবারককে অপসারনের জন্য পুস্তুক লিখেছে ও প্রস্তাব দিয়েছে। সে যে বেঈমান কাফির তাতে কোন সন্দেহ নেই। তার তাহকীক ইসলামী শরীয়তে কোন মূল্য নেই।
Home
»
প্রমানিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন ১ম খন্ড
» পৃথিবীর সবচেয়ে ভূয়া তাহক্বীক কারী শায়খ আলবানীর পরিচয়