মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম” বিরোধীতা করতে বাতিল ফির্কারা কয়েকটি হাদীস শরীফ উল্লেখ করে তা মোটেও সঠিক নয় বরং ভূল ও অশুদ্ধ । কারণমীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম”-এর সাথে উক্ত হাদীস শরীফ-এর কোনই সম্পর্ক নেই। কেননামীলাদ শরীফ-এর যে ক্বিয়াম করা হয়সেই ক্বিয়ামের অর্থ হলোআল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীনখতামুন্নাবিয়্যীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বরকতময় বিলাদত বা জন্ম বৃত্তান্ত শ্রবণ করতঃ দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করা।
অথচ উল্লিখিত পত্রিকায় বর্ণিত হাদীস শরীফসমূহে দাঁড়িয়ে সালাম করতে নিষেধ করা হয়নি। শুধু তাই নয় বরং আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকেও নিষেধ করা হয়নি। আমরা পর্যায়ক্রমে উক্ত পত্রিকাত্রয়ে বর্ণিত হাদীস শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা দলীল-আদিল্লাহ্সহ বর্ণনা করবো ইনশাআল্লাহ্। আর সেই সাথে আমরা এটাও প্রমাণ করবো যেসাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীনখতামুন্নাবিয়্যীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকে বা দাঁড়ানোকে নিষেধ করেননি বরং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেও দাঁড়িয়েছেন এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করার ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন। আর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন।
তারা বলে থাকে যে, “প্রচলিত মীলাদ শরীফ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা।
যদি তাদের এ বক্তব্যকেই সঠিক ধরে নেয়া হয়,তাহলে তাদের বক্তব্য মোতাবিক এটাই প্রমাণিত হয় যেহাদীস শরীফে মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামনিষিদ্ধ ও নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি ভুল ও মিথ্যা। অতএব প্রমাণিত হলোহাদীস শরীফে মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি।

নিম্নে বাতিল ফির্কার আপত্তিকৃত বর্ণিত হাদীস শরীফসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা করা হলো-
শুরুতেই যে বিষয়টি জেনে রাখা জরুরী তাহলোরদ্দুল মুহ্তার ও হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ্নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যেক্বিয়াম তিন প্রকার-
(১) ক্বিয়ামে তাকাব্বুরীঃ যেমনহাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেلا تقوموا كما يقوم الاعاجم.
অর্থাৎ তোমরা আজমীদের মত (মাথা নীচু করে নমস্কারের ছূরতে) দাঁড়াইওনা।” এরূপ ক্বিয়াম শরীয়তে সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।
(২) ক্বিয়ামে হুব্বীঃ যেমন, “হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা সাইয়্যিদুল মুরসালীন,ইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হুজরা শরীফে আসলেহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (মুহব্বতে) দাঁড়িয়ে কপাল মুবারকে চুম্বন করে বসতেন ও বসাতেন। একে ক্বিয়ামে হুব্বী বলে।
(৩) ক্বিয়ামে তাযীমীঃ যেমন, “হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাযীমের জন্যে দাঁড়াতেন।

মুলতঃ ক্বিয়ামে তাকাব্বুরী শরীয়তে হারাম ও নাজায়েয। আর ক্বিয়ামে হুববী ও তাযীমী শরীয়তে জায়েয ও সুন্নত।

ক্বিয়াম বিরোধীদের বক্তব্য খন্ডনঃ
উল্লেখ্য যেতারা বলেছেএকাধিক ছহীহ্ হাদীসে মীলাদে ক্বিয়াম নিষিদ্ধ ও নাজায়েয।
            
প্রথম দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফটি উল্লেখ করেছে যা হুবহু উল্লেখ করা হলো- হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেন,হযরত(সাঃ)-এর চেয়ে অধিক প্রিয়পাত্র তাঁদের নিকট আর কেহই ছিলেন না। এতদসত্ত্বেও তাঁরা যখন নবী করীম (সাঃ) কে কোথাও হতে আগমন করতে দেখতেনতাঁরা দাঁড়াতেন না। কেননাতাঁরা জানতেন যেহুজুর পাক (সাঃ) এটা নিতান্ত অপছন্দ করেন। 
এর জবাবে প্রথমত বলতে হয় যে, উক্ত হাদীস শরীফে মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম সম্পর্কে কোনই বর্ণনা নেই। যদি আমরা মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম ব্যতীত সাধারণ ক্বিয়ামকে ধরে নেইসেক্ষেত্রেও বলতে হয় যেউক্ত হাদীস শরীফটি ব্যাখ্যা স্বাপেক্ষ।
উক্ত হাদীস শরীফটির সঠিক ব্যাখ্যা সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন, “বিশ্ববাসীর জন্য রহমত স্বরূপ।
এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وما ارسلنك الا رحمة للعلمين.
অর্থঃ- আর আমি আপনাকে তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আম্বিয়া/১০৭)
অন্য আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
وكان بالمؤمنين رحيما.
অর্থঃ- এবং তিনি (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমিনদের জন্য পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব/৪৩)

