ঈদে মিলাদ-উন-নবী বা মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) 

কৃতঃ মাসুম বিল্লাহ সানি


শব্দ পরিচিতি

ঈদে মিলাদ-উন-নবী বা মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) এর অর্থ :

- "ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা।
- "মিলাদ অর্থ জন্মবৃত্তান্ত"
- "আন-নবী মানে আমাদের নবী (ﷺ)"

"মীলাদের" তিনটি সাদৃশ্যপূর্ণ আরবি শব্দ রয়েছে:

১) ميلاد মীলাদ, ২) مولد মাওলিদ, ৩) مولود মাওলূদ |
আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ মীলাদুন্নবী (ﷺ) বলতে রাসূল পাক (ﷺ) উনার বিলাদত শরীফকেই বুঝায় আর পারিভাষিক বা ব্যাবহারিক অর্থে,
মিলাদুন্নবী (ﷺ) বলতে, হুজুর পাক (ﷺ) উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা-সিফাত আলোচনা করা, উনার প্রতি দুরুদ-সালাত-সালাম পাঠ করা, এবং উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারকের সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয় !

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা নিয়ে আহলুল বিদাহ এর মধ্য মতভেদ রয়েছে। তবে আহলুস-সুন্নাহর অনুসারী তথা ৮০% মুসলিম উম্মাহর এই ব্যাপারে কোন ইখতেলাফ নেই।

বিষয়ভিত্তিক আয়াত

এক নজরে, মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কিত বিষয়ভিত্তিক কিছু আয়াত :

  • আল-ইমরান ৮১, ১৬৪
  • আল-আম্বিয়া ১০৭
  • সূরা আহযাব ৫৬ (দুরুদ পড়ার হুকুম)
  • আল-মায়েদা ১৫, ২০ (মূসা আ. এর মিলাদ)
  • সূরা তওবা ৩৩, ১২৮
  • সূরা সাফ ৬,৮
  • জুমুয়া ২
  • বালাদ ১-২
  • আল-ইব্রাহীম ৫ (মূসা আ. এর মিলাদ), ২৮ (বুখারী শরীফে শানে নুযুল), ৩৪
  • সূরা নাহল ৮৩
  • আল-ইনশিরাহ ১-৪
  • ক্বাফ ২
  • আনফাল ৩৩
  • আদ-দ্বোহা ১১
  • আল-আরাফ ১৫৭
  • সূরা হিজর ১৭২
  • সূরা ফাতহ ৮,৯, ২৮
  • আন-নিসা ৫৯, ১৬৪, ১৭৫


আল-কুরআন ও তফসীরে মিলাদুন্নবী (ﷺ) [Read]

সর্বজন সমাদৃত বিখ্যাত (→) তফসীরগ্রন্থ থেকে আয়াতের ব্যাখ্যা সংযুক্ত করা হল।

আয়াত ১

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اللهم ربنا انزل علينا ماءدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا
অর্থ : আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন | খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ যেদিন খাঞ্চা নাজিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে !"
(সূরা মায়িদা ১১৪)

ব্যখ্যা :

উক্ত আয়াত শরীফে কি বুঝা গেল ?

হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে একটি খাঞ্চা ভর্তি খাবার চাইলেন, এবং এই নিয়মত পূর্ন খাবার নাযিল হওয়ার দিনটা উনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ হবে বললেন | এই খাদ্য সহ খাঞ্চা নাযিল হওয়ার দিন যদি ঈদের দিন হয়, তাহলে যার উসীলায় জগৎ সৃষ্টি, যিনি সমগ্র জগৎ এর নিয়মাত, সকল নিয়মতের মূল , নি'মাতুল কুবরা হুজুর পাক (ﷺ) উনার আগমনের দিন কি আনন্দ বা ঈদ হতে পারে না? খুশি করা যাবে না ?

