বাইয়াত করার পর হুযূর ক্বিবলার নসিহত

প্রথম নসীহতঃ
আপনাদের বায়াত সিল্সিলায়ে কাদেরিয়া আলিয়ায়ে সম্পন্ন হল। এটা শাহেন শাহে বাগদাদ সায়্যিদিনা আব্দুল কাদের জিলানী রদিয়াল্লাহু আন্হু এর সিল্সিলা। এর রূহানী সম্পর্ক রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে। যাঁরা বায়াত হয়ে যান; তাঁদের উভয় জগতের মঙ্গলের জন্য, কল্যাণের জন্য, সিল্সিলায়ে কাদেরিয়ার মাশায়েখ হজরাতের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সবক্ব রয়েছে। যতখানি মুহাব্বত নিয়ে এগুলো আদায় করবেন ততখানি উপকার পাবেন। না পড়লে, অবজ্ঞা করলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এ সমস্ত অযীফা যথানিয়মে আদায় করা উচিত, দশ/পনের মিনিট সময় এতে ব্যয় হয় কিন্তু এতে নিহিত রয়েছে উভয় জাহানের কল্যাণ।

বায়াত হওয়া এবং অকপটে তাওবা করার দরুন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’য়ালা সমস্ত গুনাহ্ মাফ্ করে দেন; কিন্তু অপরের হক্ব (অধিকার) মাফ করেন না। সুতরাং কারো কাছ থেকে কর্জ নিয়ে থাকলে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করে থাকলে, কারো উপর অবিচার করে থাকলে, যতক্ষণ ওই ব্যক্তি ক্ষমা না করবেন, ততক্ষণ আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমা করবেন না। বাকী যত গুনাহ্ আল্লাহ্ তা’য়ালা মাফ করে দেন। দুনিয়ায় রূহ এবং শরীর দু’টো একত্রিত হয়ে রয়েছে, আর ইহ জগতে আমাদের সময়টা স্বল্প। নেকী অর্জনের জন্য পূনরায় এ সুযোগ না ক্বিয়ামতে, না কবরে, না পরকালে মিলবে। কাজেই সচেতন থাকবেন। আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্র রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাজি রাখবেন, নফ্ছে শয়তানের মোকাবেলা করবেন। বাতিল র্ফেকাগুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। আর দ্বীনের খিদ্মত করুন। হুযূর ক্বিব্লার যে সকল দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন- জামেয়া আছে, আছে আন্জুমান এবং আরো অপরাপর যেসব মাদ্রাসা রয়েছে এগুলোর খিদমত করুন, যাতে এগুলো থেকে ওলামায়ে কেরাম বের হন। আর এসব ওলামায়ে কেরাম দ্বীনের খিদ্মত করে যাবেন এবং এই দ্বীনি খিদ্মতই আপনাদের জন্য সদ্ক্বায়ে জারিয়া (অব্যাহত পুণ্যধারা) হয়ে থাকবে।

দ্বিতীয় নসীহতঃ
বাতিলপন্থিরা বর্তমানে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই বাতিলপন্থিদের কাছ থেকে পৃথক থাকুন। এদের কোন দল ১০০ বছর হতে বের হয়েছে, কোন দল ৮০ বছর হতে বা কোন দল ২০ বৎসর হতে। এই সব বাতিল ফের্কার (দল) সংস্রব থেকে দূরে থাকুন। কোরআন শরীফ নাযিল হওয়ার পর আর কোন কিতাব আসমান হতে আসতে পারে না এবং হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর কোন নবীও পৃথিবীতে আসতে পারেন না। আমাদের ‘দ্বীন’ ইসলাম। আর এতে আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ হতে চৌদ্দ শত বছর পূর্বে নিয়ে এসেছেন। এটাই আমাদের- দ্বীন। এই দ্বীন সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম ও আইম্মায়ে মুজ্তাহিদীনের। যত অলী-আল্লাহ্ দুনিয়ায় তাশরিফ এনেছেন সকলের দ্বীন-ইটাই। একে মজবুতভাবে আকড়ে ধরুন। মন্দ লোক, মন্দ সমাজ, এবং মন্দ মাহফিল, সভা হতে পৃথক থাকুন, যাতে ঈমান বিনষ্ট না হয়। যথাসম্ভব জামেয়ার খিদ্মত করুন। ঢাকা- মাদ্রাসার খিদ্মত করুন। এগুলো আহ্লে সুন্নাত ওয়াল্ জামাতের খাঁটি প্রতিষ্ঠান। এখান হতে হক্কানী আলেম-বের হন। আর তাঁরা দ্বীনের খিদ্মত করেন; বাতিল ফের্কার সঙ্গে মোকাবেলা করেন। আপনাদের সঙ্গে উলামা না থাকলে আপনারা কিভাবে মুকাবেলা করবেন? আলেম সম্প্রদায়ের অত্যন্ত প্রয়োজন। এ সব মাদ্রাসার সাথে আন্তরিকতা ভালোবাসা রাখুন, খিদ্মত করুন এবং এগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসুন। আমাদের শত্র“ আমাদের সাথে আছে। নফ্ছে আম্মারা আমাদের দুশমন। শয়তান আমাদের শত্র“। শয়তানকে জুতা মারুন। আল্লাহর নির্দেশকে শিরোধার্য রাখুন।

