আশিক্বে রসূল, হযরতুল আল্লামা শাহ্ আব্দুল হক এলাহাবাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তদ্বীয় “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন,
ان القيام عند وضعه صلى الله عليه وسلم لتعظيمالنبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার আলোচনার সময় উনার সম্মানার্থে বা তা’যীম-তাকরীমের জন্যেই পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা হয়।” (আল উসীলাহ্ পৃঃ ৫৮)
উক্ত কিতাবের ৬৯নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
فى الدر المنظم المختار عندى فى وجه القيام عندذكر وضعه صلى الله عليه وسلم اداء شكر الحقبظهور رحمة للعالمين.
অর্থ: “দুররুল মুনাজ্জাম” কিতাবে হযরত শাহ্ আব্দুল হক মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, আমার নিকট সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার বর্ণনার সময় পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা জায়িয হওয়াই গ্রহণযোগ্য মত। কেননা এর দ্বারা রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক বিকাশ হওয়ায় মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর আদায় করা হয়।” (আল উসীলাহ্ পৃঃ ৫৯)
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
قد استحسن القيام عند ذكر ولادته شريفة صلى اللهعليه وسلم ائمة ذو رواية ودراية.
অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার ঘটনা আলোচনাকালে পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করাকে বিচক্ষণ হযরত ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনারা মুস্তাহ্সান বা মুস্তাহাব বলেছেন।” (ইক্বদুল জাওয়াহির ২৯নং পৃষ্ঠা)
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
جرت عادة كثيرة من المحبين اذا سمعوا بذكر وضعهصلى الله عليه وسلم ان يقاموا لتعظيم النبى صلىالله عليه وسلم
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিকাংশ মুহব্বতকারীগণ উনাদের স্বভাব এটাই ছিল যে, উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার বিবরণ শুনে সাথে সাথেই পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করেন।” (সীরাতে হালবীয়া ১ম খ- ৯৯ পৃষ্ঠা)
কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
قد اجمعت الامة المحمدية من الاهل السنة والجماعةعلى استحسن القيام المذكور وقال عليه السلاملاتجتمع امتى على الضلالة.
অর্থ:- “উম্মতে হাবীবী উনার আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল আলিমগণ পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ মুস্তাহ্সান হওয়ার ব্যাপারে ইজ্মা বা ঐকমত্য পোষণ করেন। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার উম্মত (হক্কানী-রব্বানী আলিমগণ) কখনোই গুমরাহীর উপর একমত হবেন না।” (ইশবাউল কালাম ৫৪নং পৃষ্ঠা)
হযরত মাওলানা উসমান বিন হাসান দিমইয়াতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাউলূদে বারযানজী’ কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
قد استحسن القيام عند ذكر مولده الشريف ائمة ذورواية ودراية.
অর্থ: “বিচক্ষণ হযরত ইমাম-মুজতাহিদগণ উনাদের মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের সময় পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করা মুস্তাহসান বা মুস্তাহাব।”(কিশোরগঞ্জে ক্বিয়ামের বাহাছ ৩৩ পৃষ্ঠা)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, শায়খুল মাশায়িখ, হযরত শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “কারামাতে আযীযিয়াহ্” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন,
در تمام سال دو مجلس درخانہ منعقد شوند اولکہ روز عاشورہ یا دویک روز پیش ازیس قریب چھارصدکس یا پنج صدکس بلکہ ھزار فراھم می آیندہوذکر فضائل حسنین کہ در حدیث وارد شدہ در بیانمی أید ... باقی مانند مجلس مولود شریف پسحالش اینست کہ بتاریخ دواز دھم شھر ربیع الاولمین ھمین کہ مردم موافق معمول سابق فراھم شدندودر خواندان درود شریف مشغول گشتند وفقیر میأید.
