মাযার নির্মাণ 07

জ্ঞাতব্য
চার মযহাবের সবগুলোতেই এটি অনুসরণীয়।অতএবএই রওয়ায়াত দুর্বল মর্মে ওহাবীদের দাবিরপ্রতি কর্ণপাতের কোনো সুযোগ নেই। এটি সম্পর্কেবিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে আমাদেরওয়েবসাইটে
দলিল নং – ১২
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা:) বর্ণনা করেন রাসূলেখোদা (:)-এর হাদীসযাতে তিনি এরশাদ ফরমান: “আমারহায়াতে জিন্দেগী (প্রকাশ্য জীবনতোমাদের জন্যে উপকারীতোমরা তা বলবে এবং তোমাদেরকেও তা বলা হবেআমারবেসালপ্রাপ্তিও তোমাদের জন্যে উপকারীকেননা তোমাদেরকর্মগুলো আমার কাছে পেশ
করা হবে। নেক-কর্ম দেখলে আমি আল্লাহর প্রশংসা করিআর বদ আমল দেখলে আমি তোমাদের হয়ে আল্লাহরদরবারে সুপারিশ করি।
রেফারেন্স
  • ইমাম হায়তামী (রহ:) নিজ ‘মজমুয়া’-উয-যাওয়াইদ’ (:২৪পুস্তকে জানান যে হাদীসটিআল-বাযযার তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেনএবং এর সকল ’রাবী’ (বর্ণনাকারীসহীহ (মানেহাদীসটি সহীহ)
  • এরাকী (সম্ভবতঃ যাইনউদ্দীন হাদীসেরবিশুদ্ধতা নিশ্চিত করেছেন তাঁর- ‘তারহ-উত-তাতরিব ফী শারহ-ইত-তাক্করিব’ গ্রন্থে (:২৯৭)
  • ইবনে সাআদ নিজস্ব ‘আত-তাবাক্কাত-উল-কুবরা’ পুস্তকে (:১৯৪এটি লিপিবদ্ধ করেন
  • ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) স্বরচিত ‘শেফা’ গ্রন্থে(:১৯এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেন
  • ইমাম সৈয়ুতী (রহ:), যিনি এটি নিজ ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (:২৮১ ‘মানাহিল-উসসেফা ফী তাখরিজ--আহাদীস আশ-শেফা’ (পৃষ্ঠা পুস্তকগুলোতে লিপিবদ্ধ করেনতিনি বিবৃত করেন যে আবূ উসামাহ নিজমুসনাদ’ পুস্তকে বকর বিন আব্দিল্লাহ মুযানী(রা:)-এর সূত্রে এবং আল-বাযযার তাঁরমুসনাদ’ বইয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা:)-এর সূত্রে সহীহ সনদে এই হাদীস লিপিবদ্ধকরেন। খাফাযী স্বরচিত ‘নাসিমুর রিয়াদ’ (:১০২ মোল্লা আলী কারী তাঁর ‘শরহেশেফা’(:৩৬শিরোনামের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোতেএটি সমর্থন করেন
  • মোহাদ্দীস ইবনুল জাওযী এটি বকর বিনআব্দিল্লাহ (রা:)  হযরত আনাস বিন মালেক(রা:)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন তাঁর- প্রণীতআল-ওয়াফা বি-আহওয়ালিল মোস্তফা’ পুস্তকে(:৮০৯-১০) ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী (রহ:) নিজ ‘শেফাউস্ সেকাম ফী যেয়ারাতে খায়রিলআনাম’ (৩৪ পৃষ্ঠাবইয়ে বকর ইবনে আব্দিল্লাহমুযানী (রা:) হতে  হাদীস নকল করেছেন এবংইবনে আব্দিল হাদী তাঁর ‘আস্ সারিম-উল-মুনকি’ (২৬৬- পৃষ্ঠায়পুস্তকে এটির সত্যতানিশ্চিত করেছেন
