📌প্রশ্ন-১। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর না করে সৌদি আরব বা অন্য কোনো দেশের উপর নির্ভর করে ভিন্ন কোনো দেশের অধিবাসীর সাওম পালন বা ভঙ্গ করা যাবে কিনা?
উত্তর ঃ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর না করে সৌদি আরবের সাথে একই দিনে রমাদানের সাওম পালন শুরু করা এবং সাওম ভঙ্গ করে ঈদ করার যৌক্তিকতা শরীয়তের মানদন্ডে উন্নিত নয়। চাঁদের উদয় স্থানের ভিন্নতার দরুণ দিনের ব্যবধান হওয়া স্বাভাবিক। একই দিনের রাতের বেলায় যতটুকু এলাকাতে চাঁদ দেখা যায় ততটুকু এলাকা একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ শুক্রবার রাতে সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেল, ঠিক একই রাতে বাংলাদেশেও দেখা গেছে, তাহলে একই দিন সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সাওম পালন ও সাওম ভঙ্গ করে ঈদ পালন করবে। কিন্তু শুক্রবার রাতে যদি সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যায় আর বাংলাদেশে যদি ঐ রাতে চাঁদ দেখা না যায় বরং শনিবারে দেখা যায় তাহলে সৌদি আরবের সাথে সাওম পালন ও সাওম ভেঙ্গে ঈদ করা শরীয়ত পরিপন্থী। যেহেতু বিশ্বনবী (সাঃ) সাওম পালন ও সাওম ভঙ্গের সাথে চাঁদ দেখার শর্ত দিয়েছেন। তাই চাঁদ দেখার উপর নির্ভর না করে সৌদি আরবের সাথে চাঁদ দেখা বা জ্যোতিষ গণনার উপর নির্ভর করে সাওম পালন ও সাওম ভঙ্গ করে ঈদ উদযাপন করা ঠিক নয়।
📌প্রশ্ন-২। (ক) কেউ যদি ৩০ দিন সাওম পূর্ণ করে ভিন্ন কোনো দেশে সফর করে যেখানে রমাদান মাস চলছে, এক্ষেত্রে ঐ সফরকারীর করণীয় কি?
(খ) যদি কেউ রমাদান মাসে ২৭ টি অথবা ২৮টি রোজা পূর্ণ করে এমন কোনো দেশে গমন করে যেখানে ঈদের দিন চলছে এমতাবস্থায় এ ব্যক্তির করণীয় কি?
উত্তর ঃ কেউ যদি রমাদানের ৩০ দিন সাওম পূর্ণ করে এমন দেশে গমন করলো সেখানে রমাদান মাস এখনো চলছে তাহলে ঐ এলাকায় পৌছার পর বর্ধিত দিনে নফল হিসেবে সাওম পালন করবে অথবা চুপিসারে সাওম ভঙ্গ করবে। কিন্তু যদি ২৮ রমাদান পূর্ণ করে এমন দেশে গমন করলো যেখানে রমাদানের মাস শেষ হয়ে গেল এবং ঈদের দিন চলছে তাহলে ঐ এলাকার লোকদের সাথে ঈদ করবে এবং ঐ এলাকার রমাদান যদি ২৯ দিনের হয় তাহলে ১টি সাওম এবং ৩০দিনের হয় তাহলে ২টি সাওম ঈদের পর কাজা করবে।
📌প্রশ্ন-৩। পরীক্ষা বা অন্য কোনো কাজের চাপ বা অজুহাত দেখিয়ে সাওম পালন থেকে বিরত থাকা যাবে কিনা?
উত্তর ঃ পরীক্ষা বা পারিবারিক কাজের কারণে রমাদানের সাওম পালন থেকে বিরত থাকা হারাম। অনেক ছেলে-মেয়েকে দেখা যায় প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পরও পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে সাওম পালন থেকে বিরত থাকে এটা কবিরা গুনাহ।
📌প্রশ্ন-৪। জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনো অত্যধিক কষ্টকর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সাওম ভঙ্গ বা সাওম পালন থেকে বিরত থাকা জায়েজ আছে কিনা?
