ঈমান
“ছেরাজুছ্-ছালেকীন” – আব্দুল খালেক এম এ
ঈমানঃ
ইসলামের মূল ভিত্তি ঈমান। ঈমান ছাড়া আমল কোন কাজেই আসিবে না। ঈমানের কোন একটি বিষয় অস্বীকার করিলে ইসলাম হইতে খারিজ হইয়া যাইবে। ঈমান ছাড়া যত নেক কাজই করা হউক না কেন কোনই ফল হইবে না। প্রথম ঈমান, তারপর আমল। ঈমান ছাড়া দান-খয়রাত, সৎকার্য ইত্যাদির কোনই মূল্য নাই। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন নাই। এতএব ইসলামই একমাত্র সত্যিকার পন্থা এবং অপরাপর ধর্মাবলম্বী সবই বাতিল ধর্মপন্থী। ঈমানের সংশ্রব দিলের সংগে এবং আমলের সম্বন্ধ দেহের সংগে। ঈমানের বিষয়াদি ভালভাবে জানিয়া রাখা আবশ্যক। ঈমান হারাইয়া বসিলে জাহান্নাম ছাড়া আর কোন গতি নাই। আমলের ত্রুটি হইতে আল্লাহতায়ালা মাফ করিয়া দিতে পারেন, অথবা আজাবও দিতে পারেন।
হাদীছঃ হজরত ফরমাইয়াছেন: ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বস্তুর উপর। আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই এবং হজরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অছাল্লাম তাঁহার বান্দা ও রাসুল ইহার সাক্ষ্য দেওয়া, নামাজ কায়েম করা, জাকাত দেওয়া (ক্ষমতা থাকিলে) ও হজ্ব করা এবং রমজান মাসে রোজা রাখা।
হাদীছঃ হযরত ফরমাইয়াছেন: ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা আছে, তন্মধ্যে সর্বোত্তম, কলেমা ‘লা – ইলাহা – ইল্লালাহ’ পড়া ও বিশ্বাস করা এবং ক্ষুদ্রতম ঈমান, কষ্টদায়ক বস্তুকে (যথা পাথর, কাঁটা ইত্যাদি) পথ হইতে সারাইয়া ফেলা এবং লজ্জা – শরম ঈমানের একটি শাখা।
ঈমানের অনেকগুলি শাখা – প্রশাখা আছে যথা: আল্লাহতায়ালা ও তাহার ছেফাতের গুণাবলীর উপর ঈমান আনা, ফেরেশতাগণ, আছমানি কিতাবসমূহ ও পয়গাম্বারগণের উপর ঈমান আনা, আখেরাতের উপর ইমান আনা, কবর আজাব, বদকারের আজাব, নেক্কারের আরাম, হিসাব নিকাশ, নেক বদীর ওজন করিবার মিজান, নেক্কারের ডান হাতে ও বদকারের বাম হাতে আমলনামা প্রদান, পুলছেরাত, আল্লাহতায়ালার দীদার, বেহেশত ও দোজখ ইত্যাদির উপর ঈমান আনা, আল্লাহর সঙ্গে মুহব্বত রাখা, আল্লাহর দোস্তকে দোস্ত জানা ও আল্লাহর দুষমনকে দুষমন জানা, শয়তানকে দুষমন জানা, হজরতের সঙ্গে মুহব্বত রাখা, তাঁহাকে তাজীম করা, তাঁহার উপর দরূদ শরীফ পড়া, তাঁহার ছুন্নতের পায়রবী করা, আল্লাহ ও রাসুলের মুহব্বতের মোকাবেলায় যাবতীয় বস্তুর মুহব্বতকে তুচ্ছ জ্ঞান করা, একমাত্র আল্লাহর ওয়াস্তে এবাদত করা, সর্বপ্রকার এবাদতের মধ্যে আল্লাহর রেজামন্দির প্রতি লক্ষ্য রাখা, এবাদতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা, রীয়া পরিত্যাগ করা, গোনাহ সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করা, বন্দেগী ও নেককাজে আল্লাহর নৈকট্য আশা পোষণ করা, গোনাহ্ হইতে বিরত থাকা, গোনাহ্ হইতে তওবা করা, আল্লাহর নেয়ামতের শোকর করা, আওলাদ হইলে আকীকা করা, বিবাহ করা, বিবাহে অলীমা করা, কোরআন শরীফ পড়া ও তেলাওয়াতে খুশী হওয়া, মালদার হইলে জাকাত দেওয়া, ফেতরা দেওয়া, কোরবানী করা, হজ্ব করা, ওয়াদা রক্ষা