  • আল-বাযযারের বর্ণনাটি ইবনে কাসীরও তারআল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া’ (:২৫৭পুস্তকেলিপিবদ্ধ করে
  • ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) নিজআল-মাতালিব-উল-আলিয়্যাহ’ (:২২-#৩৮৫৩গ্রন্থে এই হাদীসটি বকর ইবনেআব্দিল্লাহ মুযানী (রা:)-এর সূত্রে লিপিবদ্ধকরেন
  • আলাউদ্দীন আলী নিজস্ব ‘কানযুল উম্মাল’ পুস্তকে (১১:৪০৭ #৩১৯০৩ইবনে সাআদেরবর্ণিত হাদীসটি উদ্ধৃত করেন এবং হারিস হতেওএকটি রওয়ায়াত উদ্ধৃত করেন (# ৩১৯০৪)
  • ইমাম ইউসূফ নাবহানী (রহ:) স্বরচিতহুজ্জাতুল্লাহ আলাল লামীন ফী মোজেযাত--সাইয়্যেদিল মুরসালীন’ শীর্ষক পুস্তকে (৭১৩পৃষ্ঠাএই হাদীস বর্ণনা করেন

মাযার নির্মাণ 08


দলিল নং – ১৩
হযরত নাফে’ (রহ:) বলেন, “আমি হযরত (আবদুল্লাহইবনেউমর (রা:)-কে দেখেছি এক বার বা তারও বেশি সময়মহানবী (:)-এর পবিত্র রওযা শরীফ যেয়ারত করেছেন।তিনি সেখানে বলতেন, ‘রাসূলুল্লাহ (:)-এর প্রতি শান্তি বর্ষিতহোকআল্লাহতালা তাঁকে আশীর্বাদধন্য করুন এবং সুখ-শান্তি দিন। হযরত আবূ বকর (রা:)-এর প্রতিও শান্তি বর্ষিতহোক।’ অতঃপর তিনি প্রস্থান করতেন। হযরত ইবনে উমর(রা:)-কে রওযা মোবারক হাতে স্পর্শ করে ওই হাত মুখে(বরকত আদায় তথা আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশ্যেমুছতেওদেখা গিয়েছে।”— ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) কৃত ‘শেফাশরীফ’ গ্রন্থের ৯ম অনুচ্ছেদে বর্ণিত
দলিল নং – ১৪ [হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী (রহ.)-এরভাষ্য]
ইমাম গাযযালী (রহ:) বলেন এবং এটি কোনো হাদীস নয়:
কারো যখন কোনো অসুবিধা (তথা পেরেশানিহয়তখনতার উচিত মাযারস্থ আউলিয়াবৃন্দের কাছে সাহায্য প্রার্থনাকরাএঁরা হলেন সে সকল পুণ্যাত্মা যাঁরা দুনিয়া থেকে বেসালহয়েছেন।  ব্যাপারে কোনো সন্দেহ- নেইযে ব্যক্তি তাঁদেরমাযার যেয়ারত করেনতিনি তাঁদের কাছ থেকে রূহানী মদদ(আধ্যাত্মিক সাহায্যলাভ করেন এবং বরকত তথাআশীর্বাদও প্রাপ্ত হনআর বহুবার আল্লাহর দরবারে তাঁদেরঅসীলা পেশ হবার দরুন মসিবত বা অসুবিধা দূর হয়েছে।— তাফসীরে রূহুল মাআনী৩০তম খণ্ড২৪ পৃষ্ঠা
জ্ঞাতব্য
এসতেগাসাহ’ তথা আম্বিয়া (:)  আউলিয়া(রহ:)-এর কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিষয়টি সম্পর্কেআরও বিস্তারিত জানতে আহলুস্ সুন্নাহওয়েবসাইটের ‘ফেকাহ’ বিভাগে ‘আম্বিয়া (:) আউলিয়া (রহ:)-এর রূহানী মদদ’ শীর্ষক লেখাটিদেখুন
দলিল নং – ১৫ [ইমাম শাফেঈ (রহ.)]
