তারাবীহ তাহাজ্জুদ ভিন্ন নামাযঃ এক নামায বলা তারাবীহ অস্বিকার করার নিফাকী পদ্ধতি, বিদআতী মতবাদ ▆
কোন কিছুকে অস্বিকার করার পদ্ধতি দু’টি। যথা-
১/
পরিস্কার শব্দে অস্বিকার করা।
২/
মুনাফিকীর সাথে অস্বিকার করা। অর্থাৎ মুখে স্বীকারের ভান ধরা কিন্তু মূলত অস্বিকার করা।
যেমন এক ব্যক্তি ইশার নামাযকে অস্বিকার করে।
আরেকজন বলে আমি ইশার নামাযকে মানি। তবে ইশার নামায হল, তিন রাকাত। কারণ ইশা ও মাগরিব নামায একই। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে এর নাম মাগরিব হয়, আর দেড় ঘন্টা পরে পড়লে এর নাম ইশা। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে যেমন রাকাত সংখ্যা তিন, দেড় ঘন্টা পড়ে পড়লেও রাকাত সংখ্যা তিনই।
লক্ষ্য করুন।
প্রথম ব্যক্তি সরাসরি ইশার নামাযকে অস্বিকার করেছে। তার মাঝে কোন নিফাকী নেই। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামাযকে অস্বিকার করছে। সেই সাথে মুনাফিকীও করছে। সে বলছে ইশার নামাযকে মানে। আবার বলছে ইশা আর মাগরিব নামায একই। অর্থাৎ এক নামাযের দুই নাম হল মাগরিব ও ইশা। তাহলে সে মূলত মাগরিব নামাযকেই মানে। ইশাকে মানেই না। কিন্তু মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য বলছে সে ইশাকে মানে। আর মাগরিব এশা এক নামায।
তাহলে প্রথম ব্যক্তিটি অস্বিকারকারী পরিস্কার। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামায অস্বিকারীকারী সেই সাথে মুনাফিক।
কারণ, ইশার নামায কিছুতেই মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা স্বতন্ত্র একটি নামায। যার রাকাত সংখ্যা চার।
বাহ্যিকভাবে কিন্তু উক্ত মুনাফিক আর আমরা যারা ইশার নামায মান্য করি তাদের মাঝে মতভেদ মনে হবে রাকাত সংখ্যা নিয়ে। মানুষ বুঝবে উভয় ব্যক্তিই ইশাকে মানে। মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে। একজন বলছে রাকাত চারটি।আরেকজন বলছে রাকাত হল তিনটি। কিন্তু উভয়ই ইশার নামাযকে স্বীকার করে।
কিন্তু আসল বিষয় কিন্তু তা নয়। বরং উভয়ের মাঝে মতভেদটা হল ইশার নামায আছে কি না? তা নিয়ে। যে বলছে ইশার নামায তিন রাকাত সে মূলত ইশার নামাযকে মানেই না। বরং শুধু মাগরিব নামায মানে। আর যে ইশার নামাযকে চার রাকাত বলে, সে ইশার নামাযকে মানে। স্বতন্ত্র নামায মানে। যা মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা নামায।
তাহলে কি বুঝা গেল? বাহ্যিকভাবে তিন আর চার রাকাতের মতভেদ বুঝা গেলেও আসলে কি উভয়ের মাঝে রাকাতের মতভেদ নাকি ইশার নামাযের অস্তিত্ব আছে কি না? তা নিয়ে মতভেদ?
নিশ্চয় ইশার নামাযের অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ। কিন্তু মুনাফিক লোকটি তার ইশার নামায অস্বিকার করার বিষয়টির উপর রাকাত সংখ্যার ধুম্রজাল দিয়ে পর্দা ঢেলে দিল। আর মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে সে ইশার নামায মানে। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। অথচ সে ইশার নামাযই মানে না।
আর দু’টি উদাহরণ লক্ষ্য করুন!
ক) শিয়াদের যখন আমরা বলি তোমরা কুরআনকে অবিকৃত মান? তারা তখন “তাকিয়া” করে বলে মানি। কিন্তু তাদের এ মানার আড়ালে তারা মনে মনে রাখে হযরত ইমাম মাহদী আঃ যে কুরআন নিয়ে গর্তে আছে সেই কুরআন অবিকৃত। আমাদের কাছে যে কুরআন আছে তা বিকৃত।
তাহলে মুখে প্রকাশ করছে আমাদের কাছে থাকা কুরআনকে অবিকৃত মানে, আর মনে রাখছে ইমাম মাহদীর কাছে থাকা কুরআন অবিকৃত। তাহলে সে শব্দের মারপ্যাঁচে মিথ্যা ও প্রতারণা করছে। মূলত তারা আমাদের কাছে থাকা কুরআনকে অবিকৃত মানে না।
খ) কাদিয়ানীদের যদি বলেন, কালিমা বল, তখন তারা “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বলবে আমাদের মত। কিন্তু সে তার মনে মনে মুহাম্মদ বলে উদ্দেশ্য নেয় মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে। আমাদের নবীকে নয়। কিন্তু ভাবে প্রকাশ করে আমাদের নবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহকেই মানছে। কিন্তু আসলে মানে না, বরং মানে কাদিয়ানীকে। কিন্তু মুখে বুঝায় মানে।
তো এভাবে শব্দের মারপ্যাঁচে মনের কথা লুকিয়ে অস্বিকার করা একটি মুনাফিকী পদ্ধতি। যা কাদিয়ানী এবং শিয়াদের প্রতীক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের লামাযহাবী/গায়রে মুকাল্লিদ/শব্দধারী মুসলিম জামাত বা কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের লোকেরা রমজানের তারাবীহের ক্ষেত্রে কাদিয়ানী ও শিয়াদের মতই মুনাফিকী আচরণ করে থাকে সাধারণ মুসলমানদের সাথে।
তাদের লিখিত বইয়ে দেখবেন তারাবীহের আলোচনা আছে। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করেন, তারাবীহ নামাযকে মানে কি না? বলবে মানে।
যদি জিজ্ঞাসা করেন রাকাত সংখ্যা কত? তখন বলবে আট। যদি বলেন কিভাবে? তখন বলবে তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামায।
এগার মাস যে নামায ছিল তাহাজ্জুদ সেটিই রমজানে এসে হয়ে যায় তারাবীহ।
তাদের বইয়ের দু’টি উদ্ধৃতি দেই। বাকি ওদের লিখিত সকল তারাবীহ বিষয়ক বইয়েই তা পাবেন।
১/ শায়েখ আসাদুল্লাহ গালিব তার রচিত নামায বইয়ে লিখেছে “রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবী ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। রমযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে তারাবীহ আর রমযান অন্যান্য সময়ে শেষ রাতে পড়লে তাকে তাহাজ্জুদ বলে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ ছালাতুর রাসূল (সাঃ), ১৭১।]
২/ গায়রে মুকাল্লিদ তার রচিত বইয়ে লিখেছে “তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ একই নামায। এর সময় ইশার পর হতে ফজরের শেষ পূর্ব পর্যন্ত। এটা রমজান মাসে তারাবী ও অন্য মাসে তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। এর নিয়ম ও দুআ একই।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ নামায ও মাসনূন দুআ শিক্ষা-১০৪।]
লামাযহাবী পথহারাদের লেখা যেকোন তারাবীহ সংক্রান্ত বই খুলে দেখুন একই বক্তব্য রয়েছে তাতে।
আমাদের দেয়া আগের ইশা ও মাগরিবের উদাহরণটা একটু মিলিয়ে দেখুন। এরা কিভাবে মুনাফিকী আচরণ করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষতো মনে করবে লামাযহাবী-পথহার
ারা বুঝি তারাবীহ মানে। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। আসলে কিন্তু তা নয়। তারা তারাবীহকে মানেই না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। যেহেতু তাহাজ্জুদের রাকাত আট তাই ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে তারাবীহর রাকাতও আট বলে থাকে। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে, কিন্তু মুখে নাম নেয় তারাবীহর। আর ভাব নেয় মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মূলত তারাও তারাবীহ মানে। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন।
যেমন ইতোপর্বে দেখেছেন যে ব্যক্তি বলছে ইশার নামায তিন রাকাত বলে, সে কিন্তু ইশাকে মানেই না। কিন্তু মুখে বলছে মানে। তিন রাকাত এজন্য বলছে যেহেতু ইশা মাগরিব এক নামায।
একই হালাত লামাযহাবী পথহারাদের। তারাও তারাবীহ মানে না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দেবার জন্য রাকাত সংখ্যার মতভেদকে সামনে নিয়ে আসে। ভাব ধরে তারাবীহ মানে। আসলে এটি মুনাফিকী ছাড়া আর কিছু নয়।
তারাবীহ অস্বিকার করলে সরাসরি অস্বিকার করুক। এভাবে মুনাফিকী আচরণ করে অস্বিকার করা কেন?
তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নমায দাবিটি কতটুকু দলীল সম্মতঃ
তারাবীহ তাহাজ্জুদকে এক নামায বলা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ সম্পূর্ণই ভিন্ন দু’টি নামায। আমরা পরিস্কার কিছু পার্থক্য তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ বিষয়ে নিম্নে উপস্থাপন করছিঃ
১-দু’টির শরয়ী উৎস আলাদা!
