তারাবিহ বিশ রাকাত নাকি আট রাকাত, প্রশ্ন সেটি নয়।
প্রশ্ন হচ্ছে তারাবিহ আছে কি নেই! ▆
আমরা আহলুস সুন্নাহ বলি তারাবিহ আছে। দাবিদার আহলে হাদিস'র দাবি হল, তারাবিহ নেই। অবশ্য 'নেই' শব্দটি রাফিউল ইয়াদাইনী শায়খ-ইমামরা সরাসরি বলে না। তাহলে তো পাবলিক দৌঁড়ান দেবে। পাবলিককে ২০ রাকাআত তারাবীহ এর আমল থেকে বিভ্রান্ত করতে চান্স (Chance) পাবে না। কথাটি তারা একটু কায়দা করেই বলে।
চলুন দেখি ঘটনাটি তারা কীভাবে ঘটায়!
রাফিউল ইয়াদাইনী কাজ্জাব শায়খেরা তারাবিকে কুপিয়ে বিশ থেকে আট-এ নামিয়ে আনার জন্য সবচে’ বড় গলায় যে হাদিসটি সামনে নিয়ে আসে, সেটি হল উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা থেকে বর্ণিত হাদিস।
ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺍﻝ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ، ﻳﺼﻠﻰ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻰ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭ ﻃﻮﻟﻬﻦ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻰ ﺛﻼﺛﺎ، ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ : ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ! ﺇﻥ ﻋﻴﻨﻰ ﺗﻨﺎﻣﺎﻥ ﻭﻻ ﻳﻨﺎﻡ ﻗﻠﺒﻰ .
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারি, হাদিস নাম্বার- ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯।]
হযরত আম্মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের রমযানের রাতের নামাজ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল।
তিনি বললেন, হুজুর এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না...
হাদিসটি সামনে এনে তারা বলে, আট রাকাত তারাবিহ এবং তিন রাকাত বিতির, ব্যস।
তারা কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে লক্ষ্য করুন।
হযরত আম্মা আয়েশা (রাঃ) কে রমযানের রাতের নামাজ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়েছিল। হযরত আম্মা আয়েশা (রাঃ) বুঝতে পেরেছিলেন প্রশ্নকারী তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পর্কেই জানতে চাইছেন। তাই তিনি তাহাজ্জুদ আট এবং বিতির তিন, মোট এগারো রাকাতের কথা জানিয়েছিলেন। জবাব পেয়ে প্রশ্নকারীও সন্তুষ্ট হয়ে বিদায় নিলেন।
হযরত আম্মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এঁর হাদিসে তাহাজ্জুদের কথাই বলা হয়েছে, এটা কীভাবে প্রমাণীত হয়? লক্ষ্য করি-
এক
_____________
তাহাজ্জুদ নামাযই কি তারাবীহ নামায?
তাদের উল্লিখিত হাদিসেই তাদের জালিয়াতির জবাব আছে।
হযরত আম্মা আয়েশা (রাঃ) এঁর বক্তব্যে সিদ্ধান্তমূলক যে বাক্যটি রয়েছে, রাফিউল ইয়াদাইনীরা সেটা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।
বাক্যটি হচ্ছে-
ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺍﻝ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ
অর্থাৎ : এটি ছিল নবীজির বারো মাসের আমল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কি বারো মাসই তারাবিহ পড়তেন?
- তারা বলবে, 'না'।
- তাহলে কেন বলছো, এটা তারাবিহ সংক্রান্ত হাদিস?
- তারা তখন ইনিয়ে-বিনিয়ে বলবার চেষ্টা করে, নামাজ আট রাকাতই। এগার মাস এটির নাম তাহাজ্জুদ আর রমযানে তারাবিহ।
তার মানে, তারাবিহ নামে আলাদা কোনো নামাজের অস্বিত্বই তারা স্বীকার করতে রাজি নয়। এগার মাসের তাহাজ্জুদ নামাজকে রমযানে তারা তারাবিহ নাম দিয়ে চালিয়ে দিতে চায়। এতে করে অত্যন্ত কৌশলের সাথে তারা দুটো কাজ করতে চায়, তা হল-
০১/ মুসলমানের হাতে 'তারাবিহ' বলে 'তাহাজ্জুদ' ধরিয়ে দিয়ে 'তারাবিহ' পড়া থেকে মুসলমানকে বিরত রাখা।
০২/ রামাযানের মত বরকতময় মাসে মুসলমানকে 'তাহাজ্জুদ' থেকে বঞ্চিত রাখা। কেননা 'তারাবীহ' যখন রমজানে ইশা নামাযের পর পড়ার কথা প্রচার করা হচ্ছে তাহলে রাতের শেষ অংশে আর কিসের 'তাহাজ্জুদ' পড়া হবে! 'তাহাজ্জুদ' পড় না!
