দলিল ১ঃ
يَاايُّهَاا لنَّبِىُّ اِنَّا اَرْسَلْنكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا وَّدَاعِيًا اِلَى اللهِ بِاِذْنِه وَسِرَاجًا مُّنِيْرَا
আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে সম্বোধন করে এরশাদ করেছেন, ওহে অদৃশ্য বিষয়াদির সংবাদদাতা! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরন করেছি, হাযির-নাযির, সুসংবাদদাতা হিসাবে এবং ভয় প্রদর্শনকারী করেছি আল্লাহর নির্দেশানুশারে তার দিকে আহবানকারী এবং উজ্জল প্রদীপ হিসেবে
আয়াতের তাফসীরঃ
আয়াতে উল্লেখিত- شاهد (শাহীদ) শব্দের অর্থে সাক্ষীও হতে পারে এবং হাযির-নাযির ও হতে পারে। সাক্ষী অর্থে সাহিদ শব্দটি এজন্য ব্যবহৃত হয়েছে সে ঘটনা স্থলেই উপস্থিত ছিল। হুযূর আলাইহিস সালামকে শাহিদ হয়তো এ জন্যই বলা হয়েছে, তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম )দুনিয়াতে এসে অদৃশ্য জগতের সাক্ষ্য দিচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরুপে। প্রত্যক্ষদর্শী যদি না হন, তাহলে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কে শাক্ষীরুপে প্রেরণের কোন অর্থই হয়না। কেননা সমস্ত নবীগন (আলাইহিস সালাম) তো সাক্ষী ছিলেন। অথবা তাকে এ জন্যই শাহিদ বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন তিনি (সাল্লাল্লাহ আলাইহিস সালাম) সম্তত নবীগনের অনূকুলে প্রত্যক্ষদর্শীরুপে সাক্ষ্য প্রধান করবেন। এ সাক্ষ্য না দেখে প্রদান করা যায় না।
তার শুভ সংবাদদাত, ভীতি প্রদর্শনকারি ও আল্লাহর পথে আহবানকারি হওয়ার বিষয়টিও তথৈবচ। অন্যান্য নবীগনও এ সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেছেন, কিন্তু শুধু শুনেই; আর হুযুর আলাইহিস সালাম করেছেন স্বচক্ষে দেখে। মিরাজ একমাত্র হুযুর সাল্লাল্লাহু আল্লাহিস ওয়াসাল্লাম এর হয়েছিল। উপরোক্ত আয়াতে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আল্লাহিস ওয়াসাল্লাম) কে سِرَاجًامُّنِيْرًا সিরাজাম মুনীরা ও বলা হয়েছে। সিরাজাম মুনিরা সূর্য্যকেই বলা হয় । সূর্য্য যেমন পৃথিবীর সর্বত্র, ঘরে ঘরে বিদ্যমান, তিনি ও (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক জায়গায় বিরাজমান। এ আয়াতের প্রতিটি শব্দ থেকে হুযুর আলাইহিস সাল্লামের হাযির-নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত।
দলিল ২ঃ
وَكَذَالِكَ جَعَلْنَاكُمْاُمَّةًوَّ وَّسَطًا لِّتَكُوْنُوْا شُهْدْاءَ عَلَى النَّاسِ وَيَكُوْنَ الرَّسُوْلُ عَلَيْكُمْ شَهِيْدًا
এবং কথা হলো এই যে আমি (আল্লাহর তা’আলা) তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদী ) সমস্ত উম্মত গনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দান করেছি ,যাতে তোমরা অন্যান্য লোকদের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করতে পার এবং এ রসুল (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম ) তোমাদের জন্য পর্যবেক্ষনকারী ও সাক্ষীরুপে প্রতিভাত হন ।
দলিল ৩ঃ
فَكَيْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هؤُلَاءِ شَهِيْدًا
তখন কি অবস্তা হবে ,যখন আমি (আল্লাহ তা’আল্লা) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করব ,এবং হে মাহবুব ! আপনাকে সে সমস্ত সাক্ষীদের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরুপে আনয়ন করব।
আয়াতের তাফসীরঃ
