♥মি'রাজের ঘটনা প্রকৃতি পর্ব (৭)

দীদারে এলাহি পর্ব (১)
সাইয়্যেদে আলম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আল্লাহ তা'আলার কুদরতের বড় বড় নিদর্শ্ন দেখা শেষ করলেন, তখন তাঁর জন্য নৈকট্য, বিশেষত্ব  ও হুজুরীর মুহূর্ত উপস্থিত হল। শেষ সীমা পর্যন্ত উপনিত হতে হতে যাবতীয় বিচ্ছন্নতার পরিসমাপ্তি ঘটল। এখানে এসে তিনি সম্পূর্ণ একা। ফেরেশতা বা মানুষ কেউ তার সাথে রইল না। কিন্তু তখনো বিদ্যমান ছিল সত্তর হাজার নুরানি পর্দা। পর্দা গুলো ছিল এক একটি এক এক রকমের।

বর্ণনায় পাওয়া যায় এক একটি পর্দার দূরত্ব ছিল পাঁচশ বছরের রাস্তা। তখন সেই বিশাল দুরত্ব অতিক্রম করা ছিল কঠিন। আল্লাহ তাআলার সাহায্যে তিনি সেই পর্দাগুলোও অতিক্রম করলেন। এই মাকামে উপনীত হওয়ার পর এক বিশেষ ধরনের হয়রানী ও স্থবিরতা তাঁকে গ্রাস করল। তিনি আল্লাহতায়ালার জালালাত ও আযমতই শুধু অনুভব করলেন। আওয়াজ হল, 'হে মুহাম্মদ থামুন, আপনার প্রভু প্রতিপালক এখন সালাত প্রেরণ করছেন।' শব্দ শুনে অনুমান করলেন, এটা তো আবু বকরের কন্ঠস্বরের মত মনে হচ্ছে। চিন্তা করলেন আবু বকরের কন্ঠ কোত্থেকে এল। পরিচিত কণ্ঠধ্বনি শুনে তিনি একরকম স্বস্তি অনুভব করলেন। এতে -

ভীতিপ্রদ অবস্থাটা দূর হয়ে গেল। এরপর আল্লাহ জাল্লা জালাহুর পক্ষ থেকে বলা হল, 'হে সৃষ্টিকুল শ্রেষ্ঠ, হে আহমদ, হে মুহাম্মদ আপনি নিকটবর্তী হোন।' নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেন, 'অতঃপর আমার প্রভু আমাকে এত কাছে নিয়ে নিলেন এবং আমি আমার প্রভুর এমন নিকটবর্তী হয়ে গেলাম, যেমন আল্লাহ তা'আলা এ ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, 'অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন এবং এত কাছে চলে এলেন যে, তাহলো ধনুকের দু মাথা বরাবর দূরত্ব বা তার চেয়েও কম দূরত্ব।'

এরপর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবকিছুর জ্ঞান দেওয়া হল। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা'আলা আমাকে বিভিন্ন ধরনের ইলেম শিক্ষা দিলেন। এক ধরনের ইলেম এমন যে, কারও কাছে প্রকাশ করা যাবে না। এ ব্যাপারে আমার প্রতিশ্রুতিও নেওয়া হয়েছিল। কেননা এটি এমন বিষয় যা কোন সৃষ্টিই সহ্য করতে পারবেনা। আরেক প্রকার এলেম এমন ছিল, যা মানুষের কাছে প্রকাশ করা বা না করার স্বাধীনতা আমাকে দেওয়া হয়েছিল। আর এক প্রকারের ইলেম উম্মতের প্রত্যেকটি খাস ও আম ব্যক্তির কাছে পৌছিয়ে দেয়াওয়ার জন্য হুকুম দেওয়া হয়েছে। এর-

পর হুজুর পাক (সাঃ) নিবেদন করলেন, হে আমার প্রভু, তোমার সকাশে উপস্থিত হওয়ার মুহূর্তে আমার মধ্যে অস্থিরতা এসে গিয়েছিল। এ সময় হঠাত আপনার প্রভু প্রতিপালক ছালাত প্রেরণ করেছেন, একথা শুনতে পেলাম, যা আবু বকরের কণ্ঠস্বরের মত মনে হয়েছে।
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, এখানে আবু বকর কেমন করে এলেন। আর আমার প্রভু প্রতিপালক ছালাত আদায় করবেন কেন?.তিনি তো কারো মুখাপেক্ষী নন।

