২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে সহীহ হাদীস ও কিছু অভিযোগের জবাব :
❏ দলিল ২৩:
সালাফীদের অভিযোগ যে এটা জাল হাদিস কারন একজন রাবী দুর্বল :
☛ হযরত ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বর্ণনা করেছেন হযরত সাইব বিন ইয়াযিদ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি বলেন, উমার বিন খাত্তাব (رضي الله عنه) এর যামানায় তাঁরা (সাহাবাগণ সহ অন্যান্যগণ) রামাদান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন। (হাদীসটি সংক্ষেপিত)
তথ্যসূত্রঃ আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকী-২/৪৯৬
হাদীসটির পর্যালোচনাঃ
১/ ইমাম নববী (رحمة الله) তাঁর “আল খুলাসাহ” এবং ‘আল মাজমু’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ আল মাজমু-৪/৩২
২/ ইমাম যায়লায়ী (رحمة الله) তাঁর ‘নাসবুর রায়াহ’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ নাসবুর রায়াহ-২/১৫৪
৩/ইমাম সুবকী (رحمة الله) তাঁর ‘শারহুল মিনহাজ’ নামক কিতাবে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
৪/ ইমাম ইবনুল ইরাকী (رحمة الله) তাঁর ‘তারহুত তাছরীব’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ তারহুত তাছরীব-৩/৭১৬
৫/ইমাম আইনী (رحمة الله) তাঁর ‘উমদাতুল কারী’ কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ উমদাতুল কারী-৭/১৭৮
৬/ইমাম সুয়ুতী (رحمة الله) তাঁর ‘আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
তথ্যসূত্রঃ আল মাসাবীহু ফী সালাতিত তারাওয়ীহ-২৮
৭/ইমাম মুল্লা আলী কারী (رحمة الله) তাঁর ‘শারহুল মুয়াত্তা’ নামক কিতাবে এটাকে সহীহ বলেছেন।
৮/ ইমাম নীমাওয়ী (رحمة الله) তাঁর ‘আসারুস সুনান’ নামক কিতাবে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
২০ রাকাতের পক্ষের হাদীসটি নিয়ে আলবানী সাহেবের অভিযোগঃ
আলবানী বলেন, হাদীসটির বর্ণনাকারী ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (رحمة الله)কে নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (র) বলেছেন, তিনি মুনকারুল হাদীস। ইমাম যাহাবী বলেছেন, তার রেওয়ায়াতে ইদতেরাব রয়েছে। একবার তিনি বলেছেন, ২১ রাকাতের কথা, আবার অন্যস্থানে তিনি বলেছেন ২৩ রাকাতের কথা। তাই উনার কথা গ্রহনযোগ্য নয়।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রথম জবাবঃ
এ অভিযোগ মোটেও গ্রহনযোগ্য নয়, তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনে ও নেই, তবে এক্ষেত্রে আমাদের জবাব হচ্ছে, কোন একটি হাদীসের অর্থ যখন সকলের নিকট গ্রহণীয় হয়ে যায়, তখন সে হাদিসের সনদের বিশুদ্ধতার প্রয়োজন হয় না। যেমনভাবে ইয়াযিদ বিন খুসাইফা (رحمة الله) এর হাদীস। এ হাদীসের অর্থ এতই গ্রহণযোগ্য যে এর সনদের অনুসরণের প্রয়োজন হয় না।
কয়েকটি দালিলিক উদাহরণঃ
ইমাম খাতীব বাগদাদী “কাযা” সংক্রান্ত মুয়ায (رضي الله عنه) এর হাদীস সম্পর্কে বলেন, ‘আহলে ইলম এ হাদিসের অর্থ কবুল করেছেন এবং এর দ্বারা দলীল প্রদান করেছেন’। যদিও এর সনদ বিশুদ্ধ নয়।
তথ্যসূত্রঃ
১/আল ফাকীহু ওয়াল মুতাফাক্কিহু
২/আত তালখীসুল হাবীর- ৪/৮৩
৩/আল মুগনী-৯/৫৩
ইমাম সুয়ূতী বলেন, কোন হাদিসের সনদ বিশুদ্ধ না হলে যদি মানুষ এর অর্থকে কবুল দ্বারা তালাক্কী করে, তবে সে হাদীসকে সহীহ বলে হুকুম দেয়া হয়।
তথ্যসূত্রঃ তাদরীবুর রাওয়ী ফী শারহি তাকরীবিন নাওয়ায়ী- ৬০
ইমাম ইবনু আব্দিল বার ‘আল ইসতিযকার’ নামক কিতাবে বলেন, ইমাম বুখারী (رحمة الله) ‘বাহর’ এর হাদিসকে (সমুদ্রের পানি পবিত্র) সহীহ বলেছেন, অথচ হাদীস বিশারদগণ এর সনদকে বিশুদ্ধ বলেন নি।
