পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারেহীরাহ বা চাদরের বর্ননা
উসওয়াতুন হাসানাহ | 
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইয়েমেনের বুটিদার চাদর মুবারক খুবই পছন্দ করতেন। আরবী ভাষায় যাকে “হীরাহ” বলা হয়। [পবিত্র বুখারী শরীফ ও সীরত গ্রন্থসমূহ]

পরিমাপ

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চার হাত দৈর্ঘ্য, আড়াই হাত প্রস্থ, কখনো বা ছয় হাত দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে তিন হাত প্রস্থ চাদর মুবারক পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, জামউল ওসায়েল)


ইজার বা লুঙ্গির বর্ননা


ইজার বা লুঙ্গির

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বদা সিলাইবিহীন (ফাঁড়া) লুঙ্গি মুবারক পরিধান করতেন। এমনকি তা পরিধান করে তিনি বাহনে সওয়ার হতেন এবং যুদ্ধের ময়দানেও যেতেন। (শামায়েলে তিরমিযী, মাদারেজুন নুবুওওয়ত, যাদুল মা’য়াদ, জামউল ওসায়েল ও খাসায়েলে নববী)

পরিমাপ

লুঙ্গি দৈর্ঘ্যে সাড়ে চার হাত এবং প্রস্থে আড়াই হাত ছিল।
টিকা : নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জীবনে কখনো সালোয়ার বা পাজামা পরিধান করেননি। তবে কোন কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সালোয়ার পরিধান করতেন বলে বর্ণনা রয়েছে।

সুন্নতী কোর্তার উপর পরিধেয় জুব্বার বর্ননা
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈদ, জুমুয়া এবং বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে জুব্বা মুবারক পরিধান করতেন। যার জেব এবং আস্তিনের উপর এমন কি নিম্নাংশেও সুক্ষ্ম রেশমের কারুকার্য ছিল। (তিরমিযী, আবূদাউদ শরীফ র সীরত গ্রন্থসমূহ)
টিকা : মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় মুজিব কোর্ট, ওয়েষ্ট কোর্ট, শেরওয়ানী ইত্যাদির প্রচলন ছিল না, এগুলো স্পষ্টতই বিদয়াতের অন্তর্ভূক্ত।

