এই কিতাবে আছে হযরত নুরউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রতিবছর ঈদে মীলাদে হাবীবী পালন করতেন। এবং এসময় মুওছুলের শাষক ও নেতৃস্থানীয়রা উপস্থিত থাকতেন। নূরুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মুহব্বত করতেন ও পত্র লিখতেন। (কিতাবের নাম : ইকদুল জুমান ফি তারীখী আহলিল জামান, লেখক : হযরত বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি)
আপনারা কি জানেন কে ছিলেন এই নুরউদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি?
সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি - দুঃসাহসী এক যোদ্ধা , সফল এক সমরনায়ক , অসাধারণ এক সেনাপতি । ইসলামের শত্রুরা আজও তাঁকে সম্বোধন করে "গ্রেট সালাদিন বলে , মুসলিমবিশ্ব স্মরণ করে জাতীয় বীর হিসেবে । মুসলিম মিল্লাতের ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা রয়েছে তাঁর নাম সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ছিলেন হযরত নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর ভাতিজা ও খলীফা।

সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন তেমনি একজন সুলতান যিনি ইসলামিক রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোর একটি বায়তুল মুকাদ্দাস ক্রসেডারদের দ্বারা দখলের প্রায় ৯০ বছর পর পুনরায় তাদের হাত থেকে মুক্ত করেন, এবং সেখানকার মুসলিম নাগরিকদের তাদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করেন। ১১৬৯ সালের ২৩ মার্চ। সালাহুদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি গভর্নর ও সেনাপ্রধান হয়ে মিসর আগমন করেন। ফাতেমী খিলাফতের কেন্দ্রীয় খলীফা তাকে এ পদে নিয়োগ দিয়ে বাগদাদ থেকে প্রেরণ করেন । তার (দ্বাদশ শতাব্দীর) আগে থেকেই ইউরোপ, ফ্রান্স ও জার্মানী ইসলামিক রাষ্ট্র ভাঙ্গার জন্য ক্রশ ছুঁয়ে শপথ করে, ইসলামের নাম নিশানা মুছে দিয়ে বিশ্বজুড়ে ক্রশের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শুরু করে নানা চক্রান্ত । সেইসঙ্গে তারা চালায় সশস্ত্র অভিযান .. মুসলিমদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দখল করে রাখে ইসলামের মহান স্মৃতি চিহ্ন প্রথম ক্বিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস।
রাজনীতি, কূটনীতি, ভূগোল, ইতিহাস, পড়াশুনা ও প্রত্যক্ষ যুদ্ধ কৌশলের উপর গভীর জ্ঞান ও আগ্রহের কারণে চাচা শেরেকাহ ও নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে স্পেশাল প্রশিক্ষণ প্রদান করেন । নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁকে মিশরের গভর্নরের পদের জন্য মনোনীত করেন । সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি'ও চিন্তা চেতনায় ছিলেন সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি"র মতই। সেসময় যেখানে ইসলামী খিলাফতের সব আমীর, গভর্নর, উজিররা খৃষ্টানদের চক্রান্তে পা দিয়ে তাদের থেকে সুন্দরি মেয়ে ও প্রচুর ধনসম্পদ এবং মূলত ক্ষমতার লোভে ইসলামী রাষ্ট্র থেকে স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখতো , ঠিক তখনই সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রকে ইহুদী–খৃষ্টানদের চক্রান্ত থেকে মুক্ত করে বাইতুল মুকাদ্দাস কে সেই ক্রুসেডারদের থেকে মুক্ত করার জন্য একের পর এক জিহাদ করে গেছেন।