উত্তর ঃ রিক্সা চালানো, মাটি কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করা ইত্যাদি কষ্টকর পরিশ্রমের জন্য রমাদানের সাওম ভঙ্গ করা যায়েজ নেই। তবে সে কষ্টকর কাজ ছাড়া জীবিকা নির্বাহের আর কোনো সুযোগ নেই, তাহলে জীবন রক্ষার্থে যতদিন সাওম ভঙ্গ করা দরকার ততদিনের অনুমোদন আছে। কিন্তু সাওম ভঙ্গ করতে হয় এমন শ্রম থেকে বের হয়ে আসার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে।
📌প্রশ্ন-৫। (ক) গরমের তীব্রতার কারণে সাওম পালনকারী মাথায় পানি দিয়ে গোসল করলে অথবা চোখে সুরমা ব্যবহার করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কিনা?
(খ) সাওম পালনকারীর জন্য তরকারীর স্বাদ দেখা জায়েজ আছে কিনা?
উত্তর ঃ গরমের তীব্রতার কারণে সাওম পালনকারী কর্তৃক মাথায় পানি দেয়া, ভেজা কাপড় মাথায় বা কপালে দেয়া, গোসল করা, কুলি করা, চোখে সুরমা ব্যবহার করা, তেল ব্যবহার করা, কাঁচা বা শুকনো গাছের ডাল নিয়ে মেসওয়াক সাওমের ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে স্বাদ নেয়া যাবে। একান্তই প্রোয়োজন না হলে ডেক্সি বা পাতিলের তরকারীর স্বাদ দেখা মাকরূহ, তবে পেটে যেন কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। প্রয়োজন না হলে এরকম করা উচিত নয়। বিনা প্রয়োজনে স্বাদ নেয়া মাকরূহ। তদ্রুপ বাধ্য হয়ে/অনোন্যোপায় হয়ে শিশুকে চাবিয়ে খাওয়ালে মাকরুহ হবে না।
📌প্রশ্ন-৬। সাওম পালন অবস্থায় খাবারের বিকল্প জাতীয় ইনজেকশন গ্রহণ করা যাবে কিনা?
উত্তর ঃ যে সব ইনজেকশন খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয় তাতে সাওম ভেঙ্গে যাবে।
📌প্রশ্ন-৭। অসুস্থতার জন্য ডুশ (সাপোজিটর) ব্যবহার করা জায়েয কিনা?
উত্তর ঃ সাওম অবস্থায় ডুশ ব্যবহার করলে, নাক বা মুক দিয়ে ওষুধ ঢাললে সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে, কাযা আদায় ওয়াজিব হবে।
📌প্রশ্ন-৮ । সাওম পালন অবস্থায় ক্রীম, সুরমা, আতর বা বডি স্প্রে ব্যবহারে সাওমের কোন ক্ষতি হবে কিনা?
উত্তর ঃ সাওম পালন অবস্থায় তেল, শুরমা ব্যবহার করা যাবে। আতর ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু বডি স্প্রে ব্যবহারে সাওম মাকরুহ হয়ে যেতে পারে তাই এর থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
📌প্রশ্ন-৯। সাওম পালনের সময় ব্রাশ, মাজন অথবা অন্য কোন পেস্ট ব্যবহার করা জায়েয কিনা?
উত্তর ঃ সাওম পালনের সময় মিসওয়াক করা সুন্নাত। ব্রাশ, মাজন ইত্যাদি যা পেটের ভিতর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। না গিললেও রোজা মাকরূহ হবে।
📌প্রশ্ন-১০। সাওম পালন অবস্থায় হস্তমৈথুনের বিধান এবং করলে তার করণীয় কি?
উত্তর ঃ হস্তমৈথুন হারাম। এতে সাওম ভঙ্গ হবে ।
📌প্রশ্ন-১১। রমাদানে সাওম পালনের জন্য হায়েজ বন্ধ করার বড়ি খাওয়া উচিত কিনা?
উত্তর ঃ রমাদানে সাওম পালনের জন্য হায়েজ বন্ধ করার বড়ি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। তবে কেউ খেলে আর মাসিক রক্তস্রাব বন্ধ হলে সাওম পালন করতে হবে।
📌প্রশ্ন-১২। সাওম পালন অবস্থায় গেসট্রোসকপি, এন্ডোসকপি এবং কলোনোস্কপি এর ব্যবহার বিধান সম্মত কিনা?
