১। তারাবীহ্ প্রত্যেক বিবেকবান ও বালেগ ইসলামী ভাই ও ইসলামী বোনের জন্য সুন্নতে মুআক্কাদাহ। (দুররুল মুখতারঃ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৩) সেটা বর্জন করা জায়িয নেই।

২। তারাবীর নামায বিশ রাকাআত। সায়্যিদুনা ফারুকে আযম رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ এর শাসনামলে বিশ রাকাতই পড়া হতো। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৯৯, হাদিস নং ৪৬১৭ নং হাদিস)

৩। তারাবীর জামাআত সুন্নতে মুআক্কাদাহ আলাল কেফায়া। সুতরাং যদি মসজিদের সবাই ছেড়ে দেয় তবে সবাই তিরস্কারযোগ্য কাজ করলো। (অর্থাৎ মন্দ কাজ করলো)। আর যদি কয়েকজন লোক জামাআত সহকারে পড়ে, তবে যারা একাকী পড়েছে, তারা জামাআতের ফযীলত থেকে বঞ্চিত হয়েছে। (হেদায়া ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭০)

৪। তারাবীর নামাযের সময় হল এশার ফরয নামায পড়ার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। এশার ফরয আদায় করার পূর্বে পড়ে নিলে বিশুদ্ধ হবে না। (আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১৫)

৫। এশার ফরয ও বিতরের পরও তারাবী পড়া যায়। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৪) যেমন, কখনো ২৯ শে রমযান চাঁদ দেখার সাক্ষী পেতে দেরী হলে এমনই ঘটে থাকে।

৬। মুস্তাহাব হচ্ছে- তারাবীতে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করা। যদি অর্ধ রাতের পরেও পড়ে তবুও মাকরূহ হবে না। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৫)

৭। তারাবীহ ছুটে গেলে তার কাযা নেই। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৪৯৪ পৃষ্ঠা)

৮। উত্তম হচ্ছে- তারাবীর বিশ রাকআত নামায দুই দুই রাকআত করে দশ সালাম সহকারে সম্পন্ন করা। (দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৫)

৯। তারাবীর ২০ রাকাআত নামায এক সালাম সহকারে সম্পন্ন করা যায়, কিন্তু এমন করা মাকরুহ। প্রতি দু’রাকআত পর কাদাহ করা (বসা) ফরয। প্রত্যেক কাদায় (আত্তাহিয়্যাত) এর পর দুরুদ শরীফ ও পড়বে। আর বিজোড় রাকআত অর্থাৎ ১ম, ৩য়, ৫ম, ইত্যাদিতে সানা পড়বে, আর ইমাম আউযু বিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহও পড়বেন। (আদ্দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৬)

১০। যখন দু’ দু’ রাকাআত করে পড়ছে, তখন প্রতি দু’রাকাআতে পৃথক পৃথক নিয়্যত করবে। আর যদি বিশ রাকাআতের একসাথে নিয়্যত করে নেয়, তবেও জায়িয। (আদ্দুররুল মুখতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৪)

১১। বিনা ওযরে তারাবী বসে পড়া মাকরুহ। বরং কোন কোন সম্মানিত ফকীহ رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ  মতে তো নামাযই হবে না। (আদ্দররুল মুখতার, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৯৯)

১২। তারাবী জামাআত সহকারে মসজিদে আদায় করা উত্তম। যদি জামাআত সহকারে ঘরে পড়ে নেয়, তবে জামাআত বর্জনের গুনাহ হবেনা। কিস্তু ওই সাওয়াব পাবেনা, যা মসজিদে পড়লে পেত। (আলমগীরি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১৬) মসজিদে এশার নামায জামাআত সহকারে আদায় করে ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে তারাবী নামাজ আদায় করা যাবে। যদি শারয়ী গ্রহণ যোগ্য ওজর ব্যতীত ঘরে বা অন্য কোথাও এশার ফরজ নামাজের জামাআত আদায় করা হয় তাহলে ওয়াজিব তরক করার গুনাহ্ হবে।