এর পরেও কি তারা কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য কী, বুঝতে বাকি থাকে, তাহলে কী আর করা!
দুই
_____________
তারাবিহ কত রাকাত?
এখানে যে ব্যাপারটি মনে রাখতে হবে সেটি হল, যে হাদিসগুলোতে রমযানের রাতের নামাজের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোয় রাকাতের উল্লেখ নেই। যেগুলোয় রাকাতের কথা আছে সেগুলো টাইমের কথা নেই। যে কারণে আট (০৮) এবং বিশ (২০) নিয়ে টানাটানি। আর তারাবিহ সংক্রান্ত যতগুলো হাদিস আছে, কোনোটিতে কিয়ামুল লাইল, কোনোটিতে কিয়ামু রামাযান বলে তারাবিহর কথা বুঝানো হলেও একটি মাত্র হাদিসে তারাবিহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আর সেই হাদিসে বিশ (২০) রাকাতের কথা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। মুসনাদে ইমাম জায়েদ, সাইয়্যিদুনা আলী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস-
ﻋَﻦْ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ، ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ، ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ، " ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡِ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ، ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ، ﻭَﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻛُﻞِّ ﺃَﺭْﺑَﻊِ ﺭَﻛْﻌَﺎﺕٍ ﻓَﻴَﺮْﺟِﻊُ ﺫُﻭ ﺍﻟْﺤَﺎﺟَﺔِ ، ﻭَﻳَﺘَﻮَﺿَّﺄُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ، ﻭَﺃَﻥْ ﻳُﻮﺗِﺮَ ﺑِﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺣِﻴﻦَ ﺍﻟِﺎﻧْﺼِﺮَﺍﻑِ " .
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ : ﻣﺴﻨﺪ ﺯﻳﺪ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﻰ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ
অর্থাৎ : হযরত আলী (রাঃ) লোকজনকে রমযানে রাতের নামাজ বা তা তারাবিহ সম্বন্ধে নির্দেশ দিতে গিয়ে বললেন, এই নামাজ বিশ রাকাত পড়বে, প্রতি দু’ রাকাত পরপর সালাম ফিরাবে এবং প্রতি চার রাকাত শেষ করে নতুন চার রাকাত শুরু করার মধ্যেখানে বিশ্রাম নেবে...
সকল হাদিসের কিতাব সামনে নিলে এই একটি মাত্র হাদিসই পাওয়া যায় যেখানে তারাবিহ শব্দ ( ﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ) এবং সাথে রাকাআত সংখ্যাও ( ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ) বলা আছে।
আচ্ছা বিতর্কের বাইরে বেরুনোর জন্যে ধরে নিলাম আট (০৮) রাকাআতের হাদিসও আছে বিশ (২০) রাকাআতের হাদিসও আছে। এখন উপায় কী?
এখানে মৌলিকভাবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, এর আগেও বলেছি কথাটি।
কোরআন-হাদিসে থাকলেই শুধু হয় না। জানা লাগে সেটা আমভাবে আমলযোগ্য কিনা! সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিনা!
তা নাহলে, কোরআনে তো বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের ক্বিবলা' বলা আছে। এখন কি সেদিকে নামাজ পড়লে ঠিক হবে?
- না।
কেনো নয়?
- কারণ, এটা রহিত হয়ে গেছে।
হাদিস শরীফে, বরং সহিই বুখারিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করার হাদিস আছে। সাধারণভাবে কি দাঁড়িয়ে পেশাব করা যাবে?
- না।
কেনো নয়?
- কারণ, সেটি বিশেষ অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট।
- কোরআনে কারীমে পরিষ্কার বলা আছে, 'মুশরিকীনকে যেখানে পাও, হত্যা করো। এটিই কি ইসলামের বিধান?
- জি না।
- না কেনো?