সেহেতু হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময়ই চাইতেন যেন উম্মতের কোন কষ্ট না হয়। তাই বার-বার দাঁড়ানোকে তিনি ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর জন্যে কষ্টকর মনে করে দাঁড়াতে নিষেধ বা অপছন্দ করেছেন। শরীয়তের খেলাফ মনে করে নিষেধ বা অপছন্দ করতেননা। আর কষ্ট সম্পর্কে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
انا واتقياء امتى براء من التكلف.
অর্থঃ- আমি এবং আমার মুত্তাকী উম্মতগণ কষ্ট দেয়া থেকে মুক্ত।” (মিশকাত শরীফ ৪০৩ পৃষ্ঠা ৫নং হাশিয়ামিরকাতমুযাহেরে হক্ব।)

অথবা নিজের বিনয় প্রকাশ করার লক্ষ্যে কিংবা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে বিনয় শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়াতে নিষেধ বা অপছন্দ করেছেন।
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফে৪০৩ পৃষ্ঠার ৫নং হাশিয়ায় বলা হয়েছে,
قوله لذلك اى لقيامهم تواضعا لربه.
অর্থঃ- অর্থাৎ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় রবের প্রতি বিনয়ের কারণেই হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে ক্বিয়াম বা দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন।

এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় থানভী ছাহেবেরইমদাদুল ফতওয়ায় মিরকাত শরীফের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে যে,
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় বিনযসরলতা ও ভদ্রতা প্রকাশে দাঁড়ানো পছন্দ করেননি বা নিষেধ করেছেন। যেমন,মিরকাত শরীফে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে।
তালীকুছ ছবীহ কিতাবের ৫ম খন্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
 قوله من كراهيته لذلك اى بقيامهم تواضعا لربه.
অর্থঃ- হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় রবের প্রতি বিনয়ের কারণে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন।
মিরকাত শরীফ”-এর ৯ম খন্ডের ৮৪ পৃষ্ঠায়উল্লেখ আছেاى لقيامهم تواضعا لربه.
অর্থঃ- অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় রবের প্রতি বিনয়ের কারণে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর ক্বিয়াম বা দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন।
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফেরবিখ্যাত শরাহ্ মুযাহিরে হক্ব কিতাবের চতুর্থ খন্ডের ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেআল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিনয়ের কারণেই দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন।

