"২৭শে রজব দিবা-রাত্রি ইবাদতের বিনিময়ে ১০০ বছর ইবাদত ও রোজা রাখার সওয়াব।" #COPY #SHARE
🖋লেখক, সংকলকঃ Masum Billah Sunny
[ব্লগার, ইসলামী বিশ্বকোষ bit.ly/Islam-pedia]
_____________________________
জাল ও দ্বয়ীফ হাদিস কি এক? ইমামগণের ইজমা কি?
➖➖➖➖➖
হাদিসশাস্ত্রের ইমামগণ হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কতিপয় ইজমা করেছেন তারমধ্যে একটি হল, দ্বয়ীফ হাদিস ফজিলতের উদ্দেশ্যে আমল করা যাবে। তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং সওয়াব রয়েছে।
তাছাড়া একরকম হাদিস যখন অনেকগুলো রাবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন সনদ ও মতনে বর্ণিত হয় তখন একটিকে অপরটি শক্তিশালী করে তোলে। তাই দুর্বল হাদিসও আমলের জন্য যথেষ্ঠ।
➖➖➖➖➖
"২৭শে রজবে রাত জেগে ইবাদাত ও দিনে রোজা রাখলে ১০০ বছর ইবাদত ও ১০০ বছর রোজার রাখার সওয়াব।"
এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসটির সূত্র এসেছেঃ📌
👉 হযরত হুরায়রা (রাঃ) থেকে।
👉 হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে।
👉 হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে।
❗হাদিস ১❗
হযরত সালমান আল-ফারসী (রা.) থেকে বর্ণিত,
"রজবে একটি দিন ও একটি রাত আছে, সে-দিন যে-ব্যক্তি সিয়াম পালন করে আর সে-রাতে ইবাদাত পালন করবে এর জন্য পুরস্কার হলাে তিনি যেন ১০০ বছর ইবাদত করেছেন। আর ওই তারিখটি হলে ২৭ রজব।
তথ্যসূত্রঃ📍
(1) ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াইবুল ঈমানঃ ৩য় খন্ড,১৩৯৭ পৃঃ,হাদিস নংঃ৩৫৩০
(2) ইমাম বায়হাকীঃ ফাদ্বাইলে আওকাতঃ ১ম খন্ড,৯৫ পৃঃ,
(3) ইমাম ইবনে আসাকিরঃ ফাদ্বলু রজবঃ হাদিস নংঃ১০,
(4) ইমাম আদ-দায়লামী, মুসনাদিল ফিরদাউসঃ খ ৩, পৃ ১৪২, হাদীস: ৪৩৮১
(5) ইমাম ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবিনুল আজাব, পৃ. ৪৩, হাদীস: ২৪;
(6) ইমাম সৈয়ুতীঃ তাফসীরে দুরের মনছুর, ৪র্থ খন্ড,১৮৬ পৃঃ।
(7) ইমাম ইবনে ইরাকঃ তানজিহুশ শরীয়া আল মারফুয়া আনিল আখবারিশ শানীয়া আল মাওযুআ, খ. ২, পৃ. ১৬১, হাদীস: ৪১
(8) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ২৮৯ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।
হাদিসের মানঃ দ্বয়ীফ (যা আমলের জন্য যথেষ্ঠ) 📍
১) এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী রহঃ বলেন,- "حديث حسن الإسناد" "এই হাদিসের সনদ হাসান।"
[ইমাম বায়হাকীঃ ফাদ্বাইলে আওকাত,হাদিস নংঃ১২]
২) "সনদের মধ্যে একজন খালিদ ইবনে হাইয়াজ রয়েছেন। আর ইবনে হাইয়াজ একজন অবাঞ্চিত ব্যক্তি।" তার মতে হাদিসটি দ্বয়ীফ।
[ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবয়ীনুল আজাব, পৃ. ৪৩]
❗হাদিস ২❗
গাউসে পাক আবদুল কাদীর জিলানী (রহঃ) দুজন সাহাবী হযরত হুরায়রা (রাঃ) এবং হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন,
-“নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “নিঃসন্দেহে রব মাসে এমন একটি মহান দিন ও মহান রাত রয়েছে যে ব্যক্তি ঐ দিনে রােযা রাখবে এবং ঐ রাতে জাগরণ করে ইবাদত করবে, তার সাওয়াবের পরিমাণ হবে ঐ ব্যক্তির মত যে ১০০ বছর দিনে নফল রােযা রেখেছে এবং ১০০ বছর রাত্রে নফল ইবাদত করেছে। ঐ মহান দিন ও রাত্রটি হলাে রজব মাস শেষ হওয়ার ৩ দিন বাকী থাকতে। অর্থাৎ- ২৭ শে রযব (শব-ই মিরাজ)।
তথ্যসূত্রঃ📍
[শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী : গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃ-২৪০]
