৮ রাক‘আত তারাবীহ দাবীকারী রাফিউল ইয়াদাইনীদের দাবীকৃত দলিল সমুহের খন্ডন।
রাফিউল ইয়াদাইনীদের চতুর্থ দলীলঃ
"হযরত সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. বলেন, হযরত উমর রা. *উবাই বিন কা‘আব রা. ও তামিম দারী রা.*-কে লোকদের নিয়ে ১১ (এগার) রাক‘আত নামায পড়তে আদেশ দিলেন"।
দেখা যাচ্ছে, উক্ত হাদীছটি ২০ রাকাতের দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক।
পরিত্যাক্ত স্ব-শিক্ষিত মুহাদ্দিছ নাসির উদ্দিন আলবানী নিজস্ব মনগড়া নীতি / উসূল অনুযায়ী এই এগার রাকাতের রেওয়ায়তকে উক্ত বিশ রাকাতের রেওয়ায়তের উপর প্রাধান্য দিয়েছে এবং বিশ রাকাতের রেওয়ায়তকে ‘যয়ীফ’ (দুর্বল) বলে মন্তব্য করেছে।
রাফিউল ইয়াদাইনীরা আলবানীর মন্তব্যকে বাহ্! বাহ্! দিয়ে এটাকে তাদের প্রধান দলীল হিসেবে পুঁজি বানিয়েছে। তাই আলবানীর তাহকিক সম্বন্ধে কিছু জরুরী কথা বলা আবশ্যক। সাথে সাথে তার উক্ত মন্তব্যকে বাস্তব (Genuine) তাহকীক দ্বারা খন্ডানো প্রয়োজন মনে করছি।
নাসির উদ্দিন আলবানীর তাহকিক / সহীহ্ নির্ধারন বা তদন্তের জঘন্যতা সম্বন্ধে জানতে এই লিংক থেকে ঘুরে আসুনঃ
চতুর্থ দলীলের জবাবঃ
যা হোক, এখন আমরা মূল বিষয়ের উপর আলোচনা করছি।
এই হাদিসটি সকল মুহাদ্দিসিনের নিকট গ্রহণযোগ্য ২০ রাকাতের দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক। যদ্দরুন প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য কিছু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে।
তা হলো, রমযানের তারাবীহর ব্যাপারে হাদীছটি *সাহাবী সায়েব বিন ইয়াযিদ রা.* থেকে তিন ব্যক্তি রেওয়ায়ত করেছেন।
যথাঃ
০১. ইয়াযিদ বিন খোসাইফা
০২. হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব
০৩. মুহাম্মদ বিন ইউসুফ।
এই তিন ব্যক্তির রেওয়াতের অবস্থাঃ
০১. ইয়াযিদ বিন খোসাইফা রহ. *সায়েব বিন ইয়াযিদ (রাঃ)* থেকে বিশ রাক‘আত নকল করেছেন। হযরত উমর রা. এঁর যুগে তাঁর হুকুমে মসজিদে নববীতে বিশ রাক‘আত তারাবীহর নামায পড়া হতো। যা ইমাম বাইহাকী রহ. সুনানে কুবরাতে এবং মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছারি লিল বাইহাকীতে এবং মুসনাদে ইবনুস সা’দ ৪১২ পৃষ্ঠায়।
হাদিসটির বিস্তারিত তাহকিক জানতে নিচের লিংকে প্রবেশ করে পড়ুনঃ
▆সলাতিল ক্বিয়ামু রমজান (তারাবীহ) ২০ রাকাআত : ইয়াজিদ বিন খুসায়ফা (রঃ) বর্ণিত হাদিসের বিস্তারিত তাহকিক (Authentcation):
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/
1804218489893588
০২. হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাবের হাদীছ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪ খ- ২৬১ পৃষ্ঠায় তিনি সাহাবী সায়েব বিন ইয়াযিদ থেকে এভাবে নকল করেছেন
ﻛﻨﺎ ﻧﻨﺼﺮﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﮭﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﷲ ﻭﻗﺪ ﺩﻧﺎ ﻓﺮﻭﻉ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﮭﺪ ﻋﻤﺮ ﺛﺎﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ -
অর্থাৎ তিনি সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. থেকে নকল করে বলেছেন, উমর রা. এঁর যুগে তারাবীর নামায পড়তে পড়তে ফজরের নামাযের সময় সন্নিকটে হয়ে যেত এবং উমর রা.এঁর যুগে তারাবীহ ২০ রাক‘আত, বিতির তিন রাক‘আত পড়া হত।
০৩. মুহাম্মদ বিন ইউসুফ হাদিস মুয়াত্তা মালেক ১ম খ- ৩৪১ পৃষ্ঠা এবং সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ ২খ- ৪৯৬ পৃষ্ঠায় সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. থেকে নকল করেছেন, উমর রা. উবাই বিন কা’ব রা. এবং তামীমে দারী রা.কে আদেশ দিয়েছেন, মানুষকে এগার রাক‘আত তারাবীহর নামায পড়ার জন্যে।
এখন আমরা তিন রাবীরই সনদের ওযন যাচাই করার জন্য তাদের অবস্থা পেশ করছি।
০১. ইয়াযিদ বিন খোসাইফার হালত / অবস্থাঃ
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব কিতাবে ৬ষ্ট খ- ২১৪ পৃষ্ঠাতে লিখেছেন, ইয়াযিদ বিন আব্দুল্লাহ বিন খোসাইফা সম্পর্কে আছরমের রেওয়ায়ত অনুযায়ীঃ
ক/ ইমাম আহমদ তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
খ/ ইবনে হাতেম ও নাসাঈ রহ. তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
গ/ আজরী রহ. ইমাম আবু দাউদ রহ. থেকে রেওয়ায়ত করে বলেছেন- ইমাম আহমদ রহ. তাকে ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন।
ঘ/ ইবনে আবী মরিয়ম বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবনে মঈন তাঁকে ‘সেকা’ এবং ‘হুজ্জত’ বলেছেন।
ঙ/ ইবনে সা’দ বলেছেন, তিনি আবেদ’, ‘মুত্তাকি’ ও বেশী হাদীছ রেওয়ায়তকারী এবং ‘ছবত’ ছিলেন।
চ/ ইবনে হিব্বান তাকে ‘সিকা’রাবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ছ/ ইবনে আব্দুল বার বলেছেন, তিনি সেকা এবং মা’মুন ছিলেন।
০২. হারেছ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব এর হালত / অবস্থাঃ
ক/ হাফেয ইবনে হাজার তাকরীবুত তাহযীব ১ম খ- ১৭৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব ‘ছুদুক’ ছিলেন।
খ/ ইবনে হাতেম জরাহ ওয়াত তাদীল কিতাব ৪র্থ খ- ৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব ইলমে হাদিসের একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি।
গ/ আব্দুর রহমান বলেছেন, আমি আমার পিতাকে হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব সম্পর্কে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছেন, হারেস থেকে দারওয়ারদী অনেক মুনকার হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন। তাই তিনি রেওয়ায়তের ব্যাপারে শক্তিশালী ব্যক্তি নন তবে তার হাদীছ লিখা যেতে পারে।
ঘ/ ইমাম আবু যুরআ কে হারেস বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেছেন, তার হাদীছ রেওয়ায়ত করতে কোন সমস্যা নাই।
০৩. মুহাম্মদ বিন ইউসুফের হালত / অবস্থাঃ
ক/ ইমাম যাহাবী “ফি মান লাহুু রেওয়ায়তুন ফিল কুতুবিস সিত্তা” নামক কিতাবের ২য় খ- ২৩২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আব্দুল্লাহ কিনদী ‘সুদুকুন’ ‘মুকিল্লুন’ তথা কম হাদীছ রেওয়ায়তকারী।
খ/ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব কিতাবে লিখেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আব্দুর রহমান বিন হোসাইন থেকে এবং আব্দুর রহমান বিন আম্মার থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি।
গ/ ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ তার সাদৃশ্য ছিলেন।
ঘ/ ইবনে মঈন বলেছেন, আমাকে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেছেন, কোন শাইখকে আমি তার সাদৃশ্য ‘সেকা’ দেখিনি।