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:)-এর মাযারে নিজের অভিজ্ঞতাবর্ণনাকালে ইমাম শাফেঈ (রহ:) বলেন, “আমি ইমাম আবুহানিফা (রা:) হতে বরকত আদায় করি এবং তাঁর মাযারশরীফ প্রতিদিন যেয়ারত করি। আমি যখন কোনো সমস্যারমুখোমুখি হইতখন- দুই রাকআত নফল নামায পড়ে তাঁরমাযার শরীফ যেয়ারত করিআর (দাঁড়িয়েসমাধানের জন্যেআল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি। ওই স্থান ত্যাগ করার আগেইআমার সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
রেফারেন্স
  • খতীব বাগদাদী সহীহ সনদে এই ঘটনা বর্ণনাকরেন তাঁর কৃত ‘তারিখে বাগদাদ’ গ্রন্থে(:১২৩)
  • ইবনে হাজর হায়তামী প্রণীত ‘আল-খায়রাতআল-হিসান ফী মানাক্কিবিল ইমাম আল-যমআবূ হানিফা’ (৯৪ পৃষ্ঠা)
  • মোহাম্মদ যাহেদ কাওসারী, ‘মাক্কালাত’ (৩৮১পৃষ্ঠা)
  • ইবনে আবেদীন শামী, ‘রাদ্দুল মোহতার লাদুররিল মোখতার’ (:৪১)
জ্ঞাতব্য
এটি সমর্থনকারী দালিলিক প্রমাণ হিসেবে পেশকৃতএবং এটি একটি ’হুজ্জাহ’, কেননা চার মযহাবেরঅনেক ফুকাহা একে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন
দলিল নং – ১৬ [শায়খুল ইসলাম হাফেয ইমাম নববী (রহ.)]
ইমাম সাহেব নিজ ’কিতাবুল আযকার’ পুস্তকের ‘মহানবী(:)-এর মোবারক রওযা যেয়ারত  সেখানে পালিত যিকর’ শীর্ষক অধ্যায়ে লেখেন:
 কথা জ্ঞাত হওয়া উচিত, ’যে কেউ’ হজ্জ্ব পালন করলেতাকে রাসূলুল্লাহ (:)-এর রওযা মোবারক যেয়ারত করতেহবে, ’তা তার গন্তব্য পথের ওপর হোক বা না- হোক’; কারণযেয়ারতে রাসূল (:) হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবাদতগুলোরঅন্যতমসবচেয়ে পুরস্কৃত আমলএবং সবচেয়ে ইপ্সিতলক্ষ্য। যেয়ারতের উদ্দেশ্যে কেউ বের হলে পথে বেশি বেশিসালাত  সালাম পড়া উচিত। আর মদীনা মোনাওয়ারারগাছপবিত্র স্থান  সীমানার চিহ্ন দৃশ্যমান হওয়ামাত্র-সালাত-সালাম আরও বেশি বেশি পড়তে হবে তারঅধিকন্তুএই ‘যেয়ারত’ দ্বারা যাতে নিজের উপকার হয়সে জন্যেআল্লাহর দরবারে তার ফরিয়াদ করাও উচিতআল্লাহ যেনতাকে এই যেয়ারতের মাধ্যমে ইহ-জাগতিক  পারলৌকিককল্যাণ দান করেনএই কামনা তাকে করতে হবে। তার বলাউচিত, ‘এয়া আল্লাহআপনার করুণার দ্বার আমার জন্যেঅবারিত করুনএবং রওযায়ে আকদস যেয়ারতের মাধ্যমেসেই আশীর্বাদ আমায় মঞ্জুর করুনযেটি আপনি মঞ্জুরকরেছেন আপনার- বন্ধুদের প্রতিযাঁরা আপনাকে মানেন।যাঁদের কাছে চাওয়া হয় তাঁদের মধ্যে ওহে সেরা সত্তাআমায়ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি দয়া করুন।— ইমাম নববীরচিত ‘কিতাবুল আযকার’, ১৭৮ পৃষ্ঠা