তাহাজ্জুদ নামায কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।
যথা পবিত্র কুরআনের আয়াত-
ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰٰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ [ ١٧ : ٧٩ ]
অর্থাৎ : রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
[সূত্রঃ ক্বুরআ'নুল কারিম, সুরা আল ইসরা: আয়াত ৭৯।]
আর তারাবীহ নামায প্রিয় রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-
নূরে মুজাস্সাম প্রিয় রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) ইরশাদ করেছেন-
ﺷَﻬْﺮٌ ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺻِﻴَﺎﻣَﻪُ، ﻭَﺳَﻨَﻨْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﻗِﻴَﺎﻣَﻪُ ،
অর্থাৎ : এটি এমন মাস যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এর রাতের নামাযকে সুন্নত করেছি।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২২১০।]
সুতরাং দু’টি এক নামায হয় কি করে?
২-মাশরূ তথা শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত হবার স্থানও আলাদা!
তাহাজ্জুদ মক্কায় থাকা অবস্থায় শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত সাব্যস্ত হয়, আর তারাবীহ মাশরূ হয় মদীনায়।
তাহলে এক কিভাবে হল?
৩-সময়কালও আলাদা!
তাহাজ্জুদ মাশরূ হয় হিজরতের আগে। আর তারাবী হয় হিজরতের পর।
৪-মাশরূ হবার পদ্ধতিও ছিল ভিন্ন!
তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। অনেক দিন পর্যন্ত তা ফরজই ছিল। তারপর তার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়।
ﻗُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ، ﺣَﺪِّﺛِﻴﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﺧُﻠُﻖِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : « ﺃَﻟَﺴْﺖَ ﺗَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ؟ ﻓَﺈِﻥَّ ﺧُﻠُﻖَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ » ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ﺣَﺪِّﺛِﻴﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ” ﺃَﻟَﺴْﺖَ ﺗَﻘْﺮَﺃُ : ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺰَّﻣِّﻞُ؟ “ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ﺑَﻠَﻰ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : « ﻓَﺈِﻥَّ ﺃَﻭَّﻝَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺴُّﻮﺭَﺓِ ﻧَﺰَﻟَﺖْ، ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻧْﺘَﻔَﺨَﺖْ ﺃَﻗْﺪَﺍﻣُﻬُﻢْ، ﻭَﺣُﺒِﺲَ ﺧَﺎﺗِﻤَﺘُﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﺛْﻨَﻲْ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻝَ ﺁﺧِﺮُﻫَﺎ، ﻓَﺼَﺎﺭَ ﻗِﻴَﺎﻡُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺗَﻄَﻮُّﻋًﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﻓَﺮِﻳﻀَﺔٍ
অর্থাৎ : হযরত সাদ বিন হিশাম রহঃ বলেন, আমি বললাম! হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র বিষয়ে কিছু বলুন। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র কুরআনে যা আছে তাই ছিল। তারপর সাদ বলেন, আপনি আমাকে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর রাতের নামাযের ব্যাপারে বলুন। তখন আম্মা আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি “ইয়া আইয়্যুহাল মুজ্জাম্মিল” পড়ো না? হযরত সাদ বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ আমি পড়িতো। আম্মা আয়শা রাঃ বলেন, এ সূরার যখন প্রথমাংশ নাজিল হয়, [যাতে তাহাজ্জুদ ফরজ হয়] তখন সাহাবায়ে কেরাম এত দীর্ঘ তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, তাদের পা ফুলে যেতো। আর এ সূরার শেষাংশ বারমাস পর্যন্ত আসমানে আটকে থাকে। বার মাস পর যখন এর শেষাংশ নাজিল হয়, তখন যে তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল তা নফল হয়ে যায়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ-১/১৮৯-১৯৯।]
এ হাদীস দ্বারা তিনটি বিষয় পরিস্কার বুঝে আসছে। যথা-
১/ তাহাজ্জুদদের মাশরূয়িয়্যাত কুরআন দ্বারা হয়েছে।
২/ তাহাজ্জুদের মাশরুয়িয়্যাত মক্কায় হয়েছে। কারণ সূরা মুজ্জাম্মিল মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
৩/ তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। এক বছর পর্যন্ত ফরজ থাকার পর তা নফল হয়েছে।
কিন্তু তারাবীহ শুরু থেকেই ছিল সুন্নত।
তাহলেই দু’টি এক নামায হল কিভাবে?
৫-হুকুমের দিক থেকেও ভিন্ন
তাহাজ্জুদ নামায নফল। বা সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা। যা আমরা ইতোপূর্বের হাদীস দ্বারা পরিস্কার জানতে পেরেছি। আর তারাবীহ নামায হল সুন্নতে মুআক্কাদা।
সৌদী আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য হিসেবে পঠিত “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থে এসেছে-
ﻭﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ
তথা তারাবী নামায সুন্নতে মুআক্কাদা।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আরওজুল মুরবি, ৬৫।]
একই বক্তব্য প্রদান করছেন প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ। তিনি লিখেছেন-
ﻭﺍﻟﺤﺎﺻﻞ ﺍﻥ ﺍﻷﺻﺢ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻧﻬﺎ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ
তথা সবচে’ বিশুদ্ধতম কথা হল, তারাবীহ নামায সুন্নতে মুআক্কাদা।
[গ্রন্থ সূত্রঃ শরহুন নুকায়া, ১/৩৪১।]
চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থেই একই বক্তব্য এসেছে-
ক) আলবাহরুর রায়েক-১/১১৭।
খ) আলমুহাজ্জাব-১/৮৪।
গ) হুলয়াতুল উলামা-২/১১৯।
ঘ) আলইক্বনা-১/১১৭।
ঙ) নিহায়তুজ জাইন-১/১১৪।
চ) আলফুরূহ-১/৪৮৮।
ছ) আলমুগনী-১/৭৯৭ ইত্যাদি।
৬–জামাত ও গায়রে জামাত
তাহাজ্জুদে আসল হল জামাত না হওয়া। আর তারাবীহে জামাত পড়াই উত্তম।
[গ্রন্থ দেখুনঃ আররওজুল মুরবি-৬৫।]
প্রথমে প্রসিদ্ধ হাদীসটি দেখে নেই
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ : ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺻَﻼَﺓُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻻَ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺃَﺭْﺑَﻊَ ﺭَﻛَﻌَﺎﺕٍ، ﻓَﻼَ ﺗَﺴْﺄَﻝْ ﻋَﻦْ ﺣُﺴْﻨِﻬِﻦَّ ﻭَﻃُﻮﻟِﻬِﻦَّ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﻓَﻼَ ﺗَﺴْﺄَﻝْ ﻋَﻦْ ﺣُﺴْﻨِﻬِﻦَّ ﻭَﻃُﻮﻟِﻬِﻦَّ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﻮﺗِﺮَ؟ ﻗَﺎﻝَ : « ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻋَﻴْﻨِﻲ ﻭَﻻَ ﻳَﻨَﺎﻡُ ﻗَﻠْﺒِﻲ
অর্থাৎ : হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ বুখারী-১/১৫৪।]
উক্ত হাদীসে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করে রাখুন।
যথা-
০১- এ হাদীসের আলোচ্য হল রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরে পড়া রাতের নামায বিষয়ে।
০২- যে নামায রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) চার রাকাত করে পড়তেন।
০৩- আট রাকাত পড়তেন সারা বছর।
০৪- শেষে এসে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) তিন রাকাত বিতর পড়তেন।
৭–রমজান ও গায়রে রমজান
উপরোক্ত হাদীসে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরের নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল তাহাজ্জুদ। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ হল সারা বছর পড়া নামায। আর তারাবীহ শুধু রমজানে পড়া হয়।
সারা বছর পড়ার নামায আর শুধু এক মাস তথা রমজানে পড়া নামায এক হয় কি করে?
যেমন ইশরাকের নামায সারা বছর পড়া হয়, আর দুই ঈদের নামায কেবল বছরের দুই দিন পড়া হয়। এ দু’টি নামায কি এক হতে পারে? বরং তা আলাদা নামায।
যোহরের নামায প্রতিদিন পড়া হয়, আর জুমআর নামায সপ্তাহে একদিন পড়া হয়। তাহলে এ দু’টি নামায এক হতে পারে কি? তা আলাদা আলাদা নামায পরিস্কার।
ঠিক একইভাবে তাহাজ্জুদ হল সারা বছরের নামায, আর তারাবীহ হল শুধু রমজানের নামায, সুতরাং এটিও আলাদা আলাদা নামায।
৮-পড়ার পদ্ধতির ভিন্নতা
হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত করে পড়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। অথচ তারাবীহ নামায দুই রাকাত করে পড়া সুন্নত।
[গ্রন্থ দেখুন সৌদী আরবের শিক্ষা সিলেবাস অন্তর্ভূক্ত বই “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থ-৬৫।]
এছাড়া চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থগুলো দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
তাহলে চার রাকাত করে পড়া নামায আর দুই রাকাত করে পড়া নামায এক হয় কি করে?
