উত্তর: বিখ্যাত ফকিহ্ ও মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আমাদের ইমাম আযম হযরত আবূ হানীফা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মতে ‘‘মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহ।’’ আর ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলায়হির মতে মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়া জায়েয। মাকরূহ নয়।
[উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী: ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০] তবে আমাদের হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ফক্বিহগণের মতে মসজিদের ভিতরে কোন ওযর বা বৃষ্টি-তুফান ছাড়া মসজিদের ভেতর লাশ রেখে মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়া সর্বসম্মতিক্রমে মাকরূহ। তাঁরা নি¤েœাক্ত হাদীসকে দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। যেমন-
وعن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صلّى على جنازة فى المسجد فلا شئ له- (سنن ابوداؤد- ج ২- ص ৬৮)
অর্থাৎ- হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবী রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে (লাশ রেখে) জানাযার নামায পড়লো, তার জন্য কিছুই নেই।
[সুনানে আবু দাঊদ: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৮] তবে মসজিদের মধ্যে জানাযার নামায পড়া মাকরূহে- তাহরিমা, না মাকরূহে তানযীহি এ নিয়ে আমাদের হানাফী ফক্বিহগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আল্লামা কামাল উদ্দীন ইবনে হুমাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি মাকরূহই তানযীহি হওয়াকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘‘মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া খেলাফে আওলা তথা উত্তমের বিপরীত। অর্থাৎ- মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া জায়েয। কিন্তু উত্তম হলো মসিজদের বাইরে পড়া।
[ফতহুল কদীর কৃত আল্লামা কামাল উদ্দীন হুমাম হানাফী: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯০-৯১] মসজিদের ভিতর জানাযার নামায আদায় বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আমাদের কাছে আল্লামা ইবনে হুমাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর উপরোক্ত অভিমতই প্রণিধানযোগ্য। কারণ মাকরূহে তাহরীমি ঐ কাজকে বলা হয়, যা সম্পাদনের কারণে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন শাস্তির হুমকি বা বিধান প্রদান করেছেন। অথচ মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়ার ব্যাপারে হুযূর পাক রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন শাস্তির ধমক প্রদান করেননি, বরং এটুকু এরশাদ করেছেন- মসজিদে জানাযার নামায আদায়কারী কোন সাওয়াব পাবে না। দ্বিতীয়ত- যদি মসজিদের ভেতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমি হতো, তবে পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরামগণ মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়তেন না। অথচ তাঁরা মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়েছেন মর্মে পবিত্র হাদীস শরীফ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। যেমন বরণ্য ইমাম হযরত আবদুর রায্যাক বর্ণনা করেন-
عن هتام بن عروة قال راى ابى الناس يخرجون من المسجد ليصلوا على جنازة فقال ما يصنع هؤلاء؟ ما صلى على ابن بكر الا فى المسجد- (امام عبد الرزاق- المصنف- ج ৩- ص ৫২৬)