অর্থ: “সারা বৎসরে এই ফকীরের ঘরে দুইবার মাহ্ফিল হয়ে থাকে। প্রথমটি পবিত্র আশূরা শরীফ অথবা তার ২/১ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মাহ্ফিলে ৪০০/৫০০, কখনো হাজার লোকও সমবেত হয়ে থাকে। উক্ত মাহ্ফিলে ইমামুছ ছানী হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও ইমামুছ ছালিছ হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক পবিত্র হাদীছ শরীফ হতে আলোচনা করা হতো। দ্বিতীয় মাহ্ফিলটি হতো পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহ্ফিল। এতে পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১২ তারিখে পূর্ব নিয়ম অনুযায়ী (হাজার) লোক উপস্থিত হতো এবং পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠে মশগুল হতো। অতঃপর আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত হতাম।
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর দ্বীন প্রচারকারী আল্লামা হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার‘রিসালাতুল ফায়সালা’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
ہمنے رسالہ ملخص میں مولود شریف کو پچیسعالموں اور اماموں کے قول سے اور اپنے طریقہ کےپیشوا ووں کے قول سے اور توارث سے ثابت کیا ہےاور مولد کا منع کرنیوالا فقط شخص فاکہانی مالکیہے سو جماعت کی مقابلہ میں انکے دھکے کااعتبار ہے . اور قیام کو ایک مجتہد اور مکئہ معظمہ کے دومعتمد اور نامی عالم قد یم کے فتاوی سے اور بری بری معتبر کتابو ں سے اور توارث سے ثابت کیا ہےاور یہ قیام چونکہ قیام تعظمی ہے اسواسطےاسکیاصلی حضرت ام المؤمنین عائشہ صدیقہ کی حدیثسےثابت کیا ہے.
অর্থ: “আমি ‘মুলাখ্যাছ’ কিতাবে ২৫ জন আলিম ও ইমাম উনাদের বাণী ও কর্ম দ্বারা এবং নিজ তরীক্বার বুযুর্গ উনাদের বাণী ও উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনাকে যথার্থভাবেই (জায়িয) সাব্যস্ত করেছি। পবিত্র মীলাদ শরীফ নিষেধকারী ব্যক্তি হলো, মাত্র ফাকেহানী মালেকী। সুতরাং (পবিত্র মীলাদ শরীফ জায়িয বলে ফতওয়া দানকারী) বৃহৎ জামায়াতের মতের বিরুদ্ধে তার এ ধোঁকাবাজী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আর একজন মুজতাহিদ ও পবিত্র মক্কা শরীফ উনার দু’জন বিশ্বস্ত ও প্রসিদ্ধ প্রাচীন আলিমের ফতওয়া ও বিখ্যাত কিতাবসমূহ এবং উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দলীলের ভিত্তিতে পবিত্র মীলাদ শরীফে পবিত্র “ক্বিয়াম” শরীফ করা জায়িয প্রমাণ করেছি। আর উক্ত পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ হলো পবিত্র ক্বিয়াম শরীফে তা’যীমী বিধায় উহাকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা (জায়িয) সুন্নত প্রমাণ করেছি।”
বাংলার মুলুকে প্রায় ৫৫ বৎসর পবিত্র দ্বীন উনার তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফ উনাদের প্রচার-প্রসারকারী হযরত মাওলানা কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তদ্বীয় “মুলাখখিাছ” কিতাবে উল্লেখ করেন,
قال علامة السيوطى اى نفع احسن من عمل المولدوالقيام وانهما يهيجان محبة النبى صلى الله عليهوسلم عظمته وجلالته فى قلب فاعله.
অর্থ: “আল্লামা হযরত ইমাম সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ অপেক্ষা অধিকতর উত্তম বা ফলদায়ক আমল আর কি হতে পারে? কারণ এর দ্বারা পবিত্র মীলাদ শরীফ পবিত্র ক্বিয়ামকারীর হৃদয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মর্যাদা ও মহিমার উদ্দীপনা জেগে উঠে।”
আশ্রাফ আলী থানবীসহ সকল উলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ, শায়খে আরব ওয়াল আ’যম, আল্লামা হাজী এমদাদুল্লাহ্ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “হাফতে মাসায়িল” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,
مولود شر یف کو ذریعہ برکات سمجھ کر ہر سالمنعقد کرتا ہوں اور قیام کے وقت بے حد لطف ولذتپاتا ہوں.
অর্থ: “পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহ্ফিলকে বরকত লাভের উসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিস করি এবং পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহ্ফিলে পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ লাভ করি।”
হাফিযে হাদীছ হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
الشكر لله يحصل بأنواع العبادة كالسجود والصياموالصدقة والتلاوة لينبغى ان يقتصر فيه على ما يفهمبه الشكر لله تعالى من نحو ما تقدم ذكره من التلاوةوالاطعام والصدقة وانشاد شئ من المدائح النبوة.