ঙ/ ইমাম আহমদ রহ. এবং ইমাম নাসাঈ তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
চ/ ইবনে হিব্বান তাকে সিকাদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
ছ/ ইবনে মাদাইনী বলেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ‘সিকা’ ছিলেন।
জ/ ইবনে শাহীন তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
ঝ/ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব কিতাবের ২য় খ- ১৪৯ পৃষ্ঠাতে আছে, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আব্দুল্লাহ কিনদী ‘সেকা’ এবং ‘সবত’।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, হাদিস শাস্ত্রে স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানী মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়ত অর্থাৎ ১১ রাকাতের রেওয়ায়তকে বিশ রাক‘আত তারাবীহর উপর প্রাধান্য দেয়ার জন্যে বিশ রাকাতের রেওয়ায়তকারী *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* এঁর কিছু মনগড়া ত্রুটি বের করে তাঁর রেওয়ায়তকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
এই আলবানী ইয়াযিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে তিনটি ত্রুটি বের করেছে।
তার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হচ্ছে। আর সাথে ইনশাল্লাহ তা’আলা যথাযথভাবে উত্তরও লিখা হবে।
ত্রুটি ৩টি হলোঃ
১/ আলবানীর আরোপিত প্রথম ত্রুটিঃ
ইয়াযিদ বিন খোসাইফাকে ইমাম আহমদ রহ. মুনকারুল হাদীছ বলেছেন। মুহাদ্দিছীনে কিরামের দৃষ্টিতে যেহেতু মুনকার হাদীছ যয়ীফ (দুর্বল)। তাই তার রেওয়ায়তকারীও যয়ীফ।
এর উত্তরঃ
একটু পূর্বে ইয়াযিদ বিন খোসাইফা সম্পর্কে বড় বড় হাদীছের ইমামগণের প্রশংসা ও মন্তব্য ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এঁর লিখিত তাহযিবুত তাহযিব কিতাবের হাওয়ালা (Reference) দিয়ে লিখা হয়েছে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শাগরেদ আছরম রহ. এঁর সহীহ্ সূত্রে বলা হয়েছে, ইয়াযিদ বিন খোসাইফাকে ইমাম আহমদ রহ. ‘সেকা’ বলেছেন। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য রাবী বলেছেন।
এখন ব্যাপার হল, যদি একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে ভাল-মন্দ দ্বিমূখী মন্তব্য প্রকাশ হয়, তাহলে বিখ্যাত হাদীছ বিশারদগণের উসূল অনুযায়ী দেখতে হবে ঐ রাবীর ব্যাপারে অন্যান্য হাদীছের ইমামগণের মাতামত কি?
*ইয়াযিদ বিন খোসাইফা অধ্যায়ে* যতবার কিতাবের বরাত দিয়ে লিখা হয়েছে, ইয়াজিদ বিন খোসাইফাকে প্রসিদ্ধ ইমামুল হাদীসগণ ‘সেকা’ ‘সবত’ ‘হুজ্জত’ ইত্যাদি উচ্চ উপাধিসমূহ দ্বারা ভূষিত করেছেন। তাই যে রেওয়ায়তে ইমাম আহমদ রহ. ‘সেকা’ বলেছেন, সেটাই প্রযোজ্য হবে। হয়ত তিনি *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* সম্পর্কে প্রথমে কোন হালকা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে ‘মুনকার’ বলেছেন। পরে তাঁর ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়ার পর তাঁকে ‘সেকা’ বলতে বাধ্য হয়েছেন।
তদুপরি আরও একটি সর্বজনস্বীকৃত উসূল / নীতিমালা হলো, **কোন এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে কোন ব্যাপারে বিপরীতমূখী দুই মন্তব্য প্রকাশ হলে ﺍﺫﺍ ﺗﻌﺎﺭﺿﺎ ﺗﺴﺎﻗﻄﺎ এর কায়দা অনুযায়ী উভয় মন্তব্যের কোনটাই গ্রহণযোগ্য হয় না। **
ঐ মর্মে ইয়াজিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে ইমাম আহমদ রহ. এঁর উভয় মন্তব্যকে যদি বাদ দেয়া হয় তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। ইয়াযিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে অন্যান্য বিখ্যাত মুহাদ্দিছীনে কেরাম যে মানসম্পন্ন উপাধিসমূহ দিয়েছেন ঐ গুলোই যথেষ্ট।
পরিত্যাক্ত স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানী উল্লেখিত সর্বজনমান্য উসূলসমূহকে উপেক্ষা (Ignore) করে নিজের মতলব (Motive) হাসিলের জন্য দুর্বল পন্থা অবলম্বন করেছে।
এই আলবানী আরো বলেছে, "আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ব্যাপারে ‘সেকা’ ‘সবত’ উভয় ব্যবহার করেছেন। এটা মুহাদ্দিছীনে কিরামের পরিভাষায় উচ্চ উপাধি। কিন্তু অপর দিকে ইয়াজিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে শুধু ‘সেকা’ বলেছেন। এ কারণেই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়ত ইয়াজিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের উপর প্রাধান্য পাবে"।
অথচ উপরে আলোচনায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী এঁর তাহযিবুত তাহযিব কিতাবের খ- ও পৃষ্ঠা নং উল্লেখ পূর্বক সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি ইয়াযিদ বিন খোসাইফাকে ‘সেকা’ ‘সবত’ ‘হুজ্জত’ বলেছেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আলবানী নিজের দাবী সাব্যস্ত করার জন্যে এত বড় জ্বলন্ত মিথ্যার আশ্রায় নিয়েছে।
তার (আলবানীর) কথা কত দামী তা বিবেচনা করার দায়িত্ব পাঠকবৃন্দের উপর ন্যস্ত করা হলো।
তদুপুরি ইতিপূর্বে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের অধ্যায়ের হাওয়ালা (Reference) দিয়ে লিখা হয়েছে যে, ইমাম যুহরী মুহাম্মদ বিন ইউসুফকে ‘সুদুক’ বলেছেন।
অথচ ‘সুদুক’ এটা প্রথম সারির রাবীর উপাধি নয়। তা দ্বিতীয় সারির উপাধি। যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিবেচনায়ও সাব্যস্ত হয় *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে উচ্চ মাপের রাবী।
আলবানী সব ব্যাপারে চোখবুজে নিজের ভ্রান্তমত প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করেছে।
২/ আলবানীর আরোপিত দ্বিতীয় ত্রুটি হলোঃ
পরিত্যাক্ত অমুহাদ্দিস আলবানী বলেছে, ইয়াযিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের ভিতর এয্তেরাব অর্থাৎ সাংঘর্ষিক বিষয় আছে তথা সায়েব বিন ইয়াযিদ থেকে তার দুই ধরণের রেওয়ায়ত পাওয়া যায়।
যথাঃ
একটি হলো, ২০ রাকাতের,
অপরটি হলো, ২১ রাকাতের ব্যাপারে।
মুহাদ্দিছীনের পরিভাষায় এটাকে এযতেরাব বলা হয়। যে রেওয়ায়তে এযতেরাব পাওয়া যায় তা গ্রহণযোগ্য হয় না। তদুপুরি ইয়াজিদ বিন খোসাইফাকে ২১ রাকাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তিনি ‘হাসিবতু’ শব্দ বলেছেন। অর্থাৎ হতে পারে সায়েব বিন ইয়াজিদ ২১ রাক‘আত বলেছেন। উক্ত শব্দটি রেওয়ায়তের ব্যাপারে অনিশ্চয়তার প্রমাণ দেয়। অথচ রেওয়ায়তের ব্যাপারে রাবীর ইয়াকিন (নিশ্চিত) থাকতে হয়। উল্লেখিত অনিশ্চয়তা ও এযতেরাবের কারণে ইয়াজিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তটি গ্রহণযোগ্য নয়।
এর উত্তর হলোঃ
চতুর আলবানী ইয়াযিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে যে এযতেরাবের দাবী করেছে তা ভিত্তিহীন।
