ঈদে মীলাদুন্নাবীর ﷺ মজলিস দেখে আল্লাহ্‌ খুশি হন।
সাহাবাগণের আমল থেকে সহীহ হাদিস দ্বারা তা প্রমাণিত।
মাওলিদুন্নাবী বা নবী করীম ﷺ এর আগমন দিবস এলেই সমগ্র বিশ্বের মুসলমানগণ দু'ভাগে ভাগ হয়ে যান। একদল নবী করীম ﷺ এর আগমনে আনন্দিত হন আর অন্যদল এই আনন্দ দেখে মুখ গোমরাহ করে বিদআত এবং শিরকের ফতোয়া নিয়ে ঘুরে বেড়ান। তারা জানতে চান, এরকম কি রাসূল ﷺ করেছেন, সাহাবাগণ কি এরকম করেছেন? তাবেঈ এবং তাবে তাবেঈনগণ কি করেছেন? ইত্যাদি ইত্যদাই। আজ তাদের জন্য একটি সহীহ হাদিস নিয়ে হাযির হচ্ছি যে হাদিস থেকে জানা যায় যে নবী করীম ﷺ এর দুনিয়াতে তাশরিফ উপলক্ষে সম্মানিত সাহাবাগণ জমায়েত হয়ে আলোচনা করতেন এবং আল্লাহ্‌ পাকের কাছে এই নিয়ামত এবং অনুগ্রহের জন্যে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেন। তা দেখে নবীজী যেমন খুশি হতেন, স্বয়ং আল্লাহ্‌ পাকও জিব্রাইলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতেন যে তিনি ওইসব লোকদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ববোধ করেন। নিচে পূর্ণ সনদসহ হাদিসটি উদৃত করছি। আহলে হাদিস এবং নব্য সালাফীদের নেতা আলবানি সাহেবও হাদিসের সনদকে সহীহ বলেছেন।

أَخْبَرَنَا سَوُّارُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنَا مَرْحُومُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ عَنْ أَبِي نَعَامَةَ عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قَالَ مُعَاوِيَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ يَعْنِي مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ مَا أَجْلَسَكُمْ قَالُوا جَلَسْنَا نَدْعُو اللَّهَ وَنَحْمَدُهُ عَلَى مَا هَدَانَا لِدِينِهِ وَمَنَّ عَلَيْنَا بِكَ قَالَ آللَّهُ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلَّا ذَلِكَ قَالُوا آللَّهُ مَا أَجْلَسَنَا إِلَّا ذَلِكَ قَالَ أَمَا إِنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهَمَةً لَكُمْ وَإِنَّمَا أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَام فَأَخْبَرَنِي أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِي بِكُمْ الْمَلَائِكَةَ

অর্থাৎঃ সাওয়ার ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) ... আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) বলেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে তাঁর সাহাবীদের এক মজলিসে পৌছলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাদের এখানে কিসে বসিয়েছে? তারা বললেনঃ আমরা আল্লাহর স্মরণে এবং তিনি যে আমাদেরকে হিদায়ত দান করেছেন এবং আপনাকে প্রেরণ করে আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপর যে ইহসান করেছেন তার শোকর আদায় করার জন্য বসেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ সত্যই কি তোমরা এজন্য এখানে বসেছো? তারা বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমরা এজন্যই এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করে তোমাদের থেকে শপথ নিইনি, বরং এজন্য জিবরীল (আঃ) এসে আমাকে সংবাদ দিলেন, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করছেন। [সুনানে নাসাঈ - ৫৪২৫, বায়হাকি তাঁর শোয়াবুল ঈমানেও তা নকল করেছেন, অধ্যায় মুহাব্বাত, ৫১১]

আলবানি সাহেবের তাহক্বীকে এই হাদিসটির সনদ সহীহ। [সহীহ আত-তিরমিযী ৩৬১৯]

মুসলিম শরীফে তদ্রূপ একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে [ইসলামিক ফাউন্ডেশন - মুসলিমঃ ৬৬১১, তিরমিজিঃ ৩০৭৯, ]।
তবে সেখানে আল্লাহ্‌র জিকিরের উদ্দেশ্যে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপনের কথা বলা হয়েছে। মুসলিম ২৭০১, তিরমিযী ৩৩৭৯, নাসায়ী ৫৪২৬, আহমাদ ১৬৩৯৩ নম্বরে একই হাদিস বর্ণিত হয়েছে মতনের কিছুটা তারতম্যে।

সেখানে অতিরিক্ত "তার মাধ্যমে আমাদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন" কথাটি এসেছে। বোঝাই যাচ্ছে এখানে "তাঁর" বলতে রাসূল ﷺ কে বোঝানো হয়েছে।

বুখারি এবং মুসলিম সহ অসংখ্য হাদিসে প্রমাণিত যে রাসূল ﷺ নিজে প্রতি সোমবার রোজা রেখে তাঁর জন্মদিন পালন করতেন। আর এই হাদিসটির দ্বারা প্রমাণিত হলো যে সাহাবাগণও নিজেরা জড়ো হয়ে রাসূল ﷺ এর আগমনে ধন্য হতেন এবং আল্লাহ্‌ পাকের কাছে এই নিয়ামত এবং অনুগ্রহের জন্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেন। আর এতে স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন নিজে খুশি হতেন এবং ফেরেশতাদের কাছে ওইসব লোকদের জন্য গর্ব করতেন। শুধু তাই নয়, তা জানিয়ে আবার আল্লাহ্‌ পাক জব্রাইল আ কে পাঠিয়ে তা নবীজিকে জানিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এমন বরকতময় আনন্দ এবং উচ্ছাসে কেউ চাইলে মুখ গোমরাহ করে থাকুক। আর যার ইচ্ছে তা পালন করে স্বয়ং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে খুশি করুক। প্রমাণ পেশ করা হলো এবার যার যার ইচ্ছে মতো আমল করুক। অন্যকে বাধা দেয়া হবে অন্যের আমলে হস্তক্ষেপ করা। যা আল্লাহ্‌ পাকের খুবই অপছন্দনীয়।


==[ডক্টর আব্দুল বাতেন মিয়াজী]==
Top