তক্দীর
“ছেরাজুছ্-ছালেকীন” – আব্দুল খালেক এম এ
তক্দীরঃ
হাদীছঃ হজরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) জনৈক আনছারীর শিশু সন্তানের জানাজায় উপস্থিত হইলেন। আমি (আয়েশা) বলিলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)! এই শিশুটির জন্য সুসংবাদ, সে চড়ুই পাখী হইয়া বেহেশ্তে বাস করিবে কেননা সে কোন গোনাহ্ করে নাই এবং তাহা অনুভব করে নাই। তিনি বলিলেন: না আয়েশা (রাঃ) ব্যাপারটা অন্য ধরণের। আল্লাহ কতক লোককে বেহেশ্তের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি তাহা ঐ সময় করিয়াছেন, যখন তাহারা বাপের (বাবার) পৃষ্ঠাদেশে ছিল আর তিনি কতক লোককে দোজখের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি তাহা ঐ সময় করিয়াছেন, যখন তাহারা বাপের পৃষ্ঠাদেশে ছিল। অর্থাৎ রূহের সূচনা আরম্ভ হইবার পূর্বেই তাহার তক্বদীর লিপিবব্ধ করা হইয়াছে।
হাদীছঃ আমার উম্মতের মধ্যে কতক লোক জমিনে ধ্বসিয়া যাইবে এবং তাহাদের আকৃতি পরিবর্তন হইয়া যাইবে। তাহারা তক্বদীর অবিশ্বাসকারী।
হাদীছঃ আল্লাহতায়ালা বান্দার পাঁচটি বস্তু সৃষ্টির পর অবসর গ্রহণ করিয়াছেন – তাহার মৌত, তাহার আমল, তাহার শুইবার স্থান, তাহার চলাফেরার স্থান, তাহার রিজিক। অর্থাৎ এইগুলি তক্বদীর করা হইয়াছে, এইগুলি পরিবর্তন হইবার নয়।
হাদীছঃ আল্লাহ্ সর্বপ্রথম কলমকে সৃষ্টি করিয়া তাহাকে লিখিতে আদেশ দিলেন। কলম জিজ্ঞাসা করিল: আমি কি লিখিব? তিনি বলিলেন: তক্বদীরকে লিখ। অতঃপর যাহা কিছু ঘটিয়াছে ও যাহা কিছু অনন্তকাল পর্যন্ত ঘটিবে কলম সবকিছু লিখিল।
হাদীছঃ রাসুলুল্লাহ্কে মুশ্রেকদের সন্তান সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন: তাহাদের সম্বন্ধে কি করা হইবে বেহেশ্তে না দোজখে তাহা আল্লাহ ভাল জানেন।
কোরআনঃ আল্লাহ সব বস্তুর স্রষ্টা তিনি যাহা এরাদা করেন তাহাই করেন। জমিনের অন্ধকারে এমন একটা দানা (বীচি) নাই এবং শুক্না ভিজা কোন কিছু নাই যাহা লওহে মাহফুজে লেখা হয় নাই।
হাদীছঃ হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছেঃ আমরা একদা তক্বদীর সম্বন্ধে আলোচনা করিতেছিলাম। সেই সময় রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আসিয়া উপস্থিত হইলেন। আলোচনা শুনিয়া তিনি এতই রাগান্বিত হইলেন যে তাঁহার চেহারা মুবারক লাল হইয়া গেল – যেন তাহার গন্ডদেশে আনারের দানা চিবাইয়া দেওয়া হইয়াছে। তিনি বলিলেন: তোমরা কি এই কাজ করিতে অনুমতি পাইয়াছ এবং তোমরা কি এই কাজের জন্য প্রেরিত হইয়াছ? এই ব্যাপারে বাদানুবাদ করিয়া তোমাদের পূর্ববর্তীগণ হালাক হইয়াছে। আমি তোমাদিগকে কছম দিতেছি, আমি সুদৃঢ়ভাবে বলিতেছি যে তোমরা এই বিষয়ে ঝগড়া করিও না।
