নাস্তিকতা, সহজ কথায় ধর্ম না মানা। ধর্ম না মানাও একটা ধর্ম। ধর্মহীন ধর্মই নাস্তিকতা।
১৮০০ সাল। দু’শ বছর আগে। নাস্তিকতা একটি ‘বাদ’ বা ইজমে (ism) পরিণত হয় তখন। এটাকে এনলাইটমেন্ট যুগ বলে। ধীরেধীরে বিস্তার পায়।
বিশ্বের ২.৩% মানুষ নাস্তিক। প্রতি ১০০ কোটিতে দু’কোটি তিরিশ লক্ষ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭০০ কোটি। সে হিসেবে ষোল কোটির বেশি মানুষ নাস্তিক। ১৩% রাশিয়াতে, ১২% ইউরোপীয় ইউনিয়নে,৬% - ৪৬% ইতালীতে, ৮৫% সুইডেন। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। ২০১৩ ,ব্লগ-ব্লগার, হেফাজত, শাপলা চত্ত্বর তো জানেন। এখন অনুমান করুন এদেশের অবস্থা। অন্যান্য আরো জরীপ আছে। আছে ভিন্ন তথ্য।
বর্তমান প্রজন্ম ৯.৬% ধর্মবিশ্বাসহীন এবং ২% নাস্তিক হিসেবে বেড়ে উঠছে। ‘ধর্মবিশ্বাসহীন’ কে অজ্ঞেয়বাদ বলতে পারি। আবার নাও বলতে পারি। অনেকে ক্ষেত্রে অজ্ঞেয়বাদকে সংশয়বাদের মতই মনে হয়। ধর্ম ও খোদা সম্পর্কে উদাসীনতাই ‘অজ্ঞেয়বাদ’। দ্বিধা-দ্বন্দ ও যুক্তির বিদ্রোহে ভোগাই সংশয়বাদ। অন্তত আমার তাই মনে হয়। মূলকথা, মোট মিলিয়ে ১০০ কোটির বেশি জনসংখ্যা এদের।
নাস্তিক্য গলফ বা আরবেও আছে। আরব আমিরাত,বাহরাইন,কুয়েত ও ফিলিস্তিনে ৩-৭% নাস্তিক। মজার কথা কি জানেন, খোদ সৌদ্দাদের রাষ্ট্রেও নাস্তিক আছে। সৌদ্দা মানে সৌদি। সেখানে ৫% নাস্তিক। ১৯% অজ্ঞেয়বাদী। অর্থাৎ ৬০ লক্ষ হচ্ছে অজ্ঞেয়বাদী বা আশ্বস্ত-নাস্তিক। ১৫ লক্ষ টাটকা নাস্তিক। জরীপটা ২০১২ সালের। গ্যালোপ ইন্টারন্যাশনালের। এতদিনে আরো বেড়েছে।
মূল কথায় আসি। সৌদিতে আছে মক্কা-মদিনা। তাই ওখানের ইসলামই সঠিক ইসলাম। এদেশের আহালে-হাদিস, সালাফিরা তাই বলে। কথায় কথায় মদিনা ভার্সিটির দোহাই দেয়। শায়েখ-শায়েখ জিকির তুলে। এখন প্রশ্ন; এত শায়েখ থাকতে, পিওর ইসলাম থাকতে, সৌদ্দাদের রাজতন্ত্র থাকতে- এত নাস্তিক হইলো ক্যামনে? উসমানিয়দের (Ottoman) সময় তো ছিল না। আপনাদের সময় ক্যান?