উত্তর ঃ গেসট্রোসকপি এন্ড্রোসকপি যাতে মুখ দিয়ে ছোট পাইপ ঢুকিয়ে স্টোমাক ও নাড়িভুড়ির ছবি ধারণ করে যোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং ক’লোনোস্কপি যাতে ক্যামেরা সহ ছোট পাইপ পায়ু পথে ঢুকিয়ে ভিতরে ছবি ধারণ করে রোগ নির্ণয় করা হয়। এগুলোতে যদি কোনো ধরণের পানি বা তেল জাতীয় জিনিস অথবা খাবার পেটে পৌঁছানো হয় তাহলে সাওম ভেঙ্গে যাবে। আর যদি কোনো ধরণের পানি বা তেল জাতীয় জিনিস প্রবেশ করানো না হয় তাহলে সাওম ভঙ্গ হবে না।
📌প্রশ্ন-১৩। সাওম পালন অবস্থায় নাকের ড্রপ ব্যবহার জায়েজ কিনা?
উত্তর ঃ নাকের ড্রপ যদি পেটে যায় তাহলে সাওম ভেঙ্গে যাবে। কারণ পেটের ভিতরে কিছু প্রবেশের জন্য নাক একটা বিকল্প পথ হিসেবে কাজ করে।
📌প্রশ্ন-১৪। কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে সাওমের কোনো ক্ষতি হবে কিনা?
উত্তর ঃ কান ও চোখের ড্রপ ব্যবহার করলে সাওম ভঙ্গ হবে না। কারণ পেটে কোনো জিনিস প্রবেশের জন্য কান ও চোখ বিকল্প কোনো পথ নয়। যদি চোখের ড্রপ ব্যবহারে গলায় এর স্বাদ অনুভব হয় তবুও রোজা ভাঙবে না।
📌প্রশ্ন-১৫। তারাবীহর সালাত কয় রাকাত?
উত্তর ঃ তারাবীহর সালাতে রাকাত নিয়ে যে যতই মতভেদ করুক না কেন ২০ রাকাত সালাত আদায় করার ব্যাপারে সাহাবীদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ওজর ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহর সালাত আদায়ে অবহেলা করা উচিত নয়।
📌প্রশ্ন-১৬। রমাদানে তারাবীহর সালাতে কোরআন খতম করার বিধান কি?
উত্তর ঃ রমাদানের তারাবীহর সালাতে কোরআন খতম করা সুন্নাত। এক্ষেত্রে প্রতি দশ দিনে অথবা অন্ততঃ পুরো মাসে একবার খতম যেন দেওয়া হয় সেটা উত্তম। অবশ্যই শুদ্ধতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
📌প্রশ্ন-১৭। কোনো ব্যক্তি জামাতে তারাবীহর সালাত আদায়ে আগ্রহী কিন্তু মসজিদে এসে দেখে তারাবীহর সালাত শুরু হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় তার করণীয় কি?
উত্তর ঃ তারাবীহর সালাত এশার সালাতের পরে আদায় করা হয়। তাই কেউ যদি জামাতে শামিল হওয়ার জন্য এসে দেখে যে এশারের জামাত শেষ হয়ে তারাবীহর জামাত চলছে, সে প্রথমে এশারের সালাত আদায় করবে। তারপর তারাবীহের জামাতে শামিল হবে।
📌প্রশ্ন-১৮। তারাবীহর সালাতে অতি দ্রুত তিলাওয়াত বৈধ আছে কিনা?
উত্তর ঃ তারাবীহর সালাতে প্রতি রাকাতে ভারসাম্যপূর্ণ তিলাওয়াত করা উচিত। তিলাওয়াত দীর্ঘায়িত করে মুসল্লিদের কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। এটা শুধু তারাবীহের ক্ষেত্রে নয় বরং সব সালাতে ইমামের উচিত মুক্তাদীদের প্রতি খেয়াল রেখে তিলাওয়াতের ভারসাম্য রক্ষা করা। আবার এত দ্রুত তিলাওয়াত করাও জায়েয নেই যাতে অর্থ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং মুক্তাদীদের বুঝতে অসুবিধা যেন না হয়।
📌প্রশ্ন-১৯। রমাদান মাসে বিতরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করার বিধান কি?
