রাসূল (ﷺ) এর নামে নাম রাখা ব্যক্তির জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ।



‘প্রচলিত জাল হাদিস' (মতিউর রহমান লিখিত) বইয়ের ১৭৯ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস উল্লেখ করেন, আমার নামে সন্তানদের নাম রাখ কেননা, আল্লাহ তায়ালা কসম করে বলেছেন, হে মুহাম্মদ(ﷺ)! আপনার নামের সাথে যার নাম মিলাবে আমি কখনাে তাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বালাব না। এ হাদিসটিকে সে জাল প্রমান করার অনেক অপ্রচেষ্টা করেছেন,কিন্তু সর্বশেষে ব্যর্থ হয়েছে।

উক্ত হাদিসটি তারা বাংলায় লিখেছেন এবং হাদিসটি বিকৃতি করে বর্ণনা করেছে যাতে জাল বানাতে সহজ হয়। মূলত হাদিসটি হল এভাবে 

🕋 হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিতঃ

يوقف عبدان بين يدي الله عز و جل فيقول الله لهما: ادخلا الجنة ، فاني اليت يوقف على نفسي أن لا يدخل النار من اسمه محمد ولا احمد۔

-“কিয়ামতের দিন দুধরনের ব্যক্তিদের মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে উপস্থিত করা হবে। হুকুম করা হবে তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাও। তার কারন আল্লাহ তায়ালা নিজের নফলের উপর কসম করেছেন যার নাম আহমদ এবং মুহাম্মদ রাখবে তাকে কখনাে দোযখে দেব না।”

১.ইমাম দায়লামী : আল মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/৫৩৫ পৃ. হাদিসঃ ৯০০৬
২.ইমামা মানাৰী : ফয়জুল কাদীর ৫/৪৫৩ পৃ.
৩.ইমাম ইবনে সা'দ : তবকাতুল কোবরা
৪.আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১/১৩৫ পূ.
৫.হাফেজ আবু তাহের সালাফী (রহ.) তার হাদিস গ্রহেও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
৬.আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী : আহকামে শরীয়াতে ১৮১ পৃষ্ঠা
৭.আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৮৫ প
৮.ইমাম দায়লামী : আল ফিরদাউসঃ ৫/৪৮৫ হাদিস নং - ৮৮৩৭

👉উক্ত হাদিসটির দুটি সূত্র ইমাম দায়লামী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেকটি সনদ দুর্বল হলেও হাদিসটি কমপক্ষে “হাসান” এর মর্যাদা রাখে। এছাড়া এই বিষয়ে আরও একাধিক সনদ উল্লেখ পাওয়া যায়।

🕋 আরও সহিহ হাদিস পাওয়া যায়। যেমন হযরত নবীত্ব বিন শারীত্ব (رحمة الله) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন যে
,قال الله تعالى و عزتى و جلالة لا عذبت أحدا تسمى أسمك فى النار

অর্থাৎ- আমাকে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেছেন আমার। জালালিয়াতের শপথ! যার নাম আপনার নামে রাখা হবে তাকে দোযখের আযাব দেওয়া হবে না।

১.ইমাম আবু নাঈম ইস্পাহানী (رحمة الله) হলিয়াতুল আউলিয়া গ্রহে বর্ণনা করেন।
২.হাফিজ ইবনু বুকহির (رحمة الله) তার হাদিস গ্রহে হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।
৩.ইমাম দায়লামী । ৫/৫০ হাদিস নং- ১০০৮ তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে।

👉 উক্ত হাদিসটি সংকলন করে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (رحمة الله) বলেন-الاسناد المتصل অর্থাৎ- উক্ত হাদিসটির সনদ মুত্তাসিল তথা শক্তিশালী। (তথ্য সূত্র:ইমাম আহমদ রেযা : আহকামে শরীয়ত : ১/৮০ পৃ.)

🕋 অনুরূপ বর্ণনার আরও হাদিস পাওয়া যায়,

وعن ابن عباس رضي الله عنهما أنه صلى الله عليه وسلم قال : اذا كان يوم القيامة ينادى مناد في الموقف الا ليقم من كان اسمه محمدا ، فليدخل الجنة بكرامتی -

“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,কিয়ামতের দিন ফেরেশতারা মুহাম্মদ নামের ব্যক্তিদেরকে। ডাকবেন ও খুঁজতে থাকবেন এবং তাদেরকে বলা হবে তােমরা জান্নাতে যাও, এটা আল্লাহর মহত্ব ও বড়ত্ব কী, তা দেখানাের জন্য তাদের প্রতি প্রত্যাদেশ হবে।"