করা, আমানত খেয়ানত না করা, মছীবতে ছবর করা, আল্লাহর উপর ভরসা করা, বয়সে যাহারা বড় তাহাদিগকে তাজীম করা, ছোটদের প্রতি দয়া করা, বিনয়ী হওয়া, অহঙ্কার, আত্মশ্লাঘা (আত্মপ্রশংসা), হাছাদ’ হিংসা দ্বেষ, রাগ, গীবত, বখিলী, শেরেক, বেদয়াত ইত্যাদি পরিত্যাগ করা, কালেমায় তৌহিদ পড়া, এল্মেদীন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেওয়া, আল্লাহর নিকট দোয়া করা, আল্লাহর জিকির করা, জাহেরী ও বাতেনী নাজাছাত (অপবিত্রতা) হইতে নিজেকে পাক করা, ফরজ, সুন্নত ও নফল নামাজ পড়া, ছতর আওরত (লজ্জাস্থান) ঢাকা, ফরজ ও নফল ছদ্কা দেওয়া, দান খায়রাত করা, মেহমানদারী করা, ‘এ’তেকাফ করা, শবে কদর তালাস করা, ফরজ ও নফল রোজা রাখা, দীনের কাজে বাধা হইলে তথা হইতে হিজরত করা, আল্লাহর নামে মান্নত বা নজর করিয়া খাকিলে উহা পূর্ণ করা, পিতামাতার পায়রবী করা, আত্মীয় – স্বজনের হক রক্ষা করা ও তাহাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা, এতিমের মাল না খাওয়া ও এতিম মিছকীনের প্রতি দয়া করা, পড়শীর হক রক্ষা করা, কর্জ আদায় করা, সত্য স্বাক্ষী দেওয়া ও সত্য স্বাক্ষী গোপন না করা, সুবিচার করা, কেহ হাঁচি দিয়া ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলিলে শ্রোতা ‘ইয়ার্হামুকাল্লাহ’ বলা, আওলাদকে শরীয়তের তালীম দেওয়া, ইমামের তাবেদারী করা, দাসদাসী চাকর – চাকরাণীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা, ইসলামের বড় জামাতের পায়রবী করা, মুসলমানের সঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া থাকা, নেক কাজের সাহায্য করা ও তদ্বিষয়ে আদেশ বা উপদেশ দেওয়া, মন্দ কাজে নিষেধ করা, হালাল রুজী তালাশ করা ও খাওয়া, সৎকার্যে টাকাকড়ি খরচ করা, অপব্যয় না করা ইত্যাদি ইমানের শাখা-প্রশাখা। যাহার মধ্যে এই সব বেশিষ্ট্য আছে সে ব্যক্তি কামেল ঈমানদার নতুবা নাকেছ ঈমানদার বলিয়া গণ্য হইবে।
ঈমান সম্বন্ধে কতগুলি হাদীছের মর্ম দেওয়া গেলঃ
হাদীছঃ (কামেল) মুসলমান ঐ ব্যক্তি যাহার জিহ্বা ও হাত হইতে অপর লোক ছালামত থাকে (অর্থাৎ হাত ও জিহবা দ্বারা অপরের অনিষ্ট করে না), আর ত্যাগী ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহ যাহা নিষেধ করিয়াছেন তাহা পরিত্যাগ করে।
হাদীছঃ তোমাদের মধ্যে কেহই প্রকৃত ঈমানদার হইবে না যে পর্যন্ত না আমি (হজরত) তাহার নিকট তাহার বাপ, তাহার সন্তান ও সকল মানুষ অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়পাত্র বলিয়া গণ্য হই, অর্থাৎ প্রকৃত ঈমানদার হইতে হইলে হজরতকে পৃথিবীর সকল মানুষ হইতে অধিকতর ভালবাসিতে হইবে।
কোরআনে আছেঃ নবী করীম (সাঃ) ঈমানদারের নিকট প্রাণের চেয়েও অধিকতর ঘনিষ্ঠ (ভালবাসার পাত্র) এবং তাঁহার বিবিগণ সকল ঈমানদারের মাতা।(-সুরা আহযাব)
হাদীছঃ যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালাকে পরওয়ারদেগার, ইসলামকে মোজ্হাব ও মুহাম্মদ (সাঃ) কে রাসুল বলিয়া গ্রহণ করিয়া সন্তুষ্টি লাভ করিয়াছে সেই ব্যক্তি প্রকৃত ঈমানের স্বাদ পাইয়াছে।
