ইসলামি অর্থনীতির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য :


প্রথমত: ইসলামি আকিদা ও ঈমানি চেতনা লালন।ইসলামি অর্থনীতি ও ঈমান অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এটি ইসলামি অর্থনীতির সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ইসলামি অর্থনীতি থেকে যদি এ বৈশিষ্ট্যকে তুলে নেয়া হয় তাহলে সেটি মুখ থুবড়ে পড়বে। সফলতার আলো দেখতে পাবে না কখনো। ঈমান বলতে আমরা এখানে সে ঈমানকেই উদ্দেশ্য করছি, কুরআন সুন্নাতে যা আকিদা শব্দের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ এটি ঈমানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি নির্দেশ করে। আর তা হচ্ছে আমান তথা নিরাপত্তা ও শান্তি।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে:
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে মিশ্রিত করেনি, তাদের জন্যেই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়েতপ্রাপ্ত। 
(সূরা আল-আন’আমঃ৮২)
দেখা যাচ্ছে ঈমান শব্দটি শান্তি ও নিরাপত্তার এ মহান অর্থ ও উদ্দেশ্যকে ধারণ করে আছে। তাই এখানে আকিদা শব্দের পরিবর্তে ঈমান শব্দটির ব্যবহারই সংগতিপূর্ণ ও অধিক যুক্তিযুক্ত। সুতরাং ঈমান একটি সহজবোধ্য বিষয় যার শব্দগুলোও খুব সাবলীল। মন ও মননকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে দারুণভাবে। অনুরূপভাবে এটি আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকারের প্রতিও নির্দেশনা প্রদান করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ ঈমান দ্বারা এমন সমর্থন ও স্বীকৃতি কামনা করেন যার পশ্চাতে থাকবে আনুগত্য ও মান্যতা। আর ঈমান শব্দটি মৌলিকভাবে উল্লেখিত অর্থ বুঝিয়ে থাকে। অর্থাৎ ঈমানের অর্থ শুধুমাত্র সমর্থন ও স্বীকৃতিই নয় বরং আনুগত্য সংবলিত স্বীকৃতি।
মানসপটে একটি জিজ্ঞাসা উঁকি দিচ্ছে যে, অর্থনীতির সাথে ঈমানের সম্পর্ক কি? তার সাথে এর যোগসূত্রই বা কি? কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটিতে আমরা এর সমাধান খোঁজে পাব। এরশাদ হচ্ছে:
আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। 
(সূরা আল-আরাফঃ ৯৬)
এ আয়াতে কারীমা থেকে জোরালোভাবে প্রতিভাত হচ্ছে, ঈমান ও তাকওয়া ইসলামি অর্থনীতির উন্নতি ও বিকাশের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ’দুটি বরকত ও প্রাচুর্যের অতি কার্যকরী উপকরণ। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য হচ্ছে: অর্থনীতির মৌল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিলাসবহুল প্রাচুর্যপূর্ণ সমাজের বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠা।
সুতরাং আমরা বলতে পারি এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলতে চাচ্ছেন: তোমরা যদি নিরাপদ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাও যার মাধ্যমে প্রাচুর্যময় সুখী জীবন বাস্তবায়িত হবে তাহলে আল্লাহ ভীতি, তাঁর প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের বিকল্প নেই।
রাসূলের অসংখ্য হাদীসও এ আপাত সত্যটিকে পরিদৃষ্ট করে সুস্পষ্টভাবে।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“বয়স বৃদ্ধি নেক কাজের মাধ্যমেই সাধিত হয়, একমাত্র দোয়াই পারে তাকদীর রদ করতে আর ব্যক্তি নিজ পাপের কারণেই মূলত রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়”। 
(ইবনে মাজাহঃ ৪০২২)
নবীজীর এ বাণী প্রচ্ছন্নভাবে ইসলামি অর্থনীতি ও ঈমানের ওতপ্রোত সম্পর্কের প্রতি তাগিদ করছে। অর্থনীতির উন্নতিতে তাকওয়া ও আল্লাহ ভীতির কার্যকারিতা প্রমাণিত ও একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। হাদীসের বিশাল ভাণ্ডারে এর দৃষ্টান্ত নিতান্তই কম নয়।