হাদীছের উল্লেখযোগ্য কোন কিতাবে ইয়াযিদ বিন খোসাইফা থেকে ২১ রাক‘আতের রেওয়ায়ত সাব্যস্তই নাই (Not proved)।
আলবানী নিজেও কোন কিতাবের হাওয়ালা (Reference) পেশ করতে পারে নি।
আমাদের ধারণা, আলবানী নিজের দাবী (Claim) ও মতলব (motive) হাসিলের জন্য নিজের পক্ষ থেকে উক্ত রেওয়ায়ত মিছেমিছি (fraudulently) বর্ণনা করেছেন। তদুপুরি ইয়াযিদ বিন খোসাইফার পক্ষ থেকে যদি ২১ রাকাতের রেওয়ায়ত মেনেও নেয়া হয়, তাহলেও এযতেরাব বা সাংঘর্ষিক সাব্যস্ত হবেনা।
কারণ তিনি ২০ রাক‘আত বলেছেন শুধু তারাবীহর ব্যাপারে। আর ২১ রাক‘আত বলেছেন বিতিরসহ তারাবীহর ব্যাপারে। এর মধ্যে কোন সংঘর্ষ নেই। ‘হাসিবতু’ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিতিরের ব্যাপারে। সায়েব বিন ইয়াযিদ বিতির এক রাক‘আত বলেছেন নাকি তিন রাক‘আত বলেছেন, এর মধ্যে সন্দেহ ছিল। তারাবীহ বিশ রাকাতের ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না।
বরং প্রতিপক্ষ মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তে দু’টি এযতেরাব পাওয়া যায়।
তার পক্ষ থেকে যেমনিভাবে মুয়াত্তা মালেকে ১১ রাক‘আত এর রেওয়ায়ত দেখা যায়। তদ্রুপ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর ৪র্থ খ- ২৬০ পৃষ্ঠাতে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ, সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে ২১ রাক‘আত তারাবীহ নকল করেছেন। তোহফাতুল আহওয়াজি শরহে তিরমিযি গাইরে মুকাল্লিদ আলেমের তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তারাবীহ অধ্যায়ে তিনি রেওয়ায়ত করেছেন ১৩ রাক‘আত।
মোদ্দাকথা, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে তিন প্রকারের রেওয়ায়ত পাওয়া গেল- ১১ রাক‘আত, ২১ রাক‘আত, ১৩ রাক‘আত।
যেহেতু এটা মুহাদ্দিছীনে কিরামের নিকট জঘণ্য এযতেরাব। আগে উল্লেখ করা হয়েছে, যে রাবীর রেওয়ায়তের মধ্যে এযতেরাব পাওয়া যায় তার রেওয়ায়ত গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তটি কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আলবানী নিজের পক্ষের রেওয়ায়তের এযতেরাব থেকে চোখবুজে অনর্থক ইয়াযিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের উপর এযতেরাবের অপবাদ চাপানোর হীন চেষ্টা করে ছিলো।
এখন তার মিথ্যা বানোয়াটী পর্যালোচনা (Authentcation) দ্বিপ্রহরের ন্যায় সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেল।
মোবারকপুরীর একটি হাস্যকর খোঁড়া অভিযোগঃ
মোবারকপুরী সাহেব তিরমিযীর শরাহ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ তে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তের এযতেরাবের অভিযোগ খণ্ডানোর জন্যে আরেকটি অকার্যকর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
তা হলো, তিনি বলেছেন শাইখ আব্দুর রাজ্জাক শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। হতে পারে অন্ধ অবস্থায় মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে ২১ রাক‘আত নকল করেছেন। তার উত্তরটি একটি হাস্যকর উত্তর।
কেননা, তার উক্ত উক্তি দ্বারা মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের সকল রেওয়ায়তই তখন গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ, তার প্রত্যেক রেওয়ায়তের ব্যাপারে প্রশ্ন আসতে পারে যে, হতে পারে তিনি অন্ধ অবস্থায় তা নকল করেছেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের খ- ও পৃষ্ঠা নাম্বার দিয়ে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ২১ রাকাতের তারাবীহর কথা নকল করেছি।
ইতিহাস সাক্ষী, তিনি তাঁর উক্ত কিতাবটি লিখার সময় অন্ধ হন নি। শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক রহ. উক্ত কিতাবে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ২১ রাকাতের রেওয়ায়ত চোখে দেখে লিখেছেন। মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ব্যাপারে ১৩ রাক‘আত তারাবীহর সম্পর্কীয় যে এযতেরাবের অভিযোগ এসেছে, তা খন্ডানোর জন্য মোবারকপুরী আরেকটি অবাস্তব পন্থার মাধ্যমে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছে।
তা হলো, মোবারকপুরী বলেছে, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এশার নামাযের দুই রাক‘আত সুন্নতকে শামিল করে তারাবীহ ১৩ রাক‘আত বলেছেন।
অথচ একজন সাধারণ লোকের বিবেক মতেও উক্ত উত্তর বাস্তবতার সাথে মিল নেই।
কেননা এশার নামাযের দুই রাক‘আত সুন্নত শুধু রমযানের নামায নয় বরং এটা সারা বছরের নামায। আর ঐ দুই রাক‘আত কখনও জামা‘আতের সাথে পড়া যায় না। এ দুই রাক‘আতকে তারাবীহর সাথে শামিল করার কোন যুক্তিও নাই।
তাই মোবারকপুরীর উক্ত উত্তর পাগলামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
মোদ্দাকথা, মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ব্যাপারে দুই প্রকারের এযতেরাব বহাল রইল।
তাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের পক্ষ থেকে ১১ রাকাতের তারাবীহর রেওয়ায়তটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আলবানীর হাস্যকর দাবীঃ
হাদিস শাস্ত্রে পরিত্যাক্ত স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানী *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* কর্তৃক ২০ রাকাতের রেওয়ায়ত গ্রহণ না করার জন্যে এবং মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যে তৃতীয় ইস্যু (এভাবে তৈরী করেছে যে, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ *সায়েব বিন ইয়াযিদ* এঁর ভাগিনা যাঁর থেকে তিনি ১১ রাকাতের হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন। তাই তার আত্মীয়তার ঘনিষ্টতার কারণেও তিনি *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* এঁর চেয়ে সায়েব বিন ইয়াজিদ এঁর রেওয়ায়তের ব্যাপারে বেশি অবগত থাকার কথা। তাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়ত প্রাধান্য পাওয়া বিবেকের চাহিদা।
অথচ কোন মুহাদ্দিছ থেকে আত্মীয়তার কারণে রেওয়ায়ত প্রাধান্য পাওয়ার বিধান শুনা যায় না।
এটা স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানীর নিজস্ব একটি মনগড়া উসূল।
ইতিপূর্বে সিয়ারু আ’লামিন নুবালার হাওয়ালা (Reference) দিয়ে লিখা হয়েছে যে, ইয়াযিদ বিন খোসাইফা *সায়েব বিন ইয়াজিদ* এঁর ভাতিজা।
যদি মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ভাগিনা হওয়ার কারণে তার রেওয়ায়ত প্রাধান্য হওয়া যুক্তিযুক্ত হয় তাহলে *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* যিনি তার ভাতিজা তার রেওয়ায়ত কেন প্রাধান্য হওয়া যুক্তিযুক্ত হবেনা?