হাদীছঃ যে ব্যক্তি আমাদের মত নামাজ পড়িল, আমাদের কেবলার দিকে রোখ করিল এবং আমাদের জবেহ করা জীব ভক্ষণ করিল সেই ব্যক্তিই মুসলমান, যাহার জন্য আল্লাহ ও তাহার রাসুলের ওয়াদা রহিয়াছে, অতঃপর তোমরা আল্লাহর ওয়াদাকে অমান্য করিও না।
হাদীছঃ হজরত ওমর (রাঃ) বলিয়াছেন: আমরা একদিন হজরত নবী (সাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম, এমন সময় সুফেদ বসন পরিহিত কাল চুল বিশিষ্ট একজন লোক আসিয়া উপস্থিত হইল। তাঁহার মধ্যে ছফরের কোন চিহ্ন ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেহই তাঁহাকে চিনিতে পারে নাই। তিনি রাসুলুল্লাহ্র নিকটে যাইয়া তাঁহার জানুদ্বয় রাসুল্লাহ্র জানুদ্বয়ের নিকট স্থাপন করিলেন এবং হস্তদয় তাঁহার উরুদ্বয়ের উপর রাখিয়া বলিলেন: হে মুহাম্মদ! (সাঃ) আমাকে বলুন ইসলাম কাহাকে বলে? তিনি বলিলেন: তুমি এই কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রছুল, নামাজ কায়েম করিবে, জাকাত দিবে, রমজানের রোজা রাখিবে এবং হজ্ব করিবে, যদি তোমার রাস্তার সম্বল থাকে। তিনি বলিলেন: আপনি সত্য বলিয়াছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন এবং রাসুলুল্লাহ্র উত্তরের সত্যতা স্বীকার করিতে লাগিলেন। আমরা তাহা দেখিয়া আশ্চার্য্যন্বিত হইলেছিলাম। অতপর জিজ্ঞাসা করিলেন: ঈমান কাহাকে বলে? রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) বলিলেন: আল্লাহর উপর, তাঁহার ফেরেশতাগণের উপর, তাঁহার কিতাব সমূহের উপর, তাঁহার রাসুলগণের উপর, কেয়ামতের উপর ঈমান আনা এবং ভালমন্দ তকদীরের উপর ঈমান আনা। তিনি বলিলেনঃ আপনি সত্য বলিয়াছেন। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করিলেন: এহছান কাহাকে বলে? রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) বলিলেন: তুমি আল্লাহর এবাদত এমনভাবে করিবে যেন তুমি তাঁহাকে দেখিতেছ, যদি তাহা না হয়, তবে তুমি ধারণা করিবে যে আল্লাহ তোমাকে দেখিতেছেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন: কেয়ামত কবে হইবে? রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলিলেন: এই সম্বন্ধে প্রশ্নকারী অপেক্ষা আমি বেশি জানিনা। অতপর জিজ্ঞাসা করিলেন: কেয়ামতের আলামত কি? রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলিলেন: যখন দাসী বহু সন্তান প্রসব করিবে, আর দেখিবে যে নগ্নপদ উলঙ্গ দরিদ্র মেষচারক বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করিবে। রাবী বলিলেন: তারপর তিনি চলিয়া গেলেন। তারপর আমি বহুক্ষণ সেখানে অবস্থান করিলাম। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন: ওমর! বলিতে পার ইনি কে? আমি বলিলাম: আল্লাহ ও তাঁহার রাসুল ভাল জানেন। তিনি বলিলেন: তিনি জিবরাইল (আঃ) ছিলেন। তিনি তোমাদিগকে দ্বীন শিক্ষা দিতে আসিয়াছিলেন।
হাদীছঃ এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ্কে জিজ্ঞাসা করিলঃ ঈমান কি? তিনি বলিলেন: যখন তোমার নেক্ কাজ তোমাকে আনন্দ দান করে এবং বদকাজ তোমাকে কষ্ট দেয় তবেই তুমি মুমিন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)! গোণাহ কি? তিনি বলিলেন: যখন কোন বস্তু তোমার অন্তরকে বিদ্ধ করে তখন তাহা ত্যাগ কর।
