সে জানত মৃত্যু আসন্ন। খুবই নিকটে। তার দু'টি সন্তান আছে। নিতান্তই নাবালক। তাদের ভবিষ্যৎ কি? কিভাবে বাঁচবে? এসব ভাবছিল। এমন না সে গরীব। যথেষ্ট সম্পদ আছে। কিন্তু সম্পদ দেখভালের কেউ নেই। এটাই সমস্যা। অনেক ভেবে ডাকল বন্ধুকে।
- ভাই! নে, এই সোনার থলেটা রাখ। আমার বাচ্চাগুলোকে দেখে রাখিস। আর তাদের বয়স হলে, তুই যা চাস তাই দিস।
সময় চলে গেল। বাচ্চারা এখন কিশোর। বাপের বন্ধুকে ডাকল। তাদের অর্থ প্রয়োজন।
- চাচা! আব্বার আমানত দিন। আমাদের বাঁচতে হবে।
- আচ্ছা, সম্পদ নিবে! নাও সমস্যা নেই। কিন্তু জানো, তোমার বাবা বলেছিল, আমি যা চাই তাই দিব। এটাই উইল। এই নাও থলেটা। সোনাগুলো আমি রাখলাম। কারণ, আমি সোনা চাই। আর সোনা নিলে থাকে থলে (ব্যাগ)। এই থলেটা তোমরা নিতে পার।
কিশোর দু'জন অবাক। এ তো লুট। এতিমের সম্পদ লুট। কাঁদোকাঁদো নয়নে গেল কাজির কাছে। কাজির বিচারে রায় হল। জিতল সেই দুষ্ট। কারণ, বাপের উক্তি 'সে যা চাইবে তাই দিবে'।
এতিম দু'জন যাযাবর হয়ে ঘুরে। একদিন পৌঁছাল কুফা শহরে। তখনি জানতে পারল কথাটি। এক বিদগ্ধ পুরুষ আছেন এখানে। এই শহরে। যিনি চাইলে ওদের সাহায্য করতে পারেন।
দু'জনেই গেল তাঁর কাছে। তিনি শুনলেন। তারপর ব্যবস্থা নিলেন। আবার বিচার বসল। সেই লোককে ডাকা হল। যার কাছে সোনা ছিল। তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হল।
- ওদের বাবা, মৃত্যুর আগে ওসিয়ত করে। এক ব্যাগ সোনা দেয়। বলে, আমি যা চাই তাই যেন দেই।
- আবার বলুন। কি বলেছেন তিনি?
- বলেছেন, যা চাই তাই যেন দেই।
- ব্যস, সমাধান তো হয়েই গেল। শুনুন, তিনি বলেছেন, আপনি যা চান তাই দিতে। এখন, আপনি চান সোনা। নিশ্চই থলে চান না। তাই আপনি এখন সোনাই ফেরত দিবেন। কারণ, আপনি চান সোনা। তিনিও বলেছেন, যা 'চান' তাই যেন দেন।
--------
সেই বিদগ্ধ পুরুষের নাম, নুমান। নুমান বিন সাবিত। উপনাম, আবু হানিফা। উপাধী, ইমামে আ'যম।
চরম অবস্থা থেকেও যিনি সত্যকে তুলে এনেছেন। এতিমের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এতিমের অধিকারের প্রতি তাঁর এর সচেতনতা। তাহলে প্রশ্ন জাগে, মদিনা-মুনিব (দ) এঁর এতিম উম্মতের প্রতি তাঁর মনোভাব কেমন!
তিনি অভিভাবক। আমার ও আমাদের অভিভাবক। তিনি জানতেন ইসলামকে আমরা সঠিক ভাবে বুঝব না। তাই সমস্ত কিছুকে গুছিয়েছেন। অতি সহজ করে। তাঁর এই গুছানোকেই বলি, মাযহাব।
ইমামে আযম!
জ্ঞানের পরম,
আলোকে তোমায় ভালোবেসেছি!
হৃদয়ে তোমার ছবি এঁকেছি,
হৃদয়ে তোমার ছবি এঁকেছি।
Top