৯–ঘুমের বিশ্রাম
হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা বিতর ও তাহাজ্জুদের মাঝে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর ঘুমানো প্রমাণিত। কিন্তু রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) থেকে তারাবীহ ও বিতরের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত নয়। কেননা, হাদীসে এসেছে-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺷﺪ ﻣﺌﺰﺭﻩ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﻓﺮﺍﺷﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺴﻠﺦ
অর্থাৎ : রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর সম্মানিতা স্ত্রী হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কোমর বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায় আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪।]
তাহলে যে নামাযের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত আর যাতে প্রমাণিত নয় তা এক নামায হয় কি করে?
১০–“মান ক্বামা রমজানা” হাদীস সংক্রান্ত
“মান ক্বামা রমজানা” তথা যে হাদীসে এসেছে যে, রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) ইরশাদ করেছেন “যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব পাবার আশায় নামায পড়বে তার পূর্বের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে” মর্মের হাদীসটি কোন মুহাদ্দিস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে আনেননি। সবাই এনেছেন তারাবীহ অধ্যায়ে। যদি তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায হতো তাহলে এ হাদীস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে কেন মুহাদ্দিসরা আনেননি?
১১-জামাতের উৎসাহ দান
তারাবীহ নামায রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) নিজেও জামাতে পড়েছেন, এবং অন্যকে পড়তে দেখে খুশি হয়েছেন।
[দেখুন গ্রন্থঃ কিয়ামে রমজান লিলমারওয়াজী-১৫৫, ১৫৩।]
কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায জামাতে পড়েছেন বা সাহাবায়ে কেরাম জামাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়েছেন তার কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।
তাহলে দুই নামায এক হল কিভাবে?
১২-কুরআন খতম
তারাবীহ নামাযে পুরো কুরআন খতম করার বিষয়টি খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে প্রমাণিত। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাযে এভাবে প্রমাণিত নয়।
১৩-রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট
তাহাজ্জুদের রাকাত নির্দিষ্ট নয়। যে যতটুকু ইচ্ছে পড়তে পারে। দুই, চার, ছয়, আট, দশ। কিন্তু তারবীহের রাকাত সংখ্যা উভয় দলের কাছেই নির্দিষ্ট আমাদের কাছে বিশ রাকাত, আর লামাযহাবী পথহারাদের কাছে আট রাকাত।
তাহলে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট আর অনির্দিষ্ট নামায এক হয় কি করে?
১৪-বিতরের জামাত
তারাবীহের পর বিতরের জামাত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। কিন্তু তাহাজ্জুদের পর বিতরের জামাতের কোন প্রমাণ নেই।
তাহলে দুই নামায এক কিভাবে?
১৫-ইসলামের প্রতীক
তারাবীহ নামায শায়ায়েরে ইসলাম।
[গ্রন্থ দেখুনঃ আসাদুল্লাহ গালিবের লেখা ছালাতুর রাসূল-১৭৩, নাইলুল আওতার-২/২৯৫, শরহে আবু দাউদ লিলআইনী-২৭৫, শরহে নববী আলা মুসলিম-৩/১০১, ১২৮, ১৩২, মিরকাত-৪/৩১৪, ৩১৬, ইহয়ায়ে উলুমিদ্দীন-১/৩৯০ ইত্যাদি।]
কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায শায়ায়েরে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত এরকম কোন বক্তব্য কোন মুহাক্কিক, মুহাদ্দিস ফক্বীহ প্রদান করেননি।
১৬-আদায়ের সময় আলাদা
তাহাজ্জুদ আদায়ের উত্তম সময় হল শেষ রাত।
আর তারাবীহ আদায় করা হয় ইশার নামাযের পর পর। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু নামায এক হতে পারে না। এক নামায আরেক নামায থেকে পৃথক করা হয় সময়ের দূরত্বের মাধ্যমে। যেমন জোহরের চার রাকাত আর আসরের নামায আলাদা নামায বুঝা যায় সময়ের দূরত্বের কারণে। সময়ের ভিন্নতার কারণে। তাহলে সময়ের ভিন্নতা আলাদা নামায হাবার প্রমাণ। তেমনি তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা নামায হবার পরিস্কার প্রমাণ হল তার আদায়ের সময়ের ভিন্নতা।
১৭-নাম আলাদা
ফরজ নামায, ইশরাক, আওয়াবিন তাহাজ্জুদ ইত্যাদি আলাদা নামই প্রমাণ করে এসবই আলাদা আলাদা নামায। তেমনি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামও প্রমাণ করে এ দু’টি নামায এক নামায নয়।
১৮-বর্ণনার অধ্যায় আলাদা
মুহাদ্দিসীনে কেরাম তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা দু’টি অধ্যায় কায়েম করেছেন তাদের কিতাবে। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি ভিন্ন নামায। এক নামায হলে দুই বাব তথা অধ্যায় কায়েম করার মানে কি?
মুহাদ্দিসীনে কেরামের দু’টি নামাযের জন্য আলাদা বাব কায়েম করা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি নামায আলাদা। এক নয়।
১৯-রমজানের শর্ত
রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর জমানায় একবার চাঁদ দেখেনি অনেকে।
তখন ﻓﺎﺭﺍﺩﻭﺍ ﺍﻥ ﻻ ﻳﺼﻮﻣﻮﺍ ﻭﻻ ﻳﻘﻮﻣﻮﺍ তথা তখন সবাই রোযা না রাখা ও তারাবীহ না পড়ার ইচ্ছে করে নেন সবাই। হঠাৎ করে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়। তখন উক্ত ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা যাচাইয়ের পর রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) হযরত বিলাল রাঃ কে ঘোষণা দেবার জন্য হুকুম দেন- ﺍﻥ ﻳﺼﻮﻣﻮﺍ ﻭﺍﻥ ﻳﻘﻮﻣﻮﺍ তথা রোযা রাখ এবং তারাবীহ পড়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ দারা কুতনী-২/১৫৯।]
উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের জন্য রমজান আবশ্যক। কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য তা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরই পড়া হয়।
২০–তাহাজ্জুদ ঘুমের পর
তাহাজ্জুদ নামায ঘুমের পর ঘুম থেকে উঠে পড়া হয়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ-১৮১।]
অথচ তারাবীহ পড়া হয় ইশার পর ঘুমের আগেই।
২১–নাম ভিন্ন
একেতো তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামই ভিন্ন। সেই সাথে তাহাজ্জুদের আরেক নাম হল কিয়ামুল লাইল অথচ তারাবীহের আরেক নাম হল কিয়ামে রমজান।
নামায ভিন্ন না হলে নাম ভিন্ন কেন?
প্রথমে কয়েকটি হাদীস দেখে নেই
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻛﺎﻥ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺗﻐﻴﺮ ﻟﻮﻧﻪ، ﻭﻛﺜﺮﺕ ﺻﻼﺗﻪ، ﻭﺍﺑﺘﻬﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺃﺷﻔﻖ ﻟﻮﻧﻪ
অর্থাৎ : হযরত আয়শা রাঃ বলেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর চেহারার রং বদলে যেত, তিনি তখন অনেক বেশি নামায পড়তেন। খুবই কাকুতি মিনতির সাথে দুআ করতেন। আর আল্লাহ তাআলাকে খুবই ভয় পেতেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৮০৬২।]
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺷﺪ ﻣﺌﺰﺭﻩ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﻓﺮﺍﺷﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺴﻠﺦ
অর্থাৎ : রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর সম্মানিতা স্ত্রী আমাদের আম্মা হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কোমড় বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায় আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪।]
আম্মা আয়শা রাঃ থেকে আরেক হাদীসে এসেছে-
ﻳﺠﺘﻬﺪ ﻓﻰ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻻﻭﺍﺧﺮ ﻣﺎﻻ ﻳﺠﺘﻬﺪ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ
অর্থাৎ : রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ মুসলিম-১/৩৭২।]
আরেক বর্ণনায় এসেছে
ﺍﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺷﺪ ﻣﺌﺰﺭﻩ ﻭﺍﺣﻴﻰ ﻟﻴﻠﻪ ﻭﺍﻳﻘﻆ ﺍﻫﻠﻪ
অর্থাৎ : যখন রমজানের শেষ দশক আসতো, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কোমড়কে বেঁধে ফেলতেন, আর সাররাত ইবাদত করতেন,এবং পরিবারের লোকদেরও জাগিয়ে দিতেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী-১/৩৭১, মুসলিম-২৭২।]
২২-রমজানে ইবাদত বাড়াতেন না কমাতেন?
এ হাদীসগুলো প্রমাণ করছে রাসুল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজান মাসে নামায বাড়িয়ে দিতেন। আম্মা আয়শা রাঃ বলেছেন আমাদের নবী রমজানের রাতে বিছানায় আসতেন না। সারারাতই ইবাদত করতেন। আর শেষ দশকে প্রচুর পরিমাণ ইবাদত করতেন এমনকি পরিবারের কাউকে ঘুমাতে দিতেন না, জাগিয়ে দিতেন।
আর লামাযহাবী পথহারারা বলে বেড়ায় রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কখনোই রাতে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। তাই তারাবীহ নামায আট রাকাত।
যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) আসলে রমজানে ইবাদত কমই করতেন। আগেও আট রাকাত রমজানেও আট রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়লো কোথায়?