যেমন এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
“যে ব্যক্তি একটি ঘর বা জমি বিক্রি করল অতঃপর বিক্রয়লব্ধ মূল্য সমপর্যায়ের কাজে ব্যয় করল না, তাতে আর তার জন্যে বরকত দেয়া হবে না।”
(মুসনাদে আহমাদঃ ১৭৯৯০, ইবনে মাজাহঃ ২৪৮২)
এখানেও বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, ইসলামি অর্থনীতির উন্নতির সম্পর্ক বস্তুগত বিষয়াদির সাথে নয় বরং এর অগ্রগতি ও উন্নতি ঈমান ও ঈমান নির্ভর কার্যাবলীর সাথে সম্পৃক্ত।
বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জ ব্যবসা একটি আধুনিক ও লাভজনক ব্যবসা পদ্ধতি, কিছু লোক সম্পর্কে আমরা নির্ভরযোগ্য সূত্রে জেনেছি, তারা নিজদের বাড়ি ঘর বিক্রয় করে সেখানে বিনিয়োগ করেছিল, কিন্তু ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। এখানে ব্যাপারটি সামান্য দুর্বোধ্যই বলতে হবে, কেননা ঈমানের সাথে অর্থনীতির যোগসূত্রতা বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটু অস্বাভাবিকই মনে হয় তবে ব্যাপারটি অতি বাস্তব এবং এ দূরত্ব অদৃশ্য ও ঈমানী দূরত্ব যা কেবল ইসলামি অর্থনীতিতেই গোচরে আসে। আল্লাহ ও ধর্মে অবিশ্বাসী অর্থনীতিবিদ যাদের অর্থনীতি ঈমানের ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যা বরকত বঞ্চিত এবং যা বিশ্বকে শুধু ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও অশান্তি ভিন্ন কিছু দিতে পারেনি তারা এ বাস্তবতাকে স্বীকার করে না। ইসলামি অর্থনীতির উন্নতির সাথে তাকওয়া ও আল্লাহর প্রতি ঈমানের সম্পর্ক রয়েছে নিম্নোক্ত হাদীসও আমাদেরকে এ সত্য মেনে নিতে বাধ্য করছে।
ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
“দান সদকা সম্পদ হ্রাস করে না, ক্ষমা ও উদরতা বান্দার ইজ্জত সম্মানকে বৃদ্ধিই করে, আর আল্লাহর জন্যে কেউ বিনয়ী হলে আল্লাহ তার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেন”।
(সহীহ মুসলিমঃ ২৫৮৮)
এ মানদণ্ড ও আদর্শ শুধুমাত্র ইসলামি অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য। এতে নবীজী বলছেন: সম্পদের হ্রাস বৃদ্ধিতে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দারিদ্র্য ক্লিষ্ট অনাথ মিসকিনদের দান সদকার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। আর সেটি দু’ভাবে হতে পারে।
১. দান সদকার কারণে মহান আল্লাহ মুসলিম বান্দাদের বিপদাপদ সরিয়ে নিয়ে যান মর্মে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। অনেক সময় এমন হয় যদি সে দান খয়রাত না করত তাহলে অজান্তেই তার সম্পদ উজাড় হয়ে যেত। সুতরাং স্পষ্ট হল যে, দানখয়রাত সম্পদ শুধু বৃদ্ধিই করে না, রক্ষাও করে।
২. মহান আল্লাহ অল্প সম্পদের ভেতর অধিক সম্পদ অপেক্ষা বেশি উপকার ও কল্যাণ দান করেন। অল্প সম্পদের মাধ্যমে এত উপকার লাভ করা যায় যা অনেক সম্পদ দ্বারা কল্পনাও করা যায় না।
দ্বিতীয়ত: ইসলামি অর্থনীতির আরো একটি বৈশিষ্ট্য হল, এটি ওহির ওপর প্রতিষ্ঠিত এক পূর্ণাঙ্গ অর্থনীতি। প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের জোড়াতালি দেয়া অসার চিন্তার ফসল নয়। এবং এর উৎসও কিন্তু কোন মানুষ নয়যাদের চিন্তা ও পরিকল্পনা প্রতি নিয়ত পরিবর্তন হয়। তারপরও তাতে থেকে যায় ভুলশুদ্ধ উভয়ের অবকাশ। সামগ্রিক বিবেচনায় এটি ইসলামি অর্থনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কেননা এটি একমাত্র ওহির ওপরই নির্ভর করে ওহি ব্যতীত অন্য কিছুর প্রতি তার আস্থা নেই। এটি একটি স্বতন্ত্র ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা যার উৎস হচ্ছে ঐশী প্রত্যাদেশ। ইসলামে যাবতীয় মতবাদ ও চিন্তাধারা অর্থনীতি বিষয়ক হোক কিংবা সাধারণ বিষয়ক সবকিছুকে যাচাই ও তুলনা করা হয় ঐশী প্রত্যাদেশের সাথে। ওহির চেতনার সাথে সাঙ্ঘর্ষিক মতবাদ ও চিন্তাধারাকে পরিত্যাগ করা হয় আর সংগতিপূর্ণ তত্ত্ব ও মতবাদকে প্রেক্ষিত ও অবস্থার বিবেচনায় আমলে নেয়া হয়। সুতরাং গ্রহণ বর্জনের সাধারণ মানদণ্ড একটিই আর সেটি হচ্ছে ওহির চেতনার সাথে সামঞ্জস্যশীল হওয়া। আর বাস্তব পরিবেশ পরিস্থিতি হচ্ছে বিধানের বাস্তবায়ন ক্ষেত্র-উৎস নয়।