দলিল নং – ১৭ [ইবনে কাইয়্যেম আল-জাওযিয়্যা]
(ইবনে কাইয়্যেম ‘সালাফীদের গুরু। সে তার শিক্ষক ইবনেতাইমিয়্যার ধ্যান-ধারণার গোঁড়া সমর্থকযার দরুন সে তারইমামের সেরা শিষ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে)
ইবনে কাইয়্যেম লেখে:
প্রথম অধ্যায় – ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ তাঁদের কবরযেয়ারতকারীদেরকে চিনতে পারেন কি-না এবং তাঁদেরসালামের উত্তর দিতে পারেন কি-না?হযরত ইবনু আবদিলবার (রহ:) থেকে বর্ণিতনবী করীম (:) এরশাদ ফরমানকোনো মুসলমান যখন তাঁর কোনো পূর্ব-পরিচিত ভাইয়েরকবরের পাশে যান এবং তাঁকে সালাম জানানতখনআল্লাহতালা ওই সালামের জবাব দেয়ার জন্যে মরহুমেররূহকে কবরে ফিরিয়ে দেন এবং তিনি সে সালামের জবাবদেন। এর দ্বারা বোঝা গেল যে ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিযেয়ারতকারীকে চিনতে পারেন এবং তাঁর সালামের জবাবওদিয়ে থাকেন
বোখারী  মুসলিম শরীফের বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত আছেমহানবী (:) বদর যুদ্ধে নিহত কাফেরদের লাশ একটি কূপেনিক্ষেপ করার আদেশ দেন। এরপর তিনি সেই কূপের কাছেগিয়ে দাঁড়ান এবং এক এক করে তাদের নাম ধরে সম্বোধনকরে বলেন, ‘হে অমুকের পুত্র তমুকহে অমুকের পুত্র তমুকতোমরা কি তোমাদের রবের (প্রভুরপ্রতিশ্রুতি সঠিকভাবেপেয়েছোআমি তো আমার রবের ওয়াদা ঠিকই পেয়েছি।’ তা শুনে হযরত উমর ফারূক (রা:) বল্লেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল(:), আপনি কি এমন লোকদেরকে সম্বোধন করছেন যারালাশে পরিণত হয়েছে?’ হুযূর পাক (:) বল্লেন, ‘যিনি আমাকেসত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথআমার কথাগুলো তারাতোমাদের চেয়েও অধিকতর স্পষ্টভাবে শুনতে পেয়েছেকিন্তুতারা এর উত্তর দিতে অক্ষম।’ প্রিয়নবী (:) থেকে আরওবর্ণিত আছেকোনো ইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দাফন করারপর লোকেরা যখন ফিরে আসতে থাকেতখন সেইইন্তেকালপ্রাপ্ত ব্যক্তি তাদের জুতোর শব্দ পর্যন্ত শুনতে পান।(আল-ফাতহুল কবীর১ম খণ্ড১৬৯ পৃষ্ঠা)
এছাড়া রাসূলে মকবূল (:) তাঁর উম্মতদেরকে  শিক্ষাওদিয়েছেনযখন তাঁরা কবরবাসীকে সালাম দেবেনতখন যেনসামনে উপস্থিত মানুষদেরকে যেভাবে সালাম দেনঠিকসেভাবে সালাম দেবেন। তাঁরা যেন বলেন, ‘আস্ সালামুআলাইকুম দারা কাওমিম্ মুমিনীন।’ অর্থাৎ, ‘হে কবরবাসীমুমিনবৃন্দআপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।’  ধরনেরসম্বোধন তাদেরকেই করা হয় যারা শুনতে পান এবং বুঝতেওপারেন। নতুবা কবরবাসীকে এভাবে সম্বোধন করা হবে জড়পদার্থকে সম্বোধন করার- শামিল