তাছাড়া বুখারীতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে অন্য বর্ণনায় তের রাকাতের কথা এসেছে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী-১/১৫৩।]
তাহলে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) যদি রমজানে তিন রাকাত বিতর ছাড়া আট রাকাত তারাবীহ পড়েন, আর রমজান ছাড়া পড়েন বিতর ছাড়া দশ রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়ালেন কোথায়? রমজানেতো ইবাদত আরো কমিয়ে দিলেন!
রমজান ছাড়া পড়তেন দশ আর রমজানে এসে আট। ইবাদত বাড়লো না কমলো?
সুতরাং পরিস্কার বুঝা যাচেছ আম্মা আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত বুখারীর হাদীসটি তারাবীহ সংক্রান্ত নয় বরং এটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত।
তাহাজ্জুদ নবীজী ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজান ও রমজান ছাড়া এগার বা তের রাকাতের বেশি পড়তেন না। তারাবীহের কথা উক্ত হাদীসে আলোচিতই হয়নি।
২৩-তারাবীহর পর তাহাজ্জুদের প্রমাণ
আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজানে সারারাত ইবাদত করতেন। বিছানায় যেতেন না। আর আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিজী, ইবনে মাজায় আবু জর গিফারী রাঃ থেকে হাদীসে এসেছে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ) তিনদিন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদে জামাতের সাথে তারাবী পড়িয়েছেন। প্রথম রাতে রাত্রের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন রাতের অর্ধেক পর্যন্ত, তৃতীয় দিন শেষ রাত্র পর্যন্ত।
এখন প্রশ্ন হল রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) প্রথম রাতে তিন ভাগের এক ভাগ ও দ্বিতীয় দিন অর্ধেক রাতে মসজিদে তারাবীহ শেষ করে বাসায় গিয়ে কি ঘুমিয়েছিলেন? তাতো অসম্ভব যা ইতোপূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কারণ নবীজী ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজানে ঘুমাতেন না। তাহলে তিনি ঘরে গিয়ে কি নামায পড়েছেন? সেটি নিশ্চিয় তাহাজ্জুদ হবে। কারণ তারাবীহতো সাহাবীদের সাথে মসজিদে পড়েই চলে এলেন।
তাহলে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) থেকেও তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ পড়ার পরিস্কার ইংগীত পাওয়া যায়।
২৪-তারাবীর পর তাহাজ্জুদ পড়তে হযরত উমর রাঃ এর উৎসাহ প্রদান
হযরত উমর রাঃ যখন হযরত উবাই বিন কাব রাঃ কে তারাবীহ নামাযের ইমাম নিযুক্ত করলেন, তখন তিনি রাতের শুরুভাগে ইশার পর তারাবীহ পড়াতেন। তখন হযরত উমর রাঃ তারাবীহ ছাড়া তাহাজ্জুদ পড়ার উৎসাহ প্রদান করে বলেন-
ﻭَﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻨَﺎﻣُﻮﻥَ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ . ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺁﺧِﺮَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺃَﻭَّﻟَﻪُ .
অর্থাৎ : যে নামায থেকে তোমরা ঘুমিয়ে যাও [তাহাজ্জুদ] যা তোমরা আদায় করতে শেষ রাতে, সেটি এ নামায থেকে উত্তম যা তোমরা আদায় করছো। তথা তারাবীহ। আর লোকজন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়তো।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুয়াত্তা মালিক-৩৭৮, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০০।]
২৫-হযরত ইমাম বুখারীও তারাবী ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন
ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞ ﺍﻟﺒُﺨَﺎﺭِﻱّ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻳﺠْﺘَﻤﻊ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑﻪ ﻓﻴﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻭَﻳﻘْﺮَﺃ ﻓِﻲ ﻛﻞ ﺭَﻛْﻌَﺔ ﻋﺸْﺮﻳﻦ ﺁﻳَﺔ ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥ ﻳﺨْﺘﻢ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳﻘْﺮَﺃ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻣَﺎ ﺑَﻴﻦ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺜُّﻠُﺚ ﻣﻦ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﻓﻴﺨﺘﻢ ﻋِﻨْﺪ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻓِﻲ ﻛﻞ ﺛَﻠَﺎﺙ ﻟَﻴَﺎﻝ
অর্থাৎ : মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন তার সাথীরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবীহ] নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতিয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬।]
ইমাম বুখারী রহঃ। যিনি নিজে হযরত আয়শা রাঃ এঁর এগার রাকাত ওয়ালা হাদীস তাঁর কিতাবে এনেছেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমাদের দেশের লা-মাযহাবী পথহারাদের মত উক্ত হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী নিজেই তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামায বুঝতে পারেন নি। তাই তিনি শুরু রাতে তারাবীহ আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন।
আরো মজার ব্যাপার হল, তিনি আট রাকাত তারাবীহ পড়তেন না এটি নিশ্চিত। বরং আট রাকাতের বেশি পড়তেন। কারণ যদি রমজানে আট রাকাত করে প্রতিদিন বিশ আয়াত পড়া হয়, তাহলে পুরো ত্রিশ দিনে খতম হবে না। অথচ ইমাম বুখারী রহঃ তারাবীহতে খতম করতেন।
তাহলে ইমাম বুখারী তাঁর বর্ণিত উক্ত হাদীস দ্বারা নিজে আট রাকাত তারাবীহ যেমন বুঝেননি, তেমনি আট রাকাতের উপর আমলও করেননি।
কিন্তু আমাদের দেশের লা মাযহাবী-পথহারা অতি পন্ডিতরা ইমাম বুখারী থেকে বড় পন্ডিত হয়ে গেছে। ইমাম বুখারী (রঃ) যা বুঝেননি, আমাদের অতি পন্ডিত পথহারা লা মাযহাবী শায়েখগুলো এর চেয়ে বেশি বুঝে গেছে।
সারকথা
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি আপনাদের কাছে প্রতিভাত হয়ে গেছে যে, তারাবীহ তাহাজ্জুদ সম্পুর্ণ ভিন্ন দু’টি নামায।
এক নামায বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। আর তারাবীহ নামাযকে আট রাকাতে সীমাবদ্ধ বলাও আরেক অজ্ঞতা যা রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ), সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীনের কেউ করেননি। এটি একটি নতুন বিদআতি মতবাদ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এ বিদআতি মতবাদতের অপপ্রচার থেকে হিফাযত করুন।
আমীন।
_______
কোন কিছুকে অস্বিকার করার পদ্ধতি দু’টি। যথা-
১/
পরিস্কার শব্দে অস্বিকার করা।
২/
মুনাফিকীর সাথে অস্বিকার করা। অর্থাৎ মুখে স্বীকারের ভান ধরা কিন্তু মূলত অস্বিকার করা।
যেমন এক ব্যক্তি ইশার নামাযকে অস্বিকার করে।
আরেকজন বলে আমি ইশার নামাযকে মানি। তবে ইশার নামায হল, তিন রাকাত। কারণ ইশা ও মাগরিব নামায একই। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে এর নাম মাগরিব হয়, আর দেড় ঘন্টা পরে পড়লে এর নাম ইশা। সূর্যাস্তের পরপর পড়লে যেমন রাকাত সংখ্যা তিন, দেড় ঘন্টা পড়ে পড়লেও রাকাত সংখ্যা তিনই।
লক্ষ্য করুন।
প্রথম ব্যক্তি সরাসরি ইশার নামাযকে অস্বিকার করেছে। তার মাঝে কোন নিফাকী নেই। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামাযকে অস্বিকার করছে। সেই সাথে মুনাফিকীও করছে। সে বলছে ইশার নামাযকে মানে। আবার বলছে ইশা আর মাগরিব নামায একই। অর্থাৎ এক নামাযের দুই নাম হল মাগরিব ও ইশা। তাহলে সে মূলত মাগরিব নামাযকেই মানে। ইশাকে মানেই না। কিন্তু মানুষকে ধোঁকা দেবার জন্য বলছে সে ইশাকে মানে। আর মাগরিব এশা এক নামায।
তাহলে প্রথম ব্যক্তিটি অস্বিকারকারী পরিস্কার। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিও ইশার নামায অস্বিকারীকারী সেই সাথে মুনাফিক।
কারণ, ইশার নামায কিছুতেই মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা স্বতন্ত্র একটি নামায। যার রাকাত সংখ্যা চার।
বাহ্যিকভাবে কিন্তু উক্ত মুনাফিক আর আমরা যারা ইশার নামায মান্য করি তাদের মাঝে মতভেদ মনে হবে রাকাত সংখ্যা নিয়ে। মানুষ বুঝবে উভয় ব্যক্তিই ইশাকে মানে। মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে। একজন বলছে রাকাত চারটি।আরেকজন বলছে রাকাত হল তিনটি। কিন্তু উভয়ই ইশার নামাযকে স্বীকার করে।
কিন্তু আসল বিষয় কিন্তু তা নয়। বরং উভয়ের মাঝে মতভেদটা হল ইশার নামায আছে কি না? তা নিয়ে। যে বলছে ইশার নামায তিন রাকাত সে মূলত ইশার নামাযকে মানেই না। বরং শুধু মাগরিব নামায মানে। আর যে ইশার নামাযকে চার রাকাত বলে, সে ইশার নামাযকে মানে। স্বতন্ত্র নামায মানে। যা মাগরিব নামায নয়। বরং আলাদা নামায।
তাহলে কি বুঝা গেল? বাহ্যিকভাবে তিন আর চার রাকাতের মতভেদ বুঝা গেলেও আসলে কি উভয়ের মাঝে রাকাতের মতভেদ নাকি ইশার নামাযের অস্তিত্ব আছে কি না? তা নিয়ে মতভেদ?