আলহামদুলিল্লাহ, পরিত্যাক্ত অমুহাদ্দিস আলবানী ১১ রাক‘আতকে ২০ রাকাতের উপর প্রাধান্য দেয়ার জন্যে যে তিনটি কারণ / ত্রুটি তৈরী করেছে তিনটিই হাস্যকর ও বাতেল সাব্যস্ত হয়েছে।
মোবারকপুরীর অজ্ঞতাঃ
প্রকাশ থাকে যে, মোবারকপুরী (একটি ত্রুটি আরোপ করে) বলেছে, ইমাম বাইহাকী রহ. ইয়াযিদ বিন খোসাইফার বিশ রাকাতের রেওয়ায়ত সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে দুই জনের সনদে রেওয়ায়ত করেছেন।
একজন হলো, আবু উসমান আমর বিন আব্দুল্লাহ কিনদী।
দ্বিতীয় জন হলো, আবু আব্দিল্লাহ আল হোসাইন বিন ফানজাবিয়া।
তবে এই দুইজন সেকা না গাইরে সেকা আমরা তা জানতে পারিনি।
এর উত্তর হলোঃ
মোবারকপুরী তাদের অবস্থা না জানলেও কোন অসুবিধা নেই।
কারণ, পূর্বের অনেক বড় বড় হাফেযে হাদীছ ও মুহাদ্দিছগণ তাদের অবস্থা জেনে তাদের হাদীসকে সহীহ্ বলেছেন। যেমন, ইমাম নববী রহ., তাজ উদ্দীন সুবকী রহ., ওলী উদ্দীন ইরাকী রহ., বদরুদ্দীন আইনী রহ., জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহ. প্রমুখ। যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সায়েব বিন ইয়াযিদ থেকে তিনজন রাবী হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন।
যথাঃ
০১/ ইয়াযিদ বিন খোসাইফা
০২/ হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব ও
০৩/ মুহাম্মদ বিন ইউসুফ।
উপরের আলোচনা থেকে সংক্ষিপ্তাকারে পুন:রেখাপাতঃ
০১/ ইয়াযিদ বিন খোসাইফা রেওয়ায়ত করেছেন- তারাবীহ বিশ রাক‘আত। ঐ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং বিপক্ষের অভিযোগের উত্তর যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে।
০২/ আর মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তার রেওয়ায়তের মধ্যে দুই ধরণের এযতেরাব পাওয়া যাওয়ার কারণে তা আমলের জন্যে গ্রহণযোগ্য নয় সাব্যস্ত হয়েছে।
০৩/ বাকি রইল হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাবের রেওয়ায়ত।
মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক ৪র্থ খ- ২৬১ পৃষ্ঠাতে আছেঃ
ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﮭﺪ ﻋﻤﺮ ﺛﺎﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ উমর রা. এঁর যুগে বিতিরসহ তারাবীহর নামায ছিল ২৩ রাক‘আত। ইতিপূর্বে হারেস বিন আব্দুর রহমান অধ্যায়ে নকল করা হয়েছে যে, তিনি দ্বিতীয় সারির রাবী। মুহাদ্দিছীনে কেরামের উসূল অনুযায়ী আমাদের দাবী হলো, যদিও তিনি দ্বিতীয় সারির রাবী তারপরও তাঁর রেওয়ায়ত ইয়াযিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের জন্য বড় সহায়ক সাব্যস্ত হয়েছে।
তাছাড়া মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ১১ রাকাতের রেওয়ায়ত ইমাম মালেক রহ. তাঁর লিখিত কিতাব মুয়াত্তা মালেকে নকল করেছেন।
অথচ তার ঐ কিতাবে ইমাম মালেক রহ. তাবেয়ী ইয়াযিদ বিন রুমানের সনদে উমর রা. এঁর যুগে মসজিদে নববীতে তারাবীহর নামায বিতিরসহ ২৩ রাক‘আত পড়া হতো বলে নকল করেছেন।
তাঁর কিতাবে নকলকৃত এ দ্বিমুখী রেওয়ায়ত থেকে মুহাদ্দিছীনে কিরাম এ বিশ রাকাতের রেওয়ায়তকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
কারণ তাঁর বিশ রাকাতের রেওয়ায়ত অন্যান্য সহীহ্ রেওয়ায়তের সাথে মিল রয়েছে।
এ জন্যে ইমাম ইবনে আব্দুল বর মালেকী রহ. বলেছেন- মুয়াত্তা মালেকে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ কর্তৃক ১১ রাকাতের রেওয়ায়ত ‘ওয়াহাম’ অর্থাৎ লিখকের পক্ষ থেকে অথবা যে কোন পক্ষ থেকে ভুল।
তাছাড়া মালেকী মাযহাবের কোন কিতাবে তারাবীহ ১১ রাক‘আত লিখা হয় নি। বরং ইমাম মালেক রহ.এঁর মাযহাবও বিশ রাকআত ছিল।
উপরিউল্লেখিত আলোচনা থেকে দেখা যায় তারাবিহর ৮ রাকায়াত নামাজের দাবীর পক্ষে কোন সহিহ দলিল নেই।
রাফিউল ইয়াদাইনীদের চতুর্থ দলীলঃ
"হযরত সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. বলেন, হযরত উমর রা. *উবাই বিন কা‘আব রা. ও তামিম দারী রা.*-কে লোকদের নিয়ে ১১ (এগার) রাক‘আত নামায পড়তে আদেশ দিলেন"।
দেখা যাচ্ছে, উক্ত হাদীছটি ২০ রাকাতের দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক।
পরিত্যাক্ত স্ব-শিক্ষিত মুহাদ্দিছ নাসির উদ্দিন আলবানী নিজস্ব মনগড়া নীতি / উসূল অনুযায়ী এই এগার রাকাতের রেওয়ায়তকে উক্ত বিশ রাকাতের রেওয়ায়তের উপর প্রাধান্য দিয়েছে এবং বিশ রাকাতের রেওয়ায়তকে ‘যয়ীফ’ (দুর্বল) বলে মন্তব্য করেছে।
রাফিউল ইয়াদাইনীরা আলবানীর মন্তব্যকে বাহ্! বাহ্! দিয়ে এটাকে তাদের প্রধান দলীল হিসেবে পুঁজি বানিয়েছে। তাই আলবানীর তাহকিক সম্বন্ধে কিছু জরুরী কথা বলা আবশ্যক। সাথে সাথে তার উক্ত মন্তব্যকে বাস্তব (Genuine) তাহকীক দ্বারা খন্ডানো প্রয়োজন মনে করছি।
নাসির উদ্দিন আলবানীর তাহকিক / সহীহ্ নির্ধারন বা তদন্তের জঘন্যতা সম্বন্ধে জানতে এই লিংক থেকে ঘুরে আসুনঃ
চতুর্থ দলীলের জবাবঃ
যা হোক, এখন আমরা মূল বিষয়ের উপর আলোচনা করছি।
এই হাদিসটি সকল মুহাদ্দিসিনের নিকট গ্রহণযোগ্য ২০ রাকাতের দলীলের সাথে সাংঘর্ষিক। যদ্দরুন প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য কিছু বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে।
তা হলো, রমযানের তারাবীহর ব্যাপারে হাদীছটি *সাহাবী সায়েব বিন ইয়াযিদ রা.* থেকে তিন ব্যক্তি রেওয়ায়ত করেছেন।
যথাঃ
০১. ইয়াযিদ বিন খোসাইফা
০২. হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব
০৩. মুহাম্মদ বিন ইউসুফ।
এই তিন ব্যক্তির রেওয়াতের অবস্থাঃ
০১. ইয়াযিদ বিন খোসাইফা রহ. *সায়েব বিন ইয়াযিদ (রাঃ)* থেকে বিশ রাক‘আত নকল করেছেন। হযরত উমর রা. এঁর যুগে তাঁর হুকুমে মসজিদে নববীতে বিশ রাক‘আত তারাবীহর নামায পড়া হতো। যা ইমাম বাইহাকী রহ. সুনানে কুবরাতে এবং মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছারি লিল বাইহাকীতে এবং মুসনাদে ইবনুস সা’দ ৪১২ পৃষ্ঠায়।
