বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে- يا نبى سلام عليك বাক্যেسلام (সালামুন) শব্দের মীম বর্ণের তানউয়ীনের এক পেশকেتخفيف (তাখফীফ) বা গোপন করে পড়া যাবে না। বাতিল ও গুমরাহদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতা ও মূর্খতাসূচক। কারণ ছন্দের মিল এবং উচ্চারণের সহজতার জন্য শ্লোকের শুরু, শেষ বা মাঝে শব্দের ইরাবকে ক্বাওয়ায়িদের নিয়মের ব্যতিক্রম ব্যবহার করা বা পড়া জায়িয। যাকে বালাগাত ও আরবী ক্বাওয়ায়িদের পরিভাষায়مخالفة القياس বা নিয়মের বিপরীত বলা হয়।
আরবী ক্বাওয়ায়িদ উনার অন্যতম একটি নিয়ম হচ্ছে ফেলে মুদ্বারের শুরুতে ان (আন), لن (লান), كى (কায়), اذن (ইযান) ইত্যাদি নছব বা যবরদাতা হরফ আসলে তার শেষে প্রকাশ্যভাবে যবর দিতে হয়।
কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,ان سيكون (আন সাইয়াকুনু) ‘পবিত্র সূরা মুয্যামমিল শরীফ’ এর ২০নং পবিত্র আয়াত শরীফ। এখানে ان (আন) ফেলে মুদ্বারের শুরুতে প্রকাশ্যভাবে আসার পরেও ফেলে মুদ্বারের শেষে যবর হয়নি। বরং পেশ হয়েছে। ইহাও একটি আরবী ক্বাওয়ায়িদের ব্যতিক্রম। যাকেمخالفة القياس (মুখালিফাতুল ক্বিয়াস) বা খিলাফে ক্বিয়াস বলে।
এরূপ অসংখ্য উদাহরণ পবিত্র কুরআন শরীফ,পবিত্র হাদীছ শরীফ, আরবী সাহিত্যে ও নাহু শাস্ত্রের মধ্যেও রয়েছে। তদ্রুপ এ রকম একটি খিলাফে ক্বিয়াস বা ‘ক্বিয়াসের ব্যতিক্রম’ উচ্চারণ হচ্ছে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার সময় ছন্দ আকারে পবিত্র সালাম পাঠের বাক্যে سلام (সালামু) শব্দটি। যা মূলে ছিলো يا نبى سلامعليك কিন্তু ছন্দের মিল এবং উচ্চারণের সহজতার জন্য মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, আলিম-উলামাগণسلام ‘সালামুন’ উনার শেষের তানউয়ীনকে তাখফীফ বা হালকা করে سلام (সালামু) এক পেশ পড়েছেন এবং বর্তমানেও পড়ছেন। এ রকম নিয়মের ব্যতিক্রম পাঠ শরীয়তে জায়িয রয়েছে। কেননা, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং জগৎ বিখ্যাত মশহূর কবিগণের কবিতাগ্রন্থে এবং বালাগাত-ফাছাহাতের কিতাবে এ রকম অনেক সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম নিয়মও পরিলক্ষিত হয়।
মূলত, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পঠিতسلام (সালাম) শব্দটি তিন প্রকারে পাঠ করা যায়। যেমন-
এক. ‘মীম’ বর্ণে দুই পেশ যোগে, যা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রেরعلم نحو ইলমে নাহু বা বাক্য প্রকরণের নিয়ম।
দুই. ‘মীম’ বর্ণে এক পেশ যোগে, যা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রের علم عروض ইলমে আরূদ্ব বা ছন্দ প্রকরণের নিয়ম।
তিন. ‘মীম’ বর্ণে সাকিন যোগে, যা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রে علم قراءة ইলমে ক্বিরায়াত বা পঠন প্রক্রিয়া তথা ওয়াক্ফের নিয়ম।
উল্লিখিত প্রতিটি নিয়মই ক্বাওয়ায়িদ সম্মত। যার বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে পেশ করা হলো-
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার থেকে প্রমাণ :
১। ক্বাওয়ায়িদ অনুসারে على হরফে জর উনার সাথে ضمير مجرور متصل যোগ হলে তা عليهن،عليهم، عليهما، عليه ইত্যাদি নিয়মে পাঠ করা হয়। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
অর্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
অর্থ: “(আয় আল্লাহ পাক!) যারা গযবপ্রাপ্ত এবং পথভ্রষ্ট তাদের পথ আমাদেরকে দিবেন না।”(পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় এবং এ রকম অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে عليهم،عليه ইত্যাদি নিয়ম ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ‘পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ’ ১০ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুখালিফাতুল ক্বিয়াস বা নিয়মের বিপরীত নিয়ম হিসেবে عليه উল্লেখ রয়েছে। যেমন,
ان الذين يبايعونك انما يبايعون الله يد الله فوقايديهم فمن نكث فانما ينكث على نفسه ومن اوفىبما عهد عليه الله فسيؤتيه اجرا عظيما.