নিশ্চয় ইশার নামাযের অস্তিত্ব নিয়ে মতভেদ। কিন্তু মুনাফিক লোকটি তার ইশার নামায অস্বিকার করার বিষয়টির উপর রাকাত সংখ্যার ধুম্রজাল দিয়ে পর্দা ঢেলে দিল। আর মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে সে ইশার নামায মানে। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। অথচ সে ইশার নামাযই মানে না।
আর দু’টি উদাহরণ লক্ষ্য করুন!
ক) শিয়াদের যখন আমরা বলি তোমরা কুরআনকে অবিকৃত মান? তারা তখন “তাকিয়া” করে বলে মানি। কিন্তু তাদের এ মানার আড়ালে তারা মনে মনে রাখে হযরত ইমাম মাহদী আঃ যে কুরআন নিয়ে গর্তে আছে সেই কুরআন অবিকৃত। আমাদের কাছে যে কুরআন আছে তা বিকৃত।
তাহলে মুখে প্রকাশ করছে আমাদের কাছে থাকা কুরআনকে অবিকৃত মানে, আর মনে রাখছে ইমাম মাহদীর কাছে থাকা কুরআন অবিকৃত। তাহলে সে শব্দের মারপ্যাঁচে মিথ্যা ও প্রতারণা করছে। মূলত তারা আমাদের কাছে থাকা কুরআনকে অবিকৃত মানে না।
খ) কাদিয়ানীদের যদি বলেন, কালিমা বল, তখন তারা “লাইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বলবে আমাদের মত। কিন্তু সে তার মনে মনে মুহাম্মদ বলে উদ্দেশ্য নেয় মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে। আমাদের নবীকে নয়। কিন্তু ভাবে প্রকাশ করে আমাদের নবী মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহকেই মানছে। কিন্তু আসলে মানে না, বরং মানে কাদিয়ানীকে। কিন্তু মুখে বুঝায় মানে।
তো এভাবে শব্দের মারপ্যাঁচে মনের কথা লুকিয়ে অস্বিকার করা একটি মুনাফিকী পদ্ধতি। যা কাদিয়ানী এবং শিয়াদের প্রতীক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের লামাযহাবী/গায়রে মুকাল্লিদ/শব্দধারী মুসলিম জামাত বা কথিত আহলে হাদীস সম্প্রদায়ের লোকেরা রমজানের তারাবীহের ক্ষেত্রে কাদিয়ানী ও শিয়াদের মতই মুনাফিকী আচরণ করে থাকে সাধারণ মুসলমানদের সাথে।
তাদের লিখিত বইয়ে দেখবেন তারাবীহের আলোচনা আছে। তাদের যদি জিজ্ঞাসা করেন, তারাবীহ নামাযকে মানে কি না? বলবে মানে।
যদি জিজ্ঞাসা করেন রাকাত সংখ্যা কত? তখন বলবে আট। যদি বলেন কিভাবে? তখন বলবে তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামায।
এগার মাস যে নামায ছিল তাহাজ্জুদ সেটিই রমজানে এসে হয়ে যায় তারাবীহ।
তাদের বইয়ের দু’টি উদ্ধৃতি দেই। বাকি ওদের লিখিত সকল তারাবীহ বিষয়ক বইয়েই তা পাবেন।
১/ শায়েখ আসাদুল্লাহ গালিব তার রচিত নামায বইয়ে লিখেছে “রাত্রির বিশেষ নফল ছালাত তারাবী ও তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। রমযানে এশার পর প্রথম রাতে পড়লে তাকে তারাবীহ আর রমযান অন্যান্য সময়ে শেষ রাতে পড়লে তাকে তাহাজ্জুদ বলে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ ছালাতুর রাসূল (সাঃ), ১৭১।]
২/ গায়রে মুকাল্লিদ তার রচিত বইয়ে লিখেছে “তাহাজ্জুদ ও তারাবীহ একই নামায। এর সময় ইশার পর হতে ফজরের শেষ পূর্ব পর্যন্ত। এটা রমজান মাসে তারাবী ও অন্য মাসে তাহাজ্জুদ নামে পরিচিত। এর নিয়ম ও দুআ একই।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ নামায ও মাসনূন দুআ শিক্ষা-১০৪।]
লামাযহাবী পথহারাদের লেখা যেকোন তারাবীহ সংক্রান্ত বই খুলে দেখুন একই বক্তব্য রয়েছে তাতে।
আমাদের দেয়া আগের ইশা ও মাগরিবের উদাহরণটা একটু মিলিয়ে দেখুন। এরা কিভাবে মুনাফিকী আচরণ করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষতো মনে করবে লামাযহাবী-পথহার
ারা বুঝি তারাবীহ মানে। শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। আসলে কিন্তু তা নয়। তারা তারাবীহকে মানেই না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। যেহেতু তাহাজ্জুদের রাকাত আট তাই ধোঁকার আশ্রয় নিয়ে তারাবীহর রাকাতও আট বলে থাকে। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে, কিন্তু মুখে নাম নেয় তারাবীহর। আর ভাব নেয় মতভেদ শুধু রাকাত সংখ্যা নিয়ে মূলত তারাও তারাবীহ মানে। কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন।
যেমন ইতোপর্বে দেখেছেন যে ব্যক্তি বলছে ইশার নামায তিন রাকাত বলে, সে কিন্তু ইশাকে মানেই না। কিন্তু মুখে বলছে মানে। তিন রাকাত এজন্য বলছে যেহেতু ইশা মাগরিব এক নামায।
একই হালাত লামাযহাবী পথহারাদের। তারাও তারাবীহ মানে না। মানে শুধু তাহাজ্জুদকে। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের ধোঁকা দেবার জন্য রাকাত সংখ্যার মতভেদকে সামনে নিয়ে আসে। ভাব ধরে তারাবীহ মানে। আসলে এটি মুনাফিকী ছাড়া আর কিছু নয়।
তারাবীহ অস্বিকার করলে সরাসরি অস্বিকার করুক। এভাবে মুনাফিকী আচরণ করে অস্বিকার করা কেন?
তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নমায দাবিটি কতটুকু দলীল সম্মতঃ
তারাবীহ তাহাজ্জুদকে এক নামায বলা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ সম্পূর্ণই ভিন্ন দু’টি নামায। আমরা পরিস্কার কিছু পার্থক্য তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ বিষয়ে নিম্নে উপস্থাপন করছিঃ
১-দু’টির শরয়ী উৎস আলাদা!
তাহাজ্জুদ নামায কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।
যথা পবিত্র কুরআনের আয়াত-
ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰٰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ [ ١٧ : ٧٩ ]
অর্থাৎ : রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
[সূত্রঃ ক্বুরআ'নুল কারিম, সুরা আল ইসরা: আয়াত ৭৯।]
আর তারাবীহ নামায প্রিয় রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন-
নূরে মুজাস্সাম প্রিয় রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) ইরশাদ করেছেন-
ﺷَﻬْﺮٌ ﻛَﺘَﺐَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺻِﻴَﺎﻣَﻪُ، ﻭَﺳَﻨَﻨْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﻗِﻴَﺎﻣَﻪُ ،
অর্থাৎ : এটি এমন মাস যাতে আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য রোযাকে ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য এর রাতের নামাযকে সুন্নত করেছি।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩২৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-২২১০।]
সুতরাং দু’টি এক নামায হয় কি করে?
২-মাশরূ তথা শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত হবার স্থানও আলাদা!
তাহাজ্জুদ মক্কায় থাকা অবস্থায় শরীয়ত সিদ্ধ ইবাদত সাব্যস্ত হয়, আর তারাবীহ মাশরূ হয় মদীনায়।
তাহলে এক কিভাবে হল?
৩-সময়কালও আলাদা!
তাহাজ্জুদ মাশরূ হয় হিজরতের আগে। আর তারাবী হয় হিজরতের পর।
৪-মাশরূ হবার পদ্ধতিও ছিল ভিন্ন!
তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। অনেক দিন পর্যন্ত তা ফরজই ছিল। তারপর তার ফরজিয়্যাত রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়।
ﻗُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺃُﻡَّ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ، ﺣَﺪِّﺛِﻴﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﺧُﻠُﻖِ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : « ﺃَﻟَﺴْﺖَ ﺗَﻘْﺮَﺃُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ؟ ﻓَﺈِﻥَّ ﺧُﻠُﻖَ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ » ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ﺣَﺪِّﺛِﻴﻨِﻲ ﻋَﻦْ ﻗِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ” ﺃَﻟَﺴْﺖَ ﺗَﻘْﺮَﺃُ : ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟْﻤُﺰَّﻣِّﻞُ؟ “ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ : ﺑَﻠَﻰ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : « ﻓَﺈِﻥَّ ﺃَﻭَّﻝَ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺴُّﻮﺭَﺓِ ﻧَﺰَﻟَﺖْ، ﻓَﻘَﺎﻡَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﻧْﺘَﻔَﺨَﺖْ ﺃَﻗْﺪَﺍﻣُﻬُﻢْ، ﻭَﺣُﺒِﺲَ ﺧَﺎﺗِﻤَﺘُﻬَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﺍﺛْﻨَﻲْ ﻋَﺸَﺮَ ﺷَﻬْﺮًﺍ، ﺛُﻢَّ ﻧَﺰَﻝَ ﺁﺧِﺮُﻫَﺎ، ﻓَﺼَﺎﺭَ ﻗِﻴَﺎﻡُ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺗَﻄَﻮُّﻋًﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﻓَﺮِﻳﻀَﺔٍ
অর্থাৎ : হযরত সাদ বিন হিশাম রহঃ বলেন, আমি বললাম! হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমাকে রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র বিষয়ে কিছু বলুন। আম্মাজান আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? রাসূল সাঃ এর আখলাক চরিত্র কুরআনে যা আছে তাই ছিল। তারপর সাদ বলেন, আপনি আমাকে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর রাতের নামাযের ব্যাপারে বলুন। তখন আম্মা আয়শা রাঃ বলেন, তুমি কি “ইয়া আইয়্যুহাল মুজ্জাম্মিল” পড়ো না? হযরত সাদ বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ আমি পড়িতো। আম্মা আয়শা রাঃ বলেন, এ সূরার যখন প্রথমাংশ নাজিল হয়, [যাতে তাহাজ্জুদ ফরজ হয়] তখন সাহাবায়ে কেরাম এত দীর্ঘ তাহাজ্জুদ পড়তেন যে, তাদের পা ফুলে যেতো। আর এ সূরার শেষাংশ বারমাস পর্যন্ত আসমানে আটকে থাকে। বার মাস পর যখন এর শেষাংশ নাজিল হয়, তখন যে তাহাজ্জুদ ফরজ ছিল তা নফল হয়ে যায়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সুনানে আবু দাউদ-১/১৮৯-১৯৯।]
এ হাদীস দ্বারা তিনটি বিষয় পরিস্কার বুঝে আসছে। যথা-
১/ তাহাজ্জুদদের মাশরূয়িয়্যাত কুরআন দ্বারা হয়েছে।
২/ তাহাজ্জুদের মাশরুয়িয়্যাত মক্কায় হয়েছে। কারণ সূরা মুজ্জাম্মিল মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।
৩/ তাহাজ্জুদ প্রথমে ফরজ ছিল। এক বছর পর্যন্ত ফরজ থাকার পর তা নফল হয়েছে।
কিন্তু তারাবীহ শুরু থেকেই ছিল সুন্নত।
তাহলেই দু’টি এক নামায হল কিভাবে?
৫-হুকুমের দিক থেকেও ভিন্ন
তাহাজ্জুদ নামায নফল। বা সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা। যা আমরা ইতোপূর্বের হাদীস দ্বারা পরিস্কার জানতে পেরেছি। আর তারাবীহ নামায হল সুন্নতে মুআক্কাদা।
সৌদী আরবের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠ্য হিসেবে পঠিত “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থে এসেছে-
ﻭﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ
তথা তারাবী নামায সুন্নতে মুআক্কাদা।
[গ্রন্থ সূত্রঃ আরওজুল মুরবি, ৬৫।]
একই বক্তব্য প্রদান করছেন প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদ আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ। তিনি লিখেছেন-
ﻭﺍﻟﺤﺎﺻﻞ ﺍﻥ ﺍﻷﺻﺢ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻧﻬﺎ ﺳﻨﺔ ﻣﺆﻛﺪﺓ
তথা সবচে’ বিশুদ্ধতম কথা হল, তারাবীহ নামায সুন্নতে মুআক্কাদা।
[গ্রন্থ সূত্রঃ শরহুন নুকায়া, ১/৩৪১।]
চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থেই একই বক্তব্য এসেছে-
ক) আলবাহরুর রায়েক-১/১১৭।
খ) আলমুহাজ্জাব-১/৮৪।
গ) হুলয়াতুল উলামা-২/১১৯।
ঘ) আলইক্বনা-১/১১৭।
ঙ) নিহায়তুজ জাইন-১/১১৪।
চ) আলফুরূহ-১/৪৮৮।
ছ) আলমুগনী-১/৭৯৭ ইত্যাদি।
৬–জামাত ও গায়রে জামাত
তাহাজ্জুদে আসল হল জামাত না হওয়া। আর তারাবীহে জামাত পড়াই উত্তম।
[গ্রন্থ দেখুনঃ আররওজুল মুরবি-৬৫।]
প্রথমে প্রসিদ্ধ হাদীসটি দেখে নেই
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻠَﻤَﺔَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ : ﻛَﻴْﻒَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺻَﻼَﺓُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺰِﻳﺪُ ﻓِﻲ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻭَﻻَ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﻋَﺸْﺮَﺓَ ﺭَﻛْﻌَﺔً، ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺃَﺭْﺑَﻊَ ﺭَﻛَﻌَﺎﺕٍ، ﻓَﻼَ ﺗَﺴْﺄَﻝْ ﻋَﻦْ ﺣُﺴْﻨِﻬِﻦَّ ﻭَﻃُﻮﻟِﻬِﻦَّ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺃَﺭْﺑَﻌًﺎ، ﻓَﻼَ ﺗَﺴْﺄَﻝْ ﻋَﻦْ ﺣُﺴْﻨِﻬِﻦَّ ﻭَﻃُﻮﻟِﻬِﻦَّ، ﺛُﻢَّ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺛَﻼَﺛًﺎ، ﻓَﻘُﻠْﺖُ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗُﻮﺗِﺮَ؟ ﻗَﺎﻝَ : « ﺗَﻨَﺎﻡُ ﻋَﻴْﻨِﻲ ﻭَﻻَ ﻳَﻨَﺎﻡُ ﻗَﻠْﺒِﻲ
অর্থাৎ : হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ বুখারী-১/১৫৪।]
উক্ত হাদীসে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করে রাখুন।
যথা-
০১- এ হাদীসের আলোচ্য হল রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরে পড়া রাতের নামায বিষয়ে।
০২- যে নামায রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) চার রাকাত করে পড়তেন।
০৩- আট রাকাত পড়তেন সারা বছর।
০৪- শেষে এসে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) তিন রাকাত বিতর পড়তেন।
৭–রমজান ও গায়রে রমজান
উপরোক্ত হাদীসে যে নামাযের কথা বলা হয়েছে রমজান ও গায়রে রমজান তথা সারা বছরের নামাযের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেটি হল তাহাজ্জুদ। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ হল সারা বছর পড়া নামায। আর তারাবীহ শুধু রমজানে পড়া হয়।
সারা বছর পড়ার নামায আর শুধু এক মাস তথা রমজানে পড়া নামায এক হয় কি করে?
যেমন ইশরাকের নামায সারা বছর পড়া হয়, আর দুই ঈদের নামায কেবল বছরের দুই দিন পড়া হয়। এ দু’টি নামায কি এক হতে পারে? বরং তা আলাদা নামায।
যোহরের নামায প্রতিদিন পড়া হয়, আর জুমআর নামায সপ্তাহে একদিন পড়া হয়। তাহলে এ দু’টি নামায এক হতে পারে কি? তা আলাদা আলাদা নামায পরিস্কার।
ঠিক একইভাবে তাহাজ্জুদ হল সারা বছরের নামায, আর তারাবীহ হল শুধু রমজানের নামায, সুতরাং এটিও আলাদা আলাদা নামায।
৮-পড়ার পদ্ধতির ভিন্নতা
হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত করে পড়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। অথচ তারাবীহ নামায দুই রাকাত করে পড়া সুন্নত।
[গ্রন্থ দেখুন সৌদী আরবের শিক্ষা সিলেবাস অন্তর্ভূক্ত বই “আররওজুল মুরবি” গ্রন্থ-৬৫।]
এছাড়া চার মাযহাবের ফিক্বহের গ্রন্থগুলো দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
তাহলে চার রাকাত করে পড়া নামায আর দুই রাকাত করে পড়া নামায এক হয় কি করে?