শুধু কি নাস্তিক! জুয়ার আসর হয় রাজার আয়োজনে। মক্কার সাবেক ইমাম সেটার উদ্বোধক হয়। রিয়াদে নাইটক্লাব হয়। রিয়াদ সৌদ্দাদের রাজধানী। আগে নাম ছিল নজদ। সৌদ্দারা পাল্টিয়েছে। মদিনা-মুনিব (দ) এঁর হাদিস আছে। বলেছেন, রিয়াদ থেকে শয়তানের শিং রেবোবে। যা ইসলামকে ছিন্নভিন্ন করে দিবে [বুখারী ২:১৭:১৪৭, ৯:৮৮:২১৪]।
রিয়াদ বা নজদেই জন্মেছিল অভিশপ্ত ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী। যে কিনা সৌদ্দা ও সালাফিদের ধর্মবাপ। ইবনে সৌদ ছিল সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা। ইবনে আব্দুল ওহাবের আত্মীয় এবং ভাবশিষ্য। দুজনে মিলেই সৌদি বানায়। পুরোটা জানতে ইতিহাস ঘাঁটুন।
সৌদ্দারা মানুষকে দেয় না কথা বলার সুযোগ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা। কিছু বলেলেই আছে অন্ধকার কারাগার। নির্যাতন বা জুলুম তো সূর্যের মতই সত্য। মানব-অধিকার অনেকটাই মাকাল ফল। বাহিরে টিপটাপ, ভেতরে বিশ্রী শূন্যতা। আর সৌদ্দা রাজবংশের বেলালাল্লাপনা ব্যাখ্যা যোগ্য না। এরাই ইয়ামেনে লক্ষ শিশু না খাইয়ে মারে। ফিলিস্তিনে পরোক্ষ জুলুম চালায়। এরা এও বলে,বৌয়ের গোস্ত খাওয়া হালাল। কত বলব...
এরাই আবার ধর্মের কথা বলে। নিজেই ভাবুন,এমন কারো মুখের কথা কি আপনি মানবেন? যে আপনার মৌলিক মানবাধিকার দেয় না,সে ধার্মিক হয় কিভাবে! মনে রাখবেন;যে যতটা মানবিক,সে ততটাই ধার্মিক। মানবতা ছাড়া ধর্ম নেই। ওদেশের মানুষ জানে এসব। এদেশে জানে না। তাই সৌদ্দাদের দেবতা বানায়। আর; অধার্মিকেরা ধর্মের প্রচার করলে জনমানুষ নাস্তিক হওয়াটা অস্বাভাবিক না। ধর্মহীন হওয়াই যৌক্তিক।
যা-হোক, এটা ছোট কারণ। মূল কারণ ওহাবীদের আকাইদ (creed)ও দর্শন। সেই যে আব্দুল ওহাব,তার নামেই ওহাবী মতবাদ। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই।
নবী (দ) মরেছে, মাটিতে মিশেছে। তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ির কেন? এটা ওহাবী দর্শনের নমুনা। এমনকি একজন ‘টাই-শায়েখ’, যে কিনা ওহাবিদের কলিজার ধন, সে বলেছে- আজকের দিনে নবীকে মানাও আমাদের জন্য হারাম। কথাটা পরপর দুবার উচ্চারণ করেছে। স্লিপ অ টাংগ বা জিহ্বা পিছলালে একবার পিছলায়, দুবার না (...ইশারাই যথেষ্ট)।
তো- এই যে মরে যাওয়া, মিশে যাওয়া এসব কি? এসবই নাস্তিকতার মৌলিক উপাদান। কিভাবে? নাস্তিকতার মূখ্য দর্শন বস্তুবাদ। বস্তু থেকে উদ্ভব,বস্তুতেই শেষ। এর আগের পরে কিছু নেই। আর পরোক্ষ ভাবে ওহাবীতন্ত্র সেটাই শিখাচ্ছে।
অন্যদিকে ইসলাম বলে নবী জীবিত। তিনি ধর্মের কেন্দ্র। তিনি আছেন তাই ইসলাম আছে। যা ওহাবীদের বিপরীত,আলো আর অন্ধকার। এখানেই আধ্যাত্ম,এখানেই তাসাউফ বা সুফিধারা।
প্রশ্ন করেছিলাম,ওসমানীদের সময় কেন নাস্তিক ছিল না? কারণ উসমানীদের তাসাউফ ছিল। তাঁরা সুফি ছিলেন।
তাসাউফহীন ইসলাম মানুষকে বিচ্যুত করে। মানুষকে অধার্মিক করে। সত্য বলতে তাসাউফ ছাড়া ইসলামই নেই। মাথা ছাড়া যেমন শরীর হয় না। তাই নাস্তিকতা রোধে তাসাউফ বা সুফিধারা ছাড়া ওষুধ নেই।
ওহাবীতন্ত্র নাস্তিকতার প্রথম ধাপ। একজন মুসলিম চাইলেই নাস্তিক হতে পারবে না। সহী হাদিস ও রেফারেন্সের টক-ঝাল-মিষ্টিতে আগে ওহাবী হও। এরপর নিজেই নাস্তিক হবে। বিমান থেকে ঝাপ দাও। গ্রাভিটি নিজেই নিচে টানবে। বিষয়টা এমনি।
Top