অর্থ: “যারা আপনার কাছে বাইয়াত হয় (আনুগত্যের শপথ করে) উনারা তো মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারক তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব,যে শপথ ভঙ্গ করে; অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি অতি সত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।”
এখানে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অংশে عليهالله প্রচলিত সাধারণ ক্বাওয়ায়িদ বা নিয়মের ব্যতিক্রম একটি স্বতন্ত্র নিয়মে হয়েছে। যা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নিয়ম বা নীতি মুবারক। যা মানুষের জানার বাইরে। তাইعليه এরهاء যমীর বা সর্বনামে পেশ যোগে পড়াই নির্দেশ মুবারক। যদিও তা প্রচলিত ক্বাওয়ায়িদ বা নিয়মের ব্যতিক্রম।
অনুরূপভাবে يا نبى سلام عليك এখানে প্রচলিত সাধারণ ক্বায়দা বা নিয়মের বিপরীত سلام (সালামুন) উনার দু’পেশের এক পেশকে‘তাখফীফ’ বা হালকা করে ছন্দ মিলানোর জন্যسلام সালামু পাঠ করা হয়। যা খিলাফে ক্বিয়াস হিসেবে জায়িয রয়েছে। যেমন, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে عليه الله পাঠ করার বিষয়ে সকলেই একমত হয়েছেন। অথচ তা প্রচলিত ক্বাওয়ায়িদ ও অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত নিয়মের বিপরীত।
২. আরবী ক্বাওয়ায়িদ অনুসারেكتابى অর্থ: আমার আমলনামা, حسابى অর্থ: আমার হিসাব, مالى অর্থ: আমার মাল ও سلطانى অর্থ: আমার ক্ষমতা।
কিন্তু ছন্দ মিলানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ উনার ১৯, ২০,২৫, ২৬, ২৮ ও ২৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উক্ত শব্দগুলোকে যথাক্রমে سلطانيه،كتابيه، مالياه، حسابيه এভাবে উল্লেখ করেছেন। এতে শেষের ‘হা’ হরফ উনাকে অতিরিক্ত হিসেবে ছন্দের মিলের জন্য যুক্ত করে ‘সাকিন’ প্রদান করা হয়েছে। যা خلاف قياس খিলাফে ক্বিয়াস বা নিয়মের বিপরীত। যা স্বতন্ত্র একটি নিয়মের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন, পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ নিম্নরূপ:
(۱) فاما من اوتى كتابه بيمينه فيقول هاؤم اقرءواكتابيه.
অর্থ: “যাঁর আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে,তিনি (খুশিতে অপরকে) বলবেন: নিন,আপনারাও আমার আমলনামা পাঠ করে দেখুন।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ, ১৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
(۲) انى ظننت انى ملق حسابيه
অর্থ:- “আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২০ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
)۳( واما من اوتى كتبه بشماله فيقول يليتنى لم اوتكتبيه.
অর্থ:- “অতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে তখন বলবে, হায় আমায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
ولم ادر ما حسابيه
অর্থ:- “আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব।”(পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
(۵) ما اغنى عنى ماليه
অর্থ:- “আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসলো না।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৮ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
(۶( هلك عنى سلطنيه
অর্থ:- “আমার ক্ষমতা-রাজত্বও বরবাদ হয়ে গেল।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
তাহলে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের ছন্দবদ্ধ রূপيا نبى سلام عليك উনার سلام (সালামুন) উনার এক পেশ ‘তাফখীফ’ করেسلام (সালামু) পাঠ করা নিষেধ তা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও রয়েছে কি?
না, নেই বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উল্লিখিত শব্দগুলোর মতো খিলাফে ক্বিয়াস বা নিয়মের বিপরীত স্বতন্ত্র একটি নিয়ম হিসেবেسلام عليك (সালামু আলাইকা) পাঠ করাও জায়িয রয়েছে। যা খিলাফে ক্বিয়াস হিসেবে ছন্দের মিল ও শ্রুতি মাধুর্যতার শর্তে শুদ্ধই রয়েছে।
৩. ক্বাওয়ায়িদ অনুসারে; ‘তিনি আমাকে সম্মান করেছেন’ এর আরবী হলো- اكرمنى আর ‘তিনি আমাকে হেয় করেছেন’ এর আরবী হলো-اهاننى কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত শব্দদ্বয়েরياء কে বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের রাখা হয়েছে, আবার ওয়াক্ফের সময় নূনের যেরটিও ‘তাখফীফ’ লুপ্ত হয়ে যায়। এ রকম ব্যবহার পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে পবিত্র সূরা ফজর শরীফ উনার ১৫ ও ১৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফেরমধ্যে পরিলক্ষিত হয়।
যেমন, ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فاما الانسان اذا ما ابتله ربه فاكرمه ونعمه فيقولربى اكرمن. واما اذا ما ابتله فقدر عليه رزقه فيقولربى اهانن.
