*পবিত্র কোরআনে মি'রাজ*

وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى (7) ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى (8) فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى (9) فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى (10) مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى (11) أَفَتُمَارُونَهُ عَلَى مَا يَرَى (12) وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى (13) عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى (14) عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى (15) إِذْ يَغْشَى السِّدْرَةَ مَا يَغْشَى (16) مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى (17) لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى 

অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন, এর পর ঝুঁকে এলেন, তারপর রয়ে গেল (উভয়ের মধ্য) দু' ধুনক পরিমান বরং তার চেয়েও কম ব্যবধান। অতঃপর আল্লাহ তার বান্দার উপর অহী  নাযিল করেন- যে অহী প্রেরণ করলেন। সে বান্দা যা কিছু দেখেছেন তার অন্তর মিথ্য বলেনি। তবে কি তোমরা এ বিষয়ে তাঁর সাথে ঝগড়া করছ? যা সত্যই ঘটেছে। নিশ্চয় সে তাকে আর একবার দর্শন করেছে, সিদারতুল মুনতাহার নিকটে উপস্থিত ছিলেন।
(সুরা আন নজমঃ৭-১৮)


হযরত আনাস ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাফসীর মতে এখানে মি'রাজের ঘটানা বর্ণনা করা হয়েছে এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষা লাভ, আল্লাহর দর্শন এবং তাঁর নৈকট্য লাভের কথা আলোচিত হয়েছে।

*মি'রাজের ঘটনা প্রকৃতি* وَمَا جَعَلۡنَا الرُّءۡيَا الَّتِىۡۤ اَرَيۡنٰكَ اِلَّا فِتۡنَةً لِّلنَّاس আর যে দর্শনই না আমি আপনাকে দেখিয়েছি তা কেবল মাত্র মানুষের পরীক্ষার জন্য দেখেয়েছি
( সূরা বনি ইসরাইল-৬০)

এ সফরের রূপটা কি ছিল? এটা কি স্বপ্নে সংঘটিত হয়েছিল, নাকি জাগ্রত অবস্থায়, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং গমন করেছিলেন, না তিনি নিজ স্থান থেকে কেবল আত্মিকভাবে এসব পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ' মাওলানা হেফজুর রহমান" এ ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এটা জড় দেহের সাথে জাগ্রত অবস্থায় ঘটেছিল তার একটি তালিকা তিনি পেশ করেছেন। এখানে তার কিছুটা সার সংক্ষেপ উল্লেখ করছি।

১* গত পর্বের আলোচ্য আয়াতে প্রথমে "সুবহানা"  (মহান পবিত্র) শব্দটি আশ্চর্যজনক ও বিরাট বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মি'রাজ যদি শুধু আত্মিক অর্থাৎ স্বপ্ন জগতে সংঘটিত হত, তাহলে এতে আশ্চর্যের বিষয় কি আছে?  স্বপ্নে তো প্রত্যেক মুসলমানই বরং সকল মানুষ অনেক কিছু দেখতে পায় যে, সে আকাশে উঠছে,  অবিশ্বাস্য বহু কাজ করেছে।

২* অতঃপর সে আয়াতে "আব্দুহু" (তার বান্দা) বলা হয়েছে। শুধু আত্মাকে "আবদু"  বান্দা বলা হয় না, দেহ বিহীন আত্মার নাম 'রূহ' আর আত্মাবিহীন দেহের নাম "মাইয়াত" বা মৃত।  বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই বলা হয় " আবদ্" বা বান্দা।

৩* তাছাড়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মি'রাজের ঘটনা তাঁর ফুফু  উম্মে হানির (রাঃ)কাছে বর্ণনা করেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন যে, আপনি কারও কাছে এ কথা প্রকাশ করবেন না, প্রকাশ করলে কাফেররা আপনার উপর আরো বেশি মিথ্যারোপ করবে। অতএব, ব্যাপারটি  যদি নিছক স্বপ্ন হতো তবে মিথ্যারোপ করার কি কারণ ছিল?

৪* এ ঘটনা প্রকাশের পর কাফেররা মিথ্যারোপ ও ঠাট্টা বিদ্রোপ করল। এমন কি  নও মুসলিমও এ সংবাদে ধর্মত্যাগী হবার চিন্তা ভাবানা করল। ব্যপারটি স্বপ্নের হলে এত কিছু  তুলকান্ড ঘটার সসম্ভাবনা ছিল কি?

৫* হযরত মুসা (আঃ) ও হযরত লূত (আঃ) কে রাতে রাতে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। যথাঃ
"আমি মুসার উপর অহী প্রেরণ করলাম যে, আমার বান্দাদের নিয়ে রাতের মধ্যে বের হয়ে যাও।"
( সূরা তো'হা, শুয়ারা)।

ফিরেশতারা লূত (আঃ) কে  বললঃ "আপনি নিজের পরিজনদেরকে নিয়ে রাতের কিছু অংশ অতীত হলেই বের হয়ে যাবেন।" (সূরা হুদ, সূরা দোখান)। অতএব, সূরা বনি ইসরাইলের "আছরা বি'আবদিহী" আয়াতের সহজবোধ্য তাই হবে যা হযরত মুসা ও লূত (আঃ) সম্মন্ধীয় আয়াতগুলোতে রয়েছে। অর্থাৎ জাগ্রতঅবস্থায় সশরীরে রাতের কালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা।ِ

৬*  اِلَّا فِتۡنَةً لِّلنَّ  আয়াতাংশে ঘটনাটিকে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস এর আকারে ঈমান ও কুফরের জন্য মাপকাঠি সাব্যস্ত করেছেন। যদিও কাফেররা স্বপ্ন দর্শনকেও অবিশ্বাস করা সম্ভব। কিন্তু এ স্থানে ঘটানাটির মহত্ত্ব এবং গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য করেই اِلَّا فِتۡنَةً لِّلنَّاس বলা হয়েছে যার কারণ হল এ ঘটনাটি  নবী  করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাক্ষুষ দর্শনের ন্যায় বর্ণনা করেছেন।

৭* সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে  যে, মুশরিকরা এ ঘটনাটি অবিশ্বাস করার পক্ষে এ প্রমাণ দাঁড় করাল যে, যদি তা সত্য হয়, তবে নবী  করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মোকাদ্দাসের অংশগুলোর বিস্তারিত বিবরণ বর্ণনা করেন। কারণ, তিনি এমনিতো তা দেখেননি। তখন নবী  করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখ হতে মধ্যেকার সমস্ত আবরণ আল্লাহ তা'আলার তরফ হতে দূর করে দেওয়া হয়। তখন তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসের এক একটি বস্তু স্বচক্ষে দর্শন করে মুশরিকদের প্রশ্নসমূহের সঠিক উত্তর প্রদান করলেন।  এটা এ কথারই প্রমাণ যে, ঘটনাটি জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে ছিল বলে এ সব এবং এরূপ পদ্ধতি গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল, নতুবা স্বপ্ন যোগে হলে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হত না।

চলবে........
Top