{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, } মূল কিতাবে স্ক্যান ফটো দেওয়া হলো ।
_____ _____ _____ _____ _____ _____ _____ ____
বিষয়ঃ নামাজে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য কোথাও রফয়ে ইয়াদাইন নেই নিষিদ্ধ , বিস্তারিত নিম্মে ।
_____ _____ _____ _____ _____ _____ ____

প্রথমেই বুঝতে হবে বুখারী শরীফ মানেই পুরো ইসলাম নয়। আবার পুরো ইসলাম মনে শুধু মাত্র বুখারী শরীফ নয়। যারা শুধু বুখারী শরীফকে পুরো ইসলাম বলে ধারণা সৃষ্টি করতে চায় এরা ইসলামকে খাটো করার ষড়যন্ত্রে মত্ত। সুতরাং সব বিষয়েই শুধু বুখারী শরীফের কথা বলা, বুখারী শরীফের উদ্ধৃতি চাওয়া মুর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। আবার বুখারী শরীফ বুঝার জন্যও ঘিলু প্রয়োজন। আজকে যারা শুধু বাংলা অনুবাদ পড়ে বুখারী শরীফের উদ্ধৃতি দেন তাদেরকে বুখারী শরীফ বুঝার সে মেধাও মনন আছে? যদি থাকে তাহলে অন্যের করা অনুবাদ কেন পড়েন। সরসরি বুখারী শরীফ পড়েন। অন্যের অনুবাদ দিয়ে উদ্ধৃতি দিতে হচ্ছে মানে তারা আদৌ বুখারী শরীফ বুঝার যোগ্যতা রখেন না। সুতরাং সেরূপ লোকের তো লজ্জা হওয়া চায়। আগে দুটি মনোমানষিকতা বাদ দিতে হবে। একটা হলো পুরো ইসলামকে বুখারী শরীফের সাথে সীমাবদ্ধ করণ। দ্বিতীয়টি হলো যে টুকু বুঝার যোগ্যতা নেই সে ক্ষেত্রেও নিজেকে অতি বুদ্ধা মনে করা।
এর পর সঠিক বুঝার জন্য চেষ্টা করলে ইশআল্লাহ সঠিক মসআলা বুঝে আসবে।
বুখারী শরীফে অনেক কিছুই নেই, তাই বলে অন্য হাদীসের কিতাব থেকে তা আমল করা যাবে না? বুখারীতে বসে প্রস্রাব করার কোন বিধান উল্লেখ নেই, আছে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার বিধান। তাই বলে বুখারীর কথা মেনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার হুকুম দিতে হবে????????????????
নামাযের তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাকি কিছু তাকবীরের মধ্যে রাফে ইয়াদাইন করা না করা উভয়টিই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো রাফে ইয়াদাইন করেছেন, কখনো করেননি। সাহাবা, তাবেয়ীন ও পরবর্তীদের মধ্যে উভয় পদ্ধতিরই অনুসারী ছিলেন। এরই সুত্র ধরে শাফেয়ী, হাম্বলী মাযহাবে রাফে ইয়াদাইনের পদ্ধতি এসেছে। অপরদিকে হানাফী, মালেকী মাযহাবে রাফে ইয়াদাইন না করার মতটি গ্রহণ করা হয়েছে। স্ব স্ব স্থানে উভয় মতই শরীয়ত স্বীকৃত। কেননা দুটোরই উৎস সুন্নাহ। তবে বিভিন্ন আলামতের ভিত্তিতে ইজতিহাদের আলোকে কোনো ফকীহ কোনো একটিকে উত্তম ও অগ্রগণ্য মনে করেন। আর অন্যটিকে মনে করেন বৈধ ও অনুত্তম। আবার অন্য ফকীহ এর বিপরীত মত পোষণ করেন। চার মাজহাবের ক্ষেত্রে এই পার্থক্যটুকু শুধু নফল নিয়ে । অর্থ্যাৎ চার মাজহাবই এ বিষয়ে একমত যে , রফে ইয়াদাইন করা হোক বা না হোক এতে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না । যেহেতু এটা নফল ।
ফিক্বহে হানাফী মতে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া বাকি সময় হাত উঠানো সুন্নাত নয়। এ বক্তব্যটি সহীহ হাদীস এবং সাহাবাদের ফাতওয়া এবং বিজ্ঞ ব্যক্তিদের আমলের সূত্র পরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে, তাই এটি আমাদের নিকট উত্তম। সেই সাথে নামাযে অতিরিক্ত নড়াচড়া উত্তম নয় হিসেবেও আমরা তাহরীমা ছাড়া অন্য হাত উঠানোকে সুন্নাত মনে করি না। নিম্নে তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া অন্য সময়ে হাত উঠানো বর্ণিত নয় মর্মে দলির উপস্থাপন করা হল।
নবী সাঃ এর নামায
১-
ﻋَﻦْ ﻋَﻠْﻘَﻤَﺔَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﺃَﻻَ ﺃُﺻَﻠِّﻰ ﺑِﻜُﻢْ ﺻَﻼَﺓَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺼَﻠَّﻰ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺮْﻓَﻊْ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻻَّ ﻣَﺮَّﺓ ً ) ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 748 - )
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন আমি কি তোমাদের কে হুজুর সাঃ এর নামাজ সম্পর্কে অবগতি দেব না? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়ে দেখালেন এবং নামাজে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করলেন। নামাজে আর কোথাও তিনি রফঈ ইয়াদিন করলেন না। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৮১}
২-
ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀِ ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺍﻓْﺘَﺘَﺢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﺭَﻓَﻊَ ﻳَﺪَﻳْﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺮِﻳﺐٍ ﻣِﻦْ ﺃُﺫُﻧَﻴْﻪِ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳَﻌُﻮﺩُ ) ﺳﻨﻦ ﺍﺑﻰ ﺩﺍﻭﺩ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺬْﻛُﺮِ ﺍﻟﺮَّﻓْﻊَ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟﺮُّﻛُﻮﻉِ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 750- )
হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ]