হাদীছঃ যে ব্যক্তি তক্বদীর সম্বন্ধে কোন কথা বলে কেয়ামতের দিন তাহা জিজ্ঞাসা করা হইবে, আর যে ব্যক্তি এই বিষয়ে কোন কথা বলে নাই তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইবে না।
হাদীছঃ আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণীর লোকের ইসলামের মধ্যে কোন অংশ নাই। মুর্জিয়া – যাহারা বিশ্বাস করে যে, সব কাজ আল্লাহই করেন এবং বান্দার কোন এখতেয়ার নাই। কাদারিয়া – যাহারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস করে।
হাদীছঃ রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলিতেনঃ আল্লাহ সৃষ্টিকে অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টি করিলেন, তারপর তাহাদের উপর নিজের নূর নিক্ষেপ করিলেন। সেই নূর যাহার উপর পড়িল সে হেদায়েত পাইল এবং যে তাহা পাইল না সে গুমরাহ হইল। তাই আমি বলি যে কলম শুকাইয়া গিয়াছে।
হাদীছঃ আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি বস্তুর তক্বদীরকে তাহাদের সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি করিয়াছেন, তখন আল্লাহর আরশ পানির উপর ছিল।
হাদীছঃ প্রত্যেক বস্তু তক্বদীর অনুযায়ী ঘটে, এমন কি অজ্ঞতা ও জ্ঞান (তক্বদীর অনুযায়ী হয়)।
হাদীছঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেহ নাই যাহার আবাসস্থল বেহেশ্তে বা দোজখে লিখা হয় নাই। ছাহাবাগণ আরজ করিলেনঃ “তবে কি আমরা তক্বদীরের উপর নির্ভর করিয়া আমল করা ছাড়িয়া দিব না?” তিনি বলিলেন তোমরা “আমল কর, যে কাজের জন্য যে ব্যক্তি সৃষ্ট তাহার সবটা তার জন্য সহজ হইয়া পড়ে। যে ব্যক্তি নেককার তাহার জন্য নেক আমল সহজ হইয়া পড়ে আর যে ব্যক্তি বদকার তাহার জন্য বদ আমল সহজ হইয়া পড়ে।”
হাদীছঃ এক ব্যক্তি হজরত ওমর (রাঃ)- কে কোরআনের ঐ আয়াত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করিল – যখন তোমাদের প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহাদের সন্তানদিগকে গ্রহণ করিল (সৃষ্টি করিল)। হজরত ওমর (রাঃ) বলিলেন: আমি রাসুলুল্লাহ্কে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি উত্তরে বলিলেন: আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার পর তাঁহার ডান হাত দ্বারা হজরত আদমের পৃষ্ঠদেশকে মোছেহ করলেন বা মুছিলেন এবং তাঁহার আওলাদকে তাহা হইতে বাহির করিলেন এবং বলিলেন: আমি তাহাদিগকে বেহেশতের জন্য পয়দা করিয়াছি এবং তাহারা বেহেশতের কাজ করিবে। তারপর আল্লাহ আদমের পৃষ্ঠদেশকে মুছিলেন এবং তাঁহার আওলাদকে বাহির করিলেন, আর বলিলেন: আমি তাহাদিগকে দোজখের জন্য পয়দা করিয়াছি, তাহারা দোজখের কাজ করিবে। এক ব্যক্তি বলিলঃ ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)! আমল কি? তিনি বলিলেন: আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে বেহেশ্তের জন্য পয়দা করেন তাহাকে বেহেশ্তীর কাজে লিপ্ত করিয়া দেন এবং মৌত পর্যন্ত সে বেহেশ্তীগণের কাজে লাগিয়া থাকে অতঃপর তাহাকে বেহেশ্তে দাখেল করেন। আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে দোজখের জন্য পয়দা করেন তাহাকে দোজখীর কাজে লিপ্ত করিয়া দেন এবং মৌত পর্যন্ত দোজখীদের কাজে লাগিয়া থাকে, অতঃপর তাহাকে দোজখে দাখেল করেন।
হাদীছঃ আদম সন্তানের ক্বাল্ব সমূহ আল্লাহর দুই অংগগুলির (কুদরতের) মধ্যে অবস্থিত, সবগুলি যেন একটি ক্বাল্ব। আল্লাহ যেরূপ ইচ্ছা করেন সেরূপ তাহাকে ঘুরাইয়া দেন। তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলিলেন: “আল্লাহুম্মা ইয়া মুছার্রিফাল্কুলূব্ ছার্রিফ কুলুবানা আলা আয়া’তিকা”।
হাদীছঃ এমন কোন সন্তান নাই যে ইসলামের ফিত্রাতের (প্রকৃতির) উপর জন্মগ্রহণ করে নাই, তাহার পিতামাতা তাহাকে ইহুদী, নাছারা বা মজুছী করে যেরূপ পশু সর্বোতভাবে পশু প্রসব করে, তোমরা কি কখনও তাহাদের মধ্যে কাহাকে কান কাটা দেখিতে পাইয়াছ? তারপর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কোরআনের আয়াত আবৃত্তি করিলেন: “আল্লাহর প্রদত্ত ফিতরাত বা যোগ্যতা যাহার উপর তিনি মানবকে সৃষ্টি করিয়াছেন, আল্লাহর ফিত্রাতকে পরিবর্তন করিতে নাই, ইহাই স্থায়ী দীন।”
হাদীছঃ ছয় শ্রেণীর লোককে আমি লানত করিয়াছি এবং আল্লাহও লানত করিয়াছেন: যাহারা আল্লাহর কিতাব কোরআনে অতিরিক্ত কিছু যোগ করে, যাহারা তক্বদীরকে মিথ্যা বলে, যাহারা ঐ লোককে সম্মান করে যাহাকে আল্লাহ অপমানিত করিয়াছেন, যাহারা ঐ ব্যক্তিকে অপমানিত করে যাহাকে আল্লাহ সম্মানিত করিয়াছেন, যাহারা আল্লাহর হারামকে হালাল জানে, আমার পরিবারের মধ্যে যাহাকে বিবাহ করা হারাম তাহাকে হালাল জানে (তাঁহার বিবিগণকে বিবাহ করা) এবং যাহারা আমার সুন্নতকে তরক করে।
হাদীছঃ আল্লাহ যাহার মৌত যেখানে নির্ধারণ করিয়াছেন তিনি তাহার জন্য সেখানে যাওয়ার কোন একটি উদ্দেশ্য করিয়া দেন।
হাদীছঃ হযরত উম্মে ছাল্মা রাসুলুল্লাহ্কে বলিলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল। বিষ মিশ্রিত বকরীর গোশ্ত যে আপনি খাইয়াছিলেন তাহাতে আপনি প্রতি বৎসর কষ্টভোগ করেন। হযরত বলিলেন: তাহা হইতে কিছুই আমার উপর আসে নাই বরং আদম (আঃ) পয়দা হইবার পূর্বে আল্লাহ যাহা লিখিয়া রাখিয়াছেন (তাহা আমার উপর পতিত হইয়াছে)।
হাদীছঃ আমার উম্মতের তক্বদীর অবিশ্বাসকারীগণের মধ্যে কেহ জমিনে ধ্বসিয়া যাইবে, কাহার ও রূপ পরিবর্তন হইয়া যাইবে এবং কাহারও উপর প্রস্তর বর্ষণ হইবে।
আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা সায়্যেদিনা মুহাম্মাদিম বআদাদি কুল্লি যার্রাতিন আল্ফা আলফাহ মার্রাহ।