হুযূর ক্বিব্লার আরো কতিপয় এরশাদ

বায়াতের সময় দরুদ শরীফসহ যেই চার সবক্ব দেওয়া হয়েছে এর অতিরিক্ত সবক্ব বা যিক্র হুযূর ক্বিব্লার ইজাযত (অনুমতি) নিয়ে আদায় করতে হবে। যাদেরকে একবার ইজাযত দেয়া হয়েছে তাদের পুনঃ ইজাযত প্রয়োজন নেই। সকল পীর ভাই-বোনদের জন্য সালাতে হিফ্জিল্ ঈমান ও সালাতে কাশ্ফিল্ আর্স্রা (নামাজ) আদায়ের ইজাযত হুযূর কেবলার পক্ষ হতে দেয়া হয়েছে।

হিফ্জুল্ ঈমান নামাযের নিয়ম

ছয় রাকা’ত আওয়াবীন নামাজের পর দুই রাকা’তের নিয়ত করে প্রতি রাকা’তে একবার সূরা ফাতিহা (আল্হামদু শরীফ) ও সাতবার সূরা ইখলাছ (কুল্হু আল্লাহু আহাদ) শরীফ পড়ে আদায় করতে হবে। নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার একবার সিজদায় গিয়ে পড়বেন-

يَا حَى يَا لَيْوَمُ يَا حَيُ يَا لَيْوَمُ يَا حَيُ يَا قَوْمُ نَبَتَهُ عَلَى الإيمَان

“ইয়া হায়্যূ ইয়া ক্বয়্যূমূ, ইয়া হায়্যূ ইয়া ক্বয়্যূমু, ইয়া হায়্যূ ইয়া ক্বয়্যূমু, সাব্বিত্নী আলাল্ ঈমান।”

نيت : نَوَيَتُ أَنْ أصَلِيّ لِلَّهِ تَعَالى رَكَعَتَهُ صَلوةِ حفظ الإيْمَانِ مُتوجها إلى جيّةٍ الْكَعْبَةِ الشريَهُوَ اللَّهُ الْبَرّ .
নিয়্যতঃ
নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকা’তাই সালাতি হিফ্জিল্ ঈমান, মুতাওয়াজ্জিহান্ ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আক্বর।

কাশফুল্ আসরার নামাযের নিয়ম
এশা‘র ফরজ ও দুই রাকা’ত সুন্নাত আদায়ের পর দুই রাকা’তের নিয়্যত করে প্রতি রাকা’তে ১ বার সূরা ফাতিহা (আল্ হামদু) ও ১১ বার, সূরা ইখলাছ (ক্বুল্ হুয়াল্লাহু আহাদ্) শরীফ পড়ে নামাজ আদায় করতে হবে। রমজান মাসে এ নামাজ বিতির নামায এর পর পড়ার নির্দেশ রয়েছে।

نت : نَوَيَتُ أَنْ أصَلَّى اللهِ تَعَالى رَتُعَنّى سَلوة كشف الأشرار مُتَوَجها إلى جيّةٍ الْكَعْبَةِ النُرِيَهُوَ اللهُ أكبَرُ .
নিয়তঃ
নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকা’তাই সালাতি কাশ্ফিল্ আর্সরার মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবর।

নিন্মলিখিত ইস্তিগফার ও তাস্বীহ্ ফজরের নামাজের পর নিয়মিত সবক্বের পরে প্রত্যেহ আদায় করলে ভাল হয়, যদি ওই সময় সুযোগ পাওয়া না যায় তবে ঐদিনের যে কোন সময় আদায় করতে হবে। তৃতীয় সবক্ব সকালে ও বিকালে ৩ (তিন) বার করে পড়বেন। নিয়মিত পাঠ করলে সকল প্রকার বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  (১) “আস্তাগ্ফিরুল্লাহাল্লাজী লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল্ হাইয়্যূল্ ক্বয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি”: ১০০ বার। (২) “সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহাম্দিহী সুব্হানাল্লাহিল্ আলিয়্যিল্ আযীম, ওয়া বিহাম্দিহি আস্তাগ্ফিরুল্লাহ্”: ১০০ বার। (৩) “বিস্মিল্লাহিল্লাযী লা- ইয়ার্দুরু মা’আ- ইস্মিহী শাইয়্যূন্ ফিল্ র্আদি ওয়ালা ফিস্ সামায়ি ওয়া হুয়াস্ সামীউল্ আলীম” (৩ বার)। (৪) সোমবার ও বৃহস্পতিবার সকালে দরূদে তাজ একবার।

প্রত্যেক ওয়াক্ত ফরজ নামাজের সালাম ফিরিয়ে নিুোক্ত দোয়া ও দরূদ শরীফ একবার করে পড়ার জন্য হুজূর ক্বিবলা নির্দেশ দিয়েছেনঃ
১। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহূ লাহুল্ মূল্কু ওয়া লাহুল্ হাম্দু ইউহ্য়ী ওয়া য়ুমীতু ওয়া হুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়ীন্ ক্বাদীর।

আস্সালাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা
সায়্যাদী ইয়া রসূলাল্লাহ্।
আস্সালাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা
সায়্যাদী ইয়া নাবীয়্যাল্লাহ্।
আস্সালাতু ওয়াস্ সালামু আলাইকা
সায়্যাদী ইয়া হাবীবাল্লাহ্।
ওয়া ‘আলা- আ-লিকা ওয়া আস্হা-বিকা
ইয়া সায়্যাদী ইয়া হাবীবাল্লাহ।

Top