উত্তর ঃ রমাদান মাসে বিতরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করার উপর ‘ইজমা’ হয়েছে। আর রমাদান ছাড়া অন্য মাসে বিতরের সালাত একাকী আদায় করার উপর ‘ইজমা’ হয়েছে।
উত্তর ঃ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর না করে সৌদি আরবের সাথে একই দিনে রমাদানের সাওম পালন শুরু করা এবং সাওম ভঙ্গ করে ঈদ করার যৌক্তিকতা শরীয়তের মানদন্ডে উন্নিত নয়। চাঁদের উদয় স্থানের ভিন্নতার দরুণ দিনের ব্যবধান হওয়া স্বাভাবিক। একই দিনের রাতের বেলায় যতটুকু এলাকাতে চাঁদ দেখা যায় ততটুকু এলাকা একই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণ স্বরূপ শুক্রবার রাতে সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেল, ঠিক একই রাতে বাংলাদেশেও দেখা গেছে, তাহলে একই দিন সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সাওম পালন ও সাওম ভঙ্গ করে ঈদ পালন করবে। কিন্তু শুক্রবার রাতে যদি সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যায় আর বাংলাদেশে যদি ঐ রাতে চাঁদ দেখা না যায় বরং শনিবারে দেখা যায় তাহলে সৌদি আরবের সাথে সাওম পালন ও সাওম ভেঙ্গে ঈদ করা শরীয়ত পরিপন্থী। যেহেতু বিশ্বনবী (সাঃ) সাওম পালন ও সাওম ভঙ্গের সাথে চাঁদ দেখার শর্ত দিয়েছেন। তাই চাঁদ দেখার উপর নির্ভর না করে সৌদি আরবের সাথে চাঁদ দেখা বা জ্যোতিষ গণনার উপর নির্ভর করে সাওম পালন ও সাওম ভঙ্গ করে ঈদ উদযাপন করা ঠিক নয়।
📌প্রশ্ন-২। (ক) কেউ যদি ৩০ দিন সাওম পূর্ণ করে ভিন্ন কোনো দেশে সফর করে যেখানে রমাদান মাস চলছে, এক্ষেত্রে ঐ সফরকারীর করণীয় কি?
(খ) যদি কেউ রমাদান মাসে ২৭ টি অথবা ২৮টি রোজা পূর্ণ করে এমন কোনো দেশে গমন করে যেখানে ঈদের দিন চলছে এমতাবস্থায় এ ব্যক্তির করণীয় কি?
উত্তর ঃ কেউ যদি রমাদানের ৩০ দিন সাওম পূর্ণ করে এমন দেশে গমন করলো সেখানে রমাদান মাস এখনো চলছে তাহলে ঐ এলাকায় পৌছার পর বর্ধিত দিনে নফল হিসেবে সাওম পালন করবে অথবা চুপিসারে সাওম ভঙ্গ করবে। কিন্তু যদি ২৮ রমাদান পূর্ণ করে এমন দেশে গমন করলো যেখানে রমাদানের মাস শেষ হয়ে গেল এবং ঈদের দিন চলছে তাহলে ঐ এলাকার লোকদের সাথে ঈদ করবে এবং ঐ এলাকার রমাদান যদি ২৯ দিনের হয় তাহলে ১টি সাওম এবং ৩০দিনের হয় তাহলে ২টি সাওম ঈদের পর কাজা করবে।
📌প্রশ্ন-৩। পরীক্ষা বা অন্য কোনো কাজের চাপ বা অজুহাত দেখিয়ে সাওম পালন থেকে বিরত থাকা যাবে কিনা?
উত্তর ঃ পরীক্ষা বা পারিবারিক কাজের কারণে রমাদানের সাওম পালন থেকে বিরত থাকা হারাম। অনেক ছেলে-মেয়েকে দেখা যায় প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পরও পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে সাওম পালন থেকে বিরত থাকে এটা কবিরা গুনাহ।
📌প্রশ্ন-৪। জীবিকা নির্বাহের জন্য কোনো অত্যধিক কষ্টকর কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সাওম ভঙ্গ বা সাওম পালন থেকে বিরত থাকা জায়েজ আছে কিনা?
উত্তর ঃ রিক্সা চালানো, মাটি কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করা ইত্যাদি কষ্টকর পরিশ্রমের জন্য রমাদানের সাওম ভঙ্গ করা যায়েজ নেই। তবে সে কষ্টকর কাজ ছাড়া জীবিকা নির্বাহের আর কোনো সুযোগ নেই, তাহলে জীবন রক্ষার্থে যতদিন সাওম ভঙ্গ করা দরকার ততদিনের অনুমোদন আছে। কিন্তু সাওম ভঙ্গ করতে হয় এমন শ্রম থেকে বের হয়ে আসার জন্য সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে।
📌প্রশ্ন-৫। (ক) গরমের তীব্রতার কারণে সাওম পালনকারী মাথায় পানি দিয়ে গোসল করলে অথবা চোখে সুরমা ব্যবহার করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে কিনা?
