মতিউর রহমান কৃত ‘প্রচলিত জাল হাদিস' বইয়ের ১২৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে “এটা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদিস নয় বরং লােকমুখে হাদিস।" তাছাড়া হাদীসের নামে জালিয়াতি বইয়ের ২৪০-২৪১পৃষ্ঠায়ও (চতুর্থ প্রকাশ) অনুরূপ বক্তব্যের সমর্থন দিয়েছেন।

মসজিদে বসে দুনিয়াবী ও অপ্রাসঙ্গিক কথাবলা হারাম; এ কথাটি সত্য। বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা দ্বারা এ বিষয়টি সঠিক হিসেবে প্রমাণিত। মসজিদ তৈরীর উদ্দেশ সালাত আদায়,আল্লাহর যিকির, ইত্যাদি কাজের জন্য। 

🕋 হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্নিত, রাসুল (ﷺ) বলেন,"এগুলাে শুধু আল্লাহর যিকির, সালাত ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য"।

১ বায্যার,আল-মুসনাদ, ১৩/৭৮পৃ.হাদিস : ৬৪২৬,
২ মুসলিম,আস-সহিহ,১/২৩৬পু, হাদিস:২৮৫,
৩ তাহাবী, শরহে মুশকিলুল আছার, ১২/৫৩২পৃ. ও ১/১৩পৃ. হাদিসঃ১০,
৪ বায়হাকী, সুনানে সুগরা, ৪/১২৬ হাদিস:৩২৩৬,
৫ সুনানে কোবরা,১০/১৭৬পৃ. হাদিস, ২০২৬৪,ও

উপরক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল মসজিদ দুনিয়াবী কথা বলার স্থান নয়। 

🕋 মিশকাতুল মাসাবীতে ‘বাবুল মাসাজিদ' অধ্যায়ে হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) হতে বর্ণিত রাসূল (দ.) ইরশাদ ফরমান

ﻭﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻣﺮﺳﻼ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﻳﺎﺗﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺯﻣﺎﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺣﺪﻳﺜﻬﻢ ﻓﻲ ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻓﻲ ﺃﻣﺮ ﺩﻧﻴﺎﻫﻢ . ﻓﻼ ﺗﺠﺎﻟﺴﻮﻫﻢ ﻓﻠﻴﺲ ﺇﻟﻲ ﻓﻴﻬﻢ ﺣﺎﺟﺔ ‏» . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ ﺷﻌﺐ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ

"ওহে লােকেরা, শুন! এমন এক যমানারও আগমন ঘটবে যখন মানুষেরা মসজিদে তাদের দুনিয়াবী কথাবার্তা বলবে। যখন এ ধরনের যামানা এসে যাবে, তখন তােমরা তাদের সাথে বসিও না। মহান আল্লাহ এহেন লােকদের থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী।"

১ বায়হাকি,শুয়াবুল ঈমান:8/৩৮৭পৃ.হাদিস:২৭০১২
২ খতিব তিবরিযী : মিশকাত : কিতাবুল মাসাজিদ : ১/১৫৬ পূ, হাদিস : ৭৪৩
৩ মােল্লা আলী কারী: মিরকাত : কিতাবুল মাসাজিদ : ২/১৪০ পূ, হাদিস: ৭৪৩

🕋 “হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন মানুষের মধ্যে এমন এক সময় আসবে,যখন তারা তাদের মসজিদ গুলােতে বৃত্তাকারে বসবে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া। এদের মধ্যে আল্লাহর কোন প্রয়ােজন নেই। তােমরা এদের সাথে বসবে না। মােম হাকিম নিশাপুরী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।"

১ মুফতি আমিমুল ইহসানঃফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার:১/২৮৩পৃ.হাদিস:৭৯২
২ হাকেম নিশাপুরী, আল সু দিরাক, ৪/৩৫৭পৃ. হাদিস,৭৯১৬,
৩ ইমাম যাহাবী, তালখিছ এছে হাকেমের সাথে সহিহ হওয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছে।

🕋 হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। 
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ، ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ‏« ﺳﻴﻜﻮﻥ ﻓﻲ ﺃﺧﺪ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﻗﻮﻡ ﻳﻜﻮﻥ ﺣﺪﻳﺜﻬﻢ ﻓﻲ ﻣﺴﺎﺟﺪﻫﻢ ﻟﻴﺲ ﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﻢ ﺣﺎﺟﺔ »
"রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,শেষ যমানায় কিছু মানুষ এরূপ হবে যে, তাদের কথাবার্তা তাদের মসজিদ গুলাের মধ্যে হবে।এদের মধ্যে আল্লাহর কোন আবশ্যকতা নেই। ইবনে হিব্বান তার আস্- সহিহ গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।

১ মুফতি আমিমুল ইহসান ঃ ফিকহুস সুনানি কাবির ওয়াল আছার; ১/২৮৩ পূহাদিসঃ৭৯৩,
২ ইমাম হায়সামী, মাওয়ারি-যামান ঃ ২/৮-৯পৃ.
৩ তাবরানী, মুজামুল কাবীর, ১০/১৯৮পৃ. হাদিস : ১০৪৫২,
৪ আবু নুঈম হুলিয়াতুল আওলিয়া, ৪/১০৯ পৃ.
৫ ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ১৫/১৬৩,
৬ আদি, আল-কামিল ২৪৯৩.