- কারণ, এই আয়াতের কার্যকারিতা রহিত হয়ে গেছে।
__________ এমন উদাহরণের অভাব নেই।
তার মানে, কোরআন-হাদিসে কিছু লেখা দেখলেই লাফ দিয়ে উঠলে হবে না। সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু যাচাই করতে হবে। দেখতে হবে কোনটা নাসিখ এবং কোনটি মনসুখ। কোন হাদিস আমলযোগ্য আর কোনটি রহিত। আর এটা জানার দুই উপায়।
০১/
যদি নবীজি নিজে সমাধান দিয়ে যান, তাহলে তো আর ঝামেলায় নাই।
০২/
অথবা দেখতে হবে সাহাবায়ে কেরাম কোনটিকে আমলে নিয়েছিলেন।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তামাম (সকল) সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারাবিহ বিশ রাকাত।
আলী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জানিয়েছেন, তারাবিহ বিশ রাকাত। এরপরে যারা আটের গান গাইবে, তাদের পক্ষ থেকে পরিষ্কার ঘোষণা আসা দরকার আমরা উমর-আলীর কথা বিশ্বাস করি না!
বিশ্বনবীর নির্দেশনা, 'আমার পরে আমার এবং আবু বকর, উমর, উসমান, আলীর সিদ্ধান্ত মেনে নিও'- নবীর এই কথা আমরা মানি না।
তিন
______________
আট রাকাতকে তারাবিহই বলা যাবে না
বাংলা উচ্চারণে আমরা তারাবিহ বলি। শব্দটি আসলে তারাউয়ীহ। তারাউয়ীহ তারউয়িহাতুন শব্দের বহূবচন। তারউয়িহাতুন অর্থ বিশ্রাম। তারাউয়ীহ মানে বিশ্রামসমূহ।
বাংলা বচন দুই প্রকার, একবচন, বহূবচন। ইংরেজিতেও দুই প্রকার, সিঙ্গুলার, প্লুরাল।
কিন্তু আরবিতে বচন মোট তিন প্রকার। ওয়াহিদ তাসনিয়া, জমা, একবচন দুইবচন এবং বহুবচন।
বাচনিক ব্যাখ্যার কারণ হল এই,
তারাবিহকে তারাবিহ বলা হয় কারণ, এই নামাজ বিশ্রাম করে করে পড়া লাগে। প্রতি চার রাকাত পরপর বিশ্রাম নিয়ে দুঅা' পড়া হয়।
একটি বিশ্রাম হলে সেটিকে আরবিতে বলা যাবে 'তারউয়িহাতুন', দুই বিশ্রামকে 'তারউয়ীহাতান' এবং কমপক্ষে তিনটি বিশ্রাম নেয়া হলে তবেই তাকে 'তারাবিহ' বলা যাবে।
এখন কেউ যদি বলে তারাবিহ চার রাকাত, তাহলে সে তারাবিহ অর্থই বুঝেনি কারণ, সেটার নাম তখন হবে 'তারউহাতুন'।
কেউ যদি বলে তারাবিহ আট রাকাত, তাহলে সেটাকে 'তারাবিহ' না বলে বলতে হবে 'তারউয়িহাতান'। কেউ যদি বলে বারো রাকাত, তাহলেও সেটাও তারাবিহ হবে না।
ব্যাকরণিক-ভাবে তিন বিশ্রাম অর্থে বারো রাকাতে তারাবিহ শব্দের প্রয়োগ শুদ্ধ হলেও সেটাকেও মূলত তারাবিহ বলা যাবে না, কারণ-
তারাবিকে তারাবিহ বলতে হলে কমপক্ষে চারটি বিশ্রাম নেওয়া লাগবে। আলী রাযিআল্লাহু তা’আলা বর্ণিত হাদিসে লক্ষ্য করে থাকবেন বাক্যটি হচ্ছে-
ﻭَﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ ﻣَﺎﺑَﻴْﻦَ ﻛُﻞِّ ﺃَﺭْﺑَﻊِ ﺭَﻛْﻌَﺎﺕٍ
মানে, দু’টি চার রাকাতের মধ্যেখানের বিশ্রামকে তারউয়িহা বলা হয়। এই অর্থে কম করে হলেও ১৬ রাকাত না হলে সেখানটায় তারাবিহ শব্দের প্রযোগই সঠিক হয় না।
অতএব, তারাবিহ আট রাকাত বলার কোনো চান্সই নাই।
চার
______________
রাফিউল ইয়াদাইনীদের পাঁচ কাজঃ
আসলে রাফিউল ইয়াদাইনীরা যতই নবীর হাদিস নবীর হাদিস বলুক, আমলের ক্ষেত্রে দেখা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের যে অংশ তাদের কাছে পছন্দের মনে হয়, সেটুকু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে নেয়, বাকি যেটুকু যেখান থেকে নিলে সুবিধা সেখান থেকেই নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে তারা তাদের মনগড়া মাজহাব দাঁড় করিয়ে দেয়।