হাদীছঃ একদা হজরতের নিকট একদল ছাহাবা উপস্থিত ছিলেন, তখন তিনি ফরমাইলেন: তোমরা আমার নিকট এই বিষয়ে বায়য়াত গ্রহণ কর যে, তোমরা শেরেক গোনাহ করিবে না, চুরি করিবে না, জ্বেনা করিবে না, তোমাদের সন্তানকে কাতল করিবে না, কাহারও প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিবে না, যাহা তোমাদের হস্তপদের মধ্যে অর্থাৎ যাহা তোমাদের অন্তর দ্বারা ঘটিয়া থাকে, তোমরা নেক কাজে নাফরমানী করিও না। তোমাদের মধ্যে যদি কেহ এই অঙ্গীকার পূর্ণ করে তবে তাহার ছাওয়াব আল্লাহতায়ালার নিকট পাইবে, আর যদি তন্মধ্যে কেহ গোনাহ করিয়া বসে এবং তজ্জন্য দুনিয়াতে আজাব প্রাপ্ত হয়, তবে তাহাতে তাহার গোনাহ কাফ্ফারা হইয়া যাইবে। আর তন্মধ্যে যে কেহ কোন গোনাহ করিল অথচ দুনিয়াতে আল্লাহ উহাকে গোপন করিলেন তখন উহার বিচার আল্লাহর মরজির উপর, ইচ্ছা করিলে তিনি মাফ করিতে পারেন এবং ইচ্ছা করিলে আজাবও দিতে পারেন।
হাদীছঃ আল্লাহতায়ালা বলেনঃ “আদম সন্তান সময়কে গালি দিয়া আমাকে কষ্ট দিয়া থাকে কেননা আমিই সময়, হুকুম আমারই হাতে, দিবা রাত্রকে আমি পরিবর্তন করি।”
হাদীছঃ হজরত মোয়াজ (রাঃ) বলিয়াছেন: আমি হজরতকে জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)! আমাকে এমন একটি নেক কাজের সংবাদ দিন যাহা আমাকে বেহেশ্তে দাখেল করিবে। হজরত ফরমাইলেন: তুমি এমন একটি অতি বড় বিষয় সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে যাহা অবশ্যই ঐ ব্যক্তির জন্য সহজ যাহার জন্য আল্লাহ তাহা সহজ করিয়া দেন। তাহা এই যে, আল্লাহর বন্দেগী কর এবং তাহার সঙ্গে আর কাহাকেও শরীক করিও না, নামাজ পড়, জাকাত আদায় কর, রমজান মাসে রোজা রাখ এবং হজ্ব কর। অতঃপর হজরত ফরমাইলেন: তোমাদিগকে কি নেক্ কাজের দুয়ার দেখাইয়া দিব না? রোজা তোমাদের জন্য ঢাল (যদ্বারা মানুষ গোনাহ ও দোজখ হইতে রক্ষা পায়), দান খয়রাত গোনাহকে এমনভাবে মিটাইয়া দেয় যেমন পানি আগুনকে নিবাইয়া দেয় এবং গভীর রাত্রে নামাজ পড়া।
হাদীছঃ যে ব্যক্তি মুহব্বত রাখে আল্লাহর ওয়াস্তে, শত্রুতা রাখে আল্লাহর ওয়াস্তে, দান করে আল্লাহর ওয়াস্তে, নিষেধ করে আল্লাহর ওয়াস্তে তাহারই ঈমান কামেল হইল।
হাদীছঃ সর্বোত্তম নেক কাজ আল্লাহর ওয়াস্তে দোস্তি রাখা এবং আল্লাহর ওয়াস্তে দুষমনি রাখা।
হাদীছঃ দুইটি বস্তু বেহেশ্ত বা দোজখ্কে ওয়াজেব করে। একজন লোক হজরতকে জিজ্ঞাসা করিল ঐ দুইটি বস্তু কি কি? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত কাহাকে শরীক করিয়া (মুশরেক হইয়া) মরিয়া যায় সে ব্যক্তি দোজখে যাইবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত কাহাকে শরীক করে না সে ব্যক্তি বেহেশ্তে দাখেল হইবে।
হাদীছঃ যে ব্যক্তি স্বাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল সে ব্যক্তি বেহেশতে দাখেল হইবে।