অন্যদিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির আদর্শ হচ্ছে ভোগ বিলাস ও সুবিধাবাদ। যেমনি করে প্রেক্ষিত ও বাস্তব অবস্থা হচ্ছে বিধানের উৎস মূল বাস্তবায়ন ক্ষেত্র নয়। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা ও নাস্তিকতাই হচ্ছে পুঁজিবাদী অর্থনীতির আধার। আর সেটি “সুবিধাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতাই হচ্ছে বিধানের উৎস” মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক্য মতবাদ যে মূলনীতিত্রয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত তা হচ্ছে:

বস্তু, সুবিধাবাদ ও ভোগ বিলাস। এর বিপরীতে আমাদের আকীদা হচ্ছে, আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকালীন জীবনের সফলতার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন । যেমন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, “সকল রাসূল যে মূলনীতিত্রয়ের ওপর একমত হয়েছেন তা হচ্ছে: আল্লাহর প্রতি ঈমান, রাসূলগণের প্রতি ঈমান এবং পরকালের প্রতি ঈমান”। এ পর্যায়ে আমরা সতর্ক করে দিতে চাই যে, বর্তমানে কিছু কিছু ইসলামি ব্যাংক অচেতনভাবে পুঁজিবাদ দ্বারা প্রভাবিত হতে শুরু করেছে। আর সেটি লাভ ও মুনাফার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বরং কখনো কখনো একে হুকুমের উৎস জ্ঞান করার দিক থেকে। এবং কাজটি করা হয় বিভিন্ন হিল্লে ও ছল চাতুরীর আবরণে।
একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলে অভিযোগটির যৌক্তিকতা প্রমাণিত হবে। ইসলামিক ব্যাংকের উন্নতি ও মুনাফা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে “মুদারাবা” । যার জন্যে বাজারে প্রবেশ করতে হবে। কাজের নানাবিধ সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিভিন্ন পণ্যের বিপুল সমাহার ঘটিয়ে মূল্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে হবে। গোটা অর্থনীতিকেই চাঙ্গা ও গতিশীল করে তুলতে হবে। বাজারে কারেন্সি ও পণ্য সামগ্রীর ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে। গতিশীল করে তুলতে হবে অর্থনীতির পূর্ণ পরিমণ্ডলকেই। এক কথায় জনগণের টাকা তাদের থেকে সংগ্রহ করে তাদের কল্যাণেই বিনিয়োগ করবে। এ কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে অপরিসীম ধৈর্য ও অগাধ ঈমানের প্রয়োজন। এভাবেই সম্ভব সমাজ ও জনসাধারণের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
কিন্তু নিতান্ত পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে অনেক ইসলামি ব্যাংক এ কর্ম রীতিতে পিছিয়ে পড়েছে। বরং বলা চলে তারা এ নীতি পরিহারই করেছে। এর পরিবর্তে বিভিন্ন হিল্লে বাহানার আশ্রয় নিয়ে যাবতীয় শ্রম তাতেই ব্যয় করছে। এবং অতি দ্রুত ও নগদ মুনাফা অর্জনে চেষ্টা করে চলেছে। যেমন মুরাবাহার মূলনীতিতে সংস্কার করে তাতে ব্যাপক সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনেক ইসলামি ব্যাংক এ সূত্রে তাদের মুনাফাতে ব্যাপকতা আরোপ করেছে। কেননা তারা একে খুব সহজ ও মুনাফা অর্জনে তড়িৎ ফলদায়ক হিসেবে পেয়েছে। আর এটি এভাবে যে তারা সাধারণ বেচা কেনাকে মুরাবাহার রীতিতে বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে। আর তা হয়েছে এভাবে, তারা স্বয়ং ব্যাংককে বিক্রেতা বা ব্যবসায়ী ও কমিশন এজেন্টের মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে স্থাপন করেছে। এখন ব্যাংকের জন্যে শুধুমাত্র কিছু কাগজ পত্র, কয়েকটি টেবিল ও কয়েকজন কর্মকর্তা হলেই চলে। এর বেশি আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।