(খ) সাওম পালনকারীর জন্য তরকারীর স্বাদ দেখা জায়েজ আছে কিনা?
উত্তর ঃ গরমের তীব্রতার কারণে সাওম পালনকারী কর্তৃক মাথায় পানি দেয়া, ভেজা কাপড় মাথায় বা কপালে দেয়া, গোসল করা, কুলি করা, চোখে সুরমা ব্যবহার করা, তেল ব্যবহার করা, কাঁচা বা শুকনো গাছের ডাল নিয়ে মেসওয়াক সাওমের ক্ষতি হবে না। প্রয়োজনে স্বাদ নেয়া যাবে। একান্তই প্রোয়োজন না হলে ডেক্সি বা পাতিলের তরকারীর স্বাদ দেখা মাকরূহ, তবে পেটে যেন কোনো কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। প্রয়োজন না হলে এরকম করা উচিত নয়। বিনা প্রয়োজনে স্বাদ নেয়া মাকরূহ। তদ্রুপ বাধ্য হয়ে/অনোন্যোপায় হয়ে শিশুকে চাবিয়ে খাওয়ালে মাকরুহ হবে না।
📌প্রশ্ন-৬। সাওম পালন অবস্থায় খাবারের বিকল্প জাতীয় ইনজেকশন গ্রহণ করা যাবে কিনা?
উত্তর ঃ যে সব ইনজেকশন খাদ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার হয় তাতে সাওম ভেঙ্গে যাবে।
📌প্রশ্ন-৭। অসুস্থতার জন্য ডুশ (সাপোজিটর) ব্যবহার করা জায়েয কিনা?
উত্তর ঃ সাওম অবস্থায় ডুশ ব্যবহার করলে, নাক বা মুক দিয়ে ওষুধ ঢাললে সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে, কাযা আদায় ওয়াজিব হবে।
📌প্রশ্ন-৮ । সাওম পালন অবস্থায় ক্রীম, সুরমা, আতর বা বডি স্প্রে ব্যবহারে সাওমের কোন ক্ষতি হবে কিনা?
উত্তর ঃ সাওম পালন অবস্থায় তেল, শুরমা ব্যবহার করা যাবে। আতর ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু বডি স্প্রে ব্যবহারে সাওম মাকরুহ হয়ে যেতে পারে তাই এর থেকে বিরত থাকাই উত্তম।
📌প্রশ্ন-৯। সাওম পালনের সময় ব্রাশ, মাজন অথবা অন্য কোন পেস্ট ব্যবহার করা জায়েয কিনা?
উত্তর ঃ সাওম পালনের সময় মিসওয়াক করা সুন্নাত। ব্রাশ, মাজন ইত্যাদি যা পেটের ভিতর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তা গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। না গিললেও রোজা মাকরূহ হবে।
📌প্রশ্ন-১০। সাওম পালন অবস্থায় হস্তমৈথুনের বিধান এবং করলে তার করণীয় কি?
উত্তর ঃ হস্তমৈথুন হারাম। এতে সাওম ভঙ্গ হবে ।
📌প্রশ্ন-১১। রমাদানে সাওম পালনের জন্য হায়েজ বন্ধ করার বড়ি খাওয়া উচিত কিনা?
উত্তর ঃ রমাদানে সাওম পালনের জন্য হায়েজ বন্ধ করার বড়ি খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী। তবে কেউ খেলে আর মাসিক রক্তস্রাব বন্ধ হলে সাওম পালন করতে হবে।
📌প্রশ্ন-১২। সাওম পালন অবস্থায় গেসট্রোসকপি, এন্ডোসকপি এবং কলোনোস্কপি এর ব্যবহার বিধান সম্মত কিনা?