হাদিসটির বিস্তারিত তাহকিক জানতে নিচের লিংকে প্রবেশ করে পড়ুনঃ
▆সলাতিল ক্বিয়ামু রমজান (তারাবীহ) ২০ রাকাআত : ইয়াজিদ বিন খুসায়ফা (রঃ) বর্ণিত হাদিসের বিস্তারিত তাহকিক (Authentcation):
https://mbasic.facebook.com/hasan.mahmud/posts/
1804218489893588
০২. হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাবের হাদীছ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪ খ- ২৬১ পৃষ্ঠায় তিনি সাহাবী সায়েব বিন ইয়াযিদ থেকে এভাবে নকল করেছেন
ﻛﻨﺎ ﻧﻨﺼﺮﻑ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﮭﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﷲ ﻭﻗﺪ ﺩﻧﺎ ﻓﺮﻭﻉ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﮭﺪ ﻋﻤﺮ ﺛﺎﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ -
অর্থাৎ তিনি সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. থেকে নকল করে বলেছেন, উমর রা. এঁর যুগে তারাবীর নামায পড়তে পড়তে ফজরের নামাযের সময় সন্নিকটে হয়ে যেত এবং উমর রা.এঁর যুগে তারাবীহ ২০ রাক‘আত, বিতির তিন রাক‘আত পড়া হত।
০৩. মুহাম্মদ বিন ইউসুফ হাদিস মুয়াত্তা মালেক ১ম খ- ৩৪১ পৃষ্ঠা এবং সুনানে কুবরা লিন নাসাঈ ২খ- ৪৯৬ পৃষ্ঠায় সায়েব বিন ইয়াযিদ রা. থেকে নকল করেছেন, উমর রা. উবাই বিন কা’ব রা. এবং তামীমে দারী রা.কে আদেশ দিয়েছেন, মানুষকে এগার রাক‘আত তারাবীহর নামায পড়ার জন্যে।
এখন আমরা তিন রাবীরই সনদের ওযন যাচাই করার জন্য তাদের অবস্থা পেশ করছি।
০১. ইয়াযিদ বিন খোসাইফার হালত / অবস্থাঃ
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব কিতাবে ৬ষ্ট খ- ২১৪ পৃষ্ঠাতে লিখেছেন, ইয়াযিদ বিন আব্দুল্লাহ বিন খোসাইফা সম্পর্কে আছরমের রেওয়ায়ত অনুযায়ীঃ
ক/ ইমাম আহমদ তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
খ/ ইবনে হাতেম ও নাসাঈ রহ. তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
গ/ আজরী রহ. ইমাম আবু দাউদ রহ. থেকে রেওয়ায়ত করে বলেছেন- ইমাম আহমদ রহ. তাকে ‘মুনকারুল হাদীস’ বলেছেন।
ঘ/ ইবনে আবী মরিয়ম বলেছেন, ইয়াহইয়া ইবনে মঈন তাঁকে ‘সেকা’ এবং ‘হুজ্জত’ বলেছেন।
ঙ/ ইবনে সা’দ বলেছেন, তিনি আবেদ’, ‘মুত্তাকি’ ও বেশী হাদীছ রেওয়ায়তকারী এবং ‘ছবত’ ছিলেন।
চ/ ইবনে হিব্বান তাকে ‘সিকা’রাবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ছ/ ইবনে আব্দুল বার বলেছেন, তিনি সেকা এবং মা’মুন ছিলেন।
০২. হারেছ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব এর হালত / অবস্থাঃ
ক/ হাফেয ইবনে হাজার তাকরীবুত তাহযীব ১ম খ- ১৭৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব ‘ছুদুক’ ছিলেন।
খ/ ইবনে হাতেম জরাহ ওয়াত তাদীল কিতাব ৪র্থ খ- ৭৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব ইলমে হাদিসের একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি।
গ/ আব্দুর রহমান বলেছেন, আমি আমার পিতাকে হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব সম্পর্কে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছেন, হারেস থেকে দারওয়ারদী অনেক মুনকার হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন। তাই তিনি রেওয়ায়তের ব্যাপারে শক্তিশালী ব্যক্তি নন তবে তার হাদীছ লিখা যেতে পারে।
ঘ/ ইমাম আবু যুরআ কে হারেস বিন আব্দুর রহমান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেছেন, তার হাদীছ রেওয়ায়ত করতে কোন সমস্যা নাই।
০৩. মুহাম্মদ বিন ইউসুফের হালত / অবস্থাঃ
ক/ ইমাম যাহাবী “ফি মান লাহুু রেওয়ায়তুন ফিল কুতুবিস সিত্তা” নামক কিতাবের ২য় খ- ২৩২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আব্দুল্লাহ কিনদী ‘সুদুকুন’ ‘মুকিল্লুন’ তথা কম হাদীছ রেওয়ায়তকারী।
খ/ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব কিতাবে লিখেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আব্দুর রহমান বিন হোসাইন থেকে এবং আব্দুর রহমান বিন আম্মার থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি।
গ/ ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ তার সাদৃশ্য ছিলেন।
ঘ/ ইবনে মঈন বলেছেন, আমাকে ইয়াহইয়া বিন সাঈদ বলেছেন, কোন শাইখকে আমি তার সাদৃশ্য ‘সেকা’ দেখিনি।
ঙ/ ইমাম আহমদ রহ. এবং ইমাম নাসাঈ তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
চ/ ইবনে হিব্বান তাকে সিকাদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
ছ/ ইবনে মাদাইনী বলেছেন, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ‘সিকা’ ছিলেন।
জ/ ইবনে শাহীন তাকে ‘সেকা’ বলেছেন।
ঝ/ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তাহযিবুত তাহযিব কিতাবের ২য় খ- ১৪৯ পৃষ্ঠাতে আছে, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ আব্দুল্লাহ কিনদী ‘সেকা’ এবং ‘সবত’।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, হাদিস শাস্ত্রে স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানী মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়ত অর্থাৎ ১১ রাকাতের রেওয়ায়তকে বিশ রাক‘আত তারাবীহর উপর প্রাধান্য দেয়ার জন্যে বিশ রাকাতের রেওয়ায়তকারী *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* এঁর কিছু মনগড়া ত্রুটি বের করে তাঁর রেওয়ায়তকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
এই আলবানী ইয়াযিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে তিনটি ত্রুটি বের করেছে।
তার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করা হচ্ছে। আর সাথে ইনশাল্লাহ তা’আলা যথাযথভাবে উত্তরও লিখা হবে।
ত্রুটি ৩টি হলোঃ
১/ আলবানীর আরোপিত প্রথম ত্রুটিঃ