❗হাদিস ৩❗
হাফিয ইবনে হাজর আল-আসকালানী (রহঃ) বলেন, আমি তা আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে মরফুসূত্রে একটি হাদীস পেয়েছি,
"রজব মাসে একটি রাত রয়েছে যে-রাতে ইবাদতকারীর জন্য ১০০ বছরের সাওয়াব লেখা হয়। রাতটি হলাে ২৭শে রজব।
▪ যে ব্যক্তি এ রাতে ১২ রাকাআত সালাত আদায় করবে যার প্রত্যেক রাকাআতে ১ বার ফাতিহা ও কুরআন থেকে অন্য একটি সুরা পড়বে এবং প্রত্যেক দু'রাকআত শেষে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে।
▪ তারপর
سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر
অর্থাৎ, "সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।" এটা পড়বে ১০০ বার।
▪ তারপর ১০০ বার ইসতিগফার করবে।
▪ নবী করীম (ﷺ) এর ওপর দরুদ শরীফ পড়বে ১০০ বার এবং
▪ ইহ-পরকালীন যেকোনাে বিষয়ে ইচ্ছানুযায়ী নিজের জন্য দুআ করবে আর দিনে সিয়াম পালন করবে।
নিশ্চয় আল্লাহ তার সকল প্রার্থনা কবুল করবেন, বালা-মসিবতের প্রার্থনা করলে তা কবুল হবে না।
তথ্যসূত্রঃ📍
(1) ইমাম বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, ৩য় খন্ড,১৩৯৮ পৃঃ, হাদিস নংঃ ৩৫৩১
(2) ইমাম বায়হাকীঃ ফাদ্বাইলে আওকাত, হাদিস নংঃ১২;
(3) ইমাম ইবনে হাজর আল-আসকালানীঃ তাবয়ীনুল আজাব, পৃ. ৪৩-৪৪, হাদীস: ২৫;
(4) ইমাম ইবনে ইরাকঃ তানজিহুশ শরীয়া আল মারফুয়া আনিল আখবারিশ শানীয়া আল মাওযুআ, খ, ২, পৃ. ৯০, হাদীস: ৪৯.
(5) ইমাম সৈয়ুতীঃ তাফসীরে দুররে মনসুর, ৪র্থ খন্ড, ১৮৬ পৃঃ
(6) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ৩১০ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।
(7) ইমাম হিন্দি (রহঃ) : কানযুল উম্মাল, খন্ড-১২, পৃষ্ঠাঃ ৩১২-৩১৩, হাদিস নম্বরঃ ৩৫১৭০, (8) ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) : এহইয়া উলুমুদ্দীন, (9) ইমাম বায়হাকী (রহঃ) : বায়হাকী শরীফ, খন্ড-৩, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৪,
হাদিসের মানঃ (হাসান)📍
এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী (রহঃ) বলেন, "حديث حسن الإسناد" "এই হাদিসের সনদ হাসান"।
[ইমাম বায়হাকীঃ ফাদ্বাইলে আওকাত,হাদিস নংঃ১২]
❗হাদিস ৪❗
ইমাম বায়হাকী হযরত আবান (রহঃ) থেকে, তিনি হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন,
"রজবে একটি রাত রয়েছে, যে-রাতে ইবাদতকারীর জন্য ১০০ বছরের সাওয়াব লেখা হবে। রাতটি হলে ২৭ রজব।
▪ যে ব্যক্তি এ রাতে ১২ রাকাআত সালাত আদায় করবে যার প্রত্যেক রাকাআতে ১ বার ফাতিহা ও কুরআন থেকে অন্য একটি সুরা পড়বে এবং প্রত্যেক দু'রাকআত শেষে তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে।
▪ তারপর
سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر
অর্থাৎ, "সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।" এটা পড়বে ১০০ বার।
▪ তারপর ১০০ বার ইসতিগফার করবে।
▪ নবী করীম (ﷺ) এর ওপর দরুদ শরীফ পড়বে ১০০ বার এবং
▪ ইহ-পরকালীন যেকোনাে বিষয়ে ইচ্ছানুযায়ী নিজের জন্য দুআ করবে আর দিনে সিয়াম পালন করবে।
নিশ্চয় আল্লাহ তা'য়ালা এ-ধরনের প্রত্যেকের দুআ কবুল করেন। তবে যদি তারা বিপদ কামনা করে দুআ করে তা কবুল হবে না।
হাদিসের মানঃ (দ্বয়ীফ)📍
তথ্যসূত্রঃ📍
(1) ইমাম বায়হাকী, শুআবুল ঈমান, খ, ৩, পৃ. ৩৬৭, হাদীস: ৩৮০০, তিনি হাদিসটিকে দ্বয়ীফ বলেছেন।
(2) ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবয়ীনুল আজাব, পৃ. ২৫, হাদীস: ৮;