উত্তর ঃ গেসট্রোসকপি এন্ড্রোসকপি যাতে মুখ দিয়ে ছোট পাইপ ঢুকিয়ে স্টোমাক ও নাড়িভুড়ির ছবি ধারণ করে যোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং ক’লোনোস্কপি যাতে ক্যামেরা সহ ছোট পাইপ পায়ু পথে ঢুকিয়ে ভিতরে ছবি ধারণ করে রোগ নির্ণয় করা হয়। এগুলোতে যদি কোনো ধরণের পানি বা তেল জাতীয় জিনিস অথবা খাবার পেটে পৌঁছানো হয় তাহলে সাওম ভেঙ্গে যাবে। আর যদি কোনো ধরণের পানি বা তেল জাতীয় জিনিস প্রবেশ করানো না হয় তাহলে সাওম ভঙ্গ হবে না।
📌প্রশ্ন-১৩। সাওম পালন অবস্থায় নাকের ড্রপ ব্যবহার জায়েজ কিনা?
উত্তর ঃ নাকের ড্রপ যদি পেটে যায় তাহলে সাওম ভেঙ্গে যাবে। কারণ পেটের ভিতরে কিছু প্রবেশের জন্য নাক একটা বিকল্প পথ হিসেবে কাজ করে।
📌প্রশ্ন-১৪। কানে ও চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে সাওমের কোনো ক্ষতি হবে কিনা?
উত্তর ঃ কান ও চোখের ড্রপ ব্যবহার করলে সাওম ভঙ্গ হবে না। কারণ পেটে কোনো জিনিস প্রবেশের জন্য কান ও চোখ বিকল্প কোনো পথ নয়। যদি চোখের ড্রপ ব্যবহারে গলায় এর স্বাদ অনুভব হয় তবুও রোজা ভাঙবে না।
📌প্রশ্ন-১৫। তারাবীহর সালাত কয় রাকাত?
উত্তর ঃ তারাবীহর সালাতে রাকাত নিয়ে যে যতই মতভেদ করুক না কেন ২০ রাকাত সালাত আদায় করার ব্যাপারে সাহাবীদের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই ওজর ব্যতীত ২০ রাকাত তারাবীহর সালাত আদায়ে অবহেলা করা উচিত নয়।
📌প্রশ্ন-১৬। রমাদানে তারাবীহর সালাতে কোরআন খতম করার বিধান কি?
উত্তর ঃ রমাদানের তারাবীহর সালাতে কোরআন খতম করা সুন্নাত। এক্ষেত্রে প্রতি দশ দিনে অথবা অন্ততঃ পুরো মাসে একবার খতম যেন দেওয়া হয় সেটা উত্তম। অবশ্যই শুদ্ধতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
📌প্রশ্ন-১৭। কোনো ব্যক্তি জামাতে তারাবীহর সালাত আদায়ে আগ্রহী কিন্তু মসজিদে এসে দেখে তারাবীহর সালাত শুরু হয়ে গেছে, এমতাবস্থায় তার করণীয় কি?
উত্তর ঃ তারাবীহর সালাত এশার সালাতের পরে আদায় করা হয়। তাই কেউ যদি জামাতে শামিল হওয়ার জন্য এসে দেখে যে এশারের জামাত শেষ হয়ে তারাবীহর জামাত চলছে, সে প্রথমে এশারের সালাত আদায় করবে। তারপর তারাবীহের জামাতে শামিল হবে।
📌প্রশ্ন-১৮। তারাবীহর সালাতে অতি দ্রুত তিলাওয়াত বৈধ আছে কিনা?
উত্তর ঃ তারাবীহর সালাতে প্রতি রাকাতে ভারসাম্যপূর্ণ তিলাওয়াত করা উচিত। তিলাওয়াত দীর্ঘায়িত করে মুসল্লিদের কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। এটা শুধু তারাবীহের ক্ষেত্রে নয় বরং সব সালাতে ইমামের উচিত মুক্তাদীদের প্রতি খেয়াল রেখে তিলাওয়াতের ভারসাম্য রক্ষা করা। আবার এত দ্রুত তিলাওয়াত করাও জায়েয নেই যাতে অর্থ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং মুক্তাদীদের বুঝতে অসুবিধা যেন না হয়।
📌প্রশ্ন-১৯। রমাদান মাসে বিতরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করার বিধান কি?
উত্তর ঃ রমাদান মাসে বিতরের সালাত জামাতের সহিত আদায় করার উপর ‘ইজমা’ হয়েছে। আর রমাদান ছাড়া অন্য মাসে বিতরের সালাত একাকী আদায় করার উপর ‘ইজমা’ হয়েছে।