অর্থাৎ “সিজদা, রোযা, ছদক্বা, তিলাওয়াত ইত্যাদি নানা ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া হতে পারে। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার শুকর বুঝায় এমন যে কোনো আমলের মাধ্যমেই শুকরিয়া আদায় করতে হবে, যেমন উল্লেখিত কাজসমূহ বা খাবার পরিবেশন, তিলাওয়াত, ছদক্বা এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে প্রশংসাসূচক কবিতা আবৃত্তি ইত্যাদি।” (হাবীলীল ফতোয়া লি জালালুদ্দীন সূয়ুতি, দুররুল মুনাজ্জাম)
হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ ইবনুল হাজ্জ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আল মুদখাল” কিতাবে লিখেন,
فكان يجب ان يزاد فيه من العبادات والخير شكراللمولى على ما اولانا به من هذه النعم العظيمة وانكان النبى صلى الله عليه وسلم لم يزد فيه على غيرهمن الشهور شيئا من العبادات وما ذالك الا برحمتهبامته ورفقة بهم
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি নিয়ামত দ্বারা আমাদেরকে ভূষিত করেছেন। তাই মহান আল্লাহ পাক উনার শুকর আদায় করনার্থে এ মাসে (পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে) বেশি বেশি ইবাদত এবং পূণ্যের কাজ সমূহ করা উচিত। যদিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার মাসে অন্য মাস উনার চেয়ে বেশি কোনো ইবাদত করেননি। উম্মতের প্রতি দয়াবশতঃ ও কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে।”
“মাজমুয়ায়ে ফতওয়া” নামক কিতাবে মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছাহেব লিখেছেন,
بیشتر از کبراے طریقت سرور کائنات صلی اللہ علیہوسلم را بمنام دیدند کہ از عمل مولد راضی وخوشاند فلنعم ما رضی بہ من یشفعنا.
অর্থাৎ “তরীক্বতের অধিকাংশ বুযূর্গগণ উনারা সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নের মাধ্যমে দেখেছেন যে, তিনি পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠানের উপর বিশেষভাবে সন্তুষ্ট ও আনন্দিত আছেন। আহ! কতই না উত্তম সেই কাজ যৎপ্রতি আমাদের শাফীয়ে মাহশার, (হাশর ময়দানে সুপারিশকারী) তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।”
“মাজমুয়ায়ে ফতওয়া লাখনবী” কিতাবের তৃতীয় খন্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
وشيخ عبد الحق محدث دهلوى رحمة اللهعليه فرمايند ومما جرب من حواصه ان امان فىذالك العام وبشر عاجلة بنيلا لبغيرة المرام.
“হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, অভিজ্ঞতা হতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার বহু উপকারিতার মধ্যে ইহা অন্যতম যে- ইহার বরকতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেই বৎসর নিরাপদ রাখেন এবং উদ্দেশ্য লাভের জন্য উপস্থিত সুসংবাদ দান করেন।”(মাছাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ-৮৩ পৃষ্ঠা)
“সীরাতে শামীতে” বর্ণিত আছে যে, এক বুযূর্গ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এ পবিত্র মীলাদ মাহফিল করা কিরূপ? তিনি বলেন,
من فرح بنا فرحنا به
অর্থাৎ- “যে ব্যক্তি আমাকে নিয়ে খুশি প্রকাশ করে আমিও তার প্রতি খুশি হই।” (“ইশবাউল কালাম ২২ পৃষ্ঠা)
কিতাবে বর্ণিত আছে,
ثم لازال اهل الاسلام فى سائر الاقطار والمدنالكبار يحتفلون فى شهر مولده صلى الله عليه وسلمبعمل الولائم البديعة المشتملة على المامور البهيجةالرفيعة ويتصدقون فى لياليه بأنواع الصدقاتويظهرون السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنونبقراة مولده الكريم.
