প্রশ্নঃ
মহিলারা কি ইতিকাফ করতে পারবে??আর যদি পারে তাহলে শরয়ী বিধান কি?
উত্তরঃ
ইতিকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়। নারীরাও কিন্তু ইতিকাফ করতে পারেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম )-এর সহধর্মিণীরা ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত নবী করিম ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ওফাত পর্যন্ত রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ করতেন। তার ওফাতের পর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন।
-সহিহ বোখারি: ২০২৬ ও সহিহ মুসলিম: ১১৭২
মাসয়ালাঃ নারীরাও ঘরে কোনো স্থান নির্দিষ্ট করে ইতিকাফ করতে পারে। তবে তার জন্য স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হায়েজ ও নেফাস থেকে পাক থাকতে হবে। তারা ঘরে নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। এটা মহিলাদের জন্য মসজিদের মতো।
অর্থাৎ পানাহার, নিদ্রা সে জায়গায়ই করতে হবে। যদি শারীরিক বা শরয়ি কোনো প্রয়োজন না হয় তবে অত্র স্থান ত্যাগ করলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। যদি ঘরে শুরু থেকেই নামাজের স্থান নির্দিষ্ট থাকে তাহলে সেখানেই ইতিকাফ করবে। সেখান থেকে সরে অন্যত্র ইতিকাফে বসা জায়েয নেই। যদি আগে থেকে নামাজের জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারিত না থাকে তবে ইতিকাফের সময় স্থান নির্ধারিত করে নেবে এবং সেখানে ইতিকাফ করবে। ঘর ছেড়ে মসজিদে ইতিকাফ করা মহিলাদের জন্য মাকরুহ।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১১)।
মাসয়ালা: মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল, মসজিদ নয়। কিন্তু মহিলারা সওয়াবের ক্ষেত্রে ঘরে নামাজ পড়ে ও ঘরে ইতিকাফ করে পুরুষদের মসজিদে নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ অর্থে মহিলাদের ঘরকে মসজিদের সাদৃশ্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেন মহিলারা বেশি সওয়াব হাসিল করার আশায় মসজিদে আসার জন্য উদগ্রিব না হয়। মসজিদে গিয়ে শেষ ১০ দিন ইতিকফ সুন্নতে মোয়াক্কাদার হুকুম পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা চাই ঘরে ইতিকাফ করুক চাই মসজিদে পুরুষদের দায়িত্ব আদায় হবে না। তবে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি মসজিদে ইতিকাফ করে তাহলে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে।
- বোখারি, হাদিস: ২০৩৩, উমদাতুল কারী: ১১/১৪৮, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/১৪৫
মাসয়ালা: ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে।
-আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫০২
মাসয়ালা: মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা মসজিদের মতো গণ্য হবে। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে।
-আলমগীরি: ১/২১১, বাদায়ে: ২/২৮২
মাসয়ালা: মানবিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা। সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। অজুর জন্য বাইরে যেতে পারবেন।
মহিলারা খুব কমই ইতিকাফ করেন। অথচ ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য ইতেকাফ খুব সহজও। কারণ তারা ঘরেই ইতিকাফ করবেন। ফলে সংসারের খোঁজখবরও নিতে পারবেন। সংসার ঠিক রেখে তাদের ইতিকাফও হয়ে যাবে। সুতরাং এমন সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত নয়। নারীদের মধ্যে ইতিকাফের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। পুরুষদের উচিত নারীদের ইতিকাফের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া। তাহলে পুরুষরাও সওয়াব পাবেন।
প্রশ্নঃ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইতিকাফ কেমন ছিল?
উত্তরঃ
১. আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত-পূর্ব পর্যন্ত রমজানের শেষ দশ দিনে এতেকাফ পালন করেছেন।
[বোখারি : ২০২৬]
২. এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল পাক-পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন।
৩. এতেকাফকালীন রাসুল কোন অসুস্থ ব্যক্তির দর্শনে যেতেন না, অংশ নিতেন না কোন জানাজায়, বর্জন করতেন স্ত্রী সংস্পর্শ।
আয়েশা রা. বলেন : এতেকাফকারীর সুন্নত হচ্ছে অসুস্থের দর্শনে গমন না করা, জানাজায় অংশ না নেয়া, নারী সংসর্গ ও সহবাস বর্জন করা এবং অত্যবশ্যকীয় কোন প্রয়োজন ব্যতীত এতেকাফ হতে বের না হওয়া।
[আবু দাউদ : ২৪৭৩।]
৪. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যবশ্যকীয় কোন কারণ ব্যতীত এতেকাফগাহ হতে বের হতেন না। আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় কোন কারণ ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না।
[বোখারি : ২০২৯।]
৫. এতেকাফরত অবস্থায় রাসুলের স্ত্রী-গণ তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং কথোপকথন করতেন তার সাথে। সাফিয়া রা. বলেন : রাসুল এতেকাফরত অবস্থায় আমি তার সাথে সাক্ষাতের জন্য এলাম, তার সাথে আলাপ করে অত:পর চলে এলাম...।
[বোখারি : ৩০৩৯]
প্রমাণ করে, এতেকাফরত অবস্থাতেও রাসুল স্ত্রী-গণের সংবাদ নিয়েছেন। এতেকাফের ফলে যে মূর্খরা তাদের পরিবার-পরিজনের কথা ভুলে যায়, তারা এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।