♥মি'রাজের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পর্ব (১০) শেষ পর্ব♥

প্রিয় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ থেকে পত্যাবর্তনকালে আল্লাহ তা'আলা তার একনিষ্ঠ ইবাদত ও অনুগত্য হিসেবে মু'মিনদের মি'রাজস্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রদান করেন। আর পরবর্তী সময়ে তথা মদিনায় হিজরতের পর ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে গেলে পরিচলানার জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন হবে তার প্রতি নির্দেশ করতঃ তিনি চৌদ্দদফা নীতিমালা পেশ করেন। তা এমন যে, ঐ মৌলিক নীতিগুলোর উপর সামুষ্টিকভাবে মানবজীবনের প্রাসাদের ভিত্তি গড়ে তোলা ইসলামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
অর্থাৎ মদিনায় যে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠবে তার ভিত্তি কোন সব আদর্শের উপর হবে, কোন নৈতিক, তামাদ্দুনিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক আইনের উপর হবে তা দুনিয়ার মানুষকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন সূরা বনী ইসরাইলের পরবর্তী কয়েকটি আয়াতের মধ্যে।
(সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩-৩৭)।

সে চৌদ্দ দফা মূলনীতি এই-
(১) এক আল্লাহরই ইবাদত ও আনুগত্য করাঃ-
আল্লাহ বলেন* আপনার রবের নির্দেশ, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না।"
(সূরা বনী ইসরাইল ২৩)
 অর্থাৎ আল্লাহর আদেশকেই একমাত্র আদেশ এবং তার আইনকেই একমাত্র আইন স্বীকার করে নিবে।

(২) পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার করাঃ
পিতা মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তোমাদের নিকট যদি তাদের কোন একজন কিংবা উভয়জন বৃদ্ধ্যবস্থায় থাকে, তবে তুমি তাদেরকে 'উহ' পর্যন্ত বলবে না। তাদেরকে ধমক দেবে না। বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদা সহকারে কথা বলবে এবং বিনয়ভাবে তাদের সম্মুখে নত হয়ে থাকবে। আর এ দোয়া করবে-হে প্রভু! ওদের প্রতি রহমত কর, যেমনি তারা স্নেহ ভরে বাল্যকালে আমাদেরকে লালনপালন করিছেলেন।
(সূরা বনী ইসরাইল- ২৩,২৪)

অর্থাৎ আল্লাহর পর সকল মানুষের উপর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পিতামাতার অধীকার। সন্তানকে যে কোন অবস্থায় পিতামাতার অবশ্যই অনুগত, সেবা শুশ্রুকারীও আদব রক্ষাকারী হতে হবে।

(৩) নিকট আত্মীয় ও অভাবীদের অধিকার দেওয়াঃ আর নিকট আত্মীয়দের তাদের অধিকার দাও, মিসকিন সম্বলহীন পথিককে তার অধিকার দাও।
(সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৬)
 অর্থাৎ তোমার উপার্জিত দন

সম্পদকে কেবল নিজের জন্যই সংরক্ষিত রাখবে না। বরং এর দ্বারা নিজের আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী ও অন্যান্য অভাবী লোকদের অধিকারও যতাযত আদায় করতে হবে।

(৪) অপব্যয় থেকে বিরত থাকবেঃ
তোমরা অপব্যয় অপচয় করবে না। অপব্যয়কারী লোক শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের অকৃতজ্ঞ
( সূরা বনী ইসরাইল ২৬'২৯)

অর্থাৎ প্রয়োজনে তোমার উপার্জিত সম্পদ নিজের কাজে ব্যয় কর। এর পর আত্মীয়স্বজন ও অভাবীদের মধ্যে তাদের অভাব মোছনের জন্য দান কর, কিন্তু বিলাসিতা ও বেহুদা কাজে অপব্যয় করবে না। কারণ, এতে তোমার নিজের কোন লাভ হল না। আর সমাজ এবং জাতীরও কোন লাভ হলো না। বরং এ অপব্যয় শেষ পর্যন্ত তোমাকে অভাবগ্রস্ত করে তুলবে যেটা শয়তানরাই এক মাত্র কামনা করে।

(৫) সায়েল-অভাবীদের সাথে সুন্দর আচরণ করাঃ
তোমারা যদি অভাবীদের হতে পাশ কেটে থাকতে চাও, এ কারণে যে, তোমারা তোমাদের রবের রহমত পাওয়ার আকাঙ্ক্ষী। তবে তাদেরকে বিনয়সূচক জবাব দাও।
( সূরা বনী ইসরাইলঃ ২৮)

অর্থাৎ কোন আত্মীয়স্বজন, মিসকীন ও সম্বলহীনদের কিছু দিতে না পারলে তাদের সুন্দর কথা দিয়ে বিদায় দিবে। এটাও এক প্রকার দান বিশেষ।

(৬) অর্থ ব্যয়ে ভারসাম্যতা রক্ষা করে চলবেঃ
নিজের হাত গলায় বেঁধে রাখবে না, আর একেবারে খোলাও ছেড়ে দেবে না। তা করলে তুমি তিরস্কৃত ও অক্ষম হয়ে যাবে।
( সূরা বনী ইসরাইল ২৯)