মক্কেল তথা খরিদ্দার থেকে ক্রয়ের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়ার প্রতিশ্র“তি গ্রহণ করে। ব্যাংক পণ্য বিক্রেতা কোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে, টেলিফোনের মাধ্যমে বিক্রেতাকে বলে: আমরা আপনার নিকট হতে অমুক পণ্য ক্রয় করলাম, আপনি বলুন: আমি বিক্রি করলাম। তখন কোম্পানি বলে: আমি বিক্রয় করলাম। এরপর মক্কেল বিক্রয় সম্পন্ন হয়েছে মর্মে ব্যাংকের নিকট চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে। ব্যাংক নগদ অর্থে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করে। পরে তার কাছ থেকে বর্ধিত হারে টাকা উসুল করে। আর এভাবেই স্বাক্ষর ও যোগাযোগ ব্যতীত অন্য কোন শর্ত ও স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য না করেই ব্যবসা পরিচালিত হয়। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয় একে তারা শরিয়ত অনুমোদিত মুদারাবা ও ব্যবসা বলে প্রচারণা চালায়।
সুপ্রিয় পাঠকবর্গ, একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, এ পদ্ধতির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে কে? এ পদ্ধতির মাধ্যমে লাভবান যদি কেউ হয়ে থাকে তাহলে সে হচ্ছে স্বয়ং ব্যাংক; অন্য কেউ নয়। এর মাধ্যমে বাজারে বাড়তি কোন সুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে না। জনসাধারণ ও সমাজের জন্যে সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক কোন প্রভাব পড়ছে না। বরং গ্রাহক ও মক্কেল চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের পাহাড়ের নীচে চাপা পড়ছে। আর এটিইতো সুদভিত্তিক বিনিয়োগ পদ্ধতি। বিনিয়োগকারী সুদিকারবারী বলে: আমি তোমার সাথে শ্রম দিতে পারব না। আমি জায়গায় বসে অর্থ বিনিয়োগ করব এবং বর্ধিত হারে টাকা আদায় করব। আমি বাজারে প্রবেশ করব না এবং কাজের সুযোগও সৃষ্টি করতে পারব না। এটি কষ্ট ক্লেশ ছাড়া বিনা পরিশ্রমে অর্থ উপার্জনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। তবে এর মাধ্যমে অর্থ সম্পদ একসময় সম্পূর্ণরূপে সুদিকারবারী মহাজনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে আর জনগণের ঋণের ভার বাড়তেই থাকবে। সুদিকারবারীর বাড়তে থাকবে সম্পদ আর জনগণের ঋণ।
তারা মুরাবাহার পদ্ধতিতে সংস্কার সাধন করে সুযোগ ব্যাপক করেছে বলে দাবি করছে আর আমরা তার পরিণতি প্রত্যক্ষ করলাম। এটি সুদভিত্তিক কারবারের একটি নতুন সংস্করণ মাত্র। হুবহু সুদি কারবার। সুদি কারবারের পরিণতি ও এ নব্য কারবারের পরিণতি একই। আর তা হচ্ছে, জনসাধারণকে ঋণগ্রস্ত করা এবং ব্যাংক ঋণদাতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। )
তৃতীয়ত : ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি আইনের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি “কারবারের মৌলধারা হচ্ছে বৈধ হওয়া”র ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেটি গ্রহণ করা হয়েছে শরয়ী মূলনীতি“ শরিয়তের প্রতিটি ধারার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সহজীকরণ ও কঠোরতা নিরসন” থেকে। সুতরাং যেসব ক্ষেত্রে অবৈধ মর্মে কোন উদ্ধৃতি পাওয়া না যাবে তাকে বৈধ বলেই ধরা হবে। এরশাদ হচ্ছে: তিনি (আল্লাহ) দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি।
চতুর্থত : ইসলামি অর্থনীতি কোন কিছুতে বৈধতা কিংবা অবৈধতার বিধি অহেতুক আরোপ করেনি। যেখানেই তা করা হয়েছে উদ্দেশ্য একটিই, কল্যাণ সাধন অথবা অকল্যাণ নিরসন। সামগ্রিক বিবেচনায় হোক কিংবা ব্যক্তি বিশেষের বিবেচনায়।
ú
Top