এ আয়াতসমূহে নিম্নোক্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গত প্রদান করা হয়েছে। কিয়ামতের দিন অন্যান্য নবীগনের উম্মতগন আরজ করবে; আপনার নবীগন আপনার নির্ধারিত বিধি-বিধান আমাদের নিকট পৌছাননি। পক্ষান্তরে নবীগন আরজ করবেন; আমরা অনুশাসনসমূহ পৌছিয়েছি। নবীগন নিজেদের দাবীর সমর্থনে সাক্ষী হিসাবে উম্মতে মুস্তফা আলাইহিস সালামকে পেশ করবেন। উনাদের সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আপত্তি উত্থাপন করে বলা হবেঃ আপনারা সে সব নবীদের যুগে ছিলেন না। আপনারা না দেখে কিভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছেন? তাঁরা তখন বলবেন; আমাদেরকে হুযুর আল্লাইহিস সালাম এ ব্যাপারে বলেছিলেন। তখন হুযুর আল্লাইহিস সালামের সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম ) দুটো বিষয় সাক্ষ্য দিবেন। এক নবীগন (আ:) শরীয়তের বিধানাবলী প্রচার করেছেন দুই, আমার উম্মতগন সাক্ষ্য প্রদানের উপযুক্ত । সুতরাং মুকদ্দমা এখানেই শেষ। সম্মানীত নবীগনের পক্ষে রায় দেওয়া হবে । লক্ষ্যনীয় যে, যদি হুযুর আলিইহিস সালাম পূর্ববর্তী নবীগনের তবলীগ ও স্বীয় উম্মতগনের ভবিষ্যতের অবস্তা সচক্ষে অবলোকন না করতেন, তাহলে তাঁর সাক্ষ্যের ব্যাপারে কোন আপত্তি উত্থাপিত হল না কেন? যেমনিভাবে তাঁর উম্মতের সাক্ষ্যের ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপিত হলো,বোঝা গেল তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সাক্ষ্য হবে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য আর আগেরটা হবে শ্রুত বিষয়ে সাক্ষ্য।এ থেকে তার হাযির -নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হলো। এ আয়াতের তাৎপর্য ইতিপূর্বে ইলমে গায়ব এর আলোচনায় ও বিশ্লেষন করেছি।
দলিল ৪ঃ
لَقَدْجَاَءَ كُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ
নিশ্চয় তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্য থেকে সে রসূলই এসেছেন, যাঁর কাছে তোমাদের কষ্টে নিপতিত হওয়ার ব্যাপারটি বেদনাদায়ক ।
আয়াতের তাফসীর
এ আয়াত থেকে তিন রকমে হুযর আলাইহিস সালাম এর হাযির -নাযির হওয়ার বিষয়টি প্রমানিত হয়। প্রথমত جَاءَكُمْ আয়াতাংশে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের মুসলমানদেরকে সম্মোধন করা হয়েছে, তোমাদের সকলের কাছে হুযুর আলাইহিস সালাম তশরীফ এনেছেন। এতে বোঝা যায় যে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক মুসলমানদের কাছেই আছেন। মুসলমানতো পৃথিবীর সব জায়গায় আছে, তাই হুযুর আলাইহিস সালামও প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান আছে। দ্বিতীয়ত: আয়াতে বলা হয়েছে- مِنْ اَنْفُسِكُمْ (তোমাদের আত্মাসমূহের মধ্যে থেকে অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে তার (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম) আগমন যেন শরীরের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হওয়া বা শরীরের শিরা-উপশিরা, এমনকি প্রতিটি কেশাগ্রেও বিদ্যমান; যা প্রত্যেক কিছুর ব্যাপারে সজাগ ও সংবেদনশীল। তদ্রূপ হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিটি কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত। চোখ সমূহের মধ্যে তিনি বিরাজমান, তবে দৃষ্ঠির মত অদৃশ্য। দিলের মধ্যে এমনভাবেই বিদ্যমান আছেন। যেমনি ভাবে শরীরের মধ্যে প্রান বিচরন করে। তিনি অপূর্ব এক শানে বিকশিত। আমার মধ্যে রয়েছেন অথচ আমার দৃষ্টির আড়ালে।