অর্থ: “এরপর থেকে মুসলিম জাহানের দিকে দিকে বড় বড় শহরে নগরে ব্যাপকভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মাসে মুসলমানগণ পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহফিলের ব্যবস্থা করে আসছেন। এ উপলক্ষে উক্ত রাত্রিতে নানা ধরনের খাবার পরিবেশনসহ নানাবি দান-ছদক্বা করেন। এ উপলক্ষে খুশি করতে গিয়ে অত্যধিক মুক্ত হস্তে দান-খয়রাত করেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব ও তা’যীমের সহিত পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করেন।” (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ)
শাইখুল ইসলাম হযরত ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ উনার একটি দলীল পেশ করে বলেন,
وقد ظهر لى تخريجها على اصل ثابت وهو ماثبت فى الصحيحين ان النبى صلى الله عليه وسلمقدم المدينة فوجد اليهود يصومون صوم عاشوراءفسألهم فقالوا هو يوم اغرق فيه فرعون ونجىموسى فنحن نصومه شكرا لله تعالى فقال ان اولىلموسى منكم فصامه وامر بصيامه ويستفاد منه فعلالشكر لله تعالى على ما من به فى يوم معين مناسداء نعمة او دفع نقمة ويعد ذالك فى نظير ذالكاليوم والشكر لله يحصل بانواع العبادة كالجودوالصيام والصدقة والتلاوة واى النعمة اعظم منالنعمة ببروز هذا النبى نبى الرحمة فى ذالك اليوم.
অর্থ: “পবিত্র ছহীহ বুখারী শরীফ ও পবিত্র মুসলিম শরীফ উনাদের এক বর্ণনা দ্বারা ছাবিত হয় যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান একটি ভালো ও পছন্দনীয় কাজ, সে বর্ণনা হচ্ছে এই যে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ আগমনের পর দেখতে পেলেন ইহুদীরা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিনে রোযা রাখে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো, এ তারিখেই ফিরআউনকে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল, আর হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তিনি সাগর পার হয়ে যান। তারই শুকরিয়াস্বরূপ আমরা রোযা রেখে থাকি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি তোমাদের চেয়ে হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার অধিক হক্বদার। এই বলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে রোযা রাখলেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকেও রোযা রাখার আদেশ মুবারক দিলেন। উক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, নির্দিষ্ট তারিখে কোনো নিয়ামত প্রাপ্তি বা কোনো বিপদ প্রশমনের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায়স্বরূপ কোনো আমল করা এবং প্রতি বছর ঐ তারিখে উক্ত আমল জারি রাখা একটি ভালো ও পছন্দনীয় কাজ অর্থাৎ সুন্নত মুবারক। আর মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতের শুকর আদায় বিভিন্ন রকমের আমল বা ইবাদতের মাধ্যমে হতে পারে; যেমন- সিজদা করা, রোযা রাখা, ছদক্বা করা, তিলাওয়াত করা ইত্যাদি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ দুনিয়ায় আগমন বা আবির্ভাব এতবড় নিয়ামত যে, এর তুলানায় কোনো নিয়ামত আর হতেই পারে না। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিনে শুকরিয়াস্বরূপ কোনো আমল বা ইবাদত করা এবং দিবসটি যতবারই ঘুরে আসবে ততবারই সে আমলের মাধ্যমে শুকরিয়া প্রকাশ করা যে একটি পছন্দনীয় কাজ উপরোক্ত রিওয়ায়েতের আলোকে তা সুস্পষ্ট প্রমাণিত।” (দুররুল মুনাজ্জাম)
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘সুনানে বাইহাক্বী’র একটি রিওয়ায়েত দ্বারাও দলীল পেশ করেছেন। যেমন তিনি “হুসনুল্ মাকাছিদ ফী আমালিল মাওলিদ” নামক কিতাবের মধ্যে লিখেন,
وقد ظهر لى تخريجه على اصل اخر وهو مااخرجه البيهقى عن انس رضى الله تعلى عنه ان النبىصلى الله عليه وسلم عق عن نفسه بعد النبوة مع انهقد ورد ان جده عبد المطلب عق عنه فى سابع ولادتهوالعقيقة لا تعاد مرة ثانية فيحمل ذلك على ان الذىفعله النبى صلى الله عليه وسلم اظهارا للشكر علىايجاد الله اياه رحمة للعالمين وتشريع لامته كما كانيصلى على نفسه كذا فى الزرقانى شرح فيستحب لناايضا اظهار الشكر بمولده بالاجتماع واطعام ونحوذلك من وجود القربات واظهار المسرات.
