রমজান ও তার বৈশিষ্ট্য
▪ এক রেওয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে,
রোজাদারের পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ পাক প্রদান করবেন।
▪ অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে, রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ।
▪ সাহাবী ক্কাআব বিন ঊজাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জুমার খুৎবা দেওয়ার জন্য যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখেন, তখন বলেন আমীন, দ্বিতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখেন, তখন বলেন আমীন, একইভাবে তৃতীয় সিঁড়িতে পা রেখেও বলেন, আমীন।
নামায শেষে সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে তিনবার অস্বাভাবিকভাবে আমীন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখি, তখন জিব্রাইল আলাইহিসসাল্লাম (আ.) ওহী নিয়ে আসেন এবং বলেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সেই ব্যক্তি, যে রমজান মাসের রোজা পেল অথচ গুনাহ মাফ করাতে পারল না, এর জবাবে আমি বললাম আমীন।
দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখার সময় জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সে যার সামনে আমার নাম নেওয়া হলো অথচ দরুদ শরীফ পড়ল না, জবাবে বলেছি আমীন।
তৃতীয় সিঁড়িতে যখন পা রাখলাম, জিব্রাইল (আ.) বললেন, ধ্বংস হয়ে যাক, সে যে বা যারা তার মা-বাবা কিংবা উভয়ের যে কোনো একজনকে পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাত হাসিল করতে পারল না, জবাবে বলেছি আমীন।
[সহীহ বোখারী, সহীহ তিরমিযি, ইমাম হাম্বলী, ইবনে কাসীর, প্রভৃতি]
▪ সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, যে বা যারা পূর্ণ আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের সঙ্গে রমজান মাসে দিনের বেলা যাবতীয় পানাহার থেকে বিরত থাকবে (*) আল্লাহ পাক সে বান্দার পেছনের সব গূনাহ মাফ করে দেবেন।
(*) রোজা রাখবে ও রাতে পরিপূর্ণ ঈমানের সঙ্গে নামায পড়বে, এবাদত-বন্দেগী করবে, লাইলাতুল কদরের রাতে জেগে এবাদত করবে,
সহীহ বোখারী ও মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে এই হাদীসের সত্যতা নির্ভুলভাবে পাওয়া যায়।
⚛ হযরত আবু হুরাইরা (রা.) আরো বর্ণনা করেছেন, রমজান মাসে বেহেশতের দরজা খুলে দিয়ে দোজখের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তালাবদ্ধ করে রাখা হয় শয়তান ও জিনদের। রমজানের প্রতিটি দিন ও রাতে অগণিত বান্দাকে আল্লাহ পাক দোজখের আজাব থেকে মাফ করে দিতে থাকেন।
এই রমজান মাসে কেউ রোজাদারকে এক ফোঁটা দুধ, পানি বা খেজুর অথবা যেকোনো খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ইফতার করালে আল্লাহ পাক তাকে দোজখের আযাব থেকে মাফ করে দেবেন, আল্লাহ পাক তাকে রোজাদারের সমান সওয়াব দেবেন। তবে রোজাদারের সওয়াব থেকে সামান্যও কমানো হবে না।
⚛ আবু হুরাইরা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মাগফেরাতের দোয়া রমজানের শেষ রাতে কবুল হয়েছে, সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলে ওই রাত লাইলাতুল কদরের রাত কিনা জানতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, না, কারণ আল্লাহ পাক তার বান্দার মজুরি রমজান পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দেন।
রমজানে যে সমস্ত আমল বেশি বেশি করা যেতে পারে।
⚛ সূরা ইয়াসিনকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমগ্র কোরআনের সারাংশ বলেছেন এবং তা তেলাওয়াতে মাগফিরাত লাভ হয়ে থাকে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। (মসনূদ ইমান,পৃষ্টা নং ২৮৬, ভলিউম-৭, হাদীস ২০৩২২- এ)
⚛ সূরা মূলক পাঠে যথেষ্ট ফজিলত রয়েছে। আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন রয়েছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে, সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)। (আবূ দাউদ ১৪০০)
⚛ সূরা দোখান রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বান্দার পেছনের গোনাহ মাফ করে দেন।
[জামে তিরমিযির পৃষ্টা নম্বর ৪০৬, খন্ড ০৪ এর ২৮৯৭ নম্বর হাদীস]
⚛ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে কেউ সূরা দোখান যে কোনো রাতে পড়লে ৭০,০০০ ফেরেশতা অনবরত তার মুক্তির জন্য দোয়া করতে থাকেন। একই কিতাবের ৪০৭ নম্বর পাতায় ২৮৯৮ নম্বর হাদীস থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে অর্থাৎ সোবে জুমা বারে এই সূরা তেলাওয়াত করলে আল্লাহ পাক বান্দার গোনাহ মাফ করে দেন।
⚛ পবিত্র তিরমিয শরীফে সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে রোজাদারের দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করে থাকেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান মাস এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত, রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেশি বেশি দোয়া করতেন, নামায পড়তেন, কোরান তেলাওয়াত করতেন।