১. হযরত হিশাম বিন উরওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, আমার পিতা প্রখ্যাত তাবেয়ী হযরত উরওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জানাযার নামায পড়ার জন্য লোকদেরকে মসজিদ হতে বের হয়ে যেতে দেখলেন, তখন তিনি বললেন, এ সব লোক কি করছে? (অর্থাৎ- জানাযার নামায পড়ার জন্য মসজিদ হতে কেন বেরুচ্ছে) অথচ সৈয়্যদুনা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর জানাযার নামায মসজিদেই অথাৎ মদিনার মসজিদে নববীতেই পড়া হয়েছিল।
[আল্ মুসান্নিফ কৃত: ইমাম আবদুর রায্যাক রাহ., ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫২৬] ২. প্রখ্যাত ফক্বিহ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘‘হযরত উমর ফারুকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর জানাযার নামায মসজিদে নববীর মধ্যে পড়া হয়েছিল। [পূর্বোক্ত গ্রন্থ] ৩. ইমাম বায়হাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন-
عن ابن عمر رضى الله عنه صلى عليه فى المسجد وصلى عليه صهيب- (امام ابو بكر احمد البيقى- سنن الكبرى- ج ৪- ص ৫২)
অর্থাৎ- হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন- হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর জানাযার নামায মসজিদের ভিতর পড়া হয়েছিল। আর হযরত সুহাইব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাঁর জানাযার নামাযে ইমামতি করেছিলেন।
[সুনানে কুবরা কৃত:ইমাম বায়হাকী রাহ., ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ২] ৪. ইমাম ইবনে আবী শায়বা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেছেন যে-
عن المطلب بن عبد حنطب قال صلى ابى بكر وعمر تجاه المنبر- (المصنف اللامام ابن شيبة- ج ৩- ص ৩৬৪)
অর্থাৎ- মাতলাব ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবন হানতাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- সৈয়্যদুনা হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-এর জানাযার নাামায (মসজিদে নববী শরীফের) মিম্বরের সামনে আদায় করা হয়েছে।
[আল্ মুসান্নিফ কৃত: ইমাম আবু শায়বা রাহ., ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৪] উপরোক্ত হাদীস শরীফ সমূহের বর্ণনা দ্বারা এটা প্রমাণিত হলো যে, মসজিদের ভিতর জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহে তাহরীমি নয় বরং তা জায়েয। যদি মাকরূহে তাহরীমি হতো তবে সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়তেন না।
জাওয়াহিরুর রাওয়াইত গ্রন্থগুলোর মধ্যে শুধু জামে সগীর গ্রন্থে মসজিদে নামাযে জানাযা পড়া মাকরূহে তাহরীমি হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে কোথাও এটা উল্লেখ নেই যে, যদি লাশ মসজিদের বাইরে থাকে আর মুসল্লি মসজিদের ভিতর থাকে, তবে তার কি হুকুম? এটা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকার কারণে আমাদের হানাফী ফক্বিহগণের মধ্যে এ মাসআলায় মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। যেমন ৫. শামসুল আইম্মা ইমাম সরখসী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখেছেন-
وعندنا اذا كانت الجنازة خارج المسجد لم يكره ان يصلى الناس عليها فى المسجد انما الكراهة فى ادخال الجنازة- لقوله عليه الصلوة والسلام جنبوا مساجد لك صبيانكم و مجانيكم فاذا كان الصبى ينهى عن المسجد فالميت اولى- (المبسوط- شمس الائمة محمد بن احمد السرخسى- ج ২- ص ৬)
অর্থাৎ যদি জানাযা (লাশ) মসজিদের বাইরে থাকে, তবে আমাদের (হানাফীদের) মতে মসজিদের ভিতর জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহ নয়। মাইয়্যাত (লাশ) মসজিদের ভিতর প্রবেশ করানো হলো মাকরূহ। কারণ আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- শিশু ও পাগলগণ থেকে তোমরা নিজেদের মসজিদগুলোকে পবিত্র ও দূরে রাখ।
সুতরাং শিশুগণকে যখন মসজিদে নাপাক হওয়ার আশংকায় মসজিদের ভিতর প্রবেশ করানো থেকে দূরে রাখতে বলা হয়েছে, তখন তো মৃত ব্যক্তির লাশকে ভিতর প্রবেশ করানো থেকে দূরে রাখা উত্তম। (যাতে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট না হয়)।