— ইবনে কাইয়্যেম কৃত ’কিতাবুর রূহ’ – রূহের রহস্য-পৃষ্ঠাবাংলা সংস্করণ ১৯৯৮ খৃষ্টাব্দঅনুবাদক – মওলানালোকমান আহমদ আমীমী
ইবনে কাইয়্যেম আরও লেখে:
হযরত ফযল (রা:) ছিলেন হযরত ইবনে উবায়না (রা:)-এরমামাতো ভাই। তিনি বর্ণনা করেনযখন আমার পিতারইন্তেকাল হলোতখন আমি তাঁর সম্পর্কে খুবই ভীত-সন্ত্রস্ত চিন্তিত হয়ে পড়লাম। আমি প্রত্যহ তাঁর কবর যেয়ারতকরতাম। ঘটনাক্রমে আমি কিছুদিন তাঁর কবর যেয়ারতকরতে যেতে পারিনি। পরে একদিন আমি তাঁর কবরের কাছেএসে বসলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মধ্যে আমিদেখলামআমার পিতার কবরটি যেন হঠাৎ ফেটে গেলো।তিনি কবরের মধ্যে কাফনে আবৃত অবস্থায় বসে আছেন।তাঁকে দেখতে মৃতদের মতোই মনে হচ্ছিলো।  দৃশ্য দেখেআমি কাঁদতে লাগলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনপ্রিয় বৎসতুমি এতোদিন পরে এলে কেনআমি বল্লামবাবাআমার আসার খবর কি আপনি জানতে পারেনতিনিবল্লেনতুমি যখন- এখানে আসোতোমার খবর আমি পেয়েযাই। তোমার যেয়ারত  দোয়ার বরকতে আমি শুধু উপকৃতহই নাআমার আশপাশে যাঁরা সমাহিততাঁরাও উল্লসিতআনন্দিত এবং উপকৃত হন।  স্বপ্ন দেখার পর আমি সবসময় আমার পিতার কবর যেয়ারত করতে থাকি।— প্রাগুক্ত-১০ পৃষ্ঠা

জ্ঞাতব্য
ইবনে জাওযী ছিলেন ’আল-জারহ ওয়াত্ তাদীল’-এর কঠোরপন্থী আলেমদের অন্যতমআর তিনি এইবইয়ের প্রারম্ভেই উল্লেখ করেন যে তিনি বিশুদ্ধরওয়ায়াতের সাথে মিথ্যে বিবরণগুলোর সংমিশ্রণকরেননি। (মানে তিনি শুধু বিশুদ্ধ বর্ণনাসম্বলিতসীরাহ’-বিষয়ক  বইটি লিখেছেনএতে সন্নিবেশিতহাদীসগুলো সহীহ বা হাসান পর্যায়ভুক্তযা সনদকিংবা শওয়াহিদ (সাক্ষ্য)-সূত্রে ওই পর্যায়ে পৌঁছেছে)
দলিল নং – ২৩ [ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ.)]
ইমাম ইবনে আল-মোবারক নিজ ‘আয্ যুহদ’ পুস্তকেহাকীমতিরমিযী তাঁর ‘নওয়াদিরুল উসূল’ গ্রন্থেইবনে আবিদ্ দুনইয়া ইবনে মুনদাহ বর্ণনা করেন সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রহ:) থেকেতিনি হযরত সালমান ফারিসী (রা:) হতেযিনি বলেন: ”মোমেনীনবৃন্দের রূহ (আত্মা)-সমূহ  পৃথিবীর ’বরযখে’ অবস্থান করেন এবং তাঁরা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারেনপক্ষান্তরে ’কুফফারদের আত্মাগুলো ’সিজ্জিনে’ অবস্থিত….