ইয়াযিদ বিন খোসাইফাকে ইমাম আহমদ রহ. মুনকারুল হাদীছ বলেছেন। মুহাদ্দিছীনে কিরামের দৃষ্টিতে যেহেতু মুনকার হাদীছ যয়ীফ (দুর্বল)। তাই তার রেওয়ায়তকারীও যয়ীফ।
এর উত্তরঃ
একটু পূর্বে ইয়াযিদ বিন খোসাইফা সম্পর্কে বড় বড় হাদীছের ইমামগণের প্রশংসা ও মন্তব্য ইবনে হাজার আসকালানী রহ. এঁর লিখিত তাহযিবুত তাহযিব কিতাবের হাওয়ালা (Reference) দিয়ে লিখা হয়েছে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এঁর সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শাগরেদ আছরম রহ. এঁর সহীহ্ সূত্রে বলা হয়েছে, ইয়াযিদ বিন খোসাইফাকে ইমাম আহমদ রহ. ‘সেকা’ বলেছেন। অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য রাবী বলেছেন।
এখন ব্যাপার হল, যদি একই ব্যক্তির পক্ষ থেকে ভাল-মন্দ দ্বিমূখী মন্তব্য প্রকাশ হয়, তাহলে বিখ্যাত হাদীছ বিশারদগণের উসূল অনুযায়ী দেখতে হবে ঐ রাবীর ব্যাপারে অন্যান্য হাদীছের ইমামগণের মাতামত কি?
*ইয়াযিদ বিন খোসাইফা অধ্যায়ে* যতবার কিতাবের বরাত দিয়ে লিখা হয়েছে, ইয়াজিদ বিন খোসাইফাকে প্রসিদ্ধ ইমামুল হাদীসগণ ‘সেকা’ ‘সবত’ ‘হুজ্জত’ ইত্যাদি উচ্চ উপাধিসমূহ দ্বারা ভূষিত করেছেন। তাই যে রেওয়ায়তে ইমাম আহমদ রহ. ‘সেকা’ বলেছেন, সেটাই প্রযোজ্য হবে। হয়ত তিনি *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* সম্পর্কে প্রথমে কোন হালকা তথ্যের ভিত্তিতে তাকে ‘মুনকার’ বলেছেন। পরে তাঁর ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়ার পর তাঁকে ‘সেকা’ বলতে বাধ্য হয়েছেন।
তদুপরি আরও একটি সর্বজনস্বীকৃত উসূল / নীতিমালা হলো, **কোন এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে যে কোন ব্যাপারে বিপরীতমূখী দুই মন্তব্য প্রকাশ হলে ﺍﺫﺍ ﺗﻌﺎﺭﺿﺎ ﺗﺴﺎﻗﻄﺎ এর কায়দা অনুযায়ী উভয় মন্তব্যের কোনটাই গ্রহণযোগ্য হয় না। **
ঐ মর্মে ইয়াজিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে ইমাম আহমদ রহ. এঁর উভয় মন্তব্যকে যদি বাদ দেয়া হয় তাহলেও কোন অসুবিধা নেই। ইয়াযিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে অন্যান্য বিখ্যাত মুহাদ্দিছীনে কেরাম যে মানসম্পন্ন উপাধিসমূহ দিয়েছেন ঐ গুলোই যথেষ্ট।
পরিত্যাক্ত স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানী উল্লেখিত সর্বজনমান্য উসূলসমূহকে উপেক্ষা (Ignore) করে নিজের মতলব (Motive) হাসিলের জন্য দুর্বল পন্থা অবলম্বন করেছে।
এই আলবানী আরো বলেছে, "আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ব্যাপারে ‘সেকা’ ‘সবত’ উভয় ব্যবহার করেছেন। এটা মুহাদ্দিছীনে কিরামের পরিভাষায় উচ্চ উপাধি। কিন্তু অপর দিকে ইয়াজিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে শুধু ‘সেকা’ বলেছেন। এ কারণেই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়ত ইয়াজিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের উপর প্রাধান্য পাবে"।
অথচ উপরে আলোচনায় আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী এঁর তাহযিবুত তাহযিব কিতাবের খ- ও পৃষ্ঠা নং উল্লেখ পূর্বক সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি ইয়াযিদ বিন খোসাইফাকে ‘সেকা’ ‘সবত’ ‘হুজ্জত’ বলেছেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আলবানী নিজের দাবী সাব্যস্ত করার জন্যে এত বড় জ্বলন্ত মিথ্যার আশ্রায় নিয়েছে।
তার (আলবানীর) কথা কত দামী তা বিবেচনা করার দায়িত্ব পাঠকবৃন্দের উপর ন্যস্ত করা হলো।
তদুপুরি ইতিপূর্বে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের অধ্যায়ের হাওয়ালা (Reference) দিয়ে লিখা হয়েছে যে, ইমাম যুহরী মুহাম্মদ বিন ইউসুফকে ‘সুদুক’ বলেছেন।
অথচ ‘সুদুক’ এটা প্রথম সারির রাবীর উপাধি নয়। তা দ্বিতীয় সারির উপাধি। যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিবেচনায়ও সাব্যস্ত হয় *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে উচ্চ মাপের রাবী।
আলবানী সব ব্যাপারে চোখবুজে নিজের ভ্রান্তমত প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করেছে।
২/ আলবানীর আরোপিত দ্বিতীয় ত্রুটি হলোঃ
পরিত্যাক্ত অমুহাদ্দিস আলবানী বলেছে, ইয়াযিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের ভিতর এয্তেরাব অর্থাৎ সাংঘর্ষিক বিষয় আছে তথা সায়েব বিন ইয়াযিদ থেকে তার দুই ধরণের রেওয়ায়ত পাওয়া যায়।
যথাঃ
একটি হলো, ২০ রাকাতের,
অপরটি হলো, ২১ রাকাতের ব্যাপারে।
মুহাদ্দিছীনের পরিভাষায় এটাকে এযতেরাব বলা হয়। যে রেওয়ায়তে এযতেরাব পাওয়া যায় তা গ্রহণযোগ্য হয় না। তদুপুরি ইয়াজিদ বিন খোসাইফাকে ২১ রাকাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তিনি ‘হাসিবতু’ শব্দ বলেছেন। অর্থাৎ হতে পারে সায়েব বিন ইয়াজিদ ২১ রাক‘আত বলেছেন। উক্ত শব্দটি রেওয়ায়তের ব্যাপারে অনিশ্চয়তার প্রমাণ দেয়। অথচ রেওয়ায়তের ব্যাপারে রাবীর ইয়াকিন (নিশ্চিত) থাকতে হয়। উল্লেখিত অনিশ্চয়তা ও এযতেরাবের কারণে ইয়াজিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তটি গ্রহণযোগ্য নয়।
এর উত্তর হলোঃ
চতুর আলবানী ইয়াযিদ বিন খোসাইফার ব্যাপারে যে এযতেরাবের দাবী করেছে তা ভিত্তিহীন।
হাদীছের উল্লেখযোগ্য কোন কিতাবে ইয়াযিদ বিন খোসাইফা থেকে ২১ রাক‘আতের রেওয়ায়ত সাব্যস্তই নাই (Not proved)।
আলবানী নিজেও কোন কিতাবের হাওয়ালা (Reference) পেশ করতে পারে নি।
আমাদের ধারণা, আলবানী নিজের দাবী (Claim) ও মতলব (motive) হাসিলের জন্য নিজের পক্ষ থেকে উক্ত রেওয়ায়ত মিছেমিছি (fraudulently) বর্ণনা করেছেন। তদুপুরি ইয়াযিদ বিন খোসাইফার পক্ষ থেকে যদি ২১ রাকাতের রেওয়ায়ত মেনেও নেয়া হয়, তাহলেও এযতেরাব বা সাংঘর্ষিক সাব্যস্ত হবেনা।