[আল্ মাবসুত কৃত: শামসুল আইম্মা সরখসী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৮] ৬. আল্লামা ত্বাহত্বাবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখেছেন যে,
كلام شمس الائمة السرخسى يقيد ان هذا هو المذهب حيث قال وعندنا ان كانت الجنازة خارج المسجد لم يكره ان يصلى عليها فى المسجد- (العلامة احمد بن محمد الطحطاوى خاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح- ص ৩৬)
অর্থাৎ- শামসুল আইম্মা ইমাম সরখসী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর উপরোক্ত বক্তব্যের দ্বারা বুঝা যায় যে, এটা হলো হানাফী ইমামগণের মাযহাব। কেননা, তাঁরা বলেছেন, যদি লাশ মসজিদের বাইরে থাকে, তবে আমাদের মতে- মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহ নয়।
[হাশিয়াতুত ত্বাহত্বাভী কৃত: ইমাম আল্লামা আহমদ বিন মুহাম্মদ ত্বাহত্বাভী হানাফী রাহ., পৃষ্ঠা ৩৬০] ৭. আল্লামা মাহমূদ বরকাতী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি লিখেছেন-
وعندنا اذا كانت الجنازة خارج المسجد لم يكره ان يصلى الناس عليها فى المسجد- (عناية على هامش فتع القدير- ج ২- ص ৯০)
অর্থাৎ- যদি জানাযা (লাশ) মসজিদের বাইরে থাকে, তবে মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহ নয়। [ইনায়াহ্ ফাতহুল কাদীর গ্রন্থের হাশিয়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯০] ৮. আল্লামা আলিম ইবনে আল আনসারী দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
وقال الشافعى رحمة الله عليه لاتكره وعن ابى يوسف روايتان فى رواية كما قال الشافعى وفى رواية اذا كانت الجنازة خارج المسجد والامام والقوم فى المسجد فانه لايكره- (خانيه- ج ২- ص ১৭৯)
অর্থাৎ- ইমাম শাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন যে, মসজিদের ভিতর জানাযার নামায আদায় করা মাকরূহ নয়। হানাফী মাজহাবের প্রখ্যাত ফকিহ ও মুজতাহিদ ইমাম আবু ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হতে দুটি অভিমত বর্ণিত রয়েছে। একটি অভিমত ইমাম শাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির অভিমতের অনুরূপ, অপর অভিমতটি হলো যদি জানাযা (লাশ) মসজিদের বাহিরে থাকে, তবে এতে মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়া মাকরূহ নয়।
[ফতোয়ায়ে তাতার খানিয়া: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৯] সুতরাং হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু কর্তৃক বর্ণিত, হাদীস যা প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে- من صلى على جنازة فى المسجد فلاشئ له অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মসজিদের মধ্যে জানাযার নামায পড়লো তার কোন কিছু (সাওয়াব) নাই। পক্ষান্তরে হযরত ইবনে আবী শায়বা কর্তৃক লিখিত ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে- হযরত আবু বকর সিদ্দিক ও হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা উভয়ের নামাযে জানাযা মসজিদের ভিতর আদায় করা হয়েছে।
উভয় প্রকারের হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইমাম সরখসী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, ইমাম ইবনে হুমাম রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও অপরাপর হানাফীগণ বলেছেন যে, এ সব জানাযার নামাযে লাশ মসজিদের বাইরে রাখা হয়েছিল আর নামায মসজিদের ভিতর পড়া হয়েছিল। সুতরাং এতে মাকরূহ হবার কোন কারণ নেই। অতএব, আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ আমাদের যেসব হানাফী ফক্বিহ ও ইমামগণ মৃত ব্যক্তির লাশ মসজিদের ভিতর রাখা হোক বা বাইরে