যদি আয়াতের অর্থ কেবল এটাই হতো-তিনি তোমাদের মধ্যেকার একজন মানুষ, তহলে مِنْكُمْ বলায় যতেষ্ট ছিল। مِنْ اَنْفُسِكُمْ কেন বলা হল?তৃতীয়তঃ আয়াতে আরও বলা হয়েছে عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ অর্থাৎ- যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে, তা তাঁর কাছে পীড়াদায়ক। এতে বোঝা গেল যে,আমাদের সুখ-দুঃখ সম্পকেও হুযুর পুরনুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) প্রতি নিয়ত অবগত। এজন্যই তো আমাদের দুঃখ-কষ্টের ফলশ্রূতিতে তাঁর পবিত্র হৃদয়ে কষ্ট অনুভব হয়। যদি আমাদের খবর ও না থাকে। তবে তার কষ্ট অনুভব হয় কিভাবে? শেষের এ আয়াতাংশটিও আসলে পূর্বোল্লিখিত مِنْ اَنْفُسِكُمْ এরই তাৎপর্য-বিশ্লেষন করে। শরীরে কোন অঙ্গে ব্যথা বেদনা হলে ,তা আকা মওলা (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম )এর কাছে পিড়াদায়ক ঠেকে।
দলিল ৫ঃ
۳۹وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْظَّلَمُوْ اَنْفُسَهُمْ جَاَءُوْاكَ فَأسْتَغْفَرُوْا اللهَ وَاسْتَغْفَرَلَهُمُالرَّسُوْالُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
এবং যখন ওরা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করে, তখন তারা যদি আপনার সমীপে উপস্তিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষামা প্রার্থনা করে আর আপনি ও তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহকে তওবা কবুলকারী, করুণাময় হিসেবে পাবে।
আয়াতের তাফসীরঃ
এ আয়াত থেকে বোঝা গেল যে, পাপীদের মাগফিরাত বা ক্ষমাপ্রাপ্তির একমাত্র পথ হচ্ছে হুযুর আলাইহিস সালামের মহান দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁর শাফাআত প্রার্থনা করা এবং হুযুর মেহেরবানী করে তাদের জন্য শাফাআত করা। এর অর্থ এ নয় যে, আমাদেরকে মাগফিরাতের জন্য পবিত্র মদীনাতে উপস্থিত হতে হবে। কেননা তাহলে আমাদের মত দরিদ্র বিদেশী পাপীদের ক্ষমাপ্রাপ্তির কি উপায় হবে? ধনাঢ্য ব্যক্তিগনও তো জীবনে একবার কি দু বার সে মহান দরবারে যাবার সামর্থ রাখে। অথচ দিনরাত পাপ পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত রয়েছেন। তাই এতে মানুষের সাধ্যাতীত কষ্ঠ হবে। কাজেই আয়াতের মূল বক্তব্য হচ্ছে-তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম) তোমাদের কাছেই বিদ্যমান আছেন। তোমরা বরং তার নিকট থেকে দুরে অবস্থান করছো। তোমরা হাযির হয়ে যাও, তিনি তোমাদের প্রতি সুপ্রসন্ন হবেন। পরম বন্ধু আমার নিজের চেয়েও কাছে বিদ্যমান। এটাই বিস্ময়কর যে আমি তার নিকট থেকে দুরে রয়েছি। এতে বোঝা যায় যে, হুযুর আলাইহিস সালাম সর্বত্র বিদ্যমান।
দলিল ৬ঃ
وَمَا اَرْسَلْنكَ اِلَّارَ حْمَةً لِّلْعَا لَمِيْنَ
আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি।
অন্যত্র বলা হয়েছে-
وَرَحْمَتِىْ وَسِعَتْ كُلَّشَيْئٍ
অর্থাৎ আমার রহমত প্রত্যেক কিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছে।
আয়াতের তাফসীরঃ
বোঝা গেল যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আল্লাইহে ওয়াসাল্লাম) বিশ্ব চরাচরের জন্য রহমত স্বরূপ এবং রহমত সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে আছে। সুতরাং সমগ্র বিশ্বকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন হুযুর আলাইহিস সালাম। স্বরন রাখা দরকার যে, মহা প্রভু আল্লাহর শান হচ্ছে তিনি’ রাব্বুল আলামিন’ (বিশ্বব্রহহ্মন্ডের প্রতিপালক) আর প্রিয় হাবীবের শান হচ্ছে তিনি’ রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (বিশ্বব্রক্ষান্ডের প্রতি রহমত স্বরূপ)। স্পষ্টই প্রতীয়মান হল যে, আল্লাহ যার প্রতিপালক, হুযুর আলাইহিস সালাম হচ্ছেন তার প্রতি রহমত স্বরূপ।