আল্লাহ পাকের তরফ থেকে ঘোষণা এল, অন্যের জন্য ছালাত আদায় করা থেকে আমি অমুখাপেক্ষী। আমি আরও ঘোষণা দিচ্ছি যে,' আমার পবিত্রতা, আমার রহমত, আমার গযবের উপর অগ্রগামী হে হাবীব! এ- আয়াতখানা তেলাওয়াত করুন,' আল্লাহ তা'আলা হচ্ছে ঐ সত্তা যিনি আপনার উপর দরুদ পাঠ করেন এবং তার ফেরেশতাবৃন্দও, বিশ্বাসীদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। আর তিনি মু'মিনদের ব্যাপারে বড়ই দয়ালু। এখানে ছালাত বা দরুদ যা আল্লাহ তা'আলা তাঁর হাবীব (সঃ) প্রেরণ করেন। আল্লাহর রহমত তার উপর বর্ষিত হতে থাকুক।

তার পর হযরত আবু বকর (রাঃ) এর আওয়াজ শ্রবণ প্রসংগের জবাব হচ্ছে, আল্লাহ তা'আলা মেহেরবানী করে তাঁর হাবীব (সাঃ) কে তাঁর প্রিয় সঙ্গী হযরত আবু বকর (রাঃ) কণ্ঠস্বরের অনুরূপ কণ্ঠস্বর শুনিয়ে দিলেন।

যাতে প্রিয় পরিচিত জনের গলার আওয়াজ শুনে অপরিচিত স্থানের বিস্ময় ও বিহবলতা কাটিয়ে তিনি সস্থি লাভ করতে পারেন এবং নিজ স্বত্তায় উজ্জিবীত হতে পারেন। ঐ সময় আল্লাহ তা'আলা নবী করীম (সাঃ) কে লক্ষ্য করে এরশাদ করলেন ' হে হাবীব! (সাঃ) আমি যখন আপনার ভাই মুসা (আঃ) এর সাথে কালাম করতে চাইলাম, তখন তার মধ্যে সাংঘাতিক ভীতি কাজ করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'হে মুসা, তোমার ডান হাতে ওটা কি? ' তখন মূসা (আঃ) তাঁর নিজস্ব পরিচিত জিনিসটির(লাঠি) কথা শুনে স্বস্থিত হন। আপনার ব্যপারে আমি চাইলাম যে, পরিচিত জনের কণ্ঠস্বর শুনে আপনি আপনার নিজের মধ্যে ফিরে আসুন। তাই আবু বকরের আওয়াজ আপনাকে শুনিয়ে দিলাম।

এরপর এমন এক বিশাল ব্যাপার আমার দৃষ্টিগোচর হল, আরশ থেকে একফোঁটা পানি আমার নিকটবর্তী হল এবং তা আমার মুখে পতিত হল। আমি তার স্বাদ নিলাম। মনে হল এর চেয়ে মিষ্টি কিছু কেউ কোন দিন আস্বাদন করেনি। এতে করে পূর্বপর যাবতীয় খবর আমার জানা হয়ে গেল এবং আমার কলব উজ্জ্বলতর হল।আরশের নূর আমার চোখকে আচ্ছাদিত করল। ঐ সমস্ত কিছুই অন্তরের চোখ দিয়ে দেখলাম। আর আমার পিছন দিকেও ঐ রখম দেখতে লাগলাম, যেমন সামনে দেখি।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এখনে একটি কথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে,উপরের বর্ণনাগুলো অত্যন্ত উঁচু স্তরের আলোচনা। এখনে যে পর্দা ছিল সে পর্দা ছিল মাখলুকের দিক থেকে; আল্লাহ তা'আলার দিক থেকে নয়। কেননা আল্লাহ তা'আলা তো সব রখম পর্দাচ্ছাদিথ হওয়া থেকে পবিত্র, এমন কোন বস্তু নেই যে আল্লাহ তা'আলাকে ঢেকে ফেলতে পারে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা ধারন করা যায়, এমন জিনিসে পর্দা বেষ্টিত হওয়া সম্ভব। আল্লাহ তা'আলা পর্দা দ্বারা আচ্ছাদিত হতে পারে না। আল্লাহ তা'আল তাঁর আপন নাম, বৈশিষ্ট্য ও কর্মমুখরতা দ্বারা আচ্ছাদিত।
(মাদারিজুন নবুওয়্যাত)


(চলবে)

Top