আমীরে মু’আবিয়া (রা:) প্রসঙ্গ ও ইমামে আলী (ক:)-এর প্রতি লা’নত প্রথা
[Muawiyah and Abusing Imam Ali by Dr Haddad at sunnah.org]
মূল: ড: জি, এফ, হাদ্দাদ
[al-islam@swbell.net কর্তৃক ইমেইলে প্রেরিত আপত্তির জবাব]
আপত্তি: মু’আবিয়া যে ইমামে আলী (ক:)-এর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, তা এক সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য।
জবাব: এটাও এক সর্বজনস্বীকৃত ঐতিহাসিক সত্য যে হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) আমীরে মু’আবিয়া (রা:)-এর সাথে শান্তি স্থাপন করেন এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যের শপথ (বায়া’ত)-ও গ্রহণ করেন, যা আল-বুখারী (রহ:) নিজ ‘সহীহ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
সঠিক পথপ্রাপ্ত খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয বলেন, “আল্লাহতা’লা যাঁদের (পবিত্র) রক্ত দ্বারা আমাদের হাত রঞ্জিত হতে দেননি, আমরা তা আমাদের জিহ্বা দ্বারা ভূলুণ্ঠিত হতে দেবো না।”
মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান: “আমার সাহাবাদের ব্যাপারে নেতিবাচক (মন্দ) কোনো কিছু নিয়ে আমার কাছে তোমাদের আসা উচিত নয়, কেননা আমি তোমাদের সামনে পরিষ্কার (মানে নির্ভার) অন্তর ছাড়া যেতে চাই না।” এই হাদীস সর্ব-ইমাম আবূ দাউদ (রহ:), আল-তিরমিযী (রহ:) ও আহমদ (রহ:) বর্ণনা করেন। যেসব লোক এই ফিতনা নিয়ে মিন মিন করে, তারা যে হাদীসগুলো শুনতে অপছন্দ করে থাকে, এই হাদীসটি সেগুলোর একটি। আমি (ড: হাদ্দাদ) আমার শায়খের মুখে শুনেছি এ কথা, “সিংহরা যখন লড়ে, রাস্তার কুকুরেরা তখন চুপ হয়ে যায়।”
আপত্তি: সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মু’আবিয়া ইবনে আবী সুফিয়ান তাঁকে (সা’আদকে) নির্দেশ দেন এবং বলেন, “আবূ তোরাব (হযরত আলীর ডাকনাম)-কে লা’নত/অভিসম্পাত দান হতে কী জিনিস তোমাকে বিরত রাখছে?” সা’আদ উত্তর দেন, “আপনার কি স্মরণে নেই যে রাসূলুল্লাহ (দ:) হযরত আলী (ক:)-এর তিনটি গুণের কথা উল্লেখ করেছিলেন? এমতাবস্থায় আমি কখনো হযরত আলী (ক:)-এর প্রতি অভিসম্পাত দেবো না!”
জবাব: আপনার পেশকৃত ‘সুন্নী রেফারেন্স’ বা উদ্ধৃতিগুলো সবসময়-ই অর্ধ-সত্য, কেননা আপনি কখনো সেগুলো সম্পর্কে সুন্নী উলামাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বা তাঁদের উপলব্ধিও উল্লেখ করেন না।
ইমাম নববী (রহ:) বলেন: “উলামাবৃন্দের দৃষ্টিতে সাহাবা-মণ্ডলী (রা:)-এর মধ্যকার বিভেদ সম্পর্কে দৃশ্যতঃ যেসব রওয়ায়াত (বর্ণনা) উল্লেখ করেছে বলে মনে হয়, সেগুলোকে রূপক বা আলঙ্কারিক অর্থে ব্যাখ্যা করতে হবে। আলোচ্য রওয়ায়াতের কোথাও একথা উল্লেখিত হয়নি যে হযরত আমীরে মু’আবিয়া (রা:) প্রকৃতই হযরত সা’আদ (রা:)-কে হযরত আলী (ক:)-এর প্রতি অভিসম্পাত দিতে আদেশ করেছিলেন। বরঞ্চ তিনি হযরত সা’আদ (রা:)-কে স্রেফ জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন্ কারণটি তাঁকে ওই অভিসম্পাত দান হতে বিরত রেখেছিলো? তা কি খোদাভীরুতা? তা যদি হয়ে থাকে, তাহলে উত্তম! নাকি ভয় কাজ করছিলো? ইত্যাকার সব প্রশ্ন। এ-ও হতে পারে হযরত সা’আদ (রা:)-কে এমন কোনো দলের মাঝে দেখা গিয়েছিলো যারা হযরত আলী (ক:)-কে লা’নত দিয়েছিলো, আর তিনি ওই দলটিকে তিরস্কার করতে না পারলেও নিজে তা থেকে বিরত ছিলেন। অতঃপর তাদেরকে তিরস্কার করা হলে পরে আমীরে মু’আবিয়া (রা:) হযরত সা’আদ (রা:)-কে ওই প্রশ্নটি করেন। আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে এই: হযরত আলী (ক:)-কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও এজতেহাদে ভুল প্রমাণিত করার বেলায় এবং মানুষের সামনে আমাদের অবস্থান ও এজতেহাদের নির্ভুলতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে কী বিষয়টি তোমাকে বাধাগ্রস্ত করেছে?”