👉 শুধু তাই নয় আল্লামা মােল্লা, আলী কারী (رحمة الله) বলেন, ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম (رحمة الله) তার শরহে হেদায়ায় বলেন, মসজিদে বৈধ কথাবার্তা বলাও মাকরুহে তাহরীম, আর তা নেক আমল খেয়ে ফেলে বলে উল্লেখ করেছেন। (মােল্লা আলী কারী,মিরকাত: ২/৪১৮, হাদিস:৭৪৩)

👉 শুধু তাই নয় ইমাম নাওয়াভী (رحمة الله) বলেন, মসজিদে জোরে ইলম আলােচনা বা অন্যান্য কথা বলা মাকরুহে তাহরীমী। (মিরকাত,২/ ৪১৯পৃহাদিস:৭৪৪)

👉 আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন, ইমাম মালেক (رحمة الله) কে প্রশ্ন করা হলাে যে মসজিদে জোরে ইলম আলােচনা করা সম্পর্কে অতঃপর তিনি বলেন এই ইলম শিক্ষায় এবং অন্যান্য কাজে কোন নেকি নেই। (মিরকাত,২/৪১৯পৃ.হাদিস:৭৪৪)। 

দেখুন আমাদের দেশে কিছু লােক রয়েছে যারা দ্বীনের দাওয়াতের নাম দিয়ে মসজিদকে নিজের ঘরের মত বাসস্থান বানিয়ে কথাবার্তা বলার স্থান বানিয়ে নিয়েছে। এমন লােকদের থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব যা উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়। বিস্তারিত জানার জন্য আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষাগুরু আল্লামা মুফতি আলী আকবার সাহেব (মু.জি.আ.) এর "প্রচলিত তাবলীগ জামাতের স্বরূপ উন্মােচন" বইটি পড়ুন। আশা করি বুঝে আসবে। এখন আসুন দেখি চল্লিশ বছরের হাদিস কোথাও আছে। কিনা।

আমরা প্রথমে বলবাে কোন কিতাবে নেই বলা জ্ঞান শূন্যতার পরিচায়ক এবং একটি হাদিসকে অস্বীকার করার নামান্তর। যেমন উসূলে ফিকহের প্রসিদ্ধ কিতাব। 

🕋 নুরুল আনওয়ার এর লেখক আল্লামা শায়খ আহমদ মােল্লা জিওন (رحمة الله) স্বীয় তাফসীরে আহমদিয়াতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেন- মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা অবৈধ। তারপর এ হাদিস শরীফ ব্যক্ত করেন।

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻦ ﺗﻜﻠﻢ ﺑﻜﻼﻡ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻓﻲ ﺧﻤﺴﺔ ﻣﻮﺍﺿﻊ ﺍﺣﺒﻂ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻣﻨﻪ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺍﺭﺑﻌﻴﻦ ﺳﻨﺔ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﻓﻲ ﺗﻼﻭﺓ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﻓﻲ ﻭﻗﺖ ﺍﻷﺫﺍﻥ ﻭ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺲ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻭ ﺍﻟﺨﺎﻣﺲ ﻓﻲ ﺯﻳﺎﺭﺓ ﺍﻟﻘﺒﻮﺭ .

“নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ জায়গায় দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তা'য়ালা তার চল্লিশ বছরের (নফল) ইবাদত নষ্ট করে দিবেন, এক মসজিদ, দুই. কুরানুল কারীম তিলাওয়াতের কালে, তিন, আযানের সময়, চার, জ্ঞানী আলিমদের মজলিসে, পাঁচ, কবরে যিয়ারতকালে।”
[আল্লামা মােল্লা জিওন : তাফসীরে আহমদিয়া, পৃ-৭২৪]

অতএব প্রমান হলাে এই হাদিস কিতাবে হাদিস হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। যদিও হাদিস দ্বঈফ হউক তারপরও উক্ত হাদিস হতে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। তারা ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী কাযি শাওকানীর দলীল গ্রহণ করেছে অথচ তার ফাওয়াইদুল মাওদুআতে ১/২৫ পৃষ্ঠা (দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রূত, লেবানন মুদ্রিত) চল্লিশ বছরের ইবাদত নষ্ট হবার কথা উল্লেখ নেই,বরং সারা জিবনের আমল নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ রয়েছে। যেমন তার বর্ণনার ধরন হলাে: অর্থাৎ যে ব্যক্তি মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তায়ালা তার সব আমল বরবাদ করে দিবে। ইমাম সাগানী (رحمة الله) উক্ত হাদিসকে জাল বা বানােয়াট বলেছেন।
[শাওকানী:ফাওয়াইদুল মাওজুআত, ১/২৫]

এখানে দুটি বিষয় পাওয়া গেল ১. কাযি শাওকানীর নিজস্ব কোন মতামত নেই। ২. সে ইমাম সাগানীর রায় উল্লেখ করেছেন আর ইমাম সাগানী চল্লিশ বছরের আমল বরবাদ হবে হাদিসকে জাল বলেননি যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা এবং তার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ। তিনি সমস্ত ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে তাকে জাল বলেছেন। মােল্লা আলী কারীও সব আমল বরবাদ হবে বলে উক্ত হাদিসকে জাল উল্লেখ করেছেন।
[মোল্লা আলী ক্বারী : মওজুআতুল কবীর : ১১৭ পৃষ্ঠা]

উক্ত হাদিসটি যেহেতু বিখ্যাত উসূল বিদগণ গ্রহণ করেছেন সেহেতু বলা যায় উসূলবিদগণ মওদু হাদিস বর্ণনা হতে বিরত থাকাই তাদের নীতি। অবশ্যই তার নিকট উক্ত হাদীসের সনদ জানা রয়েছে।

Top