অর্থ:- “মানুষ এমন যে, যখন তার মহান রব তাকে পরীক্ষা করেন অতঃপর তাকে সম্মান ও নিয়ামত মুবারক দান করেন তখন বলে আমার মহান রব আমাকে সম্মান দান করেছেন। আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন অতঃপর সংকুচিত করে দেন তার রিযিক, তখন বলে- আমার মহান রব তিনি আমাকে হেয় করেছেন।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয়ে اكرمنى ও اهاننى এর শেষেরيا (ইয়া) উনাকে বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের দিয়ে এবং ওয়াক্ফের সময় সে যেরও তাখফীফ বা গুপ্ত করে সাকিন পড়তে হয়, তাহলে سلام عليك এর মধ্যে سلام সালামুন উনার দু’পেশের এক পেশকে তাখফীফ বা গুপ্ত করে শুধু একপেশসহ سلام সালামু পাঠ করতে নিষেধ কোথায়? এতে তো অর্থেরও কোনো পরিবর্তন হয় না এবং লফযেরও কোনো পরিবর্তন হয় না। শুধু ছন্দের মিলের জন্য উচ্চারণের সামান্য পার্থক্য হয় মাত্র।
অতএব, প্রমাণিত হলো, ছন্দের মিলের ক্ষেত্রেسلام (সালামুন) উনাকে سلام (সালামু) পড়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ এবং পবিত্র ক্বাওয়ায়িদ সম্মত তথা জায়িয।
৫. বিশিষ্ট ছাহাবী শায়ির হযরত কা’ব বিন যুহাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ক্বাছীদা শরীফ :
ان الرسول لنور يستضاء به+ مهند من سيوف اللهمسلول.
فى فتية من قريش قال قائلهم+ ببطن مكة لمااسلموا زولوا.
انبئت ان رسول الله او عدنى + والعفو عند رسولالله مامول.
مهلا هداك الذى اعطاك نافلة + القران فيها مواعيظوتفصيل.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম। উনার দ্বারা জগৎ হিদায়েতের আলোকে আলোকিত হয়েছে। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরবারিসমূহের মধ্যে ধারাল উজ্জ্বল তরবারি। তিনি কুরাঈশ উনাদের তরুণ দলের মাঝে প্রেরিত হয়েছেন। যখন তারা সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন পবিত্র মক্কা শরীফ-এ কোন একজন উনাদেরকে বললো যে,আপনারা হিজরত করুন। আমি জানতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে হত্যার ধমক দিয়েছেন (অর্থাৎ আমাকে হত্যা করা বৈধ ঘোষণা করেছেন) এরপরও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমার আশা করা যায়। ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমার সম্পর্কে হত্যার সিদ্ধান্ত নিবেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে এমন পবিত্র কুরআন শরীফ দিয়েছেন যাতে রয়েছে অসংখ্য উপদেশ মুবারক এবং সবকিছুর বর্ণনা।”
১নং লাইনেمسلول ‘মাসলুলু’ رفع-উনার অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় তা নিয়ম অনুযায়ী مسلول (মাসালূলুন) দুই পেশ পড়তে হতো। কিন্তু কবিতার দ্বিতীয় লাইনেزولوا উনার সাথে মিল রাখার জন্যمسلول ‘মাসলূলু’ এক পেশ পড়া হয়েছে। এটা কবিতার মিলের জন্য পড়া বৈধ। অথচ তা আরবী ক্বাওয়ায়িদ ও তাজউয়ীদের নিয়মের খিলাফ।
৩নং ও ৪নং লাইনের শেষে مامول ও نفصيل শব্দ দু’টি رفع উনার অবস্থায় আছে। যা ক্বাওয়ায়িদ অনুসারে দু’পেশসহ পড়া দরকার ছিল অথবা ওয়াক্ফ করে মা’মূল ও তাফছীল উচ্চারণে পড়া দরকার ছিল। কিন্তু কবিতার মিলের জন্য সাধারণ ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ করে مامول ওتفصيل মামূলু ও তাফছীলু পাঠ করা হয়েছে ছন্দের মাধুর্যতার জন্য। এটাই ছহীহ্। যদিও নিয়মের ব্যতিক্রম।
অনুরূপ আমভাবে ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী سلام ‘সালামুন’ পাঠ করার নিয়ম। কিন্তু ছন্দ ও পঠনের মাধুর্যতার জন্য سلام عليك সালামু আলাইকা পড়া হয়। যা খিলাফে ক্বিয়াস উনার নিয়ম মুতাবিক শুদ্ধ।
৬. হযরত ওয়ারাক্বা ইবনে নাওফাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসামূলক কবিতা যা “সীরাতুন্ নববিয়্যাহ্ লি ইবনে কাছীর” থেকে সংকলন করা হয়েছে,
(۱) واخبار صدق خبرت عن محمد صلى الله عليهوسلم + يخبرها عنه اذا غاب ناصح
(۲) بان ابن عبد الله احمد مرسل+ الى كل من ضمتاليه الاباطح.
(۳) فان يك حقا يا خديجة عليها السلام فاعلمى+حديثك ايانا فاحمد مرسل.
