আল্লাহ-রাসুলের নাম এক সাথে পাশা পাশি বলা বা লেখাঃ
পবিত্র কোরআন মজিদের ৪০ আয়াতে আল্লাহ্-রাসুলের নাম একসাথে পাশাপাশি লিখাঃ যেমন-
(১)“যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের অনুগত হবে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন”। (সূরা নিসা, আয়াত নং-১৩)
(২)“আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে, তাকে তিনি জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন”।(সূরা নিসা, আয়াত নং-১৪)
(৩)“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর অনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের মধ্যে উলিল আমরেরও”।(নির্দেশ দাতা)(সূরা নিসা, আয়াত নং – ৫৯)
(৪)“যদি তোমরা কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহনে বিবাদে লিপ্ত হও – তাহলে উক্ত বিষয়টির ফয়সালা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে ন্যস্ত করো”।(সূরা নিসা, আয়াত নং-৫৯)
(৫)“যে রাসুলের আনুগত্য করে, সে মূলতঃ আল্লাহরই আনুগত্য করলো”।(সূরা নিসা, আয়াত নং-৮০)
(৬)“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলগণকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলগণের মধ্যে তারতম্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে – আমরা কিছু মানি – কিছু মানিনা এবং আল্লাহ ও রাসুলগণের মধ্যবর্তী তৃতীয় রাস্তা উদ্ভাবন করতে চায়- তাহারাই পাক্কা কাফের”।(সূরা নিসা, আয়াত নং-১৫০)
(৭)“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের বিরূদ্ধে সংগ্রাম করে এবং জমীনে ফাছাদ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে কতল করা অথবা ফাঁসিতে চড়ানো”।(সূরা মায়েদা, আয়াত নং-৩৩)
(৮)“বলুন হে প্রিয় হাবীব! যুদ্ধেপ্রাপ্ত সম্পদের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সঃ)”।(সূরা আন্ফাল, আয়াত নং-১)
(৯)“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়, নিঃসন্দেহে (তাদের জন্য) আল্লাহর শাস্তি অতি কঠোর”।(সূরা আনফাল, আয়াত নং-১৩)
(১০)“হে ফিরিস্তাগণ, তোমরা বদরের যুদ্ধে কোরাইশ কাফিরদের গর্দানের শাহ্নগে এবং তাদের শরীরের জোড়ায় জোড়ায় আঘাত হানো। কেননা, তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হয়ে গেছে”।(সূরা আন্ফাল, আয়াত নং-১৩)
(১১)“হে মোমেনগণ, তোমরা আল্লাহ-রাসুলের ডাকে সাড়া দাও- যখনই রাসুল তোমাদেরকে ডাকেন”।(সূরা আন্ফাল , আয়াত নং-২৪ )
(১২)“হে মোমেনগণ ! জেনে নাও – তোমরা গনিমতের মাল হিসাবে যা কিছু পেয়েছো – তার পঞ্চমাংশ বা ৫ ভাগের এক ভাগের খাস মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল”।(সূরা আন্ফাল , আয়াত নং-৪১ )
(১৩)“আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ হতে সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো মুশকিদের সাথে”।(সূরা তাওবা, আয়াত নং-১ )
(১৪)“আর হজ্বে আকবরের দিনে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ হতে এই ঘোষনা করা হলো যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল(সঃ) মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক চ্ছিন্ন করেছেন”।(সূরা তওবা , আয়াত নং-৩ )
(১৫)“যারা আল্লাহ্, তাঁর রসুল ও মোমেনগণ ব্যতিত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা থেকে বিরত না রয়েছে”-(সেসব মুনাফিকদেরকে এমনিতে ছেড়ে দেয়া হবে না)।(সূরা তওবা , আয়াত নং- ১৬ )
(১৬)“(যুদ্ধ করো তাদের বিরুদ্ধে)- যারা হারাম মনে করেনা ঐ জিনিসকে – যা আল্লাহও তাঁর রাসুল (সঃ) হারাম ঘোষনা করেছেন”।(সূরা তাওবা , আয়াত নং-২৯ )
(১৭)“মুনাফিকদের দান কবুল না হওয়ার একমাত্র কারণ হলো – তারা আল্লাহ্ ও তার রাসুলকে (সঃ) অস্বীকার করছে”।(সূরা তাওবা , আয়াত নং- ৫৪ )