অবশ্যই হুজুর পাক (ﷺ) উনার আগমনের দিন ইমানদারদের জন্য খুশির দিন আর শয়তানের কান্নার দিন।[1]

আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করার হুকুম :

আয়াত ২ :
আল্লাহ পাক বলেন, اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ : তোমাদের যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন করো !" (সূরা আল ইমরান ১০৩)

আয়াত ৩ :
وأما بنعمة ربك فحدت
অর্থ : আপনার রবের নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা আদ-দ্বোহা ১১)

দুনিয়ার আল্লাহর নিয়ামতের শেষ নেই কিন্তু রাসূল (ﷺ) শ্রেষ্ঠ নিয়ামত।

হাদিসে আছে, হযরত মুহম্মদ (ﷺ) হলেন, আল্লাহ পাকের নিয়ামত!" (বুখারী শরীফ ১/২২১)

আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়।

সকল ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
অর্থাৎ, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় ! (বাদায়েউস সানায়ে)

দেখুন, আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- اقيموا الصلوة
অর্থ : তোমরা নামাজ আদায় করো।"
কুরআন শরীফের এই নির্দেশ সূচক বাক্য দ্বারা নামাজ ফরজ হয়েছে |

তদ্রুপ সূরা ইউনূছের ৫৮ আয়াতের فليفرحوا বা খুশি প্রকাশ করো এটা আদেশ সূচক বাক্য।

তাহলে এই দিকে খেয়াল করলে, এ আদেশের দ্বারা রাসুলের আগমনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনস্বরূপ আনন্দিত হওয়া উত্তম কাজ এটা বিশ্বাস করা অত্যাবশ্যক। আর পালন করা সুন্নত কিংবা নফল।

সুতরাং প্রশ্ন হল, সবচাইতে বড় নিয়ামত কি ? নির্ধিদ্বায় জবাব হবে "হুজুর পাক (ﷺ) !

রসূলুল্লাহ (ﷺ) মাহাত্ম্য বর্ণনার নির্দেশ :

إنا أرسلناك شاهدا ومبشر ونذير لتؤمنوا بالله و رسوله و تعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا
৪৮:৮ - নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির (উপস্থিত) নাযির (প্রত্যক্ষ সাক্ষীস্বরূপ), সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে;

৪৮:৯ - যাতে হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্‌ ও তার রসূলের উপর ঈমান আনো এবং রসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা ফাতাহ ৮,৯)

নবীগণের মজলিশে পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবীর [ﷺ] আলোচনা (শানে নুযুল দেখতে পারেন) :

وإذ أخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكك إصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين

অর্থ: স্মরণ করুণ! যখন আল্লাহ পাক নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি আপনাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো।  অতঃপর তশরীফ আনবেন একজন রসূল [মুহাম্মদ (ﷺ)] ! তিনি আপনাদের প্রদত্ত কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন। তখন আপনারা নিশ্চই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে (পেলে) সহযোগিতা করবেন ! মহান আল্লাহ বললেন, আপনারা কি এ অঙ্গীকার স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম !" (সূরা আল ইমরান ৮১)

আয়াত সূরা ছাফ ৬ 

আল্লাহ পাক বলেন,
قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদ দানকারী। যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ (ﷺ) !" (সূরা ছফ ৬)

সূরা ছাফ ৬ : তফসীর :

উক্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)  নিজেই নিজের মীলদ শরীফ বর্ননা করেন,

"আমি তোমাদেরকে আমার পূর্বের কিছু কথা জানাবো ! তা হলো :
- আমি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়া,
- আমি হযরত ঈসা (আঃ) তার জাতিকে দেয়া সুসংবাদ এবং
- "আমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল।"

তথ্যসূত্রঃ

  • ইমাম তাবারী : তফসীরে তাবারী : খ ১ : প ৫৫৬
  • ইমাম তাবারী : তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক : খ ১ : প ৪৫৮
  • ইমাম কুরতুবী : তফসীরে কুরতুবী : খ ২ : প ১৩১
  • ইমাম ইবনে কাসীর : তফসীরে ইবনে কাসীর : খ ৪ : প ৩৬০
  • ইমাম আবু লাইস সমরকানী : তফসীরে সমরকানী : খ ৩ : প ৪২১
  • ইমাম সূয়ূতী : তফসীরে দুররে মনসূর : খ ১ : প ৩৩৪
  • ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ খ ৪ : প ১২৭ : হাদিস ১৬৭০১
  • ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : খন্ড ১ : পৃ ৮৩, প ১১০
  •  ইমাম ইবনে ইসহাক : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ২৮
  • ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ১৫৬
  • ইমাম ইবনে সা'দ : তাবাকাত আল কুবরা : খ ১ : প ১৫০
  • ইমাম ইবনে হিব্বান : সহীহ ইবনে হিব্বান : খ ৯ : প ১০৬
  • ইমাম বাগবী : মিশকাতুল মাসাবিহ : প ৫১৩
  • ইমাম হাকিম : মুস্তাদরেক আল হাকিম : খন্ড ২ : পৃ ৬০০ : হাদিস ৪১৭৫
  • ইমাম ইবনে জাওজী : আল ওয়াফা : প ৯১
  • ইমাম ইবনে হাজর হায়সামী : মাজমাউল যাওয়াইদ : (৮:২২১/৪০৯)
  • ইমাম ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : খ ১১ : প ১৭৩
  • ইমাম হালাভী : সিরাতে হালাভিয়্যাহ : খ ১ : প ৭৭