(۴) وجبرائيل ياتيه وميكال معهما + من الله وحىيثرح الصدر منزل.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে অনেক সত্য সংবাদ দেয়া হয়েছে। উনার সম্পর্কে সে সব সংবাদ উনার অনুপস্থিতিতে উপদেশকারীগণ দেন। (অর্থাৎ পূর্ব নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহ, উনার সম্মানিত পিতা ও সম্মানিত মাতা আলাইহিমুস্ সালাম এবং হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে যে সংবাদ আমরা জানতে পেয়েছি।)
সে সংবাদের ফল এই যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার পুত্র সাইয়্যিদুনা আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূলরূপে প্রেরিত হয়েছেন,প্রত্যেক ওই ব্যক্তির নিকট যাদেরকে কঙ্করময় ভূমি একত্রিত করেছে।
হে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম! আমাদের নিকট আপনার সংবাদ যদি সত্যই হয়। তবে জেনে রাখুন, সাইয়্যিদুনা আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন শ্রেষ্ঠ রসূল।
হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মিকাইল আলাইহিস্ সালাম উনারা উভয়েই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক নিয়ে উনার নিকট আসেন; যা অন্তরকে (বক্ষকে) প্রশস্ত করে।”
কবিতার ১ম, ৩য় ও ৪র্থ লাইনে ناصح শব্দটিاسم فاعل আর منزل مرسل শব্দ দুটিاسم مفعول প্রত্যেকটিই رفع-র অবস্থায় আছে। সে হিসেবে এগুলো নাছিহুন, মুরসালুন ও মুনায্যালুন দু’পেশসহ অথবা ওয়াক্ফ করে নাছিহ্, মুরসাল,ও মুনায্যাল হিসেবে পাঠ করা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত ছিল। কিন্তু এখানে ناصح নাছিহু مرسل ‘মুরসালু’ ও منزل ‘মুনায্যালু’ তথা তানউইনের এক পেশকে তাখফীফ করে পড়া হয়েছে ছন্দের মিল ও মাধুর্যতার জন্যই। এটি ছন্দের বিধানে জায়িয।
৭. জাহিলী যুগের কবি এবং সাবউল্ মুয়াল্লাকার শীর্ষ রচয়িতা কবি ইমরাউল কায়েসের কবিতা যা ‘দিওয়ানে ইমরাউল কায়িস’-এ বর্ণিত আছে,
فقلت له لما تمطى بصلبه + واردف اعجازا وناءبكلكل
الا ايها الليل الطويل الا انجلى + بصبح وما الا صباحمنك بامثل
وقد اعتدى والطير فى وكناتها + منجرد قيد الاوابدهيكل.
مكر مفر مقبل مدبر معا + كجلمود صخر حطه السيلمن عل.
فعن لنا سرب كان نعاجه + عذارى دوار فى ملاءمذيل.
فعادى عداء بين ثور ونعجة + دراكا ولم ينضح بماءفيغسل.
অর্থ:- “যখন তার পিঠ মোড়া-মুড়ি দিলো এবং পশ্চাদ্ভাগ পিছনের দিকে নিয়ে গেল আর বক্ষকে টেনে দূরে নিয়ে গেল। অর্থাৎ রাত্রি অনেক দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন আমি তাকে বললাম, (বক্তব্য সামনের পংক্তিতে) হে দীর্ঘ রাত্রি, ভোর হয়ে আলোকিত হয়ে যাও। (একটু পরে হুঁশ আসলে কবি বললো) আর ভোরও আমার জন্য তোমার চেয়ে উত্তম নয়। আমি কখনো কখনো (ভোর বেলার ভ্রমণের সময়) কম পশম বিশিষ্ট দ্রুতগামী এবং বন্য পশুকে আটককারী, মোটাতাজা একটি ঘোড়া নিয়ে ভোরে এমন সময় বের হই যখন পাখিগুলি তাদের বাসায় অবস্থান রত থাকে। (ঘোড়াটি এত দ্রুতগ্রামী যে) একই সময়ে সে সামনে অগ্রসর হয় আর পিছে ফিরে (এসে বন্য পশুদের আক্রমণ করে)। তার দ্রুততা সেই কঠিন পাথরের দ্রুততার মতো যাকে পাহাড়ি ঢল উঁচু স্থান থেকে নিক্ষেপ করেছে। (অর্থাৎ উঁচু স্থান থেকে নিক্ষিপ্ত পাথর যেভাবে দ্রুত গতিতে নেমে আসে তদ্রƒপ ঘোড়াটিও দ্রুত গতিতে চলে।) অতঃপর আমাদের সামনে পড়ল (বন্য পশুর) একটি পাল। সে পালের বন্যগাভীগুলো যেন আঁচল বিশিষ্ট চাদর পরিহিতা ‘দুয়ার’ নামীয় প্রতিমার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণকারিনী যুবতীর দল। অতঃপর ঘোড়াটি এক ঝাপটে একত্রে একটি ষাঁড় ও একটি বনগাভী শিকার করে ফেললো। অথচ সে একটু ঘর্মাক্তও হয়নি, যার ফলে তার শরীরও ভিজেনি।”