(১৮)“কতই না ভাল হতো – যদি মুনাফিকরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল প্রদত্ত গনিমতের সম্পদে রাযী থাকতো”।(সূরা তাওবা , আয়াত নং- ৫৯ )
(১৯)(আর মুনাফিকরা যা পেয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট থেকে)-“যদি তারা বলতো – আল্লাহ ও তাঁর রাসুল আপন অনুগ্রহে যা দিয়েছেন – ইহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট – তহলে কতই না ভাল হতো”।(সূরা তাওবা , আয়াত নং-৫৯ )
(২০)“আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলকে রাজী রাখাই অত্যাবশ্যক – যদি তারা মোমেন হয়ে থাকে”।(সূরা তাওবা, আয়াত নং-৬২ )
(২১)“তারা কি একথা অবগত নয় যে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের সাথে শত্রুতা করছে – তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন”।(সূরা তাওবা, আয়াত নং-৬৩ )
(২২)“আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুল আপন অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী বনিয়েছে”।(সূরা তাওবা, আয়াত নং-৭৪ )
(২৩)“যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল মোনাফিকদেরকে আহবান করেন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিতে, তখন তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়”।(সূরা- নূর , আয়াত নং-৪৮ )
(২৪)“মুনাফিকরা কি ভয় পায় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তাদের প্রতি অবিচার করবে”।(সূরা নূর , আয়াত নং-৫০ )
(২৫)“প্রকৃত মুমিনতো তারাই – যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে”।(সূরা নূর , আয়াত নং-৬২ )
(২৬)“খন্দকের যুদ্ধে শত্রুসৈন্য দেখে “সাহাবীগণ বলে উঠলেন – ইহারই তো আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল”।(সূরা আহযাব , আয়াত নং-২২ )
(২৭)“সাহাবীগণ আরো বললেন- আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পনের মনোভাব আরো বৃদ্ধি পেল”।(সূরা আহযাব , আয়াত নং-২২ )
(২৮)“হে নবী পত্নীগণ, তোমরা যদি ভোগবিলাস ত্যাগ করে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল এবং আখেরাতকে প্রাধান্য দাও, তাহলে তোমাদের পূতঃ পবিত্রজনদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা বিরাট পুরস্কার তৈরি করে রেখেছেন”।(সূরা আহযাব , আয়াত নং-২৯ )
(২৯)“হে নবীপত্নীগণ, তোমাদের মধ্যে যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত হবে এবং নেক আমল করবে, আমি তাঁকে ডাবল পুরস্কার দেবো”।(সূরা আহযাব , আয়াত নং-৩১ )
(৩০)“কোন বিষয়ে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল নির্দেশ দেওয়ার পর ঐ বিষয়ে কোন ঈমানদার পুরুষ এবং কোন ঈমানদার নারীর ভিন্নমত পোষণ করার অধিকার নেই”।(সূরা আহযাব, আয়াত নং-৩৬ ) (যায়েদ ইবনে হারেছার (রাঃ) সাথে বিবি যয়নব (রাঃ) এর বিবাহের ব্যাপারে তাঁর ভাই আবদুল্লাহর আপত্তি সম্পর্কে এই উক্তি)
(৩১)“আর যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে – তারা স্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে পতিত হয়ে গিয়েছে”।(সূরা আহযাব , আয়াত নং-৩৬ )
(৩২)“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও পরকালে লা’নত করবেন বা অভিশপ্ত করবেন”।(সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৫৭ )
(৩৩)“হে প্রিয় রাসুল, আমি আপনাকে চাক্ষুস স্বাক্ষী (হাযির-নাযির), জান্নাতের সুসংবাদদাতা ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শনের ক্ষমতা দিয়ে প্রেরণ করেছি – যাতে তোমরা (মানুষ) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আন, রাসুলকে সাহায্য করো, তাঁকে উচ্চমানের সম্মান প্রদর্শন করো এবং সকাল – সন্ধ্যায় আল্লাহর সালাত পাঠ করো”।(সূরা আল-ফাত্হ , আয়াত নং-৯ )