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি মিশরের স্থায়িত্ব আনার পরই আবার তার সেই বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করার শপথ পূরণ করার জন্য বের হয়ে যান। তিনি সর্ব প্রথম খৃষ্টানদের ফিলিস্তিনের শোবক দুর্গ অবরোধ করে সেটা জয় করে ফেলেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গীর সহায়তায় কার্ক দুর্গও জয় করেন। কার্ক দুর্গ অবরোধ করার সময় সুদানীরা আবারো মিশরে সমস্যা তৈরি করলো ক্রসেডারদের সাহায্যে । ততক্ষণাৎ সুলতান আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি কার্কের অবরোধ নুরুদ্দীন জঙ্গীকে দিয়ে মিশরে চলে আসেন। পরে নুরুদ্দীন জঙ্গী কার্ক দুর্গ সহ ফিলিস্তিনের আরও কিছু জায়গা দখল করেন । ফিলিস্তিনের শোবক ও কার্ক দুর্গ পরাজয়ের প্রতিশোধ স্বরূপ ক্রসেডাররা পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। স্পেনের পূর্ণ নৌ বহর এতে যুক্ত হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়ামও যুক্ত হয়। গ্রিস ও সিসিলির জঙ্গি কিশতিগুলোও যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা ভাবতো, তারা চাইলে একাই মুসলিমদের পরাজয় করতে পারে তাই তারা যুক্ত হতে চায় নি।কিন্তু তাদের পোপের অনুরোধে তাদের কিছু যুদ্ধ জাহাজ যুক্ত করে ।
এদিকে সুলতান আইয়ুবী ক্রসেডার গোয়েন্দা মারফত তাদের আগমনের খবর পেয়ে যান, তিনি এটাও জেনে যান যে তারা আগে এসে মিশরের উপকুলের আলেকজান্দ্রিয়া অঞ্চল দখল করবে। তাই সুলতান আইয়ুবী ক্রসেডার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সকল জনগণকে সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যান এবং সেখানের ঘরগুলোতে মুসলিম সৈন্য দিয়ে ভরে রাখেন। ক্রসেডাররা যখন উপকুলে এসে ভিড়ে এবং আক্রমণের জন্য কোন সৈন্য না দেখে খুশিতে আত্মহারা , আর হেসে খেলে উপকূলের আলেকজান্দ্রিয়া দখল করতে যায় ।রাতে যখন তারা নগরীতে প্রবেশ করে তখনই সৈন্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করে নিঃশেষ করে দেয়। ঐ দিকে তাদের জাহাজগুলোতে যেই সৈন্যদেরকে রেখে এসেছিল তাদের উপর হঠাৎ পেছন থেকে সুলতান আইয়ুবীর যুদ্ধ জাহাজ আক্রমণ করা শুরু করে। মুসলিম সৈন্যরা মিনজানিকের সাহায্যে বড় বড় আগুনের গোলা ও পাথর মারতে শুরু করে ক্রসেডারদের জাহাজের উপর। ক্রসেডাররা পালাতে থাকে জাহাজ নিয়ে এবং ধ্বংস হতে থাকে। ক্রসেডারদের আরেকটা অংশ ফিলিস্তিন থেকে আক্রমনের জন্য আসলে সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী তাদের উপর আক্রমণ করে তাদের পরাজয় করে দেন । এই যুদ্ধ শেষে নুরুদ্দীন জঙ্গী সুলতান আইয়ুবীকে তার অধিকৃত অঞ্চল দিয়ে সিরিয়ায় নিজ এলাকায় চলে যান । সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর যুদ্ধ কৌশলের সবচেয়ে চমৎকার কৌশল ছিল তার গেরিলা হামলা। তার সৈন্যরা গেরিলা বাহিনী দিয়ে শত্রু সেনা বহরের পেছনের অংশে আঘাত হেনে বাতাসে মিলিয়ে যেতো। তাঁর এই কৌশলের আজো সামরিক বিশ্লেষকরা প্রশংসা করে । ১১৭৪ সালের মে মাসে নুরুদ্দীন জঙ্গী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালে নেমে আসে শোকের ছায়া। সালাহুদ্দীন আইয়ুবী হারান তার প্রাণপ্রিয় চাচাকে যিনি বরাবরই তাকে সাহায্য দিয়ে আসতেন বিভিন্ন সময়ে ।

উনাদের এই বীরত্ত ও ইসলামের জন্য অবদান সম্ভব হয়েছে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে উনারা যে রহমত হাছিল করেন তার বাস্তবায়ন উনারা ইতিহাসের মধ্যেও ইতিহাস করে রেখে গেছেন। যা কিয়ামত পর্যন্ত মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরন করবে।
Top