১ম ও ২য় পংক্তিদ্বয়ের শেষে بكلكل ও بامثل শব্দদ্বয়مجرور উনার হালতে রয়েছে। সে হিসেবেكلكل (কালকালিন) নতুবা ওয়াক্ফসহ‘কালকাল’ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে ছন্দের মিলের জন্য এক যেরকে তাখফীফ করেكلكل (কালকালি) পড়া হয়েছে। যা ক্বছীদা হিসেবে শুদ্ধ। অনুরূপ নিয়ম হিসেবে امثل ‘আমছালা’ পড়ার কথা ছিল। কেননা, امثل শব্দটি اسم تفضيل ফেলের ওজন হিসেবেمجرور উনার হালতে যবর দিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু ক্বাছীদার মিলের জন্য بامثل বিআমছালি পড়া হয়েছে। অথচ তা ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ।
চতুর্থ পংক্তির শেষ শব্দ من على ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী অশুদ্ধ। কারণعلى ‘আলা’ হরফে জরمبنى ‘মবনী’ তথা সমস্ত হরফসমূহ মবনী। যা কখনো পরিবর্তন হয় না এবং আমিলের পরিবর্তনের জন্য ইরাব ও শব্দ পরিবর্তন হয় না। কিন্তু এইعلى ‘আলা’ (উপরে) কে ক্বাছীদার মিলের খাতিরেياء ইয়া বাদ দিয়েعل আলি পড়া হয়েছে। অথচ এভাবে পড়া সাধারণ নিয়েমের খিলাফ। কিন্তু কবি সাহিত্যিকগণ মাধুর্যতা,ক্বাছীদার মিল ইত্যাদির জন্য এরূপ খিলাফে ক্বিয়াস অসংখ্য জায়গায় ব্যবহার করেছেন। মূলত: এটিও শুদ্ধ।
৬ষ্ঠ পংক্তির শেষ পদ يغسل (ইউগসালি) আসলে ছিলلم يغسل (লাম ইউগসাল)। কবিতার মিলের জনلم কে বাদ দিয়ে আবার পূর্বের লাইনের সাথে মিল রেখে যের দেয়া হয়েছে। সবগুলিই ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ। অথচ কবি সাহিত্যিকগণ এভাবে প্রণয়ন করেছেন।
বালাগাত-ফাছাহাতের দৃষ্টিতে আলোচনা :
৮. কোনো কোনো সময় শব্দ ইলমে ছরফের বিধানের বিপরীত ব্যবহার হয়। যাকে খিলাফে ক্বিয়াস বা নিয়মের ব্যতিক্রম বলা হয়। যে রকম ব্যবহার আরবী সাহিত্যে ও কাব্যে বৈধ।
যেমন, হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘দুরূসুল বালাগাহ’ নামক কিতাবে লিখেছেন,
ومخالقة القياس كون الكلمة غير جارية على القانونالصفى كجمع بوق على بوقات فى قول المتنبى.
فان يك بعض الناس سيفا لدولة + ففى الناسبوقات لها وطبول
اذ القياس فى جمعه للقلة ابواق وكموددة فى قوله.
ان بنى اللئام زهدة + مالى فى صدورهم من موددة.والقياس مودة بالادغام.
অর্থ: ‘ক্বিয়াসের বিরোধী’ বলা হয়, শব্দ ইলমে ছরফের বিধান অনুযায়ী ব্যবহার না হওয়া। বরং এর বিপরীত ব্যবহার হওয়া। যেমন, প্রসিদ্ধ কবি মুতানাব্বী-এর কবিতায়بوقن ‘বূকুন’ শব্দের বহুবচনেبوقات ‘বূক্বাতুন’ ব্যবহার করা ইলমে ছরফের ক্বায়িদাহ’র বিরোধী।
৯. ছন্দের মিলের জন্য কখনোمسند اليه ‘মুসনাদ ইলাইহি’ তথা مبتدى ‘মুবতাদা’ ও فاعل ‘ফায়িল’কে; কখনোمسند ‘মুসনাদ’ তথাخبر ‘খবর’ ও فعل ‘ফি’ল’কে; আবার কখনো এদের সাথে যুক্তপদকেও উহ্য বা গুপ্ত করা জায়িয।
এ সম্পর্কে প্রখ্যাত আলিম, বালাগাতবিদ হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘দুরূসূল বালাগাহ’ নামক বিশ্ববিখ্যাত কিতাবে লিখেছেন,
ومن دواعى الحذف ...
والمحافظة على وزن او سجع فالاول نحو.