এই হাদিসটির বিভিন্ন রেওয়াতে বর্ণিত সুত্রঃ

  • ১. হযরত কা'ব আল আহবার (রাঃ)
  • ২. হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রাঃ) এর মাতা শিফা বিনতে আমর ইবনে আউফ (রাঃ)
  • ৩. হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (রাঃ)
  • ৪. হযরত মু'য়াজ বিন জাবাল (রাঃ)
  • ৫. হযরত আবু উমামা (রাঃ)
  • ৬. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ)
  • ৭. হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)
  • ৮. হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ)
  • ৯. হযরত ইকরামা (রাঃ)

হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ)




 এখানে জেনে রাখা ভাল যেঃ
(I) শরীয়তের হুকুম এই যে, ইমানহীন ব্যক্তির কঠোর সাধনার ইবাদতও জাহান্নামে দগ্ধ হবে অর্থাৎ ইমান ছাড়া আমলের কোন মূল্য হয় না। 
(II) এই স্বপ্নের সত্যতা নিয়ে সমস্ত ইমামগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
(III) ইমামগণের বক্তব্যের সারাংশ এই যেঃমীলাদুন্নবী () উপলক্ষে খুশি হওয়ায় কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব লাঘব হয়ে থাকে, যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং আল্লাহ সুরা লাহাব নাজিল করেছেন, যে কাফিরদের কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হয়না। তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করলে বড় পুরষ্কার থাকতে পারে তা আল্লাহই ভাল জানেন । 

হাদিসটি হলঃ

হযরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
ﻗﺎﻝ ﻋﺮﻭﺓ ﻭﺛﻮﻳﺒﺔ ﻣﻮﻻﺓ ﻻﺑﻰ ﻟﻬﺐ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺎﺭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﻣﺎﺕﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﺭﻳﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻫﻠﻪ ﺑﺸﺮ ﺣﻴﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻣﺎﺫﺍ ﻟﻘﻴﺖ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻟﻢ ﺍﻟﻖ ﺑﻌﺪﻛﻢ ﻏﻴﺮ ﺍﻧﻰ ﺳﻘﻴﺖ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺑﻌﺘﺎﻗﺘﻰ ﺛﻮﻳﺒﺔ ০
হযরত সুহাইবাহ (রাঃ) আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে [রাসুল ﷺ] এর বেলাদাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কৃতদাসী সুহাইবাহ (রাঃ) কে আযাদ করে দিয়েছিল।
যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ [হযরত আব্বাস রা.] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন, 
“তোমার অবস্থা কেমন?” 
- আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল যে দিন [রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বেলাদতের খুশিতে] দাসী সুহাইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে প্রতি সোমবার আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি পান করে থাকি ঐদিন (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
সূত্রঃ
★ সহিহ বুখারী : ২৬৪৪, ২৬৪৫, ২৬৪৬, ৩১০৫, ৪৭৯৬, ৫০৯৯, ৫১০০, ৫১০১, ৫১০৩, ৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৪, ৫১৩৩, ৫২৩৯, ৫৩৭২, ৬১৫৬
★ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ : হাদিস ২৫৯৫৩ উক্ত শিরোনামে لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن পুনরায় হাদিস ২৬৮৬৫, মতন :
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة  ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
★ইমাম নাসাঈ : আস সুনানুল কুবরা : হাদিস ৫৩৯৪, ৫৩৯৫
★ইমাম নাসাঈ : আস সুনান আস-সুগরা : হাদিস ৩২৮৪, ৩২৮৫, ৩২৮৬, ৩২৮৭
★ইবনে মাজাহ : হাদিস ১৯৩৯ শিরোনাম ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
★ মুসলিম : হাদিস ২৬৩৪, ২৬৩৫
★ সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪১১০, ৪১১১ হাদিসের মতন :
  إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
★ইমাম বায়হাকী : সুনান আল কুবরা : বিবাহ অধ্যায়
★জামেউল হাদিস : মাসানিদুস সাহাবা : হাদিস ৪৩৫৪৫
★ইমাম বাগবি : শরহুস সুন্নাহ : ৯ম খন্ড : ৭৫ পৃ
★ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : ৬ খন্ড, হাদিস ১৫৭২৫
★মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৭ম খন্ড, হাদিস ১৩৫৪৬
★ইমাম আঈনী : উমদাতুল কারী শরহে বুখারী : ১৪ খন্ড, পৃ ৪৫
★ইমাম ইবনে কাসীর : সিরাত আন নববিয়্যাহ : ১ম খন্ড , পৃ ২২৪
★শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ
★সুবলুল হুয়া ওয়ার রশদ : ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃ
★ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী : ৭ম জিলদের ১২৫
★ইবনুল কাইয়্যুম : তোহফাতুল মাওদুদ বি আহকাম আল মাওলুদ, ১৯ পৃ
★ইবনে আব্দুল ওহাব, মুখতাসার সিরাতুর রাসূল, মাওলিদুন্নবী।