হাকীম তিরমিযী আরও অনুরূপ রওয়ায়াতসমূহ হযরতসালমান ফারিসী (রা:) থেকে বর্ণনা করেন
ইবনে আবিদ্ দুনইয়া হযরত মালেক ইবনে আনাস (ইমামমালেকথেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন: “এই রওয়ায়াতআমার কাছে এসেছে এভাবে যে মোমেনীনবৃন্দের আত্মাসমূহমুক্ত এবং তাঁরা যেখানে চান যেতে পারেন।” [ইমাম সৈয়ুতীরচিত ‘শরহে সুদূর’, ১৬৭ পৃষ্ঠা]
অধিকন্তুইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়্যা- নিজ ‘কিতাবুর রূহ’ বইয়ে  বিষয়টি সপ্রমাণ করেছে [২৪৪ পৃষ্ঠাদার--ইবনে-কাসীরদামেশ্কসিরিয়া হতে প্রকাশিত]
দলিল নং – ২৪ [হযরত আবূ আউয়ুব আনসারী (রা.)-এরমাযার শরীফ]
হযরত আবূ আইয়ুব আনসারী (রহ:) মহান সাহাবীদেরএকজন। তিনি কনস্টিনটিনোপোল-এর যুদ্ধে অংশ নেন। শত্রুসীমানায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুখ বেড়ে গেলেতিনি অসিয়ত (উইলকরেন, “আমার বেসালের পরে তোমরাআমার মরদেহ সাথে নিয়ে যাবেআর শত্রুর মোকাবেলাকরতে যখন তোমরা সারিবদ্ধ হবেতখন তোমাদের কদমেরকাছে আমাকে দাফন করবে।— ইবনে আব্দিল বারর, ‘আল-এসতেয়াব ফী মারিফাত-ইল-আসহাব’, :৪০৪-
অতঃপর ইসলামের সৈনিকবৃন্দ তাঁর অসিয়ত অনুসারে তাঁকেদুর্গের দ্বারপ্রান্তে দাফন করেন এবং শত্রুদের সতর্ক করেনযেন তারা তাঁর মাযারের প্রতি অসম্মান না করেতা করলেইসলামী রাজ্যের কোথাও তাদের উপাসনালয়গওলোনিরাপদ থাকবে না। ফলে এমন কি শত্রুরাও তাঁর মাযারেরপ্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য হয়েছিল। আর মানুষেরাও সত্বরতাঁর মাযার থেকে প্রবাহিত খোদায়ী আশীর্বাদ-ধারা সম্পর্কেজানতে পেরেছিলেন। তাঁরা মাযারে এসে যা- প্রার্থনাকরতেনতা- তৎক্ষণাৎ মঞ্জুর হয়ে যেতো
আর হযরত আবূ আইয়ুব (রা:)-এর মাযার কেল্লার কাছেঅবস্থিত এবং তা সবাই জানেন….যখন মানুষেরা বৃষ্টির জন্যেপ্রার্থনা জানায়বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়।— ইবনে আব্দিল বাররপ্রাগুক্ত ‘আল-এস্তেয়াব ফী মারিফাত-ইল-আসহাব’ (:৪০৫)
মুজাহিদ বলেন, “দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে মানুষেরা মাযারেরছাদ খুলে দেনআর বৃষ্টি নামে।
দলিল নং – ২৫ [ইমাম বায়হাকী]
[হাদীস নং ৩৮৭৯আবূ এসহাক আল-কারশী (রা:) বর্ণনাকরেনমদীনা মোনাওয়ারায় আমাদের সাথে এক ব্যক্তিছিলেনযিনি যখন- এমন কোনো খারাপ কাজ সংঘটিতহতে দেখতেন যাকে তিনি বাধা দিতে অক্ষমতৎক্ষণাৎ তিনিমহানবী (:)-এর মোবারক রওযায় যেতেন এবং আরযকরতেন, ‘হে মাযারের অধিবাসীবৃন্দ (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং শায়খাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমাএবং আমাদের সাহায্যকারীমণ্ডলীআমাদের অবস্থার দিকেকৃপাদৃষ্টি করুন।’ …. [হাদীস নং ৩৮৮০আবূ হারব হেলালী(রা:) বর্ণনা করেন যে এক আরবী ব্যক্তি হজ্জ্ব সম্পন্ন করেমসজিদে নববীর দরজায় আসেন। তিনি সেখানে তাঁর উটবেঁধে মসজিদে প্রবেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (:)-এর পবিত্ররওযার সামনে চলে আসেন। তিনি হুযূর পূর নূর (:)-এরকদম মোবারকের কাছে দাঁড়িয়ে আরয করেন: ‘এয়ারাসূলাল্লাহ (:), আপনার প্রতি সালাম।’ অতঃপর তিনিহযরত আবূ বকর (রা:)  হযরত উমর (রা:)-এর প্রতিওসালাম-সম্ভাষণ জানান। এরপর তিনি আবার বিশ্বনবী (:)-এর দিকে ফিরে আরয করেন: ”এয়া রাসূলাল্লাহ (:)! আপনার জন্যে আমার পিতা  মাতা কোরবান হোন। আমিআপনার দরবারে এসেছিকারণ আমি পাপকর্ম ভুলত্রুটিতে নিমজ্জিতআর এমতাবস্থায় আপনাকে আল্লাহরকাছে যেন অসীলা করতে পারি এবং আপনিও আমার পক্ষেশাফায়াত করতে পারেন। কেননাআল্লাহতালা এরশাদফরমান: ’এবং আমি কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি কিন্তু জন্যে যে আল্লাহর নির্দেশে তাঁর আনুগত্য করা হবেআর যদিকখনো তারা (মোমেনীননিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করেতখন হে মাহবুবআপনার দরবারে হাজির হয়অতঃপরআল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেআর রাসূল (:)- তাদেরপক্ষে সুপারিশ করেনতবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে অত্যন্ততওবা কবুলকারীদয়ালু পাবে’ [আল-কুরআন:৬৪মুফতী আহমদ এয়ার খান কৃত ‘নূরুল এরফান’ বাংলাসংস্করণ]” অতঃপর ওই ব্যক্তি সাহাবী (রা:)-দের এক বড়দলের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতে থাকেন, ’ওহে সেরা ব্যক্তিবৃন্দযাঁরা (মাটিরগভীরে শায়িত’; ‘যাঁদের সুগন্ধিতে মাটিরঅভ্যন্তরভাগ  বহির্ভাগ মিষ্ট স্বাদ পরিগ্রহ করেছে’; ’আপনিযে মাযারে শায়িত তার জন্যে আমার জান কোরবান’; ‘আরযে মাযার-রওযায় পবিত্রতারহমত-বরকত  অপরিমিতদানশীলতা পাওয়া যায়।’ [‘শুয়াবুল ঈমান৬ষ্ঠ খণ্ড৬০ পৃষ্ঠাহাদীস নং ৩৮৭৯-৮০আরবী উদ্ধৃতি পিডিএফ আকারেওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ]
দলিল নং – ২৬ [হাফেয ইবনে হিব্বান (রহ.)]
ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ:) নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালেআল-রেযা (রহ:)-এর মাযারে তাঁর তাওয়াসসুলের বিবরণলিপিবদ্ধ করেন এবং বলেন,
তুস্ নগরীতে অবস্থান করার সময় যখনই আমি কোনোসমস্যা দ্বারা পেরেশানগ্রস্ত হয়েছিতৎক্ষণাৎ আমি হযরতআলী ইবনে মূসা রেযা (তাঁর নানা তথা হুযূর পাক  তাঁরপ্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক)-এর মাযার শরীফযেয়ারত করতাম এবং আল্লাহর কাছে সমাধান চাইতাম।এতে আমার দোয়া কবুল হতো এবং পেরেশানিও দূর হতো।আমি এটি- করতাম এবং বহুবার এর সুফল পেয়েছি।— ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘কিতাবুস্ সিকাত’, ৮ম খণ্ড৪৫৬-পৃষ্ঠা, # ১৪৪১১
দলিল নং – ২৭
ইমাম আবূ হানিফা (রহ:) বর্ণনা করেন ইমাম নাফে’ (রহ:) হতেতিনি হযরত ইবনে উমর (রা:) হতেতিনি বলেন:

কেবলার দিক থেকে আসার সময় মহানবী (:)-এর রওযা--আকদস যেয়ারতের সঠিক পন্থা হলো রওযার দিকে মুখকরে এবং কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়াতে হবেঅতঃপরসালাম-সম্ভাষণ জানাতে হবে এই বলে – ‘হে আল্লাহর রাসূলএবং তাঁর- রহমত  বরকত (:), আপনার প্রতি সালাম— মুসনাদে ইমামে আবি হানিফাহবাবে যেয়ারাতে কবর আন্নবী (:)
Top