অর্থাৎ এটি একটা রূপক কথা। গলায় হাত বাঁধা বলতে কার্পণ্য আর খোলা ছেড়ে দেওয়া বলতে অপচয় ও বেহুদা খরচ করা বুঝিয়েছে। এক কথায়, তোমরা না কৃপণ হয়ে ধনসম্পদ স্তুপিত করে রাখবে, আর না অপচয়কারী হয়ে নিজের অর্থ নৈতিক শক্তি বিনষ্ট করবে, বরং এ ব্যপারে মধ্যম নীতি গ্রহণ করবে।

(৭) দরিদ্রতার আশংকায় সন্তান হত্যা করবে নাঃ
নিজের সন্তানদেরকে দরিদ্রতার আশাংকায় হত্যা করবে না। আমি তাদেরকে রিজিক দিয়ে থাকি। আর তোমাদেরকেও। বস্তুত তাদের হত্যা করা একটি অতি বড় ভুল কাজ।
( সূরা বনী ইসরাইল -৩১)

(৮) যেনা ব্যভিচারের নিকটও যাবে নাঃ
যেনার নিকটে যেয়েও না, তা অত্যন্ত খারাপ কাজ, আর অতিব নিকৃষ্ট পথ।
(সূরা বনী ইসরাইলঃ ৩৩)

অর্থাৎ তারা যে কেবল যেনা ব্যভিচার থেকে কার্য থেকে বিরত থাকবে শুধু তা নয়, বরং যেনার উদ্বোধক ও প্রেরণাদায়ক অন্যান্য সকল কাজ হতেও দূরে থাকবে। আর তা হলো বেপর্দা, নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা, মদ্যপান, গান বাজনা, নাচ, ছবি-চিত্র প্রভৃতি।

(৯) প্রাণ হত্যা করবে নাঃ
আর প্রাণ হত্যার অপরাধ করবে না -যাকে আল্লাহ হারাম করে দিয়েছে সত্য বিধান ব্যতীত। আর যে ব্যক্তি অন্যায় ভাবে নিহত হয়েছে তার অলীকে আমি কিসাস দাবীর অধিকার দিয়েছি। অতএব, সে যেন এব্যাপারে সীমালঙ্ঘন না করে। এ ব্যাপারে অবশ্যই তাকে সাহায্য করা হবে
(সূরা বনী ইসরাইলঃ৩৩)

অর্থাৎ মানুষের প্রাণের মালিক মানুষ নয়,আল্লাহ তা'আলা। তাই প্রাণকে ধংশ করার অধিকারও মানুষের নেই। তবে হ্যাঁ ইসলামি আইনে সত্যতা যাচাই করে পাঁচটি ক্ষেত্রে হত্যা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

(১০) এতিমের ধনমাল ভক্ষন না করাঃ
তোমরা এতিমের মালের নিকটেও যেওনা, তবে হ্যাঁ তারা বুদ্ধি বিবেকে পৌঁছা পর্যন্ত উত্তম পন্থায় প্রয়োজনীয় অর্থ গ্রহণ করতে পারবে।
( সূরা বনী ইসরাইল ৩৪)

(১২) মাপ-ওজন সঠিকভাবে করবেঃ
মাপের পাত্র দিয়ে দিলে পুরাপুরি ভর্তি করে দিবে, আর ওজনে দিলে ক্রুটিহীন পাল্লা দ্বারা মেপে দিবে। এটা খুব ভালনীতি আর পরিনামে উত্তম।
(বনী ইসরাইল ৩৫)
 অর্থাৎ সঠিক মাপ এবং ওজন দ্বারা পারস্পপরিক আস্থা হবে।

(১৩)ভিত্তিহীন ধারনার পিছনে না পড়াঃ এমন কোন জিনিসের পেছনে লেগে যাবে না যার জ্ঞান তোমার নেই। নিশ্চয় জানবে যে, চক্ষু, কান ও অন্তর সব কিছুরি জন্য জবাব দিহি করতে হবে
( সূরা বনী ইসরাইল ৩৬)

অর্থাৎ জ্ঞানের পরিবর্তে অমুলক ধারণা অনুমানের অনুসরণ করবে না। কারণ এর ফলে মানব জীবনের অনেক মারাত্মক ব্যাধি দেখা দিতে পারে। কোন ব্যক্তি বা দলের উপর প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত দোষারোপ করা উচিৎ নয়। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।

(১৪) জমিনে বাহাদুরি করে চলবে নাঃ
জমিনে বাহাদুরি করে চলবে না, তুমি না জমিনকে দীর্ণ, আর না পর্বতের ন্যায় উচ্চতা লাভ করতে পারবে।
(সুরা বনী ইসরাইল-৩৭)

এটা ব্যক্তিগত ও জাতীয় আদর্শ উভয় দিকের উপর সমানভাবে প্রযোজ্য। এ হেদায়তের বদৌলতে মদীনায় প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের শাসক, পরিচালক, গভর্নর ও সেনাপতিদের জীবনে অহংকার ও গর্ভের নামগন্ধ খুঁজে পাওয়া যেত না।

ওয়া আখেরি দাওয়ানা আনিল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামিন। আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা'আলি সাইয়েদিনা মুহাম্মদিন ওয়া বারিক ওয়াসাল্লিম। আসসালামু. আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
Top