হাদীছঃ তুমি কি জাননা যে ইসলাম আগের সবকিছু (গোনাহ) – কে ধ্বংস করিয়া দেয়। হজ্ব আগের সব কিছু (গোনাহ) – কে ধ্বংস করিয়া দেয় এবং হিজরত আগের সব কিছু(গোনাহ) – কে ধ্বংস করিয়া দেয়।
হাদীছঃ ইসলাম বৃদ্ধি পাইবে কম হইবে না।
হাদীছঃ ইসলাম বুলন্দ বা প্রভাবশালী থাকিবে এবং পরাভূত হইবে না।
হাদীছঃ যে ব্যক্তি মৌতের সময় এই বিষয় অবগত থাকে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই সে ব্যক্তি বেহেশ্তে দাখেল হইবে।
হাদীছঃ যে ব্যক্তি খাঁটি ঈমানদার হইয়া নেক কাজ করে, তাহার প্রত্যেক নেক কাজের ছওয়াব দশ হইতে সাত শত গুণ দেওয়া হইবে এবং সেই ব্যক্তি যদি বদকাজ করে তাহার একটি বদকাজের জন্য একটি মাত্র বদী লেখা হইবে যতক্ষণ না সে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত সাক্ষাৎ করে অর্থাৎ এন্তেকাল করে।
হাদীছঃ কামেল মুসলমান ঐ ব্যক্তি যাহার জিহবা ও হাত হইতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে, আর কামেল ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যাহার নিকট অপর ঈমানদারের রক্ত ও মাল নিরাপদ থাকে।
হাদীছঃ বেহেশ্তের চাবি ‘লা – ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই) এই কথায় স্বাক্ষ্য দেওয়া।
হাদীছঃ – একদা হজরত আনাছ্ (রাঃ) ও হজরত মোয়াজ (রাঃ) একটি উটের উপর হজরতের পশ্চাতে বসিয়াছিলেন। তিনি মোয়াজ (রাঃ) কে ডাকিলেনঃ তিনি বলিলেন: হুজুর! হাজির আছি। হজরত তিনবার ডাকিলেন এবং তদ্রুপ উত্তর পাইলেন: তৎপর হজরত বলিলেনঃ “যে ব্যক্তি সত্য অন্তঃকরণে স্বাক্ষ্য দেয় যে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসুল” আল্লাহ তাহার প্রতি দোজখ হারাম করিয়া দিবেন। তখন তিনি বলিলেন: “তবে কি লোকদিগকে এই সুসংবাদ দিব না যাহাতে লোকজন সন্তুষ্ট হইয়া যায়?” হযরত ফরমাইলেন: তবে লোকজন ইহার উপর নির্ভর করিয়া বসিবে এবং কাজে শিথিলতা করিবে। হজরত মোয়াজ (রাঃ) গোনাহ্গার হইবার ভয়ে মৌতের সময় উহা প্রকাশ করিয়াছিলেন।
হাদীছঃ হজরত আবুজার্র (রাঃ) বলেনঃ আমি একদিন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট গমন করিয়া দেখিলাম যে তিনি সাদা কাপড় গায়ে দিয়া শয়ন করিয়া রহিয়াছেন, তারপর তিনি জাগিলে আমি তাঁহার নিকট গেলাম। তিনি বলিলেন: যে কোন বান্দা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে এবং তাহার উপর মৌত হয় সে বেহেশ্তে যাইবে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম: যদিও সে জ্বেনা করে এবং সে চুরি করে। হজরত বলিলেন: যদিও সে জ্বেনা করে এবং চুরি করে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করিলাম: যদিও সে জ্বেনা করে এবং চুরি করে? হজরত বলিলেন: যদিও সে জ্বেনা করে এবং চুরি করে। আমি আবার জিজ্ঞাসা করিলাম: যদিও সে জ্বেনা করে এবং চুরি করে? হজরত বলিলেন: যদিও সে জ্বেনা করে এবং চুরি করে, আবুজার্রের নাক ধূলায় ধিূসরিত হওয়া সত্বেও। অর্থাৎ যদিও আবুজার্র তাহা খারাপ মনে করে। হজরত আবুজার্র এই হাদীছ বর্ণনাকালে বলিতেনঃ আবুজার্রের নাক ধূলায় ধূসরিত হওয়া সত্ত্বেও।