১. তারা আট রাকাত তথা-কথিত তারাবিহ পড়ে।
২. পুরো রমযান তথা-কথিত তারাবিহ পড়ে।
৩. তাদের তথা-কথিত তারাবিতে ক্বুরআনুল কারীম খতম করে।
৪. জামাতের সাথে তথা-কথিত তারাবিহ আদায় করে।
৫. মসজিদে তথা-কথিত তারাবিহ আদায় করে।
তাদেরকে আমরা বলি, তোমরা তোমাদের এই পাঁচটি কাজের পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হাদিস উপস্থাপন করো। তোমরা তো সহিহ হাদিস সহিই হাদিস জিকির করো। আমরা তোমাদের সহজ সুযোগ দেই। শত শত হাদিসের কিতাব থেকে একটা জয়ীফ হাদিসই দেখাও। আচ্ছা একটি জাল হাদিসই দেখিয়ে দাও। যদি দেখাতে না পারো, তাহলে তোমাদের তথা-কথিত সকল কথা বন্ধ কর, আল্লাহকে ভয় কর।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।
প্রশ্ন হচ্ছে তারাবিহ আছে কি নেই! ▆
আমরা আহলুস সুন্নাহ বলি তারাবিহ আছে। দাবিদার আহলে হাদিস'র দাবি হল, তারাবিহ নেই। অবশ্য 'নেই' শব্দটি রাফিউল ইয়াদাইনী শায়খ-ইমামরা সরাসরি বলে না। তাহলে তো পাবলিক দৌঁড়ান দেবে। পাবলিককে ২০ রাকাআত তারাবীহ এর আমল থেকে বিভ্রান্ত করতে চান্স (Chance) পাবে না। কথাটি তারা একটু কায়দা করেই বলে।
চলুন দেখি ঘটনাটি তারা কীভাবে ঘটায়!
রাফিউল ইয়াদাইনী কাজ্জাব শায়খেরা তারাবিকে কুপিয়ে বিশ থেকে আট-এ নামিয়ে আনার জন্য সবচে’ বড় গলায় যে হাদিসটি সামনে নিয়ে আসে, সেটি হল উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা থেকে বর্ণিত হাদিস।
ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ : ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺍﻝ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ، ﻳﺼﻠﻰ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻰ ﺃﺭﺑﻌﺎ، ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭ ﻃﻮﻟﻬﻦ، ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻰ ﺛﻼﺛﺎ، ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ : ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ؟ ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ! ﺇﻥ ﻋﻴﻨﻰ ﺗﻨﺎﻣﺎﻥ ﻭﻻ ﻳﻨﺎﻡ ﻗﻠﺒﻰ .
[গ্রন্থ সূত্রঃ বুখারি, হাদিস নাম্বার- ১১৪৭, ২০১৩, ৩৫৬৯।]
হযরত আম্মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লামের রমযানের রাতের নামাজ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হল।
তিনি বললেন, হুজুর এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না...
হাদিসটি সামনে এনে তারা বলে, আট রাকাত তারাবিহ এবং তিন রাকাত বিতির, ব্যস।
তারা কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে লক্ষ্য করুন।
হযরত আম্মা আয়েশা (রাঃ) কে রমযানের রাতের নামাজ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হয়েছিল। হযরত আম্মা আয়েশা (রাঃ) বুঝতে পেরেছিলেন প্রশ্নকারী তাহাজ্জুদের নামাজ সম্পর্কেই জানতে চাইছেন। তাই তিনি তাহাজ্জুদ আট এবং বিতির তিন, মোট এগারো রাকাতের কথা জানিয়েছিলেন। জবাব পেয়ে প্রশ্নকারীও সন্তুষ্ট হয়ে বিদায় নিলেন।
হযরত আম্মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এঁর হাদিসে তাহাজ্জুদের কথাই বলা হয়েছে, এটা কীভাবে প্রমাণীত হয়? লক্ষ্য করি-
এক
_____________
তাহাজ্জুদ নামাযই কি তারাবীহ নামায?