সুন্নতী কোর্তার বর্ননা

‘ক্বমীছ’ শব্দের তাহক্বীক্বী অর্থ ও ‘ক্বমীছ’-এ সঠিক পরিচয়

قميص ক্বমীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা, ক্বমীছ ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় ক্বমীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস্ সাক্ব। অর্থাৎ হাটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত বিলম্বিত। গোল যা কোনা ফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে।
যেমন, ‘আবূ দাউদ শরীফের’ বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘আউনুল মা’বূদ’-এর ‘কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার আলোচনা’ পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء عن الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن ولابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্বমীছ বা কোর্তা সবচেয়ে পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলোঃ কেননা, ক্বমীছ ইযার বা লুঙ্গি ও রিদা বা চাদর অপেক্ষা সতরকে পরিপূর্ণভাবে ঢাকে। অথচ ক্বমীছ অল্প খরচে হয়, শরীরের জন্য হালকা এবং এটা পরিধানে অধিক বিনয়-নম্রতা প্রকাশ পায়।” (অনুরূপ ‘জামউল ওয়াসায়িল’-এ উল্লেখ আছে।)
‘আবূ দাউদ শরীফের’ শরাহ “বযলুল মাজহুদ”-এর ‘কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার’ আলোচনা পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
وانما كان القميص احب من غير من الثياب لانه امكن فى الستر من الرداء والازار الذين يحتاجان كثيرا الى الربط والامساك وغير ذلك.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা অন্যান্য পোশাকের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা চাদর ও লুঙ্গী থেকেও সতর ঢাকতে অধিক উপযোগী। আর চাদর ও লুঙ্গি শরীর ঢাকতে, ছতর বাঁধতে ইত্যাদি কাজে খুবই উপযোগী।”
والظاهر انه سمى قميص لان الادمى ينقمص اى يدخل فيه وينغمس ليسشربه.
অর্থ: “প্রকাশ্য কথা এই যে, ক্বমীছকে এজন্য ক্বমীছ বলা হয় যেহেতু তা মানুষকে ঢেকে নেয় অর্থাৎ মানুষ তার ভিতর ঢুকে পড়ে এবং তার দ্বারা নিজ সতরকে হিফাযত করে।”
মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুন্ নাবীল, আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ” কিতাবে, হযরত আল উস্তাযুল আল্লাম, ফাযীলাতুশ্ শাইখ, মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রীস কান্দুলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’-এর ‘লিবাস’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب، وقيل وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء من الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن او لابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা হলোঃ যা সিলাই করে পরিধান করা হয়, যার দু’টি আস্তিন ও একটি গেরেবান আছে। বলা হয়, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ক্বমীছ সর্বাধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা  শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আবৃতকারী। তাছাড়া তা অল্প খরচে তৈরি হয়। শরীরের পক্ষে হালকা ও আরামদায়ক এবং এর পরিধানকারীর মধ্যে অনেক বিনয় নম্রতার প্রকাশ ঘটে।”
উপরোক্ত সংজ্ঞা, তাহক্বীক্ব, অর্থ ও পরিচিতি থেকে স্পষ্ট হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা বলা হয় যার একটি গেরেবান, দু’টি আস্তিন থাকবে। গেরেবান বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী থাকবে, নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে ও কোনা বন্ধ থাকবে তথা কোনা ফাঁড়া হবে না এবং সূতী কাপড় দ্বারা তৈরী হবে।
আবূ দাঊদ শরীফ”-এর ‘ছলাত’ অধ্যায়ে, নাসাঈ শরীফ-এর ‘ক্বিবলা’ অধ্যায়ে, মিশকাত শরীফ-এর ‘সতর’ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে, [২৩-২৫]
حدثنا القعنبى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن محمد عن موسى بن ابراهيم عن سلمة بن الاكوع قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى رجل اصيد افاصلى فى القميص الواحد قال نعم وازرره ولو بشوكة.
অর্থ: “(হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কা’নাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ হযরত ইবনু মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুসা বিন ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। তাই আমি এক ক্বমীছ বা কোর্তায় নামায পড়তে পারি কিনা? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, পড়তে পারো। তবে গুটলী (দিয়ে গেরেবান) বন্ধ করে নাও, যদিও কাঁটা দ্বারা হয়।”
وفى الجامع الصغير برواية الحاكم عن ابن عباس رضى الله عنهما كان قميصه فوق الكعبين وكان كمه مع الاصابع.
অর্থ: “আল জামিউছ ছগীর’ কিতাবে মুস্তাদারিকে হাকিমের রিওয়ায়েতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বমীছ মুবারক দু’পা মুবারকের গিরার উপর পর্যন্ত ও আস্তিন হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (অনুরূপ শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, মুসতাদারিকে হাকিম, মিরকাত ইত্যাদি)

ক্বমীছ বা কোর্তা অধিকাংশ সময় সাদা রংয়ের হওয়াই খাছ সুন্নত

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা রংয়ের পোশাক পরিধান করতেন এবং উম্মতগণকে পরিধান করতে নির্দেশ মুবারক দিতেন। যেমন  “বুখারী শরীফ” ২য় জিঃ ৮৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابوذر اتيت النبى صلى الله عليه وسلم وعليه ثوب ابيض.
অর্থ: “হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন। আমি একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলাম, তখন উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার শরীর মুবারকে সাদা পোশাক ছিল।” 
“মাজমাউয্ যাওয়াইদ” ৫ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠা ও “আল্ লিবাসু ওয়ায যীনাহ্” ৫৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله خلق الجنة بيضاء واحب شئ الى الله البياض.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত উনাকে সৃষ্টি করেছেন সাদা রংয়ের করে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে সাদা রংয়ের বস্তু।”
“মিরকাত শরীফের” ৪র্থ জিঃ ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابن حجرلان اللون الابيض افضل الالوان ..... وقد لبس عليه الصلاة والسلام غير الابيض كثيرا لبيان جوازه.
অর্থ: “হযরত ইবনে হাজার আসকালীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাদা রং-ই রংসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম রং। আর সাদা রংয়ের পোশাক ছাড়াও অন্য রংয়ের পোশাক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিধান করতেন, জায়িয বা বৈধ প্রমাণ করার জন্য।

ক্বমীছ বা কোর্তা ডান দিক দিয়ে পরিধান করা সুন্নত

“তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ”-এর ‘কিতাবুল্ লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا لبس قميصا بدأ بميامنه.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই ক্বমীছ বা কোর্তা পড়তেন তখনই ডান দিক হতে শুরু করতেন।
Top