রোজার নিয়ত করার বিধান
রোজার নিয়ত করা জরুরি এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রতিটি ইবাদতে যেমন নিয়ত করা শর্ত তেমনি রোজাতেও নিয়ত করা ফরজ এবং রোজা সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত। নিয়ত ছাড়া রোজা সহীহ হবে না।
◾রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন -
‘إنما الأعمال بالنيات وإنما لكل امرئ ما نوى’
নিশ্চয় সমস্ত আমল নিয়তের উপরই নির্ভরশীল আর প্রতিটি ব্যক্তিই যা নিয়ত করে তাই সে পায়। (বুখারী)
নিয়তের পদ্ধতি : রোজা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি রোজা শুরু করার সময় অন্তরে উপস্থাপন করবে যে, আমি রমজানের রোজা রাখছি অথবা ক্বাজা রোজা রাখছি কিংবা মান্নত বা কাফ্ফারার রোজা রাখছি।
নিয়ত করার সময়: যে প্রকারের রোজাই হোক না কেন নিয়ত রাত থেকেই করতে হবে। রাতের প্রথম অংশে হতে পারে, মাঝের অংশে হতে পারে অথবা শেষাংশেও হতে পারে।
◾আয়েশা (রা.) হতে মারফু হাদিস বর্ণিত -
যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে-রাতেই রোজার রাখা স্থির করে না, তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।
[দারা কুতনি : ১৭২/২, বায়হাকি ২০২/৪, তিনি বলেন হাদিসটির সকল বর্ণনা কারিই নির্ভরযোগ্য]
◾ইবনে ওমর (রা.)➡ হাফসা (রা.) হতে তিনি➡ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘من لم يبت الصيام قبل الفجر فلا صيام له’
যে ব্যক্তি সুবহে সাদেক উদয় হওয়ার পূর্বে-রাতেই রোজা রাখা স্থির করে না তার রোজা বিশুদ্ধ হয় না।
(আহমাদ ২৮৭/৬, তিরমিজি ৭৩০ আবু দাউদ ২৪৫৪)
নফল রোজার নিয়ত: নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায়ও করা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে নিয়তের সময় পর্যন্ত রোজার পরিপন্থি কোন কাজ যথা খাওয়া পান করা ইত্যাদি তার থেকে সংঘটিত হতে পারবে না।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত,
‘ دخل عليَّ النبي صلى الله عليه ذات يوم فقال “هل عندكم من شيء ؟” فقلنا: لا، قال “فإني إذاً صائم ‘ رواه الجماعة إلا البخاري، [أخرجه مسلم رقم 1154].
একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার নিকট প্রবেশ করে বললেন, তোমার নিকট খাওয়ার কোন কিছু আছে কি? আমি বললাম: না, তখন রাসূলুল্লাহ বললেন, তাহলে আমি রোজা রাখলাম।
হাদিসটি ইমাম বুখারি ছাড়া সবাই বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম, হাদিস নং – ১১৫২)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর খাবার চাওয়া দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি ইতিপূর্ব হতে রোজা রাখার নিয়ত করেননি। আর তাঁর “فإني إذا صائم” বলা প্রমাণ করে, তিনি রোজা আরম্ভ করেছেন দিনের বেলা হতে। এতে বুঝা যায় নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলা করলেও চলবে। সুতরাং এ হাদিসটি পূর্বে উল্লেখিত হাদিস-
‘من لم يبت الصيام قبل طلوع الفجر فلا صيام له’
জন্য খাসকারী। অর্থাৎ সে হাদিসটি ফরজ রোজার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে নফল রোজার ক্ষেত্রে নয়।
নফল রোজার নিয়ত দিনের বেলায় করার বিষয়টি একাধিক সাহাবি হতে বর্ণিত হয়েছে, যেমনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, মুয়াজ বিন জাবাল, হুজাইফা, আবু তালহা, আবু হুরায়রা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. প্রমুখ।