তাদের উল্লিখিত হাদিসেই তাদের জালিয়াতির জবাব আছে।
হযরত আম্মা আয়েশা (রাঃ) এঁর বক্তব্যে সিদ্ধান্তমূলক যে বাক্যটি রয়েছে, রাফিউল ইয়াদাইনীরা সেটা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।
বাক্যটি হচ্ছে-
ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺍﻝ ﻓﻰ ﻏﻴﺮﻩ
অর্থাৎ : এটি ছিল নবীজির বারো মাসের আমল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম কি বারো মাসই তারাবিহ পড়তেন?
- তারা বলবে, 'না'।
- তাহলে কেন বলছো, এটা তারাবিহ সংক্রান্ত হাদিস?
- তারা তখন ইনিয়ে-বিনিয়ে বলবার চেষ্টা করে, নামাজ আট রাকাতই। এগার মাস এটির নাম তাহাজ্জুদ আর রমযানে তারাবিহ।
তার মানে, তারাবিহ নামে আলাদা কোনো নামাজের অস্বিত্বই তারা স্বীকার করতে রাজি নয়। এগার মাসের তাহাজ্জুদ নামাজকে রমযানে তারা তারাবিহ নাম দিয়ে চালিয়ে দিতে চায়। এতে করে অত্যন্ত কৌশলের সাথে তারা দুটো কাজ করতে চায়, তা হল-
০১/ মুসলমানের হাতে 'তারাবিহ' বলে 'তাহাজ্জুদ' ধরিয়ে দিয়ে 'তারাবিহ' পড়া থেকে মুসলমানকে বিরত রাখা।
০২/ রামাযানের মত বরকতময় মাসে মুসলমানকে 'তাহাজ্জুদ' থেকে বঞ্চিত রাখা। কেননা 'তারাবীহ' যখন রমজানে ইশা নামাযের পর পড়ার কথা প্রচার করা হচ্ছে তাহলে রাতের শেষ অংশে আর কিসের 'তাহাজ্জুদ' পড়া হবে! 'তাহাজ্জুদ' পড় না!
এর পরেও কি তারা কারা এবং তাদের উদ্দেশ্য কী, বুঝতে বাকি থাকে, তাহলে কী আর করা!
দুই
_____________
তারাবিহ কত রাকাত?
এখানে যে ব্যাপারটি মনে রাখতে হবে সেটি হল, যে হাদিসগুলোতে রমযানের রাতের নামাজের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোয় রাকাতের উল্লেখ নেই। যেগুলোয় রাকাতের কথা আছে সেগুলো টাইমের কথা নেই। যে কারণে আট (০৮) এবং বিশ (২০) নিয়ে টানাটানি। আর তারাবিহ সংক্রান্ত যতগুলো হাদিস আছে, কোনোটিতে কিয়ামুল লাইল, কোনোটিতে কিয়ামু রামাযান বলে তারাবিহর কথা বুঝানো হলেও একটি মাত্র হাদিসে তারাবিহ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আর সেই হাদিসে বিশ (২০) রাকাতের কথা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। মুসনাদে ইমাম জায়েদ, সাইয়্যিদুনা আলী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস-
ﻋَﻦْ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﻋﻠﻲ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ، ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ، ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻲٍّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ، " ﺃَﻧَّﻪُ ﺃَﻣَﺮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﺎﻟﻨَّﺎﺱِ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡِ ﻓِﻲ ﺷَﻬْﺮِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺃَﻥْ ﻳُﺼَﻠِّﻲ ﺑِﻬِﻢْ ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺭَﻛْﻌَﺔً ، ﻳُﺴَﻠِّﻢُ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺭَﻛْﻌَﺘَﻴْﻦِ ، ﻭَﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﻛُﻞِّ ﺃَﺭْﺑَﻊِ ﺭَﻛْﻌَﺎﺕٍ ﻓَﻴَﺮْﺟِﻊُ ﺫُﻭ ﺍﻟْﺤَﺎﺟَﺔِ ، ﻭَﻳَﺘَﻮَﺿَّﺄُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ، ﻭَﺃَﻥْ ﻳُﻮﺗِﺮَ ﺑِﻬِﻢْ ﻣِﻦْ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﺣِﻴﻦَ ﺍﻟِﺎﻧْﺼِﺮَﺍﻑِ " .
ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ : ﻣﺴﻨﺪ ﺯﻳﺪ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻓﻰ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ
অর্থাৎ : হযরত আলী (রাঃ) লোকজনকে রমযানে রাতের নামাজ বা তা তারাবিহ সম্বন্ধে নির্দেশ দিতে গিয়ে বললেন, এই নামাজ বিশ রাকাত পড়বে, প্রতি দু’ রাকাত পরপর সালাম ফিরাবে এবং প্রতি চার রাকাত শেষ করে নতুন চার রাকাত শুরু করার মধ্যেখানে বিশ্রাম নেবে...
সকল হাদিসের কিতাব সামনে নিলে এই একটি মাত্র হাদিসই পাওয়া যায় যেখানে তারাবিহ শব্দ ( ﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ) এবং সাথে রাকাআত সংখ্যাও ( ﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ) বলা আছে।
আচ্ছা বিতর্কের বাইরে বেরুনোর জন্যে ধরে নিলাম আট (০৮) রাকাআতের হাদিসও আছে বিশ (২০) রাকাআতের হাদিসও আছে। এখন উপায় কী?
এখানে মৌলিকভাবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, এর আগেও বলেছি কথাটি।
কোরআন-হাদিসে থাকলেই শুধু হয় না। জানা লাগে সেটা আমভাবে আমলযোগ্য কিনা! সেটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিনা!
তা নাহলে, কোরআনে তো বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের ক্বিবলা' বলা আছে। এখন কি সেদিকে নামাজ পড়লে ঠিক হবে?
- না।
কেনো নয়?
- কারণ, এটা রহিত হয়ে গেছে।
হাদিস শরীফে, বরং সহিই বুখারিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করার হাদিস আছে। সাধারণভাবে কি দাঁড়িয়ে পেশাব করা যাবে?
- না।
কেনো নয়?
- কারণ, সেটি বিশেষ অবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট।
- কোরআনে কারীমে পরিষ্কার বলা আছে, 'মুশরিকীনকে যেখানে পাও, হত্যা করো। এটিই কি ইসলামের বিধান?
- জি না।
- না কেনো?
- কারণ, এই আয়াতের কার্যকারিতা রহিত হয়ে গেছে।
__________ এমন উদাহরণের অভাব নেই।
তার মানে, কোরআন-হাদিসে কিছু লেখা দেখলেই লাফ দিয়ে উঠলে হবে না। সংশ্লিষ্ট অনেক কিছু যাচাই করতে হবে। দেখতে হবে কোনটা নাসিখ এবং কোনটি মনসুখ। কোন হাদিস আমলযোগ্য আর কোনটি রহিত। আর এটা জানার দুই উপায়।
০১/
যদি নবীজি নিজে সমাধান দিয়ে যান, তাহলে তো আর ঝামেলায় নাই।
০২/
অথবা দেখতে হবে সাহাবায়ে কেরাম কোনটিকে আমলে নিয়েছিলেন।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তামাম (সকল) সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তারাবিহ বিশ রাকাত।
আলী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু জানিয়েছেন, তারাবিহ বিশ রাকাত। এরপরে যারা আটের গান গাইবে, তাদের পক্ষ থেকে পরিষ্কার ঘোষণা আসা দরকার আমরা উমর-আলীর কথা বিশ্বাস করি না!