তথ্যসূত্রঃ আল ইসতিযকার, ইমাম ইবনু আব্দিল বার, ৫/১৫৭
**ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) বলেন, হযরত উমার এবং আলী (رضي الله عنه) এবং অন্যান্য সাহাবীদের থেকে বর্ণিত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের উপর অধিকাংশ উলামায়ে কেরামগণ একমত হয়েছেন।
এমন কথাই বলেছেনঃ ইমাম সুফিয়ান সাওরী (رحمة الله) ইমাম ইবনুল মুবারাক (رحمة الله), ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله), তিনি বলেন, এভাবেই আমি মাক্কা মুকাররামাতে লোকজনকে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত পড়তে দেখেছি।
তথ্যসূত্রঃ
জামিউত তিরমিযি।
১/শারহুস সুন্নাহ-৪/১২৩
২/আল মাজমু-৪/৩১
৩/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫
৪/ফাতহুল বারী- ৪/২৫৩
☛ইমাম ইবনু রাশীদ বলেন,
ইমাম মালিকের দুটি কাওলের একটি, ইমাম আবু হানিফা, শাফেয়ী, আহমাদ, এবং আবু দাঊদ (رحمة الله) সবাই বিতির ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে রায় প্রদান করেছেন। তথ্যসূত্রঃ বিদায়াতুল মুজতাহিদ ।
☛ইমাম ইবনু আব্দিল বার (رحمة الله) বলেন, এটা হচ্ছে জমহুর (অধিকাংশ) উলামাদের মত। এবং আমাদের নিকট ও এটাই চুড়ান্ত রায়।
☛হাফিয ইবনু ইরাকী (رحمة الله) ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন, ২০ রাকাতের এ মতটি ই গ্রহন করেছেন ইমাম আবু হানীফা, শাফেয়ী, আহমাদ এবং জমহুর উলামায়ে কেরাম।
তথ্যসূত্রঃ ১/তারহুত তাছরীব
২/আল মাজমু-৪/৩১
৩/শারহু মুনতাহাল ইরাদাত-১/২৩১
☛ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ ও একই কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন, এটা সহীহ সুত্রে প্রমাণিত যে রামাদান মাসে হযরত উবাই বিন কা’ব (رضي الله عنه) মানুষদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করতেন, এবং তিন রাকাত বিতির সালাত আদায় করতেন।এবং অনেক উলামায়ে কেরাম এটাকে সুন্নাহ বলে ফতোয়া দিয়েছেন, যেহেতু উবাই বিন কা’ব (رضي الله عنه) মুহাজির এবং আনসার সাহাবীদেরকে নিয়ে এরকম ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। তখন কেউ এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেন নি।
তথ্যসূত্রঃ মাজমু উ ফাতাওয়া-৩২/১১৩
☛ওয়াহাবি মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ বিন আব্দিল ওয়াহহাব নজদীর ও একই কথাঃ “উমার (رضي الله عنه) এর যামানায় উবাই বিন কা’ব (رضي الله عنه) এর ইমামতিতে ২০ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করা হত”।
তথ্যসূত্রঃ ১/মাজমু উল ফাতাওয়া আল নাজদিয়্যাহ
২/মুখতাসারুল ইনসাফ ওয়াশ শারহিল কাবীর- ১/১৫৭
➥আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দ্বিতীয় জবাবঃ
ইমাম আবু দাউদ থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে যে, ইমাম আহমাদ (رحمة الله) তাঁকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। কিন্তু ইমাম যাহাবী বলেছেন, আসরাম (رحمة الله) এর বর্ণনা থেকে ইমাম আহমাদ (رحمة الله) তাঁকে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও যেসকল ইমামগন তাঁকে সিকাহ বলেছেন, তাদের কথা উল্লেখ করছি-
১/ ইমাম আবু হাতিম (رحمة الله) তাঁকে সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
২/ ইমাম ইবনু হিব্বান নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের নিয়ে লেখা কিতাব ‘কিতাবুস সিকাত’ এ তাঁর নাম উল্লেখ করেছেন।
৩/ ইবনু মায়ীন (رحمة الله) বলেছেন, তিনি সিকাহ। তাঁর কথা নির্দ্বিধায় দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।