(3) ইবনে ইরাক, তানজিহুশ শরীয়া আল মারফুয়া আনিল আখবারিশ শানীয়া আল মাওযুআ, খ. ২, পৃ. ১৬১, হাদীস: ৪০
(4) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ২৮৮ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।
❗হাদিস ৫❗
হাফিয ইবনে হাজর আল-আসকালানী (রহঃ) বেশ কিছু শব্দের অতিরিক্তিসহ উপরোক্ত হাদীসটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন,
▪"সমগ্র যিকরের ওপর কুরআনের মর্যাদা যেমন, অন্যান্য মাসের ওপর রজবের মর্যাদা ঠিক তেমন।
▪ অন্যান্য নবীদের ওপর হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর মর্যাদা যেমন, অন্যান্য মাসের ওপর শাবানের মর্যাদা ঠিক তেমন।
▪ আল্লাহর বান্দাদের ওপর তাঁর মর্যাদা যেমন, অন্যান্য মাসের ওপর রামাযানের মর্যাদা ঠিক তেমন।"
তথ্যসূত্রঃ 📍
(1) ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবয়ীনুল আজাব, পৃ. ২৫, হাদীস: ৮;
(2) ইবনে ইরাক, তানজিহুশ শরীয়া আল মারফুয়া আনিল আখবারিশ শানীয়া আল মাওযুআ, খ. ২, পৃ. ১৬১, হাদীস: ৪০
(3) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ২৮৯ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।
হাদিসের মানঃ (সনদ নির্ভরযোগ্য)
হাফিয ইবনে হাজর আল-আসকালানী (রহঃ) বলেন, এটি হযরত আস-সালাফী বর্ণনা করেছেন। এর সনদ নির্ভরযােগ্য। তবে হিবাতুলাহ আস সাকাতী ছাড়া।
[ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবিনুল আজাব]
❗হাদিস ৬❗
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
‘২৭শে রজব আমি নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। যে-ব্যক্তি সে-দিন সিয়াম পালন করবে এবং ইফতারের সময় দুআ করবে তা তার ২০ বছরের পাপের কাফফারা হয়ে যাবে।”
তথ্যসূত্রঃ📍
(1) ইমাম হান্নাদ আন-নাফাসীঃ এর ফাওয়ায়িদ গ্রন্থে।
(2) ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবয়ীনুল আজাব, পৃ. ৪৪, হাদীস: ২৬
(3) ইবনে ইরাক, তানজিহুশ শরীয়া আল মারফুয়া আনিল আখবারিশ শানীয়া আল মাওযুআ, খ. ২, পৃ. ১৬১, হাদীস: ৪১
(4) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ২৯০ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।
❗হাদিস ৭❗
সনদঃ 📍
ইমাম আবু মুআয শাহ আল-মারওয়াযী (রহঃ) এবং ইমাম আবদুল আযীয আল-কিতানী (রহঃ) তাঁরা➡ ইবনে শাওযাব থেকে, ➡ তিনি মাতার আল-ওয়াররাক থেকে, ➡ তিনি শহর ইবনে হাওশাব থেকে, ➡ তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর বরাতে মওকুফ সনদে বর্ণনা করেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
"যে-ব্যক্তি ২৭ রজব সিয়াম পালন করবে, আল্লাহ তার ৬০ মাসব্যাপী সিয়াম পালনের সওয়াব লিখে দেবেন। এই দিনেই হযরত জিবরীল (আঃ) হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর ওপর রিসালত নিয়ে আবির্ভূত হন।"
তথ্যসূত্রঃ📍
(1) ইমাম আবু মুআয শাহ আল-মারওয়াযীঃ কিতাবুল জুয।
(2) ইমাম আবদুল আযীয আল-কিতানীঃ "ফাযায়িল রাজাবে যামিরা",
(3) ইবনে হাজর আল-আসকালানী, তাবয়ীনুল আজাব, পৃ. ৪৪-৪৫, হাদীস: ২৮
(4) ইবনে ইরাক, তানজিহুশ শরীয়া আল মারফুয়া আনিল আখবারিশ শানীয়া আল মাওযুআ, খ. ২, পৃ. ১৬১, হাদীস: ৪১
(5) ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ২৯০ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।
মানঃ (নির্ভরযোগ্য)📍
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসের মধ্যে এটি বেনযির একটি বর্ণনা।
[ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ মা সাবাতা বিস সুন্নাহঃ পৃ ২৯০ : অধ্যায়ঃ মাহে রজব।]