এ প্রকার বিনয় বা শিষ্টতা ইত্যাদির উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যেআমাদের ঘরে কোন মেহ্মান আসলে তাঁকে মেহমানদারী করাতে গিয়ে যখন কোন খাদ্যদ্রব্য তাঁর দিকে বাড়িয়ে দেয়া হয়তখন ঐ মেহ্মান যেমন সৌজন্য ও ভদ্রতাসূচক থাক,থাক” বা নানাআর দরকার নেই” ইত্যাদি বলে থাকেন। যার প্রকৃত অর্থ এই নয় যেতাঁর খাওয়া শেষ হয়েছেবরং তা শিষ্টাচার বা ভদ্রতাজনিত অনিচ্ছা মাত্র। এমতাবস্থায় আমরা কেউই তাঁর অনিচ্ছার প্রতি গুরুত্ব প্রদর্শন করিনাবরং অধিক আগ্রহ সহকারে তাঁর খাওয়ার প্রতি যত¦বান হই। কেননামেহমানদের সৌজন্য তাঁরই তরফ হতে এবং মেজবানের ভদ্রতা ও কর্তব্য তার তরফ হতে।
            এখানে উল্লেখ্য যেহুজুরে কায়েনাত ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যে সকল আদেশ বা নিষেধ এরূপ সৌজন্য এবং ভদ্রতা প্রকাশক ছিল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ অনেক ক্ষেত্রে সে সকল আদেশ ও নিষেধ তার শব্দগত অর্থ গ্রহণ না করে হাক্বীক্বী অর্থ গ্রহণ করে তার উপর আমল করেছেন। শুধু তাই নয় বরং হাক্বীক্বী অর্থের উপর আমল করা মুস্তাহাবও মনে করেছেন।
            যেমনবুখারী শরীফ”-এর ১ম খন্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, “একদা রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বণী ওমর ইব্নে আওফের কোন (বিবাদ) মীমাংসা করতে যাওয়ায় নামাযের জন্য মসজিদে উপস্থিত হতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল সেহেতু হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইমাম হয়ে নামায পড়াতে শুরু করলেন। ইতিমধ্যে হুজুরে আক্রাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় এসে পৌঁছলেন। হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমণ অনুভব করেহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পিছনে আসতে চাইলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইশারা করে তাঁকে স্ব-স্থানে থাকার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তা সত্বেও তিনি পেছনে সরে আসলেন। অতঃপর নামাযান্তে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে বললেন,
يا ابا بكر ما منعك ان تثبت اذ امرتك.
অর্থঃ- হে আবূ বকর! আমি নির্দেশ দেয়া সত্বেও আপনি স্ব-স্থানে থাকলে না কেন?” 
উত্তরে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন,
 ما كان لابن ابى قحافة ان يصلى بين يدى رسول اللهصلى الله عليه وسلم-
অর্থঃ- আবূ কুহাফার পুত্রের জন্য রাসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে নামায পড়া আদৌ শোভনীয় নয়।” (আবু কুহাফা তাঁর পিতার নামসেজন্য তিনি নিজেকে আবূ কুহাফার পুত্র বলে উল্লেখ করেছেন)

            লক্ষণীয় যেএখানে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ সত্বেও হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি নবীদের পরে আল্লাহ্ পাক-এর যমীনে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তিনিও শব্দগত অর্থ গ্রহণ না করে আদেশের হাক্বীক্বী অর্থ গ্রহণ করে আমল করলেন। কারণ তিনি জানতেন যেতা সৌজন্যসূচক নির্দেশ মাত্র- প্রকৃত আদেশ নয়। সেক্ষেত্রে হাক্বীক্বী অর্থ পালন করাই শিষ্টতা বা ভদ্রতার পরিচায়ক। নতুবাপ্রকৃত আদেশসূচক কোন নির্দেশ পালনার্থে তিনি নিজের জীবনধন-সম্পদ ইত্যাদি সমস্তই নিতান্ত তুচ্ছ জ্ঞান করতেন। সেজন্য তাঁর উত্তর শুনেহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসন্তুষ্ট হননি বরং তাঁর এরূপ শিষ্টাচারপূর্ণ ব্যবহার ও জবাবে তিনি সন্তুষ্টই হয়েছিলেন।

হযরত ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি তদ্বীয়আদ্দুররুল মানদুদ” কিতাবে উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেছেন,
فيه دليل اى دليل على ان سلوك الادب اولى من امتثالالامر الذى علم عدم الجزم بقضيته.
অর্থঃ- যে আদেশ বাধ্যকর নয়তা পালন করা অপেক্ষা আদব রক্ষা করাই যে উত্তমএই হাদীস শরীফই তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

অতএবযে হাদীস শরীফে স্বকীয় সৌজন্যনম্রতা ও শিষ্টতা বশতঃ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জন্য ক্বিয়াম করা নিষেধ করেছিলেন,তা পালন করা অপেক্ষা আদব রক্ষা করা এবং বিনীত হওয়াই অধিক উত্তম। এজন্যই ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহে ক্বিয়ামে তাযীমীকে এক বাক্যে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
            উপরোক্ত আলোচনা ও ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যেসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামহযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে শুধুমাত্র নিজের বিনয়ভদ্রতা ও শিষ্টতা প্রকাশেই ক্বিয়াম করতে নিষেধ করেছিলেন। শরীয়ত বিরোধীনাজায়েয বা বিদ্য়াত হিসেবে নয়।