রাখা হোক নামাযে জানাযা মসজিদে পড়া মাকরূহ বলেছেন- এ মাকরূহ দ্বারা মাকরূহে তানযীহিই উদ্দেশ্য। আর মাকরূহে তানযীহিও তখন হবে যখন কোন ওজর ছাড়া মসজিদের ভিতরে জানাযার নামায পড়া হয়। যদি কোন ওজরের কারণে (যেমন প্রবল ঝড়-বৃষ্টি, তুফান, বাইরেস্থান সংকোলন না হওয়া ইত্যাদি) মসজিদে জানাযার নামায পড়া মোটেই মাকরূহ নয়। তদুপরি বর্তমানে পবিত্র হারামাঈন শরীফাঈনসহ বিশ্বের অনেক স্থানে বাইরে লাশ রেখে মসজিদের ভিতর নামাযে জানাযা আদায় করা হচ্ছে। পবিত্র মক্কা শরীফে কফিন একেবারে মা’তাফের মধ্যে ইমামের সামনে লাশ রেখে নামাযে জানাযা আদায় করা হয়। সুতরাং এ বিষয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা অনুচিত মনে করি। মোট কথা, জানাযার নামাযের সুন্নাত নিয়ম হলো- ঈদগাহ্ বা খোলা ময়দানে/মাঠ ইত্যাদি থাকলে এবং কোন প্রকার অসুবিধা না হলে সেখানে জানাযার নামায পড়বে। কিন্তু যদি আত্মীয়-স্বজন, মহল্লাবাসী ও মসজিদের মুসল্লিগণ এলাকার ঈদগাহ্ বা ময়দান দূরবর্তী হওয়ার কারণে যদি সেখানে যাওয়া কষ্টকর হয় অথচ ঈদগাহ্ / ময়দানের ব্যবস্থা না থাকে, বৃষ্টি বাদলের কারণে খোলা মাঠে নামাযে জানাযা পড়া সম্ভবপর না হয় তবে এমতাবস্থায় লাশ মসজিদের বাইরে রেখে মসজিদের ভিতর জানাযার নামায পড়তে অসুবিধা নেই। এতে মাকরূহ হবার কারণ নেই। এমনকি মসজিদের বাহিরে রাখার ব্যবস্থা না থাকলে ওযরের/ বৃষ্টির কারণে মসজিদের ভিতরেও লাশ রেখে জানাযার নামায পড়া যাবে। উল্লেখ্য যে, যদি কোন মাসআলায় ফক্বিহগণের উক্তি বর্ণিত থাকে, তবে ঐ উক্তি গ্রহণ করাই উচিত, যাতে সাধারণ লোকদের কষ্ট না হয়। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন-
ما يريد الله ليجعل عليكم من حرج- (مائده- ২)
অর্থাৎ- আল্লাহ্ তা‘আলার ইচ্ছা নয় যে, তোমাদের কষ্টকর কিছু চাপিয়ে দিবেন। [সূরা মায়িদা-২] وما جعل عليكم فى الدين من حرج- (حج ৭৮)
অর্থাৎ- আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীন ও ধর্মীয় বিধি-বিধানে তোমাদের জন্য কষ্টকর ও অসাধ্য বিধান করেন নাই।
[সূরা হজ্ব: ৭৮] يريد الله بكم اليُسرى ولا يريد بكم العسرى-(بقرة ১৮৫)
অর্থাৎ- মহান আল্লাহ্ তোমাদের সহজতা ইচ্ছা করেন। কঠিন কোন কিছু ইচ্ছা করেন না।
[সূরা বাক্বারা: আয়াত ১৮৫] প্রিয়নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- بَشِّروا ولا تنفروا ويسرّوا ولا تعسروا- (صحيح مسلم- ج ২- ص ৮২) অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর বান্দাগণকে সুসাংবাদ প্রদান কর, তাদেরকে বিতাড়িত করো না, আর তাদের জন্য সহজপন্থা কঅবলম্বন কর, কষ্টে নিক্ষেপ করো না। [সহীহ মুসলিম শরীফ: ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৮২] সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত নিয়মে নামাযে জানাযা আদায় করলে ইসলামী শরীয়েতের দৃষ্টিকোণে কোন প্রকারের অসুবিধা নাই। তবে কোন ওজর, বৃষ্টি-তুফান নাহলে আবহাওয়া ও পরিবেশ ভাল থাকলে এবং বাহিরে খোলা ময়দান/মাঠে নামাযে জানাযা পড়ার সুযোগ থাকলে সুন্নাত হলে মাঠে-ময়দানে নামাযে জানাযা আদায় করবে। নতুবা মসজিদে আদয়া করবে। এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া/ফায়সালা।
[ওমদাতুল ক্বারী কৃত: ইমাম বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রাহ., ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০, ফতুহুল ক্বাদির শরহে হেদায়া কৃত: ইমাম ইবনে হুম্মাম হানাফী রাহ., ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৯০-৯১ এবং শরহে সহীহ মুসলিম শরীফ, ২য় খণ্ড কৃত: আল্লামা গোলাম রাসূল সাঈদী, পৃষ্ঠা ১০২৬-১০৩২] এ বিষয়ে তরজুমান প্রশ্নোত্তর বিভাগে পূর্বে আরো বিস্তারিত ও প্রমাণ্য আলোচনা করা হয়েছে। তরজুমানের কপিগুলো যতœসহকারে সংরক্ষণ রাখার অনুরোধ রইল।
Top