৯–ঘুমের বিশ্রাম
হযরত আয়শা রাঃ এর হাদীস দ্বারা বিতর ও তাহাজ্জুদের মাঝে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর ঘুমানো প্রমাণিত। কিন্তু রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) থেকে তারাবীহ ও বিতরের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত নয়। কেননা, হাদীসে এসেছে-
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺷﺪ ﻣﺌﺰﺭﻩ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﻓﺮﺍﺷﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺴﻠﺦ
অর্থাৎ : রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর সম্মানিতা স্ত্রী হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কোমর বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায় আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪।]
তাহলে যে নামাযের মাঝে ঘুমানো প্রমাণিত আর যাতে প্রমাণিত নয় তা এক নামায হয় কি করে?
১০–“মান ক্বামা রমজানা” হাদীস সংক্রান্ত
“মান ক্বামা রমজানা” তথা যে হাদীসে এসেছে যে, রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) ইরশাদ করেছেন “যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াব পাবার আশায় নামায পড়বে তার পূর্বের গোনাহ মাফ হয়ে যাবে” মর্মের হাদীসটি কোন মুহাদ্দিস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে আনেননি। সবাই এনেছেন তারাবীহ অধ্যায়ে। যদি তারাবী তাহাজ্জুদ এক নামায হতো তাহলে এ হাদীস তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে কেন মুহাদ্দিসরা আনেননি?
১১-জামাতের উৎসাহ দান
তারাবীহ নামায রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) নিজেও জামাতে পড়েছেন, এবং অন্যকে পড়তে দেখে খুশি হয়েছেন।
[দেখুন গ্রন্থঃ কিয়ামে রমজান লিলমারওয়াজী-১৫৫, ১৫৩।]
কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায জামাতে পড়েছেন বা সাহাবায়ে কেরাম জামাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়েছেন তার কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।
তাহলে দুই নামায এক হল কিভাবে?
১২-কুরআন খতম
তারাবীহ নামাযে পুরো কুরআন খতম করার বিষয়টি খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে প্রমাণিত। কিন্তু তাহাজ্জুদ নামাযে এভাবে প্রমাণিত নয়।
১৩-রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট
তাহাজ্জুদের রাকাত নির্দিষ্ট নয়। যে যতটুকু ইচ্ছে পড়তে পারে। দুই, চার, ছয়, আট, দশ। কিন্তু তারবীহের রাকাত সংখ্যা উভয় দলের কাছেই নির্দিষ্ট আমাদের কাছে বিশ রাকাত, আর লামাযহাবী পথহারাদের কাছে আট রাকাত।
তাহলে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট আর অনির্দিষ্ট নামায এক হয় কি করে?
১৪-বিতরের জামাত
তারাবীহের পর বিতরের জামাত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত। কিন্তু তাহাজ্জুদের পর বিতরের জামাতের কোন প্রমাণ নেই।
তাহলে দুই নামায এক কিভাবে?
১৫-ইসলামের প্রতীক
তারাবীহ নামায শায়ায়েরে ইসলাম।
[গ্রন্থ দেখুনঃ আসাদুল্লাহ গালিবের লেখা ছালাতুর রাসূল-১৭৩, নাইলুল আওতার-২/২৯৫, শরহে আবু দাউদ লিলআইনী-২৭৫, শরহে নববী আলা মুসলিম-৩/১০১, ১২৮, ১৩২, মিরকাত-৪/৩১৪, ৩১৬, ইহয়ায়ে উলুমিদ্দীন-১/৩৯০ ইত্যাদি।]
কিন্তু তাহাজ্জুদ নামায শায়ায়েরে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত এরকম কোন বক্তব্য কোন মুহাক্কিক, মুহাদ্দিস ফক্বীহ প্রদান করেননি।
১৬-আদায়ের সময় আলাদা
তাহাজ্জুদ আদায়ের উত্তম সময় হল শেষ রাত।
আর তারাবীহ আদায় করা হয় ইশার নামাযের পর পর। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু নামায এক হতে পারে না। এক নামায আরেক নামায থেকে পৃথক করা হয় সময়ের দূরত্বের মাধ্যমে। যেমন জোহরের চার রাকাত আর আসরের নামায আলাদা নামায বুঝা যায় সময়ের দূরত্বের কারণে। সময়ের ভিন্নতার কারণে। তাহলে সময়ের ভিন্নতা আলাদা নামায হাবার প্রমাণ। তেমনি তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা নামায হবার পরিস্কার প্রমাণ হল তার আদায়ের সময়ের ভিন্নতা।
১৭-নাম আলাদা
ফরজ নামায, ইশরাক, আওয়াবিন তাহাজ্জুদ ইত্যাদি আলাদা নামই প্রমাণ করে এসবই আলাদা আলাদা নামায। তেমনি তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ আলাদা নামও প্রমাণ করে এ দু’টি নামায এক নামায নয়।
১৮-বর্ণনার অধ্যায় আলাদা
মুহাদ্দিসীনে কেরাম তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের জন্য আলাদা দু’টি অধ্যায় কায়েম করেছেন তাদের কিতাবে। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি ভিন্ন নামায। এক নামায হলে দুই বাব তথা অধ্যায় কায়েম করার মানে কি?
মুহাদ্দিসীনে কেরামের দু’টি নামাযের জন্য আলাদা বাব কায়েম করা পরিস্কার প্রমাণ করে এ দু’টি নামায আলাদা। এক নয়।
১৯-রমজানের শর্ত
রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর জমানায় একবার চাঁদ দেখেনি অনেকে।
তখন ﻓﺎﺭﺍﺩﻭﺍ ﺍﻥ ﻻ ﻳﺼﻮﻣﻮﺍ ﻭﻻ ﻳﻘﻮﻣﻮﺍ তথা তখন সবাই রোযা না রাখা ও তারাবীহ না পড়ার ইচ্ছে করে নেন সবাই। হঠাৎ করে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়। তখন উক্ত ব্যক্তির ঈমান ও বিশ্বাসের সত্যতা যাচাইয়ের পর রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) হযরত বিলাল রাঃ কে ঘোষণা দেবার জন্য হুকুম দেন- ﺍﻥ ﻳﺼﻮﻣﻮﺍ ﻭﺍﻥ ﻳﻘﻮﻣﻮﺍ তথা রোযা রাখ এবং তারাবীহ পড়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ দারা কুতনী-২/১৫৯।]
উপরোক্ত হাদীস প্রমাণ করে তারাবীহের জন্য রমজান আবশ্যক। কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য তা আবশ্যক নয়। তাহাজ্জুদ সারা বছরই পড়া হয়।
২০–তাহাজ্জুদ ঘুমের পর
তাহাজ্জুদ নামায ঘুমের পর ঘুম থেকে উঠে পড়া হয়।
[গ্রন্থ সূত্রঃ তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ-১৮১।]
অথচ তারাবীহ পড়া হয় ইশার পর ঘুমের আগেই।
২১–নাম ভিন্ন
একেতো তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ নামই ভিন্ন। সেই সাথে তাহাজ্জুদের আরেক নাম হল কিয়ামুল লাইল অথচ তারাবীহের আরেক নাম হল কিয়ামে রমজান।
নামায ভিন্ন না হলে নাম ভিন্ন কেন?
প্রথমে কয়েকটি হাদীস দেখে নেই
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻛﺎﻥ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺗﻐﻴﺮ ﻟﻮﻧﻪ، ﻭﻛﺜﺮﺕ ﺻﻼﺗﻪ، ﻭﺍﺑﺘﻬﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻋﺎﺀ، ﻭﺃﺷﻔﻖ ﻟﻮﻧﻪ
অর্থাৎ : হযরত আয়শা রাঃ বলেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর চেহারার রং বদলে যেত, তিনি তখন অনেক বেশি নামায পড়তেন। খুবই কাকুতি মিনতির সাথে দুআ করতেন। আর আল্লাহ তাআলাকে খুবই ভয় পেতেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৮০৬২।]
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺯﻭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺷﺪ ﻣﺌﺰﺭﻩ ﺛﻢ ﻟﻢ ﻳﺄﺕ ﻓﺮﺍﺷﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻨﺴﻠﺦ
অর্থাৎ : রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) এঁর সম্মানিতা স্ত্রী আমাদের আম্মা হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ ইরশাদ করেনঃ যখন রমজান মাস আসে, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কোমড় বেঁধে ফেলেন। তিনি তার বিছানায় আর ফিরে আসতেন না রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৩৪২, শুয়াবুল ঈমান-৩/৩১০, হাদীস নং-৩৬২৪।]
আম্মা আয়শা রাঃ থেকে আরেক হাদীসে এসেছে-
ﻳﺠﺘﻬﺪ ﻓﻰ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻻﻭﺍﺧﺮ ﻣﺎﻻ ﻳﺠﺘﻬﺪ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ
অর্থাৎ : রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজানের শেষ দশকে এত বেশি ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেন না।
[গ্রন্থ সূত্রঃ সহীহ মুসলিম-১/৩৭২।]
আরেক বর্ণনায় এসেছে
ﺍﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺷﺪ ﻣﺌﺰﺭﻩ ﻭﺍﺣﻴﻰ ﻟﻴﻠﻪ ﻭﺍﻳﻘﻆ ﺍﻫﻠﻪ
অর্থাৎ : যখন রমজানের শেষ দশক আসতো, তখন রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কোমড়কে বেঁধে ফেলতেন, আর সাররাত ইবাদত করতেন,এবং পরিবারের লোকদেরও জাগিয়ে দিতেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী-১/৩৭১, মুসলিম-২৭২।]
২২-রমজানে ইবাদত বাড়াতেন না কমাতেন?