৪/ ইমাম নাসাঈ (رحمة الله) তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
৫/ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) ‘আল কাশিফ’ নামক কিতাবে তাঁর নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, বলেছেন, তিনি সিকাহ।
৬/ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
৭/ ইমাম ইবনু শাহিন (رحمة الله) তাঁকে কখনো বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য। আবার কখনো বলেছেন, আমি তাঁকে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানিনা।
বিস্তারিত জানতে রেফারেন্সগুলো দেখুন-
১/ তারীখু আসমা ইস সিফাত-২৫৬-২৫৮
২/ মীযানুল ই’তিদাল-৪/৪৩০
৩/ তাকরীবুত তাহযীব- ২/৩৬৪-৩৬৭
আর ইমাম আহমাদের একটি মন্তব্য যে, ইয়াযিদ বিন খুসাইফা (رحمة الله) মুনকারুল হাদীস যা আলবানী সাহেব উল্লেখ করে এবং কারণ দেখিয়ে ঐ হাদিসটিকে বাতিল বলে ঘোষনা দিলেন, তাঁর জবাব আমরা ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) এর একটি কাওল দিয়ে প্রদান করবো।
ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) এ বর্ণনাটি উল্লেখ করে বলেন, মূলতঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (رحمة الله) ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (رحمة الله) এর ব্যাপারে ‘মুনকারুল হাদীস’ এজন্যই বলেছেন, কারণ ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (رحمة الله) ছিলেন হাদীসের ব্যাপারে তাঁর সমকালীনদের চেয়ে ব্যতিক্রম। আর এ অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম আহমাদ (رحمة الله) তাঁকে মুনকারুল হাদীস হিসেবে মন্তব্য করেছেন। এখানে তিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁর কোন সমালোচনা করেননি।
তথ্যসূত্রঃ ১/ হাদয়্যুস সারী -৪৩৭-৪৫৩
২/ আর রাফউ ওয়াত তাকমীল-১৪৫
৩/ লিসানুল মুহাদ্দিসীন-৫/১৯৪
আলবানীর অভিযোগঃ হাদীসে ইদতেরাব বিদ্যমান-
আলবানী সাহেব ২০ রাকাত তারাবীহ সংক্রান্ত হাদীসকে দুর্বল প্রমাণ করতে গিয়ে বলেছেন, ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ তো একেক সময় একেক কথা বলেছেন, কখনো বলেছেন, তারাবীহ সালাতের রাকাত ২১, আবার কখনো বলেছেন-২৩। সুতরাং তাঁর এমন অবস্থার কারণে তাঁর বর্ণনার হাদীস গ্রহনযোগ্য নয়। বরং ১১ রাকাত তারাবীহ সালাতের হাদীসটিই সহীহ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের জবাবঃ
এক্ষেত্রে আমরা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) এর কথা দিয়ে জবাব দিতে পারি, আর তা হচ্ছে, ২১ আর ২৩- এ সংখ্যার পার্থক্য মূলতঃ তারাবীহ সালাতের সংখ্যার ব্যাপারে নয়, বরং এটা হচ্ছে বিতির সংক্রান্ত। অর্থাৎ তিনি তাঁরা কখনো বিতির পড়েছেন ১ রাকাত, আবার কখনো তিন রাকাত। আর এ কারনেই ২১ এবং ২৩ রাকাতের কথা ইয়াযিদ বিন খুসাইফাহ (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন।
তথ্যসূত্রঃ ফাতহুল বারী-৪/২৫৩
আর এমন ইদতিরাব কোন হাদীসকে দুর্বল বানাতে পারেনা।
তথ্যসূত্রঃ তাদরীবুর রাবী-১/২৬৫
তাছাড়া এটাকে যদি বড় ইস্যু ধরা হয়, তাহলে আলবানী সাহেব নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা খাবেন। এটা অবশ্য একটা মজার কথা। কীভাবে? আলবানী সাহেব ১১ রাকাত তারাবীহ সালাতের পক্ষে যে হাদীসের প্রশংসা করতে করতে পেরেশান, সে হাদীসের বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বিন ইউসুফ (رحمة الله) ও কিন্তু একই কাজ করেছেন! এক রেওয়ায়াতে তিনি বলেছেন ১১ রাকাত, আবার অন্য রেওয়ায়াতে বলেছেন, ১৩ রাকাত!!