আপত্তি: ইমামে আলী (ক:)-কে লা’নত দেয়ার সুন্নাহ (রীতি/প্রথা) সম্পর্কে সহীহ মুসলিমের আরো উদ্ধৃতি নিচে দেয়া হলো, যাতে প্রমাণ করা যায় যে সর্বসমক্ষে হযরত আলী (ক:)-এর প্রতি অভিসম্পাত প্রদানের জন্যে মানুষদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হতো। নতুবা তাদেরকে শাস্তির খেসারত পোহাতে হতো। আবূ হাযেম হতে বর্ণিত আছে যে মদীনার প্রাদেশিক শাসনকর্তা যিনি মারওয়ানের আত্মীয়দের মধ্যে একজন ছিলেন, তিনি হযরত সাহল ইবনে সা’আদ (রা:)-কে ডেকে হযরত আলী (ক:)-এর প্রতি লা’নত দিতে বলেন। কিন্তু সাহল (রা:) তা করতে অস্বীকার করেন। এমতাবস্থায় প্রাদেশিক শাসনকর্তা বলেন, “আপনি হযরত আলী (ক:)-কে (নাম ধরে) লা’নত দিতে না চাইলে শুধু বলুন - আল্লাহ আবূ তোরাব (রা:)-কে লা’নত দিন।” হযরত সাহল (রা:) উত্তরে বলেন, “হযরত আলী (ক:) নিজের জন্যে আবূ তোরাব নামটির চেয়ে অন্য কোনো নাম বেশি পছন্দ করেননি। আর কেউ ওই নামে (আবূ তোরাব) ডাকলে তিনি খুব খুশি হয়ে যেতেন। [সুন্নী রেফারেন্স: সহীহ মুসলিম, সাহাবাবৃন্দের সৎ-গুণাবলী অধ্যায়]
জবাব: এই আদেশ যে লোক দিয়েছিলো, সে মহানবী (দ:)-এর কোনো সাহাবী ছিলো না, আর এটা আপনার কথিত ‘হযরত আলী (ক:)-কে লা’নত দেয়ার সুন্নাহ’-ও ছিলো না, বরং ওই লোক ছিলো ফিতনাবাজ এমন একটি দলের সদস্য, যাদের সম্পর্কে হযরত আবূ হোরায়রা (রা:) বলেছিলেন, “আল্লাহর শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, মানুষের সামনে এমন এক সময় শিগগির আসবে, যখন ভেড়ার পালের মালিকের কাছে তার ভেড়ার পাল মারওয়ানের জ্ঞাতিগোষ্ঠী হতে প্রিয় হবে।” এই রওয়ায়াত ইমাম মালেক (রহ:) নিজ ‘মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। হযরত আবূ হুরায়রাহ (রা:) হতে একই ধরনের আরো বেশ কিছু বক্তব্য আছে, যা আমি তাঁর সম্পর্কে আগামীতে আমার ধারাবাহিক লেখায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবো, ইনশা’আল্লাহ।
-- জি, এফ, হাদ্দাদ ক্বাসিউন @cyberia.net.lb
লিঙ্ক:
 
Top