نحن بما عندنا وانت بما + عندك راض والراى مختلف
والثانى نحو: ما ودعك ربك وما قلى
অর্থ: “মুসনাদ ইলাইহকে অথবা মুসনাদকে অথবা তার সাথে যুক্তপদকে যে যে কারণে উহ্য করা হয়, ..... (১০টি কারণের মধ্যে) ৭মটি হলো- কখনো কবিতার ছন্দ এবং বাক্যের সমতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। অতএব, প্রথমটির উদাহরণ:
نحن بما عندنا وانت بما + عندك راض والراى مختلف
অর্থাৎ- “আমরা আমাদের কাছে যা আছে এবং তুমি তোমার কাছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট। আর মতামত তো বিভিন্ন হয়ে থাকে।”
এবং দ্বিতীয়টির উদাহরণ : মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী-
ما ودعك ربك وما قلى
অর্থাৎ- “আপনার মহান রব আপনাকে পরিত্যাগও করেননি এবং তিনি আপনার প্রতি অসন্তুষ্টও নন।”
نحن ‘নাহ্নু’ মুবতাদার খবরراضون ‘রাদূনা’ উহ্য করে দেয়া হয়েছে। যদি খবর উল্লেখ করা হতো তাহলে এ কবিতাটির ছন্দে মিল থাকতো না।
আর বাক্যের সমতা রক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে যে উদ্ধতি দেয়া হয়েছে তাতেقلى ‘ক্বলা’ فعل ‘ফে’ল’ বা ক্রিয়ারمفعول ‘মাফউল’ বা কর্মك ‘কাফ’ অক্ষরটিকে উহ্য করে দেয়া হয়েছে। যদি তাকে উল্লেখ করা হতো তাহলে বাক্যের সমতা বজায় থাকতো না।
কবিতার মিলের জন্য যদি মুবতাদার খবরকে এবংفعل ‘ফে’ল’ বা ক্রিয়ারمفعول ‘মাফউল’ বা কর্মকে উহ্য করা জায়িয হয় তাহলে سلام عليك (সালামুন আলাইকা) উনারسلام (সালামুন) মুবতাদার দুই পেশের এক পেশ হযফ করে سلام (সালামু) পাঠ করা জায়িয হবে না কেন? মূলত,يا نبى سلام عليك পাঠ করা জায়িয ও শুদ্ধ।
ফিক্বাহ ও ফতওয়ার দৃষ্টিতে আলোচনা:
১০.ايجاز ‘ইজায বা সংক্ষিপ্তকরণ : বাক্য থেকে এক শব্দ, এক বাক্য ও একাধিক শব্দ বা বাক্য উহ্য রাখাও বৈধ। যেমন- হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার‘দুরূসুল বালাগাহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
واما ان يون بحذف كلمة اوجملة او اكثر مع قرينةتعين المحذوف ويسمى ايجاز حذف فحذف الكلمة.كحذف لا فى قول امرئ القيس.
فقلت يمين الله ابرح قاعدا + ولو قطعوا راسى لديكواوصالى
অর্থ:- “সংক্ষিপ্তকরণ হবে এক শব্দ বা এক বাক্য বা একাধিক শব্দ বা বাক্য উহ্য করার মাধ্যমে;এমন এক ইঙ্গিত বাহকের সাথে, যা উহ্য বিষয়কে নির্দিষ্ট করে দিবে। একেايجاز حذف ‘ঈজাযে হযফ’ বলা হয়। শব্দ উহ্য করার উদাহরণ: যথা- কবি ইমরাউল কায়িসের কবিতাতে لا ‘লা’ শব্দকে উহ্য করে দেয়া। ইমরাউল কায়িসের কবিতা হচ্ছে,
قلت يمين الله ابرح قاعدا + ولو قطعوا راسى لديكواوصالى
অর্থাৎ- “অতঃপর আমি বললাম যে, আল্লাহ পাক উনার নামে শপথ, আমি রীতিমত বসে থাকব, যদিও তারা আমার শির (মাথা) এবং আমার দেহের জোড়াসমূহ টুকরা টুকরা করে ফেলে।”
‘ইজাযে হযফ’ শব্দ উহ্য হবার উদাহরণস্বরূপ যে কবিতার উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে لا ‘লা’শব্দকে উহ্য করে দেয়া হয়েছে। কেননা প্রকৃত বাক্য ছিল لا ابرح ‘লা আবরাহু।’ এ শব্দটি بابسمع يسمع থেকে نفى فعل مضارع معروف -এরواحد متكلم -উনার ছীগাহ। যার অর্থ আমি সরে পড়বো না, আমি রীতিমত বসে থাকবো, আমি পরিত্যাগ করবো না ইত্যাদি। لا ‘লা’ যোগেابرح ‘এ অর্থেই ব্যবহার হয়; যা কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু কবিতায় বাহ্যিকভাবে শুধু ابرح ‘আবরাহু’ উল্লেখ আছে। যার অর্থ: আমি সরে পড়বো, আমি পরিত্যাগ করবো ইত্যাদি। এ অর্থ গ্রহণ করা হয়নি। বরং গ্রহণ করা হয়েছে উহ্যلا সহ لا ابرح ‘লা আবরাহু’ অর্থে।