উক্ত হাদিস শরীফের আলোকে :

👉 ইমাম ইবনুজ জাওযী (রহঃ) বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﺰﺭﻯ ﻓﺎﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻫﺬﺍ ﺍﺑﻮﺍﻟﻬﺐ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ ﺍﻟﺬﻯ ﻧﺰﻝ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﺑﺬﻣﻪ ﺟﻮﺯﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺑﻔﺮﺣﻪ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪ
ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻪ ﻓﻤﺎ ﺣﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﻤﺆﺣﺪ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺴﺮ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩﻭﻳﺒﺬﻝﻣﺎﺗﺼﻞ ﺍﻟﻴﻪ ﻗﺪﺭﺗﻪ ﻓﻰ ﻣﺤﺒﺘﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻌﻤﺮﻯ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺟﺰﺍﺅﻩ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ ﺍﻥ ﻳﺪﺧﻠﻪﺑﻔﻀﻠﻪ ﺍﻟﻌﻤﻴﻢ ﺟﻨﺎﺕ ﺍﻟﻨﻌﻴﻢ ০ ( ﻣﻮﺍﻫﺐ ﺍﻟﻠﺪﻧﻴﻪ ﺝ ১ ০ ﺹ২৭ ﺯﺭﻗﺎﻧﻰ ﺝ ০১ ﺹ১৩৯ )
"যে কাফের আবু লাহাবের বিরোদ্ধে আল-কুরআন নাজিল হয়েছে এবং যার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত, সে আবু লাহাবও যদি হুজুর (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী উপলক্ষে খুশি হওয়াতে সুফল পায়, তাহলে তাঁর উম্মতের মধ্যে যে একত্ববাদী মুসলমান এবং তাঁর মিলাদুন্নবীতে (ﷺ) আনন্দিত হয় তাঁর মহব্বতে যথাসাধ্য দান করে,
তার অবস্থা কী হবে? আমি কসম করে বলছি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে তার বিনিময় এ হবে যে, তিনি সর্বব্যাপী অনুগ্রহ দ্বারা তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন।’
★ ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহিবে লাদুনিয়া ১ম জিল্দ ২৭ পৃঃ,  ★ ইমাম জুরকানীঃ জুরকানী ১ম জিল্দ ১৩৭ পৃঃ
👉 বিশ্ব বরণ্য ফকিহ্ ও শারিহে বােখারী, ইমাম কাস্তাল্লানী (রহঃ) তদীয় কিতাবে বলেন :
“মহান আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে রহমত দান করুক যিনি রাসূল (ﷺ) মিলাদের মােবারক রজনীকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।” 
[ইমাম কাস্তাল্লানী: মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড, ১৪৮ পৃঃ]
👉 ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহঃ) বলেন,
ﺟﻨﺎﻧﺠﻪ ﺩﺭ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻣﺪﻩ ﺍﺳﺖ ﻭﺩﺭﻳﻨﺠﺎ ﺳﻨﺪﺍﺳﺖ ﻣﺮﺍﻫﻞ ﻣﻮﺍﻟﻴﺪ ﺭﺍﻛﻪ ﺩﺭﺷﺐ ﻣﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪﻭﺳﻠﻢ ﺳﺮﻭﺭ ﻛﻨﻨﺪ ﻭﺑﺬﻝ ﺍﻣﻮﺍﻝ ﻧﻤﺎﻳﻨﺪ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻛﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﺑﻮﺩ ﻭﻗﺮﺍﻥ ﺑﻤﺬﻣﺖ ﻭﻯ ﻧﺎﺯﻝ ﺷﺪﻩ ﺟﻮﻥﺑﺴﺮﻭﺭ ﺑﻤﻴﻼﺩ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﻭ ﺑﺬﻝ ﺷﻴﺮ ﺟﺎﺭﻳﻪ