আর হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় শরহুত ত্বীবী মিরকাত শরীফে উল্লেখ আছে,
ولعل الكراهية بسبب المحبة.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই মুহব্বতের কারণেই দাঁড়ানোকে অপছন্দ করেছেন। আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিাল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ যে অধিক মুহব্বত ছিল তার প্রমাণ উক্ত হাদীস শরীফেই রয়েছে যেতাঁরাই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সবচেয়ে বেশী মুহব্বত করতেন। 

আর আলমাদখাল কিতাবের ১ম খন্ডের ১৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে,
ولا يصح الاحتجاج بهذا الحديث ...... وقاموا بحضرتهصلى الله عليه وسلم ولم يكره قيام بعضهم لبعض وانهعليه الصلاة والسلام قد قام لبعضهم.
অর্থঃ- ক্বিয়াম না করার ব্যাপারে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীস শরীফটি দলীল হিসেবে গ্রহণ করা শুদ্ধ হবেনা। .......... কেননা হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপস্থিতিতে দাঁড়িয়েছেন অথচ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের পরস্পরের ক্বিয়াম করাকে অপছন্দ করেননি। এমনকি স্বয়ং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জন্য দাঁড়িয়েছেন। যার বর্ণনা পরে আসছে।”

উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যেরহমতুল্লিল আলামীন আখিরী রসুল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর জন্যে কষ্টকর মনে করে বা বিনয় প্রকাশ করার লক্ষ্যে বা বিনয় শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে বা মুহব্বতের কারণে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করছেন।
            
দ্বিতীয়তঃ তারা বলেছেএকাধিক ছহীহ্ হাদীসে মীলাদে ক্বিয়াম নিষিদ্ধ ও নাজায়েয। দ্বিতীয় দলীল হিসেবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফটি উল্লেখ করেছে। হাদীস শরীফটি হলো- হযরত আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছেএকদিন হুযুর (সাঃ) লঠির উপর ভর দিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে আসলেন,আমরা সকলেই তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। অতঃপর নবী করীম (সাঃ) বললেনঅনারবরা যেরূপ একে অপরের সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যায়,তোমরা সেইরূপ দাঁড়াইবে না।
           
এর জবাবে বলতে হয় যে, উক্ত হাদীস শরীফেওমীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি এবং সাধারণ ক্বিয়ামকেও নিষেধ করা হয়নি। বরং এ হাদীস শরীফ দ্বারা ক্বিয়াম করার পদ্ধতিনিয়ম,তর্জ-ত্বরীকা শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে,
لا تقوموا كمايقوم الاعاجم.
অর্থঃ- তোমরা আজমীদের মত (মাথা নিচু করে নমস্কারের ছুরতে) দাঁড়াইও না।
            
অর্থাৎ এ হাদীস শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে যেতোমরা সম্মানার্থে দাঁড়াবে তবে আজমীদের মত নমস্কারের ছুরতে নয়। আমরাও উক্ত হাদীস শরীফের ভিত্তিতে বলে থাকি যেআজমীদের মত নমস্কারের ছুরতে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করা শরীয়তে হারাম ও নাজায়েয।
 উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মিরকাত শরীফ-এর ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
لاشك انهم انما قاموا لله وتعظيما لرسول الله ولعل الوجهان يقال انهم قاموا متمثلين فنهاهم عن ذلك.
অর্থঃ- কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় তাঁরা (অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ) আল্লাহ্ পাক-এর জন্য এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে দাঁড়িয়েছেন।

তবে আজমীদের মত দাঁড়ানোকে নিষেধ করার কারণ হলোনিশ্চয়ই তারা আজমীদের মত দাঁড়িয়েছিলেন। তাই তাঁদেরকে আজমীদের মত দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন। উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় মুযাহিরে হক্ব কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৬৬ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেউক্ত হাদীস শরীফে ক্বিয়াম নিষেধ করার কারণে মুল ক্বিয়াম নিষিদ্ধ নয়। যেমন,অন্যান্য হাদীস শরীফে ক্বিয়াম করার ব্যাপারে বর্ণনা এসেছে। বরং যে ক্বিয়াম তাকাববুরী তথা বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য করা হয় উক্ত হাদীস শরীফে সেই ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে।

কিন্তু মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম” আজমীদের মত নমস্কারের ছুরতে নয়। বরং মীলাদ শরীফে সালাম পেশ করার জন্যই ক্বিয়াম করা হয়। তাহলে মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম কি করে নাজায়েয হতে পারে। সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফে মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি এবং আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকেও নিষেধ করা হয়নি। বরং ক্বিয়ামে তাকাববুরীকে নিষেধ করা হয়েছে যা বিধর্মী আজমীরা করে থাকে।