বিশ্বনবীর নির্দেশনা, 'আমার পরে আমার এবং আবু বকর, উমর, উসমান, আলীর সিদ্ধান্ত মেনে নিও'- নবীর এই কথা আমরা মানি না।
তিন
______________
আট রাকাতকে তারাবিহই বলা যাবে না
বাংলা উচ্চারণে আমরা তারাবিহ বলি। শব্দটি আসলে তারাউয়ীহ। তারাউয়ীহ তারউয়িহাতুন শব্দের বহূবচন। তারউয়িহাতুন অর্থ বিশ্রাম। তারাউয়ীহ মানে বিশ্রামসমূহ।
বাংলা বচন দুই প্রকার, একবচন, বহূবচন। ইংরেজিতেও দুই প্রকার, সিঙ্গুলার, প্লুরাল।
কিন্তু আরবিতে বচন মোট তিন প্রকার। ওয়াহিদ তাসনিয়া, জমা, একবচন দুইবচন এবং বহুবচন।
বাচনিক ব্যাখ্যার কারণ হল এই,
তারাবিহকে তারাবিহ বলা হয় কারণ, এই নামাজ বিশ্রাম করে করে পড়া লাগে। প্রতি চার রাকাত পরপর বিশ্রাম নিয়ে দুঅা' পড়া হয়।
একটি বিশ্রাম হলে সেটিকে আরবিতে বলা যাবে 'তারউয়িহাতুন', দুই বিশ্রামকে 'তারউয়ীহাতান' এবং কমপক্ষে তিনটি বিশ্রাম নেয়া হলে তবেই তাকে 'তারাবিহ' বলা যাবে।
এখন কেউ যদি বলে তারাবিহ চার রাকাত, তাহলে সে তারাবিহ অর্থই বুঝেনি কারণ, সেটার নাম তখন হবে 'তারউহাতুন'।
কেউ যদি বলে তারাবিহ আট রাকাত, তাহলে সেটাকে 'তারাবিহ' না বলে বলতে হবে 'তারউয়িহাতান'। কেউ যদি বলে বারো রাকাত, তাহলেও সেটাও তারাবিহ হবে না।
ব্যাকরণিক-ভাবে তিন বিশ্রাম অর্থে বারো রাকাতে তারাবিহ শব্দের প্রয়োগ শুদ্ধ হলেও সেটাকেও মূলত তারাবিহ বলা যাবে না, কারণ-
তারাবিকে তারাবিহ বলতে হলে কমপক্ষে চারটি বিশ্রাম নেওয়া লাগবে। আলী রাযিআল্লাহু তা’আলা বর্ণিত হাদিসে লক্ষ্য করে থাকবেন বাক্যটি হচ্ছে-
ﻭَﻳُﺮَﺍﻭِﺡُ ﻣَﺎﺑَﻴْﻦَ ﻛُﻞِّ ﺃَﺭْﺑَﻊِ ﺭَﻛْﻌَﺎﺕٍ
মানে, দু’টি চার রাকাতের মধ্যেখানের বিশ্রামকে তারউয়িহা বলা হয়। এই অর্থে কম করে হলেও ১৬ রাকাত না হলে সেখানটায় তারাবিহ শব্দের প্রযোগই সঠিক হয় না।
অতএব, তারাবিহ আট রাকাত বলার কোনো চান্সই নাই।
চার
______________
রাফিউল ইয়াদাইনীদের পাঁচ কাজঃ
আসলে রাফিউল ইয়াদাইনীরা যতই নবীর হাদিস নবীর হাদিস বলুক, আমলের ক্ষেত্রে দেখা যায় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের যে অংশ তাদের কাছে পছন্দের মনে হয়, সেটুকু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে নেয়, বাকি যেটুকু যেখান থেকে নিলে সুবিধা সেখান থেকেই নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে তারা তাদের মনগড়া মাজহাব দাঁড় করিয়ে দেয়।
১. তারা আট রাকাত তথা-কথিত তারাবিহ পড়ে।
২. পুরো রমযান তথা-কথিত তারাবিহ পড়ে।
৩. তাদের তথা-কথিত তারাবিতে ক্বুরআনুল কারীম খতম করে।
৪. জামাতের সাথে তথা-কথিত তারাবিহ আদায় করে।
৫. মসজিদে তথা-কথিত তারাবিহ আদায় করে।
তাদেরকে আমরা বলি, তোমরা তোমাদের এই পাঁচটি কাজের পক্ষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হাদিস উপস্থাপন করো। তোমরা তো সহিহ হাদিস সহিই হাদিস জিকির করো। আমরা তোমাদের সহজ সুযোগ দেই। শত শত হাদিসের কিতাব থেকে একটা জয়ীফ হাদিসই দেখাও। আচ্ছা একটি জাল হাদিসই দেখিয়ে দাও। যদি দেখাতে না পারো, তাহলে তোমাদের তথা-কথিত সকল কথা বন্ধ কর, আল্লাহকে ভয় কর।
আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।