♥মি'রাজের ঘটনা প্রকৃতি (পর্ব ৩) ♥

 আর সেই দর্শনই না আমি আপনাকে দেখিয়েছি তা কেবলমাত্র মানুষের পরীক্ষার জন্য দেখিয়েছি। 
(সূরা বনি ইসরাইল আয়াত ৬০)

নিস্তব্ধ নিঝুম রাত। গভীর শান্ত প্রকৃতি। ঘন অন্ধকারের কোলে মাথা রেখে আকাশও ঘুমিয়ে পড়েছে। নিস্তব্দ, নির্জন চারিধার। মধ্য রাতের প্রকৃতিস্থির। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র কা'বা চত্তরে (কারো কারো মতে উম্মেহানীর ঘরে) ঘুমে বিভোর। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন কে যেন প্রান উম্মাদ করা স্বরে ডাকছে,  হে রাসূল! ডাক কান মোবরকে যেতেই প্রিয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চোখের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে দেখেন জিব্রাইল (আঃ) মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন।

হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসূলে করীমের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করে নিলেন এবং পবিত্র কলব জমজমের পানিতে ধুয়ে দিয়ে পুনরায় যথা স্থানে তা স্থাপন করলেন। এটা চতুর্থবার বক্ষ বিদীর্ণ। 

হযরত জিব্রাইল (আঃ) সাদা বর্ণের একটি  বাহন সামনে নিয়ে এলেন। এর নাম বোরাক, সে পদবিক্ষেপ করতে পারে দৃষ্টির শেষ সীমানায়।  রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে সওয়ার করানো হয়েছিল এবং জিব্রাইল (আঃ) আমাকে আকাশের উপর নিয়ে গিয়েছিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাকের পাদানীতে কদম মুবারক রাখতে উদ্যত হলেন তখন বুরাক ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে লাগলো। এই অবস্থা লক্ষ্য করে হযরত জিব্রাঈল (আ) বুরাককে উদ্দেশ্য করে বললেন,

হে বুরাক তোমার কি হয়েছে? তুমি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছো কেন? সরকারে দু'আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কেউ তোমার পৃষ্ঠে আরোহণ করেনি। এককথা শুনে বুরাক শান্ত হয়ে গেল এবং জমিনের উপর নতজানু হল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিজের পিঠে তুলে নেয়ার জন্য।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পিঠে চড়ে বসলেন। বোরাক বিদ্যুৎ গতিতে গন্তব্য পথে ছুটে চলল। পথে খেজুর বাগান সমৃদ্ধ এলাকায় যখন হুযুর   সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপনীত হলেন তখন  জিব্রাইল (আঃ) বললেন, এখানে দু'রাকাত নামায আদায় করে নিন। জায়গাটির নাম ইয়াসরীব।

পরবর্তিতে এর নামকরণ করা হয় মদীনা মুনওয়ারা। ভ্রমণ পথে মাদায়েন এবং হযরত ঈসা (আঃ) এর জন্মস্থানে পৌঁছলে এখানেও জিব্রাইল (আঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দু'রাকাত নামাজ আদায় করতে বললেন। এরপর রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখতে পেলেন একপাশে এক বৃদ্ধা রমণী দাঁড়িয়ে আছে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, 'এটা কি?' উত্তরে জিব্রাইল (আঃ) বললেন, 'সামনে এগিয়ে চলুন। কিছুদূর আসার পর দেখতে পেলেন একজন লোক  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে ডাকছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাইল (আ:) কে পুন জিজ্ঞাসা করলেন।

'এটা কি?' জিব্রাইল আঃ বললেন 'সামনে চলুন। 'এরপর রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে একটি জামাত দেখতে পেলেন। যারা রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম প্রদান করছিলেন। তাদের সালামের বাক্যগুলো ছিল এমন-আসসালামু আলাইকা ইয়া আওয়্যল, আসসালামু আলাইকা ইয়া আখের,

আসসালামু আলাইকা ইয়া হাশর। জিব্রাইল, (আঃ) হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, হুযুর আপনি এদের সালামের জবাব দিয়ে ধন্য করুন। হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁদের সালামের জবাব দিলেন। এবারে জিব্রাইল (আঃ) হজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলেন। তিনি বললেন, 'ওই বৃদ্ধা রমণী হচ্ছে দুনিয়া। তার আয়ু বেশি দিন নেই। যেমন বৃদ্ধা রমণীর আয়ু যৎসামান্য বাকী থাকে। আর আপনাকে যে লোকটি ডাক দিয়ে ছিল সে হচ্ছে ইবিলিশ শয়তান। আপনি যদি তার ডাকে সাড়া দিতেন তাহলে আপনার উম্মত দুনিয়াকে আখেরাতের উপরে প্রধান্য দিত এবং শয়তান তাদেরকে গুনাহগার করে ফেলত। আর ঐ জামাতে যারা আপনাকে সালাম দিয়েছে তারা হচ্ছেন-হযরত ইব্রাহীম (আঃ) হযরত মুসা (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ)। এর পর-  বোরাক হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে বায়তুল মাকদাসে পৌছলো এবং মসজিদের দরজার বেষ্টনীতে বোরাককে বাঁধলেন। বর্তমানে উক্ত দরজার নাম 'বাবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'। এর পর তিনি মসজিদের প্রবেশ করলেন।

এবং দু'রাকাত নামাজ আদায় করলেন। দু'রাকাত নামাজ ছিল তাহিয়াতুল মসজিদ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনে এখানে ফেরেশতাকুল একত্রিত হয়েছিলেন। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত ঈসা (আঃ) পর্যন্ত যে সমস্ত নবীদের রূহসমূহ আকৃতি সম্পন্ন হয়ে এখানে উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁরা এখানে আল্লাহ তা'আলার হামদ ও ছানা পেশ করলেন এবং হুযুর পাক  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে ছালাত ও সালাম পেশ করলেন। সবাই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিলেন। এর পর আজান হল। একামতও হল সকলেই ইমামতির জন্য হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সামনে এগিয়ে দিলেন। হুযুর পাক  ইমামতি করলেন আর আম্বিয়া কেরাম সকলেই  নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুকতাদী হলেন।
 (মাদারেজুন নবুওয়াত ২য় খণ্ড)  


 (চলবে)


Top