কারণ তিনি ২০ রাক‘আত বলেছেন শুধু তারাবীহর ব্যাপারে। আর ২১ রাক‘আত বলেছেন বিতিরসহ তারাবীহর ব্যাপারে। এর মধ্যে কোন সংঘর্ষ নেই। ‘হাসিবতু’ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিতিরের ব্যাপারে। সায়েব বিন ইয়াযিদ বিতির এক রাক‘আত বলেছেন নাকি তিন রাক‘আত বলেছেন, এর মধ্যে সন্দেহ ছিল। তারাবীহ বিশ রাকাতের ব্যাপারে কোন সন্দেহ ছিল না।
বরং প্রতিপক্ষ মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তে দু’টি এযতেরাব পাওয়া যায়।
তার পক্ষ থেকে যেমনিভাবে মুয়াত্তা মালেকে ১১ রাক‘আত এর রেওয়ায়ত দেখা যায়। তদ্রুপ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক এর ৪র্থ খ- ২৬০ পৃষ্ঠাতে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ, সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে ২১ রাক‘আত তারাবীহ নকল করেছেন। তোহফাতুল আহওয়াজি শরহে তিরমিযি গাইরে মুকাল্লিদ আলেমের তিরমিযী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তারাবীহ অধ্যায়ে তিনি রেওয়ায়ত করেছেন ১৩ রাক‘আত।
মোদ্দাকথা, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে তিন প্রকারের রেওয়ায়ত পাওয়া গেল- ১১ রাক‘আত, ২১ রাক‘আত, ১৩ রাক‘আত।
যেহেতু এটা মুহাদ্দিছীনে কিরামের নিকট জঘণ্য এযতেরাব। আগে উল্লেখ করা হয়েছে, যে রাবীর রেওয়ায়তের মধ্যে এযতেরাব পাওয়া যায় তার রেওয়ায়ত গ্রহণযোগ্য নয়। তাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তটি কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আলবানী নিজের পক্ষের রেওয়ায়তের এযতেরাব থেকে চোখবুজে অনর্থক ইয়াযিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের উপর এযতেরাবের অপবাদ চাপানোর হীন চেষ্টা করে ছিলো।
এখন তার মিথ্যা বানোয়াটী পর্যালোচনা (Authentcation) দ্বিপ্রহরের ন্যায় সবার সামনে প্রকাশ হয়ে গেল।
মোবারকপুরীর একটি হাস্যকর খোঁড়া অভিযোগঃ
মোবারকপুরী সাহেব তিরমিযীর শরাহ ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ তে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তের এযতেরাবের অভিযোগ খণ্ডানোর জন্যে আরেকটি অকার্যকর জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন।
তা হলো, তিনি বলেছেন শাইখ আব্দুর রাজ্জাক শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। হতে পারে অন্ধ অবস্থায় মুহাম্মদ বিন ইউসুফ থেকে ২১ রাক‘আত নকল করেছেন। তার উত্তরটি একটি হাস্যকর উত্তর।
কেননা, তার উক্ত উক্তি দ্বারা মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের সকল রেওয়ায়তই তখন গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ, তার প্রত্যেক রেওয়ায়তের ব্যাপারে প্রশ্ন আসতে পারে যে, হতে পারে তিনি অন্ধ অবস্থায় তা নকল করেছেন।
দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের খ- ও পৃষ্ঠা নাম্বার দিয়ে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ২১ রাকাতের তারাবীহর কথা নকল করেছি।
ইতিহাস সাক্ষী, তিনি তাঁর উক্ত কিতাবটি লিখার সময় অন্ধ হন নি। শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক রহ. উক্ত কিতাবে মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ২১ রাকাতের রেওয়ায়ত চোখে দেখে লিখেছেন। মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ব্যাপারে ১৩ রাক‘আত তারাবীহর সম্পর্কীয় যে এযতেরাবের অভিযোগ এসেছে, তা খন্ডানোর জন্য মোবারকপুরী আরেকটি অবাস্তব পন্থার মাধ্যমে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছে।
তা হলো, মোবারকপুরী বলেছে, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ এশার নামাযের দুই রাক‘আত সুন্নতকে শামিল করে তারাবীহ ১৩ রাক‘আত বলেছেন।
অথচ একজন সাধারণ লোকের বিবেক মতেও উক্ত উত্তর বাস্তবতার সাথে মিল নেই।
কেননা এশার নামাযের দুই রাক‘আত সুন্নত শুধু রমযানের নামায নয় বরং এটা সারা বছরের নামায। আর ঐ দুই রাক‘আত কখনও জামা‘আতের সাথে পড়া যায় না। এ দুই রাক‘আতকে তারাবীহর সাথে শামিল করার কোন যুক্তিও নাই।
তাই মোবারকপুরীর উক্ত উত্তর পাগলামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
মোদ্দাকথা, মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ব্যাপারে দুই প্রকারের এযতেরাব বহাল রইল।
তাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের পক্ষ থেকে ১১ রাকাতের তারাবীহর রেওয়ায়তটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আলবানীর হাস্যকর দাবীঃ
হাদিস শাস্ত্রে পরিত্যাক্ত স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানী *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* কর্তৃক ২০ রাকাতের রেওয়ায়ত গ্রহণ না করার জন্যে এবং মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তকে প্রাধান্য দেয়ার জন্যে তৃতীয় ইস্যু (এভাবে তৈরী করেছে যে, মুহাম্মদ বিন ইউসুফ *সায়েব বিন ইয়াযিদ* এঁর ভাগিনা যাঁর থেকে তিনি ১১ রাকাতের হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন। তাই তার আত্মীয়তার ঘনিষ্টতার কারণেও তিনি *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* এঁর চেয়ে সায়েব বিন ইয়াজিদ এঁর রেওয়ায়তের ব্যাপারে বেশি অবগত থাকার কথা। তাই মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়ত প্রাধান্য পাওয়া বিবেকের চাহিদা।
অথচ কোন মুহাদ্দিছ থেকে আত্মীয়তার কারণে রেওয়ায়ত প্রাধান্য পাওয়ার বিধান শুনা যায় না।
এটা স্ব-শিক্ষিত অমুহাদ্দিস আলবানীর নিজস্ব একটি মনগড়া উসূল।
ইতিপূর্বে সিয়ারু আ’লামিন নুবালার হাওয়ালা (Reference) দিয়ে লিখা হয়েছে যে, ইয়াযিদ বিন খোসাইফা *সায়েব বিন ইয়াজিদ* এঁর ভাতিজা।
যদি মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ভাগিনা হওয়ার কারণে তার রেওয়ায়ত প্রাধান্য হওয়া যুক্তিযুক্ত হয় তাহলে *ইয়াযিদ বিন খোসাইফা* যিনি তার ভাতিজা তার রেওয়ায়ত কেন প্রাধান্য হওয়া যুক্তিযুক্ত হবেনা?