১৩। না বালেগ ইমামের পেছনে শুধু না বালেগরাই তারাবী পড়তে পারবে।

১৪। বালেগের তারাবী (বরং যেকোন নামায, এমনকি নফলও) না বালেগের পেছনে আদায় হবে না।

১৫। তারাবীতে কমপক্ষে একবার কোরআন পাক পড়া ও শুনা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (সংশোধিত ফতোয়ায়ে রযাবীয়্যাহ, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৮)

১৬। যদি শর্তাবলী বিশিষ্ট হাফিয পাওয়া না যায় কিংবা অন্য কোন কারণে খতম করা সম্ভব না হয়, তবে তারাবীতে যেকোন সূরা পড়তে পারবে। তবে সূরা ফীল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত দু’বার পড়ে নিন, এভাবে বিশ রাকাআত স্মরণ রাখা সহজ হবে।

১৭। একবার بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ উচ্চ আওয়াজে পড়া সুন্নাত। প্রত্যেক সুরার শুরুতে আস্তে পড়া মুস্তাহাব। পরবর্তী যুগের ফকীহগণ  رَحْمَةُ اللهِ تَعَالٰى عَلَيْهِمْ  খতমে তারাবীতে তিনবার কুল হুয়াল্লাহু শরীফ পড়া মুস্তাহাব বলেছেন। তাছাড়া উত্তম হচ্ছে, খতম করার তারিখে সর্বশেষ রাকাআতে আলিফ লাম মীম থেকে মুফলিহুন পর্যন্ত পড়া। (বাহারে শরীআত, খন্ড-৪র্থ, পৃ-৩৭)

১৮। যদি কোন কারণে তারাবীর নামায ভঙ্গ হয়ে যায়, তবে যেই পরিমাণ কোরআন মজীদ ওই রাকাআতগুলোতে পড়েছিলো সে পরিমাণ পুনরায় পড়বে, যাতে খতম অসম্পূর্ণ থেকে না যায়। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)

১৯। ইমাম ভুলবশতঃ কোন আয়াত কিংবা সূরা ছেড়ে আগে বেড়ে গেলে, তখন মুস্তাহাব হচ্ছে সেটা প্রথমে পড়ে নেবে, তারপর সামনে বাড়বে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)

২০। পৃথক পৃথক মসজিদে তারাবীহ পড়তে পারে, যদি খতমে কোরআনের ক্ষতি না হয়। উদাহরণ স্বরূপ, তিনটি মসজিদ এমনি যে, সে গুলোতে প্রতিদিন সোয়া পারা পড়া হয়, সুতরাং তিনটিতেই পালা পালা করা যেতে পারে।

২১। দু রাকাআতের পর বসতে ভুলে গেলে। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত তৃতীয় রাকাআতের সাজদা করবে না, বরং বসে যাবে এবং শেষভাগে ‘সাজদাই সাহু’ করবে। আর যদি তৃতীয় রাকাআতের সিজদা করে নেয় তবে চার রাকাআত পূর্ণ করবে, কিন্তু এগুলো দুরাকাআত হিসেবে গণ্য হবে। অবশ্য যদি দু রাকাআত পড়ে কাদাহ করতো, তবে চার রাকাআত বলে গণ্য হতো। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)

২২। তিন রাকাআত পড়ে সালাম ফেরালো। যদি দ্বিতীয় রাকাআতে না বসে থাকে, তবে কিছুই হলো না। এগুলোর পরিবর্তে দু’রাকাআত পুনরায় পড়বে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)

২৩। সালাম ফেরানোর পর কেউ বলছেন দু’রাকাআত হয়েছে। আবার আর কেউ বলছে তিন রাকাআত হয়েছে। এমতাবস্থায় ইমামের যা স্মরণ পড়বে, তাই গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি ইমামও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, তবে তাদের মধ্যে যার কথার উপর নির্ভর করা যায় তার কথা মেনে নেবে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৭)

২৪। যদি মুসল্লীদের সন্দেহ হয়। বিশ রাকাআত হলো? না আঠার রাকাআত। তাহলে দুরাকাআত পৃথক পৃথকভাবে পড়ে নেবেন। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৭)