এ হাদীসগুলো প্রমাণ করছে রাসুল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজান মাসে নামায বাড়িয়ে দিতেন। আম্মা আয়শা রাঃ বলেছেন আমাদের নবী রমজানের রাতে বিছানায় আসতেন না। সারারাতই ইবাদত করতেন। আর শেষ দশকে প্রচুর পরিমাণ ইবাদত করতেন এমনকি পরিবারের কাউকে ঘুমাতে দিতেন না, জাগিয়ে দিতেন।
আর লামাযহাবী পথহারারা বলে বেড়ায় রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) কখনোই রাতে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। তাই তারাবীহ নামায আট রাকাত।
যদি তাই হয়, তাহলে বলতে হবে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) আসলে রমজানে ইবাদত কমই করতেন। আগেও আট রাকাত রমজানেও আট রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়লো কোথায়?
তাছাড়া বুখারীতে আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে অন্য বর্ণনায় তের রাকাতের কথা এসেছে।
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারী-১/১৫৩।]
তাহলে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) যদি রমজানে তিন রাকাত বিতর ছাড়া আট রাকাত তারাবীহ পড়েন, আর রমজান ছাড়া পড়েন বিতর ছাড়া দশ রাকাত। তাহলে রমজানে ইবাদত বাড়ালেন কোথায়? রমজানেতো ইবাদত আরো কমিয়ে দিলেন!
রমজান ছাড়া পড়তেন দশ আর রমজানে এসে আট। ইবাদত বাড়লো না কমলো?
সুতরাং পরিস্কার বুঝা যাচেছ আম্মা আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত বুখারীর হাদীসটি তারাবীহ সংক্রান্ত নয় বরং এটি তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত।
তাহাজ্জুদ নবীজী ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজান ও রমজান ছাড়া এগার বা তের রাকাতের বেশি পড়তেন না। তারাবীহের কথা উক্ত হাদীসে আলোচিতই হয়নি।
২৩-তারাবীহর পর তাহাজ্জুদের প্রমাণ
আমরা ইতোপূর্বে জেনেছি রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজানে সারারাত ইবাদত করতেন। বিছানায় যেতেন না। আর আবু দাউদ, নাসায়ী, তিরমিজী, ইবনে মাজায় আবু জর গিফারী রাঃ থেকে হাদীসে এসেছে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ) তিনদিন সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মসজিদে জামাতের সাথে তারাবী পড়িয়েছেন। প্রথম রাতে রাত্রের তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন রাতের অর্ধেক পর্যন্ত, তৃতীয় দিন শেষ রাত্র পর্যন্ত।
এখন প্রশ্ন হল রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) প্রথম রাতে তিন ভাগের এক ভাগ ও দ্বিতীয় দিন অর্ধেক রাতে মসজিদে তারাবীহ শেষ করে বাসায় গিয়ে কি ঘুমিয়েছিলেন? তাতো অসম্ভব যা ইতোপূর্বের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। কারণ নবীজী ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) রমজানে ঘুমাতেন না। তাহলে তিনি ঘরে গিয়ে কি নামায পড়েছেন? সেটি নিশ্চিয় তাহাজ্জুদ হবে। কারণ তারাবীহতো সাহাবীদের সাথে মসজিদে পড়েই চলে এলেন।
তাহলে রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ) থেকেও তারাবীহর পর তাহাজ্জুদ পড়ার পরিস্কার ইংগীত পাওয়া যায়।
২৪-তারাবীর পর তাহাজ্জুদ পড়তে হযরত উমর রাঃ এর উৎসাহ প্রদান
হযরত উমর রাঃ যখন হযরত উবাই বিন কাব রাঃ কে তারাবীহ নামাযের ইমাম নিযুক্ত করলেন, তখন তিনি রাতের শুরুভাগে ইশার পর তারাবীহ পড়াতেন। তখন হযরত উমর রাঃ তারাবীহ ছাড়া তাহাজ্জুদ পড়ার উৎসাহ প্রদান করে বলেন-
ﻭَﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻨَﺎﻣُﻮﻥَ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﺃَﻓْﻀَﻞُ ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ . ﻳَﻌْﻨِﻲ ﺁﺧِﺮَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ . ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺃَﻭَّﻟَﻪُ .
অর্থাৎ : যে নামায থেকে তোমরা ঘুমিয়ে যাও [তাহাজ্জুদ] যা তোমরা আদায় করতে শেষ রাতে, সেটি এ নামায থেকে উত্তম যা তোমরা আদায় করছো। তথা তারাবীহ। আর লোকজন প্রথম রাতে তারাবীহ পড়তো।
[গ্রন্থ সূত্রঃ মুয়াত্তা মালিক-৩৭৮, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১১০০।]
২৫-হযরত ইমাম বুখারীও তারাবী ও তাহাজ্জুদ আলাদা পড়তেন
ﻛَﺎﻥَ ﻣُﺤَﻤَّﺪ ﺑﻦ ﺇِﺳْﻤَﺎﻋِﻴﻞ ﺍﻟﺒُﺨَﺎﺭِﻱّ ﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻭَّﻝُ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﻳﺠْﺘَﻤﻊ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺃَﺻْﺤَﺎﺑﻪ ﻓﻴﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻭَﻳﻘْﺮَﺃ ﻓِﻲ ﻛﻞ ﺭَﻛْﻌَﺔ ﻋﺸْﺮﻳﻦ ﺁﻳَﺔ ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻥ ﻳﺨْﺘﻢ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳﻘْﺮَﺃ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻣَﺎ ﺑَﻴﻦ ﺍﻟﻨّﺼْﻒ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺜُّﻠُﺚ ﻣﻦ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥ ﻓﻴﺨﺘﻢ ﻋِﻨْﺪ ﺍﻟﺴﺤﺮ ﻓِﻲ ﻛﻞ ﺛَﻠَﺎﺙ ﻟَﻴَﺎﻝ
অর্থাৎ : মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী রহঃ যখন রমজানের প্রথম রাত আসতো তখন তার সাথীরা তার কাছে একত্র হয়ে যেতো। তারপর তিনি তাদের নিয়ে [তারাবীহ] নামায পড়তেন। আর প্রতি রাকাতে তিনি বিশ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। আর এভাবে তিনি খতম করতেন। আর যখন সেহরীর সময় হতো, তখন তিনি অর্ধেক থেকে কুরআনের এক তৃতিয়াংশ তিলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরীতে তিন দিনে খতম করতেন।
[গ্রন্থ সূত্রঃ হাদয়ুস সারী মুকাদ্দিমা ফাতহুল বারী-৬৬।]
ইমাম বুখারী রহঃ। যিনি নিজে হযরত আয়শা রাঃ এঁর এগার রাকাত ওয়ালা হাদীস তাঁর কিতাবে এনেছেন।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল আমাদের দেশের লা-মাযহাবী পথহারাদের মত উক্ত হাদীস দ্বারা ইমাম বুখারী নিজেই তারাবীহ তাহাজ্জুদ এক নামায বুঝতে পারেন নি। তাই তিনি শুরু রাতে তারাবীহ আবার শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন।
আরো মজার ব্যাপার হল, তিনি আট রাকাত তারাবীহ পড়তেন না এটি নিশ্চিত। বরং আট রাকাতের বেশি পড়তেন। কারণ যদি রমজানে আট রাকাত করে প্রতিদিন বিশ আয়াত পড়া হয়, তাহলে পুরো ত্রিশ দিনে খতম হবে না। অথচ ইমাম বুখারী রহঃ তারাবীহতে খতম করতেন।
তাহলে ইমাম বুখারী তাঁর বর্ণিত উক্ত হাদীস দ্বারা নিজে আট রাকাত তারাবীহ যেমন বুঝেননি, তেমনি আট রাকাতের উপর আমলও করেননি।
কিন্তু আমাদের দেশের লা মাযহাবী-পথহারা অতি পন্ডিতরা ইমাম বুখারী থেকে বড় পন্ডিত হয়ে গেছে। ইমাম বুখারী (রঃ) যা বুঝেননি, আমাদের অতি পন্ডিত পথহারা লা মাযহাবী শায়েখগুলো এর চেয়ে বেশি বুঝে গেছে।
সারকথা
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা আশা করি আপনাদের কাছে প্রতিভাত হয়ে গেছে যে, তারাবীহ তাহাজ্জুদ সম্পুর্ণ ভিন্ন দু’টি নামায।
এক নামায বলা মুর্খতা বৈ কিছু নয়। আর তারাবীহ নামাযকে আট রাকাতে সীমাবদ্ধ বলাও আরেক অজ্ঞতা যা রাসূল ( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺁﻟﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ), সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীনের কেউ করেননি। এটি একটি নতুন বিদআতি মতবাদ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এ বিদআতি মতবাদতের অপপ্রচার থেকে হিফাযত করুন।
আমীন।
_______