সাধারণতঃ لا ابرح এর لا ‘লা’-কে উহ্য করে ابرح পড়লে ‘না’ -এর জায়গায় হ্যাঁ অর্থ হয়। যা অর্থের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তারপরও ابرح উল্লেখ করে لا ابرح ‘লা আবরাহু’-উনার অর্থ নেয়া হয়েছে। এটা যদি কবিতার খাতিরে জায়িয হতে পারে, তাহলে سلام عليك (সালামুন আলাইকা)-উনার এক পেশ তাখফীফ করেسلام (সালামু) পড়লে জায়িয হবে না কেন?অথচ سلام (সালামুন)- উনাকে سلام (সালামু) পড়লে অর্থের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি আসে না। কিন্তু لا ابرح কে ابرح পড়লে সাধারণতঃ অর্থে আকাশ-পাতাল ব্যবধান হয়। যদিও উহ্য لا (লা) উনার অর্থ অনুবাদে যুক্ত করা হয়েছে। তাই প্রমাণিত হলো, يا نبى سلام عليك (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) পাঠ করা ক্বাছীদার দৃষ্টিতে ও বালাগাতের পরিভাষায় ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ রয়েছে।
তাছাড়াওيا نبى سلام عليك (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) এখানেنبى (নাবিয়্যূ) মুনাদাকে পেশ হিসেবেও পড়া যায়। ইয়া উনার উপর পেশ পড়া কঠিন হেতু ইয়া উনার সমতা রক্ষার্থে সহজ উচ্চারণের জন্য ইয়া- উনাক সাকিন করে পূর্ব বর্ণে যেরের অনুকরণে পড়া হয়। আর এই মুনাদাকে অনুসরণ করে سلام (সালামু)-উনাকে এক পেশ পড়াই যুক্তিসঙ্গত। এটা হযরত আল্লামা খলীল নাহবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি। আর দ্বিতীয় سلام (সালামু) শব্দটিمضاف যা মুবতাদা বা খবর হিসেবে পেশ গ্রহণ করেছে। আরمضاف কখনোই তানউয়ীন গ্রহণ করে না। তাই ক্বাওয়ায়িদ বা বিধান হিসেবেইسلام শব্দে এক পেশ পড়া হয়। মূল বাক্যটি হবে سلام قبلى عليك يا نبى অর্থাৎ হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি সালাম। এরূপ নিয়ম বহুল পঠিত রয়েছে যে, কখনো কখনো مضافاليه-কেحذف (হযফ) বা বিলুপ্ত করে পড়া হয়। যেমন তাফসীরে কাশ্শাফ উনার লিখকের অন্যতম একটি লকব¡ হচ্ছে جار الله (জারুল্লাহ) অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিবেশী। এখানে جار শব্দটি مضاف (মুযাফ);যার مضاف اليه (মুযাফ ইলাইহি) উহ্য রয়েছে। যেমন- جار بيت الله (জারু বাইতিল্লাহ) অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার ঘরের প্রতিবেশী। যেহেতু তিনি সুদীর্ঘ চল্লিশ বৎসর ধরে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পার্শ্বে থেকে ইবাদত-বন্দেগী করেছেন ও পবিত্র তাফসীর শরীফ লিখেছেন। উক্ত ইযাফতفى، من، الى দ্বারা করা হয়। কেননা ইহা ইযাফতে মানবী। (হিদায়াতুন্ নাহু,কাফিয়া)
এখানে سلام শব্দটিকে তারকীবে মুবতাদা হিসেবে ধরতে হবে। কেননা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে নাকিরাহ কখনোই মুবতাদা হতে পারে না। তবে কোনো قرينة (কারীনাহ) তথা ইঙ্গিত অথবা অন্য কোনো শব্দ দ্বারা তাখছীছ হলে তখন নাকিরাহটিও মা’রিফায় পরিণত হয়।
سلام শব্দটিقبلى শব্দের প্রতি ইযাফত হওয়ায় তাখছীছ হয়েছে। বিধায় উহা মুবতাদা। অপরপক্ষে سلام শব্দটি ইযাফতে মানবী; ইহাও মা’রিফাহ উনার ফায়দা দিয়ে থাকে। সুতরাং উভয় দিক থেকেই বিধান সঙ্গত। (হিদায়াতুন্ নাহু, কাফিয়া)
তানউয়ীনকে নিষেধকারী ৪টি। যথা- (১) ال ولم (আলিফ ও লাম) (২) مضاف (মুদ্বাফ) (৩) غيرمنصوب (গইরে মানছূব) (৪) فعل (ফে’ল)।
ইহা ছাড়াও ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রের অন্যতম একটি বিধান হচ্ছে, تناسب (তানাসুব) অর্থাৎ ছন্দের ও পূর্বপর সম্পর্ক হওয়া। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, سلسلا واغللا (পবিত্র সূরা দাহর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪) উদাহরণেسلسلا (সালাসিলা) শব্দটি غير مصرف (গইরে মুনছারিফ); যা কখনোই তানউয়ীন গ্রহণ করে না। কিন্তু تناسب (তানাসুব) তথা পরের শব্দটিاغللا (আগলালান) উনার প্রতি সম্পর্ক রাখার কারণে তার শেষে তানউয়ীন থাকায়سلسلا (সালাসিলান) পদটি তানউয়ীন হয়েছে। মূলত: এখানে পদের শেষে আলিফটি তানউয়ীন উনাকে দালালত করেছে। যদিও বাহ্যিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। এরূপ নিয়ম কাফিয়া কিতাবে রয়েছে।