অর্থ: “পবিত্র সুনানে বাইহাক্বী শরীফ” উনার একটি বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান একটি পছন্দনীয় কাজ। বর্ণনাটি এই যে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত নুবুওওয়াত প্রকাশের পর নিজের পবিত্র আক্বীক্বা করলেন। অথচ বর্ণিত আছে যে, উনার দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস্ সালাম তিনি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের সাত দিনের দিন উনার আক্বীক্বা করেছেন। আর আক্বীক্বা দ্বিতীয়বার দোহরানোর কোনো বিধান নেই। আসলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে রাহমাতুল্লীল আলামীন রূপে দুনিয়ায় আবির্ভূত হওয়ার শুকরিয়াস্বরূপ এবং উম্মতের জন্য এ শুকরিয়ার বিধান রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এ কাজটি করেছিলেন, যেরূপভাবে তিনি শুকরিয়াস্বরূপ নিজের উপর পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফও পড়তেন। অনুরূপ “শরহুয্ যারকানী”তেও উল্লেখ আছে।
তাই ইজমা হয়েছে যে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আবির্ভাবের শুকরিয়া প্রকাশস্বরূপ এক জায়গায় সমবেত হওয়া খাবার বিতরণ ইত্যাদি যে কোনো নেক কাজ করা ও খুশি প্রকাশ করা আমাদের জন্যও মুস্তাহাব হবে। উপরোক্ত দলীলের ভিত্তিতে তাই প্রতীয়মান হয়।
আবূ লাহাবের কাছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সুসংবাদ পৌঁছলে সে অতিমাত্রায় খুশি হয়ে সংবাদদায়িনী বাঁদী হযরত ছুয়াইবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে মুক্ত করে দেয়। বর্ণিত আছে যে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার দরুণ প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ অর্থাৎ সোমবার শরীফ দিনে আবূ লাহাবের আযাব কিছুটা লাঘব করা হয়। উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা উলামাদের অনেকেই পবিত্র মীলাদ শরীফ ভালো কাজ হওয়ার উপর দলীল পেশ করেছেন।
ইমামুল কুররা হাফিযে হাদীছ হযরত শামসুদ্দীন জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার লিখিত কিতাব “উরফুত্ তা’রীফু বিল মাওলিদিশ্ শরীফ” উনার মধ্যে লিখেছেন,
فاذا كان ابو لهب الكافر الذى نزل القران بذمه جوزىفى النار بفرحه ليلة مولد النبى فما صلى الله عليهوسلم حال المسلم الموحد من امة النبى صلى اللهعليه وسلم يسر بمولده ويبذل ما تصل اليه قدرته فىمحبته صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “যার নিন্দায় পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হলো এমন জঘন্য কাফির আবূ লাহাবকেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের উপর খুশি প্রকাশ করার প্রতিদান দেয়া হলো দোযখের অভ্যন্তরে, তাহলে উনার উম্মতের একজন তাওহীদবাদী মুসলমান উনার আগমন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলে এবং নিজের সাধ্যানুযায়ী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে অর্থ ব্যয় করলে সে অবশ্যই অধিক প্রতিদানের যোগ্য হবে।”
হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “মাদারিজুন্ নুবুওওয়াহ” কিতাবে লিখেন,
درينجا سنداست هر اهل موالد راكه درشب ميلادانحضرت صلى الله عليه وسلم سرور كنند وبذلاموال نمايند.
অর্থ: “আবূ লাহাবের আযাব লাঘবের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিশেষ করে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানকারীদের জন্য দলীল রয়েছে, যারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের তারিখে খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করেন এবং মাল খরচ করে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব “আল মাওরির্দু রাবী” উনার মধ্যে লিখেন,
ومن تعظيم مشائخهم وعلمائهم لهذا المولد المعظموالمجلس المكرم انه لايأبى فى حضوره ويجتمع فيهائمة العلماء الاعيان.