আলহামদুলিল্লাহ, পরিত্যাক্ত অমুহাদ্দিস আলবানী ১১ রাক‘আতকে ২০ রাকাতের উপর প্রাধান্য দেয়ার জন্যে যে তিনটি কারণ / ত্রুটি তৈরী করেছে তিনটিই হাস্যকর ও বাতেল সাব্যস্ত হয়েছে।
মোবারকপুরীর অজ্ঞতাঃ
প্রকাশ থাকে যে, মোবারকপুরী (একটি ত্রুটি আরোপ করে) বলেছে, ইমাম বাইহাকী রহ. ইয়াযিদ বিন খোসাইফার বিশ রাকাতের রেওয়ায়ত সায়েব বিন ইয়াজিদ থেকে দুই জনের সনদে রেওয়ায়ত করেছেন।
একজন হলো, আবু উসমান আমর বিন আব্দুল্লাহ কিনদী।
দ্বিতীয় জন হলো, আবু আব্দিল্লাহ আল হোসাইন বিন ফানজাবিয়া।
তবে এই দুইজন সেকা না গাইরে সেকা আমরা তা জানতে পারিনি।
এর উত্তর হলোঃ
মোবারকপুরী তাদের অবস্থা না জানলেও কোন অসুবিধা নেই।
কারণ, পূর্বের অনেক বড় বড় হাফেযে হাদীছ ও মুহাদ্দিছগণ তাদের অবস্থা জেনে তাদের হাদীসকে সহীহ্ বলেছেন। যেমন, ইমাম নববী রহ., তাজ উদ্দীন সুবকী রহ., ওলী উদ্দীন ইরাকী রহ., বদরুদ্দীন আইনী রহ., জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহ. প্রমুখ। যা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সায়েব বিন ইয়াযিদ থেকে তিনজন রাবী হাদীছ রেওয়ায়ত করেছেন।
যথাঃ
০১/ ইয়াযিদ বিন খোসাইফা
০২/ হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাব ও
০৩/ মুহাম্মদ বিন ইউসুফ।
উপরের আলোচনা থেকে সংক্ষিপ্তাকারে পুন:রেখাপাতঃ
০১/ ইয়াযিদ বিন খোসাইফা রেওয়ায়ত করেছেন- তারাবীহ বিশ রাক‘আত। ঐ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং বিপক্ষের অভিযোগের উত্তর যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে।
০২/ আর মুহাম্মদ বিন ইউসুফের রেওয়ায়তের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তার রেওয়ায়তের মধ্যে দুই ধরণের এযতেরাব পাওয়া যাওয়ার কারণে তা আমলের জন্যে গ্রহণযোগ্য নয় সাব্যস্ত হয়েছে।
০৩/ বাকি রইল হারেস বিন আব্দুর রহমান বিন আবী যুবাবের রেওয়ায়ত।
মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক ৪র্থ খ- ২৬১ পৃষ্ঠাতে আছেঃ
ﻭﻛﺎﻥ ﺍﻟﻘﻴﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﮭﺪ ﻋﻤﺮ ﺛﺎﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
অর্থাৎ উমর রা. এঁর যুগে বিতিরসহ তারাবীহর নামায ছিল ২৩ রাক‘আত। ইতিপূর্বে হারেস বিন আব্দুর রহমান অধ্যায়ে নকল করা হয়েছে যে, তিনি দ্বিতীয় সারির রাবী। মুহাদ্দিছীনে কেরামের উসূল অনুযায়ী আমাদের দাবী হলো, যদিও তিনি দ্বিতীয় সারির রাবী তারপরও তাঁর রেওয়ায়ত ইয়াযিদ বিন খোসাইফার রেওয়ায়তের জন্য বড় সহায়ক সাব্যস্ত হয়েছে।
তাছাড়া মুহাম্মদ বিন ইউসুফের ১১ রাকাতের রেওয়ায়ত ইমাম মালেক রহ. তাঁর লিখিত কিতাব মুয়াত্তা মালেকে নকল করেছেন।
অথচ তার ঐ কিতাবে ইমাম মালেক রহ. তাবেয়ী ইয়াযিদ বিন রুমানের সনদে উমর রা. এঁর যুগে মসজিদে নববীতে তারাবীহর নামায বিতিরসহ ২৩ রাক‘আত পড়া হতো বলে নকল করেছেন।
তাঁর কিতাবে নকলকৃত এ দ্বিমুখী রেওয়ায়ত থেকে মুহাদ্দিছীনে কিরাম এ বিশ রাকাতের রেওয়ায়তকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
কারণ তাঁর বিশ রাকাতের রেওয়ায়ত অন্যান্য সহীহ্ রেওয়ায়তের সাথে মিল রয়েছে।
এ জন্যে ইমাম ইবনে আব্দুল বর মালেকী রহ. বলেছেন- মুয়াত্তা মালেকে মুহাম্মদ বিন ইউসুফ কর্তৃক ১১ রাকাতের রেওয়ায়ত ‘ওয়াহাম’ অর্থাৎ লিখকের পক্ষ থেকে অথবা যে কোন পক্ষ থেকে ভুল।
তাছাড়া মালেকী মাযহাবের কোন কিতাবে তারাবীহ ১১ রাক‘আত লিখা হয় নি। বরং ইমাম মালেক রহ.এঁর মাযহাবও বিশ রাকআত ছিল।
উপরিউল্লেখিত আলোচনা থেকে দেখা যায় তারাবিহর ৮ রাকায়াত নামাজের দাবীর পক্ষে কোন সহিহ দলিল নেই।