৩-
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺗﺮﻓﻊ ﺍﻻﻳﺪﻯ ﻓﻰ ﺳﺒﻌﺔ ﻣﻮﺍﻃﻦ، ﺍﻓﺘﺘﺎﺡ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﺍﺳﺘﻘﺒﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﺖ ﻭ ﺍﻟﺼﻔﺎ ﻭﺍﻟﻤﺮﻭﺓ ﻭﺍﻟﻤﻮﻗﻔﻴﻦ ﻭﻋﻨﺪ ﺍﻟﺤﺠﺮ، ) ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 2465 - )
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে, ১-নামাযের শুরুতে। ২-কাবা শরীফের সামনে আসলে। ৩-সাফা পাহাড়ে উঠলে। ৪-মারওয়া পাহাড়ে উঠলে। ৫-আরাফায়। ৬-মুযাদালিফায়। ৭-হাজরে আসওয়াদের সামনে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১২০৭২, সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩}
৪-
ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﺳَﻤُﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﺧَﺮَﺝَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻓَﻘَﺎﻝَ » ﻣَﺎ ﻟِﻰ ﺃَﺭَﺍﻛُﻢْ ﺭَﺍﻓِﻌِﻰ ﺃَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﻛَﺄَﻧَّﻬَﺎ ﺃَﺫْﻧَﺎﺏُ ﺧَﻴْﻞٍ ﺷُﻤْﺲٍ ﺍﺳْﻜُﻨُﻮﺍ ﻓِﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ) ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻷﻣﺮ ﺑﺎﻟﺴﻜﻮﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﻨﻬﻰ ﻋﻦ ﺍﻹﺷﺎﺭﺓ ﺑﺎﻟﻴﺪ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 996- )
হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন ,নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ বেয়াড়া ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৯৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১০০২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৮৭৮, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৫৫২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭৪৮০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০৯৯৮, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-৯১২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-৭৮৬, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৪২৮}
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ীই যেহেতু রফইয়ে ঈয়াদিন স্থিরতা পরিপন্থী তাই আমাদের কর্তব্য হল, নবী সাঃ-এর নির্দেশমতো স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়া।
৫-
ﻗﺎﻝ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﺳﺎﻟﻢ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ : ﺭﺃﻳﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺃﻓﺘﺘﺢ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺭﻓﻊ ﻳﺪﻳﻪ ﺣﺬﻭ ﻣﻨﻜﺒﻴﻪ ﻭﺇﺫﺍ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺮﻛﻊ ﻭﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻳﺮﻓﻊ ﺭﺃﺳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺮﻛﻮﻉ ﻓﻼ ﻳﺮﻓﻊ ﻭﻻ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﺠﺪﺗﻴﻦ ) ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﺤﻤﻴﺪﻯ، ﺃﺣﺎﺩﻳﺚ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 614 - )
অনুবাদ-হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে দেখেখি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার মাঝেও না। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৬১৪}
হযরত উমর রাঃ- এর আমল
আসওয়াদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আমি হযরত ওমর রাঃ-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।’ (তাহাবী: ১/১৬৪)
আল্লামা যায়লায়ী রহঃ এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।
ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, হযরত ওমর রাঃ এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)
হযরত আলী (রা) এর আমল
হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ-এর আমল
মুজাহিদ রহ. বলেন-
আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)
আল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ
(আল-জাওহারুন নাকী)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ-এর আমল
আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।
(জামউল মাসানীদ)
খুলাফায়ে রাশেদীন ও রাফয়ে ইয়াদাইন
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নামাভী রহ. খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে-
খুলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না।
(আছারুস সুনান)
খুলাফায়ে রাশেদীন হলেন রাসূল সাঃ এর পর মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহর সত্যিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ সাঃ তাদের সুন্নাহকেও নিজের সুন্নাহর মতো অনুসরণীয় ঘোষনা করেছেন। কেননা, তাদের সুন্নাহ ছিল নবীর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না তখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম। আর এটি নবী সাঃ-এর সুন্নাহ।
সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা
ইমাম তিরমিযী রহঃ বলেন-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)
আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-
হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
এ উদ্বৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই একাধিক কর্মধারা ছিল। কেউ নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কিছু স্থানেও রাফয়ে ইয়াদাইন করা উত্তম মনে করতেন। কেউ তা মনে করতেন না। তবে এ বিষয়ে তাদের অভিন্ন কর্মনীতি এই ছিল যে, যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা অন্যদের সম্পর্কে আপত্তি করতেন না।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা এবং যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করেন না তাদেরকে আপত্তি ও সমালোচনার নিশানা বানানো প্রকারান্তরে সাহাবীদেরই নিন্দা ও সমালোচনা করা।
বলাবাহুল্য, এ শ্রেণীর মানুষ সাহাবায়ে কেরামের নীতি ও পথ থেকে বিচ্যুত।
মদীনাবাসী ও রাফয়ে ইয়াদাইন
উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন ইমাম মালিক রহঃ জন্মগ্রহন করেন ৯৩ হিজরীতে। ইলমের অন্যতম কেন্দ্রভূমি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর জীবন কেটেছে। সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং হাদীস শরীফের বিশাল ভান্ডার তার সামনে ছিল। তিনি শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর কর্মকে বুনিয়াদী বিষয় বলে মনে করতেন।
তাঁর প্রসিদ্ধ সাগরিত আল্লামা ইবনুল কাসিম রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে তাঁর যে সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন তা এই-
ইমাম মালিক রহ. বলেছেন,নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য তাকবীরের সময়, নামায়ে ঝুঁকার সময় কিংবা সোজা হওয়ার সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করার নিয়ম আমার জানা নাই।
ইবনুল কাসিম রহ. আরো বলেন,
ইমাম মলিক নামাযের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতিকে (দলীলের বিবেচনায়) দুর্বল মনে করতেন।
(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা)
ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ-এর ফতোয়া
ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-
নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না
(জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)
সারকথা
উপরোক্ত দালীলিক আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হচ্ছে তা নিন্মরূপ:
১-নবী সাঃ-এর শিক্ষা ও নির্দেশনা সম্বলিত হাদীস থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম।
২-রাসূলুল্লাহ সাঃ স্ববাস-প্রবাসের সার্বক্ষণিক সহচর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউস রাঃ-এর সূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবী সাঃ নামাযের শুরুতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।
৩-হযরত জাবির রাঃ-এর হাদীস থেকে জানা যায়, স্বয়ং নবী স. নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করতে নিষেধ করেছিলেন।
৪-দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা. এবং চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে যে, তাদের কাছেও রাফয়ে ইয়াদাইন না করাই অধিক শুদ্ধ ও অগ্রগণ্য। আর এ সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীদের দ্বিমত বর্ণিত না হওয়া থেকে প্রমান হয় যে, অধিকাংশ সাহাবী এ নিয়ম অনুসরণ করতেন।
৫-খুলাফায়ে রাশেদীন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোথাও রাফয়ে ইয়াদাইন করেছেন এমন প্রমান নেই।
৬-নবী সঃ-এর পুণ্যযুগের অব্যবহিত পরেই ছিল খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ। তাদের রাফয়ে ইয়াদাইন না করা প্রমান করে যে, তাদের মতেও নামাযে রাফফে ইয়াদাইন না করাই ছিল হুজুর সাঃ-এর সর্বশেষ আমল।
৭-নামাযের ভিতরে রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের যুগেও একাধিক নিয়ম ছিল। তবে দলীল-প্রমানের আলোকে তাদের নিয়মই অগ্রগণ্য যারা রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম মনে করতেন।
৮-সহীহ সনদে এসেছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। তিনি রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গ ও তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন।
অতএব রাফয়ে ইয়াদাইন করণীয় প্রমানের জন্য আবদুল্লাহ ইবনে উপর রাঃ ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সূত্র বর্ণিত রেওয়ায়েত উপস্থাপন করা উচিত নয়।
আল্লাহ সুবানুহু তাআলা আমার কুরআন ও হাদীস মোতাবেক সহী আমল করার
এবং যারা বিভ্রান্তমূলক কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদের বিভ্রান্তির হাতে থেকে তাদের এবং আমাদের বাঁচার তৌফিক দান করুন।
Top