(৩৪)“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ্ রাসুলের সামনে আগবাড়িয়ে কিছু করোনা”।(সূরা হুজুরাত, আয়াত নং-১ )
(৩৫)“তোমরা ঈমান আনো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর – আর ব্যয় কর ঐ সম্পদ থেকে – আল্লাহ যার উত্তরাধিকারী করেছেন তোমাদেরকে”।(সূরা হাদীদ , আয়াত নং-৭ )
(৩৬)“তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করছো না? – অথচ রাসুল (সঃ) তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন – যাতে তোমরা তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন”।(সূরা হাদীদ, আয়াত নং-৮ )
(৩৭)“যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুলগণের উপর ঈমান এনেছে, তারাইতো আল্লাহর নিকট সিদ্দিক ও শহীদ বলে গণ্য”।(সূরা হাদীদ, আয়াত নং-১৯ )
(৩৮)“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে – তারা অপদস্ত হয়েছে”।(সূরা মুজদালাহ, আয়াত নং-৫ )
(৩৯)“হে প্রিয় রাসুল, যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী – এমন কাউকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসুলের বিরূদ্ধচারণকারীর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারীরূপে পাবেননা”।(সূরা মুজাদালাহ, আয়াত নং-২২) (তাঁদের উপাধী রাদিয়াল্লাহু আনহু)
(৪০)“শক্তি ও সম্মান তো আল্লাহ-রাসুলের ও মোমিনদের প্রাপ্য – কিন্তু মুনাফিকরা তার ভেদ জানেনা”।(সূরা মুনাফিকুন, আয়াত নং-৮)
নোটঃ ‘আল্লাহ ও রাসুলের নাম একসাথে পাশাপাশি’ – এর প্রমাণস্বরূপ কোরআন মজিদ থেকে মাত্র ৪০টি আয়াত উল্লেখ করা হলো। কোরআনের সর্বত্র আল্লাহ – রাসুলের নাম একসাথে এসেছে। খোদ ঈমানী কালেমায় “আল্লাহ ও মুহাম্মদ” নাম একসাথে পাশাপাশি রয়েছে। এর মধ্যখানে “এবং” অব্যয়টি নেই। এতেই বুঝা যায় – আল্লাহ – রাসুল কত ঘনিষ্ট।
কি সাধ্য আছে মোর – গাইতে নবীর গান
কলম মোর ধন্য হলে – লিখে নবীর শান। – অধম লেখক (অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল রঃ)
Source: Book, Nur-Nabi (sw), Hafiz Principal M A Jalil, (M.M, M.A, B.C.S)
বিশ্বস্ত সূত্রে বর্ণিত আছে যে, যখন আল্লাহ তাআলা আদম আলাহিস্সালামকে সৃষ্টি করিলেন তখন তিনি তাঁহাকে এই প্রার্থনা করিবার জন্য ইলহাম করিলেন, “হে পরওয়ারদিগার! কোন তুমি আমার কুনীয়ত রাখিয়াছ – আবু মুহাম্মদ – মুহাম্মদের পিতা?’ আল্লাহ তাআলা বলিলেন, “আদম! শির উত্তোলন কর।” তিনি শির উত্তোলন করিলেন এবং দেখিলেন – আরশের পর্দার মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নূর মুবারক শোভমান। তিনি প্রার্থনা করিলেন, “হে পরওয়ারদিগার! ইহা কিসের নূর?” ইরশাদ হইল, “এই নূর তোমার আওলাদের জনৈক নবীর নূর। তাঁহার নাম আসমানে আহ্মদ এবং জমিনে মুহাম্মদ। তিনি না হইলে তোমাকে সৃষ্টি করিতাম না এবং আসমান-জমিনও সৃষ্টি করিতাম না।” ‘মওয়াহেব’ গ্রন্থে বর্ণিত হইয়াছে, “আদম আলায়হিস্সালাম দেখিতে পাইলেন- আরশের পায়ায়, বেহেশতের বালাখানা ও কামরার প্রত্যেক স্থানে, হুরগণের কন্ঠদেশে, তুবা নামক বৃক্ষের পত্রে, পর্দাসমূহের প্রান্তে, ফেরেশতাগণের চক্ষুর মধ্যবর্তী স্থানে আল্লাহ্ তাআলার নামের সহিত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নাম অংকিত রহিয়াছে। তাহা এই – লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ।” আদম আলায়হিস্সালাম প্রার্থনা করিলেন, “পরওয়ারদিগার। এই মুহাম্মদ কে?” ইরশাদ হইল,“সে তোমার ঐ সন্তান, যে না হইলে তোমাকে সৃষ্টি করিতাম না।” তথ্যঃ ‘সাইয়েদুল মুরসালীন’লেখক-মাওলানা আবদুল খালেক এম এ (রঃ), আম্বিয়া (আঃ) ও উর্ধ্বতন পুরুষ অধ্যায়।
তাছাড়াও, অসংখ্য হাদিসে দেখা যায়, সাহাবায়েকেরামগন আল্লাহ্ ও রাসুলের নাম পাশাপাশি এভাবে বলিতেন – “আল্লাহ ও তাঁহার রাসুল ভাল জানেন।”