ﻭﻯ ﺑﺠﻬﺔ ﺍﻧﺤﻀﺮﺕ ﺟﺰﺍ ﺩﺍﺩﻩ ﺷﺪ ﺗﺎﺣﺎﻝ ﻣﺴﻠﻤﺎﻥ ﻛﻪ ﻣﻤﻠﻮﺳﺖ ﺑﻤﺤﺒﺖ ﻭﺳﺮﻭﺭ ﻭﺑﺬﻝ ﻣﺎﻝ ﺩﺭ ﻃﺮﻳﻖﻭﻯﺟﻪ ﺑﺎﺷﺪ ﻭﻟﻴﻜﻦ ﺑﺎﻳﺪﻛﻪ ﺍﺯ ﺑﺪﻋﺘﻬﺎ ﻛﻪ ﻋﻮﺍﻡ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻛﺮﺩﻩ ﺍﻧﺪﺍﺯ ﺗﻐﻨﻰ ﻭﺍﻻﺕ ﻣﺤﺮﻣﻪ ﻭ ﻣﻨﻜﺮﺍﺕ ﺧﺎﻟﻰﺑﺎﺷﺪ ০ ( ﻣﺪﺍﺭﺝ ﺍﻟﻨﺒﻮﺕ ﺝ ২ ০ ﺹ২৬ )
"উক্ত ঘটনা মিলাদ শরীফ পাঠকারীদের জন্য একটি বৃহত্তম দলিল, যারা মিলাদুন্নবীর রাতে আনন্দ উৎসব ও দান খয়ারাত করে থাকেন। আবু লাহাব কাফের এবং তার বিরোদ্ধে কোরআন নাজিল হওয়া সত্বেও নবী পাক (ﷺ) জন্মের সুসংবাদে আনন্দিত হয়ে নূরবীকে দুধপান করানোর নিমিত্তে বাদী [হযরত সুয়াইবাহ (রাঃ) কে] আজাদ করে দেয়, সে কারণে তাকে পুরস্কার স্বরূপ প্রতি সোমবারে তার আজাব নিরসন করা হল। এখন যারা ঈমানদার নবীপ্রেমিক আনন্দ উৎসব ও দান খয়রাত করেন তাঁদের পুরস্কার কীরূপ হবে? অবশ্য সে মিলাদকে শরীফে গান ও হারাম বাদ্যযন্ত্র হতে পবিত্র রাখতে হবে। 
[ইমাম আব্দুল হক দেহলভী (রহ) : মাদারিজুন নবুয়ত ২য় খণ্ড ২৬ পৃঃ]
👉 ইমাম ইবনে হজর আসকালানী (রহঃ) ফতহুল বারী শরহে বুখারী শরীফের মধ্যে এ মাসআলা নিয়ে বিশদ আলোচনা করে বলেনঃ
ﻓﻴﺤﺘﻤﻞ ﺍﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﺎﻳﺘﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎ ﻣﻦ ﺫﺍﻟﻚ ﺑﺪﻟﻴﻞ ﻗﺼﺔ ﺍﺑﻰ ﻃﺎﻟﺐ ﻛﻤﺎﺗﻘﺪﻡ ﺍﻧﻪ ﺧﻔﻒ ﻋﻨﻪ ০
"যদিও কোন স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হয় না, কিন্তু এখানে হযরত আব্বাস (রাঃ) এর স্বপ্ন আবু লাহাবের আজাব লাঘব হওয়ার ব্যাপারে কেবলমাত্র নবী করিম (ﷺ) সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার দরুণ দলিলরূপে গণ্য হতে পারে। অন্য কারো স্বপ্ন শরিয়তের দলিলরূপে গণ্য হবে না। তারপর আবু তালেবের আজাব কম হওয়ার প্রসঙ্গ দলিলরূপে উল্লেখ করেছেন।"
[ইমাম আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৯ম খন্ড, ১৫৪ পৃ:]
👉 যেমন উল্লেখ আছে"আবু তালিব কাফের, আজীবন নূরনবী (ﷺ) লালন-পালন ও সাহায্য করার দরুণ স্বয়ং আল্লাহর হাবিব (ﷺ) তার আজাব খুব কম হচ্ছে এবং হবে এ বলে সুসংবাদ প্রদান করেছেন।"
[মুসলিম শরীফের ১ম জিল্দের ১১৫ পৃষ্ঠায়]
যদিও আবু তালেবের এই ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর কতিপয় আলেমদের মত বিরোধ আছে। কেউ কেউ দলিল দিয়ে বলেছেন যে,
[ওনাকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করা হয়েছে এবং তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর উপর বিদায় হজ্জ্বের সময় দোয়া করলে রাসুল (ﷺ) এর পিতা, মাতা, আবু তালেব, আব্দুল মোত্তালেব ওনারা সবাই জীবিত হয়ে ইমান আনিয়া পুনরায় মৃত্যুবরণ করেন]
এমন বিশাল বিশাল বর্ননা রয়েছে। এতকিছু লিখা সম্ভব হল না বিধায় সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। [নবী করিম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেবের নাযাত সম্পর্কে বর্ণনা : লেখক - মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (মা.জি.আ) ওনার লিখিত নিচের সবগুলো  রেফারেন্স এ আছে এগুলো। যেমনঃ