দলিল ৭ঃ
اكَانَ اللهُ لِيُعَذِّ بَهُمْ وَاَنْتَ فِيْهِمْ
হে মাহবুব! এটা আল্লাহর অভিপ্রেত নয় যে আপনি তাদের মধ্যে থাকাকালে আল্লাহ তাদের কে শাস্তি প্রদান করবেন।
আয়াতের তাফসীরঃ
অথাৎ খোদার মর্মন্তুদ শাস্তি তারা পাচ্ছে না- এজন্য যে আপনি তাদের মধ্যে রয়েছেন আর সাধারন ও সর্বব্যাপী আযাব তো কিয়ামত র্পযন্ত কোন জায়গায় হবে না। এ থেকে জানা যায় যে হুযুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জায়গায় বিদ্যমান থাকবেন। এ সম্পর্কে সুপ্রসিদ্ধ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে বলা হয়েছে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যেক পুণ্যত্মা ও প্রত্যেক পাপীর সাথে বিদ্যামান আছেন। এর বিশদ বিবরণ এ অধ্যায়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন-
وَاعْلَمُوْا اَنَّ فِيْكُمْ رَسُوْلُ اللهِ
তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের মধ্যে রসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিরাজমান)।
এখানে সমস্ত সাহাবায়ে কিরামকে সম্বোধন করা হয়েছে অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে বসবাস করতেন সুতরাং স্পষ্টই বোঝা যায় যে হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব জায়গায় ও তাদের কাছে আছেন।
দলিল ৮ঃ
وَكَذَا لِكَ نُرِىَ اِبْرَ اهِيْمَ مَلَكُوْتَ السَّموَاتِ وَالْاَرْضِ
এবং এভাবেই হযরত ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমস্ত আসমান ওযমীনে পরিব্যাপ্ত আমার বাদশাহি অবলোকন করাই ।
আয়াতের তাফসীরঃ
এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামাকে তার চর্মরোগ সমগ্র জগত দেখার বন্দোবস্ত করেছিলেন। হুজুর আলাইহিস সালামের মরতবা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম হতে উর্দ্ধে। অতএব একথা স্বীকার করতেই হবে যে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সমগ্র জগত অবলোকন করেছেন । এ আয়াত এর তাৎপর্য ‘ইলমে গায়েব শীর্ষক আলোচনা পুর্ণ বিশ্লেষন করা হয়েছে।
দলিল ৯ঃ
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ
হে মাহবুব আপনি কি দেখেননি প্রভু হস্তী বাহিনীর কি অবস্থা করছেন?
দলিল ১০ঃ
اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ
হে মাহবুব আপনি কি দেখেননী আপনার প্রতিপালক আদ নামক জাতির সংগে কিরূপ আচরন করেছেন ?
আয়াতের তাফসীরঃ
আদ জাতি ও হস্তীবাহিনীর ঘটনাবলী হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবির্ভাবের পুর্বেই সংঘটিত হয়েছে অথচ বলা হচ্ছে اَلَمْ تَرَ (আপনি কি দেখেননি?) অর্থাৎ আপনি দেখেছেন। এতে কেউ আপত্তি উত্থাপন করে বলতে পারে য়ে, কুরআন করীমে কাফিরদের প্রসঙ্গেও তো বলা হয়েছে اَلَمْ يَرَوْ اكَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِنْ قَرْنٍ তারা কি দেখেনি, আমি তাদের আগে কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি), এখানে লক্ষ্যণীয় যে, কাফিরগণ; তাদের আগেকার কাফিরদের ধ্বংস হতে দেখেনি; তবু আয়াতে বলা হয়েছে-তারা কি দেখেনি? সুতরাং, আপনি কি দেখেননি? এ উক্তি থেকে সচক্ষে দেখার ব্যাপারটি প্রমাণিত হয় না। এর উত্তর হচ্ছে- এখানে আয়াতে আগেকার কাফিরদের ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ, বিধ্বস্ত ঘর-বাড়ী ও ধ্বংসাবশেষ দেখার কথাই বলা হয়েছে। মক্কার কাফিরগণ যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভ্রমন করার সময় সেসব স্থান সমূহের পার্শ্ব দিয়া যাতায়াত করতো, সেজন্য বলা হয়েছে এসব ধ্বংসাবশেষ দেখে কেন শিক্ষাগ্রহন করে না? হুজুর আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দৃশ্যতঃ না পৃথিবী পরিভ্রমন করেছেন না আদ’ জাতিও অন্যান্য বিধ্বস্ত দেশ সমূহ বাহ্যিকভাবে দেখেছেন। তাই তার ক্ষেত্রে স্বীকার করতেই হবে যে, এখানে তাঁর নূরে নবুয়াতের মাধ্যমে দেখার কথাই বলা হয়েছে ।