অর্থ: “উলামা মাশায়েখগণ উনারা এ পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলের এতই তা’যীম করতেন যে, অনুষ্ঠানে উপস্থিতিতে কোনো আপত্তি তুলতেন না; বরং উলামাদের শীর্ষ স্থানীয় ইমামগণ উনারা উক্ত অনুষ্ঠানে এসে জমায়েত হতেন।”
শায়খুল ইসলাম, হাফিযে হাদীছ আবুল ফযল আহমদ বিন হযরত আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اصل عمل المولد بدعة لم تنقل عن احد من السلفالصالح من القرون الثلثة. ولكنها مع ذالك اشتملتعلى محاسن وضدها فمن تحرى فى عملها المحاسنوتجنب ضدها كان بدعة حسنة.
অর্থ: “পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার (বর্তমান) তরতীব আসলে একটি বিদয়াতে হাসানা, যা কুরূনে ছালাছা অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের হতে বর্ণিত নয়। কিন্তু পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার এ তরতীবটি যেহেতু শরীয়তসম্মত এবং ইহার মধ্যে শরীয়ত বিরোধী কোনো কিছু নেই; তাই এটা বিদয়াতে হাসানা।”
اما ما يعمل فيه فينبغى ان يقتصر على ما يفهم بهالشكر لله تعالى من نحو ما تقدم ذكره من التلاوةوالاطعام والصدقة وانشاد شئ من المدائح النبويةوالزهدية المحركة للقلوب الى فعل الخير والعملللاخرة.
অর্থ: “পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে তিলাওয়াত করা, খাবার দান করা, ছদক্বা খয়রাত করা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসামূলক কবিতাসমূহ থেকে আবৃত্তি করা এবং এ ধরনের আরো এমন সব কাজ করা উচিত যেগুলো মহান আল্লাহ পাক উনার শুকর বুঝায় আর মনকে পুণ্যের কাজ এবং আখিরাতের আমলের দিকে উৎসাহিত করে।” (আল হাবী লিল্ ফাতাওয়া লিস্ সুয়ূতী)
ইমামুল কুররা হাফিযে হাদীছ হযরত শামছুদ্দীন বিন জাযরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
فاذا كان ابو لهب الكافر الذى نزل القران بذمهجوزى فى النار بفرحه لليلة مولد النبى صلى اللهعليه وسلم به فما حال الموحد المسلم من امة النبىصلى الله عليه وسلم يسر بمولده ويبذل ما تصلىاليه قدرته فى محبته صلى الله عليه وسلم ولعمرىانما يكون جزائه من الله الكريم ان يدخله بفضلهجنات النعيم.
অর্থ:- “যার নিন্দায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা নাযিল হলো এমন কাফির আবূ লাহাবকেও যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার রাত্রিতে খুশি প্রকাশ করার কারণে দোযখের ভিতরে পুরস্কৃত করা হয়, তাহলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের একজন তওহীদপন্থী মুসলমান তিনি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করলে এবং সাধ্যানুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে অর্থ ব্যয় করলে সে যে কত বেশি পুরস্কৃত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার জীবনের শপথ নিয়ে বলছি- এ ব্যক্তির পুরস্কার হবে এটাই যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে নিজ অনুগ্রহে সম্মানিত জান্নাতুন্ নাঈম উনার মধ্যে স্থান দিবেন।” সুবহানাল্লাহ!
হাফিযে হাদীছ আবুল ফয়েয হযরত আব্দুর রহমান ইবনুল জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
لازال اهل الحرمين الشريفين والمصر واليمنوالشام وسائر بلاد العرب من المشرق والمغربيحتفلون بمجلس مولد النبى صلى الله عليه وسلمويفرحون بقدوم هلال ربيع الاول ويغتسلونويلبسون الثياب الفاخرة ويتزينون بأنواع الزينةويتطيبون ويكتحلون ويأتون بالسرور فى هذه الايامويبذلون على الناس بما كان عندهم من المضروبوالاجناس ويهتمون اهتماما بليغا على السماعوالقراعة لمولد النبى صلى الله عليه وسلم وينالونبذالك اجرا جزيلا وفوزا عظيما.