তৃতীয়তঃ তারা মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে নাজায়েয বলে পরবর্তীতে যে হাদীস শরীফটি দলীল হিসেবে পেশ করেছে তা হলো- হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিতহুযুর (সাঃ) বলেছেনযে ব্যক্তি এ কথার উপর খুশী হয় যেলোকেরা তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান করে সে যেন তার ঠিকানা দোযখে বানিয়ে নেয়।

এর জবাব হলো, উক্ত হাদীস শরীফেও মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” এবং সাধারণভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে,
من سره ان يتمثل له الرجال قياما.
অর্থাৎ- মানুষ তার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক এটাই যদি সে পছন্দ করে তাহলে সে জাহান্নামী।
মূলতঃ এ হাদীস শরীফ দ্বারাও ক্বিয়ামে তাকাববুরীকে বুঝানো হয়েছে যা মুতাকাব্বির ও মুতাজাবিবর (গর্বকারী ও অহংকারী) লোকদের স্বভাবগত অভ্যাস। এধরণের ক্বিয়ামও শরীয়তে হারাম।
কিন্তু উক্ত হাদীস শরীফে সমস্ত ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। যেমনউক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায়মিশকাত শরীফে ৪০৩ পৃষ্ঠায় ৭নং হাশিয়ায়মিরকাত শরীফে ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায় এবংতালিকুছ ছবীহ” কিতাবের ৫ম খন্ডের ১২৯ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
واما اذا لم يطلب ذلك وقاموا من تلقاء انفسهم طلباللثواب او لارادة التواضع فلاباس به.
অর্থাৎ- মানুষ তার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক এটা যদি পছন্দ না করে বা এটা তার উদ্দেশ্য না হয় এবং পরস্পরের সাক্ষাতে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে অথবা বিনয়ের উদ্দেশ্যে দাঁড়ায় তাহলে এতে কোন অসুবিধা নেই।

মিশকাত শরীফে” উক্ত হাশিয়ায়মিরকাত শরীফ-এর উক্ত পৃষ্ঠায় এবং শরহুত ত্বীবীকিতাবের ৯ম খন্ডের ৪৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে,
ان قيام المرء بين يدى الرئيس الفاضل والوالى العادلوقيام المتعلم للمعلم مستحب.
অর্থাৎ- নিশ্চয় নেতৃস্থানীয় মর্যাদাবান ব্যক্তির ও ন্যায় পরায়ন শাসকের সামনে দাঁড়ানো এবং উস্তাদ,শিক্ষকের জন্য ছাত্রদের দাঁড়ানো মুস্তাহাব।

সুতরাং উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় এটাই প্রমাণিত হলো যেআলিমফাজিলউস্তাদন্যায় বিচারকসম্মানিত ব্যক্তিপিতা-মাতাপরহেযগার আল্লাহ্ওয়ালা ব্যক্তির আগমন এবং সম্মানে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করা মুস্তাহাব ও ছওয়াবের কাজ। যদি তাই হয় তাহলে মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম” করতে নিষেধ কোথায়বরং মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম করাই মুস্তাহাবসুন্নতে উম্মত মুস্তাহাসান। অতএবপ্রমাণিত হলো উক্ত হাদীস শরীফেও মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি। ববং উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ক্বিয়াম করাকেই মুস্তাহাব ও ছওয়াবের কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