দলিল ১১ঃ
কুরআন শরীফের অনেক জায়গায় اِذْ উক্ত হয়েছে, যেমন
وَاِذْقَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَئِكَةِ
যখন আপনার প্রতিপালক ফিরিশতাদের উদ্দেশ্যে বললেন
وَاِذْقَالَ مُوْسى لِقَوْمِه
যখন হযরত মুসা আলাইহিস সালাম স্বজাতির উদ্দেশ্যে বললেন
ইত্যাদি।
আয়াতের তাফসীরঃ
তাফসীরকারকগণ এসব জায়গায় اُذْكُرْ (ঐ ঘটনাটি স্মরণ করুন।) শব্দটি উহ্য আছে বলে মত পোষণ করেন। লক্ষণীয় যে স্মরণ করুন- একথা দ্বারা সেসব বিষয় বা ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যা সংঘটিত হতে দেখা গিয়েছে, কিন্তু কালক্রমে সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ নেই । এত্থেকে প্রতীয়মান হয় যে ওই সমস্ত বিগত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম অবলোকন করেছেন। তাফসীরে রূহুল বয়ানে উল্লেখিত আছে যে হযরত আদম আলাইহিস সালামের সমস্ত ঘটনাবলী হুযুর আলাইহিস সালাম প্রত্যক্ষ করেছেন। সামনে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হবে। কেউ আরও একটি আপত্তি উত্থাপন পূর্বক বলতে পারে যে কুরআন কারীমে বনী ইসরাইলকেও তো وَاِذْنَجَّيْنَا كُمْ مِنْ الِ فِرْعَوْنَ (সে সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদেরকে ফিরাউনের বংশধরদের অত্যাচার -উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করেছিলাম) । আয়াতের মধ্যে সম্বোধন করা হয়েছে । হুযুর আলাইহিস সালামের যুগের ইহুদীগণ কি উক্ত আয়াতে বর্ণিত ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় বিদ্যমান ছিল? কিন্তু তাফসীরকারকগণ এখানেও اُذْكُرْ (স্মরণ কর) শব্দ উহ্য আছে বলে স্বীকার করেন। এ উত্তর হবে যে সমস্ত বনী ইসরাইলের ঐতিহাসিক ঘটনাবলী জানা ছিল, তারা ঐতিহাসিক গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করেছিল। সেজন্য তাদের জানা ঘটনাবলী দিকেই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে হুযুর আলাইহিস সালাম না কোন ইতিহাসবেত্তার সান্নিধ্যে ছিলেন না শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত কোন গোত্রের মধ্যে লালিত-পালিত হয়েছেন। এমতাবস্থায় তাঁর পক্ষে একমাত্র নূরে নবুওয়াতের মাধ্যম ছাড়া অন্য কোন ভাবে জ্ঞানার্জনের কোন উপায় ছিল কি?
দলিল ১২ঃ
اَلنَّبِىُّ اَوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْ فُسِهِمْ
নবী মুসলমানদের কাছে তাদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর।
আয়াতের তাফসীরঃ
দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মওলবী কাসেম সাহেব তার রচিত তাহযীরুন নাস গ্রন্থের ১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ এ আয়াতের اَوْلى শব্দের অর্থ হচ্ছে নিকটতর। তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় নবী মুসলমানদের কাছে তাঁদের প্রাণের চেয়েও নিকটতর। আমাদের নিকটতম হচ্ছে আমাদের প্রাণ; এ প্রাণ থেকেও নিকটতর হচ্ছেন নবী আলাইহিস সালাম। বলা বাহুল্য যে, অতি নিকটে অবস্থিত বস্তু দৃষ্টিগোচর হয় না।
অত্যধিক নৈকট্যের কারনে আমরা তাকে (প্রয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চোখে দেখতেপাই না।