বিস্তারিত দেখুন- মুসান্নাফু আব্দির রাযযাক-৪/২৬০
সাহাবায়ে কেরামের আমল নিয়ে আরেকটি কথা বলে শেষ করছি- ইমাম আতা বিন আবী রাবাহ (رحمة الله) বলেন- আমি সাহাবায়ে কেরামকে রামাদান মাসে ২০ রাকাত তারাবী সালাত এবং তিন রাকাত বিতির আদায় করতে পেয়েছি।
তথ্যসূত্রঃ
১/মুখতাসারু কিয়ামিল লাইলি ওয়া কিয়ামি রামাদান- ৯৫
২/ ফাতহুল বারী-৪/২৫৩
ইমাম আতা (رحمة الله) হচ্ছেন একজন প্রসিদ্ধ তাবেয়ী। তিনি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।
তথ্যসূত্রঃ তাকরীবুত তাহযীব-২/২২
আলবানী সাহেবের গুরুতর অভিযোগঃ
রাসুল (ﷺ) ১১ রাকাত তারাবীহ সালাত আদায় করেছেন। এটাই সীমাবদ্ধ। এ সংখ্যাই নির্দিষ্ট। তাই এর থেকে বেশী তারাবীহ সালাত আদায় করা হারাম।
তথ্যসূত্রঃ সালাতুত তারাবীহঃ পেইজ নাম্বার-২৫
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের জবাবঃ
অথচ তাদের সবার গুরু ইবনে তাইমিয়া বলেন,
আর যে ব্যক্তি ধারণা করলো যে, তারাবীহ সালাতের নির্ধারিত সংখ্যা রয়েছে, এ সংখ্যা থেকে বাড়ানো বা কমানো যাবেনা, সে ব্যক্তি ভুল করলো।
তথ্যসূত্রঃ মাজমু উ ফাতাওয়া-২/৪০১
মিস্টার আলবানীর এ কথাটিই প্রমাণ করছে, তিনি একজন জাহিল ছিলেন। হাদীসের পর্যাপ্ত জ্ঞান তার ছিলনা। অথবা উনি মানসিক অসুস্থ।কোন সুস্থ মাথার আলেম এমন কথা বলতে পারেনা, অসম্ভব। আমার এ কথার সত্যতা নিম্নপ্রদত্ত দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
১/ রাসুল (ﷺ) ঐ ১১ রাকাত সালাত আদায় করার আগে অন্যান্য নফল সালাত আদায় করতেন।
দলীল উপস্থাপনা -
☛হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) এশার সালাত আদায় করে আমার ঘরে প্রবেশ করতেন এবং চার রাকাত অথবা ছয় রাকাত সালাত আদায় করতেন। তথ্যসূত্রঃ আবু দাউদ-১৩০৩
☛হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) রাতে যখন নফল সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি দু রাকাত হালকা সালাত (খাফীফাহ) আদায় করতেন। তথ্যসূত্রঃ সহীহ মুসলিম/৭৬৫-৭৬৭
☛হযরত আবু হুরায়রাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (ﷺ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে উঠে সে যেন দু রাকাত হালকা সালাত (নফল) আদায় করে নেয়। তথ্যসূত্রঃ সহীহ মুসলিম/৭৬৮
মনে রাখতে হবে, এ সালাত সমূহ ঐ ১১ রাকাত থেকে বেশী।
তথ্যসূত্রঃ সালাতুত তারাওয়ীহি আকছারা মিন আলফি আম/২০
যাদুল মা’আদ-১/৩২৫-৩২৭
☛হযরত আবু সালামাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)কে রাসুল (ﷺ) এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জবাব দিলেন, রাসুল (ﷺ) ১৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন।
তথ্যসূত্রঃ সহীহ মুসলিম/৭৩৮-১২২০
তাহলে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়ে গেল, রাসুল (ﷺ) এর সালাতের নির্ধারিত সংখ্যা নেই। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংখ্যায় তিনি সালাত আদায় করেছেন।
➥ ১১ রাকাতের হাদীস নিয়ে কিছু কথাঃ
হাদীসঃ আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত,তিনি আম্মাজান আয়েশা (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করলেন ,রামাদান মাসে রাসুল (ﷺ) এর নামাজ কেমন ছিল? উত্তরে তিনি বললেন, রাসুল (ﷺ) রমজানে ও অন্যান্য মাসে বিতির সহ এগার রাকআতের বেশী পড়তেন না। -সহীহ আল বুখারী।
পর্যালোচনা-
মূলতঃ এগারো রাকাতের সালাত তারাবীহ সালাত ছিলনা। এটা ছিল তাহাজ্জুদের সালাত। কারন-
১/ ইমাম বুখারী হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের সালাতের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
কিতাবুত তাহাজ্জুদ বাবু কিয়ামিন নাবিয়্যি (ﷺ) বিল লাইলি ফী রামাদানা ওয়া গাইরিহী।
২/ইমাম মুসলিম সালাতুল লাইল (তাহাজ্জুদ) এর অধ্যায়ে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
অধ্যায়ের নামঃ বাবু সালাতিল লাইল
৩/ ইমাম তিরমিযি জামিউত তিরমিযিতে ও একইভাবে উল্লেখ করেছেন।
অধ্যায়ের নামঃবাবু মা জাআ ফী ওয়াসফি সালাতিন নাবিয়্যি (ﷺ)।
৪/ইমাম আবু দাঊদ সুনানু আবী দাউদে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন।
অধ্যায়ের নামঃ আবওয়াবু কিয়ামিল লাইল।
৫/ইমাম নাসাঈ সুনানু নাসাঈতে হাদীসটিকে তাহাজ্জুদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
দেখুন, কিতাবু কিয়ামিল লাইলি ওয়া তাতাওউইন নাহার।