তাছাড়াও তাফসীর শাস্ত্রের অন্যতম তাফসীর“তাফসীরে কাশ্শাফ” কিতাব উনার মধ্যে الحمدلله শব্দকে تناسب (তানাসুব) উনার ভিত্তিতে কয়েকটি পঠনের নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- (১) الحمد لله (২) الحمد لله (৩) الحمد للهسلام عليك (সালামু আলাইকা) বিভিন্ন ক্বিরায়াতে পড়া যায়। যেমন, (১) سلام عليك (সালামু আলাইকা) পড়া যাবে السلام(আস্সালামু) উনারال (আলিম-লাম) উনাকে হযফ করে এবং আরববাসীগণের থেকে শ্রুত পঠনরীতি হিসেবে তানউয়ীন ছাড়া শুধু এক পেশ দিয়ে। (২) السلام عليك (আস্সালামু আলাইকা) ও سلام عليك (সালামুন আলাইকা) পড়া যাবে مبتدى (মুবতাদা) হিসেবে। (৩)سلامعليك (সালাম্ আলাইকা) মীম উনাকে জযম তথা সাকীন দিয়ে পড়া যাবে, সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম নিয়মের ভিত্তিতে। যেমন, এ সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ফতওয়ার কিতাব“দুররুল মুখতার” কিতাব উনার কিতাবুছ্‘ছলাত’ অধ্যায়ের
باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها ২য় জিঃ ৩৭৫,৩৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قوله: سلام عليكم بجزم الميم
অর্থ: “তানবীরুল্ আবছার গ্রন্থকারের উক্তি سلام عليك (সালাম্ আলাইকুম) মীম হরফে জযম বা সাকীন দিয়ে পড়া যায়।”
উক্ত ইবারতের ব্যাখ্যায় “রদ্দুল্ মুহতার” কিতাব উনার একই অধ্যায় ও বাবে
مطلب المواضع التى لا يجب فيها رد السلام নামক আলোচনায় উল্লেখ রয়েছে,
قوله: (بجزم الميم) كانه لمخالفته السنة، فعلى هذا لورفع الميم بلا تنوين ولا تعريف كان كجزم الميملمخالفة السنة.
قلت: وقد سمع من العرب سلام عليكم بالا تنوين،وخرجه فى مغنى اللبيب على حذف ال او تقديرمضاف اى سلام الله.
অর্থ: “গ্রন্থকারের উক্তিسلام عليكم (সালাম্ আলাইকুম) মীম বর্ণে জযম বা সাকীন দিয়ে পড়া যায়। কেননা এভাবে পড়া সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম একটি নিয়ম। যেমন তানউয়ীন ছাড়া মীমের উপর শুধু এক পেশ দিয়ে سلام (সালামু) পড়া জায়িয, তেমনি সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম নিয়ম হিসেবে মীমের উপর জযম দিয়েسلام (সালাম) পড়াও জায়িয। (রদ্দুল মুহতার গ্রন্থকার হযরত আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি বলি-سلام عليكم (সালামু আলাইকুম) উনার سلام (সালামু) শব্দের মীম হরফে তানউইন ছাড়া পড়তে আরববাসীগণের কাছে শুনা গিয়েছে।
“মুগনিউল লবীব” নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে,ال (আলিফ-লাম) উনাকে হযফ করে অথবা উহ্য مضاف اليه (মুযাফ ইলাই) উনারمضاف (মুযাফ) হিসেবেسلام (সালামু) উনাকে শুধু এক পেশ দিয়ে পড়া হয়েছে। উহ্যمضاف اليه (মুযাফ ইলাই) যেমন,سلام الله (সালামুল্লাহ) বাক্যের মধ্যে الله (আল্লাহ) লফয।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, নাহু, ছরফ,ফিক্বাহ, ফতওয়ায়, বিশ্ববিখ্যাত কবিগণ উনাদের কবিতা ও বালাগাতের দৃষ্টিতে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, খিলাফে ক্বিয়াস হিসেবে ছন্দের মিলনের ও মাধুর্যতার জন্যسلام (সালামুন) শব্দের এক পেশকে হযফ বা উহ্য অথবা তাখফীফ বা গোপন করে سلام (সালামু) পড়া জায়িয। এতে অর্থের, ভাবের এবং বাক্যের কোনো ত্রুটি,অসম্পূর্ণতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পায় না।
কারণ, হযরত ইমাম জামালুদ্দীন ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন : بلا تنوين অর্থাৎ আরববাসীগণের থেকে سلام عليكم (সালামুন আলাইকুম) বাক্যটি তানবীন ব্যতীতسلام عليكم (সালামু আলাইকুম) বলতে শুনা যায়। (আল মুগনীউল লবীব ৮৪৫ পৃষ্ঠা)
তাই যারা বলে, يا نبى سلام عليك(ইয়া নবী সালামু আলাইকা) পড়া শুদ্ধ নয়’- তাদের এ বক্তব্য অজ্ঞতাপ্রসূত, মূর্খতাসূচক ও প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হলো