২৫। উত্তম হচ্ছে- প্রতি দুরাকাআত সমান হওয়া। এমন না হলেও কোন ক্ষতি নেই। অনুরূপভাবে প্রতি দু’রাকাআতে প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাআতের কিরাআত সমান হবে। দ্বিতীয় রাকাআতের কিরাআত প্রথম রাকাআত অপেক্ষা বেশী না হওয়া চাই।

২৬। ইমাম ও মুক্তাদী প্রতি দু রাকাআতের প্রথম রাকাআতে সানা পড়বেন। (ইমাম আউযু বিল্লা এবং বিসমিল্লাহও পড়বেন)

২৭। যদি মুক্তাদীদের উপর ভারী অনুভুত হয় তাহলে তাশাহহুদের পর اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّاٰلِه এর উপর সংক্ষিপ্ত করবেন। (দুররে মুখতার, খন্ড-২য়, পৃ-৪৯৯)

২৮। যদি ২৭ তারিখ (কিংবা এর পূর্বে) কোরআন পাক খতম হয়ে যায়, তবুও রমযানের শেষ দিন পর্যন্ত তারাবীহ পড়তে থাকবেন। এটা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৮)

২৯। প্রতি চার রাকাআতের পর ততটুকু সময় পর্যন্ত বিশ্রামের জন্য বসা মুস্তাহাব, যতক্ষণ সময় চার রাকাআত পড়তে লেগেছে। এ বিরতিকে ‘তারভীহা’ বলে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-১১৫)

৩০। তারভীহ এর মধ্যভাগে ইখতিয়ার রয়েছে- চাই নিশ্চুপ বসে থাকুক, কিংবা যিকর, দুরূদ ও তিলাওয়াত করুক অথবা একাকী নফল পড়ুক । (দুররে মুখতার, খন্ড-২য়, পৃ-৪৯৭) 

৩১। বিশ রাকআত শেষ হয়ে যাওয়ার পর পঞ্চম তারভীহরও (বসা) মুস্তাহাব। যদি লোকজন তা ভারী মনে করেন তবে পঞ্চমবার বসবেন না। (আলমগীরি ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১৫)

৩২। কিছু সংখ্যক মুক্তাদী বসে থাকে। যখন ইমাম রুকুতে যাবার নিকটে হন তখন দাঁড়িয়ে যায়। এটা মুনাফিকদের মতো কাজ। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন, وَاِذَا قَامُوْا اِلٰى الصَّلٰوةِ  قَامُوْا كُسَالٰى

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং (মুনাফিক) যখন নামাযে দণ্ডায়মান হয় তখন দাঁড়ায় অলসভাবে।

(সূরা-নিসা, আয়াত-১৪২, পারা-৫)

ফরযের জামাআতেও যদি ইমাম রুকু থেকে উঠে যায়, তবে সিজদা ইত্যাদিতে তাৎক্ষণিকভাবে শরীক হয়ে যাবেন। অনুরূপভাবে, ইমাম যদি কাদায়ে উলা (প্রথম বা মধ্যবর্তী বৈঠক) এ থাকেন তবুও তাঁর দাঁড়ানোর অপেক্ষা করবেন না, বরং শামিল হয়ে যাবেন। যদি ক্বাদায় শামিল হন, কিন্তু ইমাম দাঁড়িয়ে গেলেন, তাহলে ‘আত্তাহিয়্যাত’ পূর্ণ না করে দাঁড়াবেন না। (বাহারে শরীআত, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬ / গুনীয়াতুল মুজাআল্লা পৃষ্ঠা ৪১০)

৩৩। রমাযান শরীফে বিতর জামাআত সহকারে পড়া উত্তম। কিন্তু যে ব্যক্তি এশার ফরয জামা’আত ছাড়া পড়ে সে যেন বিতরও একাকী পড়ে।
৩৪। এক ইমামের পেছনে এশার ফরয, দ্বিতীয় ইমামের পেছনে তারাবীহ এবং তৃতীয় ইমামের পেছনে বিতর পড়লে ক্ষতি নেই।

৩৫। হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম  رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ  ফরয ও বিতরের জামাআত পড়াতেন আর হযরত উবাই ইবনে কাব  رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ তারাবীহ পড়াতেন। (আলমগীরি ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১১৬)

Top