♥পবিত্র মি'রাজ পর্ব (৯)
বিজ্ঞানময় আল কোরআন।
♥অবিশ্বাসীদের জবাব।

১) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
মি'রাজ থেকে-মক্কার কাবা ঘরে ফিরে আসার পর এসে
দেখনে, পৃথিবীর যাবতীয় কার্যক্রম ঠিক আগের মত
চলেছে। গতি বিজ্ঞান (Dynamic) এটা স্থির করেছে যে,
পৃথিবী হতে যদি কোন বস্তুকে প্রতি সেকেন্ডে ৬.৯০
অর্থাৎ মোটামুটি ৭ মাইল বেগে ঊর্ধ্বলোকে ছুড়ে
দেওয়া হয় তবে তা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে চলে
যেতে পারবে।

'A bullet fired from the earth surface with a spced of 6.9 miles a second or more with fly into space' ( The Universe Around US By. jeans p. 216.)

কাজেই আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক প্রেরিত বাহন আরো অধিকতর গতি সম্পন্ন ছিল এতে কোন সন্দেহ নেই।

২) হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী নবী করিম (সাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি'রাজ থেকে ফিরে এসে দেখতে পান তাঁর বিছানায় তখনো উষ্ণতা বিরাজ
করেছে এবং অজুর পানি গড়িয়ে পড়ছে। এ বাস্তবতা
বিশ্বাস করতে পারেনি তখন কাফেররা। কিন্তু বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সময় নিয়ে আবিষ্কৃত তত্ত্ব 'থিওরি অব রিলেটিভিটি' প্রচারের পর বিজ্ঞান এ নিয়ে আর প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বিখ্যাত থিওরি বা সময় নিয়ে দর্শনের আলোকে মি'রাজকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।

"মওলানা মুহাম্মদ আখতার ফারুক" 'সময়, দর্শন' নিয়ে
বিশ্লেষণ করেছেন।

বস্তুত 'সময় কী' এবং এর 'চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য কী'- এই
প্রশ্ন মানুষকে যুগ যুগ ধরে আলোড়িত করেছে। এমন
কোনো জ্ঞানী, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী নেই যারা সময় নিয়ে কোনো চিন্তা-গবেষণা করেন নি। সৃষ্টির শুরু থেকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং সময়ের প্রবাহ শুরু হয়েছে। যা আদি বস্তুপিণ্ডের (Primeval Atom) ভেতর একীভূত ছিল। তখন থেকেই সময় প্রবাহিত ধারায় বিরাজ করছে।

সময়ের প্রবহমান বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একে তিন শ্রেণীতে
ভাগ করা হয়েছে, যথা- বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎকাল। কালের এই তিনটি বিভাজন স্থানীয় ধারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু মহাবিশ্বের অন্যসব স্থানের সঙ্গে এর চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য যেমন জটিল, তেমনি দুর্বোধ্য। সময়ের এই বৈচিত্র্যময় চরিত্র উদঘাটন করতে গিয়ে এ যাবতকালের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বিস্ময়কর সফলতা লাভ করেন।

এ বিষয়ে তিনি যে তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, তার নাম 'থিওরি রিলেটিভিটি' তার এ তত্ত্বের মূল কথা হলো সময়ের চরম ও পরম (Absolute) কোনো অস্তিত্ব নেই। তার মতে, Time is relative in respect of Duration- সময় একটি আপেক্ষিক বিষয় যা স্থানীয় সচেতনতায় বিরাজমান। আমদের বলয়ে পৃথিবী, মিনিট, ঘন্টা এবং দিন, মাস, বছর ইত্যাদি সময়ের
একেকগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে।

পবিত্র আল কোরআন সময়ের একক নির্ধারণী ধারণাও
উপস্থাপন হয়েছে এভাবেঃ 'হে মাহবুব! ওরা আপনাকে
চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে। আপনি
বলে দিন, চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে সময় নির্দেশের জন্য।
(সূরা আল বাকারাহ:১১৯)

 অন্য আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ 'নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসের সংখ্যা বারো।' (সূরা আত তাওবা: ৩৬)।

একই পৃথিবীর অধীনে আমাদের বাংলাদেশে যখন দিন,
আমেরিকায় তখন রাত। একই সৌরজগতে আমাদের
পৃথিবীতে বছর হয় যেখানে ৩৬৫ দিনে, সেখানে বুধ
(mercury) গ্রহে বছর হয় মাত্র ৮৮ দিনে, শুক্র(Venus) গ্রহে ২২৫ দিনে, মঙ্গলে (Mars) ৬৮৭ দিনে, বৃহস্পতি (Jupiter) ৪,৩৮০ দিনে। এসব গ্রহের সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা কখনো পৃথিবীর অনুরূপ হবে না। কিংবা এক গ্রহের সময়ের একক অন্য গ্রহ থেকে অবশ্যই কম-বেশি হবে। অর্থাৎ A long time in one planet is no time in another. আবার ছায়াপথ গ্যালাক্সির একদিন পৃথিবীর হিসেবে ২২০ মিলিয়ন বছের সমান। তাহলে মহাবিশ্বে সময়ের সুনির্দিষ্ট অস্তিত্ব কোথাও নেই।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইন 4th Dimention Theory-তে সময়কে চতুর্থ মাত্রা হিসেবে প্রদর্শন করেছেন। অর্থাৎ কোনো বস্তু প্রথম মাত্রা (দৈর্ঘ্য), দ্বিতীয় মাত্রা (বিস্তার) এবং তৃতীয় মাত্রা (ভেদ) সম্বয়ে অস্তিত্বপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু চতুর্থ মাত্রা (সময়) ব্যাতিরেকে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে
যায়। তাই আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী বস্তু যখন আলোর
গতিতে চলে, সময় তখন স্থির হয়ে যায়।

আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী এ সত্য প্রতিভাত হয়েছে যে,
সপ্তম আকাশ ঊর্ধ্বে যার দূরত্ব ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ, সেখানকার লাখ লাখ বছর পৃথিবীর জন্য Zero Time কারণ সেখানে অতীত ও ভবিষ্যৎকালের অস্তিত্ব নেই। আদি-অন্তহীন অঞ্চলজুড়ে একটি মাত্র কাল বিদ্যমান, তা হচ্ছে বর্তমান কাল ।

তাই সেখান থেকে গ্রহ উপগ্রহগুলোর ঘূর্ণন গতি যেমন
প্রত্যক্ষ করা যায়, তেমনি পৃথিবীর অতীত, বর্তমান ও
ভবিষ্যৎকাল অবলোকন করা যায়।

সময়ের আপেক্ষিকতা সম্পর্কে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের স্পষ্ট বক্তব্য -
ﻭَﻋۡﺪَﻩٗؕ ﻭَﺍِﻥَّ ﻳَﻮۡﻣًﺎ ﻋِﻨۡﺪَ ﺭَﺑِّﻚَ ﻛَﺎَﻟۡﻒِ ﺳَﻨَﺔٍ ﻣِّﻤَّﺎ ﺗَﻌُﺪُّﻭۡﻥَ
তোমার প্রভুর দরবারে একদিন তোমাদের গণনায় ১ হাজার বছরের সমান।
(সূরা আল হাজ্জ-৪৭)।

অতএব এ হিসেব মতে আল্লাহর দরবারে নবী করীম
(সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মি'রাজের ২৭ বছর আমাদের পৃথিবীর হিসেবে ৩৮ মিনিট (প্রায়)।
(সুত্র বিজ্ঞানময় আল কোরআন-মুহাম্মদ আবু তালেব।)

আল-কোরআনে আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেছেন, 'ফেরেশতাগণ ও রূহ আল্লাহর কাছে পৌছে একদিনে। এ একদিনের পরিমাণ হলো পৃথিবীর হিসেবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।' (সূরা আল মা'আরিজ -৪)

তাহলে পৃথক এ হিসেব অনুযায়ী ২৭ বছর সমান হয় ৪৬ সেকেন্ড।
(সূত্র: প্রাগুক্ত)
যা হোক, পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এরমিরাজের স্থিতিকাল ছিল ৩৮ মিনিট বা ৪৬ সেকেন্ড।

তাছাড়া কোন বস্তুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলো, যে বস্তু আমরা দেখি তার থেকে আলোর বিকিরণ আমাদের চোখে এসে পড়ে। অর্থাৎ কোন বস্তুর উপর আলো ফেললেওই বস্তু থেকে প্রতিফলিত আলো আমাদের চোখে এসে  পড়লেই আমরা সেটি দেখতে পাই।

অতএব, আলোর গতি যখন প্রতি সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার, তখন দূরের কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমারা কিন্তু তা দেখতে পাই না।

বরং এটা নির্ভর করে বস্তুটির বা স্থানের দূরত্বের উপর। অর্থাৎ বস্তু বা ঘটানার স্থানটি যদি ৩ লাখকিলোমিটার দূরে হয়, তা হলে আমারা দেখব ১ সেকে্ডপরে। এভাবে ১৮ লাখ কিলোমিটার দূরে ঘটলে ১ মিনিট এবং ১০ কোটি ৮০ লাখ কিলোমিটার দূরে ঘটলে আমরা তা দেখতে পাব ১ ঘন্টা পরে। একটি উদাহরণ দ্বারা বিষিয়টি আরো স্পষ্ট করা যাক। আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসর ঘটনাটি ঘটেছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেব অনুযায়ী আজ থেকে ৪ বছর ৪ মাস ২৬ দিন আগে।  (দূর্ঘটনার ৪ বছর পরের হিসেব) আমাদের কাছে এ সময়টা অতীতকাল।

কিন্তু আলোর গতি অনুযায়ী এ মূহর্তে আলোকচিত্রটি যেখানে পৌঁছেছে, তার জন্য কাজটি এখন ঘটেছে অর্থাৎ বর্তমান কাল এবং পৃথিবী থেকে কোটি কোটি কিলোমিটার দূরের যেসব জায়গায় প্রতিফলিত আলো এখনো পৌঁছেনি, সেসব গ্রহ বা নক্ষত্রের জন্য ঘটানাটি এখনো ভবিষ্যৎকাল। তার মানে ঘটানাটি এখনো ঘটেনি। তাই সময় একটি আপেক্ষিক ধারণা মাত্র।

অতএব, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- সৃষ্টিজগত পরিদর্শনে যে ১৭ বছর কেটেছিল এবং এর পরও তিনি যদি তাঁর বিছানা উষ্ণ দেখতে পান অথবা অজুর পানি গড়িয়ে পড়তে দেখেন, তাতে অসম্ভব কিছুই নেই।

চলবে-----------
Top