★ তফসীরে সাবী : ৩য় খন্ড ১৩৮ পৃ
★ ইমাম কুরতুবী : তফসিরে মাওয়াহিবুর রহমান : ১১ পারা : সূরা তওবার তফসীর : ৪১ পৃ
★ তফসীরুল খাতের
★ মুফতি আমীমুল ইহসান বারাকাতী (রহ) : সিরাতে হাবিবে ইলার হাশিয়ায় : ৩৭ পৃ তে-
এ বিষয়ে অর্থাৎ কুফর ও ইমানের বিষয়ে মতবিরোধ আছে জানিয়েছেন।
★ ইবনে ইসহাক (রহ) এর বর্ননা অনুযায়ী সিরাতে ইবনে হিশাম : ১৪৬ পৃ : ইমানের সহিত মৃত্যুবরণ করেছেন বলে মত দিয়েছেন।
★ তফসীরে রুহুল বয়ান : ২য় খন্ড : ৯৪২ পৃ
★ তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ১৪৭ পৃ
★ তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ৯৭১ পৃ (সূরা তওবার তফসীরে)
★ তফসীরে রুহুল বয়ান : ১ম খন্ড : ৯৬২ পৃ
★ হযরত সৈয়দ গীসুদারাজ [রহ] (কেল্লা শাহ রহ.) "আখবারুল আখয়ার বা আনুয়ারে ছুফিয়া" গ্রন্থে ২৮৭ পৃ :
★ মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া (রহঃ) : রাহাতুল মুহিব্বীন : ১১৬ পৃ
★ আশরাফ আলী থানভী : তফসীরে বয়ানুল কুরআন : ৮ম খন্ড, ১১৪ পৃ (ইন্নাকা লা তাহদি আল-আখের) আয়াতে।

★ আব্দুল ওহাব শারানী (রহ) এর "কাশফুল গুম্মাহ" ২য় খন্ডের ২৫৬ পৃষ্টায় লিখেছেন,
হুজুর (ﷺ) যখন শেষকালে হেদায়াত করিলেন তখন আবু তালেব তাহার উষ্ঠদ্বয় আন্দোলিত করিলেন। সে সময় হযরত আব্বাস (রাঃ) তাহার মুখের নিকটে কর্ণ লাগাইলেন। অতঃপর বলিলেন, হে আমার ভাইপো হুজুর (ﷺ)! আমি খোদার শপথ করিয়া বলিতেসি যে, আপনি আমার ভাই আবু তালেবের পক্ষ হইতে যেই কালিমা ছাহিয়াছিলেন সে তাহা বলিয়াছে। হুজুর (ﷺ) ফরমালেন, হে চাচা যে খোদা আপনাকে পথ প্রদর্শন করিয়াছেন আমি সেই খোদার প্রশংসা করিতেসি। এতদ্যতীত অধিকাংশ জ্ঞানীগণ তাহার মুখ থেকে কালিমা বাহির হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন।"


 
Top