[আল্লামা ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩৩৮৫ পৃষ্ঠা]

🕋 অনুরূপ হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)হতে বর্ণিত আরেকটি হাদিস পাওয়া যায়।

انه صلى الله عليه وسلم قال : قال الله عز و جل : و عزتی و جلالي لا اعذب احدا تسمى باسمك في النار -

-“নিশ্চয়ই আঁকা (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, হে হাবীব,আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম যারা আপনার নামে নাম মিলেয়ে রাখবে। তাদেরকে কখনাে জাহান্নামের আযাব দেয়া হবে না।'

১.আল্লামা শায়খ ইউসুফ বিন ইসামইল নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার । ৩৮৪ পৃ
২.ইমাম বুরহান উদ্দিন হালকীঃ সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১৫ 


হযরত আবু উমামাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

- اخبرنا الشريف ابو الحسن محمد بن احمد بن المهتدي قال حدثنا الحسين بن أحمد بن عبد الله بن بكير المحدث قال حدثني ابو الحسن
حدثنا إسحاق بن عبد الله العسكري بنصيبين قال حامد بن حماد بن المبارك بن سیار بن محمد ابو يعقوب النصيبي قال حدثنا حجاج بن المنهال قال حدثنا حماد بن سلمة عن برد بن سنان عن مكحول عن أبي أمامة الباهلي قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم:  " من ولد له مولود فسماه محمدا كان هو ومولوده فى الجنه

-“যার সন্তান জন্ম নিল সে আমার পবিত্র নাম হতে বরকত হাসিল করার নিমিত্তে তার নবজাতকের নাম মুহাম্মদ রাখবে তবে সে এবং তার সন্তান দু'জনই বেহেশতে যাবে।” 

উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা আযলুনী (رحمة الله) বলেন,

رواه ابن عساكر عن أمامة رفعه قال السيوطي: هذا أمثل حديث ورد في هذا الباب وإسناده حسن

“উক্ত হাদিসটি ইমাম ইবনে আসাকীর তার তারীখে দামেস্কে হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি  বলেন হাদিসটির সনদ হাসান” পর্যায়ের।"

● ইমাম ইবনে আসাকির : তারীখে দামেস্ক : ১৩১৭৭ পৃ.
● ইমাম মানাবীঃ ফয়জুল কাদীরে ২৩৭ পৃষ্ঠা হাদিসঃ ১০৮৪
● ইবনে কাইয়ুম : মানারুল মুনীফ : ৬১ পৃষ্ঠা
● আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী : আহকামে শরীয়তে ১৮০ পৃষ্ঠা, 
● ইমাম ইবনে বুকাইরঃ ফযলুল মিন ইসমু আহমদ ওয়া মুহাম্মদঃ ১৫৮ পৃষ্ঠা 
● ইমাম জালালুব্দীন সুয়ূতি : আল লাআশীল মাসনূজঃ ১১০৬
● ইমাম জালালুদ্দিন সুয়তী : মুখতাসারুল মওআত : ১৮৫ পৃ
● শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহার : ৩৩৮৫
● আল্লামা আলুনী : কাশফুল খাফা : ২২৫৪ . হালিশ ২৬৪৩

সুতারাং প্রমান হয়ে গেল হাদিসটি নিঃসন্দেহে “হাসান" বা গ্রহণযােগ্য। অনুরূপ আরও হাদিস রয়েছে যেমন : 

ইমাম জাফর সাদেক (رحمة الله) তার পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে ইমাম বাকের (رحمة الله) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন:-

اذا كان يوم القيامة ناد منادی من اسمه محمد فيدخل الجنة بكر امة اسمه صلی الله عليه و سلم

-“কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ নামের ব্যক্তিদেরকে ডাকবেন। তাপর বলবেন তােমরা সবাই জান্নাতে চলে যাও। এটা শুধু আল্লাহ তা'য়ালার হাবীব (ﷺ) এর মহত্ব ও বড়ত্ব দেখানাের জন্য এ মর্যাদা।"

● ইমাম কাজী আয়াত : শিফা শরীফ : ১১০৫ পৃষ্ঠা
● শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩৮৫


সুতরাং প্রমাণিত হলাে যে হাদিসটির মােট ৫টির বেশী সনদ রয়েছে। প্রত্যেকটি সনদ দুর্বল হলেও হাদিসটি হাসান” হওয়াতে কোন অসুবিধা নেইং বরং নিঃসন্দেহে। 'হাসান' বলা যায়।

সূত্রঃ প্রমানিত হাদীস কে জাল বানানোর স্বরুপ উন্মোচন
মুফতি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাহাদুর
Top