অর্থ: “হারামাইন শরীফাইন, মিশর, ইয়ামেন, সিরিয়া এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আরবের সকল শহর ও নগরের অধিবাসীদের মধ্যে অব্যাহতভাবে এ নিয়ম চলে আসছে যে, তারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠান করেন। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার নতুন চাঁদের আগমনে আনন্দিত হন, গোসল করেন, দামী পোশাক পরিধান করেন, নানা প্রকার সাজ-সজ্জা করেন, সুগন্ধি ব্যবহার করেন, সুরমা লাগান (পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার) এই দিনগুলোতে আনন্দ উৎসব করেন, হাতের সম্পদ টাকা পয়সা মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ ও শ্রবণের ব্যবস্থা করে অধিক ছাওয়াব এবং বিরাট সাফল্য অর্জন করেন।”(আদ দুররুল মুনায্যাম পৃষ্ঠা- ৮৫)
হযরত ইমাম ওলিউদ্দীন আবূ জারয়া ইরাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
الوليمة والطعام مستحب كل وقت فكيف اذاانضم السرور رظهور نور النبوة فى هذا الشهرالشريف.
অর্থ: “যিয়াফত এবং খাবার দান সকল সময়ই মুস্তাহাব কাজ। এর সাথে যদি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের মাস পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার আগমন তথা পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার খুশিও মিলিত হয়, তাহলে কতই-না উত্তম হয়।” (আল মাওলিদুল কবীর লি ইবনে হাজার)
হাফিযে হাদীছ হযরত আবুল খাইর ছাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় ফাতওয়ার কিতাবে লিখেন,
اصل عمل المولد الشريف لم ينقل عن احد منالسلف الصالح فى القرون الثلاثة الفاضلة واما احدثبعد ها بالمقاصد الحسنة ثم لازال اهل الاسلام فىسائر الاقطار والمدن الكبار يحتفلون فى شهر مولدهبعمل الولائم البديعة قال الامام السخاوى وكنت ممنتشرف بإدراك المولد فى مكة المشرفة عدة سنينوتعرف ما اشتمل عليه من بركة.
অর্থ:- “পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার এরূপ (বর্তমান) তরতীব বা পদ্ধতি কুরূনে ছালাছা তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবিয়ীন, তাবে তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের যুগের মনীষীগণ হতে বর্ণিত নয়। কুরূনে ছালাছার পর এরূপ তরতীব উদ্ভাবিত হয়েছে এবং তখন থেকেই মুসলিম জাহানের দিকে দিকে বড় বড় শহরে নগরে ব্যাপকভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের মাসে মুসলমানগণ উক্ত তরতীবে পবিত্র মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠান করে আসছেন। অনুষ্ঠানে ভালো ভালো খাবার পরিবেশনসহ অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে পালন করেন। হযরত ইমাম ছাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মক্কা মুকাররমায় কয়েক বছর ধরে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠানে শরীক হওয়ার এবং তার বরকত অনুধাবন করার সৌভাগ্য যারা অর্জন করেছিলেন, আমিও তাদের একজন।” (আল মাওরিদুর রাবী ফী মাওলিদিন্ নবী)
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বীয় কিতাবে লিখেন,
ان اصل المولد الذى هو اجتماع الناس وقراة ما تيسرمن القران ورواية الاخبار الواردة فى مبداء امر النبىصلى الله عليه وسلم وما وقع فى مولده من الاياتثم يمدلهم سماط ياكلونه وينصرفون من غير زيادةعلى ذالك هو من البدع الحسنة التى يثاب عليهاصاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبى صلى الله عليهوسلم واظهار الفرح والاستبشار بمولد الشريف.
অর্থ: “লোকজন সমবেত হওয়া, পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে তিলাওয়াত করা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ দুনিয়ায় আগমনের সময়কার হাল-হাক্বীক্বত সম্পর্কীয় রেওয়ায়েতসমূহ এবং আশ্চর্য ও অলৌকিক ঘটনাবলী বর্ণনা করা, অতঃপর দস্তরখানা বিছিয়ে খানা পরিবেশন করা, আর অতিরিক্ত কোনো গর্হিত কাজ না করা এটাই হচ্ছে মূলত পবিত্র মীলাদ শরীফ। এটা (অর্থাৎ বর্তমান তরতীব) বিদায়াতে হাসানা উনার অন্তর্ভুক্ত। এতে অংশ গ্রহণকারীদেরকে ছওয়াব দেয়া হয়, কেননা এর মধ্যে রয়েছ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীম এবং উনার আগমনের উপর খুশি ও আনন্দের প্রকাশ।”(হুকমুল মাকছিদ ফী আমালিল মাওলিদ)