চতুর্থতঃ তারা মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে নিষিদ্ধ ও নাজায়েয বলে সর্বশেষ যে হাদীস শরীফটি দলীল হিসেবে পেশ করেছে তাহলো- নবী করীম (সাঃ) এরশাদ করেন যেতোমরা নামাযের মধ্যে যেভাবে আল্লাহ্র জন্য দাঁড়াওসেরূপ আমার জন্য দাঁড়াইবে না।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, উক্ত হাদীস শরীফেওমীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” নিষেধ করা হয়নি। বরং এ হাদীস শরীফ দ্বারা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ক্বিয়াম করার নিয়ম পদ্ধতিতর্জ-তরিকা শিক্ষা দিয়ে বলেছেন যে, “তোমরা যেরূপভাবে (অত্যন্ত বিনয়ের সহিত সিজ্দা করার উদ্দেশ্যে) নামাযের মধ্যে আল্লাহ্ পাক-এর জন্য দাঁড়াও অনুরূপ ভাবে আমার জন্য দাঁড়াবে না।
তাছাড়া নামাযে যেভাবে দাঁড়ানো হয়, “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামে” সেভাবে দাঁড়ানো হয়না। যেমন,নামাযে ক্বিয়াম করা ফরয। অথচ মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান।
নামাযে ক্বিবলা মুখী হয়ে দাঁড়াতে হয়। যা ফরয। অথচ মীলাদ শরীফে ক্বিবলামুখী হওয়া ফরয নয়। বরং মীলাদ শরীফে বিভিন্ন মুখী হয়ে ক্বিয়াম করা হয়। নামাযে কাঁতার বন্দী হয়েকাঁতারে ফাক বন্ধ করে,  কাঁতার সোজা করে দাঁড়াতে হয়। যা ওয়াজিব। অথচ মীলাদ শরীফে নামাযের মত কাঁতার বন্দী হয়েকাঁতারের ফাঁক বন্দ করে কাঁতার সোজা করেদাঁড়ানো হয় না। নামাযে এদিক-ওদিক তাকানো নিষেধ। অথচ মীলাদ শরীফ তা নিষেধ নয়।
 নামাযে আল্লাহ্ পাককে সিজ্দা করার উদ্দেশ্যে দাঁড়ানো হয়। অথচ মীলাদ শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সিজ্দা করার উদ্দেশ্য দাঁড়ানো হয় না। বরং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সালাম পেশ করার উদ্দেশ্য মীলাদ শরীফে ক্বিয়াম করা হয়।
অতএবউপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যেনামাযে যেভাবে দাঁড়ানো হয় মীলাদ শরীফে সেভাবে দাঁড়ানো বা ক্বিয়াম করা হয়না। সুতরাং মীলাদ শরীফের ক্বিয়ামের” সাথে উক্ত হাদীস শরীফের কোন সম্পর্ক নেই।
পরিশেষে তারা আল মাদখালজাদুল মায়াদ ও ফতওয়ায়ে রশিদীয়া” কিতাবের দলীল দিয়েছে।
অথচ উক্ত কিতাবগুলোতে ক্বিয়ামের স্বপক্ষেই বলা হয়েছে। এমনকি মাওলানা রশীদ আহ্মদ গাংগুহী তদীয় ফতওয়ায়ে রশীদিয়া” কিতাবের ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেছেনদ্বীনদার লোকের তাযীমের জন্য দন্ডায়মান হওয়া জায়েযএরূপ লোকের পদ চুম্বন করাও জায়েয। এ কথা হাদীস শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত।
            
আরো উল্লেখ্য যেতারা বলেছেহাদীস শরীফে ক্বিয়াম করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত রয়েছে।
এর জবাব আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যেহাদীস শরীফে যে ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়েছে তাহলো,ক্বিয়ামে তাকাববুরী যা বিধর্মী আজমীরা মাথা নীচু করে নমস্কারের ছুরতে দাঁড়িয়ে থাকে। আর এ ধরণের ক্বিয়ামকে নিষেধ করে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لا تقوموا كما يقوم الاعاجم.
অর্থাৎ- তোমরা আজমীদের মত (মাথা নীচু করে নমস্কারের ছুরতে) দাঁড়াইও না। কিন্তু মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামকে” এবং আমভাবে সমস্ত ক্বিয়ামকে নিষেধ করা হয়নি। আর তাই যদি হতো তাহলে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ক্বিয়াম করতেন না।
যেমনএ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
 عن عائشعة رضى الله عنهاكانت اذا دخلت عليه قاماليها فاخذ يدها فقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذادخل عليها قامت له فاخذت بيده فقبلته واجلسته فىمجلسها.
অর্থঃ- হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেনহযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যেতেনতখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং হাতে বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর নিকট যেতেন তখন তিনি দাঁড়িয়ে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত মুবারক বুছা দিয়ে নিজের স্থানে বসাতেন।” (আবু দাউদমিশকাত)

আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বিয়াম করার জন্য হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদেরকে নির্দেশও দিয়েছেন।
যেমনমিশকাত শরীফ-এর ৪০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابى سعيدن الخدرى قال لما نزلت بنوقريظة علىحكم سعد بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم اليهوكان قريبا منه فجاء على حمار فلما دنا من المسجد قالرسول الله صلى الله عليه وسلم للانصار قوموا الىسيدكم-
অর্থঃ- হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেনবনু কুরাইযা গোত্র যখন হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর বিচারকে মেনে নেয়ার শর্তে দুর্গ থেকে অবতরণ করলো। তখন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ডেকে পাঠালেন। তিনি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটেই ছিলেন। অতঃপর হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন গাধার পিঠে আরোহন করে মসজিদের নিকটবর্তী হলেনতখন আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনছার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে বললেনতোমরা তোমাদের সর্দারের সম্মানে দাঁড়াও।

হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যও দাঁড়িয়েছেন। যেমনহাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,
 عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال كان رسول اللهصلى الله عليه وسلم يجلس معنا فى المسجد يحدثنافاذا قام قمنا قياما حتى نراه قد دخل بعض بيوتازواجه.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরয়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনএকদা সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনহুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে বসে আমাদেরকে নছীহত করছিলেন। যখন তিনি উঠলেন বা দাঁড়ালেন,আমরাও সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেলামততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষন আমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এমনকি তাঁর স্ত্রীদের ঘরে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম।” (বায়হাক্বী ফী শোয়াবিল ঈমান,মিশকাত শরীফ)

এছাড়া হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ একে অপরের জন্যও দাঁড়িয়েছেন। যেমন-
عن عبد الرحمن بن عبد الله بن كعب بن مالك عن ابيهعن جده كعب رضى الله عنه ........ وانطلقت الى رسولالله صلى الله عليه وسلم حتى دخلت المسجد واذابرسول الله صلى الله عليه وسلم جالس حوله الناس فقامالى طلحة بن عبيد الله يهرول حتى صافحنى.
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর দাদা হযরত কাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যেহযরত কাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনআমি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে গেলামএমনকি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলামতখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণআল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে চতুর্দিকে বসা ছিলেনঅতঃপর ত্বলহা ইবনে উবায়দুল্লাহ আমার জন্য দাঁড়ালেনএমনকি দ্রুতগতিতে এসে আমার সাথে মুছাফাহা করলেন ....।

উপরোক্ত হাদীস শরীফ থেকে প্রমাণিত হলো যে,হযরত কাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সম্মানার্থে হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দাঁড়িয়েছেন।
উপরোক্ত হাদীস শরীফের প্রেক্ষিতে মিশকাত শরীফ”-এর ৪০৩ পৃষ্ঠায় ৭নং হাশিয়ায়মিরকাত শরীফ-এর ৯ম খন্ডের ৮৫ পৃষ্ঠায়শরহুত ত্বীবীকিতাবের ৯ম খন্ডের ৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যেটা ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,
وقال البيهقى هذا القيام يكون على وجه البر والاكرام كماكان قيام الانصار لسعد وقيام طلحة لكعب بن مالك.
অর্থঃ- ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনএই ক্বিয়াম সদ্ব্যবহার এবং সম্মানের কারণে হবে। যেমনহযরত আনছার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হযরত সাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সম্মানে ক্বিয়াম করেছেন এবং হযরত কাব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সম্মানে হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ক্বিয়াম করেছেন।

অতএবউপরোক্ত দলীল-আদিল্লাহ্ভত্তিক বিস্তারিত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যেউল্লিখিত পত্রিকাত্রয় মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম সম্পর্কে যে বক্তব্য পেশ করেছে তা সম্পূর্ণ ভুলমিথ্যা ও জালিয়াতি। কারণ, “মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়াম” তো অবশ্যই জায়েয বরং সুন্নতে উম্মত মুস্তাহ্সান এবংমীলাদ শরীফের ক্বিয়াম” ছাড়াও আলিমফাজিল,বুযুর্গউস্তাদশিক্ষকসর্দারন্যয় পরায়ন ব্যক্তি,সম্মানিত ব্যক্তিনেক্কারপরহেযগারআল্লাহ্ওয়ালা ব্যক্তিপিতা-মাতামুরুব্বী ইত্যাদি ব্যক্তিদের জন্য ক্বিয়াম করাও মুস্তাহাব-সুন্নত। কেননাআল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই ক্বিয়াম করেছেনক্বিয়াম করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ পরস্পর পরস্পরের জন্য ক্বিয়াম করেছেন।
Top